User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম : মাল্যবান লেখকের নাম : জীবনানন্দ দাশ ধরন : চিরায়ত উপন্যাস প্রকাশনীর নাম : ঐতিহ্য প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ প্রথম প্রকাশের প্রচ্ছদঃ সত্যজিৎ রায় প্রথম প্রকাশ কাল : ১৯৭৩ রচনাকাল: ১৯৪৮ প্রথম প্রকাশক: অশোকানন্দ দাশ কাহিনী সংক্ষেপঃ মাল্যবান উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র মাল্যবান ও তার স্ত্রী উৎপলা। যাকে মাল্যবান সহ সবাই পলা নামেই ডাকে। মাল্যবান একটি মালিকানাধীর প্রতিষ্ঠানে কেরানী পোষ্টে চাকুরী করেন। থাকতের কলেজ ষ্ট্রিটের একটি দুই তলা বাড়িতে। এই দুই তলা বাড়ির উপরের তলায় থাকতেন পলা ও তাদের একমাত্র সন্তান মনু। আর মাল্যবাণ থাকতেন নিচের স্যাতস্যাতে নোংরা বাসাটিতে। মাল্যবান ও পলার দাম্পত্য জীবনে দেখা যায় তাদের মধ্যে বেশীর ভাগ সময়ই কলহ লেগে থাকত। স্ত্রী পলার নিকট বাহিরের লোকজন আসতেন প্রায়ই। তারা সরাসরি চলে যেত পলার থাকার ঘরে। রাত ১০ টা ১১টা পর্যন্ত চলত তাদের গান বাজনা। এ নিয়ে মাল্যবান কখনও তার স্ত্রী পলাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করেননি। এক পর্যায়ে পলার মেজদা- মেজদি আসবেন কয়েক মাসের জন্য। বাসায় থাকার স্থান সীমিত হওয়ার কারনে মাল্যবানকেবাসা চেড়ে দিতে বাধ্য হয়ে থাকতে হয় বোডিং। বিয়েতে পলার পিতার নিকট থেকে মাল্যবানকে উপহার দেওয়া ঘড়িটা তার পরিবারের জন্য বিক্রি করে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে পলা। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ মাল্যবান উপন্যাসটিকে অনেকেই কবি জীবনানন্দ দাশের আত্নজীবনী মুলক গ্রন্থ বলেছেন। তার অবশ্য বেশ কিছু কারনও রয়েছে। কবি মাল্যবানের প্রথম পৃষ্ঠার মাল্যবানের যে নিজের বাড়ির ঠিকানা বলেছেন তাতে খুব সহজেই বুঝা যায় মাল্যবান কবি জীবনের ঘটে যাওয়া নির্মম সত্য গুলোই। জীবনানন্দের মৃত্যুর পরে যখন তার বিশাল পান্ডুলিপি খুজে পাওয়া গেল। এবং মাল্যবান উপন্যাসটি প্রকাশের ব্যবস্থা করা হল। তখন অশোকানন্দের পরামর্শে ভূমেন্দ্র গুহর পান্ডুলিপিটি পড়ার জন্য লাবণ্য দাশকে দেন। লাবণ্য দাশ পান্ডুলিপি পড়ার পরে তা প্রকাশের ক্ষেত্রে অসম্মতি প্রকাশ করেন। এবিষয়ে তিনি কাঠোর অবস্থানে রইল। যদিও শেষ পর্যন্ত তার বাধা টিকতে পারেনি। লাবণ্য দাশ যেহেতু বইটি প্রকাশের বিষয়ে বাধা দিয়েছেন তাতে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় এটা তাদের দাম্পত্য জীবনের ঘটনাবলী। কেননা লাবণ্য দাশ একমাত্র এই উপন্যাসটি ছাড়া আর কোন উপন্যাস প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করেননি। ত্রিদিব সেনগুপ্ত মাল্যবানকে একটি সার্থক না-উপন্যাস বলে অভিহিত করেছেন। কেননা বাংলা ভাষায় এখনও অব্দি সবচেয়ে গভীর, জটিল এবং তীব্র শিল্পী জীবনানন্দ দাশ যে কন্টেক্সট অবলম্বন করে তার নিজের লেখা লিখে চলেছেন। যেখানে মাল্যবান নিজেই একটা কনটেক্সট। আমরা সাধারণ পাঠক কবি জীবনানন্দকে ঠিক যে ভাবে চিনি মাল্যবান ঠিক ততটাই হতাশ। যে কবি সারাটা জীবন কাব্য চর্চায় তার জীবন এরকম নিরানন্দ হয় কি করে। যদিও আমরা অনেকেই জানি কবি বিবাহের পরপরই তার চাকুরী হারিয়ে ফেলে। তার সারাটা জীবন কাটে অর্থাভাবে। মাল্যবান পড়ে পাওয়া গেল আরেক জীবনানন্দকে।
Was this review helpful to you?
or
বুক রিভিউ - "মাল্যবান" ঔপন্যাসিক - জীবনানন্দ দাশ লেখকের স্বরচিত জীবনচরিত বা আত্মকথাকে আমরা আত্মজীবনী বলি Iতবে আত্মজীবনী এবং আত্মজৈবনিক উপন্যাসের আঙ্গিক কিনতু ভিন্ন Iআত্মজীবনীতে কল্পনাশক্তির কোন স্থান নেই,কিনতু আত্মজৈবনিক উপন্যাসে কল্পনাশক্তি প্রাধান্য পায় Iবাস্তবতা এবং কল্পনাশক্তির অদ্ভুত মেলবন্ধন ঘটিয়ে লেখক আত্মজৈবনিক উপন্যাস রচনা করেন I"মাল্যবান" উপন্যাসটি ঠিক তেমনই রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের আত্মজৈবনিক উপন্যাস হিসেবে মানি I জীবনানন্দ দাশের অঘোষিত আত্মজীবনীর প্রতিচ্ছবি এই "মাল্যবান" Iতাঁর অসুখী-অসুস্থ দাম্পত্য-জীবনের যে রূপ আমরা দেখি প্রতি পৃষ্ঠায়,তা যেন প্রতি পদে পদে কবির সাথে আমাদেরও কুড়ে কুড়ে খায় Iজীবনানন্দের মৃত্যুর পর তাঁর অপ্রকাশিত লেখাগুলো যখন প্রকাশের আলো দেখে তখন কেবলমাত্র এই উপন্যাসটির পাণ্ডুলিপি কবিপত্নী লাবণ্য দাশ প্রচন্ড প্রতাপে লুকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চালান কিনতু শেষমেশ তিনি ব্যর্থ হন Iপাণ্ডুলিপি পাঠ করে তিনি বুঝেছিলেন উৎপলার মধ্যে লালিত তাঁর ঘৃণিত সত্তা জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়ে একরাশ বিষাক্ত ছোবলে জর্জরিত হবে I প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে যখন বইয়ের ভেতরে প্রবেশ করলাম , মাঝপথে থমকে আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম যে এত রেগে কেন যাচ্ছি ! !আজন্ম জেনে আসা কবি এবং কবিপত্নীর দাম্পত্য বিপর্যয় সম্পর্কে আমাদের কল্পনার ছকে কোন খোপ আঁকা ছিল না বলেই কি আমি বা আমরা এতটা রাগান্বিত বা ব্যথিত হচ্ছি ? "মাল্যবান" উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মাল্যবান পেশায় একটি ব্রিটিশ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কেরানী Iস্বল্প বেতনে চাকরিজীবন শুরুর পর প্রায় পনেরো বছর পরে তার বেতন বেড়ে দাঁড়ায় আড়াইশো টাকায় Iতার চাকরিজীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে স্ত্রী উৎপলা প্রতিনিয়ত তাকে নিষ্ঠুর এবং কদাকার বাক্যবানে বিদ্ধ করতো এবং মাল্যবানও তার স্ত্রীর সমস্ত অবজ্ঞা উপেক্ষা করে টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত ছিল Iকোলকাতার কলেজ স্ট্রিটের দ্বিতল একটি বাড়িতে তারা ভাড়া থাকতো Iসবথেকে করুন বিষয় ছিল উৎপলা এবং তাদের কন্যা মনু থাকতো দোতলার আলো-বাতাসে ভরপুর বড় পরিসরের একটি ঘরে আর মাল্যবানের জায়গা হয় নীচতলার ছোট্ট স্যাঁতসেঁতে একটি খুপড়ি ঘরে ! বিষয়টা অনেকটা একই ছাদের তলে দুজনের পৃথক জীবনযাপন প্রক্রিয়ায় মতো যেটা স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন বিরোধী ছিল I উপন্যাসের এক পর্যায়ে জানতে পারি তাদের বাসায় উৎপলার "মেজদা-মেজদি" আসবেন কয়েক মাসের জন্য তখন স্থানসংকুলানের কারণে তারা ভাবনায় পড়ে যায় ,কারণ অতিথিদের পুরো একটি ঘর ছেড়ে দিতে হবে Iএর মূল কারণ ওনারা এক জোড়,প্রথম থেকে এটাই হয়ে এসেছে Iসুতরাং জোড় ভাঙা সম্ভব না Iতখন মাল্যবান বলে - "খুব ভালো শাঁখার ব্যবসায়ী ছিলাম আমি,তোমার হাতও ননীর মতো নরম ছিল, কিনতু কোন শাঁখাই পরাতে পারলাম না কেন ?" মাল্যবানের এ প্রশ্নের উত্তর দেবার মতো কোন প্রয়োজনীয়তা দেখায়নি উৎপলা Iএ তবে তাদের কেমন দাম্পত্য ? উপন্যাসে দেখি মাল্যবানকে বিয়েতে উপহার দেয়া উৎপলার পিতার ঘড়িটা বিক্রির জন্য চাপ প্রদান করে Iএতটা হীন মানসিকতা কারো হতে পারে এটা অবিশ্বাস্য Iশেষ অবধি মাল্যবানকে ঘড়িটা বিক্রি করেই টাকাটা উৎপলার হাতে গুঁজে দিতে হয় I ৭৮ পৃষ্ঠার একটি লাইনে চোখ আটকে গেলো -" একমাসের মাইনের চেয়ে যেসব লোকের একটা ধুতি বা চাদরকে এক এক সময় ঢের বেশি দামি,দরকারি মনে হয়,মাল্যবান সেই ধরনের মানুষ I" মাল্যবান অনাকাঙ্খিত খরচের লাগাম টানতে শশব্যস্ত কিনতু পলা সে বিষয়ে নির্বিকার,দুজনের চিন্তার মাঝে তাই যোজন যোজন ফারাক Iপুরো উপন্যাস জুড়েই স্বামীর প্রতি পলার বিতৃষ্ণার বিষয়টা এতটা প্রবল ছিল যে তা পাঠকের কাছে ছিল অনভিপ্রেত I "জীবনানন্দ" যে নামের মাঝেই রয়েছে "আনন্দ" , অথচ তাঁর জীবন জুড়েই "নিরানন্দর খেলা" যা জেনে ব্যথিত হবেনা এমন কোন পাঠক সত্তা পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ I উৎপলা যে মাল্যবানকে এত উপেক্ষা করতো , সেটা মাল্যবান উপভোগ করতো Iএ কারণেই পলার সকল নিকৃষ্টতা-উশৃঙ্খলতাকে তিনি প্রশ্রয় দিয়েছেন Iকবি সত্তা ছিল যেন এক জটিল অংকের সমীকরণ Iকবির মনের এই জটিল দিকগুলোর সার্থকতা বিশ্লেষণের ভার আমার একার নয় Iআভিজাত্যিক ভাষায় রচিত গুণধর্মী কবির রচিত উপন্যাসটি সবাইকে পাঠ করার অনুরোধ রইলো I