User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
লালসালুঃ রিভিউ ------------------------------------------------------- গ্রামের মক্তবে পড়াশোনা করা মজিদ অভাবের তাড়নায় উর্বর অঞ্চলে প্রবেশ করে। আচমকা প্রভাবশালী হওয়ার উপায় হিসেবে একসময় পরিচিত এক সরকারি কর্মচারীর গ্রাম মহব্বত নগরে যায় সে, যে গ্রামে শুধু সেই সরকারি কর্মচারীর পূর্বপুরুষের কবর ছাড়া তাদের আর কোনো টিকি-টি পর্যন্ত নেই। যেহেতু লোকটা আর সেই গ্রামে যায় না, তাই মজিদ সেখানে গিয়ে সেই কবরকে ঘিরে গড়ে তোলা মিথ্যা মাজার ব্যবসা। মজিদ প্রচার করে, এই মাজার মোদাচ্ছের পীরের মাজার। তো সেই মিছে পীরের মিছে বয়ান আর নাটকীয়ভাবে মহব্বতনগরে প্রবেশের মাধ্যমে সে তার প্রভাব বিস্তারের জাল বিছিয়ে ফেলে। ক্ৰমে গ্রামের অন্যান্য প্রভাবশালীর সান্নিধ্যে থেকে নিজের প্রভাবশালিত্ব ফলাতে শুরু করে। আর প্রতিনিয়ত গ্রামের মানুষদের মিথ্যা ধর্মভয়ে নিত্য তাদেরকে কুসংস্কারচ্ছন্ন করে রাখে । হঠাৎ পাশের গ্রামে নতুন পীর, যে কীনা মজিদের মতোই ভণ্ড,তার আগমনে মজিদ তার অত্র এলাকার স্বীয় কর্তৃত্ব হারানোর ভয়ে আচ্ছন্ন হয়। যেহেতু মজিদও সেই পীরের ন্যয় আরেক ভণ্ড পীর, তাই সে জানত কী করে এই পীরের ভণ্ডামি মানুষদের সামনে উন্মোচিত করে দেয়া যায়। মজিদ ঠিক সেটাই করে। একদিন সময় বুঝে সেই ভণ্ড নতুন পীরেরভণ্ডামী, আরেক মিথ্যা পীরের কথিত প্রধান মুরিদ তথা আগামী দিনের নতুন পীর মজিদ প্রকাশ করে দিয়ে আবার নিজের কর্তৃত্ব কৃতৃত্বের সাথে সামলে নেয়। এমনকি অত্র গ্রামের আরেক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব খালেক ব্যাপারীর বউ যখন মজিদের উপর অনাস্থা প্রকাশ করে, তখন মজিদ নাটকীয়ভাবে খালেক ব্যাপারীকে দিয়ে তার বউকে তালাক দেওয়ায়। অন্যদিকে, মজিদ বুঝতে পেরেছিল, শিক্ষার আলোর জোরে তার ভণ্ডামী দু'দন্ডও টিকবে না। সে কারণেই মোদাব্বের মিয়ার ছেলে আক্কাছ যখন গ্রামে স্কুল তৈরীর করার মতো উত্তম প্রস্তাব বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করার ব্যাপারে গ্রামের হোমড়াচোমড়া মানুষদের সামনে বিষয়টার গুরুত্ব তুলে ধরে, তখনই কুটকৌশলী মজিদ তার এই প্রস্তাব সম্পূর্ণ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে। সে একদম সরাসরি আক্কাছের দাড়ি নেই কেন সেই ব্যাপারে প্রশ্ন তোলে, ধর্মভীরু আর দশটা গ্রামের মানুষের কাছেও বিষয়টা ভালো ঠেকেনি। তাই তারা আক্কাছ-কে পরবর্তীতে আর কথা বলার সুযোগই দিল না, ফলে শিক্ষার প্রদীপ সেখানেই নিভে গেল। স্কুল আর তৈরী করা হলো না । শুধু তাই নয়, মজিদ তার ব্যক্তিগত জীবনেও তার কুটকৌশল প্রয়োগ করে। সন্তান কামনার দোহাই দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে অল্পবয়সী জমিলাকে ঘরে তোলার মাধ্যমে তার কুৎসিত মানসিকতা সম্পর্কে আঁচ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এই জমিলাই তার মনে ভয় ধরিয়ে দেয় তার অস্তিত্ব সম্পর্কে। তাই একেও শাস্তি দিতে ভুল করে না মজিদ। তারপরেও জমিলারকৈশোরিক চপলতার দরুণ, মজিদের কথিত মাজার জামলার মনে ভয় ধরায় না, বরং ঔদ্ধত্য প্রকাশ পায়। জমিলা যেন ঠিক নিকষ-কালো, অন্ধকার কুসংস্কারচ্ছন্ন সমাজের আলোর প্রতীক। মজিদ হতবিহবল হয়ে পড়ে। কেননা বাইরের শত্রুর সাথে লড়াই করা যায়, কিন্তু ঘরের শত্রুর সাথে লড়াই করা যেমন কঠিন, তেমনি কঠিন সেই লড়াইয়ে জয় ছিনিয়ে আনা। হঠাৎ এই সমৃদ্ধশালী গ্রামে শিলাবৃষ্টির দরুণ ফসল নষ্ট হলে, গ্রামের মানুষদের দুর্যোগ ঘনিয়ে এলে মজিদ আবার তার ভয়ের মন্ত্রণা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কাজ হয় না। মজিদ ভয় পায়, সে কি তার প্রভাবশালিত্ব হারাতে যাচ্ছে?
Was this review helpful to you?
or
I am a student of English literature. This novel is included my masters syllabus of the transcreation of naming Tree Without Roots. Actually, told in Syed Walimullah's simple, idiomatic and occasionally lyrical English, Tree Without Roots is imperative reading for anyone interested in knowing the Bengali mind and the impact of religion and superstition on the rural populace.
Was this review helpful to you?
or
লালসালু। এটি একটি সামাজিক সমস্যামূলক উপন্যাস। লেখক সৈয়দ ওয়ালি উল্লাহ। . উপন্যাসে দেখা যায়, মজিদ নামে একজন ভণ্ড ধর্ম ব্যবসায়ীকে। গ্রামবাসীর সরলতা ও ধর্ম ভীরুতার সুযোগ নিয়ে এই ভণ্ড ধর্মব্যবসায়ী গ্রামে আস্তানা গাড়ে। এবং গ্রামে ব্যাপকভাবে নিজের প্রভাব বিস্তার করে। . মজিদ ভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ। দুবেলা ঠিকমতো খেতে না পেয়ে ওই গ্রামে হাজির হয়। . তার গ্রামে প্রবেশটা ছিল নাটকীয়। গ্রামবাসীকে দেখিয়ে দেখিয়ে রাস্তার ধারে নামাজ পড়ার ভান করছিল সে। যেনো খুব আল্লাহ ভক্ত মানুষ। . যাহোক। গ্রামে প্রবেশ করেই সে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে দেয়। ঝোপঝাড় ওয়ালা একটা কবরস্থানকে সে পীরের মাজার বলে ঘোষণা দেয়। এরপরে ওই তথাকথিত মাজারে আস্তানা গেঁড়ে বসে। এরপরে সে চেষ্টা করে গ্রামের মানুষকে নামাজী করে তুলতে। হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে, সে সুন্নতে খৎনার ওপরে জোর দেয়। একদিন একটা পনেরো বছর বয়সের বালককে ধরে তাকে খৎনা দেয়। বালকটি যখন কান্নাকাটি করে বলছিল, তার প্রাপ্ত বয়স্ক বাবারও খৎনা হয়নি, তখন মজিদ ওই বালক এর বাবারও খৎনা দিয়ে দেয়। . এতো গেল মজিদ এর হাস্যকর দিক।কিন্তু মজিদ একই সাথে নিষ্ঠুর ও বটে। ধর্মের দোহাই দিয়ে একজন মানুষের মনে দারুণ অনুশোচনার সৃষ্টি করে এবং জনসম্মুখে অপমান করে তাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয় সে। সে একজন সন্তান প্রত্যাশী মাকে তার স্বামী কর্তৃক তালাক দেয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করে এবং সফল হয়। গ্রামের কর্তা ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। ধর্মকে কাজে লাগিয়ে গ্রামের অন্যতম ধনী এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হয় সে। . নিজে দুটো বিয়ে করে। মানে, একজন ভণ্ড ধর্ম ব্যবসায়ী যা যা করতে পারে। তার সবই সে করেছে বলা যেতে পারে।
Was this review helpful to you?
or
SUPERB
Was this review helpful to you?
or
Adorn এর এই বই প্রচ্ছদ আশানুরুপ নয়!
Was this review helpful to you?
or
A Masterpiece.
Was this review helpful to you?
or
লালসালুঃ রিভিউ ------------------------------ গ্রামের মক্তবে পড়াশোনা করা মজিদ অভাবের তাড়নায় উর্বর অঞ্চলে প্রবেশ করে। আচমকা প্রভাবশালী হওয়ার উপায় হিসেবে একসময় পরিচিত এক সরকারি কর্মচারীর গ্রাম মহব্বত নগরে যায় সে, যে গ্রামে শুধু সেই সরকারি কর্মচারীর পূর্বপুরুষের কবর ছাড়া তাদের আর কোনো টিকি-টি পর্যন্ত নেই। যেহেতু লোকটা আর সেই গ্রামে যায় না, তাই মজিদ সেখানে গিয়ে সেই কবরকে ঘিরে গড়ে তোলা মিথ্যা মাজার ব্যবসা। মজিদ প্রচার করে, এই মাজার মোদাচ্ছের পীরের মাজার। তো সেই মিছে পীরের মিছে বয়ান আর নাটকীয়ভাবে মহব্বতনগরে প্রবেশের মাধ্যমে সে তার প্রভাব বিস্তারের জাল বিছিয়ে ফেলে। ক্রমে গ্রামের অন্যান্য প্রভাবশালীর সান্নিধ্যে থেকে নিজের প্রভাবশালিত্ব ফলাতে শুরু করে। আর প্রতিনিয়ত গ্রামের মানুষদের মিথ্যা ধর্মভয়ে নিত্য তাদেরকে কুসংস্কারচ্ছন্ন করে রাখে। হঠাৎ পাশের গ্রামে নতুন পীর, যে কীনা মজিদের মতোই ভণ্ড,তার আগমনে মজিদ তার অত্র এলাকার স্বীয় কর্তৃত্ব হারানোর ভয়ে আচ্ছন্ন হয়। যেহেতু মজিদও সেই পীরের ন্যয় আরেক ভণ্ড পীর, তাই সে জানত কী করে এই পীরের ভণ্ডামি মানুষদের সামনে উন্মোচিত করে দেয়া যায়। মজিদ ঠিক সেটাই করে। একদিন সময় বুঝে সেই ভণ্ড নতুন পীরের ভণ্ডামী , আরেক মিথ্যা পীরের কথিত প্রধান মুরিদ তথা আগামী দিনের নতুন পীর মজিদ প্রকাশ করে দিয়ে আবার নিজের কর্তৃত্ব কৃতৃত্বের সাথে সামলে নেয়। এমনকি অত্র গ্রামের আরেক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব খালেক ব্যাপারীর বউ যখন মজিদের উপর অনাস্থা প্রকাশ করে, তখন মজিদ নাটকীয়ভাবে খালেক ব্যাপারীকে দিয়ে তার বউকে তালাক দেওয়ায়। অন্যদিকে, মজিদ বুঝতে পেরেছিল, শিক্ষার আলোর জোরে তার ভণ্ডামী দু'দন্ডও টিকবে না। সে কারণেই মোদাব্বের মিয়ার ছেলে আক্কাছ যখন গ্রামে স্কুল তৈরীর করার মতো উত্তম প্রস্তাব বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করার ব্যাপারে গ্রামের হোমড়াচোমড়া মানুষদের সামনে বিষয়টার গুরুত্ব তুলে ধরে, তখনই কুটকৌশলী মজিদ তার এই প্রস্তাব সম্পূর্ণ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে। সে একদম সরাসরি আক্কাছের দাড়ি নেই কেন সেই ব্যাপারে প্রশ্ন তোলে, ধর্মভীরু আর দশটা গ্রামের মানুষের কাছেও বিষয়টা ভালো ঠেকেনি। তাই তারা আক্কাছ-কে পরবর্তীতে আর কথা বলার সুযোগই দিল না, ফলে শিক্ষার প্রদীপ সেখানেই নিভে গেল। স্কুল আর তৈরী করা হলো না। শুধু তাই নয়, মজিদ তার ব্যক্তিগত জীবনেও তার কুটকৌশল প্রয়োগ করে। সন্তান কামনার দোহাই দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে অল্পবয়সী জমিলাকে ঘরে তোলার মাধ্যমে তার কুৎসিত মানসিকতা সম্পর্কে আঁচ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এই জমিলাই তার মনে ভয় ধরিয়ে দেয় তার অস্তিত্ব সম্পর্কে। তাই একেও শাস্তি দিতে ভুল করে না মজিদ। তারপরেও জমিলার কৈশোরিক চপলতার দরুণ, মজিদের কথিত মাজার জমিলার মনে ভয় ধরায় না, বরং ঔদ্ধত্য প্রকাশ পায়। জমিলা যেন ঠিক নিকষ-কালো, অন্ধকার কুসংস্কারচ্ছন্ন সমাজের আলোর প্রতীক। মজিদ হতবিহবল হয়ে পড়ে। কেননা বাইরের শত্রুর সাথে লড়াই করা যায়, কিন্তু ঘরের শত্রুর সাথে লড়াই করা যেমন কঠিন, তেমনি কঠিন সেই লড়াইয়ে জয় ছিনিয়ে আনা। হঠাৎ এই সমৃদ্ধশালী গ্রামে শিলাবৃষ্টির দরুণ ফসল নষ্ট হলে, গ্রামের মানুষদের দুর্যোগ ঘনিয়ে এলে মজিদ আবার তার ভয়ের মন্ত্রণা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কাজ হয় না। মজিদ ভয় পায়, সে কি তার প্রভাবশালিত্ব হারাতে যাচ্ছে?
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইঃ লালসালু লেখকঃ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ , আনিসুজ্জামান (Editor) প্রকাশনীঃ অ্যাডর্ন পাবলিকেশন বইয়ের ধরনঃ চিরায়ত উপন্যাস মুদ্রিত মুল্যঃ ১৫০৳ #রিভিউঃ “লালসালু” উপন্যাসের কাহিনি গড়ে ওঠেছে মজিদ নামের একজন ভণ্ড হুজুর ও তাঁর মাজার ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। গ্রামবাসীর সরলতা ও ধর্মবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে মজিদ প্রতারনার জাল বিছিয়ে কিভাবে নিজের শাসন-শোষণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে তার প্রত্যক্ষ বিবরণই “লালসালু”। শ্রাবণ মাসের শেষের দিকে এক মধ্যাহ্নে মহব্বতনগর গ্রামে মজিদের নাটকীয় প্রবেশ সকলকে বিস্মিত করে। মাছ শিকারের সময় তাহের ও কাদের দেখে যে, একজন অচেনা-অপরিচিত লোক মতিগঞ্জ সড়কের ওপর মোনাজাতের ভঙ্গীতে পাথরের মত ঠায় বসে আছে। পরে দেখা যায় ওই লোকটিই মাতব্বর খালেক ব্যপারির বাড়ির ওঠানে সমবেত মানুষকে তিরস্কারের সুরে বলছে, “আপনারা জাহেল, বেএলেম, আনপড়াহ। মোদাচ্ছের পীরের মাজারকে আপনারা এমন করি ফেলে রাখছেন?” এক অলৌকিক দেখা সপ্নের অবতারণা করে করে মজিদ জানান দেয় কেন সে এতদূর হতে এইগ্রামে এসেছে। তাঁর সপ্নের বিবরণ সকলের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ফলে কবরের জঞ্জাল দ্রুত পরিস্কার হয়ে যায়। লালসালুতে ঢেকে দেয়া কবরটি মাজারে পরিণত হয়ে যায়। ধীরে ধীরে মাজার শক্তিতে পরিণত হয় মজিদের। সেখান থেকে তাঁর আয় বাড়তে থাকে। ঘরবাড়ি-জমিজমার মালিক হয় সে। বিয়ে করে সংসারী হয়। নিজের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সমাজের প্রধান ব্যক্তি হয়ে ওঠে। যেখানে তাঁর মনে হয়েছে তাঁর স্বার্থে আঘাত লেগেছে সেখানেই সে কূট-কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। মজিদের শক্তির বিস্তৃতিতে এগিয়ে গেছে উপন্যাসের কাহিনি। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন সমাজসচেতন কথাশিল্পী সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ। “লালসালু” তাঁর অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা। উপন্যাসটির ভিন্ন কাঠামো ও ভাষা-ভঙ্গীতে এক নতুন ঘরানার জন্ম দিয়েছেন লেখক। পড়ে দেখতে পারেন বইটি। ভাল লাগবে আশা করি।
Was this review helpful to you?
or
"এরপর আর কারো মুখে কথা যোগায় না। সামনে ক্ষেতে ক্ষেতে ব্যাপ্ত হয়ে আছে ঝরে পড়া সোনার ধান। চোখে ভাব নেই। বিশ্বাসের পাথরে যেন খোদাই সেই চোখ।" . বিশ্বাস, ভাষা হারা অনেকগুলো নিঃস্ব চোখ। আর একজন মজিদ। পাশে লালসালুতে আবৃত অজ্ঞাত কারো কবরে শায়িত মোদাচ্ছের পীর। সবকিছুকে একসুতোয় গেঁথে আসুন একটা মালা বানাই। মালার নাম যদি হয় লালসালু তবে কারখানা হবে মহব্বতনগর আর কারিগর সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। . নামে নগর থাকলেও নগর সভ্যতার কানাকড়িও এসে পৌঁছেনি 'মহব্বতনগর'গ্রামে। এসেছিলেন মজিদ। সেই গারো পাহাড় থেকে। শিকারি দৌলতখানের বাৎলে দেয়া পথ কখন যেন মোদাচ্ছের পীরের স্বপ্নে দেয়া ডাক হয়ে গিয়েছে সেটা খুব সম্ভব মজিদ নিজেও জানেনা। গ্রামের অশিক্ষিত মানুষের কাছে ধর্মের আলো বিলিয়ে দেয়ার নামে শুরু করে অনবদ্য একটি ব্যবসা। মানুষ না অনেকটা দেবদূত হয়েই মজিদ সবাইকে নিয়ে আসে লালসালুর ছায়াতলে। ধীরে ধীরে বাড়ে তার ক্ষমতা। স্কুলের কথা ভুলিয়ে রাখে পাকা মসজিদের আশায়। নিঃসন্তান মহিলাকে বেঁধে রাখে মাজারের পাশে। আর সারাদিনের পরিশ্রম শেষে জমিলা যখন ঘুম তখন মজিদের মনে এটা জিনের আছর। আর সবশেষে উপরে আল্লাহ, নিচে অস্তিত্বের অন্যপাশে থাকা মোদাচ্ছের পীরের হাত ধরে মজিদ বেঁচে থাকে ঝরে যাওয়া সোনালী ধানের আক্ষেপ আর কঙ্কালসার কিছু মানুষের বিশ্বাসের গভীরে। .... পাঠ প্রতিক্রিয়া - শুরুতেই বলা রাখা ভালো লালসালু নিছক কোন উপন্যাস না। উপন্যাসের কেন জীবনের দর্পণ সে প্রশ্নের জবাব দিতে হলে আপনার লালসালু কে অবশ্যই একটি আদর্শ উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। অসাধারণ ধর্ম ব্যবসা, ব্যবসার আড়ালে থাকা ছোট গল্প, মজিদের পিতৃবাসনা, একজন বিবাহিতা নারীর মা হবার আকুতি, প্রতীবাদী কিংবা সাংসারিক বাঙালি নারী সবমিলিয়ে গ্রামীণ সমাজচিত্রের এক কমপ্লিট প্যাকেজ। আমার মতে এমন একটা বই প্রত্যেকের শুধু এজন্যই পড়া দরকার কারণ, আধুনিক শহুরে সমাজ কখনোই জানবে না সভ্যতার বেঁচে থাকার জন্য একজন আক্কাস, একজন মজিদ কিংবা মহব্বতনগর গ্রাম কতকিছু করেছে। জানবে না একটুকরো লালসালু'র কতবড় ক্ষমতা থাকতে পারে। . এক নজরে - বই - লালসালু লেখায় - সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সম্পাদনায় - আনিসুজ্জামান প্রকাশে - এডর্ন পাবলিকেশন দাম - ১৫০/- (নেট থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী) রেটিং - ৪.৫/৫
Was this review helpful to you?
or
প্রতিচ্ছবি কিন্তু কখনো কখনো আর বিমূর্ত থাকে না। ভাষা পায় মূলবস্তুর গতি-প্রকৃতির সাথে তাল মেলাতে গিয়ে। একি, আমি নিজেই দেখি কঠিন করে ফেলছি আমার লেখাকে ?? আসলে আমার আর কি দোষ, এই সমাজটাই যে ফর্মালিটি নামক একটা ভড়ঙে আবৃত। সহজ কথা সহজভাবে বলতে শেখায় না। আর ঠিক সেইদিক থেকে 'লাল সালু' একটা অসাধারণ লেখা। কারন, লেখক সহজ কথা সহজভাবে বলেই দেখিয়েছেন আমাদের অসুস্থ সমাজকে। যেখানে মানুষের বিশ্বাস হচ্ছে ব্যবসার প্রধান হাতিয়ার। আর ব্যবসাটি হচ্ছে ধর্মব্যবসা !!! আজও কিন্তু আমার দেশ এই রোগ থেকে মুক্তি পায় নি। বরং এই রোগ আরও চেপে ধরেছে আমাদের অস্থি মজ্জা। মানুষের সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে ফুলেফেঁপে ওঠা লোকেদের দেখি আমার চারপাশে। ওরা সব স্বপ্নে পাওয়া মজিদ !! লেখায় দেখি, মেরুদণ্ডহীন লোকেদের ধর্মানুভুতি আর চতুর লোকেদের পয়সা লোটা। প্রতারণাটুকু বাদ দিলে পুঁজিহীন ব্যবসাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল 'ধর্ম ব্যবসা'। লাল সালুতে তো শুধু ঐ নিরব মাজারটিই ঢাকা না, ঢাকা আমাদের বোধ-বুদ্ধিও। ক'টা লোক যাইনি আমরা অসুখে-বিসুখে ডাব পড়া, পানি পড়া আনতে ?? ক'টা লোক মানত করিনি মাজারে মোমবাতি দিয়ে লাল সালুতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ?? এবার বলুন, অসুখটা কার ?? সমাজের ?? আমি বলব, নাহ। অসুখটা আমাদের। আমাদের বিশ্বাসের, আমাদের জ্ঞানের, আমাদের লৌকিকতার। আর বইটির রিভিউ করতে গেলে বলব-- খোলা চোখে দেখা যায় অনেকখানি...
Was this review helpful to you?
or
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ এর প্রথম উপন্যাস লালসালু। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ এমন একটি পটভূমি বেছে নিয়েছিলেন তার প্রথম উপন্যাসের জন্যে যার অবস্থান সমসাময়িকতা থেকে ও প্রত্যক্ষতা থেকেও দুরের। গ্রাম প্রধান বৃহত্তর দেশ ও সমাজ আমাদের। বেশির ভাগ লোকই গ্রামে থাকে। সেখানেই তাদের বাচা মরা এবং জীবন যাপন। তাই এই দুঃসাহসী লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ তার পটভূমি চরিত্র এবং বিষয় সব গ্রহণ করেছেন সেই গ্রামীন জীবন থেকে। তার উপন্যাসের পটভূমি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল এবং তার সমাজ চরিত্র , একদিকে কুস্নস্কারচ্ছন্ন ধর্মভীরু শোষিত দরিদ্র গ্রামবাসী , অন্যদিকে শঠ , প্রতারক ধর্ম ব্যবসায়ী এবং শোষক ভূস্বামী । আর তার উপন্যাসের বিষয় যুগ যুগ ব্যাপী কুসংস্কার ,অন্ধবিশ্বাসী ও ভীতির সঙ্গে সুস্থ জীবনাকাঙ্খার দ্বন্দ্ব। লালসালুতে প্রত্যক্ষ বাস্তবতাই প্রধান। লেখক আমাদের এমন এক গ্রামীন সমাজে নিয়ে যান যেখানে যুগ যুগ ধরে মানুষের মনের চারিদিকে ঘিরে আছে অসম্ভব শক্ত অথচ অদৃশ্য একটি বেষ্টন। মানুশ যেখানে সবকিছুই ভাগ্য বলে মেনে নেয়। সবকিছুতেই দৈবশক্তি দেখতে পায়। আর তাতে ভয় পায় এবং শ্রদ্ধা ভক্তিতে আপ্লুতো হয়ে পড়ে। কাহিনী যতই উম্নোচিত হতে থাকে ততই দেখা যায় কেবলই কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাস। আর ভীতি ও আত্মসমর্পণ। বিরুদ্ধে যায়না কেউ। গেলেই ধ্বংস অনিবার্য হয়ে ওঠে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ দেখান যে এ এমনি সমাজ যার পরতে পরতে কেবলই শোষণ আর শাসন। দেশের , মনের এবং সামগ্রিক জীবনের। প্রতরনা ,শঠতা আর শাসনের জটিলতা এবং সংখ্যাবিহীন শিকড় দিয়ে জীবনের প্রানরস কেবলই শুষে নেয়া হয়। আনন্দ , প্রেম ,প্রতিবাদ , সততা এই সব বোধ বুদ্ধি ঐ অদৃশ্য দেয়াল ঘেরা সমাজের ভেতর প্রায়শই গ্রাসিত হয়ে হজম হয়ে যায়। আবার এই সমাজের একটি বিপরীত দিক ও আছে। আর তা হলও মানুষের প্রান ধর্মের দিকটি। সেটা কি... মানুশ ভালোবাসে, স্নেহ করে, নিজের সভাবিক ইচ্ছা ও বাসনার কারনেই সে নিজেকে আলোকিত ও বিকশিত করতে যায়। এমতাবস্তায় সংস্কারের ও অন্ধবিশ্বাসের , প্রতরনার এবং শোষণের সামাজিক অবস্থানটি যদি বাস্তব হয় , তাহলে তার বিরুদ্ধে মানবিক প্রানধর্মের স্বাভাবিক উত্থান জনিত দ্বন্দ্বটি অধিকতর বাস্তব।সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ এই দ্বন্দ্বময় সামাজিক বাস্তবতার চিত্রই একেছেন তার লালসালু উপন্যাসে