User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
its a very different
Was this review helpful to you?
or
Fine
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_ডিসেম্বর_২০১৮ বইয়ের নাম: ব্লাইন্ডনেস৷ লেখকের নাম: জোসে সারামাগো৷ ধরণ: উপন্যাস। ব্যক্তিগত রেটিং: ৯/১০। ক্যাটাগরি: অনুবাদ। অনুবাদক: মনজরু শামস । প্রথম প্রকাশ: ১৯৯৫ খ্রি. (জার্মান ভাষায়) ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশ : ১৯৯৭ খ্রি. বাংলা অনুবাদ প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ২০১১ খ্রি: প্রকাশকনা : দি স্কাই পাবলিশার্স, ৩৮/২ক, বাংলাবাজার, ঢাকা - ১১০০, অনলাইন পরিবেশক : rokomari.com/ প্রচ্ছদ: মোবারক হোসেন লিটন । পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২২০. মুদ্রিত মূল্য: ২৫০ টাকা। ISBN: 948-826-053- 6. #লেখক পরিচিতি: জোসে দো সুসা সারামাগো (José de Sousa Saramago) ১৯২২ সালের ১৬ নভেম্বর পর্তুগালে জন্মেছিলেন। ব্লাইন্ডনেস উপন্যাসের জন্য ১৯৯৮ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। উদার সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা বলা হয় তাঁকে। আর এ কারণে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনার শিকার হয়েছেন তিনি। বিশেষ করে ক্যাথলিক চার্চ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং ইন্টারন্যাশনাল মনেটারি ফান্ড (আইএমএফ)-এর বেশ কিছু বিষয়ে তিনি কঠোর বিরোধিতা করেছিলেন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেই সবচেয়ে বেশি সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। নিজেকে নাস্তিক দাবি করা সারামাগো তাঁর সাহিত্যকর্মের ওপর নিজ দেশে পর্তুগালের সরকারি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে মনঃক্ষুণ্ণ ছিলেন। এ কারণে তিনি স্প্যানিশ দ্বীপ লানজারোতে নির্বাসনে চলে গিয়েছিলেন। সেখানেই নির্বাসিত থাকা অবস্থায় ২০১০ সালের ১৮ জুন মারা যান সারামাগো। #অনুবাদকের পরিচিতি: লেখক, অনুবাদক ও সাংবাদিক মনজুর শামস। জন্ম ফরিদপুর জেলার ডিক্রির চর গ্রামে, ১৯৬১ সালের ২৯ এপ্রিল। সাংবাদিকতা শুরু দৈনিক জনকণ্ঠে, ১৯৯৩ সালে। বর্তমানে সাপ্তাহিক ২০০০-এর সহকারি সম্পাদক হিসেবে কর্মরত। এ পর্যন্ত তার অনুবাদ, উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মিলিয়ে ১৬টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। #ভূমিকাঃ বিখ্যাত পর্তুগীজ লেখক জোসে সারামাগো'র নোবেলজয়ী একটি উপন্যাস 'ব্লাইন্ডনেস'। উপন্যাসটি শুরু হয়েছে অজানা সময়কালে নামহীন এক শহরের রাজপথে একজন মানুষের হঠাৎ অন্ধ হওয়া নিয়ে৷ অন্ধ ব্যক্তির মনে হয় ঘন কুয়াশাময় সাদা দুধের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে৷ সারামাগো তাঁর ব্লাইন্ডনেস উপন্যাসে এক নতুন অন্ধত্বের দৃশ্য উন্মোচন করেন যা কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন নয়। এ রোগের নাম দেয়া হয়েছে শ্বেত অন্ধত্ব৷ এটি ছোঁয়াচে রোগ৷ একজনের সংস্পর্শে আসার কয়েকঘন্টার মধ্যে সুস্থ মানুষটি অন্ধ হয়ে যান৷ কোনো পূর্বলক্ষণ বা যন্ত্রণা ছাড়াই এই অসুখে পড়তে থাকেন একের পর এক শহরের সব বাসিন্দা। নামহীন শহরের মতোই উপন্যাসের চরিত্রগুলোরও কোন নাম দেননি সারামাগো। #কাহিনী সংক্ষেপঃ প্রথমে অন্ধ হয় গাড়ি চালক৷ তারপর গাড়ি চোর৷ তারপর চোখের ডাক্তার৷ এরপর অন্ধ হন কালো চশমা পরিহিত সুন্দরী যৌনকর্মী, তারপর অন্ধ হন এক চোখ টেরা কিশোর, তারপর অন্ধ হন হোটেলের আয়া, ঔষধ ফার্মেসীর কর্মচারী, এক চোখে পট্টি বাধা বয়স্ক লোক, প্রথম অন্ধ লোকের স্ত্রী, দু জন পুলিশ, হাসপাতালের কেয়ারটেকার... এভাবে বাড়তে থাকে অন্ধের সংখ্যা৷ শহরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে অদ্ভুত এই রোগ। আর এই অসুখে ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যেতে থাকে সবাই। . শারীরিকভাবে অন্ধ হওয়ার পাশাপাশি মানসিকভাবেও অন্ধ হয়ে পড়তে শুরু করে মানুষগুলো। সামাজিক মূল্যবোধ বলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না তাদের মধ্যে। দুর্বলের ওপর শুরু হয় সবলের অত্যাচার। অর্থাৎ যারা চোখে দেখতে পায় শুরু হয় তাদের অত্যাচার। পরবর্তীতে আমরা দেখতেপাই অন্ধদের মধ্যেও সবল অন্ধরা দুর্বল অন্ধদের উপর অত্যাচার করতে থাকে৷ . এই গল্প বর্ণিত হয়েছে একজন মধ্যবয়সী মহিলার বয়ানে। তিনি হচ্ছেন এই গল্পে আরেক চরিত্র চোখের ডাক্তারের স্ত্রী। এ মহিলাই উপন্যাসের মূল চরিত্র৷ সবাই অন্ধ হলেও শেষ পর্যন্ত ডাক্তরের স্ত্রী অন্ধ হন না৷ ভীত সন্ত্রস্ত সরকার করবার কিছু না পেয়ে অন্ধত্ব নিয়ন্ত্রণে সকল অন্ধকে একটি পরিত্যক্ত মানসিক হাসপাতালে বন্দী করেন৷ সে সাথে একই হাসপতালের আলাদা ভবনে পঠিয়ে দেন তাদেরকে যারা অন্ধদের সংস্পর্শে এসেছিলো এবং অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা আছে৷ সেখানে নব্য অন্ধদের এক নতুন জীবন শুরু হয়৷ কম্পাউন্ড থেকে এক পা বাইরে রাখলেই গুলিতে মারার ঘোষণা দেয় সেনাবাহিনী৷ সেই হাসপাতালে বন্দী অন্ধদের তৈরী হয় এক নতুন সমাজ ব্যবস্থা, প্রতিদিন নতুন কষ্ট, নতুন নৃশংসতা আর প্রতিদিনই বেঁচে থাকার যুদ্ধ।ঞূশৃংখলা আনয়নে অনেক পরিশ্রম করেন এই দম্পতি৷ আর সেই বন্দীশালায় থাকা মানুষদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব কলহের পাশাপাশি তৈরি হয় এক হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। তারা সবাই চেষ্টা করে অজানা এই রোগ, অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার। . উক্ত বন্দীশালায় বাহির থেকে কোন লোক ভেতরে যায় না৷ ভেতরের অন্ধরা নিজেদের সকল কাজ নিজেদেরকে করতে হয়৷ এমনকি কেউ অসুস্থ হলে কিংবা মারা গেলেও বাহির থেকে কোন সাহায্য যায় না৷ এতগুলো অন্ধের খাওয়া, টয়লেট, পরিচ্ছন্নত, অসুস্থতা ইত্যাদি নিয়ে ব্যাপক সমস্যা সৃষ্টি হয়৷ বাহির থেকে শুধু খাদ্য, পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী ও কিছু সাধারণ ঔষধ সরবরাহ করার ঘোষণা দেয় সরকার৷ কিন্তু দিনে দিনে অন্ধের সংখ্যা বাড়তে থাকলে আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের অপর্যাপ্ততা এবং বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। যেটা সামলে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। একদল দুর্বৃত্ত অন্ধ অন্য নিরীহ অন্ধদের উপর অত্যাচার শুরু করে৷ তারা অন্ধদের সাথে থাকা মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নেয়৷ সরবরাহকৃত খাবার আটকে রাখে এরং গুনেগুনে স্বল্প পরিমানে প্রদান করে৷ নারীদেরকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে৷ এর মধ্যে শহরে রোগ আরো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে সরকারের পক্ষ থেকে খাবার সরবরাহ করা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি প্রাথমিক ওষুধপথ্যও দেওয়া বন্ধ করে দেয় তারা। এ নিয়ে বিদ্রোহ শুরু হয় আশ্রয়কেন্দ্রে। পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হতে থাকে৷ শহরে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে থাকে। সরকারি সব সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বন্ধ হয়ে যায়। শহর ডুবে যেতে থাকে অন্ধকারে। . এ পর্যায়ে এসে আশ্রয়কেন্দ্রে পাহারা দেয়ার মতো সেনাবাহিনীর কোন সদস্যা বাকি রইলো না৷ সবাই অন্ধ হয়ে গেলো৷ কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রের ভেতরের অন্ধরা প্রথমে তা টের পেলো না৷ পরে বিদ্রোহে আশ্রয়কেন্দ্রে আগুন লাগলে তারা সদর দরজায় এসে দেখে কোন পাহারাদার অবশিষ্ট নাই৷ সকল অন্ধ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে৷ কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ৷ তারা জানতে পারলো পুরো শহরে সবাই অন্ধ হয়ে গেছে৷ মানুষজন ঘর থেকে বের হয়ে আর ঘরে ফিরতে পারছে না৷ যে যেই বাড়িতে পারছে ঢুকে পড়ছে৷ ঘর বাড়ির আর কোন মালিকানা রইলো না৷ খাদ্যসংকট মূল সমস্যা হয়ে দেখা দিলো৷ অন্ধরা এবাড়ি ও বাড়ি হাতড়িয়ে চলছে খাদ্যের সন্ধানে৷ এমনকি পশুরাও খাদ্য সংকটে পড়ে গেলো৷ নারী পুরুষ অনেকের শরীরে কাপড় নেই৷ অবশ্য সবাই অন্ধ হওয়ায় কেউ কাউকে দেখলো না৷ চোখ না থাকলে সৌন্দর্য্যেরও মূল্য থাকে না৷ ধনী গরিব বড় ছোট নারী পুরুষ সবাই সমান হয়ে গেলো৷ এমনি তারা বন্দীশালা থেকে মুক্ত হয়েও আর মুক্তির স্বাদ পেলো না৷ তাদের কাছে মনে হলো পুরো শহরটাই একটা বন্দীশালা৷ . উপন্যাসের শেষটিও ছিল দুর্দান্ত। নগরের সবাই দৃষ্টি ফিরে পেয়ে রাস্তায় নেমে আনন্দ উদযাপন করছে, এই আত্মহারা উন্মাদনা দেখে হঠাৎ ডাক্তারগিন্নী যেন- সবকিছু সাদা দেখতে পেল। সে ভাবল, ‘এখন বোধ হয় আমার পালা।’ ভয় পেয়ে উপর থেকে সে তার চোখজোড়া নিচের দিকে নামালো এবং তাকিয়ে দেখলো ‘না! নগরটা আগের মতোই দৃশ্যমান।’ #পাঠক হিসেবে অনুভূতিঃ এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট বা গল্প বলার ধরন মনের মধ্যে অদ্ভুত এক ঘোর তৈরি করে। অন্য এক জগতে নিয়ে যায় পাঠককে৷ তৈরি করে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। এটাকে বলা যায় সাইকো ফিলসফিক্যাল উপন্যাস৷ ব্লাইন্ডনেস বইটার কাহিনী এতটাই দারুণ এবং অভিনব যে আমি পুরোপুরিই মোহগ্রস্থ হয়ে যাই। গোগ্রাসে পাতার পর পাতা উড়ে যাই, আর মাত্র দুই দিন রাতে নাওয়া খাওয়া ফেলে বইটা শেষ করি আমি৷ আমার বিশ্বাস বইটি একজন পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধেরমতো মোহবিষ্ট করে রাখবে৷ নিসন্দেহে আমার পড়া সেরা বইগুলোর একটা এটি। কেউ নিজে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পতিত না হয়ে কীভাবে এমন বর্ণনা সম্ভব, এটিই এক বিস্ময়! এই উপন্যাস পাঠ শেষে কারও এমন ভাবাটা অযৌক্তিক হবে না যে, সারামাগো নিজেই কী এই শ্বেত-অন্ধত্বে আক্রান্ত? নতুবা কীভাবে এমন পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা সম্ভব! . এখানে অসুস্থতার পাশাপাশি মানব মনের দ্বন্দ্ব সংঘাত আর চমৎকার সব দর্শন উপস্থাপন করা হয়েছে৷ এই বইতে সহিংসতার নতুন এক রূপ উন্মোচন করেছেন লেখক। একই সঙ্গে উপন্যাসটি ছন্দময়, চিন্তাশীল, আমোদপূর্ণ, পাশবিক ও কাব্যিক। সারামাগো তাঁর এ গ্রন্থে মানবতার অবক্ষয় ও পতনের চিত্র তুলে ধরেছেন৷ কতিপয় অন্ধের অপরিণামদর্শিতার কারণে যে বিশ্বব্যাপী নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছে লাখ লাখ সাধারণ মানুষ, এই আখ্যান তারই পরোক্ষ পাঠ। . #সমালোচনাঃ উপন্যাসটির এত সফলতার মাঝেও তিনটি বিষয় আমার কাছে খটকা লেগেছে৷ ১) এডাল্ট কন্টেন্ট রয়েছে বেশ৷ যৌন উম্মাদনা আর ধর্ষনের বর্ননাগুলো আরেকটু রাখডাক রেখে লিখতে পারতেন৷ ২) পুরো শহরের সবাই অন্ধ হলেও ডাক্তারের স্ত্রী শেষ পর্যন্ত কী কারণে অন্ধ হলেন না সেই কারণটা উম্মোচন না করাটা প্রশ্নবোধক বটে৷ এই বিষয়টিই এই উপন্যাসের সবচাইতে দুর্বল পয়েন্ট বলে আমার কাছে মনে হয়েছে৷ ৩) বন্দীখানায় ডাক্তারের স্ত্রীর মতো একজন দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ থাকার পরও প্রথম দিকে অন্ধ দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেনি৷ অথচ এ কথা সত্য যে এক লক্ষ অন্ধ লোকও একজন দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের নিকট দুর্বল৷ #লেখকের স্টাইলঃ জোসে সারামাগো এই উপন্যাসে এক অভিনব স্টাইল অবলম্বন করেছেন৷ তিনি গল্পের চরিত্রগুলোর কোন নাম দেননি৷ এবং সেটাই যুক্তিসংগত মনে হয়েছে কারণ অন্ধ সমাজের কেউই একে অপরের নাম জানার প্রয়োজনবোধ করে নি। এমনকি সংলাপগুলোতে যতি ও বিরাম চিহ্নের ব্যবহার করেননি৷ উনার বক্তব্য হচ্ছে মানুষ কথা বলার সময় না থেকে টানা বলে যান৷ অতএব তিনিও কোন বিরাম চিহ্ন ব্যবহার না করে একাধারে লিখে গেছেন৷ #অনুবাদঃ ব্লাইন্ডনেস প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে পর্তুগালে। উপন্যাসটির মূল পর্তুগিজ নাম ‘এনসাইয়ো সবরি আ সেগিরা’। পর্তুগিজ ভাষা থেকে বইটির ইংরেজী অনুবাদ শেষ করেই জিওভান্নি পন্টেইরো মৃত্যুবরণ করেন, তিনি অনুবাদের পুনঃপাঠও করে যেতে পারেননি। পরে মার্গারেট জুল কোস্টার পুনর্পাঠ শেষে ১৯৯৭ সালের অক্টোবরে গ্রন্থটির ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশিত হয়। বইটি বিশ্বের অনেক ভাষায় অনুবাদ হয়েছে৷ বাংলা ভাষায় বেশ কয়েকজন অনুবাদ করেন৷ কবির চৌধুরী অনুবাদ করেন লেখকের স্টাইলে সংলাপে বিরাম চিহ্ন না দিয়ে৷ এতে করে পাঠকদের নিকট এটি সুখপাঠ্য হয়নি৷ এছাড়াও মোস্তাক আহমেদ এবং মনজরু শামস অনুবাদ করেন৷ অমি পড়েছি মনজুর শামস এর অনুবাদ৷ বেশ ভালোই লেগেছে৷ #চলচ্চিত্র নির্মাণঃ ‘ব্লাইন্ডনেস’ উপন্যাসটি অবলম্বনে ২০০৮ সালে একই নামের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন ফার্নেন্দো মিরিয়ালস, যাতে অভিনয় করেছিলেন মার্ক রুফালো ও জুলিয়ান মুর। অামি মনে করি চলচ্চিত্রেম মধ্যে সাহিত্যের মূল রস পাওয়া সম্ভব নয়৷ তাই সাহিত্যমোদীদেরকে বলবো মুভি না দেখে বই পড়তে৷ #ব্লাইন্ডনেস এর ফিলসফিঃ জোসে সারামাগো তাঁর গ্রন্থটিতে বলতে চেয়েছেন অন্ধ বলতে আসলে কেউ নেই, এখানে যা বিরাজমান তা হচ্ছে অন্ধত্ব।’ অর্থাৎ রাষ্ট্র যখন স্খলন, অমানবিকতা, অসমতা ও নেতিবাচকতায় নিমজ্জিত থাকে, তখন ব্যক্তি বিশেষের সক্ষমতা নিষ্ক্রিয় হয় এবং তারা নিরুপায় হয়ে কেবল আক্রান্ত হতে থাকে। এই অন্ধত্ব ব্যক্তি বিশেষের কৃতকর্মে সৃষ্টি হয় না বরং রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব থেকে এটা সমগ্রপৃষ্ঠে চেপে বসে। সারামাগোর এসব বক্তব্যের চেয়ে যা আখ্যানটিকে অভিনব বলে প্রচার দিয়েছে তা হলো এর অদ্ভুত দৃশ্যপট এবং দৃশ্যগুলোর চমৎকার বর্ণনা। #নামকরণের সার্থকতাঃ পুরো উপন্যাসটি জুড়ে রয়েছে স্বেত অন্ধত্বের ছদ্মাবরণে মানবতার অন্ধত্বের আখ্যান৷ লেখক বুঝাতে চেয়েছেন অন্ধ বলতে আসলে কেউ নেই, এখানে যা বিরাজমান তা হচ্ছে অন্ধত্ব। এখানে ব্যক্তির অন্ধ হওয়া নিয়ে বলা হয়নি বরং সামষ্টিক অন্ধত্ব নিয়ে বলা হয়েছে৷ সেই হিসেবে উপন্যাসটিন নামকরণ সার্থক হয়েছে শতভাগ৷ #সেরা উক্তি: * নাম দিয়ে আমাদের এখন কী- ই বা এসে যায়; একটি কুকুরতো অন্য একটি কুকুরকে চেনে ঘ্রাণে, নামে নয়৷ * এটা যদি স্বপ্ন হয় তবে যেনো আমি আর জেগে না উঠি৷ * আমাদের কথা এবং কাজের ফল ভালো আর মন্দে ভাগ হয়ে যায়৷ * যারা কথা এবং কাজে সারা জীবন কার্যকারণ বিবেচনা করেন জগতে তারাই অমর হন৷ * মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রকৃতগতভাবেই মানুষ পুরনো শত্রুতা ভুলে যায়৷ * পশুরা যখন মরে তখন এর সাথে এর বিষও মরে৷ * কারও ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে হুটকরে প্রশ্ন করে ফেলা একেবারেই অভদ্রতা৷ * অন্ধদের কাছে দিনের আলো আর রাতের আঁধার সবই সমান৷ * ঘুমন্ত অন্ধ আর বিনা কারণে জেগে ওঠা অন্ধদের মধ্যে অনেক পার্থক্য৷ * কান্না অনেক সময় আমাদের চরম মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে উদ্ধার করে৷ জীবনে এমনও পরিস্থিতি আসতে পারে যখন কাঁদতে না পারলে আমরা মরেই যাবো৷ * আমরা সবাই দোষী এবং নির্দোষ৷ * মানুষ যেমন বিচিত্র মানুষের সমস্যাও বিচিত্র৷ * ঝুকি না নিলে ভালো কিছু লাভ করা যায় না৷ * বিপদে পড়লেই মানুষ বুঝতে পারে কে তার বন্ধু৷ * একটি তীর যেভাবে উর্ধ্বে উঠে আবার নিচের দিকে ধাবিত হয় মানুষের দুর্গতিও তেমনি একদিন নিম্নমুখী হয়৷ * ভালো কিংবা মন্দের কিছুই চিরস্থায়ী হয় না৷ * মানুষ জীবনের নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তবেই ভাগ্যের দেখা পায়৷ * ঝগড়া ও মারামারি সব সময়েই এক ধরনের অন্ধত্ব৷ * চোখ শরীরের এমনই একটি অংশ, যেখানে সব সময় আত্মার ছোঁয়া থাকে৷ এমনকি অন্ধ চোখও৷ * একজন অন্ধ পুলিশ আর সাধারণ অন্ধের মধ্যে কার্যত কোন পার্থক্য থাকে না৷ * ভালোবাসা এক ধরনের অন্ধত্ব হলেও এর আলাদা একটা ভাষা আছে৷ * মানুষের চেহারা প্রতারণা করে, অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য নয়৷ * জীবনে এমন অনেক সময় আসে যখন কথা কোন কাজেই আসে না৷ * অন্যদের খাবার সব সময় বেশি ওজনের মনে হয়৷ * ভীতি মানুষকে কখনো শুভ বুদ্ধি দেয় না৷ * নারীরা পর্যায়ক্রমে নানা রূপে জন্মায়৷ * মহিলারা সব সময়ই সাবধানী বিক্রেতা৷ * একটি পরিষ্কার শরীরে নোংরা কাপড় পরার চাইতে নোংরা শরীরে পরিষ্কার কাপড় পরা অনেক ভালো৷ * চোখের ভেতর দিয়ে মানুষের আত্মাটাকে দেখো৷ * মেয়েদের পেট থেকে জন্মেছে বলে পুরুষরা মেয়েদের সব জানবে বিষয়টা এমন না৷ * আমরা যা কিছু খাই তার সবই অন্যের মুখ থেকে কেড়ে নেয়া৷ * চুপচাপ শুয়ে থাকলে দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা সহ্য করে থাকা যায়৷ * অন্ধ বলতে কেউ নাই, যা আছে তা হচ্ছে অন্ধত্ব৷ #শেষ কথাঃ আপনি যদি বইটি না পড়ে থাকেন তবে এই চমকপ্রদ বইটি পড়া শুরু করতে আর দেরি করবেন না৷ আপনার পাঠ শুভ হোক। রকমারি লিংক: https://www.rokomari.com/book/14276/bliendness written by: Mh Fazlul Hoque