User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
very nice
Was this review helpful to you?
or
5★
Was this review helpful to you?
or
অসাধারন লিখেছেন।
Was this review helpful to you?
or
Very good Book.
Was this review helpful to you?
or
wow
Was this review helpful to you?
or
Informative & Reliable, I think.
Was this review helpful to you?
or
valoi
Was this review helpful to you?
or
It was One of the best book
Was this review helpful to you?
or
অসাধারন ইতিহাস নির্ভর বই। প্রাঞ্জল লেখনী
Was this review helpful to you?
or
ভালো বই
Was this review helpful to you?
or
Awesome
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
ভালো ছিলো
Was this review helpful to you?
or
ইসলাম বিদ্বেষীদের মিথ্যার জবাব এই বই এ পাবেন। তথ্যবহুল
Was this review helpful to you?
or
nice book with various underrated information which we might haveto know
Was this review helpful to you?
or
বইটা আমাদের ইতিহাসের অনেক গোপন তথ্য দিয়েছে যেগুলো আমরা জানতামই না।
Was this review helpful to you?
or
Very good
Was this review helpful to you?
or
পিনাকী গুরুর এক অনবদ্য সৃষ্টি। জাস্ট অসাম....।
Was this review helpful to you?
or
well
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধের কিছু ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদানে বইটি ভালো লেগেছে।
Was this review helpful to you?
or
Islamic history
Was this review helpful to you?
or
Very good and helpful book.
Was this review helpful to you?
or
গুরুত্বপূর্ণ বই
Was this review helpful to you?
or
এক কথায় অসাধারণ বই, লেখক সবকিছু রেফারেন্স সহ উল্লেখ যা খণ্ডন করার কোন সুযোগ নেই। Highly Recommended!
Was this review helpful to you?
or
আমি মনেকরি একবার হলেও বইটি পড়া উচিৎ। যেহেতু বইটি বিতর্কিত বিষয় নিয়ে লেখা তাই বিষয় বস্তুর সত্যতা না হয় নিজেই যাচাই করলেন। এটুকু বলতে পারি মানের দিক থেকে যথেষ্ট ভালো।
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক রচনা।
Was this review helpful to you?
or
বইটি সত্য-মিথ্যার ঐতিহাসিক দলিল।
Was this review helpful to you?
or
Great book on our Liberation war,must read for our religious leaders
Was this review helpful to you?
or
Very informative with a different point of view.
Was this review helpful to you?
or
ভালো
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ
Was this review helpful to you?
or
বইটি আসাধারন একটি বই যা পড়া সবার দরকার বলে মনে করি। বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসলাম এর কি ভূমিকা ছিল তা যেনে যে কেও অবাক হবেন। বিশেষ করে সেকুলারিজম এর অনুসারীদের বলবো পড়ুন।
Was this review helpful to you?
or
This book is full of wrong information, the writer Pinaki wanted to get attention from illierate and radical muslims.
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম এককথায় অসাধারণ একটি বই...!!
Was this review helpful to you?
or
Awesome one
Was this review helpful to you?
or
This book is excellent.
Was this review helpful to you?
or
well informative for them who don’t have knowledge about freedom fight. It's best clarification about Muslim olama who participated directly and indirectly in war. Thanks to writer for your acknowledged discussion on history.
Was this review helpful to you?
or
very good initiative.
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ!
Was this review helpful to you?
or
secularism er name Islam k nijer sathe mill korien na r koto dhoka diben
Was this review helpful to you?
or
An eye opener, which is based on government documents, not on fairy tales
Was this review helpful to you?
or
A fine book to overview the commitment of then Ulama e Deen.
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
" মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম " বইটি পড়লাম । ভালো লাগলো । কারণ লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য বইটিতে কিছু বিষয়ের পরিষ্কার ধারণা দিয়েছেন যা এতদিন আমার কাছে ধোঁয়াশা ছিল । " মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম " বইয়ে লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন - বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে "ইসলাম " এর সংশ্লিষ্টতা, বৈধতা ( পাকিস্তানের প্রচারের বিপরীতে ) ও বর্তমানে প্রচলিত ধারণা : ইসলামের সাথে মুক্তিযুদ্ধের বৈরীপূর্ণ অবস্থান এসেছে । আমরা যদি " মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম " বইটি পড়ি তবে দেখতে পাই লেখক পনের টি অধ্যায়ে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেছেন । এক থেকে চার অধ্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামীলীগ ও প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের ইসলামী মূল্যবোধ , চেতনা ও সংশ্লিষ্টতার উদাহরন দিয়েছেন । যেমন, 1970 এর 6 জুনে আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে গৃহীত কর্মসূচী বলা হয়েছে ' কোরআন ও সুন্নার নির্দেশর বিরুদ্ধে পাকিস্তানে যাতে কোনো আইন পাশ না হইতে পারে , তজ্জন্য আওয়ামী লীগ শাসনতান্ত্রিক বিধান রাখার কথা কথাও দলীয় কর্মসূচিতে ঘোষণা করে '। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় কিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ইসলামের ইঙ্গিতে উজ্জীবিত (অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা মুসলিম ) করা হয়েছে তা আলোকপাত করা হয়েছে । আমার কাছে মনে হয়েছে পাঁচ থেকে সাত অধ্যায় হল এই বই এর মূল চমকপ্রদ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে । যেমন লেখক বলেছেন : জামাতে ইসলামীর স্বাধীনতা বিরোধীতার দায় পরবর্তীকালে চাপিয়ে দেয়া হয় সব ধরনের ইসলামপন্থিদের উপর । অন্যদিকে চিত্র, কার্টুন, সিনেমাতে দাড়ি-টুপি পরা মানুষকে রাজাকার এবং হত্যাকারী হিসেবে উপস্থাপন করা শুরু হয় । কিন্তু বিভিন্ন ছবির প্রমাণ হিসেবে হাজির করে লেখক দেখিয়েছেন রাজাকারের কারো মুখে দাড়ি নেই । এমনকি ইসলামী লেবাসও নেই । এই অংশের চমকপ্রদ তথ্য লিখেছেন তা হল : 1971 সালের 17 এপ্রিল স্বাধীনতার লক্ষ্য হিসাবে বলা হয়েছে , স্বাধীনতার লক্ষ্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা । কিন্তু ভারতের অভিপ্রেতে ধর্মনিরপেক্ষতা , সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে । # এখানে হয়ত সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকাও ছিল । আট থেকে চৌদ্দ অধ্যায়ে লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দেশের ও উপমহাদেশের আলেম সমাজের ভূমিকা,অবস্থান ও উপলব্ধি । এবং স্বাধীন বাংলা বেতার ও জয়বাংলা পত্রিকায় ইসলাম প্রসঙ্গ ; সম্পর্কে বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে বিভিন্ন ইসলামী দেশের পত্রিকার ভাস্য যা মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বাড়াতে সাহায্য করতে পারে । আমার কাছে বইটি ভালো লেগেছে । যদি এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা ভালো লাগে পড়তে পারেন " মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম " - পিনাকী ভট্টাচার্য । প্রকাশ করেছ -গার্ডিয়ান পাবলিকেশনস । মূল্য : 250 টাকা । rokomari.Com বা boibajar.com (01717715671) থেকেও পেতে পারেন ।
Was this review helpful to you?
or
Gdd
Was this review helpful to you?
or
বই পর্যালোচনা মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম লেখক, পিনাকী ভট্টাচার্য গার্ডিয়ান প্রকাশনী মূল্য: ২৫০ টাকা গ্রন্থের নাম এবং লেখককের নাম দেখে চমকাবেন এটা সত্য।চমকাতেই হবেই, আমাদের সাংস্কৃতিতে এই চমকানোটা স্বাভাবিক ব্যপার। যদি আপনি গ্রন্থটি না পড়েন তবে, আপনার মনে প্রশ্ন জাগবে যে, একজন ভিন্নধর্মী লোক কীভাবে ইসলামিক গ্রন্থ লেখেন। আমি আপনার উত্তর দিচ্ছি, ’’মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম’’ কোন ইসলামিক গ্রন্থ না। এটা স্রেফ একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ইতিহাসের গ্রন্থ। তরুণ প্রজন্মের জন্য গ্রন্থটি পাঠ করা অন্নগ্রহণের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ না। লেখক প্রত্যেকটা প্রবন্ধে যথেষ্ট দলিল পেশ করেছেন। যাতে আপনি বোলতে না পারেন যে, লেখক মনগড়া কথা লিখেছেন। লেখক গ্রন্থটি মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন ইসলামের বা আলেম সমাজের ভূমিকা তুলে ধরেছেন। সাধারণত আমরা দেখতে পাই বা আমাদেরকে দেখানো হয় বিভিন্ন কায়দায় যে, আলেমরা বা টুপি ওয়ালারা মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছিলো। কিছু সংখ্যক নামধারী আলেম বিরোধিতা করেছিলো বটে। কিন্তু তার জন্য সমস্ত আলেমদেরকে বা, দাঁড়ি, টুপি ওয়ালাদেরকে যে, রাজাকার আখ্যা দিয়েছে বা দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, লেখখ সেখান থেকে শুরু করেছেন। লেখকের মূল বয়ান হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধকালে আলেমরা যুদ্ধের বিরোধিতা করেনি বরঞ্চ, তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ স্বাধীনতা করার জন্য যুদ্ধ করেছে। লেখক, আনিসুর রহমান
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধ এবং ইসলামের চেতনা যে সাংঘরসিক নয় এটা জানতে বইটি পরুন। ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যে দ্বন্দ্ব কৃত্তিম ভাবে তৈরি করা হয়েছে তা এ বইতে দালিলিক ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। মুক্তি যুদ্ধের সময় ইসলামিক চেতনা কিভাবে আমাদের মুক্তিসেনাদের সাহস ও প্রেরনা দিয়েছে তা চমৎকার ভাবে দালিলিক প্রমানে তুলে ধরা হয়েছে। পিনাকির গবেষণা ধর্মী এ বইটি সত্যিই অসাধারন।
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধের সয়ম কিভাবে ধর্মকে ব্যবহার করছে মুজিবনগর সরকার, আবার ৭২ এর সংবিধানে ধর্মকে বাদদেওয়া হয়েছে। ইসলামকে সার্থের জন্য নির্মম ভাবে ব্যবহার করেছে সবাই।মুক্তিযুদ্ধের কারণে লাভবান কারা হয়েছে অনবদ্য ভাষায় ব্যক্ত করেছে লেখক।
Was this review helpful to you?
or
Best??
Was this review helpful to you?
or
আলহামদুলিল্লাহ।I read the book. মুক্তিযুদ্ধে ইসলামের বয়ান. ভূমিকা সম্পর্কে খুব গুরুত্বপূর্ণ ,যুক্তিপূর্ণ,দলিলভিত্তিক আলোচনা। মুক্তিযুদ্ধে ইসলামী দলগুলোর ভূমিকার ব্যাপারে আওয়ামী মিথ্যাচারের জবাব
Was this review helpful to you?
or
তথ্যসমৃদ্ধ অসাধারণ একটি বই
Was this review helpful to you?
or
না পড়লে বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবেন না।
Was this review helpful to you?
or
মাশাল্লাহ
Was this review helpful to you?
or
I found his writing communally biased.
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে প্রতিটির প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের যে বয়ান উপস্হাপন করা হয়েছে সেখানে ইসলাম অনুপস্থিত। আর যেখানে ইসলামকে উপস্থাপন করা হয়েছে সেখানে রয়েছে ইসলাম বিলেনের চরিত্র। মুক্তিযুদ্ধ আর ইসলাম এই দুটি শব্দে আমরা শুনা মাত্রই মস্তিষ্কে যে চিত্রটি ইমেজিং করি তা হলো, রাজাকার, ধর্ষণকারী, স্বাধীনতা বিরোধী। এটা আমাদের ধারণা না বরং দেশের সেকুলার বুদ্ধিজীবীরা যুগের পর আমাদেরকে এটি শিখিয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। যখন আমরা খুব ছোট ছিলাম তখন স্বাধীনতা দিবসে স্কুলে 'যেমন খুশি তেমন সাজ' অনুষ্ঠান হতো। অনুষ্ঠানে একজন রাজাকার সাজতো আর কয়েকজন সাজতো মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধাদের যে সাজতো তার পরনে থাকতো লুঙ্গি-গামছা-গেঞ্জি আর রাজাকারের পরনে পাঞ্জাবি/জুব্বা-লুঙ্গি, মুখভরা দাড়ি। যখন আরেকটু বড় হতে লাগলাম, উপন্যাস, গল্প পড়তে শুরু করলাম তখনও একই ভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে রাজাকারের চরিত্র থাকতো দাড়ি টুপি পাঞ্জাবি পরা মুসলিম। এর পর নাটক, সিনেমা আর বুদ্ধিজীবীদের টকশো সবখানে রাজাকারের তালিকায় মুসলিম।মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন নাটক-সিনেমায় টুপি দাড়িওয়ালা লোকদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যেমন আমার বন্ধু রাশেদ মুভিতে রাশেদকে হত্যা করেন যিনি তাকে দেখানো হয় টুপি পাঞ্জাবি পড়া বৃদ্ধ। এভাবে প্রতিটি মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হলো। মুক্তিযুদ্ধ আর ইসলাম দুটি বিপরীত শব্দ। একে অপরের সাংঘর্ষিক! ফলে ছোটবেলা থেকে টুপিওয়ালা-দাড়িওয়ালাদের দেখলে 'রাজাকার-রাজাকার' বলে মনে হয় আমাদের কাছে। এই ইতিহাস আসলে কতটুকু সত্য? মুক্তিযুদ্ধে আসলে ইসলাম কি বিপরীত পক্ষে ছিলো? রাজাকার আল বদর সবাই কি মুসলিম ছিলো? - না। বরং বাস্তব ঘটনা ১৮০ ডিগ্রি উল্টো! ইসলাম এদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিলো ইসলাম তথা মুসলমান। আর আমাদের মস্তিষ্কে যে মিথ্যা ইতিহাসের বীথ তৈরি করে দিয়েছে সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীরা সেই ঝং ধরা মিথ্যা ইতিহাসের ধুলোকালিকে শুধরে নিতে পিনাকী ভট্টাচার্যের লেখা 'মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম'। এখানে বইয়ের 'বয়ান' শব্দটা কনস্ট্রকাশন অর্থাৎ চিন্তা ভাবনা বুঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে। পুরো বইটিতে লেখক তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণ কিভাবে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। টিভি টকশোতে আমাদেরকে সেক্যুলারিজমের বয়ান শেখানো হয়। কিন্তু এই সেক্যুলারিজম শব্দ কিভাবে, কোথা থেকে, কোন অর্থে এই দেশে এলো, এগুলোও আমাদেরকে জানানো হয়না। সেক্যুলারিজমের নামে এই শ্রেণীর ধর্মবিদ্বেষী দাবি করে থাকেন, ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র চেতনা। কিন্ত এই চেতনা যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয় সেটা লেখক মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দলিল আর মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী ভাষণ ও মুক্তিযুদ্ধে চলমান সময়ে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত'র রেফারেন্স দিয়ে দেখিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের ছিলো তিনটি নীতি ছিলো - সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার। এই নীতিগুলোকে কেন্দ্র করেই যুদ্ধের ভিত্তি রচিত হয়েছিলো। এই নীতিগুলোর মাধ্যমে স্বাধীনতার পর একটি ইনসাফপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে বলে, মুক্তিযোদ্ধারা ঝাপিয়ে পড়েছিলো যুদ্ধে যার সিংহভাগই ছিলো মুসলিম। শুধুমাত্র ভারতের সমর্থন আদায়ের জন্যই পরপর দুইবার চিঠি দেওয়ার পর ব্যর্থ হওয়ায় তৃতীয়বার চিঠিতে ভারতে কথামতো, চূড়ান্তভাবে ২৩ নভেম্বর ১৯৭১ "ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, বাঙালী জাতীয়তাবাদ" এই চার নীতির কথা নতুনকরে যুক্ত করা হয়। এটা অবশ্যই অস্বীকার করার জ্যু নেই, আওয়ামিলীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বস্থানীয় দল ছিলো। এই আওয়ামিলীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত কোথাও তাদের দলীলপত্রে ইসলামবিরোধী বক্তব্য তো দূরে থাক, সেক্যুলারিজম শব্দটিও খুঁজে পাওয়া যায়না। বরং ইসলামের স্বপক্ষে তার ছিলো সুস্পষ্ট অবস্থান। তা সে সময়ের দলীয় কার্যক্রম ও বঙ্গবন্ধুর ভাষণে সহজে অনুমেয় করা যায়। বঙ্গবন্ধু তার প্রতিটি ভাষণের শুরুতে আ'য়ুঝুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতেন তার ভাষণে থাকতো একটি ইনসাফ পূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার কথা । বক্তব্য শেষ করতেন ইনশাআল্লাহ বলে। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অভ্যন্তরীণ সরকার (মুজিব নগর সরকার) স্বাধীনতার লক্ষ্য হিসেবে যে কথা বলা হয়েছে, 'In order to ensure for the people's of Bangladesh equality, human dignity and social justice.' মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য হিসেবে এখানে ধর্মনিরপেক্ষতা কিংবা সেক্যুলারিজমের কথা বলা হয়নি, কিন্ত ইসলাম বিদ্বেষী সেক্যুলার মহল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলতে এতদিন আমাদেরকে এক ধর্মনিরপেক্ষ ইতিহাসের কথা বলে আসছেন! স্বাধীনতা সংগ্রামে আলেম সমাজের ভূমিকা কতটুকু ছিলো? তা মুছে ফেলা হয়েছে ইতিহাস থেকে জেন কোন অবদানই নেই মুসলিম আলেম/মাওলানাদের! অথচ ইতিহাস মাওলানা আব্দুস সালাম, হাফেজ্জী হুজুর (রহ.), মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, মওলানা এমদাদুল হক সহ এমন অসংখ্য আলেম-মাওলানা মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে বিদেশি জনমত গড়ে তুলে ছিলো বাংলাদেশের পক্ষে। তেমনি একজন সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী (রহ.)।যিনি ভারতের মুসলিম সমাজে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গঠনে অপরিসীম ভূমিকা রেখেছিলেন। অথচ, ইতিহাসের পাতায় আজ তার নাম নাই! তবে এটা ঠিক, কিছু সংখ্যাক ইসলামিক দল/ব্যক্তি যুদ্ধে নিস্ক্রিয় ছিলো। তারা পাকিস্তান বাংলা বিভক্তি চায় নায়। তারা সংখ্যায় ছিলো নগণ্য। অথচ, আজ এই নগণ্য সংখ্যার বোঝা ভার চাপিয়ে দিচ্ছে সিংহভাগ মুসলমানের উপর। এই অল্পসংখ্যক মানুষের আড়ালে মুছে ফেলা হচ্ছে বিশালসংখ্যক মুসলিমের ত্যাগ তিতিক্ষার ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের সময় রেডিও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সম্প্রচার করা হতো যেখানে থাকতো কুরআনের বাণী, হাদিসের কথা। দেশ প্রেম ঈমানের অংশ। ইসলামের কুরআনে ও হাদিসে জুলুমকারীর প্রতিরোধ, ইনসাফ পূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করার বাণী শুনাতো হতো। ফলে মুক্তিযুদ্ধোরা ঝাপিয়ে পড়েছিলো যুদ্ধে। এবং তাদের মাঝেও ইসলাম পালনের কথা সুস্পষ্ট। নিজেদের বাড়িতে যখন চিঠি পাঠাতেন সেই চিঠিগুলোতে ইসলামী সম্ভাষণ, দ'ুআ, এবং শেষ করতো আল্লাহর উপর ভরসার কথা বলে। যার স্বপক্ষে একাধিক চিঠির ছবিও দিয়েছেন লেখক বইতে। বইটির উপসংহার টেনেছেন জনপ্রিয় কলামিস্ট গৌতম দাস। মন্তব্যের জায়গায় যদি বলি, পিনাকী ভট্টাচার্য পেশায় ডাক্তার হয়েও দেশের ইতিহাসকে সত্য এবং সঠিক রূপে তুলে ধরার জন্য যে লড়াই করে যাচ্ছেন তার জন্য ধন্যবাদ তাকে। কারণ- আমরা এমন সময় পার করছি যেখানে সত্য কথা বলা আর সাহসিকতা দেখানো লোকের সংখ্যা বিরল! সেখানে পিনাকী ভট্টাচার্য দেখিয়েছেন অনন্য দৃষ্টান্ত। বইটি নিয়ে ভিন্ন ধর্মালম্বীরা বলতে পারেন, তাহলে ইসলাম ব্যতিত অন্য ধর্মকে ছোট করা হয়েছে? - না। একদমি না। বরং মুক্তিযুদ্ধ আর ইসলামের সম্পর্কে কেমন ছিলো? সে সত্য এবং সঠিক ইতিহাস মুছে আমাদেরকে এতদিন যে মিথ্যা ইতিহাস শিখিয়ে আসছে সে ভুল তথ্য সুধরানোর জন্য লেখক পুরো বইটিতে মুক্তিযুদ্ধে ইসলাম অবস্থান ও ভুমিকা কি ছিলো তা তুলে ধরেছেন। বইটি পড়লে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তোতাপাখির মতো শেখানো বুলি গুলো কতটুকু সত্য সে বিষয়ে টনক নড়বে আপনার। তাই বইটি পড়ুন। সঠিক ও সত্য ইতিহাস জানুন। মুক্তিযুদ্ধে ইসলামের ভুমিকা কেমন ছিলো তা পরিষ্কার হয়ে যাবে আপনার ঝং ধরা মস্তিষ্ক। যা আপনার ব্রেনে সেট করে দিয়েছিলো এদেশের সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীরা। বই : মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম লেখক : পিনাকী ভট্টাচার্য প্রকাশনি : গার্ডিয়ান প্রকাশনি মূল্য : ২৫০ টাকা ( মুদ্রিত ) পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৪১ ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৯.৫/১০ হ্যাপি রিডিং ♥️
Was this review helpful to you?
or
best one
Was this review helpful to you?
or
Ekebarei Banoat kothabarta
Was this review helpful to you?
or
১৯৭১ সাল। জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের লক্ষে আমরা পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চেয়েছিলাম।তারা ইসলামের নাম নিয়ে গনহত্যা জায়েজ করতে চেয়েছে।আবার সেই সময়ের কয়েকটি ইসলামপন্থী দল মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অবস্থান নেয়ার ফলশ্রুতিতে বাম ও সেক্যুলারপন্থীরা মুক্তিরকে ইসলামের প্রশ্নে বুর্জোয়া ফায়সালা হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছে।কিন্তু বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধের নির্মাণ ও পরিচালনায় ইসলাম ছিলো প্রাধান্য বিস্তারকারী বয়ান।মুক্তিযুদ্ধকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র 'আল্লাহর পথে জিহাদ' বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। মাঠের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা ছিলো ইসলাম; তারা শক্তি নিয়েছে ইসলামের ন্যারেটিভ থেকে।স্বাধীন বাংলা সরকারের বক্তব্য বিবৃতিতে ইসলাম খুব সাবলীলভাবে বর্তমান ছিলো।আলেম সমাজের বড় একটা অংশ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন এবং দেশ-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দলটির নাম নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগ। ১৯৬৯ সালে প্রস্তাবিত খসড়া সংবিধান সংশোধনী বিলে ইসলামী আদর্শ বহাল রাখার বিষয়ে তারা সম্মতি জানিয়েছিলো। ১৯৭০ সালের নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের আগে বেতারে ও টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধু তার ভাষনে স্পষ্ট ভাবে ইসলামের পক্ষ নিয়ে বলেছিলেন ' লেবেলসর্বস্ব ইসলামে আমরা বিশ্বাসী নই।আমরা বিশ্বাসী, ইনসাফের ইসলামে। তিনি আরো বলেছিলেন,যে দেশের শতকরা ৯৫ জন মুসলমান, সে দেশে ইসলামবিরোধী আইন পাশের ভাবনা কোন মুসলিম ভাবতে পারেনা। ২৫ মার্চের পাকিস্তানিদের বর্বর গনহত্যা চালানোর পর বঙ্গবন্ধু তার এক ভাষনে বলেছিলেন, " জনগনকে ইসলাম ও মুসলমানের নামে স্লোগান দিয়ে ধোকা দেয়া যায় না।ধর্মপ্রাণ মুসলমান তাদের ধর্মকে ভালবাসে ; কিন্তু নামে ধোকাকে নয়" আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা হয় যে সম্মেলনে, সে সম্মেলনে তাদের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রের ১ নং ধারায় ' দুনিয়ার মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববন্ধন শক্তিশালী করার ' কথা বলা হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের (আওয়ামী লীগ নেজামে ইসলাম ও অন্যান্য) ২১ দফা কর্মসূচির মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয় : ' কুরআন-সুন্নাহর মৌলিক নীতির খেলাফ কোন আইন প্রণয়ন করা হবে না।' তাই যে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের গড়ে ওঠার সকল পর্যায়ে সব সময়েই ইসলাম প্রধান উপাদান ছিলো। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ নির্মাণের সকল বয়ান বক্তৃতায় ইসলাম পরিপূর্ণ ভাবে বিদ্যমান ছিলো। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছিলেন, 'রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব,এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।' আর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি তার বক্তৃতা শেষে বলেছিলেন, ' একটি সুখী সমৃদ্ধশালী সমাজ গঠনে আল্লাহর সাহায্য ও নির্দেশ কামনা করার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। তাই বলতে গেলে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল 'ইনশাআল্লাহ' বলে আর শেষ হয়েছিল 'আল্লাহর সাহায্য কামনা' করে। এভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী চিহ্ন ও পরিভাষা ব্যবহার হয়েছে।স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সমস্ত কার্যক্রম শুরু হতো ইসলামী ভাবে। ২৬ শে মার্চ কবি আব্দুস সালাম স্বাধীন বাংলা বেতারের দ্বিতীয় অধিবেশনে যেই ঘোষণা দিয়েছিলেন সেই ঘোষণার মূল প্রতিপাদ্য ছিলো ইসলাম। তিনি বলেছিলেন, ' স্বাধীনতাহীন জীবনকে ইসলাম ধিক্কার দিয়েছে।আমরা আমাদের স্বাধীনতা আদায়ের লক্ষে মুক্তিযুদ্ধে আমাদের জান মাল কোরবান করে দিচ্ছি। তিনি তার ভাষণের শেষে বলেছিলেন, ' নাসরুম মিনাল্লাহে ওয়া ফাতহুন কারিব'।আল্লাহর সাহায্য ও জয় নিকটবর্তী। ' এছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালে প্রত্যেক সরকারি ঘোষণা ও নির্দেশনাবলিতে ইসলাম ছিলো মূল উপাদান। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের চিঠিপত্রাদিতে ইসলামের প্রভাব ছিলো পরিপূর্ণরুপে। সে সময়ের আওয়ামী লীগের মুখপত্র 'জয়বাংলা' পত্রিকায় ইসলামী আলোচনা ছিলো উল্লেখযোগ্য। এসকল আলোচনার মূলকথা হলো ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের প্রতিকুলে ছিলোনা।বরং সম্পুর্ণভাবে ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের অনুকূলে ছিলো। ★★ মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের ভূমিকা তারেক মুহাম্মাদ তাওফিকুর রহমান তার গ্রন্থ 'বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলিম সমাজের ভূমিকা ও প্রভাবে' বর্ণনা করেছেন, 'মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশের আলেম সমাজ ছয় ধারায় বিভক্ত ছিলেন। * বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট আলেম * বিভিন্ন সাধারণ রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট আলেম * সরকারি-আধা সরকারি মাদ্রাসাসমূহের শিক্ষক আলেম * কওমী মাদ্রাসাসমূহের শিক্ষক আলেম * বিভিন্ন খানকাহ্, সিলসিলা ও পীর-মুরিদী সংশ্লিষ্ট আলেম * ইমাম, মুয়াজ্জিন ও ব্যক্তি পর্যায়ের আলেম এই ধারাগুলোর মধ্যে ইসলামপন্থী দল জামাতে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম ব্যতিত অন্যান্য আলেম সমাজের বড় এক অংশ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় অবস্থান নেন।এদের মধ্যে অনেকেই রণাঙ্গনের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।এর মধ্যে কিছু উল্লেখ করা যেতে পারে- ★ সেই সময়ের বাংলাদেশের শীর্ষ আলেম হাফেজ্জি হুজুর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রাজনৈতিক ও নৈতিক অবস্থান নেন।তিনি পাকিস্তানিদের জালেম ও মুক্তিযুদ্ধকে 'জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই বলে অভিহিত করেন। ★শায়খুল হাদিস মাওলানা আজিজুল হক মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে বঙ্গবন্ধুর সাথে ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে এক দীর্ঘ বৈঠক করেন।এই বৈঠকের পর মাওলানা আজিজুল হক সাহেবের প্রশংসা করে বঙ্গবন্ধু পত্রিকায় এক বিবৃতিও দেন। ★ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ শে মার্চ গনহত্যা চলার পরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ না হলেও সেই সময়ের বড় মাদ্রাসাগুলো যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ছাত্রদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এছাড়াও আরো অনেক আলেম মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার কাহিনী নিয়ে শাকের হুসাইন শিবলী তার গ্রন্থ 'আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে ' সুন্দর আলোচনা করেছেন। এ মুক্তিযুদ্ধে কেবল বাংলার আলেমরাই অংশগ্রহণ করেননি বরং উপমহাদেশের আলেম সমাজের ভূমিকাও ছিলো উল্লেখযোগ্য।এদের মধ্যে মাওলানা মাহমুদ মাওলানা আসআদ মাদানী ও অনন্যা আলেমগন উল্লেখযোগ্য। এ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে 'বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের ভূমিকা' গ্রন্থে। আর মুক্তিযুদ্ধে সব'চে বড় নাম মাওলানা ভাসানী এর কথা না বললেও চলে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্বমানের আলেমগনও বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেছেন।খোদ পাকিস্তানি আলেম মুফতী তাকী উসমানী দাঃবাঃ তার 'জাহানে দীদাহ' গ্রন্থে পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচারের বর্ণনায় বলেছেন, 'বাংলাদেশের মাটিতে তারা কিয়ামত নামিয়ে ছিলো'। এসকল বক্তব্য দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে ইসলাম ও ইসলামি ব্যক্তিবর্গ সর্বদাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন।তারা কখনোই পাকিস্তানকে নিজেদের মিত্র ভাবেন নি। কিন্তু আমাদের বামপন্থী ও সেক্যুলার লোকেরা শুরু থেকেই ইসলামের সাথে মুক্তিযুদ্ধের এক কৃত্রিম বিরোধ লাগিয়ে রেখেছে।যার ফলাফল আমরা দেখতে পাই বর্তমান আমাদের সমাজে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধীতাকারীদের বুঝাতে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ইসলামী প্রতীক ও চিহ্নের বিকৃতি উপস্থাপন। বিভিন্ন চলচ্চিত্র, কার্টুন, মঞ্চনাটক ইত্যাদিতে দেখা যায় মুক্তিযোদ্ধার বিপক্ষের লোক ও রাজাকারের চরিত্রে থাক পরিপূর্ণ ইসলামী লেবাসে আবৃত লোক। জাফর ইকবাল তার কাহিনী 'আমার বন্ধু রাশেদে', শামছুল হক তার বিখ্যাত মঞ্চনাটক 'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়'-এ,শিশির ভট্টাচার্য তার কার্টুনে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী লোক ও রাজাকার যাদের বানিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের মধ্যেই দেখা যায় ইসলামি লেবাস,চিহ্ন ইত্যাদি। অথচ তারেক মুহাম্মাদ তাওফিকুর রহমান তার গ্রন্থে বলেন, ' আমি যে জেলার লোক; সেই জেলায় রাজাকারের সংখ্যা ছিলো ১১ হাজার, যার মাত্র ৩৫ টি ছেলে ছিলো জামাতে ইসলামের। ......আমার কিছু গ্রামের খবর জানা আছে, যেখানে ৭১-এর ত্রিমুখী বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য গ্রামে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেন যে,দুই দিকেই ছেলেদের ভাগ করে দিয়ে বাঁচার ব্যবস্থা করতে হবে।এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রামের লোক তাদের বেশ কিছু সংখ্যক ছেলেদের দেয় রাজাকারে আর কিছু সংখ্যক দেয় মুক্তিবাহিনীতে।অথচ সে গ্রামের শতকরা ১০০ জন লোকই ছিলো নৌকার ভোটার।' তাহলে যেখানে মূলত সুযোগসন্ধানী সবাই ছিলো সেখানে কেন সকল দোষ চাপলো ইসলামপন্থীদের ঘাড়ে? কেন রাজাকার বললেই আমরা আলেমদের বুঝি? কেন হুজুর মানেই রাজাকার? কেন বামপন্থিরা কটাক্ষ করে মোল্লাদের রাজাকার বলে? কেন ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের বিপক্ষে যুদ্ধ বলে? এসকল উত্তরের দাবীতের রচিত হয়েছে "মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম " লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য নিরপেক্ষ ভাবে আলোচনা করেছেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। সত্য বলার ক্ষেত্রে কারো তোয়াক্কা করেননি।গভীরে গিয়ে তুলে এনেছেন মূল ইতিহাস। পক্ষ নেননি কারো।যা সত্য তাই বর্ণনা করেছেনে নির্দ্বিধায়। মুক্তিযুদ্ধে ইসলাম ও মুসলমানের যে কৃত্রিম বিরোধ তৈরি করেছিলো সেক্যুলাররা, সেগুলোকে উপযুক্ত দলীল-প্রমাণ দিয়ে খন্ডন করেছেন।তুলে ধরেছেন এক অজানা ইতিহাস। তাই এক্ষেত্রে বইটি হল অতুলনীয়। ইতিহাস পাঠের যে বিরক্ত তা এতে হবেনা বিন্দুমাত্র। পরিশেষে, আল কোরানের প্রথম উপদেশ, 'পড় তোমার প্রভুর নামে,যিনি তোমায় সৃষ্টি করেছেন'।
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের দেশে একটা বয়ান হাজির আছে। সেই বয়ানে ইসলাম অনুপস্থিত। আমাদের বিশ্বাস করতে বাধ্য করানো হয়েছে ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে অপ্রাসঙ্গিক ছিল। এভাবেই তৈরি হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য আর হেরিটেজের নির্মান। ঐতিহ্য বা হেরিটেজ আসলে ঐতিহাসিকভাবে নির্মিত এক একটি ডিসকোর্স বা বয়ান। অর্থাৎ ইতিহাসের হাত ধরে গড়ে ওঠে এমন একটা চলতি বয়ানই হচ্ছে ঐতিহ্য বা হেরিটেজ। এই ঐতিহ্যকে আমরা কোন সচেতনতা ছাড়াই বহন করি, তার উৎস বা কার্যকারন না জেনেই। রোলা বার্তে তার মিথোলজিস বইয়ে বলেছেন, আমরা যেই বাস্তবতার মধ্যে বসবাস করি তার জমিনটা তৈরি করে দেয় ইতিহাসের কোন বয়ানের মধ্যে আমরা বাস করি তা। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের লড়াই হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জনের জন্য। পাকিস্তানি শাসকেরা ইসলামের নাম নিয়ে তাঁদের গণহত্যা জায়েজ করতে চেয়েছে। আবার সেইসময়ের কয়েকটা ইসলামপন্থী দল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী অবস্থান নেয়ার জন্য এইদেশের বাম ও স্যেকুলারপন্থীরা মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের প্রশ্নে বুর্জোয়া ফয়সালা হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছে। কিন্তু আসলে মুক্তিযুদ্ধের নির্মানে, মুক্তিযুদ্ধের পরিচালনায় ইসলাম ছিলো প্রাধান্য বিস্তারকারী বয়ান। মুক্তিযুদ্ধকে স্বাধীন বাঙলা বেতার ‘আল্লাহর পথে জেহাদ’ বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। মাঠের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা ছিল ইসলাম, তারা শক্তি নিয়েছে ইসলামের ন্যারেটিভ থেকে। স্বাধীন বাঙলা সরকারের বক্তব্য বিবৃতিতে ইসলাম ডমিন্যান্টভাবে বর্তমান ছিলো। দেওবন্দী ধারার আলেমরা দেশে এবং বিদেশে এমনকি খোদ পাকিস্তানে বসে কেউ মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সহমর্মিতা, আর কেউ আন্তর্জাতিক সংহতি সৃষ্টিতে ভুমিকা নিয়েছেন। দেশের আলেমদের অনেকেই সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। তাঁরা সবাই এই লড়াইকে জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই বলেই অভিহিত করেছেন। পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনকে আমাদের স্যেকুলার বয়ানে দেখা হয়েছে একটি প্রতিক্রিয়াশীল ঘটনা হিসেবে। অথচ পাকিস্তান সৃষ্টি এই অঞ্চলের অন্যতম প্রগতিশীল উল্লম্ফন। সেই পাকিস্তান তার জন্মের দায় শোধ করতে পারেনি জন্যই বাংলাদেশের সৃষ্টি। কিন্তু পাকিস্তান আন্দোলনের মধ্যে থেকে ইসলাম নিজ পরিচয়ের সঙ্গে লেপ্টে কীভাবে এই জনগোষ্ঠির আর এক অন্যতম পরিচয় বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠলো সেটা কখনো খতিয়ে দেখা হয়নি। একটা জনগোষ্ঠি, চলার পথে লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস, তাৎপর্যকে কীভাবে তার ‘পরিচয় বৈশিষ্ট্য’ হিসাবে সাথে লেপ্টে নিয়ে চলে সেটাও আমরা অনুধাবন করার চেষ্টা করিনি। ঠিক কীভাবে এই অঞ্চলের মানুষের মননে ও গঠন-তন্তুতে ‘ইসলাম’ এক বিশেষ অর্থে আর তাৎপর্যে স্থায়ী আসন নিয়ে নেয়; সেই তালাশ কেউ করেনি। কারণ তাহলেই আমাদের প্রগতিশীল মহল হৈ হৈ রৈ রৈ করে উঠবে। সেকারণেই মুক্তিযুদ্ধকে সেই জমিদারি উচ্ছেদের লড়াইয়ের পরিণতি পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় দেখার কোন সচেতন চেষ্টাও হয়নি। ৭১ এর বাংলাদেশ যে সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারতো সেটা করতে না দিয়ে ইসলামের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের একটা কৃত্রিম বিরোধ লাগিয়ে রেখেছে এই স্যেকুলারেরা। এই বই সেই কৃত্রিম বিরোধের ধুলা কালি সরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের এক নতুন বয়ান উপহার দেবে। মুক্তিযুদ্ধের স্যেকুলার বয়ানের কফিনে এই বই হয়ে উঠবে শেষ পেরেক।
Was this review helpful to you?
or
বর্তমানে যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করেন তারা ইসলামকে অনেকক্ষেত্রেই ইসলাম আর মুক্তিযুদ্ধকে দুটি ভিন্নধর্মী বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেন । ইসলামের নামে পাকিস্তান তৈরি হলেও এই পাকিস্তান সরকার এর মুনাফিকি এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ বুঝে গিয়েছিল ততদিনে। কিন্তু ধর্মকে ব্যবহার করেই অধর্ম করতে পাকিস্তান সরকার পিছপা হয়নি। বাঙালীদের দমন পীড়ন শুরু হয়ে গেল সব ক্ষেত্রে এবং অনিবার্য ফলাফল হিসেবে ৭১-এর আগমন। শুরু হলো ইসলামের নাম দিয়ে গণহত্যা। সেই সময়ের কয়েকটি ইসলামপন্থী দল স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার ফলে সেক্যুলারপন্থীরা মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের প্রশ্নে বুর্জোয়া ফায়সালা হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছে। কিন্তু বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধের নির্মাণে ও পরিচালনায় ছিল ইসলামের বয়ান। মুক্তিযুদ্ধকে আল্লাহর পথে জেহাদ বলে হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বাড়িয়েছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। মাঠের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা ছিল ইসলাম, শক্তি নিয়েছে ইসলাম থেকেই। আলেম সমাজের একটা বড় অংশ মুক্তিযোদ্ধা সক্রিয় অংশ নিয়েছে এবং জনমত গড়েছে। শুধু বাংলাদেশের আলেম-ই নয়, পাকিস্তানি অনেক আলেম ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন। বর্তমানের সেক্যুলারপন্থীরা অনেকেই মনে করেন রাজাকার মানেই যারা দাড়ি টুপি পাঞ্জাবিওয়ালা বা ধর্মভিরু মানুষরা তারাই ছিল , যা আমাদের তরুন প্রজন্মকে এমন ম্যাসেসটাই জানানো হচ্ছে । অথচ দেশের অনেক আলেম ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন এই ম্যাসেসটি জানানো হয় না । যার কারণে অনায়াসেই অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছে । লেখক এই বিষয়টা স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন যে ইসলাম কখনো মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতার বিরোধী ছিল না । তবে ধর্মের নামে ধর্মব্যাবসায়ী সে সময় ও ছিল । এছাড়াও যুদ্ধকালীন রাজনীতি নিয়েও চমৎকার ভাষায় চমৎকার কিছু কথা তুলে ধরেছেন লেখক। বিস্তারিত ত্বত্ত ও প্রমান সহ উল্লেখ করেছেন বইটা সকল ইসলাম প্রিয় সচেতন পাঠকদের পড়ে দেখার অনুরোধ রইল।
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালীর সাথে কার হয়েছিল? "পশ্চিম পাকিস্থানের"? নাকি "ইসলামের"? দুঃখজনক হলেও সত্য তথাকথি মুক্তিযুদ্ধের "চেতনা" বলতে এখন যা বোঝানো হয় তা হলো, মুক্তিযুদ্ধ বুঝি হয়েছিল দেশে ইসলামকে ঘায়েল করতে, দেশে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার জন্য। একটু অতীতে ফিরে যাই। যখন পাকিস্তানের সাথে দাঙ্গা তুঙ্গে, তখন পশ্চিম পাকিস্তানের তরফ থেকে একটি প্রচারণা চালানো হয় এই বলে যে, "আওয়ীমীলীগ কোন মুসলিম দল নয়, দেশ থেকে ইসলাম ঘায়েলের জন্য আওয়ামীলীগ চক্রান্ত করছে"। নির্বাচন জয়ের পর ৩রা জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বক্তব্য রাখেন, তিনি বক্তৃতা শুরু করেন সালাম দিয়ে এবং ভাষণ শেষে "নারায়ে তাকবির" স্লোগান দেন যা বর্তমানে জঙ্গিদের স্লোগান বলে পরিচিত হয়ে উঠেছে বা উঠানো হয়েছে। একটি নির্বাচনে ইশতেহার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ৭০' এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ যে জয় পেয়েছিল, এর পেছনে তার ইশতেহারের অনেক ভুমিকা ছিল। সেই ইশতেহারে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল "কোরান ও সুন্নাহর নির্দেশিত ইসলামি নীতির পরিপন্থি কোন আইনই এ দেশে পাস হতে বা চাপিয়ে দেওয়া যেতে পারে না।" আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠা হয় যে সম্মেলনে, সেখানে ততকালীন সাধারণ সম্পাদক মূল দাবী শীর্ষক একটি পুস্তিকা পাঠ করেন, যাতে উল্লেখ ছিল, " রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব আল্লাহর প্রতিভূ হিসেবে জনগণের উপর ন্যস্ত থাকবে। গঠনতন্ত্র হবে ইসলামি, গণতান্ত্রিক ও আকারে রিপাবলিকান।" এরপর আসা যায় ৬৬' এর ৬ দফায়। সেই ৬ দফায় কোথাও ধর্মনিরপেক্ষতার দাবি ছিল না, বরং সেই দাবী গুলো ছিল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দাবী। কিংবা বলা যেতে পারে এরপরের ছাত্র আন্দোলনের ১ দফা দাবির কথা। সেই দাবীর কোথাও ধর্মনিরপেক্ষ দেশ গরার দাবী ছিল না। ১৯৭০ এর নির্বাচন জয়ের পর ড.কামাল হোসেনকে চেয়ারম্যান করে যে সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করা হয়, তাতে পাকিস্তানের মুসলিমদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে কোরান-সুন্নাহর আলোকে গড়ে তোলার কথা স্পষ্ট বলা ছিল। অর্থাৎ, এটুকু থেকে অন্তত এটা বোঝা গেল, ৭০ এর নির্বাচনে মানুষ যে আওয়ামীলীগকে ভোট দিয়েছে বা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছে, তা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ গড়তে নয়, বরং তাদের আশ্বত করা হয়েছে দেশে ইসলাম, অর্থাৎ, কোরান-সুন্নাহর পরিপন্থী কোন আইন কখনোই পাশ করা হবে না এবং মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় কার্যকরী ভুমিকা রাখবে। এবার তাহলে যুদ্ধকালীন সময়ের কথা বল যাক। ২৬ শে মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে যে স্বাধীনতার পাঠ ঘোষনা করা হয়, সেই অধিবেশন কিন্তু কবি আবদুস সালাম কর্তৃক কোরান তেলাওতের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল। যুদ্ধ চলাকালীন প্রবাসী সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের প্রতি ১৪ এপ্রিল প্রথম যে নির্দেশনামা ঘোষণা করা হয়, তাতে বার বার "আল্লাহর থেকে সাহায্য" , "আল্লাহর নির্দেশ পালন", "আল্লাহর উপর বিশ্বাস" এই কথা গুলো উল্লেখ করা হয়। আজ এতদিন পর মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মকে কায়দা করে মুখোমুখি দাড় করানো হয়েছে, অথচ যুদ্ধের সময় এই ধর্মের ঢাল ব্যবহার করেই জনগণ উদবুদ্ধ হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধকে ধর্মের বিপরীতে দাড় করানোর একটি সফল প্রচেষ্টা হচ্ছে, "রাজাকার" বলতেই আজ বোঝানো হয়েছে, দাড়ি-টুপিওয়ালা। অথচ হাতে-গোনা কয়েকজন ইসলাম ধর্মের মানুষের বিরোধীতার কারনে, আজ খোদ ইসলামকেই মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে দাড় করানো হয়েছে। অথচ খোদ ভাষা আন্দোলন খ্যাত কামরুদ্দীন আহমদ লিখেছেন, সেকালে রাজাকার বাহিনীতে ভর্তি হওয়ার মূল কারণ ছিল ৩ টি। ১) তখন দেশে দুর্ভিক্ষ বিরাজ করছিল, তাই পাকিস্তান সরকার ঘোষণা দিয়েছিল, রাজাকারে যোগ দিলেই চাল ও নগদ অর্থ পাওয়া যাবে। অনেকেই এই প্রস্তাব লুফে নেয়। ২) পাক সেনাদের ভয়ে এতদিন যারা পালিয়ে বেড়াচ্ছিল, তারা রাজাকারে যোগ দিয়ে হাফ ছেড়ে বাচে। ৩)এক শ্রেণির সুবিধাবাদী লোক রাজাকারে যোগ দেয়, সম্পদ দখল করতে ও পৈতৃক আমলের শত্রুতার প্রতিশোধ নিতে। বাংলাদেশের একটা রাজনৈতিক অংশকে এখনো মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত শক্তি হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। যদিও সেই দলটা যুদ্ধ শুরুর আগ পর্যন্ত চেষ্টা করেছিল, দুই দেশকে শেষ পর্যন্ত এক করে রাখা যায় কিনা। কেননা সম্মিলিত শক্তি অবশ্যই শক্তিশালী। তবে সেই "চেষ্টা" কে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে আজ আমাদের বাধ্য করা হয়েছে এবং আমরা তা মেনেও নিয়েছি। যে জামাতকে আজ মুক্তিযদ্ধের অন্যতম বিরোধী শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের যুদ্ধকালীন সময়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন জামায়াত নেতা খন্দকার আবুল খায়েরের যশোরের বাসায়। পরবর্তীতে শেখ নাসের লিখেছিলেন, তিনি যে জেলার লোক,"সেখানে রাজাকার ছিল ১১ হাজারের মত, এর মাঝে জামায়াতে ইসলামী ও মুসলিগের লীগের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৫।" অর্থাৎ, রাজনৈতিক কারনে নয়, বরং বেশিরভাগ লোক রাজাকারে যোগ দিয়েছিল ব্যক্তিগত স্বার্থে। তবে তবুও আজ কেন রাজাকার বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে দাড়ি-টুপিওয়ালা? এটা এমনি এমনি হয়নি। আমাদের "গেলানো" হয়েছে। পত্র-পত্রিকা থেকে শুরু করে নাটক-সিনেমা, সব জায়গাতেই আমাদের "গেলানো" হয়েছে রাজাকার মানেই "দাড়ি-টুপিওয়ালা" অর্থাৎ মুসলমান লেবাসধারী। এই ছোবল থেকে বাদ যায়নি শিশুদের জন্য বানানো সিনেমাও। "আমার বন্ধু রাশেদে", সৈয়দ শামসুল হকের "পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়" কিংবা যেকোন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক, সব জায়গাতেই রাজাকার বলতে বোঝানো হয়ে ইসলাম লেবাসধারীকে। অথচ আসল রাজাকার কেমন ছিল, তা নিচের ছবিগুলো দেখলেই বুঝতে পারার কথা। আমাদের দেশের ও উপমহাদেশের আলেমদেরও অনেক ভুমিকা ছিল, সেসব লিখতে গেলে আরেক ইতিহাস, থাক সেসব কথা। আরেকদিন আলোচনা করা যাবে। তবে একটি কথা বলে নেই, এইসব আলেমরাই বাঙালীকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন, পাকিস্তান ইসলামের নামে বা ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে যে কাজ করছে, তা কখনোই ইসলাম অনুমোদিত নয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা আসলে অবশ্যই স্মরণ করতে হবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কথা। মুক্তিযুদ্ধের বৈধতা খোজা হয়েছে ইসলামের মাধ্যমেই। মুক্তিযুদ্ধ যে, ইসলামের দৃষ্টিতে ন্যায়, তা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত প্রচার করা হতো। এই বেতার কেন্দ্র থেকেই "আল্লাহর পথে জেহাদ" নামে একটি কথিকা প্রচারিত হতো। সেখানে বার বার বাঙালী মুসলিমদের জানানো হচ্ছিলো, পাকিস্তান যা করছে তা অন্যায়। এর প্রতিবাদ করা মুসলিমের ঈমানী কর্তব্য। এ কথা বলে বাঙালীদের উদবুদ্ধ করা হছিলো যে, "অন্যায়ের সাথে ন্যায়ের যে যুদ্ধ, সেখানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী অবশ্যই শহিদ। এবং দিনশেষে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছিলো, এইসব যুদ্ধ আসলে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। মানুষ যেন হতাশ না হয়, এবং আল্লাহর উপরে বিশ্বাস রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যায়, সত্যের জইয় নিশ্চিত। দিনশেষে দু'টি লাইন লিখে ইতি টানি। পাকিস্তান সরকার বার বার বলছিলো, "ইসলাম রক্ষার জন্যই তাদের এই অবস্থান।" সুতরাং আওয়ামীলীগ বা বঙ্গবন্ধুকে শক্ত অবস্থান নিয়ে দেশের মানুষকে তখন বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন, "পাকিস্তানের সাথে আমাদের যুদ্ধ মানে ইসলামের সাথে যুদ্ধ নয়। এ যুদ্ধ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের। জুলুমকারীর বিরুদ্ধে মজলুমজের। এবং এর দ্বারা ইসলাম কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হবে না, বরং লাভবান হবে।" বাঙালী এতে আশ্বত হয়েছিল। কেননা ছয় দফা, এগারো দফা, নির্বাচনী ইশতেহার, ভাষণ,প্রস্তাবিত সংবিধান, রাষ্ট্রের গঠনতন্ত্র, বেতার কেন্দ্রের প্রচারণা কোন জায়গাতেই বাঙালী ইসলামবিরিধী নয়ই, বরং ইসলামের অনুকূর কথা বার্তা ও আশ্বাস দেখে আশ্বত হয়েছিল। কিন্তু দিনশেষে বাঙালী কি পেয়েছে? ৭২ এর সংবিধানে কেন ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রের বিষয় ঢোকানো হলো? দিনে দিনে কেন দেশের সংবিধান থেকে ইসলাম ঝরে পড়ছে? দেশে ইসলাম মানতে এত বাধার সম্মুখীন কেন হতে হচ্ছে? "কোরান-সুন্নাহ বিরোধী আইন পাস হবে না", এ কথার কতটুকু মর্যাদা আজ রাখা হয়েছে? দেশে রাজাকার বলতেই আজ কেন ইসলামী লেবারধারীকে বোঝানো হচ্ছে? কেন এত ইসলাম বিদ্বেশ? ইসলাম বিরোধী এত-শত কার্যক্রমে কেন আজ সবাইকে উদবুদ্ধ করা হচ্ছে? কেন ? কেন? কেন? এই বুঝি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? এসবের জন্য কি আদও বাঙালী যুদ্ধ করেছিল?
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের দেশে একটা বয়ান হাজির আছে। সেই বয়ানে ইসলাম অনুপস্থিত। আমাদের বিশ্বাস করতে বাধ্য করানো হয়েছে ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে অপ্রাসঙ্গিক ছিল। এভাবেই তৈরি হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য আর হেরিটেজের নির্মান। ঐতিহ্য বা হেরিটেজ আসলে ঐতিহাসিকভাবে নির্মিত এক একটি ডিসকোর্স বা বয়ান। অর্থাৎ ইতিহাসের হাত ধরে গড়ে ওঠে এমন একটা চলতি বয়ানই হচ্ছে ঐতিহ্য বা হেরিটেজ। এই ঐতিহ্যকে আমরা কোন সচেতনতা ছাড়াই বহন করি, তার উৎস বা কার্যকারন না জেনেই। রোলা বার্তে তার মিথোলজিস বইয়ে বলেছেন, আমরা যেই বাস্তবতার মধ্যে বসবাস করি তার জমিনটা তৈরি করে দেয় ইতিহাসের কোন বয়ানের মধ্যে আমরা বাস করি তা। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের লড়াই হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জনের জন্য। পাকিস্তানি শাসকেরা ইসলামের নাম নিয়ে তাঁদের গণহত্যা জায়েজ করতে চেয়েছে। আবার সেইসময়ের কয়েকটা ইসলামপন্থী দল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী অবস্থান নেয়ার জন্য এইদেশের বাম ও স্যেকুলারপন্থীরা মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের প্রশ্নে বুর্জোয়া ফয়সালা হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছে। কিন্তু আসলে মুক্তিযুদ্ধের নির্মানে, মুক্তিযুদ্ধের পরিচালনায় ইসলাম ছিলো প্রাধান্য বিস্তারকারী বয়ান। মুক্তিযুদ্ধকে স্বাধীন বাঙলা বেতার ‘আল্লাহর পথে জেহাদ’ বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। মাঠের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা ছিল ইসলাম, তারা শক্তি নিয়েছে ইসলামের ন্যারেটিভ থেকে। স্বাধীন বাঙলা সরকারের বক্তব্য বিবৃতিতে ইসলাম ডমিন্যান্টভাবে বর্তমান ছিলো। দেওবন্দী ধারার আলেমরা দেশে এবং বিদেশে এমনকি খোদ পাকিস্তানে বসে কেউ মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সহমর্মিতা, আর কেউ আন্তর্জাতিক সংহতি সৃষ্টিতে ভুমিকা নিয়েছেন। দেশের আলেমদের অনেকেই সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। তাঁরা সবাই এই লড়াইকে জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই বলেই অভিহিত করেছেন। পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনকে আমাদের স্যেকুলার বয়ানে দেখা হয়েছে একটি প্রতিক্রিয়াশীল ঘটনা হিসেবে। অথচ পাকিস্তান সৃষ্টি এই অঞ্চলের অন্যতম প্রগতিশীল উল্লম্ফন। সেই পাকিস্তান তার জন্মের দায় শোধ করতে পারেনি জন্যই বাংলাদেশের সৃষ্টি। কিন্তু পাকিস্তান আন্দোলনের মধ্যে থেকে ইসলাম নিজ পরিচয়ের সঙ্গে লেপ্টে কীভাবে এই জনগোষ্ঠির আর এক অন্যতম পরিচয় বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠলো সেটা কখনো খতিয়ে দেখা হয়নি। একটা জনগোষ্ঠি, চলার পথে লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস, তাৎপর্যকে কীভাবে তার ‘পরিচয় বৈশিষ্ট্য’ হিসাবে সাথে লেপ্টে নিয়ে চলে সেটাও আমরা অনুধাবন করার চেষ্টা করিনি। ঠিক কীভাবে এই অঞ্চলের মানুষের মননে ও গঠন-তন্তুতে ‘ইসলাম’ এক বিশেষ অর্থে আর তাৎপর্যে স্থায়ী আসন নিয়ে নেয়; সেই তালাশ কেউ করেনি। কারণ তাহলেই আমাদের প্রগতিশীল মহল হৈ হৈ রৈ রৈ করে উঠবে। সেকারণেই মুক্তিযুদ্ধকে সেই জমিদারি উচ্ছেদের লড়াইয়ের পরিণতি পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় দেখার কোন সচেতন চেষ্টাও হয়নি। ৭১ এর বাংলাদেশ যে সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারতো সেটা করতে না দিয়ে ইসলামের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের একটা কৃত্রিম বিরোধ লাগিয়ে রেখেছে এই স্যেকুলারেরা। এই বই সেই কৃত্রিম বিরোধের ধুলা কালি সরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের এক নতুন বয়ান উপহার দেবে। মুক্তিযুদ্ধের স্যেকুলার বয়ানের কফিনে এই বই হয়ে উঠবে শেষ পেরেক। কোন কিছুই রেফারেন্স ছাড়া দাবী করা হয়নি এই বইয়ে। বইটি আপনারা হাতে পাবেন সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহেই। আরেক ইন্টারেস্টিং জার্নিতে আপনাকে স্বাগতম।
Was this review helpful to you?
or
এটা বললে ভুল হবে না যে, কুরআনের বিভিন্ন আয়াত যোদ্ধাদের স্পৃহা, মনোবল যথেষ্ট বাড়িয়েছিল। কারণ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব বোঝাতে কুরআনের বিভিন্ন আয়াত নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হতো। এছাড়াও সরকারী ঘোষণাবলি, সভা সমাবেশে নেতাদের বক্তৃতায় ছিলো ইসলামের বাণী সম্বলিত জাগানিয়া আহ্বান। মোটকথা হলো, মুক্তিযুদ্ধের রন্ধ্রে রন্ধ্রেই ইসলাম ছিল সুমহান এবং প্রেরণার অন্যতম উৎস। ছিল তার প্রতিটি অধ্যায়ে, প্রতিটি পদক্ষেপে। তাহলে আমরা যে ইতিহাসটি জানি, মুক্তিযুদ্ধের যে চিত্রটি আমাদের স্মৃতিপটে ভেসে উঠে ওটার রচয়িতা কারা? রাজাকার মানেই দাড়ি, টুপি, পাঞ্জাবী- মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার মানেই তো এমন ছিল না! এসব ধ্যান ধারণা আমাদের দেখানো হচ্ছে তাহলে কিসের ভিত্তিতে? এটা কি তাহলে উদ্দেশ্যমূলক? আমাদেরকে কেন তাহলে মিথ্যা বয়ান শেখানো হচ্ছে? সত্যটা আড়ালে রাখা হয়েছে কেন? রহস্য থেকে যায়! এ বইটির প্রতিটি পাতাই এমন অসংখ্য তথ্য আমাকে আপনাকে শিহরিত করে তুলবে। যা আমাদের কল্পনার বাহিরে! এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি যেমন নতুন করে ভাবতে শেখাবে, ঠিক তেমনি মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ভালোবাসাকে আরো বহুগুণে বৃদ্ধি করবে।
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম! এখানে এটা আমাদের ভাবনায় একটা যতি চিহ্ন টেনে দেয়। আমাদের থামতে হয়, কারণ এটাও আন্দাজ করে নেয়া যাচ্ছে যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নামক আমাদের চেনা-জানা বয়ানের পুনরাবৃত্তি এই বইয়ের উদ্দেশ্য হবার কথা নয়। ইসলামকে মুক্তিযুদ্ধের সাথে যেভাবে বিরােধাত্মক বা বিপ্রতীপ সম্পর্কের ছাঁচে ঝালাই করে আস্ত একটা জাদুঘর প্রকল্প খাড়া করা হয়েছে, এই বইটি তাকে আরেক প্রস্থ দীর্ঘতর করার কোনাে প্রয়াস নয়। বরং, এটা খােদ সেই পাটাতন খুলে দেখানাের চেষ্টা, যার উপর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে ধর্মরিপেক্ষতার আড়ালে ইসলাম বিরােধী একটি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বয়ান প্রতিনিয়ত পুনরুৎপাদন করা হয়। এই যে যতি ও বিরতি, থেমে নতুন করে দেখা এবং সেখান থেকে প্রস্থান-রেখা ও সূচনা-বিন্দু নির্ণয় করা, জ্ঞানতাত্ত্বিক পরিমণ্ডলে এর একটা নাম আছে। পদ্ধতিগত দিক বিবেচনায় যাকে ছেদটানা বলে আখ্যায়িত করা হয়। মনে হয়, মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম বইটি বাংলাদেশে এই ঘটনা ঘটাবে। তাহলে, শিরােনাম থেকে যে প্রশ্নটা জেগেছে, তার উত্তর পেতে নিশ্চিতভাবেই প্রচলিত ব্যাখ্যার বাইরে গিয়ে একটা নতুন বয়ান অনুসন্ধানে নামতে হবে। যদি তাই হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের সামনে দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট , প্রেরণা, আকাক্ষার ভাষা, যুদ্ধের ন্যায্যতা নির্মাণ ও পরিচালনায় উপাদান ও আশ্রয় হিসেবে ইসলাম কোথায়, কতটুকু উপস্থিত ছিলাে? তার ব্যাপ্তি ও গভীরতা কতটুকু? ব্যাপকতার নিরিখেই নয়, পাশাপশি ইসলাম এই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে কতটা নির্ধারক মকা রেখেছে, তা স্বাধীনতা-সংগ্রামের সূচনা থেকে যুদ্ধকালীন সময়ের দলিল, নাতক প্রচার-পুস্তিকা ও ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সুসংহতভাবে দেখানাে সম্ভব কি না? লেখক তা বেশ জোরালােভাবেই দেখাতে পেরেছেন বলা যায়। আর তা এমন একটা ক্ষেত্র উন্মােচন, যা দেশের জাতীয়তাবাদী সেকুলার বয়ানের ঐতিহাসিক অসারতার বাইরে এসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে পুনরায় পাঠ করার নতুন প্যারাডাইম তৈরি করতে সক্ষম।
Was this review helpful to you?
or
মুক্তিযুদ্ধের চেনা জানা গল্পের বিপরীত দিকে এই বইয়ের অবস্থান। কি সেই চেনা-জানা গল্প? অমুক্তিযোদ্ধা আর সুবিধাবাদী সো-কল্ড বুদ্ধিজীবিদের বানানো স্যেকুলার মুক্তিযুদ্ধের গল্পই আজ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। সত্য এখন মিথ্যা আর মিথ্যা এখন সত্য। পিনাকি ভট্টাচার্য কিভাবে এই সাহসী কাজ করলেন সেটাই এক রহস্য। যারা মুক্তিযুদ্ধের রঙ্গ-চঙ্গা বানানো কাহিনীর চেতনায় বুদ হয়ে আছে তাদের জন্য এ এক বড় আঘাত। কিছু বিষয়ের উপস্থাপনা আবেগি। মোটের উপর গৌতম দাসের সারাংশ পুরো মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটকে আর আওয়ামী লীগের ভূমিকাকে বেশ ভালোভাবেই তুলে এনেছে। এখনকার আওয়ামী লীগের সাথে তখনকার আওয়ামী লীগকে মেলাতে বেশ কষ্টই হবে।
Was this review helpful to you?
or
অীসাধারণ একটি বই। পিনাকী ভট্টাচার্য লেকার গভীরতা কতটুকু তা এই বই না পড়লে কিছুতেই বোঝা যাবে না। যারা ইসলাম কে মুক্তিযুদ্ধ থেকে আলাদা করতে চোয়, তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিযে দিয়েছে দুটি আলাদা কোনো বিষয় নয়। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে সেকুলারদের নানা অপবাদের এক অনুপম জবাব এই বইটি। ধন্যবাদ।
Was this review helpful to you?
or
ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দেওয়া বই। A must read bool to open hearted people.
Was this review helpful to you?
or
পিনাকী ভট্টাচার্যের সাথে ফেসবুকে পরিচয়। সেখান থেকেই এ বইয়ের সন্ধান জানা।তিনি এগোনস্টিক- সংশয়বাদী। তিনি ইসলামের কেউ নন। কিন্তু তিনি যে বয়ান দিচ্ছেন সেখানে কথা বলছেন ইসলাম নিয়ে। চেতনাব্যবসায়ীরা দাঁড়িওয়ালা সবাইকে রাজাকারের কাতারে ফেলে দেয়। ছবি, নাটক, সাহিত্য সবক্ষেত্রেই একই অবস্থা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে তাদেরই অবদান বেশি। আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণে ইসলামের তীব্র সঞ্জীবনী হাওয়ার সন্ধান দেখিয়েছেন।
Was this review helpful to you?
or
একটা পক্ষ সবসময়ই আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ কে ইসলামের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে সচেষ্ট হয়েছে। লেখক এর এই বইটি ওইসব ব্যাক্তিদের মুখে চপেটাঘাত। ইসলাম কখনই মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল না। অল্প কিছু সংখ্যক মানুষের জন্য ইসলামকে মুক্তিযুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া নেহায়েত বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। সম্প্রতি প্রকাশিত রাজাকারের লিস্ট তার এই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
Was this review helpful to you?
or
বুক রিভিউ : মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নাম: মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম লেখক : পিনাকী ভট্টাচার্য। প্রকাশক : গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স রেটিং : ৫/৫ ধরণ : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা গাত্রমূল্য : ২৫০ টাকা। রকমারি মূল্য : ১৮৮ টাকা। আমাদের দেশের কিছু মানুষের আচরণ আর কথাবার্তা শুনলে মনে হতে পারে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিতই হয়েছিল এই দেশ থেকে ইসলামের নাম চিহ্ন মুছে দেবার জন্য। তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে ইসলামকে ইরেজার ঘষে মুছে দিতে চায়, যেন মুক্তিযুদ্ধে ইসলামের কোন ভূমিকাই ছিল না। তারা এদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করছে, পাঠ্য করছে ইসলামকে দূরে সরিয়ে রেখে। যেন ইসলাম আর মুক্তিযুদ্ধ, দুটি দুই মেরুর বিষয়, যেন একে অপরে দা-কুমড়া বা সাপে নেউলে সম্পর্ক। যেন আগুন ও কাঠ। তারা তাদের সাহিত্যে, বিনোদনে কিংবা আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে ইসলামকে দাড় করাতে চায় আসামী হিসেবে। তারা প্রমাণ করতে চায় , মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানেই ইসলাম বিরোধীতা। সত্যিই কি তাই? আসলেই কি মুক্তিযুদ্ধে ইসলামের কোন ভূমিকা ছিল না? নাকি এটি সুদূর প্রসারী কোন ষড়যন্ত্রের অংশ? মহান মুক্তিযুদ্ধে কী ছিল ইসলামের ভূমিকা? কোত্থেকে এল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ইসলামের বিরোধীতা? এসবেরই শেকড় সন্ধানে পিনাকী ভট্টাচার্য লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম। পাতায় পাতায় তথ্য-প্রমাণ ও সচিত্র উপস্থাপনা বইটিকে করে তুলেছে অনবদ্য এক ইতিহাস-নদী। স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষেতা আর অনুসন্ধিৎসার সুস্পষ্ট সাক্ষর রয়েছে বইটি জুড়ে। বইটি পড়তে পড়তে একবারও মনে হয়নি লেখক কোন গোঁজামিল দিয়েছেন কোথাও, কিংবা কোন মিথ্যে, অসার গল্পে অথবা জোর খাটিয়ে কিছু প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। অনেক প্রশ্ন আর মনের ভেতর খচখচ করতে থাকা অনেক বিভ্রান্তির ধুলো পরিস্কার হয়ে উত্তর গুলো আয়নার মতো ঝকঝকে হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামের মধ্যে যে কৃত্রিম বিরোধ লেগে আছে সেটা কোত্থেকে এবং কারা লাগিয়েছে, কেন লাগিয়েছে এসব হয়ে গেছে একেবারে পরিস্কার। বইটি সম্পর্কে লেখকের মূল্যায়ণ তাই যথাযথই। “ ৭১’ এর বাংলাদেশ যে সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারতো, সেটা করতে না দিয়ে ইসলামের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের একটা কৃত্রিম বিরোধ লাগিয়ে রেখেছে সেক্যুলার মহল। ‘মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম’ সেই কৃত্রিম বিরোধের ধুলা কালি সরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের এক নতুন বয়ান উপহার দিবে। মুক্তিযুদ্ধের সেক্যুলার কফিনে এই বই হয়ে উঠবে শেষ পেরেক।” অসাধারণ একটি বই। রকমারী.কম এও পাওয়া যাচ্ছে। বইটি পড়তে সবারই ভাল লাগবে আশা করি।
Was this review helpful to you?
or
বইটির লেখক পিনাকী ভট্টচার্য। সাম্প্রতিক সময়ে ইসলাম বিষয়ে লেখালেখি ও গবেষণায় সাড়া জাগিয়েছেন। করছেন গবেষণা। মুক্তিযুদ্ধের প্রচলিত ইতিহাসগুলোতে ইসলামকে এড়িয়ে চলার একটা গতি লক্ষ করা যায়। সেখানে ‘মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম’ মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ইসলামিক বয়ানগুলো হাজির করেছে। ঐতিহ্য বা হেরিটেজ আসলে ঐতিহাসিকভাবে নির্মিত এক একটি ডিসকোর্স বা বয়ান। অর্থাৎ ইতিহাসের হাত ধরে গড়ে ওঠে এমন একটা চলতি বয়ানই হচ্ছে ঐতিহ্য বা হেরিটেজ। এই ঐতিহ্যকে আমরা কোন সচেতনতা ছাড়াই বহন করি, তার উৎস বা কার্যকারন না জেনেই। রোলা বার্তে তার মিথোলজিস বইয়ে বলেছেন, আমরা যেই বাস্তবতার মধ্যে বসবাস করি তার জমিনটা তৈরি করে দেয় ইতিহাসের কোন বয়ানের মধ্যে আমরা বাস করি তা। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের লড়াই হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জনের জন্য। পাকিস্তানি শাসকেরা ইসলামের নাম নিয়ে তাঁদের গণহত্যা জায়েজ করতে চেয়েছে। আবার সেইসময়ের কয়েকটা ইসলামপন্থী দল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী অবস্থান নেয়ার জন্য এইদেশের বাম ও স্যেকুলারপন্থীরা মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের প্রশ্নে বুর্জোয়া ফয়সালা হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছে। কিন্তু আসলে মুক্তিযুদ্ধের নির্মানে, মুক্তিযুদ্ধের পরিচালনায় ইসলাম ছিলো প্রাধান্য বিস্তারকারী বয়ান। মুক্তিযুদ্ধকে স্বাধীন বাঙলা বেতার ‘আল্লাহর পথে জেহাদ’ বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। মাঠের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা ছিল ইসলাম, তারা শক্তি নিয়েছে ইসলামের ন্যারেটিভ থেকে। স্বাধীন বাঙলা সরকারের বক্তব্য বিবৃতিতে ইসলাম ডমিন্যান্টভাবে বর্তমান ছিলো। দেওবন্দী ধারার আলেমরা দেশে এবং বিদেশে এমনকি খোদ পাকিস্তানে বসে কেউ মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সহমর্মিতা, আর কেউ আন্তর্জাতিক সংহতি সৃষ্টিতে ভুমিকা নিয়েছেন। দেশের আলেমদের অনেকেই সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। তাঁরা সবাই এই লড়াইকে জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই বলেই অভিহিত করেছেন।
Was this review helpful to you?
or
“মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম ” লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য একজন সনাতন ধর্মের লোক ইসলাম সম্পর্কে লিখেছেন । তাই কৌতুহল নিয়ে বইটি অর্ডার করলাম আর তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসলাম মানুষের অন্তরে কোন পজিশনে ছিল ? সেটা জানার ছিল । জানার ছিল, আসলেই কি তখনকার আলেম ওলামা সহ ধার্মিকরা রাজাকার ছিল নাকি তারাও যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিল ? বইটি পড়ে আমার সব প্রশ্নের সমাধান পেলাম । বইটি তথ্যবহুল । পিনাকী ভট্টাচার্যের প্রতিটি দাবির রেফারেন্স রয়েছে । আশা করি , বইটি পড়লে আমাদের অনেক ভুল ভাঙ্গবে। আমাদের চিন্তায় পরিবর্তন আসবে ।
Was this review helpful to you?
or
বিশ্বের সবচেয়ে মানসম্মত অভিধান হিসেবে ধরা হয় অক্সফোর্ড ডিকশনারিকে। প্রতি বছর এই অভিধানের নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। প্রতি সংস্করণে বিগত বছরের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দ জরিপ করে উল্লেখ করা হয়। আমার যতদূর মনে পড়ে ২০১৪ সালে অক্সফোর্ড ডিকশনারি মতে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দ ছিলো 'সেলফি'। বাংলাদেশে পরিস্থিতি চিন্তা করলে আমার ধারনা গত দশ বছরে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দ হতে পারে 'চেতনা'। কথায় কথায় এই চেতনা আমাদের নাড়া দেয়। চেতনা শব্দটা পুরাতন হলেও 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' নামক শব্দদ্বয় থেকে চেতনা শব্দের এই জনপ্রিয়তা। বর্তমান দেশের পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিশব্দ হলো ইসলামী চেতনা। কিন্তু ৮৫% মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশে ইসলামী চেতনা কি আসলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিশব্দ? এটাই ব্যাখ্যা করা চেষ্টা করেছেন লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের দেশে একটা বয়ান আছে। সেই বয়ানে ইসলাম অনুপস্থিত। আমাদের বিশ্বাস করানো হয়েছে ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে অপ্রাসঙ্গিক ছিলো। এভাবেই তৈরি হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য নির্মাণ। ইসলাম শুধু যে অনুপস্থিত তা নয়; কখনো আসামী, কখনো পরাজিত। কিন্তু গল্পটা আসলে উল্টা। বলা যায় ১৮০ ডিগ্রী বিপরীত। আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধে ইসলামের অবদান নিয়ে কখনো কোনো গবেষনা হয়নি। প্রচলিত ধারনার বশবর্তী হয়ে কেউ হয়ত এর প্রয়োজন বোধ করেন নাই। মুক্তিযুদ্ধে ইসলামের ভূমিকা কি ছিলো, কীভাবে ইসলামের বয়ান মুক্তিযুদ্ধকে শক্তিশালী করেছে, অবদান রেখে সাহায্য করেছে তা কখনো বিশ্লেষণ করে দেখা হয়নি। তাহলে, শিরোনাম থেকে যে প্রশ্নটা জাগে, তার উত্তর পেতে নিশ্চিতভাবেই প্রচলিত ব্যাখ্যার বাইরে গিয়ে একটা নতুন বয়ান অনুসন্ধানে নামতে হবে। যদি তাই হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের সামনে প্রশ্ন হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, প্রেরণা, আকাঙ্ক্ষার ভাষা, যুদ্ধের ন্যায্যতা নির্মাণ ও পরিচালনায় উপাদান ও আশ্রয় হিসেবে ইসলাম কোথায়, কতটুকু উপস্থিত ছিলো? তার ব্যাপ্তি ও গভীরতা কতটুকু? শুধু ব্যাপকতার নিরিখেই নয়, পাশাপাশি ইসলাম এই বয়ান সংগঠনে কতটা নির্ধারক ভূমিকা রেখেছে, তা স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা থেকে যুদ্ধকালীন সময়ের দলিল, রাজনৈতিক প্রচার-পুস্তিকা ও ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সুসংহতভাবে দেখানো সম্ভব কি না? লেখক তা বেশ জোরালোভাবেই দেখাতে পেরেছেন বলা যায়। আর তা এমন ক্ষেত্র উন্মোচন, যা দেশের জাতীয়তাবাদী সেক্যুলার বয়ানের ঐতিহাসিক অসারতার বাইরে এসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে পুনরায় পাঠ করার নতুন প্যারাডাইম তৈরি করতে সক্ষম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে যেসব লেখাপত্র আছে, তা বোধগম্য কারনেই বাংলাদেশের ইতিহাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানকে কখনোই আলোচনাে অন্তর্ভুক্ত করে না। সেই দুটি উপাদান হলো- ১/ পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলন নিজেদের দাবি-দাওয়া জনগোষ্ঠির কাছে যে ভাষায় হাজির করে তাকে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিন্দুতে উপণীত করেছে সেই সমস্ত ভাষ্য, কর্মসূচি, প্রচার-পুস্তিকা। ২/ মুক্তাযুদ্ধের সময়ে যে বয়ান ও ভাষ্যকে আশ্রয় করে যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। পিনাকী ভট্টাচার্য এই দুটি উপাদানকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছেন। বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইসলামী চেতনা যে একে অপরের পরিপূরক সেটা নতুন ভাবে পাঠক সমাজের কাছে তুলে ধরেছেন লেখক। বইয়ের শেষে জনপ্রিয় কলামিস্ট গৌতম দাসের "মুক্তাযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম: প্রসঙ্গ কথা" নামক পরিশিষ্ট এই বইয়ের শ্রেষ্ঠ অলংকার। এই অংশে তিনি ৪৭ এর দেশ বিভাগ, দেশ বিভাগের পূর্ব ও পরবর্তী মুসলিম লীগ, ৭১ এর আগে পাকিস্তান সম্পর্কে বাংলাদেশিদের ধারনা প্রভৃতি বিষয়ের পোস্ট মর্টেম করেছেন। নিখুত বিশ্লেষনে এই উপমহাদেশের রাজনীতি নিয়ে আপনাকে নতুন ভাবে ভাবতে বাধ্য করবে। নতুন প্রকাশনী হিসেবে গার্ডিয়ান প্রকাশনী অল্প দিনেই অসাধারন কিছু বই দিয়েছে পাঠক সমাজকে। প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদের পরে এই বইটা আশা করা যায় পাঠক সমাজে নাড়া দিবে। সেক্যুলার পন্থিদের মাথাব্যথার কারন হবে সেটা বলা বাহুল্য। বইয়ের প্রচ্ছদ, পেজ, বাইন্ডিং অসাধারন। সবচেয়ে আনন্দের বিষয়, অনেকদিন পরে একটা বই এক বসায় শেষ করলাম।
Was this review helpful to you?
or
#মুক্তিযুদ্ধের_বয়ানে_ইসলাম_#_প্রসঙ্গে--- সোশ্যাল মিডিয়ায় 'মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম' বইটি নিয়ে বেশ হইচই দেখছি। বইটির (এরকম) নাম শুনে আমার ভালো লাগেনি, বিরক্ত লেগেছে। কিন্তু বইটির লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য এবং প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্সের নাম দেখে একটু নড়ে চড়ে বসি। আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশে ইসলাম একটি অতি সস্তা প্রোডাক্ট। (মন্তব্যের এই সরলীকরণের জন্য আমি পাঠকদের নিকট বিনীত ভাবে ক্ষমা চাই)। আবেগপ্রবণ বাঙ্গালী ইসলামপন্থী জনতার দৃষ্টি কাড়তে ইসলামবিদ্বেষী কিছু উত্তেজক কথা কিংবা ইসলামের পক্ষে সুমধুর প্রশংসা বাক্য ছড়িয়ে দিলেই, সেটা রাতারাতি হিট- এমন একটা বিশ্বাস ও ধারণা সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এই বিশ্বাস ও ধারণার প্রাসঙ্গিকতা নিশ্চয় আপনারাও প্রতিনিয়ত দেখছেন, বুঝছেন। তাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইসলামকে আলোচনার সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আনার পেছনে ইসলামপন্থীদের অবদান বেশী না, ইসলাম-বিদ্বেষীদের অবদান বেশী, সেটা নিয়ে আমি মোটামুটি কনফিউজড! বাংলাদেশের তথাকথিত সেক্যুলারদের আদর্শিক ও অবস্থানগত দেউলিয়াপনা কে একাডেমিক্যালি চ্যালেঞ্জ করে পিনাকী ভট্টাচার্যের লেখাগুলো বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এতদিন ইসলামের কর্মপন্থা নিয়ে সেক্যুলারকূল প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, চ্যালেঞ্জ করেছে। এখন দেখি, তাদেরই গোত্রচ্যুত একজন উল্টো সেক্যুলার পলিসি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা শুরু করেছে। আমি এই 'প্রশ্ন লড়াই' বেশ উপভোগ করি। পিনাকী ভট্টাচার্য সম্পর্কে অনেকে আমার কাছে জানতে চায়, কী তাঁর আদর্শ-উদ্দেশ্শ? প্রথম প্রথম এর জবাবে আমি মুখস্থ বলে দিতাম- ভাই আমি অত জানিনা, কমিউনিস্টদের হতাশ অংশ ব্যবহারিক রাজনীতিতে এসে ক্ষমতার চর্চাকেন্দ্রীক দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। পিনাকী ভট্টাচার্য তাদেরই একটা অংশের নেতা ও এক্টিভিস্ট হবে হয়তো। তিনি সম্ভবতঃ তাঁর রণকৌশল হিসেবে ইসলামপন্থীদের কাছে টানার চিন্তা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন.......! এমনিতেই পড়ালেখা না করার বাজে স্বভাব আমাকে পেয়ে বসেছে এবং পারতপক্ষে গুরুগম্ভীর ডিস্কাশন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু পিনাকী ভট্টাচার্য কে নিয়ে আমার হেয়ালীপূর্ণ ঢিল নিক্ষেপে আমি খুব বেকায়দায় পড়ি। আমার যারা স্বজন, আমি যাদের খুব মান্য করি এবং ইন্টেলেকচুয়াল হিসেবে পছন্দ করি, তারা জোর করে আমাকে পিনাকী ভট্টাচার্যের লেখা পড়তে বাধ্য করেন। বিভিন্ন বিষয়ে তার লেখা পড়তে শুরু করি ফেসবুকে....। ভদ্রলোক ডাক্তার কিন্তু রাজনৈতিক বিষয়ে তার সাহসী লেখনী সত্যিই আমাকে চমৎকৃত করে। বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশী অভাব সাহসের, মাথা উঁচু করে সত্য কথা বলার। স্রোতের বিপরীতে চলা মানুষ সবসময় শোষিত, লাঞ্চিত, নীপিড়ীতের ভালোবাসায় সিক্ত হয়। সে বিচারে আমি মজা করে পিনাকী ভট্টাচার্য কে বলে থাকি "হাই ভোল্টেজ সেলিব্রেটি"! কিছুদিন আগে তার 'মার্কিন ডকুমেন্টসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ'১৯৭১- বইটি প্রকাশ পায়। বইটি পড়ে একজন অধ্যাপক আমাকে ফোন করে জানতে চান- আচ্ছা পিনাকী ভট্টাচার্য কি আমেরিকান এজেন্ট? আমি কোন দ্বিধা না করেই উত্তর দিলাম- 'হতে পারে'। তিনি গলা চড়িয়ে অবাক হয়ে আবার জানতে চাইলেন, 'কি বললে'? এবার আমি বললাম- 'না ও হতে পারে'। বাংলাদেশে আমরা খুব সহজেই একে অপরকে এজেন্ট বানাই, গোয়েন্দা সংস্থা গুলো মাঝখানে ফাও বাহবা পায়....। সে যাই হোক- বলছিলাম, 'মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম' বইয়ের কথা। কিছুদিন আগে লন্ডন থেকে লেখক ও গবেষক এডিএম ইউনুস আমাকে বইটা সংগ্রহ করার অনুরোধ জানিয়ে বার্তা পাঠান। তিনি আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ। আমি তাঁকে বললাম, বইটি তো এখনো বাজারে আসেনি। তিনি বিস্মিত হলেন, 'না বের হতেই এত আলোচনা'! তাঁর পূনঃতাগিদে অনেক খোঁজাখুঁজি করে বইটির খসড়া পান্ডুলিপি সংগ্রহ করি। বিশ্বাস ও জীবনবোধের সহজাত দর্শন হিসেবে 'ইসলাম' বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের অস্তিত্ব স্বরুপ। হাজার বছরের পথ পরিক্রমায় আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বিবর্তন পেরিয়ে ইসলাম, মুসলমান এবং বাংলাদেশ আজ একাত্মা হয়ে গেছে। আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক অধিকারের গৌরবময় অধ্যায়। আন্দোলন, সংগ্রাম ও জীবনপণ করা নয়মাস যুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন ভূখন্ডের অধিকারী হওয়া আমাদের অবিস্মরণীয় অর্জন। 'ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ'- এ দুটোর আবেগ নিঃসৃত শিহরণ একই সঙ্গে আমাদের চেতনায় প্রতিভাত। কেবলমাত্র রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে এই দুটির সাথে যারা তুলনা বা বিরোধ তৈরী করতে চান- তারা প্রাণীজ সত্বায় হয়তো মানুষ কিন্তু বিবেক ও মানবিক সত্বায় নয় বলে আমি মনে করি। কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করে, পৃথিবীতে থাকবেন না কি বাংলাদেশে? দুটোর একটি বেছে নিন- তখন আমার জবাব কী? আমি বলবো, পৃথিবীর বুকের মধ্যে যেখানে আমার সুজলা সুফলা বাংলাদেশ সেখানটাতে আমি থাকবো। পৃথিবীর মধ্যে না থাকলে বাংলাদেশে থাকি কী করে? তেমনি 'ইসলাম' হল আমাদের পৃথিবী আর 'মুক্তিযুদ্ধ আমার বাংলাদেশ....। আমি যতটুকু পড়েছি তাতে 'মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম' বইয়ের সারকথা হলো, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হওয়া ও বিজয় অর্জনের সাথে কোনো ধর্ম-বিশ্বাস; বিশেষতঃ ইসলামের কোনো ক্লেশ নেই। উপরন্তু লেখক এই বইতে এমন অনেক ঐতিহাসিক তথ্য হাজির করেছেন তাতে আমার উপলব্ধি হয়েছে যে, পাকিস্তানী শোষক শ্রেণী তাদের অপকর্ম, দূঃশাসন, গণহত্যা ঢাকার জন্য ইসলামের খোলস বা আবরণকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলো। কিন্তু ভাটি বাংলার ধর্মপ্রাণ মুসলমান সঠিক ইসলামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তা নস্যাৎ করে দিয়েছে। তাহলে এখন বয়ানটা কি দাঁড়ালো? বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কী ইসলাম বনাম সেক্যুলারিজমের দ্বন্দ্ব! না ইসলামের লেবাসধারী স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রকৃত ইসলামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই? আবহমানকাল ধরে বাংলার মানুষের মনে অন্যায় শোষনের বিরুদ্ধে যে স্বতস্ফুর্ত চেতনা-আসলে এর উৎস কী? আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, এর প্রধান উৎস হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষের ইসলামী জীবনবোধ ও বিশ্বাস। মানুষ আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি, অন্যায় ও শয়তানী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও লড়াই করা তার ঈমানী দায়িত্ব। এই দীক্ষার সামনে ২০০ বছরের বৃটিশ শাসন বারবার চ্যালেঞ্জের সম্মুক্ষীণ হয়েছে। পাকিস্তানী শোষকদের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন সংগ্রাম ও মহান মুক্তির মহান যুদ্ধ, কাগজে কলমে এবং বাস্তবতায় দেখলে দেখা যাবে সেটা পুরোটাই প্রকৃতার্থে ইসলামের লেবাসধারীদের বিরুদ্ধে ইসলামের প্রকৃত চেতনায় উদ্বুদ্ধবাদীদের মুক্তি সংগ্রাম। খান সেনারা যখন মুসলিম জাতীয়তাবাদ ও ইসলাম কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পাকিস্তানের সংহতি রক্ষার নামে তাদের জুলুম নির্যাতন কে বৈধ করার চেষ্টা করলেন, তখন অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। ইসলাম, মুসলমান ও পাকিস্তান কে সমার্থক বানানোর চেষ্টায় অনেক ইসলামী দলও তাদের অনুকুলে সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু এর বিপরীতে বীর বাঙ্গালীর চেতনা ও উদ্দীপনা কি ছিল? সেটাকি সেকুলারিজম না ইসলামের খাটি দেশাত্মবোধ! সেটা কি খাঁটি বাঙ্গালীয়ানার তেজস্বীতা না অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের ঈমান তেজোদ্দীপ্ত প্রতিরোধ যুদ্ধ বা জিহাদ? যেসব বীর জওয়ানরা মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের প্রাক্কালে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে পরিবার থেকে বিদায় নিয়েছিলেন তাদের প্রতি মা বাবার শেষ বাক্য কি ছিল? নিশ্চয়ই সেটা ছিল- আল্লাহ ভরসা, আল্লাহ হাফেজ কিংবা ফি আমানিল্লাহ! ইতিহাসের এসকল অমোঘ সত্য কে কি কেউ অস্বীকার করতে পারবেন? আর তাইতো যারা মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন তাদের কে এ জাতি ইসলামের পবিত্র শাহাদাতের মর্যাদায় সমাসীন করেছেন, তারা অমর 'শহীদ'। এমনকি অমুসলিম যোদ্ধাদের নামের আগেও শহীদ শব্দ ব্যবহারে কার্পণ্য করা হয়নি। বাংলার ঘরে ঘরে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের জন্য আয়োজন হয়েছিল খতমে কোরআন, রাখা হয়েছিল রোজা। আর চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী সত্যের কাছে হেরেছিল মিথ্যা, হকের সামনে পদানত বাতিল। মজলুমের ঈমান আকীদার সংগ্রামের কাছে ধরাশায়ী মিথ্যা ও জুলুম শোষনের প্রতিভূ পাকিস্তানী সেনাতন্ত্র। তাহলে এতদিন যে আমাদের জানানো হলো- ৭১ এর যুদ্ধ ইসলাম বনাম বাংঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষেতার লড়াই? মুক্তিযুদ্ধের কোন প্রেরণার পেছনে আছে মঙ্গল প্রদীপ? কোথায় আছে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার শপথ? এতদিন যারা এসব মুখস্থ বুলি আওড়িয়ে গেছেন, তারা কারা? কেন কী উদ্দেশ্যে দিনের পর দিন এ অসত্য, মিথ্যা ও জিঘাংসামূলক বিশ্লেষণ শুনিয়ে আসছেন? তাদের স্বরুপ এবং সার্বিক উদ্দেশ্শ-বিধেয় আশাকরি ভালোভাবে বোধগম্য হবে 'মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে ইসলাম' বইটি পড়লে। এ বই নিয়ে হয়তো ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হবে। কিন্তু ইতিহাসের একটা মৌলিক উপাত্ত বইটির মাধ্যমে সত্য আকারে মজবুত ভিত্তি তৈরী করবে বলে আমার বিশ্বাস। স্বীকৃত গবেষক না হয়েও পিনাকী ভট্টাচার্য এরকম মৌলিক বিষয়ে কলম হাতে নেয়ায় তাকে সাধুবাদ জানাই। গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স ভালো ভালো বই প্রকাশ করে সৃষ্টিশীলতায় যে আলোড়ন জাগিয়েছে তা সাফল্যের সাথে বজায় থাকুক- এই প্রত্যাশা করি।