User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বেশিরভাগ মানুষ তার জীবনের প্রায় পুরোটাই ব্যয় করে নিজেদের জীবনের লক্ষ্যকে জানার,বোঝার চেষ্টা না করে।অন্যের তৈরী করে দেয়া সমস্যাগুলোর সমাধানে ব্যস্ত থেকেই তারা তাদের সমগ্র জীবন কাটিয়ে দেয়।নিজেকে,নিজের ভেতরটাকে,নিজের স্বত্তাকে এক্সপ্লোর করা বা হাতড়ে দেখার কোনো তৃষ্ণাই তারা নিজেদের মধ্যে অনুভব করে না।কদাচিৎ যদি করেওবা,সে চিন্তা পরিণতি পাবার আগেই তাকে নিজেদের ভেতরে ধামাচাপা দেয় তারা অন্যান্য অর্থহীন কাজের অজুহাতে। অর্জন-ত্যাগের ধর্মকে তারা নিজেকে দিয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করে না।তাদের জীবনে জানার পরিধিটা বিশাল হলেও অনুধাবনের,উপলব্ধির স্থান তাতে নেই বললেই চলে। নিজেদের সাথে সমগ্র সৃষ্টিজগতের বিনিময়ের সম্পর্ককে বোঝার চেষ্টাও কদাচিৎ দেখা যায়।প্রতিটা সৃষ্টিই সমগ্র সৃষ্টিজগতে সৃষ্ট অন্যান্য সৃষ্টির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। হিংসা,লোভ মানুষের চূড়ান্ত ধ্বংসের কারণ হয়।মানুষের চিন্তা-চেতনাকে নিম্নস্তরে নামিয়ে আনে।নিজে 'জেতা'র চেয়ে অন্যকে 'হারানো'টাই মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় তখন। ধর্ম-দর্শনকে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে প্রতিদিনের জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখার চর্চাটাও অনুপস্থিত মানুষের মধ্যে। কুশা এমন একটা সময়ের পটভূমিতে রচিত,যখন মানব সম্প্রদায় বড় ধরনের এক দূর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি সামলে উঠে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেদের চিন্তা-চেতনা,জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং সর্বোপরি 'নিজেকে' উন্নত করার চেষ্টা করছে মানবজাতি।আবার তাদেরই মাঝে কিছু লোভী মানুষ নিজেদের আধিপত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে মূর্খের মতো নিজ জাতির ধ্বংস সাধনে বদ্ধপরিকর। কুশা বন্ধুত্বের গল্প,মানুষের অক্ষমতাকে কাটিয়ে ওঠার গল্প। কুশা প্রবল প্রতিভাধর ও আশ্চর্যজনক পর্যায়ের অনুভূতিকে রিড করতে পারা অতীতকাতর এক মানবীর গল্প। কুশা এক মহান বিজ্ঞানীর নিজ রিপুকে দমন করে সামনে এগিয়ে যাওয়া,অব্যক্ত ভালোবাসার গল্প। কুশা এক বিভীষাকাময়,মানবসভ্যতাকে পেছনের দিকে ধাবিত করা এক 'সিস্টেম' থেকে বেরিয়ে আসার গল্প। 'কুশা' উপন্যাসটির সীমাবদ্ধতা বা কমতি হিসেবে যেগুলো আমার কাছে ধরা দিয়েছে সেগুলো হলো, রুয়েম-য়্যুয়ান-কুশা...এই তিনটি চরিত্র ছাড়া অন্য চরিত্রগুলোর বেশিরভাগেরই খুব একটা ভেতরে প্রবেশ না করা। ভাষার ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও অনানুষ্ঠানিক কথ্য ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে(করসো,খাইসো)মতো,কিন্তু একই চরিত্রগুলো সবক্ষেত্রে এই অনানুষ্ঠানিক কথ্য ভাষায় কথা বলছে না।কথ্য ভাষায় আমার কোনো আপত্তি নেই,সেটা হলে বরং ভালো আমার মতে...কারণ,আমার মতে,আমার যেভাবে কথা বলি,লেখাতে সেভাবেই আসা উচিৎ(মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর নাটকের মতো)।তাই বর্ণনার অংশগুলো যদি প্রমিত রীতিতে লিখে শুধু কথোপকথনের অংশগুলো কথ্য ভাষায় ব্যবহৃত হয়,তাহলে আমার মতে,সমস্যা হওয়ার কথা না। এখানে সব জায়গায় একই ক্যারেক্টারগুলো একই ক্যারেক্টারগুলোর সাথে সব সময় একই ভাষায় কথা বলছে না,সেখানেই আমার আপত্তি। একরাশ শান্তিময়তার শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন রইলো 'কুশা' বইটির সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভাবে যুক্ত সকলের প্রতি।
Was this review helpful to you?
or
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এক বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় সবকিছু। গ্রাম কিংবা খোলা জায়গায় থাকা সৌভাগ্যবান কিছু মানুষ বেঁচে যায় ভাগ্যক্রমে। ভূমিকম্পের পর বেঁচে যাওয়া এ মানুষগুলোর টিকে থাকার সংগ্রামে তাদের মাঝে ঘটে যায় অদ্ভূত বিবর্তন। নিজেদের ভেতরের সত্ত্বাটাকে চিনতে শেখে তারা, খুঁজে পায় অসীম শক্তির এক আধার। ডিএনএ লেভেল পর্যন্ত দেহের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয় এই বিবর্তিত মানুষগুলো। অমরত্ব অর্জন করতে না পারলেও দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত দেহকে সজীব ও প্রাণবন্ত রাখার কৌশল শিখে যায় তারা। বিবর্তিত মানুষগুলোর মাঝে অত্যন্ত মর্যাদা সম্পন্ন ও ক্ষমতাধর দুজন মানুষ- য়্যুয়ান ও রুয়েম। দু'জনে বাল্য বন্ধু থাকলেও আজ তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়েও দু'জন ভিন্নধর্মী। রুয়েম এক্সট্রিম ও স্যাডিস্ট একটা চরিত্র। অপরদিকে য়্যুয়ান শান্তিকামী ও দায়িত্বশীল একটা চরিত্র। বইটার নাম যেহেতু কুশা, তাই এ চরিত্রের সাথেও পরিচিত হওয়া প্রয়োজন। কুশা নামের মেয়েটির মাঝে বিবর্তন না ঘটলেও তার মেধা ও ইন্টিউশন ক্ষমতার জন্যই বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা প্লে করেছে বইটিতে। যদিও য়্যুয়ান ও রুয়েমের পদচারণাই বেশি লক্ষ করা গিয়েছে। তবে, বইটার পরবর্তী সিরিজ গুলোতে যে কুশা'ই প্রধান চরিত্র হয়ে উঠবে তার স্পষ্ট ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে। য়্যুয়ান আর রুয়েমের দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছিল গল্প। তবে মাঝপথে এসে পাঁচজন ওয়ার্ল্ড লিডার আর এক রহস্যময় চরিত্র 'আলোর দিশারী'র কথোপকথন পুরো গল্পেই ভিন্ন একটা মাত্রা এনে দেয়। রুয়েমকে এতক্ষণ ভিলেন মনে হলেও গল্পের মোড় পরিবর্তন করে দেয় 'আলোর দিশারী' চরিত্রটি প্রকাশিত হবার পর থেকে। এর কথোপকথন ও আভির্ভাব সংক্রান্ত আলোচনায় আপাত দৃষ্টিতে আমার কাছে এটি 'দাজ্জাল' চরিত্র মনে হয়েছে। একই সাথে ওয়ার্ল্ড কনস্পিরেসির একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যায় এখান থেকে। তবে আমার কাছে বইটার যে দিকটা সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে তা হলো এর ফিলসফিক্যাল ম্যাটারগুলো। এই ফিলসফিক বিষয়গুলো আপনাকে ভিন্ন দৃষ্টিতে ভাবতে সহায়তা করবে, চিন্তার উদ্রেক করবে। আরও একটা বিষয়ে অনেক বেশি অবাক হয়েছি পুরো বইটাতে খন্ডাকারে লেখিকার রাজনৈতিক সচেতনতার পরিচয় দেখে। প্রচলিত সমাজ ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে এ যেন কলমের মাধ্যমে প্রতিবাদ। লেখিকা তার সামাজিক দায়বোধ ও প্রতিবাদের জায়গা থেকেই এটি করেছেন বলে মনে হয়েছে, যাতে করে পাঠকের হৃদয়ে তার প্রভাব ফেলে। এ কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, সৃষ্টি রহস্য, স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস, দর্শন, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লেখিকার চিন্তাভাবনা সচেতন পাঠক হৃদয়ে অবশ্যই ছাপ ফেলবে। শেষ কথা হচ্ছে, এ বইটার সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা করাটা ছোট্ট একটা রিভিউয়ের মাধ্যমে সম্ভব নয়। যেহেতু এ বইয়ে কুশা চরিত্রটি পূর্ন বিকশিত হয় নি, এবং গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেও প্রধান চরিত্র হয়ে উঠেনি, সেহেতু ধারণা করা যায় কুশা চরিত্র নিয়ে সামনে আরো অনেক কিছু করার ইচ্ছে আছে লেখিকার। কুশা'র পরবর্তী বইয়ের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। একই সাথে এমন প্রতিভাশীল লেখিকা ও কুশা সিরিজের জন্য শুভ কামনা রইলো।
Was this review helpful to you?
or
এই বইয়ের জানরা লিখতে গিয়ে বেশ কয়েকবার টাইপ করতে হলো, চিন্তা করতে হলো তারপর আবার ব্যাকস্পেস দিতে হলো। এবং বাংলায় লেখা একটা মৌলিক বই এটা, এ ব্যাপারটাই অবাক করলো। আমি এখনো বুঝতে পারছি না এই বই কোন জানরাতে পরা উচিৎ। গল্পবলার ভঙ্গিমা এনিমের মতো, সেটিংস ভবিষ্যতের আপোক্যালিপ্টিক যুগে দক্ষিণ এশিয়াতে, গভীর ফিলসফিক চিন্তাভাবনায় মেটা-ফিজিক্সের আলোচনা, ধর্মের আলোচনা আর স্রষ্টাকে নিয়ে প্রশ্ন, সাথে টেকনলজি আর প্রোগ্রামিং নিয়ে এতো কল্পনা আর হায়ার লেভেলের থিঙ্কিং, উপরের মাত্রার জগত, মানুষের কনশাস বিবর্তনের পসিবিলিটি এবং তা থেকে লজিক্যালি সুপার পাওয়ারের বর্ননা, সেই সাথে কন্সপির্যাসি আর ওয়ার্ল্ড লিডারদের রূপ, বিদ্রোহীদের দল যেটা মূলত ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ করছে এমন দলের পরিচয় করিয়ে দেয় – সবকিছু মিলে এই বই নিঃসন্দেহে ভিন্ন একটা জানরা তৈরি করেছে। . গল্পে কিছু রোমান্স আর ফানি মুহূর্তগুলো ঠিক সময়মত এসে স্পাইসি করেছে আমি বলবো। নইলে হয়তো খুব বেশি গাম্ভীর্যে পরিপূর্ণ একটা বই হয়ে যেত। অবাক লেগেছে যে, খুব সহজ আর সাবলীল ভাষায় এতো গুরুত্বপূর্ণ টপিকের সেটব্যাকে এরকম কাহিনীকে তুলে ধরা হয়েছে – যেটা তরুণ সমাজ বেশি পছন্দ করবে। একটা প্রজন্মের মাঝে কিছু গুরুত্বপুর্ন তথ্যকে উপস্থাপন করার প্রয়াস মনে হলো এই বইটাকে। . অনেকে বইতে বর্ননা বেশি বলেছে, আবার অনেকে দেখলাম – ফিলসফিক বর্ননাগুলোকেই বেশি পছন্দ করেছে। আমারো ঠিক একারণেই বইটা ভালো লেগেছে। এই বইয়ের কাহিনী আর প্লট এতো জটিল যে এখনো পর্যন্ত কারো রিভিউ পড়েই কেউ বুঝতে পারেনি এটা ঠিক কি নিয়ে বই। আর এই বইয়ের স্পয়লারও তাই দিতে কেউ দ্বিধা করেনি। কারণ, সাধারণ কোন একটা/ দুইটা প্লট নিয়ে এই বই না। এই বই এর কাহিনী সংক্ষিপ্ত করে বলে ফেলা সম্ভব না। শর্টকাট করে লিখলেও এটার স্পয়লার দিলেও এ গল্পের তেমন কিছুই বলা হবে না। তাই হয়তো এ পর্যন্ত কারো রিভিউতেই একই জিনিস খুঁজে পাওয়া যায়নি। একজন বলছে কাহিনী নিয়ে, তো অন্যজন কোন এক চরিত্রকে নিয়ে, আবার কেউ বলছে রোমান্স নিয়ে, কিংবা অন্য কেউ কন্সপির্যাসি নিয়ে। . যেটা নিয়ে এখনো কেউ বলেনি বোধহয় – সেটা হচ্ছে “মানবিক অনুভূতির সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ।” মানুষের ডার্ক আর লাইট দিকগুলোর গভীর বিশ্লেষণী ধর্ম এবং সেটাকে কাহিনীতে তুলে নিয়ে আসা। সবচেয়ে আশ্চর্যের হলো, নারীর প্রতি পুরুষের ফিজিক্যাল আকর্ষণকে – বিশেষ করে যুগ যখন “শরীর দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়তে মন চাইবে নাকি? কি রকম মানসিকতা এটা? নিশ্চই মানসিক সমস্যা আছে! কিংবা মাংস মনে করে, মানুষ না – ” এরকম এক যুগে, লেখিকা নারী হয়ে পুরুষদের পার্স্পেক্টিভ থেকে লালসার ব্যাপারটাকে এতো ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যেটা ভাবতেই অবাক লাগলো। অর্থাৎ, গল্পের প্রধান পুরুষ চরিত্রই যখন নারীর প্রতি লালসার বিরুদ্ধে লড়াই করছে; তখন ব্যাপারটা আসলেই লেখার জগতে নতুন। . কারণ, অতিরাগী, বদমেজাজী/ নেশাখোর/ অহংকারী/ উদাসীন/ বেশি খায়/ বেশি ঘুমায়/ খুনী/ ডাকাত/ ভ্যাম্পায়ার/ স্যাডিস্ট – ইত্যাদি অনেক দোষ সম্পন্ন নায়ক দেখেছি অনেক গল্পে (যে দোষগুলোকে কোন একটা কারণে গুণ মনে করা হয়)। কিন্তু লালসার (ভালোবাসা নাম দিয়ে পবিত্র করা লালসা না) মতো ব্যাপার, তাও গল্পের নায়কের মধ্যে! – জিনিসটা অলমোস্ট ট্যাবুই ভেবেছিলাম। আর এমন ইস্যুকেই যখন মানুষের স্বাভাবিক নেগেটিভ অনুভূতির একটা রূপ হিসেবে দেখে নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়, তাও পুরোপুরি নারীবাদী ছোঁয়ার বাইরে থেকে, তখন শ্রদ্ধা জাগে লেখকের প্রতি। . যাইহোক, আমার আলোচনা/ রিভিউ পড়ে নিশ্চই আরও একবার বিভ্রান্ত হয়েছেন। এখনো তো কেউই এটা নিয়ে কিছু বলল না – তাই তো? এই বইয়ের একটা দিক নিয়ে শুধু আলোচনা করলাম। অন্য কেউ হয়তো অন্য কোন একটা দিক নিয়ে আসবে – যেটা এখনো বলা হয়নি। কুশা এমনি একটা বই, যার কোন মূল কথা/ সারসংক্ষেপ বলতে কিছু নেই। অনেক ঘটনা আর অনেক কিছু নিয়ে এই গল্পের যাত্রা – না পড়লে যেটা বোঝানো যাবে না। বরং, যারা পড়েছেন, তাদের সাথে আলোচনা/সমালোচনা করা যায়। . . চরিত্র পরিচিতিঃ গল্পের কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নিয়ে কিছুটা পরিচয় দেই। বোঝাই যায় বেশ কয়েকটা সিরিজের হবে বইটা। তাই অনেকগুলো চরিত্র আছে এতে, যাদের পূর্ণ বিকাশ প্রারম্ভতে ঘটেনি। আশা করছি পরেরগুলোতে ঘটবে - কুশা – প্রধান চরিত্র; নারী; প্রডিজি প্রোগ্রামার এবং মেশিন পোকা; যে আবার অনেক আনসোশ্যাল, এবং মানুষের সাথে কথা বলতে হয় কিভাবে সেটাই জানে না। পাস্ট কোন একটা স্টোরি আছে। . য়্যুয়ান – বিবর্তিত একজন পুরুষ; রিসার্চার; বয়স আবার নব্বইএর উপরে; গল্পের মূল পুরুষ চরিত্রের একজন। খুব ভালো উদ্দেশ্য এখনো নেই এই চরিত্রের। তবে আপাতত মনে হচ্ছে রুয়েমের প্ল্যানকে ধ্বংস করতেই তার অস্তিত্ব। . রুয়েম – ভিলেন চরিত্র; অন্তুত শুরুতে তাইই মনে হয়েছে। কিন্তু ওয়ার্ল্ড লিডারদের আসার পর থেকে ঠিক বুঝতে পারছি না ফাইনাল সিরিজ গুলোতে সে ভিলেন থাকবে নাকি না। কিন্তু প্রারম্ভে সে ভিলেন; স্যাডিস্ট একটা চরিত্র; য়্যুয়ানএর বাল্য বন্ধু ছিল সে। . টিজে – প্রতিরক্ষাবাহিনীর একজন নারী, যাকে ডিটেক্টিভ হিসেবে দেখা যায়। উদ্দেশ্য বোঝা না গেলেও শেষে খুব গুরুত্বপুর্ন একটা রোল কাকতালীয়ভাবেই সে পেয়ে যায়। . মিশাল – রেবেলদের কম্যান্ডার। ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ করছে মনে হলো, কিন্তু ওদের নিয়ে মাত্র অল্প আলোচনা ছিলো; মনে হচ্ছে ওদের শুধু পরিচিতিই দেয়া হয়েছে এই বইতে। সামনে ওদের নিয়ে কিছু হবে মনে হচ্ছে। আমি এটাই দেখতে আগ্রহী, লেখক জঙ্গিবাদ/ বিদ্রোহীদের ঠিক কিভাবে ফুটিয়ে তোলেন। আপাতত তাদের ভিলেন দলের মনে হয়নি। . এল্ডার ফাইভ আর ‘আলোর দিশারী’ – এরা ওয়ার্ল্ড লিডার। খুব উঁচু লেভেলের ক্ষমতা সম্পন্ন, যারা পুরো পৃথিবীকে চালাচ্ছে হাজার হাজার বছর ধরে। ফাইভদের বংশই মূলত এই পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে; আর ‘আলোর দিশারী’ একটা অদ্ভুত চরিত্র যার বয়স নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। পৃথিবীতে মানুষ আসার সাথে সাথেই তারও আগমন হয়েছে এই পৃথিবীতে কোন একটা অজানা উদ্দেশ্য নিয়ে, সেটাই মনে হলো। অন্তত এ পর্যন্ত পড়ে মনে হচ্ছে সে হচ্ছে ‘দাজ্জাল’। বা ‘দাজ্জাল’/ ‘এন্টি ক্রাইস্ট’ থেকে অনুপ্রাণিত কোন সিরিজ কিনা এটা এখনো জানিনা। . রেন – য়্যুয়ানএর বিজনেস পার্টনার এবং ফ্লার্ট একটা ছেলে। বেস্ট প্রোগ্রামার ইন হিজ টাইম। . পিউয়ি – আর্কিওলজিস্ট একটা মেয়ে; পাগল গবেষক টাইপ; যে একটা সময় ঈশ্বর আর ভাগ্য নিয়ে গবেষণা শুরু করে দেয়। . মারুখ, সুনান – আপাতত মনে হচ্ছে রুয়েমের হয়ে কাজ করাটাই তাদের উদ্দেশ্য। এর মধ্যে মারুখ আবার ক্লিন ফ্রিক, আর সুনানকে ব্ল্যাকমেইলার মনে হলো। . আরও বেশ কিছু চরিত্র আছে। তবে প্রত্যেকেই আলাদা। বোঝা যায় লেখক অনেক এনিমে পছন্দ করেন। এনিমের মতোই প্রতিটা চরিত্রে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, কয়েকটা চরিত্রের ছবিও আছে বইতে। তবে চরিত্রগুলো পাঠকের মনে জায়গা করে নিতে তাদের আরো বিকশিত করা লাগবে। দেখা যাক, লেখক কিভাবে সেটা করেন পরের পার্টগুলোতে। . বই পড়ে বিভিন্ন জায়গায় লেখককে নাস্তিক ভেবেছিলাম প্রথমে, কিন্তু পরে এবং লেখকের অন্য আরও কয়েকটা লেখায় ঘোরতর একেশ্বরবাদে বিশ্বাস – সব মিলিয়ে আমি লেখকের মনস্তাত্বিক দিক নিয়ে আর তেমন কিছু বলার নেই। . . বইয়ের ফরম্যাটিং, ফন্টসাইজ অনেক খারাপ হয়েছে। বাইন্ডিংও ভালো না অত। কপাল ভালো যে পৃষ্ঠাগুলো আরামদায়ক। তবে আমি প্রথম কপি প্রথম অটোগ্রাফ সহ পেয়েছি – তাই সব মাফ। লেখকের জন্য শুভকামনা; পরের পার্টের অপেক্ষায় আছি।
Was this review helpful to you?
or
ডিসক্লেইমার: আমি খুব ধীর গতির পাঠক। গুটি গুটি হরফের ৩১৬ পৃষ্টার বইটি শেষ করেত আমার দীর্ঘদিন লাগবে। কিন্তু ১৪৩ পৃষ্টা পড়ার পরই কেন জানি বইটি সম্পর্কে কিছু লিখতে বেশ তাগিদ অনুভব করলাম ভেতর থেকে। তাই এই রিভিউটি ৩১৬ পৃষ্টার মূল বইয়ের ১-১৪৩ পৃষ্টা পর্যন্ত কাহিনীর উপর বেইস করে লেখা। সবার ভালো লাগলে আমার শ্রমকে সার্থক মনে করবো। হ্যাপি রিডিং। _______________________________________________________________ পাঠ প্রতিক্রিয়া কুশাঃ প্রারম্ভ, (মূল বই, পৃষ্টা: ১-১৪৩) _______________________________________________________________ কোন কোন বইয়ের স্বয়ং উৎসর্গ পত্রটিই অনেকটা দৃষ্টি খুলে দেয়ার মতো হয়। Eye Opener. হয় যথেষ্ট Inspiring ও Enlightening. উৎসর্গ পত্রটি পড়লেই বই সম্পর্কে আগ্রহ জেগে ওঠে। উৎসর্গ পত্রটিই বইয়ের গভীরে পৌছাতে প্রেরণা জোগায়। লেখক/লেখিকার মনস্তত্ব সম্পর্কে জানতে আগ্রহী করে তোলে। আমার কাছে কোন বই পড়ার অর্থ অনেকাংশে এর স্রষ্টার মনস্তত্ব পরিভ্রমন। কোন বই পড়তে গেলে বইয়ের লেখক/লেখিকাকেও আমি কাহিনীর একটি চরিত্র হিসেবে বিবেচনা করি। অদৃশ্য একটি চরিত্র, কিন্তু কাহিনীর পরতে পরতে তার সদা উপস্হিতি বিদ্যমান। কুশাঃ প্রারম্ভ ও অনেকটা সে্ই ধরণেরই একটি বই। এর বর্ণ থেকে বর্ণে, শব্দ থেকে শব্দে, বাক্য থেকে বাক্যে, পাতার পর পাতায় লেখিকার অস্তিত্ব জানান দিতে থাকে নিদারূন বিহ্বলতায়। তেমনি এর উৎসর্গ পত্রটি পাঠককে ভ্রু কুঁচকে থমকে দাঁড়াতে বাধ্য করে। উৎসর্গ পত্রটি নীচে তুলে দিলাম, উৎসর্গ- “তাদের জন্য যারা কখনও হারতে জানেনা; যাদের কাছে বাঁধা একটা নতুন চ্যালেন্জ; যারা প্রশ্ন করে- কে আমরা? কেন আমরা? কোথায় আমরা? কি করছি আমরা? যাদের কাছে জিত মানে অন্যকে হারিয়ে দেয়া না; এবং তাদের জন্য যারা অনেক রহস্য জানতে পেরেও ধৈর্য ধরে সবার জেগে ওঠার অপেক্ষা করছে; আর সঙ্গোপনে ভালোবাসা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। যদিও এই শেষ দলের মানুষের কাছে এই ছোট্ট নিবেদন তেমন কিছু আসে যায় না। কারণ, আমি নিশ্চিত- তাদের কাছে মুখের বুলির চেয়ে অনুভূতি বেশী গুরুত্বপূর্ণ।” এহেন উৎসর্গ পত্র পড়ে মনে হয় বইটি পড়া বেশ সুখকর অভিজ্ঞতাই হবে। মনে হয়, বইটির স্রষ্টার অনুভূতি এবং পাঠকের অনুভূতি হয়তো কিছুটা হলেও মিলে যাবে। মনে তখন একটা স্বস্তি কাজ করে। আর কোন বই যদি নতুন ভাবনার খোরাক না জোগায় তবে সে বইকে সার্থক বলাটা আনেকটা তেলাপোকাকে পাখি বলার মতো। এমন অনেক বইয়ের মুখোমুখি হয়েছি জীবনে।। আবার এমন অনেক বই আছে যার শুরুতেই পাঠক এমন কিছুর মুখোমুখি হন, যা তার মন ও মগজে এমন কিছু ইনপুট দেয় যা পাঠকের নিজের ভাবনার সাথেও অনেকটা মিলে যায়। পাঠকের পড়ার আগ্রহ তখন হয়তো দ্বিগুন/তিনগুন হয়ে যায়। কুশাঃ প্রারম্ভ শুরু করতে গিয়ে আমিও তেমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই। বারবার কুঞ্চিত ভ্রু নিয়ে কোন কোন প্যারাগ্রাফের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। বিশেষ ভাবতে হয়। আর যখন ভাবি যে এটি লেখিকার প্রথম বই, ভ্রু কুঞ্চন তখন কপালে চিন্তার রেখাতে পরিণত হতে খুব একটা বিলম্ব হয় না। কুশাঃ প্রারম্ভ পড়তে গিয়ে এমনি ভাবে বার বার ভ্রু কিংবা কপাল কুঁচকাতে বাধ্য হচ্ছি। বই থেকে তুলে দেয়া নীচের অংশটুকুতে আমাদের প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্হা এবং প্রথাগত ক্যারিয়ার গঠন প্রণালীর প্রতি আঙ্গুলি নির্দেশ করে বিশাল একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন অংকিত হয়েছে। কপাল কুঁচকানোর মতোই ভাবনা। "আগে মানুষের জন্ম হতো একটা শেকলে আটকে থেকে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করার জন্য। জীবনের নির্দিষ্ট একটা সময় শিশুদের ব্যয় করতে হত স্কুল নামক একটা জায়গায়; যেখানে তাদের নির্দিষ্ট কিছু জ্ঞান মুখস্ত করতে দেয়া হতো। প্রতি দশকে পৃথিবীর জ্ঞান ভান্ডার দ্বিগুণ হতো; নতুন নতুন জ্ঞান জমা হতো পৃথিবীর এসাইক্লোপিডিয়ায়, খুঁজে পাওয়া যেত সমুদ্রের নিচের কোন উত্তেজনাময় শহর, জানা যেত বহু আলোকবর্ষ দূরের কোন উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা, পাওয়া যেত পিরামিডের নতুন রহস্য, অথবা হাজার বছরের পুরনো কোন সভ্যতার জাদুকরি সব প্রযুক্তি - যা মোটেও ঐ সময়ের সাথে খাপ খায় না; সেই সাথে তৈরী হতো একটার পর এটা নতুন নতুন প্রযুক্তি। অথচ সেসবের কিছুই থাকতো না পাঠ্যবইয়ের পাতায়। এমনকি প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারও শেখানো হতো না এসব শিশুদের। মান্ধাতা আমলের জ্ঞান নিয়েই ছেলেমেয়েদের খুশী থাকতে হতো। তাদের মাথায় তথ্য ধরে রাখার ক্ষমতা যাচাই করে সমাজের পেশাক্ষেত্রের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হতো। আর এসবের মাঝে সফল হওয়া কিছু ছেলেমেয়েরা নিজেদের বোঝাত যে, তারা দেশ ও সমাজের জন্য অনেক কিছু করছে। আর যদি কোন ভাবে কেউ এই সফলতার দৌড়ে কোন একটা পদে বাধা পেয়ে মুখ থুবড়ে পড়তো, তাহলে তো সবই গেল; তার নাম তখন হতাশাচ্ছন্ন বিকরগ্রস্তদের খাতায় উঠতো। এরা ধরেই নিত যে, তাদের জীবন শেষ। পরীক্ষা আর ভাল চাকরীর গোলক ধাঁধায় সবাইকে আটকিয়ে সফল বিফল প্রত্যেকের ইচ্ছেশক্তিকে মেরে ফেলার এই ষড়যন্ত্রে হয়তো সফলতার উল্লাস করে বেড়াতো পৃথিবীর ভয়ঙ্কর কিছু মাস্টারমাইন্ড।" [কুশা - প্রারম্ভ, পৃষ্টা: ৩-৪] বইটি পড়তে গেলে এমন অনেক চিন্তার সাথে পরিচিত হতে হয়, যা আমাদের প্রথাগত সমাজের নানা সিস্টেমের প্রতি এমন প্রশ্নবোধক চিহ্ন নির্দেশ করে। মনে হয়, বইটি চিৎকার করে আমাদের সমাজের নানা অসংগতিপূর্ণ সিস্টেমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। এই বইটির জনরা নিয়েও বেশ দ্বিধা-দ্বন্ধে পড়তে হয়। ঠিক ক্যাটাগরাইজ করা যায় না এটাকে কোন জনরাতে ফেলবো। বইয়ের ফ্ল্যাপ অনুযায়ী উপন্যাসের ধরণ সাইন্স ফিকশন। সাথে রয়েছে স্পিরিচ্যুয়ালিটি, সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার, হিউম্যান এভোল্যুশন, মিথ, প্রাচীন ইতিহাস, ধর্মীয় ইতিহাস, ফিলসফি, মিস্ট্রি আর এ্যাডভেন্চার। ফ্ল্যাপ পড়লে জনরা নিয়ে একটা ধারণা পাওয়া যায়। আসলেই বইটি সবকিছুর মিশেল। সাইন্সের অলিগলি থেকে শুরু করে, ধর্ম, পুরাণ, ইতিহাস, দর্শন, গোপন সংগঠন, ষড়যন্ত্র, পাল্টা-ষড়যন্ত্র মানব মনের গতি প্রকৃতির রাজপথে ভ্রমন- সবকিছু যেন মলাটবদ্ধ হয়েছে একটি বইতে। চিন্তা-চেতনায় বইটি বেশ সমৃদ্ধ বলেই মনে হয়। সবচেয়ে আকর্ষন করে বইটির কাহিনী। যদিও নাম ভূমিকায় রয়েছে কুশা নামের এক তরুণী, কিন্তু কাহিনীর শুরু হয় মেডিটেশনরত য়্যুয়ান নামের বিবর্তিত এক মানুষকে দিয়ে। প্রায় শত বছর আগে ভয়ংকর এক ভূমিকম্পে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ জনপদই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলো গুটিকয় মানুষ। পোষ্ট এ্যাপোকেলিপ্টিক এই অঞ্চলে শুরু হয় তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। ধীরে ধীরে বেঁচে থাকা মানুষগুলো টের পায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে পুরো জনপদ ধ্বংস হয়ে গেলেও তাদের মধ্যে ঘটে গিয়েছে দুর্দান্ত এক জেনেটিক পরিবর্তন। অশেষ চেষ্টায় তারা পুন:সংস্কার করে সমাজ ব্যবস্হাকে। গড়ে তোলে কৃষি ব্যবস্হা, নগর ব্যবস্হা, অর্থনীতি, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সরকার ও রাজনীতি। নগরগুলোকে তারা নাম দেয় গ্রিক বর্ণমালার অক্ষরের নামানুসারে আলফা, বেটা, গামা এমনভাবে। য়্যুয়ান সেই বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোরই একজন। জেনেটিক বিবর্তনে তার শরীরের কোষে এমন এক পরিবর্তন এসেছে যে তার বয়স বাড়ছে খুবই স্বল্প হারে। বয়স প্রায় শতাধিক বছর হলেও তাকে দেখলে এখনও ত্রিশোর্ধ যুবক মনে হয়। সে আলফাটেক নামক একটি গাড়ী প্রস্তুতকারক অর্গানাইজেশনের প্রধান। কিন্তু এর আড়ালে তার রয়েছে এক গোপন মিশন। রুয়েম নামক বিবর্তিত আরেকজন ছিলো য়্যুয়ানের বন্ধু। তারা দুজনে মিলে দুর্যোগ পরবর্তী মানবতাকে পুনরায় গড়ে তুলতে বেশ মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আদর্শগত কারনে পরে তাদের মাঝে ঘটে যায় এক বেদনা বিধূর বিচ্ছেদ। তারা অনেকটাই যেন X-Men সিরিজের প্রফেসর এক্স (চার্লস য্যাভিয়ার) ও ম্যাগনেটোর মতো। প্রথমে বন্ধু থাকলেও পরে নানা ঘটনায়া তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্ধীতে পরিণত হয়। যদিও একমাত্র ২/১ বাক্যের আভাস ছাড়া লেখিকা সেসব কাহিনীর কোন কিছুই বিধৃত করেন না এই কয়েক পাতায়। তবুও আভাসে বোঝা যায় সামনের কোন এক ভলিউমে এ নিয়ে বিস্তারিত কাহিনী থাকবে। এই রুয়েমও একটি শহরের বেশ উচ্চপদস্হ এক কর্তা ব্যক্তি। তারও রয়েছে অনেক সুপার পাওয়ার। এবং চরিত্রগত দিক দিয়ে সে তার প্রতিদ্বন্ধী য়্যুয়ানে সম্পূর্ণ বিপরীত। সবকিছুর আড়ালে তারও রয়েছে এক গোপন মিশন। সেই মিশন সম্পর্কে আগেভাগে জানিয়ে পাঠকের বিরক্তির কারণ হতে চাচ্ছি না। রুয়েমের চরিত্রটি আমাকে বেশ টেনেছে। সে বেশ একটু চরমপন্হী কিসিমের লোক। একটা ঘটনায় তার মনস্তত্বের সাথে ব্লু হোয়েল গেমের স্রষ্টা ফিলিপ বুদেকিনের মনস্তত্বের বেশ মিল পাওয়া যায়। কাহিনীর একেবারে প্রথম দিকেই দেখা যায় য়্যুয়ান রুয়েমের সাথে আলফা নগরের একটি নির্জন স্হানে দেখা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রুয়েমই য়্যুয়ানের সাথে দেখা করার আগ্রহ ব্যক্ত করে। বর্তমানে চির প্রতিদ্বন্ধী হলেও পুরোন বন্ধুর ডাকে অবহেলা করতে পারে না য়্যুয়ান। তো সময় মতো সেই নির্জন স্হানে রুয়েম গিয়ে দেখলো সেখানে য়্যুয়ান অনুপস্হিত। অপেক্ষার সময়টাতে সেখানে হাজির হয় ৪/৫ জন মাতালের একটি দল। একটি মেয়েকে ধর্ষন করতে গেলে রুয়েম মেয়েটিকে মাতালগুলোর হাত থেকে রক্ষা করে মাতালগুলোকে মৃত্যদন্ড দিয়ে। এবং সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার এরপর সে ধর্ষিতা মেয়েটিকেও মেরে ফেলে। এর মাঝেই য়্যুয়ান এসে হাজির হয় সেখানে। সে এই হত্যাকান্ডের কৈফিয়ত দাবী করে রুয়েমের কাছে। এবার আমরা রুয়েমের ভাষ্যে শুনি সে কি ভাবছে এদের নিয়ে, “রুয়েম এবার ব্যাখ্যার সুরে বোঝানোর চেষ্টা করে বললো, “দেখো, পৃথিবী থেকে যদি এসব অধম প্রাণীদের উৎখাত করি তাহলে পৃথিবীর অনেক উপকার হবে। মেয়েটাকে যেভাবে রেইপ –” “আর মেয়েটা?” য়্যয়ানের কন্ঠস্বর এখনও আশ্চর্য রকম শান্ত অথচ কঠিন আর শিউরে ওঠার মতো ঠান্ডা। এবার রুয়েম য়্যুয়ানের চোখ থেকে দৃষ্ট সরিয়ে নিল। উল্টো দিকে ঘুরে কিছুক্ষন পর জবাবা দিলো, “যার বেঁচে থাকার কোন স্পৃহা নাই তার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নাই।” “সেটা তুমি বিচার করার কে?” এবারও কন্ঠ শান্ত রেখে বললো য়্যুয়ান। “মেয়েটার চোখ দু’টো বলছিল – আমাকে মেরে ফেলো – তাই বাঁচতে দেইনি। যার বেঁচে থাকার ইচ্ছা নাই, সে বেঁচে থেকে পৃথিবীর কিছু অক্সিজেন পুড়িয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরী করা ছাড়া আর কিছু করতে পারবে না।” নির্লিপ্ত কন্ঠে বললো রুয়েম। তার কন্ঠে এবার কোন রসিকতার সুর নেই। অর্থাৎ, সে যা বলছে তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। এমন উন্মাদ ও স্যাডিষ্ট চরিত্রের সাক্ষাত পাওয়া আমার জন্য বেশ এক্সাইটিং। আর কুশা হচ্ছে এমন একজন তরুণী যার উপর বিবর্তন খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। অনেকটা আমাদের মতোই সাধারণ একজন মানুষ সে। তাকে আমরা দেখতে পাই প্রথম থেকেই দেখতে পাই প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা রাশাদের গৃহে। এ পর্যন্ত কাহিনীতে তার মা-বাবার কোন পরিচয় আমরা পাইনা। রাশাদের গৃহেই সে তাদের পালিতা কন্যা হিসেবে বড়ো হয়ে ওঠে। সেখানে তার সাথে থাকে রাশাদের মেয়ে ত্বাহা ও স্ত্রী মিরা। কুশার শরীরে বিবর্তন খুব একটা প্রভাব বিস্তার না করতে পারলেও তার রয়েছে অত্যন্ত প্রখর ইনট্যুইশন পাওয়ার। অনেক ছোটবড় ব্যাপারই সে নিজের ইনট্যুইশন পাওয়ার ব্যবহার করে আগে ভাগেই বলে দিতে পারে। সে আবার প্রোগ্রামিং জিনিয়াস। অনেকটা প্রডিজি লেভেলের প্রতিভা তার মাঝে আমরা দেখতে পাই। অনলাইনে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগীতা গুলোতে সে সর্বদা সর্বোচ্চ স্কোর হিট করে। নিজেই আবার নিজের রেকর্ড ব্রেক করে। তবে কুশার চরিত্রের সবচেয়ে নিগেটিভ দিক হলো, সে ঠিক সামাজিক মানুষ নয়। প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যা শিক্ষার জন্য স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে না যাওয়ার কারণে সে রীতিমতো নি:সঙ্গ মানুষ হিসেবেই বড়ো হয়েছে। তার পৃথিবী রাশাদ, ত্বাহা ও মিরার মাঝেই সীমাবদ্ধ। দুর্দান্ত ইনট্যুইশন ও প্রডিজি লেভের প্রতিভার অধিকারিণী হয়েও বাইরের সমাজে গেলে কুশাকে খুব কনফিউজ এবং ভীত হিসেবেই আমরা দেখতে পাই। লেখিকা কুশার চরিত্রটি খুব দরদ দিয়ে সৃষ্ট করেছেন বলেই তাকে এমন জীবন্ত মনে হয়। কাহিনীর এক পর্যায়ে এই কুশাকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করা নিয়েই য়্যুয়ান ও রুয়েম দুই চির প্রতিদ্বন্ধীর মাঝে শুরু হয় এক ক্ষমতার লড়াই। তারা দু’জনেই তাদের গোপন মিশনের স্বার্থে কুশার প্রতিভাকে কাজে লাগাতে চায়। পাশাপাশি থাকে তাদের গোপন মিশনের পথ চলা। মূলত: এই তিন চরিত্রকেই কেন্দ্র করে কাহিনী এগিয়ে যায়। আর পাশাপাশি কাহিনীর প্রয়োজনে আসে আরো নানা চরিত্র। য়্যুয়ান, রুয়েম, কুশা, টিজে, ত্বাহা, রেন এবং আরো হাজারো রকম চরিত্রের উপস্হিতি, মজার মজার সব ডায়লগে পরিপূর্ণ কাহিনীটি বেশ দুর্দান্ত এবং ইন্টারেস্টিং একটি প্লট হিসেবে বিবেচিত হয় আমার কাছে। এক পর্যায়ে মঞ্চে আভির্ভূত হয় এক গোপন সংগঠন। সংগঠনটির পাঁচ জন সদস্যের উল্লেখ পাওয়া যায় কাহিনীতে। আর তাদের নেতা পুরোই এক ডেমনিক কারেক্টার। যাকে সবাই সম্বোধন করে ‘আলোর দিশারী’ নামে। নামটার মাঝে বেশ একটা নাটকীয়তার সুর রয়েছে। তবে সে কিভাবে ডেমনিক কারেক্টার তা পাঠককে পড়ার পরই বুঝতে হবে। এ সংগঠন ও তার নেতার ভাব-ভঙ্গি অনেকটা এখনকার যুগের বিশ্বনেতাদের মতো। তারাই যেন পুরো পৃথিবীর নিয়ন্ত্রনকারী। এমনই তাদের ভাব-সাব। তারা এসে কাহিনীতে বিশাল এক মোড় দিয়ে দেয়। তারা সকলের অগোচরেই সকলের উপর গোপনে স্পাইং চালায়। সকলকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করে। যদিও ১৪৩ পৃষ্টা পর্যন্ত পড়লে তাদের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে তেমন কিছুই ঠিক বোঝা যায় না। তবে এটুকু আভাস পাওয়া যায় গল্পে তাদের বেশ শক্তিশালী একটি ভূমিকা রয়েছে। গল্পের প্রায় অর্ধেকটা পড়া হয়ে গেলেও যে ব্যাপারটা প্রথম এক চ্যাপ্টার পড়লেই ধরে ফেলা যায় তা হলো লেখিকার লেখনী। এতোদূর পড়ার পর মনেই হয়না লেখিকা নিতান্তই নতুন এবং এটি তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্হ। বেশ সহজ-সরল বর্ণনা এবং শব্দ চয়নেও তিনি বেশ সাবলীল। যদিও ইংরেজী শব্দের আধিক্য আমার মতো পাঠকদের জন্য বেশ একটু অস্বস্তি সৃষ্টি করে। তবে কিছুদূর পড়লেই সেটাকে আর কোন বাঁধা মনে হয় না। আর তার গল্প বলার ঢংও খুব সুন্দর। Step-by-Step কাহিনী এগিয়ে যায় তরতর করে। আরেকটি ব্যাপার যা ভালো লেগেছে, সেটি হলো কাহিনীর নতুনত্ব। অন্তত আমার পড়াশুনার ডোমেইনের বাইরের কাহিনী বলা যায় একে। সাইন্স ফিকশন বলতে আমার চোখে গ্রহ-নক্ষত্র-মহাকাশযান ছাড়া আর কিছুই ভেসে ওঠে না। আমাদের দেশের সাইন্স ফিকশন লেখকেরা যেন সাইন্স ফিকশনকে গ্রহ-নক্ষত্রেই আবদ্ধ করে রেখেছেন। সেই তুলনায় এই বইটি বেশ ইউনিক কিছু আইডিয়া নিয়ে হাজির হয় পাঠকের সামনে। তিনি সাইন্স ফিকশনের সাথে অন্যান্য জনরাগুলোকেও মিলেমিশে একাকার করে দেন। যা পড়লে পরিপূর্ন একটি জীবন দর্শনের সম্মুখিন হওয়া যায়। নতুন নতুন আইডিয়া ও টার্ম সম্পর্কে জানতে পাঠককেও গুগল করে বেড়াতে হয় দীর্ঘক্ষণ। মৌলিক কাহিনী হিসেবে লেখিকাকে সাহসী আখ্যা এবং সাধুবাদ জানানোই যায়। কারেক্টার ডেভলেপমেন্ট যদিও বেশ ধীর গতির, তবে বিশাল একটি কাহিনীতে এটি হওয়াই স্বাভাবিক। অনেকের ধীর গতিতে বিরক্তি আসলেও আমার কাছে খুব খারাপ লাগে না। এটি অনেকটা মজার কোন ক্যান্ডি চোষে চোষে খাওয়ার মতো। মুখের ভেতর ক্যান্ডি যেমন খুব ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়, বইটির সব কারেক্টারও তেমনি খুব ধীরে ধীরে ডেভেলপ হতে থাকে। আরেকটি সুন্দর বিষয় হচ্ছে কাহিনীর প্রয়োজনে কারেক্টারগুলোর মাঝে আন্ত:সংযোগ। আরেকটি বিষয় ভালো লাগা ও মন্দ লাগা দু’টোর সাথেই পরিচিত করে। যা ভালো লাগলো বইটির ভেতর লেখিকার নিজেরই হাতে আঁকা বেশ কিছু মোহনীয় আর্ট ওয়ার্ক। আর যা খারাপ লাগলো আর্ট ওয়ার্কের অপ্রতুলতা। আর্ট ওয়ার্কের পরিমান আরেকটু বাড়ানো যেতো। ১৪৩ পৃষ্টা পর্যন্ত এ্যাকশন-এ্যাডভেঞ্চারের পরিমানও বেশ কম মনে হয়েছে। কাহিনীর জটিলতাও খুব একটা ধরা পড়ে না। আশা করি পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে সেই অভাব কিছুটা মেটানো হবে। লেখিকার লেখার ঢঙ্গে এটা স্পষ্ট যে তিনি খুব ধীরে ধীরে পাঠককে কাহিনীর গভীরে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। ২০ নাম্বার অধ্যায়ে অবশ্য তেমনই আভাস পাই আমরা বইটি থেকে। জটিলতার সৃষ্ট হলো বলে। বইয়ের সবচেয়ে নেগেটিভ দিক হচ্ছে এর মুদ্রিত মূল্য। অন্যান্য থ্রিলার বইয়ের দামের তুলনায় এ বইয়ের দামটা তুলনামূলক ভাবে একটু বেশীই মনে হয়। প্রথম বই হিসেবে প্রকাশককে এদিকে একটু দৃষ্টি দেয়া উচিত ছিলো। যদিও বইটি হাতে নিলে দামের জন্য আর খুব একটা হতাশা কাজ করে না। ক্রিম কালারের কাগজে গোটা গোটা অক্ষরে ছাপা দুর্দান্ত বাঁধাইয়ে বইটি হাতে নিয়ে ধরে থাকতেই ইচ্ছে হয় সারক্ষণ। স্বয়ং লেখিকার নিজ হাতে করা প্রচ্ছদও বেশ একটা দ্যোতনার সৃষ্টি করে মনে। তবে কাগজ, বাঁধাই এসবের মান একটু কমিয়ে দিয়েও প্রাইসটা একটু কম্পিটিটিভ করা যেতো। দিন শেষে, থ্রিলার ঘরানার বেশ কিছু লেখকের প্রথম মৌলিক বই পঠনের অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু বলতে পারি যে, লেখিকা মিসবা তার প্রথম বইতেই বেশ প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। অন্তত আমার কাছে মোটেও মনে হয় না এটি লেখিকার প্রথম বই। বেশ পরিপক্ক তার ভাষাশৈলী এবং বর্ণনা ভঙ্গি। এটি আরো একটি গর্বের বিষয় যে, আমাদের দেশের লেখক/লেখিকাদের মাঝে আমরা মিসবার মতো প্রতিভাশীল এবং কল্পনাশক্তির অধিকারী একজনকে পেয়ে গেলাম। আশা করি বইয়ের পরবর্তী কাহিনীতে তিনি তার পাঠক/পাঠিকাদের এমনভাবেই রোমাঞ্চের আস্বাদ দেবেন।
Was this review helpful to you?
or
The only thing I want to write about is, I just found a book in Bangla where I can have lots of crushes on its characters. They are absolutely splendid and super cool with superpowers and wisdom. I love it more because the storytelling is like anime style. And I super love animes. ^_^ Please writer, let us know when the next volume will come. Pleeeeeeeeeeeese. ^_^ Yuan 3, Ruem 3 ^_^
Was this review helpful to you?
or
বেশ বড় একটা ভূমিকম্পে দক্ষিন এশিয়া বিদ্ধস্ত হয়ে যায়। এবং অল্প কিছু বেঁচে থাকা মানুষগুলোর মাঝে তাদের বায়োলজিক্যাল-সারভাইভ্যাল-ইন্সটিঙ্কটের কারণে বিবর্তন হয়। এবং কিছু মানুষের মাঝে দেখা যায় সুপার-হিউম্যান পাওয়ার। তার প্রায় শত বছর পর গল্পের সেট। গল্পে কুশা নামের একটা মেয়ে, যে কিনা মূল চরিত্র, তার মাঝে কোন বিবর্তন দেখা গেলো না। অর্থাৎ, সে সাধারণ মানুষের মতোই দুর্বল। কিন্তু তার ইন্টিউশন এর বিশেষ ক্ষমতা আছে, যেটা স্বার্থলোভী ক্ষমতাধর কিছু মানুষ ব্যবহার করার জন্য তৎপর। সেই সাথে মেয়েটা মেশিনপোকা এবং প্রডিজি লেভেলের প্রোগ্রামার। য়্যুয়ান এবং রুয়েম বিবর্তিত ক্ষমতা সম্পন্ন উঁচু পদের মানুষ, যারা বিভিন্ন দ্বন্দের মধ্য দিয়ে যেতে থাকে। তারা নিষিদ্ধ ইতিহাসের গবেষক; এই বিবর্তিত মানুষ দুটো গল্পের অন্য দুই প্রধান চরিত্র। মজার ব্যাপার হচ্ছে, রুয়েম আবার এক্সট্রিমিস্ট গোছের মানুষ, যে কিনা কুশার ট্যালেন্টকে ব্যবহার করতে চায়। গল্প ধীরে ধীরে বেশ ইন্টারেস্টিং দিকে মোড় নেয় যখন পুরো পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রন করছে এমন একটা গ্রুপের উন্মোচন ঘটে গল্পে যাদের হয়তো হাত আছে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের পেছনে। এই ব্যাপারটাই আমার কাছে অবাক লেগেছে। সাধারণত, কন্সপির্যাসি থিওরি নিয়ে অনেক গল্প পড়েছি। কিন্তু কোথাও, মূল নেতাদের নিয়ে তেমন কিছু লেখা হয়নি। সব জায়গায় দেখা যায় যে, গল্পের শেষে বর্তমান হেডকে (ভিলেন) নায়ক হারিয়ে দেয়। এবং তাকে সরিয়ে নুতন আরেকজনকে দায়িত্ব দেয়া হয় পৃথিবী চালাবার। কিন্তু কে দেয় এই দায়িত্ব তাদের নিয়ে ধোঁয়াশা রেখেই মূলত শেষ হয় অন্যান্য গল্প। যেটা কুশাঃপ্রারম্ভ বইটাতে না মোটেও।বোঝা যায় যে, বেশ বড় ক্ল্যাশ আসছে সামনের সিরিজগুলোতে। কভার এবং প্রেস বিশ্লেষনঃ বইয়ের প্রচ্ছদ আমাকে বেশ আকর্ষণ করেছে। দেখতে পুরোপুরি ভিন্ন। বেশ ভালো কোয়ালিটির ক্রিম পেপারে ছাপা বই। তবে ফন্ট মনে হলো অন্যান্য বইয়ের তুলনায় একটু ছোট; যদিও পড়তে সমস্যা হয়নি আমার। কিন্তু বোঝা যায় পৃষ্ঠা সংখ্যা কমানোর একটা চেষ্টা করা হয়েছে; বইয়ে হয়তো ৪৫০+ পৃষ্ঠা সংখ্যা হতো। দশ বারোটার মতো জায়গায় যুক্তাক্ষর ভেঙ্গে গেছে, প্রিন্ট করতে গিয়ে বোধ হয়। তিন চারটার মতো টাইপিং ভুলও পেয়েছি। আরেকটা ব্যাপার ছিল পৃষ্ঠা নাম্বার, যা কিনা বইয়ের ভেতরের বাইন্ডিং এর দিকে দেয়া; এটা অবাক করা ফরম্যাটিং ছিল। আঁকা ছবি গুলোঃ এই ব্যাপারটা আমার বেশ ভালো লেগেছে। বইয়ের প্রচ্ছদের আঁকাটা লেখকের। বইয়ে প্রায় দশ বারোটার মতো ছবি আছে (সঠিক সঙ্খ্যার জন্য আমাকে একটা একটা করে পৃষ্ঠা আবার গুণে বের করা লাগবে, তাই বললাম না)। এবং ছবিগুলোর নিচে লেখকের সিগনেচার দেয়া। বইয়ের শেষে লেখকের পরিচয়ে জায়গাটায় বইয়ের ফেসবুক পেইজ দেয়া। পেইজে ঢু মেরে দেখলাম লেখকের এবং সেই সাথে আরও কিছু পাঠকের আঁকা ছবি। ছবিগুলো গল্পেরই কোন দৃশ্য কিংবা কোন চরিত্রের ডিজাইন। পেইজ থেকে লেখকের প্রোফাইলে গিয়েও দেখলাম, লেখক পেশায় আর্টিস্ট। এবং তার আঁকা অন্যান্য আর্টের তুলনায় বইয়ের দেয়া আর্টগুলো বেশ সাদামাটাই বলবো। কিন্তু সাদামাটা হলেও বেশ প্রফেশনাল। (আবার বোঝা গেলো প্রেস/ প্রকাশক কালি বাঁচানোর চেষ্টা করেছে সাদামাটা আর্ট দিয়ে, মূলত বইয়ের দাম বেশি না হয়ে যায় একারণেই হয়তো।) সমালোচনাঃ যেহেতু বইয়ের নাম কুশা তাই ভেবেছিলাম কুশার বেশ বড়ো ভূমিকা থাকবে। কিন্তু পরে দেখা গেলো, এই গল্পটা বেশ বড় একটা গল্পের প্রথম পর্ব মাত্র। এবং কুশা মেয়েটা অবশ্যই বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ প্লটের। প্রথম দিকে তাই মনে হচ্ছিলো লেখক প্লট শুরু করতে বেশ সময় নিচ্ছেন। কিন্তু পরে অবশ্য সেই রেশটা থাকলো না। কারণ, চরিত্রগুলো এতই অন্যরকম আর মজার ছিল যে, বেশ মায়া জন্মে গেছে তাদের জন্য। অনেকগুলো চরিত্র, কিন্তু লেখক কিভাবে যেন সবাইকেই উদ্দেশ্য দিতে পেরেছেন। চ্যাপ্টার ১৮ কিংবা ১৯ এ গিয়ে বুঝলাম এতগুলো পৃষ্ঠা এত কাহিনী পড়ে ফেললাম অথচ সেসবের কিছুই মূল প্লট ছিলনা? শুধুই চরিত্র সাজানোর জন্য এত দৃশ্য? কিন্তু আমি পছন্দ করেছি ব্যাপারটা। আমার যেসব ভালো লেগেছেঃ ১। আমার বড় গল্প ভালো লাগে। হ্যারিপটারের শেষ সিরিজটা যেদিন শুরু করেছিলাম, সেদিন বুকে বেশ ধাক্কা লেগেছিল। একটা ফ্যান্টাসির জগত শেষ হয়ে যাচ্ছে এই ভেবে। এই গল্পেও বেশ অনেকগুলো চরিত্র এবং প্লট বেশ বড়। ২। বাংলা ভাষায় এমন গল্প তাও অনুবাদ কিংবা বিদেশি কাহিনী অবলম্বনে না; ব্যাপারটা ভেবেই বেশ ভালো লাগলো। ৩। অসম্ভব হাই থটের বই। সবাই বুঝবে কিনা জানি না। সৃষ্টির রহস্য খুঁজছেন লেখক নিজেও, অস্তিত্বের রহস্যে বিচলিত লেখকের ডায়েরি মনে হয়েছে অনেকখানি জায়গায়। এবং সেগুলো মোটেও বোরিং হয়ে উপস্থাপিত নয়; প্লটের সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্য বজায় রেখে লেখকের নিজের কিছু চিন্তা ভাবনা লেখা বিভিন্ন জায়গায়। ৪। সায়েন্স ফিকশন এবং একই সাথে ইতিহাসের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে বেশ ভালো রিসার্চ না করেই অনেকেই থ্রিলার বই লিখে ফেলেন। কিন্তু এই বইয়ে সেটা করা হয়নি। কোনটা সত্য আর কোনটা কল্পনা এ দুয়ের মাঝে দক্ষ সীমারেখা আছে। একই সাথে, সায়েন্স ফিকশন কিংবা ফ্যান্টাসি হলেই যে, দুনিয়ার সব আজগুবি ব্যাপারও যুক্তিহীন ভাবে সম্ভব সেটাও পুরোপুরি এভএড করা হয়েছে গল্পে, যেটা আজকালকার ফিকশনে এমনকি থ্রিলারেও দেখিনা। ৫। চরিত্রগুলো বেশ ভালো। বাংলা ভাষায় লেখা বইগুলোতে আমি কখনও স্বপ্ন দেখা, বা ব্যর্থতার পথে থেকেও কখনও হার না মানা, গুনী চরিত্র খুবই কম দেখেছি। মেয়ে চরিত্রগুলো যেরকম তুখোড়, ছেলে চরিত্র গুলোও ঠিক তেমন দক্ষ। কোন সেক্সিস্ট মতদর্শন নাই। নারীদের কিংবা পুরুষদের – কাউকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়নি কোথাও। চরিত্রে যতই ভিন্নতা থাকুকনা কেন সবাই কিছু না কিছুতে দক্ষ এবং পারফেক্ট। এমনকি ভিলেনের চরিত্রে রিসল্ভও বেশ চমৎকার। যারা বোরিং কিংবা লুজার টাইপ চরিত্রের উদ্দেশ্যহীন জীবন কাহিনির বইয়ে বেশি মজা পান না তারা নিঃসন্দেহে পছন্দ করবেন এই গল্প। তাছাড়া, বইয়ের উৎসর্গ পৃষ্ঠায়ও দেখলাম লেখক লিখেছেন, “তাদের জন্য যারা হেরেও হারতে জানে না; যাদের কাছে বাধা মানে নতুন চ্যালেঞ্জ...”
Was this review helpful to you?
or
আমি এখনো পর্যন্ত এমন মিক্সড জানরার কোন বই এদেশের কোন মৌলিক লেখক লিখেছে বা বাংলা ভাষায় আছে বলে শুনিনি। নিঃসন্দেহে ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে আলোচিত হবার মতো একটা বই। শুধু সায়েন্স ফিকশন বললে মারাত্মক ভুল ভাবে তুলে ধরা হবে বইটাকে পাঠকের কাছে। বইয়ের সময়ের প্রেক্ষাপট শুধু ভবিষ্যতের একটা সময়ে - যার কারণে অনেক জটিল সায়েন্টিফিক টেকনোলোজির সেট এসেছে। কিন্তু তাই বলে মোটেও এটাকে শুধু সাই-ফাই বলা যায় না। বরং পুরো গল্পটাই নিষিদ্ধ ইতিহাসের পিছনে ছুটে চলা কিছু দলের এডভেঞ্চার বলা যায়। সেই সাথে ওয়ার্ল্ড কন্সপির্যাসি আর ফিলসফির ছোঁয়া। আর চরিত্রগুলো অসম্ভব স্ট্রং, পাঠকের মন জয় করার মতো অনেকগুলো ভিন্ন ধরণের চরিত্র আছে এই গল্পে - যেটা বাংলা সাহিত্যে খুবই কম। অনেক শিক্ষামূলক একটা বই যেটা সাধারণত বিনোদনেপূর্ণ থ্রিলার বা সাই-ফাইএ দেখা যায় না। ড্যান ব্রাউনও গুপ্ত ইতিহাস নিয়ে থ্রিলার লিখেন, কিন্তু তারপরও আমি বলবো ব্রাউন তার বইতে পাঠককে জোর করে আটকে রাখেন, তথ্য পরে রিভিল করবেন প্রথম দুশো পৃষ্ঠা নাকে দড়ি বেঁধে ঘোরাবেন এমন একটা ভাব। কিন্তু এই বইয়ে অবাক লাগলো যেটা তা হচ্ছে - এতো ঘটনার সন্নিবেশ, সমান তালে এগিয়ে চলা কাহিনী, চরিত্র বিকাশে যেখানে যতখানি দৃশ্য দরকার ততটুকুই বর্ণনা - এগুলো ভালো লেগেছে। লেখককে জোর করে সাস্পেন্স তৈরি করতে হয়নি। সাস্পেন্স এম্নিতেই যথেষ্ট ছিল। পরের বইতে কুশার ডেভেলপমেন্ট দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। নিঃসন্দেহে ৫ পাবার মতো একটা বই। এরকম টপিকে এমন জটিল প্লটে বাংলায় কোন বই লিখা হয়নি আমার ধারণা। কেউ জেনে থাকলে জানাবেন।