User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Masterpiece to the power infinity!
Was this review helpful to you?
or
Nice book
Was this review helpful to you?
or
রিভিউ::: মিথ্যা মানুষ অথবা স্বর্গ মানুষ . এই গল্প একজন বিপ্লবীর, এই গল্প একজন ধর্মপ্রচারকের, এই গল্প একজন ডাইনির, এই গল্প একজন গৃহিণীর, এই গল্প একজন সমকামীর, এই গল্প একজন স্বমৈথুনীর, এই গল্প একজন প্রেমিকের, এই গল্প একজন আশাহতের, এই গল্প একজন দার্শনিকের, এই গল্প একজন নির্বোধের, এই গল্প একজন ব্যক্তির, এই গল্প একটি পরিবারের, এই গল্প একটি সমাজের, এই গল্প একটি রাষ্ট্রের, এই গল্প একটি মহাদেশের, এই গল্প পৃথিবীর; এটি জাদুর গল্প, এটি বাস্তব সত্য; এটি মিথ থেকে বাস্তব হয়েছে, অথবা বাস্তব থেকে মিথ- এই গল্প আমাদের বাংলা ভাষায় রচিত শ্রেষ্ঠ একটি উপন্যাস; রচয়িতা- বাংলা ভাষারই এক শ্রেষ্ঠ সন্তান- সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। কতটা শক্তিমান হলে এমন একটি উপন্যাস লেখা যায়! বা ভাষার ওপর কতটা বুৎপত্তি অর্জন হলে! সে যদি কোন এক বিশেষ ভাষা হত তবু না হয় বিস্মিত হবার তেমন কিছু থাকত না। কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের মাতৃভাষায় স্বচ্ছন্দ, দ্বিধাবোধ করে না ইংরেজিতে, সংকোচ নেই যারউর্দুতে, ফার্সিতে যে পারদর্শি, সংস্কৃতে সিদ্ধহস্ত, আরবীতে অনর্গল, সেই তার কোন রচনা কৌতুহলের চূড়ান্তে পৌঁছাবেই- এ আর আশ্চর্যের কী; এবং যখন সবগুলোর সারনির্যাসের সযত্ন প্রস্তুত নিদর্শন একই রচনায় উপুড় করে ঢেলে দেন, আর নয় সেটা সাংবাদিকের ডকুমেন্টারি কিংবা প্রাবন্ধিকের অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের গলদ্ঘর্ম, অথবা লেকচারারের একঘেয়েমিভরা কোন বাচালতা বা ফিকশন লেখকের স্রেফ গাঁজাখোরির সর্বশেষ কোন সংস্করণ- তাহলে তো একটু ঘেঁটে দেখতেই ইচ্ছে করে কি আছে এই বইয়ে! এই গল্প আমাদের খুবই পরিচিত, ধর্মপীর উপমহাদেশে বিরল কোন বিষয় নয়, আর যারা বাংলা সাহিত্যের মনোযোগি পাঠক তাদের কাছে তো নয়ই, কারণ বাংলা সাহিত্যের আরেক স্তম্ভপ্রতীম কথা সাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর অনেক আগেই লালসালু লিখে বাংলা মাত করে দেয়ার কথা ভোলার নয়; কিন্তু লালসালু থেকে এর বিস্তর পার্থক্য; যদিও ওয়ালীউল্লাহর লালসালু প্রশ্নাতীতভাবে সফল আর পাঠকপ্রিয়, শিল্পমানও পরীক্ষিতভাবে উত্তীর্ণ; কিন্তু লালসালু অসম্পূর্ণ না হলেও পূর্ণাঙ্গ নয়- অনেকেই জানে না, আর যারা অলীক মানুষ পড়ে নি তারা তো নয়ই, কেবল তখনই জানতে পারবে যখন কেউ পড়ে উঠবে ঐ একই নায়ের মাঝিকে দিয়ে নদীর বদলে সমুদ্র পার হবার মত কোনরচনা- অলীক মানুষ- যা লালসালুতে পরিচিত বৃক্ষরূপে কিন্তু অলীক মানুষে মহীরুহে। লালাসালু অবশ্যই বাংলা ভাষায় লিখিত এক অবিস্মরণীয় সংযোজন। কিন্তু সেখানে শুধুই একজন আব্দুল মজিদের ভণ্ডামো দেখানো হয়েছে, যে কিভাবে একজন মানুষ পেটের দায়ে নিজেকে পীর দাবি করে বসে, একই ধরণের উপন্যাস আহমদ ছফাও একটি লিখেছেন ‘একজন আলী কেনানের উত্থান পতন’- এখানেও দেখানো হয়েছে অধিকাংশ পীরগুলোর কচুরিপানার মত মাথা গজানোর চিত্র, যেটা বাংলাদেশে খুবই পরিচিত ঘটনা, কিন্তু এসব উপন্যাসের মূল চরিত্রগুলোকে শুধু ব্যঙ্গ করেই উপস্থাপন করা হয়েছে, মানবিক দিক যতটুকু দেখানো হয়েছে ওটা কলমের টানেই বোধহয় এসে গেছে, আলাদা করে ভেবেছেন বলে মনে হয় না; কিন্তু সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজই কেবল দেখিয়েছেন তারাও মানুষ, ফেরেশতাও না, আবার শয়তানও না; তারা আমাদেরই মত মানুষ, আমাদের মতই তারা সমাজে বসবাস করে, সমাজের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে এবং আমাদের মতই তারাও কোন না কোন মতাদর্শে জড়িয়ে পড়ে এবং স্বাভাবিকভাবে সেটাতে নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করে, কিন্তু সেটা ধর্মীয় মতাদর্শ বলে, আর বিশেষ করে ইসলামী মতাদর্শ বলেই আলাদা একটি লোগো সেটিয়ে দিই গায়ে- পীর; আমরাই তাদেরকে নিজেদের কল্পনার রঙে আলাদাভাবে অতিরঞ্জিত করে পীর নামে ডাকি, আর শুধু ডেকেই ছাড়ি না, কখনো কখনো অলৌকিক কিছু দেখানোর সত্যতা দাবিও করে বসি, যেটা বাস্তবিক প্রকৃতিরই কোন এক কাকাতালীয় ব্যাপার স্যাপার, সেটা তার জন্য নয় যতটুকু তার চেয়ে বেশি নিজেদের জন্য, কিন্তু এইভাবেই একসময় আমাদের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তারা নিশ্চুপ থাকে এবং কর্মকা- দেখতে থাকে, আর শেয়াল মামার মত আওড়াতে থাকে- গোলে মালে যাক কয়েকদিন...। তিনি, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এই চলচ্চিত্রই শুধু দেখাননি, দেখিয়েছেন প্রায় একশ বছরের রাজার যাওয়া আসার কাহিনী, প্রজাদের মার খেতে খেতে ঘুরে দাঁড়ানোর উপখ্যান, ধর্মীয় আস্ফালনের প্রকৃত নিম্নগামীতা, রাজনীতির সাপলুডু, এবং নৈরাজ্যবাদীতার সত্যিকারের অর্থহীনতা; আর তাই এই উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র পরাবাস্তব থেকে বাস্তব হয়ে আবার মিশে যায় মিথে, পরিচিতদের গল্প হয়েও যেন তা অপরিচিত, প্রতিটি মানুষই না স্বর্গ না মিথ্যা মানুষ হয়ে হয়ে যায় অলীক মানুষ। কেননা এইসব চরিত্র যদি মিথের হয়ে থাকে তো তারা মিথ্যা মানুষ, আর যদি বাস্তব থেকে এসে থাকে তো স্বর্গ মানুষ; আর এই দুইয়ে মিলেই অলীক মানুষ, অলীক মানে মিথ্যা বা অবাস্তব যেমন হয়, সতঃসিদ্ধ বা স্বর্গও হয়। আর সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ শুধু একজন পীরের অবাস্তব কল্পকাহিনীই বয়ন করেন নি, সাথে সাথে হাজির করেছেন আরেক নাস্তিবাদি চেতনায় বিশ্বাসী পুরুষকে; যে কি না পীরেরই ঔরসজাত; কিন্তু অবিরাম জ্ঞানার্জনের দুর্মদ কৌতুহল তাকে বানিয়ে দেয় সত্যিকারের প্রকৃতিবাদী; যে আত্মজিজ্ঞাসায় মত্ত- কে আমি, কেন আমি, কোথায় আমির প্রশ্নে। এইভাবে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ দুই আপাত বিপরীত চরিত্রের পারিপার্শ্বিক ঘটনায় জড়িত প্রাণি মানুষকে তুলে ধরেন আমাদের সামনে; পীর- বাবা- বদিউজ্জামান, মৌনি ধ্যানে দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরের পর কাটিয়ে চরম সত্যে পৌঁছে যাবার যাত্রায় ওয়াদি না হয়ে বদিই হয়ে যান; কিন্তু অপর দিকে ছেলে- শফিউজ্জামান, প্রকৃতি থেকে জ্ঞান অর্জন করতে করতে এক সময় ধর্মের অসাড়তা নিয়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে হয়ে পড়ে ধর্মহীন। এই যে সম্পূর্ণ বিপরীত দুটি চরিত্রকে এক সাথে একই রচনায় লেখক স্থান দিলেন, দিলেন বেশ বড়সড় করেই প্রায় চারশ পৃষ্ঠায়, যখনই কারু কথা বলেছেন, বলেছেন একেবারে আত্মিক বন্ধন বজায় রেখে, যেন নিজেকে তাদের স্থানে বসিয়ে, যে সত্তা একবার ইহজাগতিকতায় মত্ত হতে চায় আবার সেই সত্তায় কেমন সন্যাসি হয়ে পড়ে পারলৌকিকতায়, কীরকম মানবিক হয়ে উঠেছে তা আশ্চর্যের বৈকি। কেননা, লেখক যদি শুধু পীরের বন্দনা করতেন, বলে যেতেন তারই যত সব কিচ্ছাকাহিনী; কিংবা নৈরাজ্যবাদিতায় বিশ্বাসী কোন মাতালকে বসিয়ে দ্রোহিতা দেখাতে দেখাতে নিয়ে যেতেন রসাতলে- তখন না হয় বলা যেত বা আমরা অনুমান করে নিতাম লেখক কাকে সাপোর্ট করে। কিন্তু তিনি এমন ভাবে বর্ণনা করেছেন যে আমরা লা জবাব হয়ে যাই; আমাদের বলবার মত কোন ভাষা থাকে না। যখনই কোন ঘটনা বর্ণনা করেন, পীরের ক্ষেত্রে, তা কেমন মায়ার মত বিভ্রম, সম্ভাবনাহীনতার মত অলৌকিক হয়ে ওঠে; আবার যখন কোন নরহত্যার মত কাজকে অসীম নির্লিপ্ততায় বর্ণনা করেন সাহসী হয়ে তা কেমন যুক্তিযুক্ত মনে হয়। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের জিৎটা এখানেই। তার কোন চরিত্রই গৌণ নয়। সবাইকে সমান গুরুত্ব দিয়ে তিনি লেখেন। আর এত বেশি বিচিত্র চরিত্রের অবতারণা করা হয়েছে যে মনে হয় না এটা একজন মানুষের কল্পনাসৃষ্ট রচনা; বরং বলতে লোভ হয় যেন তিনি একজন ঈশ^র, অকৃপণ তার সৃষ্টিজগতে সবাই স্থান পাবে; বঞ্চিত নয় কেউ এ জগতে আগমনের সুযোগ থেকে; জগতের আলো বাতাস মাটি পানি শাদার সাথে সাথে কালোও ব্যবহার করতে পারবে নির্দ্বিধায়- আর তাই এ গল্প একজন বিশেষ ব্যক্তি বা সমাজ বা কালকে ধারণ করে না তা হয়ে যায় সবার গল্প। আমি কীভাবে ভুলব রুকুর মত আমার এক চঞ্চল কিশোরি প্রেমিকার বিয়ে কোন বিকলাঙ্গ লালাঝরা মানুষের সাথে! ও ঈশ্বর! কল্পনা করতেও কষ্ট হয়। আবার কীভাবেই বা গোপন করব একজন বিকলাঙ্গ মানুষের আমাকে ঘৃণাভরে ত্যাগ করার দুঃখ! কী নেই এতে! ভাষাজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, যুদ্ধ, প্রেম, কবিতা, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, জাদু, ধর্মালোচনা- এত সব বিষয়ের সমাহার আর কোন বাংলা উপন্যাসে আছে কি না আমার জানা নেই। আর এত সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ অন্য কারু রচনা থেকে পাওয়া বোধহয় কষ্টকর। অথবা লেখক বিশ্বাস করেন অর্থহীনতায়। অলীক মানে তো অর্থহীনও। তাই সব কিছু সত্য হলেও তার কাছে অলীক হয়ে যায়। অথচ কী প্রবল পুরুষ এই চরিত্ররা। তবু কেমন অর্থহীন তারা। এই উপন্যাসের প্রত্যেকটি চরিত্র শেষমেষ রহস্যময় হয়ে উঠেছে। কারু মনের তলই খুঁজে পাওয়া যায় না ঠিক মত। যে প্রধান দুজনের কথা বলেছেন তাদের কথাই কি সব আমাদের জানা হয়ে যায় উপন্যাস শেষ করে? চারশ পৃষ্ঠা পড়েও মনে হয় কত কথাই না বলা রয়ে গেছে। আর কী এক ধরণের মায়া বা বিভ্রম তৈরি করে। সেই মায়াও তো আরেক অর্থে অলীক। তাই অলীক মানুষ শুধু সত্য মিথ্যার প্রশ্নে দ্বিধান্বিত নয়, শাদা কালো সব মানুষের জন্য তা কেমন মায়ায় আচ্ছন্ন মাতৃগর্ভের মত জ¦লজ¦লে আঁধার, যা শিল্প সাহিত্যের একমাত্র আকর। সুতরাং অলীক মানুষের মৃত্যু নেই। যুগ যুগ ধরে ঠিকে থাকবে। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের জয় হোক।
Was this review helpful to you?
or
'অলীক মানুষ' লেখক- সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ। এই উপন্যাস সম্পর্কে লেখক নিজেই বলেছেন- 'অলীক মানুষ উপন্যাসটা লেখার পেছনে ছিল অগ্রজ গৌরকিশোর ঘোষের প্রণোদনা। মুসলিম জীবন নিয়ে এতকাল যা কিছু লিখেছি তার নির্যাস বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। নিরন্তর সংবাদ লিখতে লিখতে যখন আমার হাত বসে যাওয়ার দশা, ঠিক সে অবস্থায় আর কোনো কিছু না ভেবে আমার মাওলানা দাদা সম্পর্কে লিখতে শুরু করলাম। ফরায়েজি আন্দোলনের প্রবক্তা এই মানুষটি, গ্রাম-গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়ানোটাই ছিল যাঁর কাজ, 'আংরেজ হঠাও' স্লোগান দেওয়া কট্টর মৌলবাদী এই পিতামহটি যে রসকষহীন ছিলেন তা নয়, নানা বৈপরীত্যে গড়া আশ্চর্য এক আকর্ষণীয় চরিত্র।