User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
সূরা কাহাফের আলোকে দাজ্জালের বিভিন্ন ফেতনা ও তার স্বরুপ আলোচিত হয়েছে, শেষ জামানায় ঈমানের উপরে আটল থাকতে সহায়ক গ্রন্থ।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_জুন বইঃ ঈমান ও বস্তুবাদের সংঘাত লেখকঃ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. অনুবাদকঃ মাওলানা সাদ আব্দুল্লাহ মামুন প্রকাশেঃ রাহনুমা প্রকাশনী প্রকাশকালঃ অক্টোবর ২০১৭ পৃষ্ঠাঃ ১৭৬ (পেপারব্যাক) মুদ্রিত মূল্যঃ ২০০ টাকা সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ শেষ যামানার ভয়ানক ফিতনা থেকে বাঁচতে সূরা কাহাফের অনন্যসাধারণ ফযিলত ও গুরুত্বই মূলত লেখককে আকৃষ্ট করে এই সূরা নিয়ে গভীর অধ্যায়ন ও গবেষণা করার জন্যে। সূরা কাহাফই কেন নির্বাচন করা হল? কী এমন বিশেষত্ব এ সূরার যে দাজ্জালের ফিতনা থেকেও বাঁচাতে পারে? এ সূরার অন্তর্নিহিত শিক্ষা থেকে শেষ যামানার উম্মত হিসেবে আমাদের জন্যে কোন কোন মূল শিক্ষা লুকায়িত আছে? দক্ষ ডুবুরি যেমন সাগরতলে ডুব দিয়ে মুক্তো নিয়ে আসে, বিদগ্ধ আলেম সাইয়িদ আবুল হাসান আলী নাদভী (রাহি) ও ডুব দিয়েছিলেন সূরা কাহাফের ভেতর, নিজ গবেষণালব্ধ মুক্তো সদৃশ শিক্ষাগুলোই লিপিবদ্ধ করেছেন এই বইয়ে। বইটি গতানুগতিক তাফসীরের ঢংয়ে না লিখে লেখক সূরা কাহাফকে মূলত চারটি ঘটনায় ভাগ করেছেন, সেগুলো থেকে শিক্ষা লিপিবদ্ধ করেছেন। এবং দেখিয়েছেন যে, আধুনিক যুগের সবচেয়ে ভয়াবহ ফিতনা হল ভোগবাদ ও বস্তুবাদ। লেখক এ ধরনের কুফরী জীবনদর্শন থেকে পরিত্রাণের পথও বাতলে দিয়েছেন সুনিপুণভাবে। লেখক পরিচিতিঃ সাইয়িদ আবুল হাসান আলী নদভী বিংশ শতাব্দীর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন ইসলামিক চিন্তাবিদ, ঐতিহাসিক, লেখক এবং পন্ডিত ব্যক্তিত্ব। তিনি বিভিন্ন ভাষায় ৫০টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি "আলী মিয়াঁ" নামেও পরিচিত। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে আলী নদভী তাঁর রচিত গ্রন্থ মা যা খাসিরাল 'আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমীন (মুসলামানদের পতনে বিশ্ব কী হারালো?)-এর জন্য মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে খ্যাত বাদশাহ ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন। পুরস্কারের নগদ দুই লাখ রিয়ালের অর্ধেক তিনি আফগান শরণার্থীদের জন্য এবং বাকী অর্ধেক মক্কার দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে (একটি হিফজখানা এবং মাদরাসা আল-সাওলতিয়াহ)দান করে দেন। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে সাহিত্যে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ৭ খণ্ডে রচিত উর্দু ইতিহাস গ্রন্থ তারীখে দাওয়াত ওয়া আযীমত (সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস)-এর জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে আলী নদভীকে সুলতান ব্রুনাই এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। যার মূল্য ছিল বিশ লক্ষাধিক ভারতীয় রুপি। আলী নদভী পুরস্কারের সমস্ত অর্থ বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও অসহায়দের মধ্যে বিতরণ করে দেন। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে আলী নদভী দুবাইয়ে তিনি বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন। দুবাইয়ের যুবরাজ এবং আরব আমিরাতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শেখ মুহাম্মাদ ইবনে রুশদের হাত থেকে গ্রহণ করা প্রায় এক কোটি পঁচিশ লক্ষ ভারতীয় রুপি সমমূল্যের এ পুরস্কারের পুরোটা তিনি বিভিন্ন দাতব্য কাজে ব্যয় করেন। বিস্তারিত পাঠ পর্যালোচনাঃ লেখক সম্পূর্ণ সূরা কাহাফকেই চিত্রায়িত করেছেন ঈমান ও বস্তুবাদের সংঘাতরুপে। সমগ্র বইতে ভোগবাদী দর্শনের অসাড়তা ফুটিয়ে তুলেছেন। বর্ণনা করেছেন শিক্ষা ও উত্তরণের উপায়। সমগ্র সূরাকে মোট চারটি মূল ঘটনায় ভাগ করে তা থেকে মূল শিক্ষা যা বের করেছেন তা অতি সংক্ষেপে নিম্নরুপঃ ১. আসহাবে কাহাফের ঘটনা থেকে শিক্ষাঃ এটি এমন প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক একটি ঘটনা যা মুসলিম-অমুসলিম সকল ঐতিহাসিকগণই সোৎসাহে বর্ণনা ও লিপিবদ্ধ করেছেন। ঈসায়ী ২য় শতাব্দীতে মহাপ্রতাপশালী রোমান নগরী আফিসুসের রাজপরিবারেই বেড়ে উঠে একদল তরুণ, হয় তাওহীদের বিশ্বাসে দীক্ষিত। তখনকার বিশ্বে একত্ববাদী ধর্ম হিসেবে খ্রিস্টীয় ধর্মের অল্প কিছু লোকই টিকেছিলেন, হচ্ছিলেন অমানবিক নির্যাতনের শিকার। এমন সময় রাজপরিবারেরই একদল যুবক রাজার আদেশ অমান্য করে তাওহীদের ঘোষনা দেয়, অস্বীকৃতি জানায় মূর্তিপূজারী বস্তুবাদী সাম্রাজ্যের সকল রসম রেওয়াজকে। ইমান বাঁচাতে গা ঢাকা দেয় গুহার মধ্যে। সূরাটি যখন নাজিল হয় তখন মক্কার মুসলিমরা নির্যাতিত, নিষ্পেষিত। আল্লাহ যেন আসহাবে কাহাফের ঘটনা বর্ণনা করে তাদেরকে সাহস যোগালেন, জানিয়ে দিলেন সামনে এগিয়ে যাওয়ার পাথেয়। এই যুবকেরা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করেছিল। অগ্রাহ্য করেছিল চাকচিক্যময় আয়েশী বস্তুবাদী জীবন। ইমানকেই শ্রেষ্ঠ সম্পদ জেনে তা বাঁচাতে গা ঢাকা দিয়েছিল। আল্লাহও তাদের সাহায্য করেন। তিনশত বছরের নিদ্রার পর জেগে তারা আবিস্কার করে, দুনইয়া বদলে গেছে। আগের যুগে যখন তারা ছিল ব্রাত্য, এখন তাদেরকেই মানুষ সসম্মানে ভক্তি করে। যুবকেরা বাহ্যিক উপায় উপকরণ নিয়ে ভাবেনি, সমাজে কিভাবে টিকবে, কয়দিন বাঁচবে, খাবার ফুরিয়ে গেলে কোথায় যাবে এসব চিন্তা তাদেরকে ইমানহারা করেনি। তারা তাওয়াক্কুল করেছিল সেই সত্ত্বার উপর যিনি এসব কিছুরই নিয়ান্তক। তাইতো আল্লাহ তাদের দান করেছেন স্বীয় রাজকীয় ভান্ডার থেকে। আর এখানেই আছে আমাদের জন্য মূল্যবান শিক্ষা। যখন পার্থিব সব উপায় উপকরণ শেষ হয়ে যায়, তখন কিভাবে ইমান আকিদার উপর টিকে থাকা যায় তার বাস্তবিক উদাহারণ গুহাবাসী এ যুবকেরা। বর্তমান সভ্যতাকে লেখক অভিহিত করেছেন দাজ্জালী সভ্যতা হিসেবে। আমরা বাস করছি চরম বস্তুবাদী ও ভোগবাদী এক জগতে। এখানেও ইমান আকিদা নিয়ে টিকে থাকতে হলে আমাদের সংগ্রাম করতে হবে আসহাবে কাহাফের যুবকদের মত। আমরা হয়ত হয়ে পড়বো সমাজে ব্রাত্য, অপরিচিত কোন গুরাবা! কিন্তু নিজেদের আকিদা বিশ্বাসে অটল থেকে মালিকের উপর তাওয়াক্কুল করতে হবে। প্রয়োজনে ইমান বাঁচাতে গা ঢাকা দিতে হবে, বেছে নিতে হবে হিজরত। আর নুসরত, মদদ ও যাবতীয় সাহায্যের মালিক তো আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতালাই। সময় বদলে যায়, যাবেই। এককালের নির্বাসিত আসহাবে কাহাফের যুবকেরাই সময়ের ফেরে পরিণত হয়েছিলেন বীরপুরুষে। বস্তুবাদী সভ্যতার ভিত্তিমূল দুর্বল, এ দর্শনের পরাজয় আর ইমানি শক্তির বিজয় সুনিশ্চিত। প্রয়োজন দৃঢ়তার। প্রাসঙ্গিক তাফসির ছাড়াও লেখক তার আপন ঢংয়ে সূরা কাহাফ নিয়ে অন্য ধর্মের ঐতিহাসিকদের বিবরণ তুলে ধরেছেন, তুলনা করেছেন কোরআনের বর্ণনার সাথে, খুঁজে বের করেছেন শিক্ষা ও মূলনীতি এবং আমাদের জন্য দিয়েছেন দিকনির্দেশনা। ২. দুই বাগিচার মালিকের ঘটনা থেকে শিক্ষাঃ এ ধরনের ঘটনা সমাজে অহরহ ঘটে। নিয়ামতের না শোকরি করে মিথ্যা বড়াইয়ে লিপ্ত হয় কতশত মানুষ! আজকের বস্তুবাদী সমাজে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করার প্রবণতাও যেনো বেড়ে গেছে। অথচ জাগতিক সম্পদ ও ক্ষমতা নশ্বর, ক্ষণস্থায়ী। আমাদের উচিত নিয়ামতের শোকর করা, পরকালকেই প্রাধান্য দেয়া আর যাবতীয় সফলতার কৃতিত্ব জগতসমূহের অধিপতি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকেই দেয়া। নিয়ামতের শোকর করে মাশাল্লাহ বলা, কোনও কাজ করার ইচ্ছা করলে ইনশাআল্লাহ বলা উচিত। কারণ এ কথাগুলো বস্তুবাদী সভ্যতার শিকড়ে সমূলে আঘাত করে এটি জানিয়ে দেয় যে, সকল কিছু আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারেই সম্পাদিত হয়। নচেৎ অহংকারী বাগিচার মালিকের মত আল্লাহ চাইলে নিমিষেই আমাদের সকল সম্পত্তি মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন, তখন আমরা তাঁর মোকাবেলায় কোনও সাহায্যকারীও পাবো না। ৩. মুসা ও খিযির আলাইহিস সালামের ঘটনা থেকে শিক্ষাঃ মুসা ও খিযির আলাইহিমুস সালামের বিস্ময়কর মোলাকাত ও তিনটি আজব ঘটনা ও তাঁর ব্যাখ্যা লেখক নাটকীয় ও সংক্ষিপ্ত পরিসরে উপস্থাপন করে তুলে এনেছেন প্রয়োজনীয় শিক্ষা। মানুষ যতই চেস্টা করুক না কেনো, জ্ঞানবিজ্ঞানে উৎকর্ষ সাধন করুক না কেনো, সে এ বিশ্বজগতের অতি অল্প রহস্যেরই জট খুলতে পারবে। এ বিশ্বজগত সম্পর্কে পুরোপুরি অবগতি লাভ করা তো ফেরেশতা বা জিনদের পক্ষেও অসম্ভব, মানুষ তো আরও তাড়াহুড়োপ্রবণ। অনেক সময় আপাতদৃষ্টিতে কোনও জিনিসকে ভুল মনে হতে পারে, কোনও ঘটনাকে খারাপ মনে হতে পারে, কিন্তু হতে পারে তাতে আমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। সব জিনিসের হেকমত ক্ষুদ্র ইলমে জানা আমাদের জন্যে অসাধ্য। মানুষের জ্ঞান, বিবেক, দৃষ্টিসীমা সীমিত ও সংকীর্ণ। তাই আমাদের সবর করা উচিত, আর যাবতীয় কাজের সফলতার জন্যে আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাওয়া উচিত। বস্তুবাদী সভ্যতার অর্জনে আমরা যেন ধোঁকা না খাই। ৪. যুলকারনাইন বাদশার গল্প থেকে শিক্ষাঃ মুমিন বাদশাহ ক্ষমতা পেলে তা দাওয়াতি কাজে ব্যবহার করে। জুলকারনাইন প্রভূত ক্ষমতা ও সাম্রাজ্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর প্রাপ্তি ও অর্জনকে আল্লাহর দান হিসেবেই স্বীকার করেছেন। এ যেন বস্তুবাদী জীবনদর্শনের কফিনে ঠুকে দেয়া হলো শেষ পেরেক। পূর্ব-পশ্চিমের মহা প্রতাপশালী বাদশাহ ও নিজের বড়ত্ব জাহির না করে আল্লাহকেই বড় বলে স্বীকার করলেন, দাওয়াতি কাজে নিবিষ্ট হলেন, ঠিক যেমনটি করেছিলেন নবি সুলাইমান (আ) ও খোলাফায়ে রাশিদাগণ। এ থেকে বিশ্বের সকল শাসকের জন্য নিদর্শন রয়েছে। দাজ্জালকেও ক্ষমতা দেয়া হবে, কিন্তু সে তা ব্যায় করবে সমাজে কুফরি ছড়ীয়ে দিতে। তাই আমরা যেন বস্তুবাদী জীবনদর্শনের মোহে না পড়ি। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ সমগ্র বইতে সাইয়িদ আবুল হাসান আলি নদভীর ইলমি গভীরতা প্রস্ফুটিত হয়েছে এবং অনেক উপকারী রত্নসদৃশ শিক্ষা লিপিবদ্ধ হয়েছে। অনুবাদকের অনুবাদের ধরন খুবই সুন্দর ছিল। সাবলীল বাক্য রচনা বইর প্রতি মনোযোগ ধরে রেখেছিলো। প্রয়োজনীয় অসংখ্য ফুটনোট ও প্রাসঙ্গিক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অনুবাদক ফুটনোটে তুলে এনেছেন যা থেকে অনুবাদককে তারিফ দিতে হয়। তবে অনুবাদক প্রচুর উর্দু শব্দের বাংলায়ন না করায় অনেক সময়ই বাক্যগুলোর সৌন্দর্যমাধুরতা নষ্ট হয়েছে। সম্পাদকের অন্তত উচিত ছিল এই শব্দগুলো বাংলায়ন করে প্রকাশ করা। আশা রাখি, পুনর্মুদ্রণের সময় খেয়াল রাখা হবে। শেষ কথাঃ এ দুনইয়ার ইতিহাসের পরতে পরতে আছে সত্য মিথ্যার চিরন্তন দ্বন্দ্বের কাহিনী। ঈমান বনাম বস্তুবাদের মোড়কে এই সুপ্রাচীন দ্বৈরথেরই শেষ অধ্যায় রচিত হচ্ছে শেষ জামানায়। এই বস্তুবাদী ও ভোগবাদী জীবনদর্শনের জন্যেই মানুষ দাজ্জালের ফিতনায় পড়ে যাবে। তাইতো সূরা কাহাফ যেন ওই জীবনদর্শনকেই অপনোদন করে দেখিয়ে দিচ্ছে উত্তরণের উপায়। আমরা যেন সবসময় আখিরাতকেই প্রাধান্য দেই। প্রয়োজনে ইমান বাঁচাতে দাজ্জালের ফিতনা থেকে পালাতে আশ্রয় নেয় গুহার ভেতরে। আত্মগরিমা করে নিজেদের বিপদ না ডেকে আনি। যাবতীয় জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও হেকমত তো আল্লাহরই, তাই সকল কাজে আল্লাহকেই প্রশংসা জানাই ও তাঁর কাছেই সাহায্য চেন চাই। দুনইয়ার কোনও রহস্য বুঝে না আসলে আল্লাহর দিকেই যেন নিবিস্ট হই। কাফির তাগুতদের সাহায্য না করি। ঠিক যেমনটি সূরার একদম শেষে বলা হয়েছেঃ ‘ব্যস, যে-ই তাঁর পরওয়ারদিগারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার বাসনা রাখে, তাঁর উচিত সে যেন নেক আমল করে এবং তাঁর রবের ইবাদাতে অন্য কাউকে শরীক না করে।’ [সূরা কাহফঃ১১০]
Was this review helpful to you?
or
শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী রাহিমাহুল্লাহ বিগত শতাব্দির সবচে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের একজন। যে কোনো বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা এবং স্বচ্ছ ভাবনা ও ভারসাম্যপূর্ণ উপস্থাপনা শায়খকে অনন্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পবিত্র কুরআন এবং ইতিহাস সম্পর্কে তিনি অধিক জ্ঞান রাখতেন যা তাঁর রচনা পড়লেই বোঝা যায়। তিনি ইতিহাসকে কুরআনের ব্যাখ্যাও মনে করতেন। প্রায় সাত দশক একাধারে লিখে গেছেন দ্বীন, জাতি আর উম্মাহ নিয়ে। আল্লাহপাক তাঁর রচনাবলীর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছেন। বক্ষ্যমাণ এই গ্রন্থটি শায়খের উর্দু 'মাআরেকায়ে ঈমান ও মাদ্দিয়াত' গ্রন্থের অনুবাদ। যার আরবি নাম 'আস সিরাউ বাইনাল ঈমানি ওয়াল মাদ্দিয়াত'। বইটিতে তাফসির, হাদিস, ইতিহাস, বর্তমান তথ্যাবলি ও অবস্থার আলোকে সূরা কাহাফের বিশ্লেষণ করা হয়েছে। . বস্তুবাদ এবং এর স্বরূপ উম্মাহর সামনে শায়খ নদভী রহ. খুব পরিস্কারভাবেই তোলে ধরেছেন। তাঁর রচনাবলীর সঙ্গে যাঁদের পরিচয় আছে বিষয়টা অজানা নয়। মুসলিম উম্মাহর চিন্তাভাবনায় বস্তুবাদের যে প্রভাব বিরাজ করছিল শায়খ নদভী রহ. এর সংস্কারক। বস্তুবাদী সভ্যতার সংক্ষিপ্ত কিন্তু সবচে অর্থবহ সংজ্ঞা দিতে গিয়ে শায়খ বলেন, 'ঈমান ও ইসলাম থেকে দূরে সরে গিয়ে মনের খাহেশত মতো চলার নাম বস্তুবাদী সভ্যতা।' -এ থেকে প্রতিয়মান হয় ঈমান ও ইসলামের সঙ্গে কতোটা সাংঘর্ষিক এই 'মতবাদ'। সুতরাং বিষয়টা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ও বেঁচে থাকতে করণীয় জানা আবশ্যক। এই পুস্তক অধ্যয়নে ইনশাআল্লাহ বিষয়টা পরিষ্কার হবে। . সূরা কাহাফে আলোচিত অন্যতম চারটি বিষয়- আসহাবে কাহাফ, দুই বাগিচার মালিক, মূসা ও খিযির আলাইহিমুস সালামের সফর ও বাদশা যুলকারনাইনকে নিয়ে তাত্ত্বিক ও দার্শনিক অসাধারণ তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্যে বইটির আলোচনা। . বইটির শুরুতে শায়খের সূরা কাহাফের সঙ্গে পরিচয়, এর উপকারিতা বর্ণনা করে আসহাবে কাহাফের কাহিনি বর্ণনা করেছেন। পক্ষপাতদুষ্ট বর্ণনা খণ্ডন করেছেন এবং এই কাহিনি থেকে শিক্ষা বের করে দেখিয়েছেন এই কাহিনি নিছক কোনো কাহিনি নয়। পবিত্র কুরআন শুধু অতীতের কোনো কাহিনি এখানে বর্ণনা করছে না, বরং এটাতে খোরাক রয়েছে প্রত্যেক মুমিনের। যারা একত্ববাদে বিশ্বাসী এবং ত্যাগ-তিতিক্ষায় অনুপ্রাণিত করার মতো, ধৈর্যে সহায়ক, কারণ এই আয়াতগুলো নাযিলের প্রেক্ষাপটই বলে দেয় সেই সময় মুসলমানদের শোচনীয় অবস্থা যা সেই যুবকদের মতো ; একদিকে ঈমান ও ইসলাম অন্যদিকে পৃথিবীর ভোগবিলাস। শায়খ এতদুভয়ের সমন্বয়ে দেখিয়েছেন ঈমান ও ইসলামের ওপর অটল থাকার সামনে ভোগবাদী বস্তুবাদী ও দাজ্জালীপানার কোনো অস্তিত্ব নেই। ইসলামের ইনসাফ আর পরিমিতিবোধের সামনে যার কোনো মূল্য নেই। . দুই বাগানের মালিকের কাহিনিতে দেখা যায় উপকরণের ওপর অগাধ আস্থা আর বিশ্বাস পরকালীন জীবনের প্রতি উদাসীনতা আর সংকীর্ণতার জন্যে দায়ী। বস্তুবাদী এই চেতনায় বিশ্বাসী না থেকে ঈমান ও ইসলামে গৌরবান্বিত হয়ে আখিরাতের প্রতি মনোযোগী হওয়ার শিক্ষা দেয়। . মূসা ও খিযির আলাইহিমুস সালামের কাহিনি বস্তুবাদের ওপর এক করাঘাত। বস্তুবাদ ভোগবাদী ও দৃশ্যমানতার ওপর প্রাধান্য দেয়। এটা প্রত্যাখ্যান করে 'অদেখা' বিষয়গুলো। এর প্রতি এই মতবাদ কখনোই আস্থাশীল নয়। অথচ এই কাহিনি বুঝিয়ে দেয় মানুষের সীমাবদ্ধতার আওতা। দৃশ্যমান জ্ঞানের অনেক কিছুই আমাদের নিকট অজানা আবার অদৃশ্যমান অনেককিছুই কতো যৌক্তিক যা এই সফর থেকে প্রতিয়মান হয়। . বাদশা যুলকারনাইনের কাহিনি শিক্ষায় ভরপুর। যিনি পার্থিব সমস্ত উপাদানের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করার পরও পরকালীন জগতের চিন্তায় এবং একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়ায় রবের প্রতি কৃতজ্ঞতাবশতঃ বস্তুবাদকে পিছনে ফেলে ঈমানদার ও ইসলামে একনিষ্ঠ মুসলিমের জন্যে যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা পবিত্র কুরআন বর্ণনা করেছে এবং শায়খ সর্বযুগে এ থেকে শিক্ষা ও দীক্ষা গ্রহণ করার দিকটি এবং বস্তুবাদকে পিছনে ফেলে সর্বক্ষমতার মালিকের প্রতি একনিষ্ঠ থাকার বিষয়টি আলোচনা করেছেন। . পবিত্র কুরআন মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে আমাদের প্রতি শ্রেষ্ঠ এক উপহার। মহান রাব্বুল আলামিন অতীতের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর কাহিনি ও শিক্ষামূলক ঘটনা আমাদের জানিয়েছেন। এতে সন তারিখ উল্লেখ নেই এবং বর্ণনা অবিন্যস্ত ; কিন্তু বর্ণনাসমূহের শিক্ষা চিরন্তন। শায়খ এই বিষয়টা খুব পরিস্কারভাবে তোলে ধরেছেন। যুলকারনাইন কে ছিলেন, যুবকদের সংখ্যা কতো, খিযির আঃ নবী ছিলেন কি-না এসবের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে আয়াতগুলোর বার্তা কী তা গ্রহণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাছাড়া পবিত্র কুরআনের একই বর্ণনা বিভিন্ন শিক্ষা দিতে পারে। শায়খ এ গ্রন্থে বস্তুবাদের বিধ্বংসী রূপ এবং ঈমান ও ইসলামে অবিচল থেকে গৌরবান্বিত হওয়ার দিকটি তোলে ধরেছেন। আবার বস্তুবাদী সভ্যতার খতিয়ান টেনেছেন এভাবে - . 'অনিয়ম, অতিশয়োক্তি, অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি এগুলোই বস্তুবাদী সভ্যতার আলামত ও বৈশিষ্ট্য। এগুলোর মাধ্যমেই বস্তুবাদের তাবেদারদের চেনা-জানা যায়। কামাই-রোজগারে অনিয়ম, খরচে মাত্রাতিরিক্ত, খেল-তামাশায় মত্ততা, বিনোদন-ফূর্তির নামে নোংরামি, রাজনীতির নামে ইচ্ছামাফিক নীতিমালা, গণতন্ত্রের নামে তামাশা, শাসনের নামে স্বেচ্ছাচারিতা, কমিউনিজম-মার্কসবাদের নামে সীমালঙ্গন, সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের নামে খামখেয়ালি, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিষয়ে মনচাহি চলা - এগুলোর নাম বস্তুবাদী সভ্যতা। এককথায়- অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, সীমালঙ্গন, ছাড়াছাড়ি-বাড়াবাড়ি আর মনমতো চলার নামই হলো বস্তুবাদ।' . বইটির কথা লেখকের আত্মজীবনীমূলক রচনা কারওয়ানে যিন্দেগী পড়ার সময় প্রথম জানতে পারি। পড়ার আগ্রহ এত বেড়ে যায়, কয়েকদিন পর রাহনুমা বইটি প্রকাশ করার পরই সংগ্রহ করি। অনুবাদক একটু বেশি সময় নিয়ে অনুবাদ করায় চার বছর লেগে যায় ! এর সাহিত্যমান সাহিত্যিকদের ওপরই থাকুক। আমার বেশ ভালোই লেগেছে কিন্তু উর্দু শব্দের একটু আধিক্য রয়ে গেছে। তাছাড়া অনাকাঙ্ক্ষিত দুই একটি ভুলও চোখে পড়েছে যা সংশোধনকাম্য। বইটি অবশ্যিপাঠ্য। উপকারী গ্রন্থ এটি। ইনশাআল্লাহ উপকৃত হবেন। বস্তুবাদের হাকীকত ও উত্তরনের সহজ উপায় জানতে পারবেন। তাছাড়া বইটির বিষয়বস্তু ও সুন্দর করে ছাপার জন্যে এক বৈঠকে পড়ার মতো। এজন্য রাহনুমার ধন্যবাদ প্রাপ্য।
Was this review helpful to you?
or
most useful for all Muslims
Was this review helpful to you?
or
বস্তুবাদী-ভোগবাদী সভ্যতা আজ আর শুধু তার জন্মভূমি ইউরোপেই সীমাবদ্ধ নয়। মুসলিম বিশ্বের রন্দ্রে রন্দ্রেও আজ বস্তুবাদের আঘাত লক্ষণীয়। ইসলামের শিক্ষা ও পরকালের চেতনা ভুলে গিয়ে মুসলিমরা আজ অন্ধের মত ইউরোপকে অনুসরণ করছে। এজন্যই রাসূল ﷺ আমাদের সূরা কাহাফ বেশি বেশি তেলাওয়াত ও মুখস্ত করার তাগিদ দিয়েছেন। যাতে আমরা বস্তুবাদের মোহ থেকে বেঁচে থেকে ঈমানী জিন্দেগী যাপন করতে পারি। আলোচ্য বইতে লেখক তাফসীর, হাদীছ, ইতিহাস, আধুনিক তথ্যাবলী এবং বর্তমান অবস্থার আলোকে সূরা কাহাফ এর বিশ্লেষণ করেছেন। লেখক সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী পাঠক মহলে "আলী মিঞা নদভী" নামে পরিচিত। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ, উম্মাহর দরদী এই লেখক কে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নাই। ইসলামী বইয়ের পাঠক মাত্রই উনার সম্পর্কে অবগত। অনাড়ম্বর জীবন যাপনকারি এই মহান দ্বায়ী সারাটা জীবন দ্বীনের খেদমতে ব্যয় করেছেন। পেয়েছেন দেশি বিদেশি অনেক বিরল সম্মাননা। তার রচিত প্রায় দুই শতাধিক গ্রন্থ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আল্লাহর এই প্রিয় বান্দা ১৯৯৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতরত অবস্থায় প্রিয় রবের সান্নিধ্যে চলে যান। রহমাতুল্লাহ 'আলাইহি। আলোচ্য বইটি লেখকের اَلصِّرَاعُ بَيْنَ الّإِيْمَانِ وَالْمَادِّيَة এর অনুবাদ। আরবী বইটির উর্দু সংস্করণের নাম معرکہ ایمان و مادیت । মূল আরবী বইটি ১৩৯০ হিজরী (১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ) সনে কুয়েতের দারুল কলম থেকে প্রকাশিত হয়। সূরা কাহাফে আলোচিত চারটি বিষয়ের তাত্ত্বিক ও দার্শনিক আলোচনা হল এই বইটি। লেখক এই বইয়ের অধিকাংশ আয়াতের তর্জমা নিয়েছেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদের তরজমানুল কুরআন থেকে। যেখানে তার তরজমা নিতে পারেননি, সেখানে মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদীর তাফহীমুল কুরআন এবং হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর বয়ানুল কুরআন থেকে সহযোগিতা নিয়েছেন। শুরুতে লেখক জুমাবারে সূরা কাহাফ তেলাওয়াতের ফযীলত বর্ণনা করেছেন। বিশেষত প্রথম ১০ আয়াত ও শেষ ১০ আয়াত মুখস্ত করে দাজ্জালের ফিৎনা থেকে মুক্ত থাকার ফযীলত বর্ণনা করেছেন। এখানে লেখক আখেরি যামানার ফেতনার সাথে সূরা কাহাফের সম্পর্ক নিৰ্ণয় করেছেন। বিভিন্ন আলেম ও মুফাসসিরগণ বরাত দিয়ে বলেছেন যে, সূরা কাহাফে আখেরি যামানার ৮০টির মত ফেৎনা সম্পর্কে বর্ণনা, ইশারা ও ইঙ্গিত রয়েছে ও দাজ্জালি ফেৎনা সম্পর্কে পরিষ্কার বর্ণনা ও নির্দেশনা রয়েছে। তাই লেখক সূরা কাহাফকে ঈমান ও বস্তুবাদের সংঘাত বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই ক্ষেত্রে লেখক দাজ্জালের ব্যাক্তিত্বের প্রভাব ও ইহুদী খ্রিস্টানদের পারস্পরিক চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। লেখকের ভাষায়, সূরা কাহাফ হল দুটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, দুটি আলাদা আকিদা বিশ্বাস এবং দুটি বিপরীত ও বিরোধপূর্ণ বিষয়ের আলোচনার বিবরণ। এক, বস্তুবাদী সভ্যতা: বস্তুবাদে আসক্তি ও নির্ভরতা। দুই, গায়েবের ওপর ঈমান এবং আল্লাহর উপর ভরসা-বিশ্বাস। সূরা কাহাফের আলোচিত চার ঘটনা হল:- • আসহাবে কাহাফ • দুই বাগিচার মালিক • হযরত মূসা ও খিযির আলাইহিমাস সালামের সফর • বাদশা যুলকারনাইন আসহাবে কাহাফের আলোচনায় লেখক প্রথমে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বর্ণনা, আহলে কিতাবদের বর্ণনা উল্লেখ করে সেগুলোর অসারতা উল্লেখ করেছেন। ইংরেজ ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড গীবন তার Decline and fall of the Roman Empire বইতে আসহাবে কাহাফের যে পক্ষপাতদুষ্ট বর্ণনা দিয়েছে, সেটার উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন। এক্ষেত্রে আহলে কিতাবদের রেওয়ায়েত বর্ণনা করায় লেখক অনেক মুফাসসিরের বর্ণনাও গ্রহণ করেননি। এরপর লেখক কুরআনী দৃষ্টিকোণ থেকে আসহাবে কাহাফের ঘটনাকে বিশ্লেষণ করেন। এটাকে নিছক একটি কাহিনী হিসেবে বর্ননা না করে ঈমানের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কারণ এই আয়াতগুলো এমন সময় নাযিল হয় যখন মক্কার মুসলিমরা কাফিরদের অত্যাচারে বিভীষিকাময় ঘোর পরিস্থিতির মাঝে ছিল। পূর্বে আল্লাহ কতিপয় যুবক কে কাফেরদের সমাজ থেকে ও জালেম শাসকের আক্রোশ থেকে অভাবনীয় খোদায়ী নুসরতে হেফাজত করেছেন। এ ঘটনা নিয়ে আয়াত নাজিল হলে তখন সেটা মুমিনদের অন্তরে আশার আলো জাগায়, ঈমানের প্রস্ফুটন ঘটায়। লেখক অসহাবে কাহাফের এই ঘটনাকে আখ্যায়িত করেছেন: বস্তুবাদের উপর ঈমানের বিজয় হিসেবে। বর্তমান বস্তুবাদী সভ্যতার বিশ্লেষণ করে লেখক সেটাকে দাজ্জালের পটভূমি হিসেবে দেখিয়েছেন। দাজ্জালি সভ্যতাকে সীমালঙ্ঘনের সভ্যতা হিসেবে উল্লেখ করে বিপরীতে ইনসাফ, সাম্য, মধ্যপন্থা ও পরিমিতি কে ইসলামের বৈশিষ্ট্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। দুই বাগিচার মালিকের ঘটনাকে লেখক বস্তুবাদের সংকীর্ণতার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেসব উপায় উপকরণের উপর বস্তুবাদ নির্ভরশীল সেগুলো ক্ষণস্থায়ী এবং একসময় ধ্বংস হয়ে় যাবে। বিপরীতে ঈমানী জিন্দেগী দুনিয়া নিয়ে লিপ্ত না থেকে আখেরাতের জীবনের প্রতিই প্রাধান্য দেয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি সাহাবীদের অনাড়ম্বর জীবন যাপনের ঘটনা বর্ণনা করেন। হযরত মূসা ও খিযির আলাইহিমাস সালামের সফর এর ঘটনাকে লেখক বস্তুবাদী চিন্তা ভাবনার প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখিয়েছেন। বস্তুবাদের দর্শন হল, যা কিছু দৃশ্যমান সেগুলো ছাড়া আর কিছুরই অস্তিত্ব নাই। কোন পরকাল, হাশর নাই। তাই এই দুনিয়াকে যতটুকু পারা যায় ভোগ করা উচিত। অথচ দৃশ্যমান জ্ঞানের বাইরে অনেক কিছুই মানুষের অজানা। যেমন তৎকালীন সময়ের নবী ও রাসুল হয়েও মুসা (আ) অনেক জ্ঞান থেকে বঞ্চিত ছিলেন যা আল্লাহ খিযির (আ) কে দিয়েছেন। বাদশাহ যুলকারনাইন এর ঘটনাকে লেখক বস্তুবাদী চিন্তা দর্শনের বিরুদ্ধে উপযুক্ত জবাব হিসেবে বর্ননা করেছেন। বাদশা যুলকারনাইন সম্বন্ধে মুফাসসিরগণ দুই ধরনের মত দিয়েছেন। কেউ বলেছেন উনি ছিলেন গ্রীক বাদশা সিকান্দার (আলেকজান্ডার), কেউ বলেছেন উনি ছিলেন পারস্যের বাদশা সাইরাস। লেখক এখানেও এ ধরনের তর্কে না গিয়ে এই ঘটনাকে কুরআনী দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করেছেন। যুলকারনাইন পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম ব্যাপী বিশাল ভূখণ্ডের বাদশা ছিলেন। ক্ষমতা, দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সব উপকরণ তার অধীনে ছিল। সমস্ত বিত্ত-বৈভব, শান-শওকত, জৌলুসের অধিকারী ছিলেন। তারপরও তিনি ভোগ বিলাসে মত্ত না থেকে মানুষের কল্যাণ ও সমৃদ্ধির জন্য নিজের সম্পদ, যোগ্যতা ও সামর্থ্য ব্যয় করেছেন। তিনি ঈমান ও আমলে যোগ্য ও শ্রেষ্ঠ ছিলেন। পরিশেষে লেখক খোদায়ী কুদরতকে অস্বীকার করে উত্থান হওয়া ও ক্রমবিকাশ ঘটা বস্তুবাদী পশ্চিমা সভ্যতা ও দাজ্জালের সম্পর্ক নিরূপণ করেছেন ও রাসূল ﷺ এর হাদীসের আলোকে দাজ্জালের ব্যাখ্যা করেছেন। একটু সমালোচনা: সমালোচনা লেখকের নয়, অনুবাদকের উদ্দেশ্যে। বইয়ের ৫১ ও ৫২ পৃষ্টায় "George" শব্দের বাংলা প্রতিরূপ লেখা হয়েছে "গিউরিজ", যা হওয়ার কথা "জর্জ"। ৫৩ পৃষ্ঠায় "HADRIAN" শব্দের বাংলা প্রতিরূপ লেখা হয়েছে "হাডরেইন" যা হওয়ার কথা "হ্যাড্রিয়ান"। এছাড়াও, কিছু শব্দ পাঠকের কাছে অপরিচিত ঠেকতে পারে। যেমন- নতিজা, খাসিয়াত, তাকাযা, নেগাহবান, জরিয়া, মারহালা, খাহেশাত, নাকামি, ইবরত, নুস্তাহেক, হাইসিয়াত, দায়েম, কবরেয, কানাআত, বেসাখতাহ, ছরছরি, ইন্তেহা, মুতালাআ ইত্যাদি। এসব শব্দের বদলে প্রচলিত বাংলা শব্দ ব্যবহার করা যেত। বস্তুবাদী উপায়-উপকরণ নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিয়ামত। এগুলো ক্ষণস্থায়ী এবং শুধুমাত্র দুনিয়ার শোভাবর্ধনের জন্য। একজন মুমিন কখনো এসবে নিমগ্ন থাকতে পারেনা। কারণ মুমিনের আসল মঞ্জিল জান্নাত। তাই বস্তুবাদী উপকরণ যখন তাগুতি শক্তির অধিকারে থাকে, তখন মুমিন আসহাবে কাহাফের মতো নিজের ঈমানকে হেফাজত করার জন্য হিজরত করে। আর এসব উপকরণ যখন যুলকারনাইনের মত ন্যায়পরায়ণ বাদশার অধিকারে থাকে তখন এগুলো মানবতার কল্যাণে ব্যয় হয়। দুই বাগিচার মালিকের বাগানের মতোই এ পৃথিবীর সমস্ত শান-শওকত একদিন ধ্বংস হবে। বস্তুবাদী সভ্যতা দুনিয়ার সমস্ত কে জানার দাবি করে। অথচ আল্লাহর জ্ঞানের কত সামান্যই তারা জানে। তারা পরকাল সম্বন্ধে উদাসীন, গাফেল। অথচ পরকালের জীবনই আসল ও চিরস্থায়ী জীবন। সূরা কাহাফ নিয়ে লেখা বিশ্লেষণাত্মক এই বই থেকে আমরা এ ধরনের শিক্ষা পাই। সুন্দর, সাবলীল ছাপা আর নজরকাড়া প্রচ্ছদের বইটি সহজেই পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করবে।
Was this review helpful to you?
or
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ সমগ্র বইতে সাইয়িদ আবুল হাসান আলি নদভীর ইলমি গভীরতা প্রস্ফুটিত হয়েছে এবং অনেক উপকারী রত্নসদৃশ শিক্ষা লিপিবদ্ধ হয়েছে। অনুবাদকের অনুবাদের ধরন খুবই সুন্দর ছিল। সাবলীল বাক্য রচনা বইর প্রতি মনোযোগ ধরে রেখেছিলো। প্রয়োজনীয় অসংখ্য ফুটনোট ও প্রাসঙ্গিক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অনুবাদক ফুটনোটে তুলে এনেছেন যা থেকে অনুবাদককে তারিফ দিতে হয়। তবে অনুবাদক প্রচুর উর্দু শব্দের বাংলায়ন না করায় অনেক সময়ই বাক্যগুলোর সৌন্দর্যমাধুরতা নষ্ট হয়েছে। সম্পাদকের অন্তত উচিত ছিল এই শব্দগুলো বাংলায়ন করে প্রকাশ করা। আশা রাখি, পুনর্মুদ্রণের সময় খেয়াল রাখা হবে। শেষ কথাঃ এ দুনইয়ার ইতিহাসের পরতে পরতে আছে সত্য মিথ্যার চিরন্তন দ্বন্দ্বের কাহিনী। ঈমান বনাম বস্তুবাদের মোড়কে এই সুপ্রাচীন দ্বৈরথেরই শেষ অধ্যায় রচিত হচ্ছে শেষ জামানায়। এই বস্তুবাদী ও ভোগবাদী জীবনদর্শনের জন্যেই মানুষ দাজ্জালের ফিতনায় পড়ে যাবে। তাইতো সূরা কাহাফ যেন ওই জীবনদর্শনকেই অপনোদন করে দেখিয়ে দিচ্ছে উত্তরণের উপায়। আমরা যেন সবসময় আখিরাতকেই প্রাধান্য দেই। প্রয়োজনে ইমান বাঁচাতে দাজ্জালের ফিতনা থেকে পালাতে আশ্রয় নেয় গুহার ভেতরে। আত্মগরিমা করে নিজেদের বিপদ না ডেকে আনি। যাবতীয় জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও হেকমত তো আল্লাহরই, তাই সকল কাজে আল্লাহকেই প্রশংসা জানাই ও তাঁর কাছেই সাহায্য চেন চাই। দুনইয়ার কোনও রহস্য বুঝে না আসলে আল্লাহর দিকেই যেন নিবিস্ট হই। কাফির তাগুতদের সাহায্য না করি। ঠিক যেমনটি সূরার একদম শেষে বলা হয়েছেঃ ‘ব্যস, যে-ই তাঁর পরওয়ারদিগারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার বাসনা রাখে, তাঁর উচিত সে যেন নেক আমল করে এবং তাঁর রবের ইবাদাতে অন্য কাউকে শরীক না করে।