User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
২৬ বছর বয়েসি 'তাগড়া' ছিলেন সমুদ্রতীরবর্তী এলাকার যুবক মুক্তিযোদ্ধা। সুন্দরবন থেকে বরিশালের দিকে এগিয়ে চলা একটি মুক্তিযোদ্ধাদলের সদস্য তিনি। কোদলধোয়া এলাকায় পৌঁছুতেই আচমকা তারা মুখোমুখি হলেন বিপরীতদিক থেকে আসা একদল পাকসেনাদের! অপ্রস্তুত দুপক্ষই ঝাঁপিয়ে পরে হ্যাস্টি ডিফেন্স নিয়ে শুরু করল গুলিবিনিময়। পাকিদের গুলির তোড়ে মাথাই তোলা দায়! তবে মুক্তিযোদ্ধা দলনেতা সাঈদ নার্ভ হারালেন না। আশেপাশেই থাকা আরেকটি মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতা হিরনের সাথে সমন্বয় করে তিনি পাকসেনাদের দলটিকে প্রায় ঘিরে ফেললেন। হঠাৎ দুপক্ষই গুলি বন্ধ করে দিতেই নেমে এল অসহনীয় এক নিরবতা। দুপক্ষই অপেক্ষা করছে অপরপক্ষ কী 'মুভ' করে তা দেখতে; তারপর সে অনুযায়ী 'রেস্পন্স' করা হবে। স্নায়ুছেড়া সেই প্রতীক্ষার যন্ত্রণা সইতে না পেরে দুহাতে নিজের এসএমজিটা 'হ্যান্ডস আপ' ভঙ্গীতে মাথার উপর ধরে উঠে দাঁড়িয়ে গেল এক বিশালদেহী পাকিস্তানী সৈনিক! তারপর সে চেঁচিয়ে উঠল, "হ্যায় কোয়ি মা কি লাল? মা কি দুধ পিয়া হো তো বেগায়ের হাতিয়ারকে সামনে আ যাও..." ঘটনার আকস্মিকতায় মুক্তিযোদ্ধারাও তার উপর গুলি করতে ভুলে গেল। এবার সেই যুবক নিজের এসএমজিটা একদিকে ছুড়ে ফেলে, একটানে নিজের ইউনিফর্মের শার্টের বোতাম ছিড়ে শার্টটাও আরেকদিকে ছুড়ে ফেলে একপা দুপা করে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান বরাবর এগিয়ে আসতে শুরু করল! লুঙ্গিপরা উদোম তাগড়ার পক্ষে এই ডুয়েলের আহবান উপেক্ষা করা যেন অসম্ভব! "মর্দে মনে হরছে কি... মেবাই, তাগড়ারে আর ধইর্যা রাক্তেয়ারলেন না...হালার পো হালায় বেজাগায় হাত দেছে..." তারপর লুঙিতে মালকোঁচা মেরে 'জয়বাংলা' বলে তাগড়াও সেই সৈন্যটির দিকে এগিয়ে গেল। দু পক্ষের কেউই ফায়ার ওপেন করলনা তখনো, যেন এ অপার্থিব দ্বৈরথ আর এর ফলাফল দেখতে দুপক্ষই মৌন সমর্থন দিল! নো ম্যানস ল্যান্ডে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দুজনই কয়েক সেকেন্ডের জন্য একে অন্যকে মাপল যেন, তারপর তাগড়া সাপটে থাবা চালালো প্রতিপক্ষের হৃদপিন্ড বরাবর! তাগড়ার আঘাতের চোটে বিশালদেহী পাঠান পিছিয়ে গিয়ে কোনমতে ভারসাম্য সামলে নিল। লড়াইয়ের স্পেস বাড়াতে তাগড়া কয়েক কদম পিছিয়ে জায়গা করে নিল এবার। দুজনের মাঝে দুরত্ব তখন ৪/৫ গজের। হঠাৎ পাকিস্তানী ফ্রন্ট থেকে একটা অটোমেটিক গর্জে উঠল, কয়েক বার্স্ট গুলি সেই ক্লোজড কোয়ার্টার রেঞ্জে তাগড়াকে এফোঁড়ওফোঁড় করে দিল। চোখ জোড়া অপার বিষ্ময় নিয়ে তাগড়া হাঁটু ভেঙ্গে হুমড়ি খেয়ে মুখথুবড়ে পরে গেল! তাগড়া পরে যাবার পর সাঈদ আর অপেক্ষা করেননি, উন্মত্ত মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুতই পাকিস্তানীদের হারিয়ে দিয়ে ওদের অবস্থান দখল করে নিল। শ'খানেক পাকিদের ভেতর মাত্র পাঁচ জন বেঁচে ছিল সেই যুদ্ধে। ট্রিভিয়াঃ সেই পাঁচ যুদ্ধবন্দীর বরাত দিয়ে জানা গিয়েছিল যে, সেই পাকিস্তানী যুবক সেনা তাগড়ার উপর এমন কাপুরুষোচিতভাবে গুলি করাটা মেনে নিতে পারেনি। নিজের এসএমজি হাতে তুলে নিয়ে সে অশ্রাব্য খিস্তি দিতে দিতে নিজেদের সৈন্যদেরই গুলি করে মারতে শুরু করে দিয়েছিল। নিজেদের অস্ত্রের পাঁচটি গুলি হজম করার পর সেও চিরতরে লুটিয়ে পরেছিল!
Was this review helpful to you?
or
১৯৭১ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক রক্তঝরা সময়। এই সময় পাকিস্তানী বাহিনীর অত্যাচার, অবিচার, লুণ্ঠন, হত্যা, ধর্ষণের বিরুদ্ধে এদেশের সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষেরা অসীম সাহসিকতার সাথে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল। রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিল জাতির বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার লাল সূর্য, পতপত করে উড়তে থাকা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। আর এই স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামের সবচেয়ে অগ্রভাগে যারা ছিল, সেই কৃষক, শ্রমিক, মজুরদের বীরত্বগাঁথা ইতিহাসে খুব কমই লেখা হয়েছে। তারা এক্ষেত্রেও বরাবরের মতই বঞ্চিত থেকে গেছে। মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়ার লেখা ‘জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা’ সেই সব অলিখিত সাহসী মুক্তিযোদ্ধার রক্তের ঋণ স্বীকার করার এক প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা। মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া নিজে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাই মুক্তিযুদ্ধের গল্প সব সময়ই তাঁর কলমে অনবদ্য ভাষা পেয়েছে। এই বইয়ে তিনি ১১টি বীরত্বগাঁথা সংকলিত করেছেন। মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়ার লেখার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হল, তিনি যুদ্ধে ব্যবহৃত বিভিন্ন টেকনিক্যাল টার্ম বইয়ে অত্যন্ত সুন্দরভাবে ব্যাখ্যাসহ ব্যবহার করেছেন। এছাড়া তিনি গল্পের ফাঁকে ফাঁকে পাঠকদের যুদ্ধের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কেও বলেছেন। প্রয়োজনে বিভিন্ন দলিলও সংযুক্ত করেছেন। যা বইটিকে তথ্যবহুল করে তুলেছে। আর বাংলার মাঠ-ঘাট থেকে উঠে আসা একদম সাধারণ কিন্তু খুবই অসাধারণ কাহিনীগুলো পাঠকের হৃদয়কে ছুঁয়ে না গিয়ে পারেই না। মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়া নিজে একজন গণযোদ্ধা ছিলেন। তাই ‘জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা’ বইয়ে তিনি অপার মমতা, অপরিসীম শ্রদ্ধা আর বুকভরা ভালোবাসা নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আখ্যান রচনা করেছেন। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ব্যাপারে আগ্রহী তাদের জন্যে এই অসাধারণ বইটি অবশ্যপাঠ্য।