User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ইউভাল নোয়া হারারির “Sapiens” বইটি বিশ্বজুড়ে বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মানুষ কীভাবে শিকারী-সংগ্রাহক থেকে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত সমাজে রূপান্তরিত হলো, তার সংক্ষিপ্ত ও চিত্রময় বর্ণনা এই বইয়ের মূল আকর্ষণ। তবে এই বইতে ইতিহাস, দর্শন, মনস্তত্ত্ব, নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর নানা স্তরে সমালোচনা উস্কে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে মুসলিম প্রতিবেশীদের মধ্যে বইটির কিছু বক্তব্য বিতর্কিত এবং বিভ্রান্তিকর হিসেবে ধরা হয়েছে। নীচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে যে—হারারির যুক্তিতে কতটুকু বৈধতা আছে, কোথায় তার ইতিহাসি তথ্য প্রমাণহীন ও দুর্বল, দর্শন ও নৈতিকতার স্তরে কী ধরণের ফাঁক আছে, এবং ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে বইয়ের মূল ভিত্তিগুলো কতখানি অগ্রাহ্য বা বিপরীতমুখী। পাশাপাশি দেখানো হবে যে, এই বই সামগ্রিকভাবে কীভাবে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে এবং মানুষের মনস্তত্ত্ব ও নৈতিকতাকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। Yuval Noah Harari-র বই “Sapiens: A Brief History of Humankind” বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে, কিন্তু এই জনপ্রিয়তার পেছনে যে দর্শন, যুক্তি ও চিন্তাধারা রয়েছে, তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখলে আমরা দেখতে পাই– এই বইটি অনেক বড় বিভ্রান্তি ছড়ায়, যার ভিতরে রয়েছে দুর্বল যুক্তি, কল্পনাভিত্তিক ইতিহাস, বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, এবং নৈতিকতার ও সত্যের গভীর অবমূল্যায়ন। এই প্রবন্ধে আমরা Harari-র মূল বক্তব্য, তার দর্শন, যুক্তির দুর্বলতা, ইতিহাসের বিকৃতি, ইসলামিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ এবং এই বইয়ের সমাজে নেতিবাচক প্রভাব– সবকিছু পর্যবেক্ষণ করব। হারারির মূল দাবি: একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা হারারি তার বইতে মানব ইতিহাসকে চারটি প্রধান পর্যায়ে ভাগ করেছেন এবং কিছু বিতর্কিত দাবি উপস্থাপন করেছেন: ইমাজিন্ড অর্ডার (কল্পিত শৃঙ্খলা): হারারি বলেন, ধর্ম, জাতি, অর্থ, আইন ইত্যাদি মানব সমাজের মৌলিক ধারণাগুলো বাস্তব কোনো ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত নয়, বরং এগুলো মানুষের কল্পনা থেকে উদ্ভূত। কগনিটিভ রেভল্যুশন: প্রায় ৭০,০০০ বছর আগে মানুষের মধ্যে একটি জ্ঞানগত বিপ্লব ঘটে, যা তাদের ভাষা, গল্প এবং কল্পনার মাধ্যমে বড় গ্রুপে সহযোগিতা করতে সক্ষম করে। এগ্রিকালচারাল রেভল্যুশন: কৃষি বিপ্লবকে তিনি মানবজাতির জন্য একটি "ফাঁদ" হিসেবে বর্ণনা করেন, যা মানুষের জীবনকে আরও কঠিন ও অস্বাস্থ্যকর করে তুলেছে। সায়েন্টিফিক রেভল্যুশন: বৈজ্ঞানিক বিপ্লব মানুষকে অভূতপূর্ব শক্তি দিয়েছে, কিন্তু নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। হারারির এই দাবিগুলো আকর্ষণীয় হলেও, এগুলোর মধ্যে গভীর যৌক্তিক, দার্শনিক এবং ঐতিহাসিক ত্রুটি রয়েছে, যা আমরা এখন বিশ্লেষণ করব। ১. হারারির “কল্পিত আদেশ” (Imagined Orders) তত্ত্ব: স্বয়ংবিকৃতির স্বপরিপূর্ণ বিষয়? হারারি বলছেন, “মানবসভ্যতার মূল চালিকাশক্তি হলো গল্প, বা গল্পের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ‘কল্পিত আদেশ’”। অর্থাৎ—ধর্ম, রাষ্ট্র, অর্থনীতি, আইন, সংস্থা ইত্যাদি সবই মূলত মানুষের কল্পনাশক্তিতে তৈরি অদৃশ্য গল্প বা বর্ণনা, যা বাস্তবের কিছু মৌলিক بنیادের ওপর দাঁড়িয়ে নয়, বরং মধ্যস্থতাকারী একটি কাল্পনিক কাঠামো। এ “imagined order” কেউ খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করে প্রমাণ করতে পারে না—তবে সবাই যদি ঐ কল্পনার প্রতি সম্মতি জানায়, সেটি তখন “সত্য” হিসেবে বিবেচিত হয়। স্ববিরোধিতা (Self-refutation) হারারি নিজে দাবি করেন, “সারাজীবন মানুষ মনে করে যে তার চারপাশে যে বাস্তবতা, তা সত্যিনিষ্ঠ আর স্বাধীনভাবে অস্তিত্বমান। কিন্তু আসলে সবকিছুই কেবল কল্পনা বা গল্প মাত্র।” কিন্তু যদি “সবই কল্পনা”, তাহলে সেই একই দাবিটিও তো কেবল একটি কল্পনা—অর্থাৎ হারারি নিজে তার বইয়ের মধ্যেই নিজের যুক্তিকেই ভঙ্গুর করেছেন। কারণ তিনি যখন বললেন “কিছুই সত্য নয়”, একই সময়ে তিনি যে কথাগুলো বলেছেন, সেগুলোও তো “কিছুই সত্য নয়” যুক্তির আওতায় পড়বে। এর ফলে একটি স্বয়ংবিরোধ (self-refuting) চক্র তৈরি হয়: “সবই কল্পনা”—এই বক্তব্য নিজেও কল্পনা, তাই সেটি “সত্য” নয়। কিন্তু যদি সেটি “সত্য” নয়, তাহলে যা বলা হয়েছে, সে কথাবার্তা অর্থহীনই। Harari-র বক্তব্যের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো, তিনি নিজের মতবাদকে “বাস্তব” হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিতে চান, অথচ অন্যদের বিশ্বাসকে সরাসরি “কল্পনা” বলে বাতিল করেন। তিনি বলেন, “তোমরা ধর্মে, জাতিতে, নৈতিকতায়, উদ্দেশ্যে বিশ্বাস করো– এগুলো সব কল্পনা; কিন্তু আমি যে বলছি, সেটা সত্য!” এখানেই লুকিয়ে আছে সবচেয়ে বড় যুক্তিক বিভ্রান্তি। যদি সবকিছুই কল্পনা হয়, তাহলে হারারির এই বইটি এবং তার নিজের দাবিগুলোও কি কল্পনা নয়? তিনি যদি বলেন যে সত্য বলে কিছু নেই, তাহলে তার এই বক্তব্যটিও সত্য হতে পারে না। এটি একটি স্ববিরোধী দাবি (self-contradictory statement)। উদাহরণ: যদি আমি বলি, "এই বাক্যটি মিথ্যা", তাহলে বাক্যটি সত্য হলে মিথ্যা হয়, আর মিথ্যা হলে সত্য হয়। হারারির দাবিও এমনই। তিনি বলছেন, "সবকিছুই কল্পনা", কিন্তু তার এই দাবিটি সত্য বলে দাবি করছেন। এটি যৌক্তিকভাবে অসম্ভব। হারারি অন্যদের মতবাদকে কল্পনা বলে বাতিল করেছেন, কিন্তু তার নিজের মতবাদকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। এটি তার যুক্তির দ্বৈত মানদণ্ড (double standard) প্রকাশ করে। ২. ইতিহাসের দুর্বলতা: এসং, সাধারণীকরণ ও প্রমাণবিহীন বিবৃতি হারারি যেসব ঐতিহাসিক তথ্য উপস্থাপন করেন, সেখানে ব্যাপক সাধারণীকরণ এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রমাণহীন মন্তব্য লক্ষ্য করা যায়। Harari-র বইয়ে ইতিহাসের অনেক অংশই কল্পনানির্ভর, সরাসরি প্রমাণ বা ঐতিহাসিক রেফারেন্স ছাড়াই তিনি অনেক কিছু প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন Harari-র বইয়ের আরেকটি প্রধান দুর্বলতা হলো, তিনি ইতিহাসের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটকে নিজের মত অনুযায়ী ব্যাখ্যা করেছেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে একপাক্ষিক, বিকৃত কিংবা প্রমাণহীন ধারণা দিয়েছেন। মূলত, “Sapiens”-এর বেশিরভাগ অংশ “speculative history”– যার ভিত্তি দুর্বল। কৃষি বিপ্লব একটি "ফাঁদ" হারারি দাবি করেন যে কৃষি বিপ্লব মানুষের জন্য ক্ষতিকর ছিল, কারণ এটি তাদের কঠিন পরিশ্রম ও অস্বাস্থ্যকর জীবনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু এই দাবি অতিসরলীকৃত এবং ঐতিহাসিকভাবে দুর্বল। প্রমাণ: কৃষি বিপ্লব শহর গঠন, লিখনপদ্ধতির উদ্ভাবন এবং জটিল সভ্যতার জন্ম দিয়েছে। হারারি এই ইতিবাচক দিকগুলো উপেক্ষা করেছেন। তিনি "নিজের মতো করে ইতিহাস লিখেছেন, প্রমাণ ছাড়া।" এটি সত্য। হারারি ঐতিহাসিক তথ্যের বদলে নিজের ব্যাখ্যাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। “কৃষি বিপ্লব”কে হারারি দেখিয়েছেন যে, জৈবভাবে এটি মানুষের জন্য সমস্যার উৎস: অনাবৃষ্টির ঝুঁকি, রোগবালাই, শোষণকরী শ্রেণী বের হওয়া ইত্যাদি। আসলে, যদিও প্রাথমিক কৃষি-ব্যবহার শুরুতে কাজে দুর্বলতা ছিল, কিন্তু ইতিহাস গবেষকদের সংখ্যা বলে, কৃষি বিপ্লবের ফলে মোট জনসংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছিল, এবং পরবর্তীতে সভ্যতার বিকাশে অবদান রেখেছিল। হ্যাঁ, “কৃষিকাজে সময় ব্যয় বেড়েছিল”, এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলাও দেখা দিয়েছিল—কিন্তু এ সবই প্রমাণ করে যে কৃষিবিপ্লব “সম্পূর্ণ দুঃখের কারণ” ছিল—এ ধরনের একতরফা উপসংহার হাস্যোজ্জ্বল। ফলে হারারির “কৃষি বিপ্লব মিথ্যা মুক্তিদাতা না, বরং দাসত্বের সূচনা” এরূপ দাবির পেছনে ঐতিহাসিক বিধর্মিতা লক্ষণীয়। শিকারী-সংগ্রাহকের যুগ: “প্ৰায় সবকিছুই নিষ্ঠুর ও দারিদ্র্যময় ছিল” হারারি লিখেছেন, শিকারী-সংগ্রাহকরাজ্যে মানুষ “দারিদ্র্যময়”, “জীবনের অধিকাংশ সময় জোটসুটি করে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতো”, “রোগব্যাধি, দুর্ঘটনা, যুদ্ধ—সব ছিল খুবই প্রচুর”। পরিসংখ্যানের অভাব ও প্রাচীনসমাজের ডিজিটাল রেকর্ডের অভাবে আমরা একটা সুনির্দিষ্ট অবস্থা জানতে পারি না। কিন্তু সাম্প্রতিক মানববিজ্ঞানভিত্তিক ক্ষেত্রবিশেষ গবেষণায় দেখা গেছে, তুলনামূলকভাবে মনুষ্যজাতির বহু শিকারী-সংগ্রাহক গোষ্ঠী মোটামুটি স্বাস্থ্যবান, দৈনিক খাদ্য সংগ্রহের পরিমাণ যথেষ্ট, এবং সামাজিক বন্ধনগুলো ছিল শক্তিশালী। অর্থাৎ “তাঁরা ‘দারিদ্র্যময়’ ছিল”—এ ধরনের গভীর সাধারণীকরণ প্রমাণবিহীন ও বিতর্কিত। এতদ ছাড়াও, যখন হারারি বলেন “শিকারী-সংগ্রাহক মানুষেরা শ্রমব্যস্ততা কম ও অবসর বেশি পেত”, সেটা আধুনিক সমাজের “নষ্ট বিলাসিতা” বোঝাতে চান; কিন্তু সেটা ইতিহাস-উপাত্তের আলোকে নির্ভুল কি-না সন্দেহজনক। বিশেষজ্ঞরা তর্ক করেন যে, বসবাস, যাতায়াত, খাদ্য-নির্বাহী উৎকর্ষতা ইত্যাদির জন্য প্রচুর সময় ও শক্তি লাগত—এটুকু ভাবিয়া দেখলে “কম শ্রম, অধিক অবসর” ধারনা খুবই আগ্রাসী ও ঐতিহাসিক ভাবে অপ্রমাণিত। সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্ম: একক দিকে দোষারোপ “বিস্তৃত সাম্রাজ্যগুলো দেশে দেশে সংস্কৃতি বিনাশ করেছে; ধর্ম শুধু ক্ষমতার হাতিয়ার ছিল”—এভাবে হারারি প্রাচীনকাল থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত ধর্ম ও সাম্রাজ্যের দ্বন্দ্বকে খুবই লোহিত করে দেখিয়েছেন। তবে ইতিহাসবিদরা বলেন, ধর্ম একদিকে যেমন শোষণের হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল, অপর দিকে সমাজে সামাজিক সুবিন্যাস, শিক্ষাব্যবস্থা, বিজ্ঞান-বিকাশ, আর্ত-সংস্কৃতি প্রচারের ক্ষেত্রও ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ইসলামী স্বর্ণযুগে স্কুল, বীমার (হিলালের) মতো সামাজিক কাঠামো তৈরির মাধ্যমে জনগণের হিত সাধন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, গণিত, দর্শন—all জাতীয় ও ধর্মীয় মূলনীতির আওতায় বিকাশ ঘটায়। হারারি সবটুকুকে “শুধু শোষণ” হিসেবে দেখিয়ে দিয়েছেন, অথচ ঐতিহাসিক ‘ব্যালান্স’ ভেঙে দিয়েছেন। মিষ্টি খাওয়ার ব্যাখ্যা হারারি একটি উদাহরণে বলেন যে মানুষ মিষ্টি খায় কারণ লক্ষ কোটি বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা শিকারের পর গাছে মিষ্টি ফল খুঁজত। এটি একটি সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত ধারণা, যার কোনো ঐতিহাসিক বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। সমালোচনা: এটি একটি স্পেকুলেটিভ ফ্যালাসি (speculative fallacy)। হারারি কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক বা জৈবিক প্রমাণ ছাড়াই এই গল্প বানিয়েছেন। আপনি যেমন বলেছেন, "এটার কোনো প্রমাণ নেই, তিনি নিজের কল্পনা দিয়ে লিখেছেন।" “মানুষ কেন মিষ্টি খায়”—এ নিয়ে তিনি বলেন, লক্ষ-কোটি বছর আগে মানুষ যখন জঙ্গলে মাংস খেত, তখন মিষ্টি ফল খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়। ধর্ম, জাতি, অর্থ, রাষ্ট্র– সবকিছুই নাকি মানুষ কল্পনা করে বানিয়েছে, কারণ এগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক বা বস্তুগত ভিত্তি নেই। কিন্তু ইতিহাসবিদরা জানেন, মানবসমাজের বিকাশ, ধর্মের উৎপত্তি, নৈতিকতার ধারণা– এসবের পেছনে বহুস্তরীয় সামাজিক, নৈতিক, আত্মিক, ঐতিহাসিক সত্য রয়েছে, যেগুলো কেবল “কল্পনা” বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দর্শনীয় ও যুক্তিতাত্ত্বিক খামতি ধর্ম ও নৈতিকতার অবমূল্যায়ন হারারি ধর্মকে শুধু কল্পনা হিসেবে দেখেন এবং এর নৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব উপেক্ষা করেন। এটি তার ম্যাটেরিয়ালিস্ট দৃষ্টিভঙ্গির ফল। সমালোচনা: ধর্ম শুধু গল্প নয়, এটি মানুষের জীবনে উদ্দেশ্য, নৈতিকতা এবং সম্প্রদায়ের ভিত্তি প্রদান করে। হারারি এটিকে অস্বীকার করে একটি একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। "আমরা যারা ধর্মে, জাতিতে, নৈতিকতায় বিশ্বাস করি, তিনি বলছেন আমরা কল্পনা করেছি, যুক্তি ব্যবহার করিনি।" হারারি এখানে ধরে নিয়েছেন যে তার নাস্তিক দৃষ্টিভঙ্গিই যৌক্তিক, যা একটি দার্শনিক দুর্বলতা। সত্যের অস্বীকৃতি হারারির দর্শন সত্যের অবজেক্টিভ অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। কিন্তু এটি দার্শনিকভাবে অস্থিতিশীল। যদি সত্য না থাকে, তাহলে জ্ঞান, বিজ্ঞান এবং যুক্তির ভিত্তি কী? তিনি বিজ্ঞানের কথা বলেন, কিন্তু বিজ্ঞানও সত্যের উপর নির্ভর করে। এটি তার দর্শনের আরেকটি স্ববিরোধিতা। লজিক্যাল ফলাসি ও আত্মবিরোধিতা Harari-র প্রধান যুক্তিটি “self-refuting” বা আত্মবিরোধী। তিনি যদি বলেন “সবই কল্পনা, সত্য বলে কিছু নেই”, তাহলে তার নিজের এই কথাটাই তো সত্য নয়– এটাও কল্পনা! তাহলে পাঠক কেন তার কল্পনাকে সত্য বলে মেনে নেবে? উদাহরণ: বর্তমান সমাজে কেউ যদি দাবি করে– ‘চুরি করা ঠিক’, আর কেউ বলে– ‘চুরি করা ভুল’, Harari-র মতে দুটোই কল্পনা! তাহলে চুরির বিচার হবে কীভাবে? Harari-র মতে, ধর্ম বা নৈতিকতা কল্পনা, কারণ এগুলোর “অবজেক্টিভ” ভিত্তি নেই। কিন্তু নিজেই আবার তার বইয়ে “মানবজাতির ইতিহাস” বলে যে বিশ্লেষণ দেন, সেটাই বা কতটা অবজেক্টিভ? এটি হলো “relativism fallacy”– যার অর্থ, সত্য বলে কিছু নেই বলা, অথচ নিজের মতবাদকে বিশেষভাবে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। দর্শনবিদ Antony Flew এই ধরনের ফাঁদকে “logical self-destruction” বলেছেন– কারণ, নিজের যুক্তি নিজের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়ে যায়। “নিহিলিজম” বা শূন্যবাদী সুর বইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে বারবার এসেছে “সর্বত্র সত্য বলে কিছু নেই, তার মানে ‘সবই কল্পনা’”—একে Nihilism (শূন্যবাদ) বলা যেতে পারে। তবে Nihilism-এর বিপরীত হল যে, কিছু মৌলিক সত্য, নৈতিকতা ও উদ্দেশ্য আছে—যা হারারি পুরোপুরি অস্বীকার করেন। প্রকৃতপক্ষে, দর্শনে Nihilism খারাপ নয়, কিন্তু তারও পরিপ্রেক্ষিতে “existential vacuum” পূরণ করার পক্ষপাতী কেউ হলে সেটি “responsibility” ও “free will”কেও ব্যাহত করে। হারারি মনে করেন, “মানুষ সবকিছুকে ভাঙিয়ে দেখে, তার কোনো মূলে বিশ্বাস করতে হয়নি”—কিন্তু এ পন্থা থেকে, অর্থাৎ কেউ মূলে বিশ্বাস করে না, তখন সমাজে নৈতিক vacío তৈরি হয়। নিজেরাই “কোনও আদর্শ নেই” বলে দিলে মানুষ নিজের ‘value system’ কোথা থেকে আনবে? “ইমাজিনারি অর্ডার” vs. সমাজবদ্ধতা হারারি ধারণা দেন যে, মানব সমাজ এককভাবে “কল্পনা” এর ওপর দাঁড়িয়ে; এতে “রাষ্ট্র”, “আর্থিক ব্যবস্থা”, “আইন-বিধি”—সবই একটি নিউজনেটিভ ফ্রেমওয়ার্কের অংশ। তবে সমাজবিজ্ঞানে দেখা যায়—মানুষ “বিশ্বাস” ছাড়া মোটেও একত্রিত হয় না, এবং “বিশ্বাস” অনেক ক্ষেত্রেই ঐশ্বরিক হতে পারে, শুধুমাত্র “কল্পনা” নয়। প্রত্যেক উন্নত সমাজে ধর্মীয় অথবা বিষ্ময়-নির্ভর নৈতিক মানদণ্ডই মানুষের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা, কূটনৈতিক আদান-প্রদান, সামুদ্রিক ক্রসকালচারাল যোগাযোগ রক্ষা করতে সহায়ক। হারারির “সবই কল্পনা” বলে দিলে, মানুষ মানসিকভাবে “কোনো একটি বিশ্বাস” বজায় রাখতে অক্ষম হয়—এতে সামাজিক বন্ধন ভেঙে যেতে পারে। সামাজিক অসন্তোষ ও মানসিক উদ্বেগ যদি সবকিছুকে “কল্পিত” ধরিয়ে দেওয়া হয়, সেখান থেকে মানুষ মানসিকভাবে “নিহিলিস্ট” হয়ে যেতে পারে। উদাহরণ: কেউ পড়াশোনা করে, চাকরি করে, বিবাহ-বিচ্ছেদ, সন্তানপালন সবকিছুই সে ভাবে লক্ষ্য করলে—“এগুলো মুলত কল্পনা, অর্থহীন”—এমন অবস্থায় সে আত্মহত্যা, বিষণ্নতার দিকে ঝুঁকতে পারে। ইসলাম মনস্তত্ত্বে সমর্থন দেয়—আল্লাহর দিকে ফিরে আধ্যাত্মিক শান্তি খুঁজতে। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসই মানসিক সুস্থতার উৎস। হারারির দৃষ্টিতে এই সমর্থন কার্যত “অলৌকিক” বা “কল্পনা” হিসেবে খারিজ হয়ে যায়। --- দর্শন ও যুক্তির সংকট Harari-র দর্শন মূলত “materialistic atheism”– অর্থাৎ, বস্তুবাদী ও নাস্তিক চিন্তাধারা। তিনি বিশ্বাস করেন, মানুষের জীবন, উদ্দেশ্য, নৈতিকতা– সবই জৈবিক ও সামাজিক কল্পনার ফল; ঈশ্বর, আত্মা, পরকাল– এসবের কোনো বাস্তবতা নেই। কিন্তু এই দাবি চূড়ান্তভাবে “reductionist”—জীবনের সব গভীর সত্যকে কেবল জৈবিক ও কল্পনানির্ভর বলে ছোট করে ফেলা। এত সরলীকরণে মানবজীবনের নৈতিক, আত্মিক, আধ্যাত্মিক ও সামাজিক রূপ অবজ্ঞাত হয়। এই দর্শন মানুষকে উদ্দেশ্যহীন, অর্থহীন, মূল্যহীন এক অস্তিত্বে ঠেলে দেয়। Storytelling” পদ্ধতি: বিজ্ঞান-বিশ্লেষণের অবক্ষয় হারারি গল্পের চমৎকার অলংকরণে সবকিছু ব্যাখ্যা করেন—উদাহরণস্বরূপ, তিনি “মানুষ ‘এমবায়োরিক বাফলো’ যেভাবে বন্য পশুই ভেবে বাছুরকে দুধ খাওয়ায়”—এভাবে কৃষিকাজের উদ্ভবতি বর্ণনা। কিন্তু বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণের আলোকে প্রশ্ন ওঠে: 1. কীভাবে এমবায়োরিক বাফলো এরকম সুনির্দিষ্ট আচরণ তৈরি হলো? 2. জিনগত, পরিবেশগত, সামাজিক পরিবর্তনগুলো কীভাবে সংঘটিত হলো? 3. কোনো প্রোটোকল বা পর্যবেক্ষণাত্মক নিবন্ধিত তথ্যের ভিত্তি নেই—সেখানে শুধুমাত্র এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা। এর ফলে, “গল্পের ভাষা” ভীষণ আকর্ষণীয় হলেও, বাস্তব গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক দলিলের বিচারে সত্যিষ্ঠ কি-না তা নিশ্চিত হয় না। সামাজিক ও নৈতিক ক্ষতি: বিভ্রান্তি, উদাসীনতা ও আত্ম-ধংসাত্মক মনোভাব বারবার “কিছুই সত্য নয়” বা “সবই কল্পনা” এই ধরনের সংগঠিত নিশক্রিয়া মানুষকে সামাজিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে: সামাজিক বন্ধন ও ঐক্যবোধ ক্ষয় ধর্ম, জাতি, সংস্কৃতি—এসব মানুষের মধ্যে ঐক্যবোধ সৃজন করে। হারারি যখন বলছেন “এগুলো সব কল্পনা, কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই”, তখন একদিকে ঐক্যবোধ ভেঙে যেতে পারে, অন্যদিকে সামাজিক বন্ধন দুর্বল হতে পারে। ইসলামে, “ইমাম”, “উম্মাহ”, “ঈমানের বন্ধন”—এসব এক আদর্শগত কাঠামোয় প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু হারারি সরাসরি এই কাঠামোকে “ইমাজিনারি অর্ডার” বলে রাজনৈতিক-সামাজিক চেতনার “ডিবিল্ডিং” (debuilding) করতে চায়, যার ফলে মানসিক অবসাদ ছড়ানো সম্ভব। ব্যক্তি-স্তরে মানসিক বিভ্রান্তি একজন সাধারণ পাঠক যদি “সবই কল্পনা” বিশ্বাসে আটকে যায়, তারা হয়তো জীবনের উদ্দেশ্যহীন মনে করবে, “যান্নাত-নরক ধাঁধা, ঈমান-ইসলাম সবই গল্প”। ফলাফল: আত্মহত্যা, মাদকাসক্তি, হতাশা, পারস্পরিক বিশ্বাসহীনতা—এসব চরম পরিণতির আশঙ্কা থেকেই যায়। ইসলামী উপদেশ হলো, “আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসেই শান্তি ও স্থায়িত্ব”। হারারি স্কুল অফ ফিকশন (fiction) দিয়ে সে স্থায়িত্ব দুর্বল করতে চায়। নৈতিক শূন্যতা ও বিধ্বংসী আচরণ “সত্য বলতে কিছুই নেই, সকল মুল্যবোধ একটি গল্প”—এ থেকে মানুষ নৈতিক শৃঙ্খলা হীন হয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, “মানুষ চুরি, হত্যা, জালিয়াতি সব কিছুই করে”—কারণ “এ তো সবই কল্পনা, কোনো আধ্যাত্মিক সাজা নেই!”—এ ধরনের মনোভাব গড়ে ওঠে। অথচ ইসলামে, প্রতিটি কাজের পরিণতি অদৃশ্য বিচারকের দ্বারাই নির্ধারিত; নৈতিকতার ভিত্তি আল্লাহর আদেশে স্থাপন। হারারি এই বিশ্বাসকেই চ্যালেঞ্জ করে মানবকে নিস্তেজ ও আত্মকেন্দ্রিক হতে প্রলুব্ধ করেন বিভ্রান্তি ও মানসিক অবক্ষয় Harari-র বইয়ের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, এটি সমাজের মানুষের মধ্যে সত্য, নৈতিকতা, উদ্দেশ্য, ঈশ্বর– এসবের ওপর সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং হতাশা ছড়িয়ে দেয়। মানুষ যখন বিশ্বাস করতে শেখে, “সবই কল্পনা, সত্য বলে কিছু নেই”, তখন সে আর কোনো নৈতিক বোধ, উদ্দেশ্য, দায়িত্ববোধ, ত্যাগ, ভালোবাসার গভীরতা অনুভব করে না। এই দর্শন সমাজকে আত্মকেন্দ্রিক, উদ্দেশ্যহীন, মূল্যবোধহীন এক অবস্থায় ঠেলে দেয়। এর ফলাফল– পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়, আত্মহত্যা, মানসিক রোগ বাড়ে, সামাজিক অবক্ষয়, দারিদ্র্য, অপরাধ বৃদ্ধি পায়। যৌক্তিক সমালোচনা: স্ববিরোধিতা ও দুর্বলতা ১. "সবকিছুই কল্পনা" - একটি স্ববিরোধী দাবি হারারির মূল তত্ত্ব হলো যে ধর্ম, জাতি, অর্থ ইত্যাদি "ইমাজিন্ড অর্ডার" বা কল্পনার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এবং এগুলোর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। কিন্তু এই দাবিটি নিজেই একটি যৌক্তিক ফাঁদে পড়ে। যদি সবকিছুই কল্পনা হয়, তাহলে হারারির এই বইটি এবং তার নিজের দাবিগুলোও কি কল্পনা নয়? তিনি যদি বলেন যে সত্য বলে কিছু নেই, তাহলে তার এই বক্তব্যটিও সত্য হতে পারে না। এটি একটি স্ববিরোধী দাবি (self-contradictory statement)। উদাহরণ: যদি আমি বলি, "এই বাক্যটি মিথ্যা", তাহলে বাক্যটি সত্য হলে মিথ্যা হয়, আর মিথ্যা হলে সত্য হয়। হারারির দাবিও এমনই। তিনি বলছেন, "সবকিছুই কল্পনা", কিন্তু তার এই দাবিটি সত্য বলে দাবি করছেন। এটি যৌক্তিকভাবে অসম্ভব। হারারি অন্যদের মতবাদকে কল্পনা বলে বাতিল করেছেন, কিন্তু তার নিজের মতবাদকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। এটি তার যুক্তির দ্বৈত মানদণ্ড (double standard) প্রকাশ করে। ২. লজিক্যাল ফ্যালাসি: সার্কুলার রিজনিং হারারি যখন বলেন যে মানুষ ধর্ম বা নৈতিকতা কল্পনা থেকে তৈরি করেছে, তখন তিনি এই দাবির সমর্থনে কোনো শক্তিশালী প্রমাণ দেন না। তার যুক্তি হলো: "এগুলো কল্পনা, কারণ আমি বলছি এগুলো কল্পনা।" এটি একটি সার্কুলার রিজনিং (circular reasoning) ফ্যালাসি। তিনি নিজের কল্পনা দিয়ে একটি গল্প বানিয়েছেন এবং সেটিকে সত্য বলে চাপিয়ে দিচ্ছেন। "তিনি কল্পনা করে বলছেন যে আমাদের পূর্বপুরুষ কল্পনা করে ধর্ম বানিয়েছে।" এটি ঠিক। হারারি কোনো প্রমাণ ছাড়াই নিজের কল্পনাকে বৈধ করছেন, যেখানে তিনি অন্যদের কল্পনাকে অবৈধ ঘোষণা করছেন। ৩. অবজেক্টিভ সত্যের অস্বীকৃতি হারারি যদি বলেন যে সত্য বলে কিছু নেই, তাহলে এটি জীবনের বাস্তবতার সাথে সাংঘর্ষিক। আপনি যেমন বলেছেন, "সত্য না থাকলে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না।" উদাহরণস্বরূপ: একজন চোর বলে, "আমি চুরি করিনি।" মালিক বলে, "সে চুরি করেছে।" যদি সত্য বলে কিছু না থাকে, তাহলে দুজনের দাবিই একই সাথে সত্য ও মিথ্যা হয়, যা যৌক্তিকভাবে অসম্ভব। সত্য একটি বাস্তব জিনিস, যা সমাজ ও জীবনের ভিত্তি। হারারি এটি অস্বীকার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। Harari-র নিজস্ব কল্পনা ও দ্বিমুখিতা সবচেয়ে বড় ইরনি হলো, Harari নিজেই “কল্পনা” দিয়ে বইটি লিখেছেন! তিনি বলছেন– “সবই কল্পনা”, কিন্তু তাঁর বইটাই বা কী? এটাও তো তার “imagined order”—নতুন এক গল্প, যেটা তিনি বিশ্বাস করতে চান এবং আমাদের বিশ্বাস করাতে চান। যদি সত্য বলে কিছু না থাকে, তাহলে Harari-র বইটাও “সত্য” নয়– এটাও কেবল কল্পনা! তাহলে, পাঠক কেন তার কল্পনাকে মেনে নেবে? এটা নিজেই তার দর্শনের “logical collapse”—নিজের যুক্তিই নিজের বিরুদ্ধে যায়। নাস্তিকতার প্রচার আপনি বলেছেন, "তিনি নিজের নাস্তিক মতবাদ ছড়ানোর জন্য এই বই লিখেছেন।" এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ। হারারি তার বইয়ের মাধ্যমে একটি নাস্তিক ও ম্যাটেরিয়ালিস্ট বিশ্বদৃষ্টি প্রচার করছেন, যা বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য বিভ্রান্তিকর এবং ক্ষতিকর। Harari-র দর্শন মূলত “materialistic atheism”– অর্থাৎ, বস্তুবাদী ও নাস্তিক চিন্তাধারা। তিনি বিশ্বাস করেন, মানুষের জীবন, উদ্দেশ্য, নৈতিকতা– সবই জৈবিক ও সামাজিক কল্পনার ফল; ঈশ্বর, আত্মা, পরকাল– এসবের কোনো বাস্তবতা নেই। কিন্তু এই দাবি চূড়ান্তভাবে “reductionist”—জীবনের সব গভীর সত্যকে কেবল জৈবিক ও কল্পনানির্ভর বলে ছোট করে ফেলা। এত সরলীকরণে মানবজীবনের নৈতিক, আত্মিক, আধ্যাত্মিক ও সামাজিক রূপ অবজ্ঞাত হয়। এই দর্শন মানুষকে উদ্দেশ্যহীন, অর্থহীন, মূল্যহীন এক অস্তিত্বে ঠেলে দেয়। সমাজে বিভ্রান্তি ও মানসিক অবক্ষয় Harari-র বইয়ের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, এটি সমাজের মানুষের মধ্যে সত্য, নৈতিকতা, উদ্দেশ্য, ঈশ্বর– এসবের ওপর সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং হতাশা ছড়িয়ে দেয়। মানুষ যখন বিশ্বাস করতে শেখে, “সবই কল্পনা, সত্য বলে কিছু নেই”, তখন সে আর কোনো নৈতিক বোধ, উদ্দেশ্য, দায়িত্ববোধ, ত্যাগ, ভালোবাসার গভীরতা অনুভব করে না। এই দর্শন সমাজকে আত্মকেন্দ্রিক, উদ্দেশ্যহীন, মূল্যবোধহীন এক অবস্থায় ঠেলে দেয়। এর ফলাফল– পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়, আত্মহত্যা, মানসিক রোগ বাড়ে, সামাজিক অবক্ষয়, দারিদ্র্য, অপরাধ বৃদ্ধি পায়। নৈতিক ভিত্তির ক্ষয় হারারির বই যদি মানুষকে বোঝায় যে ধর্ম, জাতি, নৈতিকতা সব কল্পনা, তাহলে এটি সমাজের নৈতিক ভিত্তিকে ধ্বংস করতে পারে। আপনি যেমন বলেছেন, "এটি সমাজকে ধ্বংস করবে।" উদাহরণ: যদি নৈতিকতা কল্পনা হয়, তাহলে চুরি, হত্যা বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো যুক্তি থাকে না। এটি সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। ২. মানসিক অস্থিরতা হারারির দাবি মানুষের মধ্যে অস্তিত্বগত সংকট তৈরি করতে পারে। যদি জীবনের উদ্দেশ্য, ধর্ম বা বিশ্বাস সব কল্পনা হয়, তাহলে মানুষ কী নিয়ে বাঁচবে? এটি মানসিক অস্থিরতা ও হতাশার জন্ম দিতে পারে। “Sapiens”-এ Harari ইতিহাস ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণ বা প্রত্যক্ষ উৎসের পরিবর্তে নিজের কল্পনাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি বহু জটিল ও বহুস্তরীয় ঘটনার সহজীকরণ করেছেন, যেগুলোর গভীর সামাজিক, নৈতিক ও ধর্মীয় ব্যাখ্যা থাকা সত্ত্বেও তিনি সেগুলোকে কেবল “কল্পিত” বলে সরলীকরণ করেছেন। ১. ঐতিহাসিক প্রমাণের অভাব Harari-র অনেক বক্তব্যে সরাসরি ঐতিহাসিক দলিল বা গবেষণার উদ্ধৃতি নেই। উদাহরণস্বরূপ, মানবসমাজে ধর্ম ও নৈতিকতার সূচনা নিয়ে তিনি যে ব্যাখ্যা দেন, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুমাননির্ভর (“speculative”) এবং প্রতিষ্ঠিত ইতিহাসবিদদের বিশ্লেষণ থেকে আলাদা। ২. একপাক্ষিকতা ও পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি Harari-র ইতিহাসচর্চায় পশ্চিমা বস্তুবাদী চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। ইসলামিক, আধ্যাত্মিক, বা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইতিহাসের বিশ্লেষণ এখানে অনুপস্থিত। ফলে পুরো ইতিহাসটাই একপাক্ষিকভাবে ব্যাখ্যাত হয়েছে। ৩. জটিল সত্যের সরলীকরণ ইতিহাসের ঘটনাবলী– ধর্মের বিকাশ, নৈতিকতার উত্থান, সমাজ গঠনের কারণ– এসবের পেছনে
Was this review helpful to you?
or
দাম বিবেচনায় কাগজ ও প্রিন্টের মান আরও ভালো হতে পারতো।
Was this review helpful to you?
or
faltu boi
Was this review helpful to you?
or
This book makes me thought again again with a deeper outlook. One of the best books I have ever read.
Was this review helpful to you?
or
Very good book. Author looked at human history from a unique point of view and presented it in a very soothing and unique way. It's a pleasent ride through time and hository. A must read.
Was this review helpful to you?
or
Great book of knowledge
Was this review helpful to you?
or
EVERY ONE SHOULD READ THIS BOOK
Was this review helpful to you?
or
Yeah, I will read this book ???
Was this review helpful to you?
or
I believe I am relatively familiar with history in general, and I'm usually not very excited about reading more about it. But this book was something else. Beautifully written and easy to read, this book just made me want to know more and more about how the author thinks the world evolved to what it is today. Revolution by revolution, religion by religion, conception by conception, things were simplified and yet still maintained valid points - and it was never boring. The best thing about it was that it actually made me think. The author doesn't treat you as ignorant at all - he doesn't assume you know nothing but assume you know a lot and understand a lot, and doesn't lecture about anything, and that attitude makes the book a pleasure to read. Just read it.
Was this review helpful to you?
or
এই বইটা পড়ার পর আপনি পৃথিবীর মানুষকে, মানুষের ইতিহাসকে যেভাবে দেখতেন, সেই দেখায় আমূল পরিবর্তন এনে দিবে।
Was this review helpful to you?
or
হারারির সাপিয়েন্স রিলিজ হয়েছে বেশ কয়েক বছর হলেও বাংলা অনুবাদের অভাবে (যেহেতু আমার ইংরেজি জ্ঞান প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চা লেভেলের) বইখানা এতদিন পড়া হয়নি। অবশেষে ইউপিএল আর সৈয়দ ফায়েজ আহমদের বাংলায় অনুবাদের কল্যাণে বই খানা পড়া হলো। কাহিনি শুরু প্রায় ১৩.৫ বছর আগের বিগ ব্যাং থেকে। সময়ের পরিক্রমায় এই বিশ্ব ব্রম্মান্ডের সৃষ্টি থেকে আমাদের এই পৃথিবী সৃস্টি। আস্তে আস্তে প্রাণের সৃষ্টি। এক লক্ষ বছর আগেও অন্তত ছয়টি মানব প্রজাতি পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াতো। হোমো রুফলফেনসিস, হোমো ইরেক্টাস, হোমো নিয়ান্ডারথালেনসিস, হোমো সোলোয়েনসিস প্রভৃতি। বর্তমানে বাস করে মাত্র একটি প্রজাতি - আমরা - হোমো সাপিয়েন্স। অথচ সত্তর হাজার বছর আগেও আমরা হোমো সাপিয়েন্সরা ছিলাম আফ্রিকার এক কোণে নিজেদের কাজে ব্যাস্ত থাকা এক নগন্য প্রাণী। এর পরের সহস্রাব্দগুলোতে আমরা নিজেদের এই গ্রহের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে দিয়েছি এবং এই গ্রহের বাস্তুসংস্থানের উপর প্রভুত্ব অর্জন করেছি। আমরা আদিম অরণ্যচারী ফলমূল সংগ্রাহক জীবন থেকে কৃষিযুগ পার হয়ে শিল্পোবিপ্লব ঘটিয়ে বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানের যুগের অবস্থানে এসেছি। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আমরা অসংখ্য ভাষা, ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি তৈরি করেছি। সেইসবের প্রভাব বিস্তার নিয়ে আমরা নিজেদের ভেতর অসংখ্য লড়াই করেছি। এক জাতি আরেক জাতির উপর অসংখ্য গণহত্যা চালিয়েছি।
Was this review helpful to you?
or
Both A Brief History of Time and Sapiens share a similar, worthy goal - to explain complex issues in a way which can actually be understood and comprehended by most people. Just as A Brief History... aimed at explaining cosmology to a lay audience, Sapiens aims to provide a readable and concise historical summary of the progress of human evolution - all in under 500 pages. A worth reading book.
Was this review helpful to you?
or
I recently finished the book. It really makes sense that how we've been on this planet but it also shows us the tremendous effort of our ancestors to make the modern twenty-first worthy in terms of science and technology. Thanks to sapiens to widen our knowledge about human history
Was this review helpful to you?
or
This is a rare piece of thrilling book. That take you into a journey of, how we become, what we are. In Some sense, this is not a book of history, but a book of philosophy based on history and little bit of science & logic. This Book Changed the way I see the World
Was this review helpful to you?
or
One of the great book i have ever read.
Was this review helpful to you?
or
not a good book for a practicing Muslim. you'll find it meaningless...it's just my opinion. you should read and find out.
Was this review helpful to you?
or
Certainly one of the best ive ever read in my short lifespan. It connects all the dots that scientists have discovered about us,our ancestors and our long journey that made us HUMAN.
Was this review helpful to you?
or
Have you ever imagined why we are what we are now and how we've reached this position? Do you really care to know about US about Humankind? Then this book will certainly help you. This is the must book book if you are looking for reasonable answers to those questions.