User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#বই_রিভিউ বই: প্রাচ্যবিদদের ইসলামচর্চার নেপথ্যে লেখক: ড. মুসতফা আস-সিবাঈ অনুবাদক: আব্দুল্লাহ আল ফারুক প্রকাশনা: মাকতাবাতুল আযহার وَ قُلۡ جَآءَ الۡحَقُّ وَ زَهَقَ الۡبَاطِلُ ؕ اِنَّ الۡبَاطِلَ كَانَ زَهُوۡقًا ﴿۸۱﴾ "আর বল, ‘সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল’" (সূরা আল-ইসরা: ৮১)। বইটি পড়ে শেষ করার পর আমার মনে বারবার এই আয়াতটি প্রতিধ্বনিত হয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র, বিকৃতি ও আক্রমণ হয়েছে যুগে যুগে, কিন্তু সত্য চিরস্থায়ী, আর মিথ্যা অবশেষে বিলীন হয়ে যায়। আলহামদুলিল্লাহ, ইসলাম তার স্বকীয়তা বজায় রেখেছে এবং সব প্রতিকূলতার মাঝেও টিকে আছে। বইটির আলোচনা শুরু করার আগে লেখক সম্পর্কে সংক্ষেপে বলি। ড. মুসতফা আস-সিবাঈ ছিলেন একজন প্রভাবশালী ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও রাজনীতিবিদ। তিনি সিরিয়ার একজন খ্যাতনামা আলেম ও মুসলিম ব্রাদারহুডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ইসলামের ইতিহাস, হাদিস এবং ইসলামি সভ্যতা নিয়ে তার গবেষণা উল্লেখযোগ্য। ইসলাম ও পশ্চিমা বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি বহু প্রবন্ধ ও গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার মধ্যে "السنة ومكانتها في التشريع الإسلامي" (সুন্নাহ ও ইসলামি আইন প্রণয়নে তার অবস্থান) অন্যতম। প্রাচ্যবিদদের (Orientalists) সংক্ষিপ্তভাবে ব্যাখ্যা করলে বলা যায়, তারা মূলত পশ্চিমা গবেষক, যারা ইসলাম, মধ্যপ্রাচ্য এবং প্রাচ্যের অন্যান্য সভ্যতা নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাদের গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসলামের মূল শিক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, বিকৃত করা এবং মুসলিম সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ানো। প্রাচ্যবিদদের অনেকেই ইসলাম সম্পর্কে নিরপেক্ষভাবে গবেষণা করলেও, বেশিরভাগেরই গবেষণা উদ্দেশ্যমূলক ও ইসলামবিদ্বেষী ছিল। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি বিকৃত করে উপস্থাপন করা, হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করা, কুরআনের ব্যাখ্যায় ভুল ধারণা দেওয়া—এসব ছিল তাদের কাজের অন্যতম লক্ষ্য। যদিও আমি আগে প্রাচ্যবিদদের নিয়ে লেখা কোনো বই পড়িনি, তবে ড. মুসতফা আস-সিবাঈ সম্পর্কে জানার আগ্রহ ছিল। মাওলানা Ahmad Rifat হাফিজাহুল্লাহ অনূদিত "সুন্নাহ ও প্রাচ্যবাদ" বইয়ের রিভিউ পড়ার পর থেকেই তার লেখার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। মানিকগঞ্জের ইসলামি বইমেলায় বইটি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করার সময় দুটি কারণ আমাকে এটি সংগ্রহ করতে উৎসাহিত করে— ১. বইয়ের কলেবর ছোট—বিস্তৃত গবেষণার ভারী বই পড়ার আগে এটি শুরু করা সহজ হবে। ২. মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে উপস্থাপিত—প্রাচ্যবিদ্যা ও প্রাচ্যবিদদের ভূমিকা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়ার জন্য উপযুক্ত। বইটিতে লেখক অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও গোছানোভাবে প্রাচ্যবিদদের পরিচয়, তাদের গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ও ইসলামবিরোধী প্রচেষ্টার ইতিহাস তুলে ধরেছেন। বইটি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছে—প্রাচ্যবিদ ও প্রাচ্যতত্ত্বের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, প্রাচ্যবিদ্যাচর্চার পেছনের উদ্দেশ্য ও কারণ, ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের ষড়যন্ত্র ও বিকৃত উপস্থাপন, কিছু বিখ্যাত প্রাচ্যবিদ ও তাদের মতবাদ। বিশেষ করে, লেখক বেশ কিছু প্রাচ্যবিদদের সাক্ষাৎকার ও তাদের গবেষণার ভুল ব্যাখ্যার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন, যা ইসলামবিদ্বেষী মনোভাবকে উন্মোচিত করে। ক্রুসেডের পর যখন মুসলমানদের সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি কিছুটা দুর্বল হতে থাকে, তখন পশ্চিমারা সরাসরি আক্রমণের পরিবর্তে অন্যভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার পথ খোঁজে। তাদের নতুন কৌশল ছিল মুসলিমদের চিন্তা-চেতনায় প্রভাব ফেলা, যাতে মুসলিমরা ধীরে ধীরে তাদের নিজস্ব ধর্ম, সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়ে। এই উদ্দেশ্যেই তারা ইসলামের মূল উৎসগুলো নিয়ে গবেষণা শুরু করে এবং ভুল ব্যাখ্যা ছড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে—কুরআনের ব্যাখ্যা বিকৃত করা, হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা। এভাবে তারা মুসলিমদের মধ্যে সংশয় ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, যাতে মুসলিম বিশ্বে বিভক্তি তৈরি হয়। বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছে, ইসলাম সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে শুধু ইসলামের নিজস্ব জ্ঞানভাণ্ডারই যথেষ্ট নয়, বরং যারা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের চিন্তাধারাও জানা দরকার। লেখক এখানে অত্যন্ত সহজ ভাষায় প্রাচ্যবিদদের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও তাদের ভুল ব্যাখ্যার স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। যারা ইসলাম নিয়ে গভীর গবেষণায় আগ্রহী, তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার ভূমিকা হতে পারে। বিশেষ করে, যারা প্রাচ্যবিদদের কাজ সম্পর্কে জানতে চান, তারা এ বইটি পড়তে পারেন।