User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বই: বরণীয় মানুষঃ স্মরণীয় বিচার লেখক: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সুনীল বাবু এখানে ক’জন বরণীয় ব্যক্তিদের স্মরণীয় বিচারের কাহিনী বর্ননা করেছেন। যারা বরণীয়, আজকের যুগে। কিন্তু তাদেরকে তাদের সময়ে সম্মুখীন হতে হয়েছিল এমন করুন বিচারের যাকে অবিচার বলা যায়। আজকে আমরা তাদেরকে তাদের কীর্তির জন্য শ্রদ্ধা করি। কিন্তু সমকালীন সভ্যতা তাদেরকে উপহার দিয়েছিল নির্মম যন্ত্রণা বা মৃ/ত্যু/দ/ণ্ড। যদিও এখানে সবাই কতটা বরণীয় তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। ক্রিস্টোফার কলাম্বাসকে কতটা বরণীয় ও শ্রদ্ধার চোখে দেখবো জানিনা; যে কিনা উপনিবেশবাদের বীজটি বপন করেছিল, নিরীহ ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের মানুষকে দাস বানিয়েছিল। যাইহোক, এখানে যে ক’জন ব্যক্তিদের উল্লেখ আছে তারা সবাই ইতিহাস বিজ্ঞান সাহিত্য সভ্যতায় কোনো না কোনো অবদান রেখেছিলেন— কোনো সন্দেহ নেই। বইতে পশ্চিমের সেই ১২ জন মনীষীর জীবনের ট্র্যাজেডিক কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। এরা হলেন: সক্রেটিস, যীশু খ্রীষ্ট, কবি দান্তে, জোন অব আর্ক, ক্রিস্টোফার কলাম্বাস, দার্শনিক ব্রুনো, বিজ্ঞানী গ্যালিলিও, ওয়াল্টার র্যালে, ডস্টয়েভস্কি্, বায়রন, পল গগ্যাঁ, অস্কার ওয়াইল্ড। এখানে আমি শুধু দু-একজনের কাহিনী হাইলাইট করছি যাদেরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে বরণীয় বা শ্রদ্ধার চোখে দেখি: সক্রেটিস : সক্রেটিসের ঘটনা আমরা কমবেশি সবাই মোটামুটি জানি। আজ আমরা আধুনিক জ্ঞান ও দর্শন বলতে যা বুঝি তা অনেকখানি ঋণী সক্রেটিসের কাছে। কিন্তু প্রাচীন গ্রিস এই মূল্যবান মানুষটিকে মূল্যায়ন করতে পারেনি। তাঁকে মুখোমুখি হতে হয় (অ)বিচারের। সক্রেটিসের একটা জীবনদর্শন ছিল। তিনি জ্ঞানকে আপেক্ষিকভাবে দেখতেন। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করতেন: “আমার কোন জ্ঞান নেই”, “সে-ই জ্ঞানী যে জানে যে তার জ্ঞান মূল্যহীন”। অর্থাৎ যে নিজেই মনে করে যে তার জ্ঞান সর্বশ্রেষ্ঠ, সে কখনো প্রকৃত জ্ঞানী হতে পারেনা। মহাবিজ্ঞানী নিউটন ও বলেছিলেন, আমি জ্ঞানের মহাসমুদ্রসৈকতে কয়েকটি নুড়ি পাথর কুড়িয়েছি মাত্র। সক্রেটিসের এই মতবাদ বা দর্শন তৎকালীন প্রভাবশালী বুর্জোয়া মহল পছন্দ করত না। সক্রেটিসকে সত্তর বছর বয়সে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। তাঁর বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ ছিল তিনটি: দেশের প্রচলিত দেবতাদের উপেক্ষা, নতুন দেবতা প্রবর্তন এবং যুবকদের কলুষিত করার চেষ্টা। তার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগকারী ছিল তিনজন- Meletas, Lycon ও Anytus। তৎকালীন বিচারে কোনো উকিল থাকতো না, আত্মপক্ষ সমর্থন করে সাক্ষ্য দিতে হতো। সক্রেটিসের আদালতে দীর্ঘ জবানবন্দি পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম রচনা। তবে এটি সক্রেটিস লিখেননি। তাঁর শিষ্য প্লেটোর লিখিত। ইংরেজিতে যার নাম Apology. এটি জানার জন্য বইটি পড়ুন। সক্রেটিস ছিলেন অত্যন্ত স্থিতধী, অবিচলিত। মৃত্যুর দিন তিনি ছিলেন অত্যন্ত শান্ত, প্রফুল্ল। তাঁর মৃত্যুর দিন বন্ধু-বান্ধব-শিষ্য হা-হুতাশ করেছে, মূর্ছা গেছে। তবু তিনি ছিলেন নিরাসক্ত। জল্লাদ হেমলক -এর পাত্র নিয়ে এলে তিনি তা পান করে নিলেন। এভাবে এক মহামনীষীর নির্মম অবসান হলো। সক্রেটিস তার জীবনদর্শন ও বাণী লিখে যাননি এক লাইনও। আমরা সেগুলো পাই তাঁর শিষ্যদের মধ্য দিয়ে যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্লেটো ও জেনোফেন। এই মহামনীষীর একটি চিরন্তন বাণী আমাদের কাছে এখনো মুখে মুখে ফেরে: "???? ???????"। ক্রিস্টোফার কলাম্বাস : যেই মহাদেশ আজ সভ্যতার পরাকাষ্ঠা দেখাচ্ছে, পাশ্চাত্য বিশ্বের মোড়ল হয়ে উঠেছে, সেই ভূখণ্ডটি সভ্য জগতের সামনে আবিষ্কার করেন যিনি, তিনি ইতালিয়ান নাবিক ক্রিস্টোফার কলাম্বাস। তাও আবিষ্কার করেছিলেন ভূল করে! ভারত আবিষ্কার করতে গিয়ে আবিষ্কার করে ফেলেন আমেরিকা। নাম রাখেন West Indies! নানা সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও কলাম্বাস সভ্যতা ও ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তিত্ব কোনো সন্দেহ নেই। ইতিহাসের বিচারে তিনি নির্দোষ নন। উপনিবেশবাদের যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন তার কুফল বহু নিরীহ দেশকে ভোগ করতে হয়েছে। তিনি নতুন কলোনি স্থাপন করে জায়গায় জায়গায় ক্রীতদাস প্রথা চালু করেছিলেন। তবে আবিষ্কারক ও ভ্রমণপিপাসু হিসেবে তিনি ইতিহাসে দখল করে আছেন বিশিষ্ট স্থান। ভারত আবিষ্কার করতে গিয়ে আমেরিকা আবিষ্কার তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। যদিও জীবনের শুরুতে কলাম্বাস অর্জন করেন প্রচুর খ্যাতি ও যশ। তবে জীবনের শেষদিকে পেয়েছিলেন অপমান। যেই রাজা ফার্দিনান্দ ও রানী ইসাবেলার পৃষ্টপোষকতায় তিনি দাপিয়ে বেরিয়েছিলেন সমুদ্র থেকে উপকূলে, তারাই তাকে শেষ সময়ে বন্দী করে বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে। ব্রুনো : আজ আমরা সন্দেহাতীতভাবেই জানি পৃথিবীই সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে। এই তত্ত্বটি প্রথম দাঁড় করিয়েছিলেন মহাবিজ্ঞানী কোপারনিকাস। কিন্তু তিনি এই কথাটি জীবদ্দশায় প্রকাশ করতে সাহস পাননি। কারণ তখন পশ্চিমে প্রবলভাবে আচ্ছন্ন ছিল পুরনো তত্ত্ব ও কুসংস্কারে। ধর্মযাজকেরা ছিল সমাজের দণ্ড-মুণ্ডের কর্তা। তাদের উপর দিয়ে কথা বলা মানেই মৃ/ত্যু/দ/ণ্ডের সামিল। ধর্মীয় বইগুলোতে বলা ছিল সূর্যই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরে। তাই কোপারনিকাস তাঁর তত্ত্বকে সরাসরি প্রকাশ করে যেতে পারেননি; মৃত্যুর আগে লিখে গিয়েছিলেন বই। তাও আবার এমন জটিল ভাষায়, যা সকলের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। কারণ তাঁর ভয় ছিল কোনোভাবে তা ধর্মযাজকদের হাতে পড়লে তা তাঁর জন্য বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সময়টা এরকমই ছিল। কোপারনিকাসই প্রথম দাঁড় করান এই ‘সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্ব’। তিনি পৃথিবীকে কেন্দ্র থেকে বাদ দিয়ে সূর্যকে বসান। এতদিন ধরে যেই পৃথিবীকেন্দ্রিক তত্ত্ব রাজত্ব করছিল তা ছিল টলেমির তত্ত্ব। তারও আগে অ্যারিস্টটলও বলেছিলেন একই কথা: চন্দ্র, সূর্য, তারা সবকিছুই ঘুরছে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে। এই অপবিজ্ঞানের সাথে ধর্মীয় অপবিশ্বাস মিশে রাজত্ব করছিল অনেকদিন ধরে মানুষের কল্পজগতে। এটি প্রথম ভাঙলেন কোপারনিকাস। কিন্তু নীরবে। কোপারনিকাসের এই মতগুলোকে যিনি জোরালোভাবে প্রথম প্রকাশ্যে আনলেন তিনি আরেক দার্শনিক, ব্রুনো। কোপারনিকাস ছিলেন স্থিতধী, বিনয়ী। ব্রুনো দুঃসাহসী, অকুতোভয়। তিনি কোপারনিকাসের মতকেই সমর্থন করে বললেন, সূর্যকে কেন্দ্র করেই ঘুরছে কতগুলি গ্রহ যার মধ্যে পৃথিবীও একটি। এমনকি সূর্যও ঘুরছে তার মেরুতে। বিশ্ব অসীম, তাই তার কেন্দ্রে কেউ থাকতে পারে না। তাঁর এই সাহসিকতা ও ঔদ্ধত্যের চরম মূল্য দিতে হয়েছিল তাঁকে। সত্য ও যুক্তিশীল কথা বলার জন্য তিনি হয়ে উঠলেন ধর্মযাজকদের মহাশত্রু। ফলে তাঁকে পালিয়ে বেড়াতে হলো। কিন্তু এক কৌশলী ষ/ড়/যন্ত্রের ফলে তিনি ধরা পড়লেন। আট বৎসর তাকে বন্দী রাখা হলো। এরপর তাঁর মৃ/ত্যু/দ/ণ্ড হলো। তার ভয়াবহ শাস্তি ইতিহাসকেও কম্পিত করে। কি নির্মমভাবে তাকে আগুনে পু/ড়িয়ে মা/রা হয়! মহান এই মানুষটিকে নির্ভুল বিজ্ঞান প্রচার করতে গিয়ে গোঁড়া ও ধ/র্মান্ধদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হতে হয়। গ্যালিলিও : আধুনিক পরীক্ষামূলক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবক্তা মহাবিজ্ঞানী গ্যালিলিও। পদার্থবিজ্ঞানে যার অবদান অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানের একটা যুগকে ডাকা হয় ‘গ্যালিলিও-নিউটনীয় যুগ’ বলে। সেই বিজ্ঞানী গ্যালিলিওকেও সমকালীন সভ্যতা নিতে পারেনি ভালোভাবে। ইতালির পিসা নগরে জন্মানো এই প্রডিজি বালক একসময় হয়ে ওঠেন বিজ্ঞানের স্তম্ভপ্রতিম ব্যক্তি। মাত্র ২০ বছর বয়সে পিসার ঝাড়লণ্ঠন দেখে তিনি আবিষ্কার করেন পর্যাবৃত্ত গতির সূত্র এবং সরল দোলক। পরে আবিষ্কার করলেন পড়ন্ত বস্তুর সূত্র। দেখালেন যে দশ পাউন্ডের এবং এক পাউন্ডের পদার্থ উপর থেকে ফেললে তারা একই সময়ে পতিত হবে। যা ছিল অ্যারিস্টটলের মতবাদের বিপরীত। তখনকার সময়ে অ্যারিস্টটলের মতবাদ অত্যন্ত জনপ্রিয় ও ধ্রুব বলে মানা হতো। ফলে গ্যালিলিও পরীক্ষা দেখিয়ে তা ভুল প্রমাণিত করলেও প্রবীণ রক্ষণশীলেরা ক্রুদ্ধ হলেন তার উপর। একের পর এক আবিষ্কার করলেন সেক্টর কম্পাস, টেলিস্কোপ। টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি দেখালেন চাঁদকে যে এত পবিত্র ও ঐশ্বরিক ভাবা হয়, চাঁদ তেমনটা নয়। চাঁদের নিজের কোনো আলো নেই। এটি নিতান্তই একটি পর্বতবহুল উপগ্রহ। এছাড়া তিনি তাঁর পূর্বসূরি কোপারনিকাসের মতবাদকে পুরোপুরি সমর্থন করেন। এর ফলে তাঁকেও পোপের রোষানলে পড়তে হলো। তাঁকে এসকল বৈজ্ঞানিক মতবাদের জন্য, যা কিনা ছিল তৎকালীন রক্ষণশীল ধ্যানধারণার বিপরীত, তাঁকে জীবনের শেষ আট বছর আমৃত্যু কারাগারে কাটাতে হয়েছে। হয়েছিলেন অন্ধও। তবুও তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়নি। এই মহাবিজ্ঞানী যাঁর জন্যে আজ আমাদের বিজ্ঞান কতখানি ঋণী বলার অপেক্ষা রাখেনা, তাঁর এমন নি/ষ্ঠুর পরিণতি সম্পর্কে ভাবলে সত্যিই ব্যথিত ও লজ্জিত হতে হয় সভ্যতার কাছে। যে বছর গ্যালিলিওর মৃত্যু সে বছরই জন্ম আরেক মহাবিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন এর— ১৬৪২ সালে।
Was this review helpful to you?
or
'বরণীয় মানুষ স্মরণীয় বিচার' বইটির লেখক হলেন বাংলা সাহিত্যজগতে নীললোহিত খ্যাত বিখ্যাত লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।এ বইটিতে ১২ জন বিখ্যাত মানুষের বিচার সম্বন্ধে লেখা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন মহাপুরুষ, দার্শনিক, কবি, বৈজ্ঞানিকসহ নানা ক্ষেত্রে খ্যাতিমান কিছু মানুষ যারা কালের বিবর্তনে খ্যাতি পেয়েছেন, কিন্তু তৎকালীন সময়ে প্রাপ্য সম্মানের বদলে পেয়েছেন মৃত্যুদণ্ড। বইটির শুরু হয়েছে সক্রেটিসের বিচার দিয়ে। এরপর একে একে যীশু, দান্তে, জোয়ান অব আর্ক, কলম্বাস, জিওর্দানো ব্রুনো, গ্যালিলিও, ওয়াল্টার র্যালে, ডস্টয়েভস্কি, লর্ড বায়রন, পল গগ্যাঁ ও সবশেষে অস্কার ওয়াইল্ডের বিচার সম্পর্কে লেখা হয়েছে বইটিতে। এঁদের প্রত্যেককেই বিচারের নামে প্রহসনমূলক শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু কালের বিবর্তনে তাঁরাই হয়েছেন বরণীয়। এ বইটির সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হল বইটি পড়ার সময় এক মুহূর্তের জন্যও পাঠকদের বিরক্তি আসবেনা। মনে হবে বিচারগুলো যেন চোখের সামনে ঘটে যাচ্ছে। এখানেই লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব।তাই আগ্রহী পাঠকদের বইটি পড়ার আমন্ত্রণ জানাই।অাশা করি অনেক অজানা বিষয় এ বই পাঠের মাধ্যমে অাপনারা জানতে পারবেন।