User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ভাল
Was this review helpful to you?
or
ভালোবাসার আরেক নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
Was this review helpful to you?
or
আলহামদুলিল্লাহ, সুন্দর লেখা ।
Was this review helpful to you?
or
এই বইটি আমি উপজেলায় প্রথম পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিলাম
Was this review helpful to you?
or
১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেওয়ার পর বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা গ্রেপ্তার হন। ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত বন্দী থাকেন। সেই সময়ে কারাগারে প্রতিদিনের ডায়েরি লেখা শুরু করেন। ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত লেখাগুলো এই বইয়ে প্রকাশ করা হয়েছে, যার শেষ অংশে আছে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বন্দী হিসেবে কুর্মিটোলা সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে বন্দী থাকার অসহ্য দিনগুলো। এ বইয়ে বঙ্গবন্ধু তখনকার কারাগারের অভ্যন্তরীণ অনেক বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যেটা যেকোনো সাধারণ পাঠকের আগ্রহের খোরাক তৈরি করবে। ‘Solitary Confinement’ থাকাটা কত বড় মানসিক শাস্তি, সেটা ফুটে উঠেছে এ বইয়ের পাতায় পাতায়। আমি শুধু ভাবি, বঙ্গবন্ধু মানসিকভাবে কতটা শক্তিশালী ছিলেন যে জীবনের অধিকাংশ সময় জেলখানার চারদেয়ালের মধ্যে কাটিয়েও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হননি।
Was this review helpful to you?
or
Very informative and influential book.
Was this review helpful to you?
or
ভালো
Was this review helpful to you?
or
Well
Was this review helpful to you?
or
Good!
Was this review helpful to you?
or
প্রিয় বই
Was this review helpful to you?
or
কারাগারের জীবন যে কত রোমাঞ্চকর তা এই গ্রন্থ থেকে জানা যায়
Was this review helpful to you?
or
অনেক কিছু জানতে পারলাম
Was this review helpful to you?
or
এই বই পড়ার মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি বঙ্গবন্ধুর জেলজীবন সম্পর্কে যা আমাকে তার সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে
Was this review helpful to you?
or
Amazing book
Was this review helpful to you?
or
আলহামদুলিল্লাহ
Was this review helpful to you?
or
বাদশা গঞ্জ বাজার ধমপাশা উপজেলা সুনামগঞ্জ জেলা
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
I'm highly satisfied with Rokomari's service.
Was this review helpful to you?
or
আমার ভালো লেগেছে।
Was this review helpful to you?
or
good book
Was this review helpful to you?
or
Good book
Was this review helpful to you?
or
informative
Was this review helpful to you?
or
দারুণ বই! দলমত নির্বিশেষে এই বইটি সকলের পারসোনাল লাইব্রেরীতে রাখা উচিত। হ্যাপি পারচেজ ফ্রম রকমারী। ??
Was this review helpful to you?
or
WOW
Was this review helpful to you?
or
Excellent book
Was this review helpful to you?
or
#সপ্তর্ষি_রকমারি_বুকরিভিউ_প্রতিযোগ রিভিউকারী : তৌফিক আহমেদ জেলা : পাবনা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা। ইমেইল :[email protected] বইয়ের নাম : কারাগারের রোজনামচা লেখক : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রকাশক : বাংলা একাডেমী ভূমিকা :শেখ হাসিনা নামকরণ :শেখ রেহানা ১ম প্রকাশ :২০১৭ আমার পড়া বইগুলোর মধ্যে "কারাগারের রোজনামচা" অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ বই।এ বইয়ে জাতির পিতা অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় হৃদয়গ্রাহী বর্ণনার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন তৎকালীন পাকিস্তান আমলের সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি,আইন ও বিচার ব্যবস্থা,জেল-জীবনের বাস্তব রূপ ,জেলের কয়েদীদের কথা,অপরাধীদের কথা,অপরাধ জগতে প্রবেশ করার কথা প্রভৃতি বিষয়। প্রতিটি মহৎ অর্জনের আড়ালে লুকিয়ে থাকে মহান আত্মত্যাগ আর কঠোর সংগ্রামের ইতিহাস ।বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনও এর ব্যতিক্রম নয়।তারই অবিচ্ছেদ্য অংশ অবিসংবাদীত মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ত্যাগ- তিতিক্ষা।পাকিস্তানি শাসন আমলের অর্ধেক সময়-ই তাকে থাকতে হয়েছিল কারাগারে, এমনকি বিনা বিচারে ।তার অপরাধ বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের কথা বলেছিলেন,বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে,শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। অথচ তিনি তার এই আত্নজীবনীমূলক বইয়ে নিজের কষ্টের কথা নয়,বলেছেন অন্য মানুষের কষ্টের কথা।কত বড় মহান নেতা হলে তা সম্ভব চিন্তা করূন! কেবল উল্লেখ করেছেন নিজের একাকীত্বের কথা।কারণ জেলে যাওয়া এক শাস্তি,তার উপর একজন মানুষকে বছরের পর বছর রাজবন্দী হিসেবে একা রাখা আরও বড় শাস্তি। ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত জেলে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধুর "থালা বাটি কম্বল, জেলখানার সম্বল" নামে যে লেখনী সেটিই আছে বইটিতে।জেলে থাকতে প্রায় প্রতিটি জিনিসের সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে।এক জোড়া হলুদ পাখি,তার পালিত একটি মুরগি ,জেলের পাগলদের কথা ইত্যাদি সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। কিছুটা হাস্যরসাত্মক ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন সে-সময় জেলে ব্যবহৃত কিছু শব্দ-- কেসটাকোল(কেস টেবিল),বন্দুক দফা(মেথরের কাজ),রাইটার দফা(পিয়নের কাজ),চৌকি দফা(রান্নার কাজ),জলভরি দফা,ডালচাকি দফা,শয়তানের কল(কম্বল ফ্যাক্টরির কাজ)ইত্যাদি।তিনি মানুষের অপরাধী হওয়ার কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন আমাদের সমাজের দুরবস্থা ও অব্যবস্থা কে।কারণ ছোটবেলা থেকে যে পরিবেশে বেড়ে উঠে এবং যাদের সাথে মেলামেশা করে সেরকম স্বভাবই তারা পায়।১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবি পেশ করার পর তিনি গ্রেপ্তার হন।দেশে তখন আন্দোলন শুরু হয়।তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি,পত্র-পত্রিকার অবস্থা,শাসকদের নির্যাতন তিনি তুলে ধরেছেন। এমনকি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালিয়ে তখন অনেক মানুষকে হত্যার পর তা ১১ জন বলে চালিয়ে দেয়া হয়।বঙ্গবন্ধু জেলে থেকে অসুস্থ হয়েছেন, তবু পরিবারকে জানান নাই।পরিবার থেকে,স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন থেকে বিচ্ছেদ হয়েছেন কেবল বাংলার মানুষের মুক্তির জন্যে।ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘপথ যে কতটা বন্ধুর তার কিছুটা ধারণা পাওয়া যাবে এই বই থেকে। বঙ্গবন্ধু প্রথমেই লিখেছেন, "জেলে যারা যায় নাই, জেল যারা খাটে নাই--তারা জানে না জেল কি জিনিস"।জেল সম্বন্ধে জানতে জেলে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, এই বইটি পড়লেই হবে।কারণ বঙ্গবন্ধু খুবই চমৎকারভাবে এখানে তার বর্ণনা তুলে ধরেছেন। আমি মনে করি, বইটি থেকে বাস্তব জীবনের শেখার অনেক কিছু আছে। সর্বোপরি বইটি আমার খুব ভালো লেগেছে। ©Toufiq Ahmed Tushar
Was this review helpful to you?
or
#sorone_mohanayok_book_review_2021 বই:কারাগারের রোজনামচা লেখক: শেখ মুজিবুর রহমান রিভিউকারী: মো: রোকনুজ্জামান রনি জেলখানা বা কারাজীবন সম্পর্কে আমাদের মতন সাধারণ মানুষের কৌতূহল সীমাহীন।কেননা এই কারাজীবন সম্পর্কে খুব বেশি একটা তথ্য আমাদের জানা হয়ে উঠে না,আবার যেটুকু জানা হয় সেটুকু ও অনেক সময় পুরোপুরি বাস্তবসম্মত হয় না এবং তাতে মনের কৌতুহলও সম্পূর্ণ মেটে না। জেলখানার কথা শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে চৌদ্দ শিকের কুঠুরির ভেতর বন্দী কিছু মানুষ।এখানে যারা কারারুদ্ধ থাকে, এখানেই খায়,এখানেই ঘুমায়,এখানেই সাজা ভোগ করে ইত্যাদি। আসলে জেল সম্পর্কে আমরা অধিকাংশ মানুষ যে ধারণাটুকু রাখি সেগুলো আমাদের দেশের নাটক কিংবা সিনেমার পর্দায় দেখা।সাথে কিছু কিছু কথা অবশ্য লোকমুখে শুনা। তবে বাস্তবে কি জেলখানা এমন ই কিছু একটা?নাকি অদ্ভুত রহস্যে ঘেরা ভিন্ন এক জগৎ?কেমন তবে সেখানকার অব্যক্ত দিনকাল? এমন সব প্রশ্নের ই সুযোগ্য সমাধান মিলবে আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা বই "কারাগারের রোজনামচা" থেকে। মানুষের জীবন এবং তার চারপাশে প্রতিদিন যা কিছু ঘটে, সে প্রতিদিন যা কিছু করে, যা কিছু শুনে, যা কিছু চিন্তা–ভাবনা করে সেগুলোর কিছু কিছু সেদিনের সন-তারিখ সহ খাতা বা ডায়েরির পাতায় লিখে রাখাকে রোজনামচা বলে। কারাগারের রোজনামচা বইটি মূলত এক প্রকার ডাইরি বা দিনলিপি যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানায় বসে বসে লিখে রেখেছিলেন। পাকিস্তানিদের শাসন,শোষণ,বঞ্চনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে, বাংলার দুঃখী মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করতে গিয়ে যৌবনের অধিকাংশ সময় কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটাতে হয়েছে মহান এই নেতাকে। বইটিতে বঙ্গবন্ধুর জেল জীবনের নানান অভিজ্ঞতা,রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা নিংড়ে বের হয়ে এসেছে।সেই সাথে বইটি পড়লে তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দলের প্রতি ত্যাগ, সাধারণ মানুষের দাবী আদায়ের জন্য সীমাহীন কষ্টভোগের দৃশ্যপটটি নিশ্চিতভাবে ভাবে পাঠক হৃদয়ে দাগ টেনে যাবে। মুক্ত মুজিবের চেয়ে বন্ধী মুজিব যে আরো বেশি শক্তিশালী তা বইটি পড়ে সহজেই অনুমেয়। কিভাবে জেলের অন্ধকার সেলে একাকী দিনের পর দিন বন্ধী থেকেও সহধর্মিণীর মাধ্যমে দলকে সুসংগঠিত করেছেন, দলের নেতাকর্মীদেরকে উপযুক্ত দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন তা কেবল একজন সুযোগ্য নেতার পক্ষেই সম্ভব। বইটিতে যেমন একদিকে নানান ধরনের মানুষের অপরাধের কথা , অপরাধ জীবনে জড়ানোর কথামালা ব্যাক্ত হয়েছে তেমনি জেল পর্যায়ে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের কোথাও সজোরে বঙ্গবন্ধুর লেখনীতে উচ্চারিত হয়েছে বারবার। কিভাবে জেলখানার চিকিৎসা ক্ষেত্রে দুর্নীতি পরিচালিত হয়, কিভাবে বেছে বেছে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীদেরকে অত্যাচার করা হয়, বিনা বিচারে আটকে রেখে আন্দোলনকে স্তিমিত করে দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হয় ,কিভাবে একজন নির্দোষ ব্যক্তি বছরের পর বছর বিনা দোষে জেল খেটে যায় তাই আবেগঘন হয়ে ফুটে উঠেছে রাজনীতির এই কবির কলমী শক্তিতে। রাজনৈতিক লেখালেখি নিয়ে কিছু পাঠকদের মাঝে একটা অনীহা থাকে যে, এর ভাষা বোধহয় বেশ কাঠখোট্টা গোছের , জটিল চিন্তা বিশ্লেষণ, অলঙ্কার উপমা দিয়ে বর্ণিত।কিন্তু না, বইটি পড়ে কোনোভাবেই আমার দুর্বোধ্য কিংবা একঘেয়েমী লাগে নি।বরং বইটির ভাষা একদম সহজ,সরল,নিখুঁত জলের ন্যায় গড়িয়ে গড়িয়ে ধীরগতিতে ছন্দময়তার সাথে এগিয়ে চলেছে। আবার দিনলিপি বলেই যে শুধু সাদামাটা ভাবে লেখক নিজের প্রাত্যাহিক রুটিন বর্ণনা করে গেছেন তা নয় বরং কখনো গভীর চিন্তাশক্তি কখনো সরল রসবোধের মিশেলে বাস্তবতাকে নিজ হাতে অঙ্কন করে দেখিয়েছেন। আসলে বইটির যতই পাতা উল্টাচ্ছিলাম ততই যেনো আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছিলাম।পিতার প্রতি ছোট্ট শিশু রাসেলের আকুতি " আব্বা বালি চলো" এমন করে প্রিয় বাবাকে জেলখানা থেকে বাসায় নিতে চাওয়ার অবুঝ চেষ্টা দেখে অশ্রুসিক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম। সবকিছু ছাপিয়ে যে বিষয়টি বইটিতে বড়ো করে ফুটে উঠে সেটি বঙ্গবন্ধুর একাকীত্ব।দিনের পর দিন একাকী একটি সেলে বন্ধী ছিলেন কারো সাথে কথা বলা, যোগাযোগ করার সুযোগ ছিলো না।পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হবার কষ্ট, দুঃখ, এমনকি নিজের বৃদ্ধ বাবা,মা কে একটিবার দেখতে চাওয়া খোকার কাতরতা পাঠক হৃদয়কে ভারী করে তুলবে নিঃসন্দেহে। যে বিষয়টি লুকাতে গিয়েও লুকাতে পারেন নি মহান এ নেতা সেটি হলো তার প্রতি মানসিক অত্যাচার।পাশের সেলের পাগলদের অত্যাচারে ঠিকমতো ঘুমাতে পারতেন না,কখনো ও বা দিন রাত মাথার উপর ২৪ ঘণ্টা উচ্চ ক্ষমতার লাইট জ্বলত।জেলের রান্না খেতেও হতো কষ্ট,কখনো নিজে নিজে রান্না করেই খেতেন। আর এভাবে যখন শরীর খারাপ করে অসুস্থ হয়ে পড়তেন তখন সেবা করার মতন ও কেও ছিল না, একাকী এক সেলে অসহায়ভাবে অসুস্থ দিনযাপন করার কাহিনী পড়তে গিয়ে তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকদের প্রতি আমার শুধু ঘৃণা ও ধিক্কার ই বিচ্ছুরিত হয়েছে বারবার। পাশাপাশি বইটির নামকরণ, বইয়ের ভূমিকা, উপযোগী টীকার ব্যবহার,কিছু সাদাকালো আলোকচিত্র বইটিকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছে। চমৎকার প্রচ্ছদে মোড়ানো বইটিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর হাতের লেখা দেখতে পাওয়া ও পড়ার সুযোগ যা বইটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বইটি একজন রাজনীতিবিদের কাছে পাথেয় স্বরূপ, ইতিহাসবিদ এর কাছে অমূল্য রত্ন,গবেষকের কাছে বিশ্বস্ত তথ্য, সাহিত্য রসিকের কাছে আনন্দের খোরাক আর আমাদের জাতির কাছে আলাদিনের চেরাগ।দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এর সঠিক ইতিহাসকে জানার।তাই সবাইকে খুব আন্তরিকভাবে স্বাগতম বঙ্গবন্ধু রচিত কারাগারের রোজনামচায়। বই:কারাগারের রোজনামচা লেখক: শেখ মুজিবুর রহমান ধরন:আত্মজীবনী,ব্যাক্তিগত দিনলিপি প্রকাশনী: বাংলা একাডেমি প্রচ্ছদ ও গ্রন্থ নকশা: তারিক সুজাত প্রথম প্রকাশ:মার্চ ২০১৭ মুদ্রণ:৭ম,এপ্রিল২০১৮ পৃষ্ঠা:৩৩২ মুদ্রিত মূল্য:৪০০টাকা ISBN:984-07-5741-5
Was this review helpful to you?
or
#sorone_mohanayok_book_review_2021 বই- কারাগারের রোচনামচা লেখক- শেখ মুজিবুর রহমান রিভিউ প্রধানকারী- সিফাত হাছান সুমাইয়া করোনা কালে আমরা যারা ঘর বন্ধী থেকে হাফিয়ে উঠেছিলাম তারা কি জেলখানার ভিতরে একা বন্ধী থাকার কষ্ট কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন? গৃহ বন্ধী থাকার সময়েও আমরা একা বন্ধী ছিলাম না, ঘরের সবার সাথে বন্ধী ছিলাম। সেইবারের ঈদে আমরা বাহিরে বের হতে না পারলেও ঘরে ছিলাম যার যার প্রিয় জন, আপনজন অর্থাৎ পরিবার নিয়ে। আমরা কয়জন জানি বা বুঝতে পারি একা জেলখানার একটা রুমে বন্ধী থাকার যন্ত্রণা? আমরা কয়জন ঠিক করে জানি যে জেলখানায় একা ঈদ করার যন্ত্রণা? নিজের অসুস্থ বাবা-মা কে দেখতে না পারার যন্ত্রণা? নিজের স্ত্রী সন্তানদের কাছে না পাবার যন্ত্রণা? এই যন্ত্রণা চোখে দেখা যায় না আর যাবেও না। কিন্তু কিছুটা হলেও অনুভব করতে চান? আন্দাজ করতে চান কেমন হতে পারে সেই সব অবস্থা।তাহলে দেরি না করে পড়ে ফেলতে পারেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, রাষ্ট্রপতির নিজস্ব আত্মজীবন মূলক বই “কারাগারের রোজনামচা”। বইয়ের প্রতিটা পাতা থেকে আপনি বুঝতে পারবেন কি যন্ত্রণার জীবন তিনি কাটিয়েছেন জেলখানার ওই ক্ষুদ্র কুঠুরিতে। আসুন তার উপরে একটা সংক্ষিপ্ত মন্তব্য শুনে নেয়া যাক। “ থালা বাটি কম্বল জেলখানার সম্বল”। দুই লাইনের ছোট এই কথা থেকেই জেলখানার দিন গুলোর করুন অবস্থা ফুটে উঠে। এমনটাই দেখা যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থে। মূলত এইটা উনার জেলখানায় বসে লেখা নিয়মিত ডায়েরি ছিলো। উনার এই লেখার প্রেরণায় ছিলেন উনার স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব যাকে উনি ডাকতেন রেনু বলে। পরবর্তীতে এই লেখা যখন গ্রন্থ আকারে প্রকাশ করা হয়ে থাকে তখন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা তার নাম দেন কারাগারের রোজনামচা। বইয়ের প্রথমেই শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানায় প্রচলিত কিছু মজাদার শব্দের সাথে আমাদের পরিচিত করান যা সাধারণ লোক সমাজের কাছে একদমই অপরিচিত কিংবা নতুন। পুরো বইটিতে এই শব্দ গুলো যেমন কাজে আসবে ঠিক তেমনি এই বইটি পড়ার পরে জেলখানার মধ্যে ব্যবহৃত এই শব্দগুলো সম্পর্কে আমরা জানতে পারবো। যে,পম কেসটাকোল, চৌকি দফা, রাইটার দফা, শয়তানের কল, দরজি খাতা এমন আরো কত কি! শুরুটা মজা দিয়ে শুরু করলেও পুরো বইটাতে ছিলো জেলখানার ভিতরে কাটানো এক একটা যন্ত্রণার দিনের কথা। ১৯৬৬ সালের ৮ই মে মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হয়েছিলেন, সেই সময় থেকে তিনি ১৯৬৮ সালের ১৮ই জানুয়ারি পর্যন্ত জেলখানার ভিতরে একা একটি রুমে দিন রাত কাটিয়েছেন। ১৯৬৮ সালের ১৮ই জানুয়ারি উনাকে মুক্তি দিয়ে পুনরায় জেলগেট থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা সেনানিবাসে কঠোর নিরাপত্তায় বন্দি করে রাখা হয়েছিল। দীর্ঘ এই কারাবাসের সময়গুলোতে উনাকে মানসিক আর শারিরীক দুই দিক থেকেই লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছিল। অধিকাংশ সময়ে তাঁকে 'solitary confinement' অর্থাৎ একাকী বন্দী জীবনযাপন করতে হয়েছে। কারাগারের ভিতরে চাচ্ছিলেন উনি অসুস্থ কিংবা দুর্বল হয়ে পড়ুক। কিন্তু উনার লড়াই ছিলো যাই হয়ে যাক নিজেকে সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে হবে। সেই লড়াইয়ে উনি সব সময় সফল ছিলেন না। আর মনের লড়াইয়ের তো শেষ ছিলোনা। জেলখানার ওই ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে উনার শেষ ভরসা ছিলো বই আর খবরের কাগজ, সেখানেও সুখ ছিলোনা উনার। খবরের কাগজ দিতে দেরি হতো, এই খবরের কাগজ পাবার জন্যও তাকে সংগ্রাম করতে হতো। উনাকে যেই খবরের কাগজ দেয়া হতো সেখানে গুরুত্বপূর্ণ খবর ডেকে দেয়া হতো যাতে করে এই দেশের রাজনীতিতে কি হচ্ছে উনি জানতে না পারেন। একই জেলখানায় উনার দলের অনেক নেতাকর্মী থাকার পরেও তাদের সাথে উনার দেখা হতোনা, এমনকি উনার নিজের আপন ভাগীনার সাথেও না। দিনের পর দিন উনি পরিবার থেকে দূরে থাকতেন। ১৪-১৫ দিন পর নিজের পরিবারের সাথে দেখা করার সুযোগ পেতেন সেখানেও থাকতো নিরাপত্তা, হতে পারবেনা কোন রাজনৈতিক আলাপ- আলোচনা। সেই এক ঘণ্টা উনাকে যতটা না আনন্দ দিতো তার থেকে বেশি দিতো মনের যন্ত্রণা। ছোট ছেলে মেয়েরা উনাকে বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য বায়না করতেন কিন্তু উনি থাকতেন নিরুপায়। দুঃখকে ভিতরে রেখে উনি ছোট ছেলেকে নানান ভাবে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠাতেন। একজন জন্মদাতার জীবনে এর থেকে বড় কষ্ট আরে কিসে? নিজের ছেলেকে বুঝাতেন এই কারাগার তার বাবার বাড়ি আর তাদের ফিরে যেতে হবে তাদের মায়ের বাড়ি। অবুঝ শিশুর বাবা কোথায় আবদার মিটাতে তাকে শিখানো হয়েছিল তার মা হচ্ছেন তার মা আর তার মা ই হচ্ছেন তার আব্বা। আহা! কি বেদনার, কি যন্ত্রণার। জেলখানায় থাকাকালীন শেখ মুজিব তার মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে ছটফট করে যান দিনের পর দিন কিন্তু তার দেখা করার কোন উপায় ছিলোনা। বাহিরে অসুস্থ মায়ের খবর শুনে জেলখানায় বন্ধী থাকা একটা সন্তানের জন্য মোটেও সুখকর কিছু নয়! বঙ্গবন্ধুর হাতের লেখা দেখার দুর্লভ সুযোগ আছে বইটিতে। এছাড়া বইটির শেষে ১৯৫৫-১৯৭৫ সালব্যাপী বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন, বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী, টীকা অংশে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, বঙ্গবন্ধু পরিবারের দুর্লভ কিছু ছবি এবং ৬ দফার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে; যা থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চমৎকার ধারণা পাওয়া যায়। তাছাড়া বাবা জেলে থাকা অবস্থায় সন্তানদের কাছে ঈদের যে কোন মানেই থাকে না কিংবা জেলখানার কয়েদীদের কাছে ঈদ যে আলাদা কোন দিন হয়ে আসেনা এমন কষ্টের দৃশও ফুটে উঠেছে এই বইতে। আইয়ুব- মোনায়েম সরকার দিনের পর দিন নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য একজন মানুষকে নির্বিচারে অসংখ্য দিন নিজের কাছের মানুষদের থেকে দূরে রেখে আটকে রেখেছিল। বইটিতে ১৯৬৮ সালের ঘটনা পর্যন্ত তুলে হয়ে হয়েছে। ১৩৭৩ বঙ্গাব্দের ২৪শে বৈশাখ থেকে তিনি জেলে বন্দি। পরবর্তী বৈশাখ টাও কাটাতে হচ্ছে জেল খানার চার দেয়ালের ভিতরে। ১৯৬৬ সালে "ছয় দফা" ঘোষণার পরে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা জেলা রাখা হয়। বইটিতে প্রথম ২রা জুন,১৯৬৬ সাল, বৃহস্পতিবারের ঘটনা দিয়ে লেখা শুরু করেন। তারপর কেটে যায় পাল্টে যায় কত বার,মাস, কয়েদিদের ঠিকানা,মুরগি পাখির আস্তানা। শুধু পাল্টায়নি শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারহীন কারাবাসের দিনের রুপ। তিনি পাকিস্তানের ভাগ চায়নি; সে কথা তিনি উচ্চারণও করেন নি। শুধু চেয়েছেন পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও বাঙালির অধিকার। কিন্তু আইয়ুব খানের শাসনামলে এ কথাও বলা বারণ যে, "তোমার নিজের জমি অন্যরা ভোগ করবে তা তুম বলতে পারবেনা, প্রতিবাদ করা হবে পাপের সমতূল্য।" জেলের ভিতরে আপন বলতে ছিল নিজের হাতে গড়া বাগান আরো ছিল মুরগি,পাখি। যার বর্ণনা কত সুন্দরভাবে লেখক তুলে ধরেছেন। সেই সময়ে উনার লেখা এই ডায়েরি বর্তমান সময়ের জন্য খুব উপকারী। সেই সময়ের প্রকৃত রাজনৈতিক অবস্থা, দুই পাকিস্তানের মধ্যে ব্যবধান সব কিছুই ফুটে উঠেছে উনার লেখায়। এমনকি উঠে এসেছে একজন প্রকৃত রাজনৈতিক নেতার আত্মত্যাগ আর মনোবল।
Was this review helpful to you?
or
#sorone_mohanayok_book_review_2021 "যে মানুষ মৃত্যুর জন্য প্রস্তত, কেউ তাকে মারতে পারে না।" ~ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঠিক তেমনি বাংলার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর বঙ্গবন্ধুকে কেউ কখনো মারতে পারেনি, তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন কোটি কোটি বাঙালির অন্তরে। কেউ কখনো রুদ্ধ করতে পারেনি তার সংগ্রামী বজ্রকণ্ঠ। তবে তাকে দীর্ঘদিন কাটাতে হয়েছে জেলখানার বদ্ধ পরিবেশে। সেই জীবনের গল্পই তিনি আমাদের বলেছেন "কারাগারের রোজনামচা" বইয়ে। মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার দলিল বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা' একনাগাড়েই পড়ে ফেলার মতো একটি বই। অতি সহজে মনের কথা বলবার এবং লিখবার এক অভাবনীয় ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি। এ বই দুটো পড়েই আমার মনে হয়েছে রাজনৈতিক সাহিত্যিক হিসেবে বিশ্বজুড়ে তাঁর সুনাম চিরদিনই বহাল থাকবে। তাঁর লেখায় মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং স্বদেশ প্রেম যেভাবে এসেছে তা তাঁর মাটি-ঘেঁষা রাজনীতিরই স্পষ্ট প্রতিফলন। আর সে কারণেই তিনি হতে পেরেছিলেন বাংলার বন্ধু বঙ্গবন্ধু। জীবনের প্রধান অংশই তিনি যাপন করেছেন জেলে। প্রথম জেলে গিয়েছিলেন ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাইবার অপরাধে। এরপর থেকে নিত্য তাঁর যাওয়া আসা। জেলের বাসিন্দাদের কাছে তিনি এক প্রিয় মুখ। কয়েদি পাহারাদার, বন্দী পাগল, গাছ, পাখি, বিড়াল সকলেই তাঁর পরিচিত ও প্রিয়ভাজন। আলোচ্য বইটির ২৭ থেকে ৫৪ পাতা ‘জেলের ভিতর অনেক ছোট ছোট জেল আছে' শিরোনামে লেখা। 'জেলে যারা যায় নাই, জেল যারা খাটে নাই – তারা জানে না জেল কি জিনিস'। এই শব্দগুচ্ছ দিয়ে শুরু করা জেলের ভেতরের ২৭ পৃষ্ঠার এই বিবরণই প্রমাণ করে তিনি কতোটা মানবিক ছিলেন। জেলের ভেতরে যে একসঙ্গে থাকা যায় না, এর ভেতরে যে আরো ছোট ছোট জেল আছে, জেল যে আলাদা এক দুনিয়া’ তা এই বই না পড়লে আমার মতো অনেকের কাছে তা অজানাই থেকে যেতো। এই 'রোজনামচা’ পড়েই জানতে পারি যে ১৯৬৬ সাল নাগাদ তিনি পাঁচবার জেলে গেছেন। এমন কি হাজতি হিসেবেও তাঁকে জেল খাটতে হয়েছে। কত রকম জেল, কত রকম বন্দী মানুষ, কি তাদের কষ্ট তা এই বই পড়লে জানা যায়। হাজতির, রাজবন্দীরা কিভাবে আলাদা আলাদাভাবে থাকেন, সেল এরিয়া কাকে বলে এসব কথা। বারে বারে কয়েদির গুণতি দিতে হয়, লাইন বেঁধে বসিয়ে তাদের গণনা করা হয়। এক সেলে একজন, তিনজন, চার, পাঁচ বা তারও বেশি জনকে বন্ধ করে রাখা হয়। কিন্তু দু'জনকে এক সেলে রাখা হয় না। জেলের ভেতরে হাসপাতাল, ডাক্তার সবই আছে। জেলে কাজ করতে হয়। যারা লেখাপড়া জানে তাদের রাইটারের কাজ দেয়া হয়। সন্ধ্যার পর কেউ বাইরে থাকতে পারে না। সাজার সময় ভেদে কয়েদিদের প্রমোশনও দেয়া হয়। পাহারাদার, মেট হিসেবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। নাইট গার্ডদেরও রকমফের আছে। তাদের ক্ষমতারও হেরফের আছে। কয়েদিদের একজন আরেকজনকে কাজ বুঝিয়ে দিতে হয়, কাজ বুঝে নিতে হয়। কয়েদির চিঠি জেলের কর্মকর্তারা পড়ে তবেই পাঠানো হয়। রাজনৈতিক বন্দীদের চিঠি কাটাকুটি করা হয়। কালি ঢেলে অস্পষ্ট করা হয়। তাছাড়া জেলের ভেতরে রয়েছে নানা শব্দভাণ্ডার যা শুধু সেখানেই প্রচলিত। অনেকদিন জেলে থাকলেই কেবল এসব শব্দের মর্মার্থ বোঝা সম্ভব। কয়েদিরা তাদের মতো করে ইংরেজি শব্দের ভাণ্ডার গড়ে তুলেছে। 'থালা বাটি কম্বল জেলখানার সম্বল' শিরোনামে এই লেখাটিতে অদ্ভুত সব শব্দভাণ্ডারের পরিচয় পাই। কেস ফাইল বা কেস টেবিল হয়ে যায় ‘কেসটাকোল;, 'রাইটার দফা'। 'চৌকি দফা', ‘জলভরি দফা’, ‘ঝাড়ু দফা’, ‘বন্দুক দফা', 'পাগল দফা’, ‘শয়তানের কল’, ‘দরজি খাতা', 'মুচি খাতা'— এমন সব শব্দকোষ ব্যাখ্যাসহ তিনি এই বইতে অত্যন্ত যত্নসহকারে লিখেছেন। জেলের ভেতরের এই অজানা কথাগুলো আমরা কোনোদিনই জানতে পারতাম না এই বইটি না বের হলে। শুধু কি শব্দকোষ? এই শব্দকোষ তৈরি করেছে সে সব জেলের অধিবাসী তাদের কথাও রয়েছে বইটিতে । তিনি তাদের কথা লিখেছেন দরদ দিয়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি তাঁর সঙ্গে যুক্ত থাকা বা আশপাশের কয়েদিদের দুঃখ-ভরা জীবনের কাহিনী শুনতেন। তাদের সে সব কথাও স্থান পেয়েছে এই বইতে। মনে হয় এরা তাঁর কতোই না আপনজন। উদাহরণ হিসেবে ‘লুদু'র কথা বলা যায়। ১৯৫০ সালে যখন জেলে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু তখন পরিচয় হয় লুদু ওরফে লুৎফর রহমানের সঙ্গে। ১৯৫৪ ১৯৫৮ সালেও তাকে তিনি দেখেছেন জেলে। ১৯৬৬-তেও এসে পান তাকে। তার গল্প তিনি লিখেছেন অসীম মমতায়। চুরি ও পকেটমারাকে কেন পেশা হিসেবে নিয়েছিল লুদু? তার বাবার সাত বিয়ে ও নানা বদভ্যাসের ফসল লুদু। নানা বাড়ির পাশের বাড়ির গোপাল নামের এক যুবকের কাছে তার চুরি বিদ্যায় হাতেখড়ি। এরপর একা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লো লুদু। থানার পুলিশ ও দারোগার সঙ্গে ‘দেখা সাক্ষাত্ করে' কি করে আরো বড়ো পকেটমার হয়ে উঠলো সে কাহিনী বঙ্গবন্ধুর বইতে ফুটে উঠেছে। এরপর জিআরপি, সিআইডিসহ পুলিশের নানা পর্যায়ে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। 'বন্দোবস্ত' করতে পারেনি এমন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ফের লুদু জেলে। জেলের ভেতরেও রয়েছে অপরাধ জগত্। সেই জগতেরও পাকা সদস্য লুদু। গলায় ‘খোকড়’ কেটে জেলখানা থেকে বের হয়ে নানা জায়গায় পকেট করে। ফের ধরা পড়ে। মাঝখানে বের হয়ে বিয়েও করেছে লুদু। তার স্ত্রীর জন্যে খুব অনুভব করে লুদু। একটা ছেলে ছিল। সেও মারা গেছে। লুদুর চিন্তা কি করে বাঁচবে তার স্ত্রী। 'জীবনের উপর একটা ধিক্কার এসেছে' লুদুর। এইভাবে একেবারে সাধারণ এক অপরাধীর কষ্টের কথা সযত্নে তুলে এনেছেন বঙ্গবন্ধু তাঁর লেখায়। এরপর নিয়মিত ডায়েরি। ২ জুন ১৯৬৬। বৃহস্পতিবার। প্রায় প্রতিদিনই তিনি লিখেছেন জেলের জীবন নিয়ে। প্রায় সব দিনের লেখাতেই রাজনৈতিক সহকর্মী ও কর্মীদের জন্যে তাঁর উৎকণ্ঠা, দরদ ও ভালোবাসা ফুটে উঠেছে। ৭ জুনের হরতালকে বানচাল করার জন্য তাদের যেভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে তাতে তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খানের বাড়াবাড়ি বিষয়ে তিনি বিস্তর লিখেছেন। আর লিখেছেন সুবিধাবাদী রাজনীতিকদের আপসকামিতার কথা। তবে ছয়-দফার প্রশ্নে তিনি যে আপসহীন সে কথা বলতে ভোলেননি। 'এত জনপ্রিয় সরকার তাহলে গ্রেফতার শুরু করেছেন কেন!'— এমন বিস্ময় তাঁর মুখেই সাজে। কাকে কাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এই খবর জানার জন্যে তিনি উতলা ছিলেন। সত্যি কথা বলতে তিনি কখনো দ্বিধা করতেন না। মওলানা ভাসানীকে তিনি খুবই শ্রদ্ধা করতেন। কিন্তু ছয়-দফা নিয়ে তাঁর মন্তব্যে বঙ্গবন্ধু বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তিনি তাই লিখেছেন: “মওলানা সাহেব পশ্চিম পাকিস্তানে যেয়ে এক কথা বলেন, আর পূর্ব বাংলায় এসে অন্য কথা বলেন। যে লোকের যে মতবাদ সেই লোকের কাছে সেইভাবেই কথা বলেন। আমার চেয়ে কেউ তাঁকে বেশি জানে না।” এ-কথা বলেই তিনি রাজনীতির মূলনীতি বিষয়ে মুখ খুলেছেন। “তবে রাজনীতি করতে হলে নীতি থাকতে হয়। সত্য কথা বলার সাহস থাকতে হয়। বুকে আর মুখে আলাদা না হওয়াই উচিত।” বুকে-মুখে এক কথা বলতেন বলেই পাকিস্তানী রাষ্ট্র তাঁকে এক দণ্ডের জন্যেও স্বস্তি দেয়নি। কারারক্ষীদের অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করতেন। তাই তারা তাঁর খোঁজ নিতেন। প্রয়োজনীয় তথ্য দিতেন। ঐ সময়টায় যে প্রচুর ‘শেখ সাহেবের লোক জেলে ঢুকছে সে তথ্য তিনি এদের কাছ থেকেই পান। আর এ তথ্য পেয়ে তিনি অস্থির হয়ে যান। মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এবং তাঁর প্রতি মানুষের বিশ্বাস তা একদিনে হয়নি। আজীবন তিনি তাদের পাশেই ছিলেন। সকল অর্থেই তিনি হতে পেরেছিলেন 'তাদের লোক'। বাবুর্চির রান্না ভালো হয় না বলে নিজেই রান্না করতে নেমে যান। পাইলসের অসুখটা ফের দেখা দিয়েছে। জেলের খাবারে তার ঐ অসুখ আরো বেড়েছে। কিন্তু পরিবার, বিশেষ করে স্ত্রী রেনুকে জানানো যাবে না। তারা দুশ্চিন্তা করবেন। ৬ জুনে ডায়েরির পাতায় তিনি লিখেছেন:“আগামীকাল ধর্মঘট। পূর্ব বাংলার জনগণকে আমি জানি, হরতাল তারা করবে। রাজবন্দীদের মুক্তি তারা চাইবে। ছয়-দফা সমর্থন করবে।” মানুষের সমর্থন তাঁর প্রতি রয়েছে বলেই তিনি এই নিঃসঙ্গ জেলজীবন হাসিমুখেই বরণ করে নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর মনের অবস্থা বোঝাতে এভাবে লিখেছেন: “আমি একা থাকি, আমার সঙ্গে কাউকে মিশতে দেওয়া হয় না। একাকী সময় কাটানো যে কত কষ্টকর তাহা যাহারা ভুক্তভোগী নন বুঝতে পারবেন না। আমার নিজের উপর বিশ্বাস আছে, সহ্য করার শক্তি খোদা আমাকে দিয়েছেন। ভাবি শুধু আমার সহকর্মীদের কথা। এক একজনকে আলাদা আলাদা জেলে নিয়ে কিভাবে রেখেছে? ত্যাগ বৃথা যাবে না, যায় নাই কোনোদিন। নিজে ভোগ নাও করতে পারি, দেখে নাও যেতে কোনোদিন। নিজে ভোগ নাও করতে পারি, দেখে নাও যেতে পারি, তবে ভবিষ্যত্ বংশধররা আজাদী ভোগ করতে পারবে। ... জয়ী আমরা হবোই। ত্যাগের মাধ্যমে আদর্শের জয় হয়।" ভয়কে জয় করার জন্যেই কবিগুরুর কাছে ফিরে যেতেন। গুনগুনিয়ে উঠতেন- “বিপদে মোরে রক্ষা করো / এ নহে মোর প্রার্থনা, / বিপদে আমি না যেন করি ভয়।” এর পরেরদিন ৭ জুন। হরতালের দিন। বাইরে কি হচ্ছে কে জানে। সর্বক্ষণ ছটফট করছেন তিনি। লিখেছেন: "বন্দি আমি, জনগণের মঙ্গল কামনা ছাড়া আর কি করতে পারি! গুলি ও মৃত্যুর খবর পেয়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে। শুধু পাইপই টানছি। ... কি হবে? কি হতেছে? দেশকে এরা কোথায় নিয়ে যাবে, নানা ভাবনায় মনটা আমার অস্থির হয়ে রয়েছে। এমনিভাবে দিন শেষ হয়ে এলো। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা জেলে আছি। তবুও কর্মীরা, ছাত্ররা ও শ্রমিকরা যে আন্দোলন চালাইয়া যাইতেছে, তাদের জন্য ভালোবাসা দেওয়া ছাড়া আমার দেবার কিছুই নাই। মনে শক্তি ফিরে এলো এবং দিব্য চোখে দেখতে পেলাম 'জয় আমাদের অবধারিত।' কোনো শক্তি আর দমাতে পারবে না।” এরপর রয়েছে মায়ের অসুখের কথা। তাঁর জন্যে গভীর কষ্টের কথা। জেলে জেলে ঘুরছেন। মাকে দেখতে পারছেন না। মা-বাবার ছোট্ট 'খোকা'র সে যে কী আকুতি তা পড়ে চোখ ভিজে আসে। এসব কথা সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত তাঁর কন্যাদেরও চোখের পানি ছল ছল করে বয়ে গেছে। টাইপ করেছে যে মেয়েটি তার চোখের জলে ভিজে গেছে কম্পিউটারের কিবোর্ড। একদিকে মায়ের অসুখ, অন্যদিকে অনেক কর্মী জেলে, অনেকেই আহত, নিহত। তিনি অস্থির। ট্রেন দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু, সিলেটের বন্যায় মানুষের কষ্ট সবই তাঁকে উতলা করে তোলে। তাঁর কিছুই ভালো লাগে না। তবুও অর্থমন্ত্রী শোয়েবের বাজেট বিবরণ ঠিকই তুলে ধরেছেন। ঐ বাজেটে যে বাঙালির হিস্যা খুবই সামান্য সে কথা অঙ্ক কষে বের করেছেন জেলে বসে। কর ধার্য বেশি করায় জনগণের কি কষ্ট হবে সে কথা ভেবেই তিনি উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি, পূর্ব-পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী এম এন হুদার বাজেট নিয়েও তাঁর মন্তব্য রয়েছে। বিশেষ করে, ছয়-দফার বিরুদ্ধে বলায় তাঁকে এক চোট নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। এরপর পরিবারের কথা লিখেছেন। ছেলে-মেয়েরা ও স্ত্রী তাকে দেখতে আসেন। বড় দুটো ছেলে-মেয়ে বুঝলেও ছোট দুটো তো বোঝে না। তারা বাবাকে ছেড়ে ফিরতে চায় না। তাই বাচ্চাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাঁর মন খারাপ হয়ে যায়। বাবা-মা'র দেখা পান না বলে তাঁর মন আরো ভারাক্রান্ত। ইত্তেফাকের সম্পাদক মানিক ভাইয়ের গ্রেপ্তারে তিনি (বঙ্গবন্ধু) দারুণ উদ্বিগ্ন। তিনি সত্য কথা বলেন বলে তাঁকে জেলে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি কিভাবে জেলের এই জুলুম সহ্য করবেন সেই চিন্তাতেই তাঁর ঘুম আসে না। কয়েকদিন ধরে ইত্তেফাক ও মানিক মিয়াকে নিয়ে কত কথাই না তিনি তাঁর ডায়েরিতে লিখেছেন। 'সংবাদ'-এর কথাও বার কয়েক এসেছে। এসেছে ন্যাপের কারাবন্দি নেতাদের সঙ্গে জেলে দেখা হবার কথা। ভিন্ন দলের হলেও তাদের জন্য তাঁর দরদ কম নয়। যেসব কর্মী জেলে থেকে পরীক্ষা দিচ্ছিল তাদের জন্যেও তাঁর উৎকণ্ঠার শেষ নেই। এছাড়া জেলে বন্দিরা তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান, তাদের তিনি খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ান, মেটসহ কয়েদিদের ভালো-মন্দ খাবারের ভাগ দেন, পাশের গাছে দুটো হলুদ পাখি, বারান্দায় কবুতরের বাচ্চাটির বেড়ে ওঠা, একটি মুরগির মৃত্যু যন্ত্রণা সবকিছুই তাঁর দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শুধু গুরুত্বপূর্ণ ছিল না তাঁর নিজের জীবন। এই ডায়েরির পাতায় পাতায় জায়গা পেয়েছে রাজনৈতিক সহকর্মী, কর্মী এবং সাধারণ কয়েদিদের কথা। আর জায়গা পেয়েছে স্বদেশের মুক্তিচিন্তা। এর মাঝেই আচমকা তাঁকে আসামি করা হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়। নিয়ে যাওয়া হওয়া কুর্মিটোলায়। সামরিক আদালতে বিচার শুরু হবে। সর্বক্ষণ পাহারা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। নিঃসঙ্গ। টান টান উত্তেজনা। সারা পূর্ব বাংলায় চলছে আন্দোলন। এক পর্যায়ে ১৯৬৯ সালে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে মুক্তি পান শেখ মুজিব। তাদের ভালোবাসায় হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু। মানুষের প্রতি তাঁর বিশ্বাস ও ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না বলেই এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে পেরেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের দিকে। ডাক দিতে পেরেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের। তিনিই প্রকৃত বীর যিনি মৃত্যুকে ভয় পান না। বারে বারে তিনি মৃত্যুকে উপেক্ষা করে বীরের বেশে জেল থেকে বের হয়ে এসেছেন। মাটি ও মানুষের প্রতি নির্ভেজাল ভালোবাসার দলিল এই রোজনামচা। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধায়নে শেষ পর্যন্ত যে বইটি বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে তার ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম। যুগে যুগে তাঁর এই ত্যাগের কথা, মানুষের প্রতি ভালোবাসার কথা আমাদের দেশে এবং সারাবিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। বইটির সম্পাদনায় প্রচুর মুন্সিয়ানার পরিচয় মেলে। সংযোজনীতে ছয়-দফা, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, টীকা, নির্ঘণ্ট বইটির সম্পাদনায় পেশাদারিত্ব ও আধুনিকতা স্পষ্টতই ফুটে উঠেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের দিন বলেছেন যে, এই বইয়ের পাতায় পাতায় সাধারণ মানুষের দুঃখ ও গ্লানি ঘোচানোর যে আকুতি রয়েছে তার আলোকেই তিনি স্বদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। গরিব, দুঃখী মানুষের মঙ্গল চিন্তাই হবে তাঁর সকল নীতির মূল কথা। সেটাই স্বাভাবিক। মানুষকে যে বঙ্গবন্ধু কতোটা ভালোবাসতেন তা এই বই পড়ে যেমন বোঝা যায়, তেমনি তাঁর ভাষণগুলো পড়লেও অনুভব করা যায়। আমি অন্যত্র তাঁর জীবন ও ভাষণগুলো নিয়ে গবেষণা করেছি। সেই বইতে (আতিউর রহমান: শেখ মুজিব বাংলাদেশের আরেক নাম) বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী শাহরিয়ার ইকবালের সৌজন্যে অন্য আরেকটি ডায়েরির ইংরেজিতে লেখা একটি পাতা থেকে কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করার লোভ সম্বরণ করতে পারছি না। "As a man, what conces mankind conces me. As a Bengalee, I am deeply involved in all that conces Bengalees. This abiding involvement is bo of and nourished by love, enduring love, which gives meaning to my politics and to my very being." রাজনীতির এই অমর কবি অক্ষরে অক্ষরে তাঁর কথা রেখেছেন। মানুষকে চিরদিনের ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে ঘুমিয়ে আছেন তিনি বাংলাদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে। ******** বই: কারাগারের রোজনামচা লেখক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রকাশনী: বাংলা একাডেমি পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩৩২ প্রথম প্রকাশ: ২০১৭ মুদ্রিত মূল্য: ৪০০৳ ********* রিভিউ লেখক: মৌমিতা মৌ
Was this review helpful to you?
or
কিছুকথাঃ ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটির নামকরণ করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা এবং ভূমিকা লিখেছেন বর্তমান প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বইটি ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়েছে ‘Prison Diaries’ নামে এবং অনুবাদ করেছেন ড. ফকরুল আলম। লেখক পরিচিতিঃ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। তিনি বাঙালি জাতির জনক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক। বাংলার মানুষের প্রতি অকৃত্তিম ভালোবাসার জন্য বঙ্গবাসী তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘আমার দেখা নয়াচীন’ তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কতিপয় দেশদ্রোহীর হাতে পরিবারের কিছু সদস্যসহ লেখক গুলিবিদ্ধ হন এবং মৃত্যুবরণ করেন। বিষয়বস্তু ও বিবরণঃ জেলে যারা যায় নাই, জেল যারা খাটে নাই—তারা জানে না জেল কি জিনিস বাইরে থেকে মানুষের যে ধারণা জেল সম্বন্ধে ভিতরে তার একদম উল্টা জনসাধারণ মনে করে চারদিকে দেওয়াল দিয়ে ঘেরা, ভিতরে সমস্ত কয়েদি এক সাথে থাকে, তাহা নয় । জেলের ভিতর অনেক ছােট ছােট জেল আছে ...... এই লাইনগুলি দিয়েই শুরু হয়েছে বইটি। বইটিতে মূলত ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৮ সালের ঘটনা স্থান পেয়েছে। প্রথম দিকে শেখ মুজিবুর রহমান জেলের কিছু ব্যবহৃত শব্দের উল্লেখ ও ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যাতে পাঠকের বইটি পড়ার সময় শব্দগুলোর সঠিক ব্যবহার বুঝতে পারেন। শব্দকোষের মধ্যে রাইটার দফা, চৌকি দফা, জলভরি দফা, ঝাড়ু দফা, বন্দুক দফা, পাগল দফা, শয়তানের কল, দরজি খাতা, মুচি খাতা, আইন দফা, হাজতি দফা ইত্যাদি। শব্দগুলোর পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা ছাড়াও লেখক তার জীবনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনা উল্লেখ করেছেন। পরবর্তী অংশে লেখকের দিনলিপির শুরু। ‘২রা জুন ১৯৬৬ II বৃহস্পতিবার’ থেকে ’২২শে জুন১৯৬৭ II বৃহস্পতিবার’ পযন্ত। অতঃপর বহু ঘটনার বিবরণ কিন্তু সেসবের সুস্পষ্ট দিন, তারিখ অথবা বার উল্লেখ করা হয়নি। সবশেষে বইটিতে সংযোজিত আছে, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন পরিচয় (১৯৫৫-১৯৭৫)” এবং “বঙ্গবন্ধু” শিরোনামের দুটি বিশেষ অংশ।লেখক চমৎকার ও সহজ-সাবলীলভাবে তার লেখা উপস্থাপন করেছেন। উল্লেখযোগ্য কিছু লাইনঃ ## থালা বাটি কম্বল জেলখানার সম্বল। ## ২ বছরের ছেলেটা এসে বলে, “আব্বা বালি চলাে” । কি উত্তর ওকে আমি দিব। ওকে ভােলাতে। চেষ্টা করলাম ওতাে বােঝে না আমি কারাবন্দি। ওকে বললাম, “তােমার মার বাড়ি তুমি যাও । আমি আমার বাড়ি। থাকি । আবার আমাকে দেখতে এসাে।” ## পাগল সহজে গােসল করতে চায় না, তাই জোর করে পানির ভিতর ফেলে দেয় আর চেপে ধরে। অনেক পাগল আবার চালাক, চুবানাের ভয়ে তাড়াতাড়ি কলের নিচে বসে নিজেই গােসল করে নেয়। একদিন দাঁড়াইয়া পাগলের গােসল দেখছি। এক পাগলের গােসল হয়ে গেছে। সে কাঁপতে কাঁপতে আমাদের কাছে এসে দাঁড়াইয়া রােদ পােহাচ্ছে । আর একজন পাগলকে কয়েকজন কয়েদি ধরে এনে গােসল করাচ্ছে। যে পাগলটা আমাদের কাছে দাঁড়াইয়া রােদ পােহাচ্ছে সে আমাকে বলে, “কি দেখেন, এগুলি সব পাগল, খুব পাগলামি করে। আমি তাে হেসেই অস্থির। নিজে যে পাগল তা ভুলে গেছে। ## আমার স্ত্রী আস্তে আস্তে বলল যে, “টেলিগ্রাম এসেছে মার শরীর খুব খারাপ। বুঝতে আর বাকি রইল না, মার শরীর বেশি খারাপ না হলে আমার আব্বা কোনােদিন টেলিগ্রাম করতেন না।” তিনি খুব বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান লােক । মনটা আমার খুবই খারাপ হয়ে পড়ল। ছেলে-মেয়েদের বুঝতে দিলাম না যে আমি খুব মুষড়ে পড়েছি। কিছু সময় বসলাম, কোনাে কথাই আমার আর ভাল লাগল না। ## মনে পড়লাে মা’র কথা। কিছুদিন আগে আমার মা খুলনা থেকে আমাকে ফোন করে বলেছিল, “তুই আমাকে দেখতে আয়, আমি আর বেশিদিন বাঁচব না। আমি বাড়ি যাইতেছি।” বললাম, “মা, আমি শীঘ্রই বাড়ি যাব তােমাকে দেখতে।” বইটির সার্থকতাঃ বইয়ের নাম দেখলেই সাধারণ দিনলিপি মনে হতে পারে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি ঘটনার যথাযথ ব্যাখ্যা এবং সরল ভাষা বইটিতে অনন্য মাত্রা যোগ করেছে। এসবের সাথে ব্যক্তিগত ও সাদৃশ্যপূর্ণ ঘটনা এবং তৎকালীন অবস্থার বর্ণনা বইটিকে সার্থক করেছে। বইটি কেন পড়বেন? আমরা অনেকেই জেলের মূল ভবনের বাইরে কিংবা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় জেল দেখেছি, কিন্তু ভিতরে কখনো যাওয়া কিংবা জেলের ভিতরে কি হয়, কিভাবে কোন কাজ হয় এসব জানার সুযোগ হয়নি। যুদ্ধপূর্ববর্তী সময়ের লেখা হলেও এসব প্রশ্নের উত্তরের ধারণা দিতে সক্ষম বইটি।এছাড়াও স্বাধীনতাপূর্ব বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক ঘটনা জানার ক্ষেত্রেও বইটি সহায়ক।
Was this review helpful to you?
or
#sorone_mohanayok_book_review_2021 কারাগারের _রোজনামচা ---বুক রিভিউ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাবন্দী জীবন নিয়ে রচিত আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ''কারাগারের রোজনামচা''।জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে মিথ্যে মামলায় অভিযুক্ত করে প্রায় চার হাজারবার কারাবন্দী করা হয়।কিন্তু কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে থাকা স্বত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে একটা রুলটানা খাতা দেওয়া হয়।সেই খাতায় বঙ্গবন্ধু তাঁর কারাজীবনের কথা সুন্দর করে লিখে রাখতেন।বঙ্গবন্ধুর সেই খাতা উদ্ধার করে বই আকারে প্রকাশ করা হয় এবং সেই বইয়ের নাম দেওয়া হয় ''অসমাপ্ত আত্মজীবনী''।পরবর্তী সংস্করণে অবশ্য''কারাগারের রোজনামচা''নামকরণে বইটির আত্মপ্রকাশ ঘটে।জেলে বন্দী অবস্থায় সেই রুলটানা খাতায় শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানার ভিতর অনেক কথা লিখেছিলেন।এই লেখার একটি নামও তিনি দিয়েছিলেন--''থালা বাটি কম্বল---জেলখানার সম্বল''।কারাগারে বিভিন্ন সেল বিভক্তি রয়েছে এবং একেক সেলকে ঝাড়ু দফা,চৌকিদার দফা,দর্জী দফা ইত্যাদি পৃথক নাম দেওয়া থাকতো।বঙ্গবন্ধুকে যে সেলে রাখা হতো তার পাশেই ছিলো পাগল কয়েদীদের সেল।পাগলদের চিৎকার -চেচামেচিতে বঙ্গবন্ধু কষ্ট পেতেন বটে ,কিন্তু প্রকাশ করতেন না।বরং পাগলদের কষ্টের কথা বলতেন।জেলখানার ভিতর শেখ মুজিব কামিনী ও জবা ফুলের গাছ লাগিয়েছিলেন।কামিনী ফুলের গাছে রোজ এক জোড়া হলুদ পাখি এসে বসতো।অনেক সময় বঙ্গবন্ধুর বাড়ী থেকে কিছু রন্ধনসামগ্রী জেলখানায় পাঠানো হতো।শেখ মুজিব মাঝে মধ্যে জেলখানার ভিতর ভাত,মাছ,মাংস,শাক,ডাল ইত্যাদিবিভিন্ন পদের রান্না করতেন।জেলের ভিতরকার বাগানে দুর্বাঘাসের আগাছা হলে বঙ্গবন্ধু নিজেই সেই বাড়ন্ত আগাছাগুলো কেটে দিতেন।শেখ মুজিবুর রহমান জেলের ভিতর দৈনিক সংবাদ পড়তেন।কিন্তু পরে রাজনৈতিক সমস্যার কারণে বঙ্গবন্ধুকে ''দৈনিক পাকিস্থান ''সংবাদ পড়তে দেওয়া হয়।বঙ্গবন্ধুর পরিবারবর্গ জেলখানায় বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করতেন।শিশুপুত্র রাসেল ''জেলখানা'' শব্দটির সাথে পরিচিত ছিল না বলে রাসেলকে জেলখানার বদলে ''আব্বার বাড়ী'' বলে পরিচয় দেওয়া হতো।শেখ মুজিব জেলখানার ভিতরই একটা মুরগি পালতেন।সেই মুরগিটা রোজ ডিম পাড়তো।কিন্তু একসময় মুরগিটা অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে।পরে এক বিকেলবেলায় মুরগিটা মারা যায়।কারাবন্দী জীবন ,কারাগারের পরিবেশ,কারাগারের সেল বিভক্তিও নাম,বন্দীদের আচার -আচরণ,হলুদ পাখির বর্ননা,পোষা মুরগির মৃত্যু প্রভৃতির বিরণ করুণ মূর্ছনায় ও সুন্দর -সাবলীল ভঙ্গিমায় বইটিতে প্রকাশ পেয়েছে।
Was this review helpful to you?
or
Pora ucit. Valo boi.
Was this review helpful to you?
or
#sorone_mohanayok_book_review_2021 বই ঃ কারাগারের রোজনামাচা লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান প্রকাশনীঃ বাংলা একাডেমি রিভিউ লেখকঃ তাসফিয়া প্রমি কারাগারের রোজনামাচা, কারাগারের ডায়েরী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মোট কত দিন কারাভোগ করেছেন জানেন? চার হাজার ছয়শ বিরাশি দিন। ভাবুন তো কেমন ছিল সেই সব দিন আর সময়? এই প্রায় সাড়ে চার হাজারের বেশি সময় কি সম্ভব দু’ মলাটের কোন বইতে বন্ধ করা? না সম্ভব না। ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৮ সালের এ সময়টা তিনি যখন জেলে ছিলেন, সেটাকে লিখে রেখেছেন। সব দিন হয়তো নেই কিন্তু যা আছে চমকে দেবার মত। জেলের চৌদ্দ শিকের আড়ালে থেকেও কিভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন সেটা আসলে এই বইগুলো পড়লে জানা যাবে। খুব অবাক লাগে, জেল থেকে জেলের হাসপাতালে গিয়েছেন, প্রতিদিন কত কাজ করেছেন, অসুস্থ থেকেছেন, তবু ও কিন্তু ডায়েরীর পাতায় লিখে গেছেন দিনলিপি। কত অদ্ভুত ঘটনা। কত ইতিহাস আছে। আসলে এত ঘটনাবহুল একটি বই যে এটিকে রিভিউ এর কাতারে আনা একটু কঠিন। দু একটা ঘটনা দু এক কথায় শোনাচ্ছি। ১৫ জুলাই ১৯৬৬। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে বন্দি। সেদিন হঠাৎ করেই কয়েকজন মানুষ তাঁর থাকার রুম মাপামাপি শুরু করল। এই যেমন ৪০ ফুট লম্বা ঘর ৪ফুট চওড়া কয়টা জানালা দরজা। শেখ সাহেব তাদেরকে জানালেন তারা যেন দক্ষিণের জানালা আরেকদিকে ১৪ ফুট উঁচু দেয়াল বাতাস শত চেষ্টা করেও তার ঘরে ঢুকতে পারে না এসব লেখেন । কিন্তু তাঁর লেখে নি কারণ এসব লেখা নাকি নিয়মের মধ্যে পড়ে না। সেদিনই সিভিল সার্জন শেখ সাহেব কি পরীক্ষা করা যায়। তিনি যতদিন কারাভোগ করেছেন শেষ সময়ের মধ্যেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। মাঝেমধ্যে তাকে হাসপাতালে থাকতে হতো কিন্তু সেখানেও সেই কড়া পাহারা। জেলের প্রায় সব কয়েদিদের সাথে ছিল তাঁর ভাল সম্পর্ক। কখনো তাদের সাথে নিয়ে বাগান করতেন, তাদের সাথে গল্প করতেন তাদের স্বপ্ন দেখাতে উৎসাহ যোগাতেন। আবার নিজের সহকর্মীদের সাহায্য করতেন দেশ চালাতে। কখনো কখনো কোন জেলার সহযোগিতায় বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতেন। অন্য কিছু কারণ তিনি এ ক্যাটাগরির ছিলেন না। কিন্তু কোন এক বড় কর্মকর্তা সহযোগিতায় তিনি ছিলেন এর মধ্যে। যেহেতু তিনি অসুস্থ থাকতেন তাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হতো। উপরমহলের লোকজন তৎপরতার সঙ্গে চিকিৎসার জন্য ব্যস্ত ছিল। ১৯৬৮ সালে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আবার গ্রেফতাঁর হন। এরপর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তাকে লেখালেখির জন্য একটি খাতা দেয়া হয় । সেই খাতাঁর ৫২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত তিনি লিখেছিলেন। সেটি ছিল তাঁর জীবনের শেষ দিনলিপি। অনেক রাজনৈতিক ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি বই এই কারাগারের রোজনামচা। ১৯৬৬-১৯৬৮ সালের মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যাবে বইটি থেকে। কারাগারের মধ্যে থেকেও যে এত সুন্দর ভাবে সবকিছু গুছিয়ে লেখা যায় সেটাই বইটি পড়ে জানতে পারবেন। আসলে বইটি পড়ে আপনি অবাক হবেন আরো বেশি। কারাগার সম্পর্কে আমরা যতটুকু জানি তাঁর চাইতে অনেক বেশি কিছু আছে। কারাগারের ভেতরে ঢোকে না আলো, না আছে বাতাস দীর্ঘশ্বাস। কেউ কারাগারে বিনা দোষে, আবার বাইরে ঘুরে অপরাধী। সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত মানুষ কারাগারের মধ্যে কাজ করে অর্থ উপার্জন করে। শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে বাগান করেছিলেন। সেই বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা করতেন। তাঁর সাথে আরও কিছু কয়েদি। ওই 14 শিকের আড়ালে কয়েদিরায় ছিল তাঁর পরিবার। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মাঝেমধ্যে ছেলেমেয়েদের নিয়ে জেলখানায় দেখা করতে যেতেন। সন্তানেরা তাদের বাবাকে খুব অল্প কাছে পেয়েছে। বিশেষ করে শেখ রাসেল । যতবার বেগম মুজিব কারাগারে দেখা করতে যেতেন, ততবার রাষ্ট্রনায়ক এর জন্য নিয়ে গেছেন রুলটানা খাতা। আর আজ সেই খাতায় আমাদের দেশের এক অমূল্য সম্পদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আঙ্গুলের ইশারায় যিনি দেশকে করেছেন স্বাধীন। যে ইশারার অপেক্ষা করেছে বাঙালি বহুকাল। তাঁর জীবনের কিছু অংশ এই বইটি। কেমন লেগেছে বইটি পড়ে? আসলে অনুভূতিটা অদ্ভুত। কিছু কিছু সময় মনে হচ্ছিল একটা মানুষ দীর্ঘদিন জেলে থাকার পরেও কিভাবে মানসিক ভাবে এত শক্ত হতে পারেন। কিভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে নিজের দলকে চালনা করতে পারেন। তাঁর মধ্যে অনন্য গুন ছিল বলেই তিনি জাতির নায়ক। বইটি প্রকাশ এর পেছনেও অনেক গল্প আছে। খুব সহজে কিন্তু সেই রুলটানা খাতা থেকে এই দুই মলাটের মধ্যে আটকায়নি। এর পেছনে আছে অনেক অশ্রু। তাঁর দুই কন্যা তাঁর মৃত্যুর অনেক পরে সেই পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে উদ্ধার করে রুলটানা খাতাগুলো। অনেকগুলো বছর পেরিয়ে যাবার পর ১৭ সালে একটি বই আকারে প্রকাশিত হয়। পুরো বইটার একটু অংশ বাদ দিলে, অনেক কিছু মিস করে ফেলবেন। বইটা যতবার পড়ি, শিউরে উঠি। তিনি ত্যাগ করেছিলেন বলেই আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। প্রতিটি বাঙালির উচিত, প্রতিটি বাংলাদেশীর উচিত একবার হলেও পড়া। যদিও এই বইটি পড়ার আগে অসমাপ্ত আত্মজীবনী করে নেয়া উচিত, তবুও এটা আগে পড়লেও ক্ষতি নেই । আমি সব সময় যেটা বলি আত্মজীবনী কিংবা জীবনী নিয়ে আসলে রিভিউ লেখা যায় না, যেটা করা যায় সেটা হল আলোচনা। তাই ক্ষুদ্র আলোচনা, অপ্রাসঙ্গিক কথা আসতে পারে, তবু ক্ষতি কি। বইটা নিজেই পড়ে নেবেন।
Was this review helpful to you?
or
“থালা-বাটি কম্বল জেলখানার সম্বল।” —বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের বড় একটি অংশই কেটেছে কারাগারে। কারাগারে বসে বসে তিনি লিখে গিয়েছেন জীবনের কঠিনতম এই অধ্যায়টির কথকতা! সেই লেখাগুলোকে সম্প্রতি বই আকারে প্রকাশ করার উদ্যােগ নেওয়া হয়। বাংলা একাডেমির উদ্যােগেই এই মহান কাজটির সূচনা হয়। তারপর প্রকাশিত হলো বহুল প্রত্যাশিত “কারাগারের রোজনমচা” বইটি। লিখেছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির পিতা, বাঙালির গর্ব, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বইটির নামকরণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা এবং ভূমিকাটি লিখেছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা, দেশনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু! স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নসারথি! শৈশব থেকেই যিনি ছিলেন গণ মানুষের দাবি আদায়ে সোচ্চার। এই দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি’।১৯৬৬ সালের এই দাবির জন্য জাতির জনককে করতে হয়েছিল কারাবরণ। এই সময়ে কারাবন্দী থাকা অবস্থায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার কথায় তিনি রচনা করেন তার এই অমর কীর্তি। বাংলার মাটি ও মানুষের জন্য তার আত্মত্যাগ প্রতিটি পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে। “কারাগারের রোজনামচা” বইটিতে বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের কষ্টের কথা উল্লেখ রয়েছে। জেলখানায় তার জীবন কেমন কেটেছে, জেলখানা মানুষের গল্প,জেলখানায় বসে থেকে দেশের জন্য তার ভাবনা,সেই সংকটপূর্ণ সময়ে তার মানসিক অবস্থা, বিশেষত কারাগারের জগৎ টা কেমন ছিল—এ সবকিছু উঠে এসেছে এই বইটিতে।জেলে বসে তিনি কষ্ট পেতেন।তবে সেটা নিজের কথা ভেবে নয়, বরং তার সকল নেতাকর্মীদের কথা ভেবেই তিনি কষ্ট পেতেন।যা তাঁকে একজন শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে তুলে ধরে। এই বইয়ে শুধুমাত্রই কারাগারের চিত্রই নয়, ফুটে উঠেছে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পাকিস্তান সরকারের এক নায়কোচিত মনোভাব ও অত্যাচার-নির্যাতনের নানান চিত্র। ফুটে উঠেছে একজন বন্দী বাবার আকুতি, অবুঝ সন্তানের ভালোবাসা,দেশ ও মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর ভাবনা,রাজনৈতিক দর্শন। বইটির কোনো এক পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু লিখেছেন—“চিন্তা করিও না।জীবনের বহু ঈদ এই কারাগারে আমাকে কাটাতে হয়েছে।আরও কত হবে ঠিক নেই! তবে কোনো আঘাতেই আমাকে বাঁকাতে পারবে না।খোদা সহায় আছে।” এটি ছিল ঈদের সময় বঙ্গমাতাকে লেখা বঙ্গবন্ধুর একটি চিঠি। বইটির ভূমিকায় বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন—“বাংলার মানুষ যে স্বাধীন হবে,এ আত্নবিশ্বাস বারবার তাঁর (বঙ্গবন্ধু) লেখায় ফুটে উঠেছে। এত আত্মপ্রত্যয় নিয়ে পৃথিবীর আর কোনো নেতা ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছেন কি না আমি জানি না।” তিনি আরো লিখেছেন—“তার(বঙ্গবন্ধু) জীবনের এত কষ্ট ও ত্যাগের ফসল আজ স্বাধীন বাংলাদেশ। এ ডায়েরি পড়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ তাদের স্বাধীনতার উৎস খুঁজে পাবে। আমার মায়ের প্রেরণা ও অনুরোধে আব্বা লিখতে শুরু করেন। যতোবার জেলে গেছেন আমার মা খাতা কিনে জেলে পৌঁছে দিতেন।আবার যখন মুক্তি পেতেন তখন খাতাগুলো সংগ্রহ করে নিজে সযত্নে রেখে দিতেন।তার এই দূরদর্শিতা যদি না থাকতো তাহলে এই মূল্যবান লেখা আমরা জাতির কাছে তুলে দিতে পারতাম না।” আসলেই তো! এমন একটি বই খুঁজে পাওয়া অনেক দুষ্কর! এই আত্মজীবনীমূলক ডায়েরিটি বাঙালিকে তার সংগ্রাম ও জাতির জনকের কথা মনে করিয়ে দিবে।বঙ্গবন্ধু ছাড়া এই দেশ কখনোই স্বাধীন হতো না— এ বার্তাটির যথার্থতা আপনি বুঝে যাবেন বইটি পড়ার মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধুর মতো এমন একজন আদর্শবান, ত্যাগী, দেশপ্রেমিক নেতা ইতিহাসে খুব কমই আছেন। পুরোটা জীবন তিনি দিয়ে গিয়েছেন নিজ দেশের জন্য,দেশের মানুষের জন্য। সেজন্যই আজ আমরা স্বাধীন দেশে বসে স্বাধীন দেশের সুবাতাস উপভোগ করতে পারছি। ১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়াসে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাতের পর কিউবার মহান বিপ্লবী নেতা ‘ফিদেল কাস্তো’ বলেছিলেন— ❝ আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবুরকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব এবং সাহসিকতায় তিনিই হিমালয়।❞❣️ হে জাতির জনক, তোমাকে বাঙালি কখনোই ভুলতে পারবে না। তুমি না থেকেও রয়ে যাবে যুগের পর যুগ। “বঙ্গবন্ধু তুমি রবে এই বাংলায় অমর অক্ষয় হয়ে যুগ থেকে যুগান্তর।” পড়তে আপনাকে হবেই,হয় বই নয়তো পিছিয়ে! #happyreading
Was this review helpful to you?
or
Best book
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ বই। সবার পড়া উচিত।
Was this review helpful to you?
or
ভালো
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ
Was this review helpful to you?
or
এক কথায় অনবদ্য, চিরন্তন এবং কালের স্বাক্ষী হয়ে উঠা এক অসাধারন বই।
Was this review helpful to you?
or
অত্যন্ত প্রিয় বই।
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন ছাড়াও জেলখানার জীবন্ত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে কারাগারের রোজনামচা বইটিতে। জেলে বসে জীবনকাহিনী লেখার রহস্য এ বইয়ে আছে। বারবার জেলে থাকায় জেলখানাকে অনেক ভালোবাসতেন। তাই হয়তো বলেছেন- থালা বাটি কম্বল জেলখানার সম্বল। বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে শেখ রাসেলের অনেক অজানা কথা। জেলখানায় বসে দেশকে ভালোবেসেছেন। জেলখানাকে গ্রহণ করে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। শেখ মুজিবুর রহমানের কারাগারের দিনগুলোর কথা জানতে হলে, পড়তে হবে বইটি।
Was this review helpful to you?
or
Excellent Book. Thanks Rokomari
Was this review helpful to you?
or
best
Was this review helpful to you?
or
ভালোবাসার দলিল
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
nice cover
Was this review helpful to you?
or
Boita prbo Insha Allah .
Was this review helpful to you?
or
কারাগারের রোজনামচা বই কিনার পর আমার খুব আফছোস হচ্চে! সম্ভব হলে #Rokomari থেকে আমার টাকা গুলো ব্যাক করে নিয়ে আসতাম। বইটা কিনে আমার পুরো টাকা টাই জলে গেলো!
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটি বই।আমি জাতীয় সংগীত প্রতিযোগীতায় পুরষ্কার পেয়েছিলাম এই বইটি।থালা বাটি কম্বল,জেলখানার সম্বল।এইরকম বাক্যের মাধ্যমে লেখক খুব সুন্দরভাবে জেলখানার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।১৯৬৭ সালের ১৭ ই মার্চ বঙ্গবন্ধু খবরের কাগজে দেখলেন যে,ঢাকায় আওয়ামী লীগের নেতারা খুব ধুমধাম করে তার জন্মদিবস পালন করেছিলেন।আর এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি খুব সরল ভাষায় বলেছিলেন, 'আমি একজন মানুষ।আর মানুষের আবার জন্মদিবস।দেখে হাসি পাইলাম।' এছাড়াও বইটিতে কিছু টাচিং কাহিনী আছে।
Was this review helpful to you?
or
খুবই ভালো বই
Was this review helpful to you?
or
জাতির পিতার দীর্ঘ কারাজীবনের দুঃখ সুখের বর্ণনা রয়েছে বইটিতে। অসাধার ণএকটা বই ।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ বই কারাগারের রোজনমচা। মাটি ও মানুষের দলিল এই বই।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটি বই। এত সাবলীল ভাষায় লেখা যে পড়ে রীতিমতো অবাক হতে হয়। কারাগার জীবনের চিত্র এত সুন্দর ও সুনিপুণ ভাবে ফুটে উঠেছে যেন পাকা লিখিয়ে। এক কথায়, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যারা গবেষণা করতে চান তাদের জন্য বইটা মিসাইল স্বরুপ। সত্যিই অসাধারণ।
Was this review helpful to you?
or
Sheikh Mujibur Rahman was born in 523. BA from Calcutta University. He got his degree and studied law in Dhaka University. One of the founders of Awami Muslim League, a political party founded in 9 He won his party Awami League in the absolute majority in the national and provincial elections of the year. His achievement constitutes one of the most important contexts of the emergence of independent and sovereign Bangladesh. On March 7, he called for a non-cooperation movement in a historic speech, declaring, "This time the struggle for our liberation, this time the struggle for freedom." He urged the people to be “wary of whatever they have” for that struggle. He declared independence on March 27 and was arrested by the Pakistani army. He led the liberation war under the leadership of Bangabandhu. After his victory on December 5, Sheikh Mujib returned from Pakistan's prisons and returned home as a hero on January 3. Sheikh Mujibur Rahman became a legend during his lifetime as an undisputed leader of Bengal. He was killed at the hands of several ambitious members.
Was this review helpful to you?
or
সত্যিই বইটি মুগ্ধ করার মতো।জ্ঞ্যানের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য বইটি যথেষ্ট উপযোগী।শুধু এই বিষয়ের ছাত্র না, সবাই এই বইটি সমানভাবে উপভোগ করতে পারবে।শিখতেও পারবে অনেক কিছু।বইটি পড়ার পর ভালো লাগা কাজ করবেই।অনেক চিন্তার খোরাক যোগাবে বইটি।আমি সবাইকে রেফার করবো বইটি পড়ার জন্য।
Was this review helpful to you?
or
Daily Prison: by Sheikh Mujibur Rahman A daily routine of impeccable love of soil and of people. The historical value of the book published by the Bangla Academy under the care of his daughter Sheikh Hasina is immense. His sacrifice for eternity, love for people will be a source of inspiration for the liberated people in our country and around the world. In addition to the six-point, a brief overview of the political life of Bangabandhu, the commentaries, professionalism and modernity are clearly seen in the editing of the book. Hon'ble Prime Minister Sheikh Hasina said on the day of the opening of the book that she has adopted the development plan of the country in light of the general people's grief and sorrow over the pages of this book. The well-being of the poor, the suffering of the poor will be the key to all his policies. That's normal. As much as this book can be understood by how much people loved Bangabandhu, his speeches can be felt as well. Many thanks to Bangla Academy for publishing the book.
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটা বই। খুবই সুন্দর এবং সহজ ভাবে সব বিষয় উপস্থাপন করেছেন।বইটা পড়ে অনেক কিছু শিখতে পারলাম। তাই লেখককে অনেক ধন্যবাদ। এমন সুন্দর একটা বই লেখার জন্য।
Was this review helpful to you?
or
Inside story of a charismatic leader who created history.
Was this review helpful to you?
or
nc
Was this review helpful to you?
or
বইঃ কারাগারের রোজনামচা লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান ধরণঃ মুক্তিযুদ্ধ মূল্যঃ ৪০০ টাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের বড় একটি অংশ কেটেছে কারাগারে। জীবনের এই অধ্যায়টি তিনি সেখানে বসেই লিখে গেছেন। সেই লেখাই সম্প্রতি বই আকারে প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। বইয়ের নাম ‘কারাগারের রোজনামচা’। এই বইয়ে শুধু কারাগারের চিত্রই নয়, ফুটে উঠেছে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পাকিস্তান সরকারের এক নায়কোচিত মনোভাব ও অত্যাচার-নির্যাতনের নানান চিত্র। ফুটে উঠেছে, একজন বন্দী বাবার আকুতি, অবুঝ সন্তানের ভালোবাসা। দেশ ও মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর ভাবনা, রাজনৈতিক দর্শন।
Was this review helpful to you?
or
i love this book and this parson.
Was this review helpful to you?
or
বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেল প্রকোষ্ঠে কি নিদারুণ দিন কাটিয়েছেন এই বইগুলো তার শ্রেষ্ঠ প্রমান। পাগলের চিৎকারে কতকত রাত নির্ঘুম থেকেছেন অথচ কারো সাথেই কখনো খারাপ ব্যবহার করেননি। যিনি তার জীবন যৌবন বাঙ্গালীর অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে বিলিন করে দিয়েছেন সেই মহামানবের আত্মকথন “কারাগারের রোজনামচা”। ইতিহাস ভুলে গেলে বড় অন্যায় হবে! সবাইকে পড়ার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ বই।
Was this review helpful to you?
or
This book is not for everyone. In fact, many people do not like drama (banglay bolle 'Nekami'). This book is full of nekami. As the writer write this book in his laisure period, so he write (Ajaira khotha).This book is not for a professional reader, just for a backdated person.
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ বই
Was this review helpful to you?
or
বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের অন্যায় অবিচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সবসময়ই তিনি ছিলেন বজ্রকণ্ঠস্বর। আর এই কারণেই জীবনে অনেকটা সময় কাটাতে হয়েছে কারাগারের অন্ধকারে। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদে গঠনের পর ঢাকায় গ্রেফতার। সেই থেকে শুরু। একে একে জেল খাটতে হয়েছে অনেকবার। কখনো দুই বছর, কখনো টানা চৌদ্দ মাস, এমনকি মুক্তিযুদ্ধকালীনও তিনি ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে। এই বইটিতে '৬৮ পর্যন্ত(আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আটক) তাঁর কারাগার জীবনের আত্মকথা উঠে এসেছে। বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অসাধারণ একটি বই।
Was this review helpful to you?
or
কারাগারে যারা যান নি, তাদের জন্য পুরো ভিন্ন সে জগৎ।এরিয়া-৫১ এর মতোই।সেখানকার অদ্ভুত নিজস্ব নিয়ম আছে।আছে কষ্ট, মানিয়ে নেওয়া, ছোট্ট বিষয়ে সুখ খুঁজে নেওয়ার মতো তীব্র মন-আন্দোলন। সেরা বাঙালীর অসাধারণ ভাষাবোধ এই বইটিকে করেছে আরো সুখ পাঠ্য।বাইরে থেকে যে কারাগার আমরা দেখি, তার অন্দরে এমন সব আশ্চর্য কারবার ঘটে যাচ্ছে, এই বইটি পড়ে অবাক হবেন মুহূর্তে মুহূর্তে। জাতির পিতাকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখার এক চরম দলিল এই বই খানা।
Was this review helpful to you?
or
আজকের এই সময়টাতে ঘরে বসে যে এতকিছু খুব সহজে শেখা যাচ্ছে,,তার একটা প্রমান এই বইটি,সত্যি অসাধারন একটি বই,,,,,
Was this review helpful to you?
or
যে মানুষটার হাত ধরে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ, সে মানুষটার ই যৌবনের প্রায় সবটুকু সময় ই কেটে গেছে জেলখানার ওপাশে। এতটা সময় দেশের মানুষ এর স্বার্থে জেলখাটা মানুষ টা কিছু কিছু যায়গায় জেলখানার বর্ণনা দিয়েছেন এমনভাবে পড়ার পর আপনার মনে হবে যেন একটু ঘুরে দেখে আসিতো। রক্তমাংসের বঙ্গবন্ধু কে বুঝতে উনার অসাধারণ ব্যাক্তিত্তের পাশাপাশি উনার সাধারণ জীবনযাপন সম্পর্কে ও জানা উচিৎ। এই বইটি হাতে নিলেই বুঝতে পারবেন শুধুই বঙ্গবন্ধু নয় যেন কারাবন্দী ছিলো বাংলাদে।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটি বই। আসলেই জেল না খাটলে প্রকৃত নেতা হওয়া যায়না।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ বই। বইটির পান্ডুলিপি যেভাবে উদ্ধার করা হয়েছে তা সত্যি শিহরণ জাগায়। বাংলাদেশের ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ এ বইটি। শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য কতবার যে কারাভোগ করেছেন, কত ঈদ কাটিয়েছেন কারাগারে! ওনার পরিবারের, রাষ্ট্রের সেসময়ের বর্ণনা সত্যি অনেক কিছু জানতে সাহায্য করেছে।
Was this review helpful to you?
or
বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা।তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা করে গিয়েছেন অনেক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। যার জন্য তাকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়।কারাগারে তার সাথে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কয়েদিদের সাথে তার পরিবারের সাথে এবং বিভিন্ন নেতাদের সাথে তার দেখা সাক্ষাৎ হয়। কারাগারের মধ্যকার যে বৈচিত্র্যময় জীবন তিনি সেটা প্রতিদিন ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করেছেন। কারাগারের প্রতিটি মানুষ তাকে যেভাবে ভালোবাসতো সেই মুখ ব্যক্তি গুলো তুলে দিয়েছেন। কারাগারের রোজনামচা তার জীবনী গ্রন্থ গুলির একটি । এই গ্রন্থটি পড়ে আপনারা বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে জানতে পারবেন। তিনি কারাগারের বিভিন্ন সুখ-দুঃখের ঘটনাগুলি এখানে বর্ণনা করেছেন। এটি প্রত্যেকের জন্য আমি মনে করি অবশ্য পাঠ্য।
Was this review helpful to you?
or
একজন মুজিব এমনি এমনিই বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেননি! এর জন্য অনেক চড়াই উতরাই পার করেই এই পর্যন্ত আসতে হয়েছিলো শেখ মুজিবুর রহমানকে। ইতিহাস জানতে হলে এইসব বই পড়তে হবে।
Was this review helpful to you?
or
বাংলার মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর যে নিঃস্বার্থ ভালবাসা তার দলিল।
Was this review helpful to you?
or
কারাগার-ই ছিল বঙ্গবন্ধুর নিজ বাড়ী! দেশ, মাটি ও জনগনের জন্য ত্যাগের বিমূর্ত প্রতীক শেখ মুজিবুর রহমান। বইটির কিছু বিশেষ লাইন- *** নিষ্ঠুর কর্মচারীরা বোঝে না যে স্ত্রীর সাথে দেখা হলে আর কিছু না হউক একটা চুমু দিতে অনেকেরই ইচ্ছা হয়, কিন্তু উপায় কী? (পৃষ্ঠা- ৪০) *** সত্য খবর বন্ধ হলে অনেক আজগুবি খব গ্রামে গ্রামে ছড়াইয়া পড়ে, এতে সরকারের অপকার ছাড়া উপকার হয় না। (পৃষ্ঠা- ৭৯) *** কাপড় যদি কারও না থাকে তাকে কাপড়খানা খুলে দিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাড়ি চলে আসবা। আমাদের সরকারের অবস্থাও তাই। (পৃষ্ঠা- ৮৮) *** ক্ষমা মহত্ত্বের লক্ষণ, কিন্তু জালেমকে ক্ষমা করা দুর্বলতারই লক্ষণ। (পৃষ্ঠা- ১৫২)
Was this review helpful to you?
or
আমরা যারা কখনো জেলে যাই নাই, তাদের জেলখানা সম্পর্কে ধারণা পাবার জন্য জাতির জনকের রসাত্মক উপস্থাপনা যে কারোরই হৃদয় স্পর্শ করবে। তাছাড়া অতিরিক্ত বোনাস হিসেবে জাতির জনকের জেলখানার একাকীত্ব দিনযাপনের না জানা কাহিনীতো জাতির জনক সম্পর্কে জানবার আগ্রহ বহুলাংশে বাড়িয়ে দিবে, যা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আর একটা কথা না বললেই নয়, তা হলো আগরতলা মামলার প্রারম্ভিক কিছু ধারণা পাওয়া যাবে এই রোজনামচায় এবং মামলা চলাকালিন জাতির জনকের পরিস্থিতি বিশদভাবেই এতে বর্ণনা করা রয়েছে।
Was this review helpful to you?
or
কারাগারের রোজনামচা মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার দলিল
Was this review helpful to you?
or
'কারাগারে রোজনামচা' বইটার নাম থেকেই বোঝা যায় এতে রয়েছে কারাগারে থাকার দীর্ঘ সময়ের দীর্ঘ শ্বাস আর দেশের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি। দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষের স্বাধীনতা, অধিকার আদায়ের জন্য জীবনের অধিকাংশ সময় যিনি কারাগারে বন্দি জীবন যাপন করেছেন তিনি হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান। এই দীর্ঘ সময়টা কারাবন্দি থেকেও কিভাবে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন তার সুস্পষ্ট বর্ণনা এই বইয়ে পাওয়া যায়। বইটি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন: "তাঁর জীবনের এত কষ্ট ও ত্যাগের ফসল আজ স্বাধীন বাংলাদেশ। এ ডায়েরি পড়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ তাদের স্বাধীনতার উৎস খুঁজে পাবে। আমার মায়ের প্রেরণা ও অনুরোধে আব্বা লিখতে শুরু করেন। যতবার জেলে গেছেন আমার মা খাতা কিনে জেলে পৌঁছে দিতেন। আবার যখন মুক্তি পেতেন তখন খাতাগুলি সংগ্রহ করে নিজে সযত্নে রেখে দিতেন " ছোট খোকা যখন শেখ মুজিব হয়ে উঠেন যোগ দেন স্বাধীনতা অর্জনের পক্ষে বিভিন্ন আন্দোলনে।বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য লড়েছেন জীবনের শেষ সময় অব্দি। জীবনের অধিকাংশ সময় কাটাতে হয়েছে কারাগারে। মিথ্যা মামলায় বহুবার হয়রানির স্বীকার হোন তিনি। তিনি বলেছেন " জেলখানার সম্বল থালাবাটি কম্বল"। এই সম্বল নিয়েই কাটিয়েছেন কারাগারের অন্ধকার দীর্ঘ সময়গুলো। কখনো আবার মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও কোনো কারণ ছাড়াই আটকে রেখেছিল কারাগারে কিংবা মুক্তি পেয়ে জেল খানার গন্ডিও পার হতে পারেন নি গেইট থেকে আবারও গ্রেফতার হয়েছেন।১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনে গ্রেফতার হয়ে প্রায় পাঁচ দিন ছিলেন কারাগারে। ১৯৪৮ সালে আবারও গ্রেফতার হয়ে মুক্তি পান প্রায় চার মাস পর। ১৯৪৯ সালে দুই মাস কারাগারে বন্দি থেকে মুক্ত হওয়ার পর আরও কয়েক দফায় গ্রেফতার হয়ে প্রায় দুই বছর জেলে আটকে ছিলেন। ১৯৫৪ সালের ৩০ মে থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবারও কারাগারে কাটিয়েছেন বন্দি জীবন। তবুও তিনি লড়ে গেছেন। ১৯৫৮ সালে প্রায় চোদ্দ মাস জেলখানায় থাকার পর তাঁকে মুক্তি দিলেও জেলখানার গেইট থেকেই আবার গ্রেফতার করা হয়।মুক্ত হন আবারও প্রায় দুই বছর পর। ১৯৬২ সালে প্রায় চার মাস, ১৯৬৫ সালে বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হন। একের পর এক দাবি নিয়ে জনগণের অধিকার আদায়ের কথা বলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের প্রথম তিন মাসেই আট বার গ্রেফতার হন ও জামিন পান। আবারও স্বাধীনতার কথা বলায় ১৯৬৮ সালে আগড়তলা মামলায় ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে দীর্ঘ পাঁচ মাস জেলে আটকে থাকার পর ১৯৬৯ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারি জনগণের প্রবল চাপের মুখে তাঁকে মুক্ত করতে বাধ্য হয় পাকিস্তানিরা। শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে পূর্ববাংলার মানুষের আন্দোলন এতটাই প্রবল হয় যে, এতে স্বৈরাচারী শাসকদের পতন ঘটে আর বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন সকলের ভালোবাসার, আপোষহীন অকুতোভয় নেতা। ১৯৭১সালে ৭ ই মার্চ তিনি ঘোষণা করেন বাঙালির মুক্তির মন্ত্র " এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম"। ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানিদের পরিকল্পিত গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ঘোষণার সাথে সাথেই তাঁকে গ্রেফতার করে পাকিস্তান নিয়ে আটকে রাখা হয়। তবুও তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারে নি কেউ। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই নিরস্ত্র বাঙালী ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তির সংগ্রামে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর বাঙালি জাতি অর্জন করতে সক্ষম হয় তাদের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ অবিসংবাদিত এই নেতার হাত ধরেই বাঙ্গালী জাতির অর্জন এখনের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। বাঙালি তাঁকে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখবে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে। তাই কবি বলেছেন, " যতকাল রবে পদ্মা,যমুনা, গৌরী, মেঘনা বহমান, ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান " দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসে শেখ মুজিবুর রহমান কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা এই বইথেকে স্পষ্ট ভাবেই জানা যায়, কারণ তা বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লেখা ডায়েরি। কারাগারে কতটা যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে থেকেও তারা দেশপ্রেম বাদ দেন নি, লড়াই করে গেছেন শত্রুদের বিরুদ্ধে। তাদের ভালোবাসার ফসল হিসেবেই আজ আমরা বাংলায় কথা বলি, বাংলায় গান গাই, মাথা উঁচিয়ে চলি সারা বিশ্বের কাছে। হাজারো শ্রদ্ধা নিবেদন করি সকল যোদ্ধাদের প্রতি। এই বইটা তাদের দেশ প্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। কারাগারে রোজনামচা বইটির প্রতিটি ঘটনা মনে হয় যেন চোখের সামনে ঘটে যাচ্ছে। কতটা দেশপ্রেম, কতটা সাহস, কতটা অকুতোভয় ছিল যোদ্ধারা আর শত্রুরা তাঁদের সর্বোচ্চ দিয়েও যে আটকে রাখতে পারে নি যোদ্ধাদের তা খুব কাছ থেকে অনুভব করা যায় এই বইয়ের লেখাগুলো থেকে। বুক ফুলিয়ে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়, সাবাস বাঙালি! এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।
Was this review helpful to you?
or
Nice
Was this review helpful to you?
or
যদিও লেখক ইতিহাস লেখার জন্য লিখেননি এই বই ; বরং লিখতে চেয়েছেন নিজেরই সুদীর্ঘ জেল জীবনের একাংশের রোচনামচা মাত্র, তারপরও এই বই হয়ে উঠেছে ইতিহাসের আকর গ্রন্থ । আর হয়েছে তা তাঁর নিজেরই কারনে , যেহেতু অত:পর তিনি নিজেই হয়ে গেছেন এই বাংলার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ । “অথেনটিক লিডারশিপ” বিষয়ে ইদানিং বেশ আলোচনা চলছে কর্পোরেট বিশ্বে । এই বইয়ের পরতে পরতে লেখক যেরকম নিসংকোচে উন্মোচিত করেছেন নিজের আশা , আকাংখা , আনন্দ , বেদনা , হতাশা, ভালবাসার কথা; তা তাঁকে দিয়েছে সেই বিরল “অথেনটিক লিডার”এর শিরোপা , পড়তে গিয়ে বারবারই মনে হয়েছে তা আমার । পাগল থেকে শুরু কারাগারের যাবতীয় কয়েদী আর কর্মচারীদের জন্য তাঁর যে নিখাদ ভালবাসা ফুটে উঠেছে এ রোজনামচায় , তা যে অত:পর ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র বাংলাদেশ নামের গোটা বদ্বীপটিতে তা তো প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ব অত:পর গোটা ১৯৭১ জুড়ে , যখন তাঁরই ভালবাসায় বন্দি বাংগালী লড়েছে অমিত বিক্রমে তারই নামে !! শুধু মানুষ কেন তার ভালবাসা তো জড়িয়ে ধরেছে জেল খানার আমগাছের জোড়া হলদে পাখি , নিজের পোষা মুরগী আর জেলের দালানে বাসা বাঁধা কবুতরকেও ! একদিকে যেমন তিনি অকপটে প্রকাশ করেছেন ইত্তেফাকের মানিক ভাইয়ের প্রতি তাঁর অগাধ আস্থা , রাজনৈতিক গুরু সোহরাওয়ার্দী সাহেবের প্রতি প্রবল আনুগত্য , শেরে বাংলার প্রতি শ্রদ্ধা এমনকি নিজে পাকিস্তান আন্দোলনের একনিষ্ট কর্মি হিসাবে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর প্রতি তাঁর বিশ্বাসও , তেমনি অকপটে বলেছেন ভাসানীর দ্বিচারীতা আর সুবিধাবাদিতার স্বভাব নিয়েও । আবার একই সাথে নিসংকোচে উন্মোচন করেছেন ফাকিস্তানিদের পা চাটা মোনায়েমের নির্লজ্জ চেহারাও । বন্দি অবস্থায়ও ঈর্ষনিয় তাঁর পঠন তালিকা , বার বার যা ফুটে উঠেছে এই রোচনামচা নানান বাঁকে, নানান উদাহরন, রেফারেন্স আর কবিগুরুর কবিতা আর নানান প্রবাদের উল্লেখে । “যেতেছি”, “খেতেছি” , “পেতেছি” ইত্যাদি কথ্য ক্রিয়াপদের ব্যবহারই বলে যে তিনি পুস্তকাকারে প্রকাশ করার জন্য এটি লিখেননি , বরং স্ত্রীর অনুরোধে আসলেই লিখছিলেন জেলখানায় বসবাসের রোজনামচাই । যে কোন পাঠক যিনি ইতিহাসের পাঠ নেবার সাথে সাথে জানতে চান কতোটা মানুষের কাছাকাছি ছিলেন আসলেই আমাদের জাতীর পিতা , তবে এই বই পাঠের মাধ্যমে শুরু করতে পারেন তিনি তার সেই পাঠ নেয়া ।
Was this review helpful to you?
or
কারাগারের রোজনামচা বইটা অসমাপ্ত আআত্মজীবনীর ধারাবাহিক হলেও দুই টা বইয়ের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। কেন যেন মনে হয়ে কারাগারের রোজনামচায় বঙ্গবন্ধু অনেক বেশী সাবলী, মাঝে মাঝে ক্লান্ত, মাঝে মাঝে আমার মতন সাধারণ মানুষ। কখনো রান্না করছেন, কখনো মুরগি পালছেন, বাগান করছেন, ইদের নামাজে যাচ্ছেন। যেন চোখের সামনে ভাসছে। অনেক বার তিনি জেল খেটেছেন, এক কথায় যৌবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন, ত্যাগ করেছেন। বইয়ের শুরুতেই জেলখানার বিভিন্ন টোটকা, ভাষা, নিয়ম খুব রসিয়েই লিখেছেন, আমার খুব ভালো লেগেছে। অফটপিক তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সাহেবের একটা ত্যাগের কথা একজন লিখেছেন, সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন যে দেশের জন্য রেজেপ তায়্যিপ এরদোয়ান জেল ও খেটেছেন। ঘাটিয়ে দেখেছি সেটা খুব সম্ভবত তিন মাস ছিলো (ভুল হতে পারে স্মৃতি থেকে লেখা)। সেই যায়গায় শেখ সাহেবের জেল খাটার কথা উল্লেখ করলে তাকে কোন আসনে বসানো উচিত আমার জানা নেই। ধন্যবাদ।
Was this review helpful to you?
or
মাঝে মাঝেই বইটা স্টক আউট হয়ে যায়। প্রকাশনী থেকেও ছাপা কপি শেষ হয়ে যায় প্রায়ই। তারপর আবার রিপ্রিন্ট দিতে হয়। এভাবেই চলছে ২০১৭ সাল থেকে। খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রিয় নেতার লেখা বইটি সবসময়ই বেস্টসেলার লিস্টের প্রথমদিকে থাকে। কারণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আগ্রহ তাঁর জীবন নিয়ে জানার আগ্রহ বাঙালীর সারাজীবন থাকবে। আর সেই জায়গা থেকেই আপনার আমার আমাদের সবার পড়া উচিত কারাগারের রোজনামচা বইটি। যেখানে শুধু নেতা শেখ মুজিব নয় আছেন ব্যক্তি শেখ মুজিবের কথা, আছে জেল জীবনের কথা, জীবন সংগ্রামের কথা... বইটি আজই কিনে পড়ে ফেলুন,অন্যদের গিফট করুন।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃ কারাগারের রোজনামচা লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান প্রকাশনীঃবাংলা একাডেমি মূল্যঃ ৪০০ টাকা মাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আরেকটি মহামূল্যবান গ্রন্থ 'কারাগারের রোজনামচা'। কত কণ্টকাকীর্ণ পথ, কত ষড়যন্ত্র, কত বিশ্বাসঘাতকতা, কত ব্যথা, কত বেদনা, কত রক্তক্ষরণ, কত ক্রান্তিকাল পাড়ি দিয়ে বঙ্গবন্ধু একটি দেশ, একটি জাতীয় পতাকা আমাদেরকে দিয়েছেন; তা অনুধাবন করা যায় গ্রন্থটি পাঠ করলে। বাঙালির ভাগ্য উন্নয়নের জন্য তথা স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকারের জন্য নিজের জীবন-যৌবন উজাড় করে দিয়ে যে মহান আত্মত্যাগের পরিচয় তিনি দিয়েছেন, তাই এই গ্রন্থের পাতায়-পাতায় পরম মমতায় শব্দে-বাক্যে গ্রথিত আছে। ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা উত্থাপনের পর ওই বছরের প্রথম তিন মাসে আটবার গ্রেফতার ও জামিন পান বঙ্গবন্ধু। এরপর মে মাসে আবার গ্রেপ্তার হন। ওই সময়ের বন্দিজীবনের দিনলিপি উঠে এসেছে বইটিতে।জেলখানার নির্মম বাস্তবতা, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বিমাতা সুলভ আচরণ, অধিকার সচেতনতা সম্পর্কে লিখতে গিয়ে তিনি এধরণের প্রবাদ-প্রবচনেরও ব্যবহার করেছেন সেই সংকট কালের দিনলিপিতে।গ্রন্থটির প্রত্যেকটি দিনলিপিতে বাংলা বা বাঙালিত্বের প্রতি বঙ্গবন্ধুর যে ভালবাসা, তা ফুটে উঠেছে চমৎকারভাবে। ব্যক্তিকে ছাপিয়ে সমষ্টির জন্য তাঁর যে ক্রন্দন- তাও ফুটে উঠেছে প্রত্যেকটি লাইনে। প্রতিটি দিনলিপির শেষে লেখকের একাকীত্ব, নিঃসঙ্গতার নিদারুণ কষ্ট প্রকাশ পেয়েছে; কেননা, দিন শেষে সন্ধ্যা নামলেই তাঁর কক্ষে তালা লেগে যেত! সহৃদয় পাঠকও যেন তার জীবনের এই অংশ এসে আমি নিজেও অশ্রুসজল হয়ে পড়ি। বইটি প্রত্যেকটি বাঙালির পড়া উচিত। তাহলে হয়ত উপলব্ধি করতে পারবে কত বিসর্জনে অর্জিত এ দেশ।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নাম-কারাগারে রোজনামচা জনরা-আত্মজীবনী লেখক-শেখ মুজিবুর রহমান পৃষ্ঠা-৩৩২ মূল্য-৩০০ ১৯৬৯ সালের ১৩ ই ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু উপাধি কিন্তু তিনি এমনি এমনি পেয়ে যান নি। তার পিছনে রয়েছে যন্ত্রণার ইতিহাস। জাতির পিতা হতে করতে হয়েছে অনেক পরিশ্রম। ত্যাগ করতে হয়েছে আরাম আয়েশ এমনকি পরিবারকেও দূরে টেলে দিয়ে কারাগারে দিনের পর দিন কাটাতে হয়েছে। রাজনীতিতে প্রবেশের সময় থেকেই তিনি ছিলেন প্রতিবাদী জোরাল কন্ঠ। কোন অন্যায়ে তিনি আপোষ করেন নি। তার ফলে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর চক্ষুশূল হয়ে ছিলেন সব সময়। পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর, বাংলার মানুষ আশাবাদী হয়েছিলো। কিন্তু তারা সে আশায় পানি ঢেলে দিয়ে বাংলার মানুষদের শোষন করতে শুরু করলো।সকল প্রকার মৌলিক অধিকার এমনকি মায়ের মুখের ভাষাটা পর্যন্ত কেড়ে নিতে চাইলো। তার প্রতিবাদে বাংলার মানুষ আন্দোলন শুরু করে। আর তার নেতৃত্ব দিতে থাকেন শেখ মুজিবুর রহমান। আর এই আন্দোলন ডাক দেওয়া এবং সর্বসাধারনের কাছে দাবী প্রতিষ্ঠার সচেতনতা পৌছে দেবার পুরস্কার হিসেবে তখন থেকেই তার কারাবরন শুরু। ব্যক্তিগত মতামতঃ কারাগারে রোজনামচা সেই কারাগারে থাকার দিনগুলোর প্রতিলিপি। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে কিভাবে প্রতি পদের বাধা অতিক্রম করে চলতে হয়েছে, তার অনেকটা বিবরণ আছে এই বইয়ে। স্বাধীনতা একদিনে আসে নি বা তা আসার রাস্তাটাও একদিনে তৈরি হয়ে যায় নি। ইটের গাথুনি দিয়ে দিয়ে কি করে এটাকে প্রসারিত করা হয়েছে, তার পেছনে রয়েছে হাজারো দুঃখ ব্যথার ইতিহাস। ১৯৪৮ থেকে শুরু করে ১৯৬৬ সালের ছয়দফা দাবী আদায়ের সময় পর্যন্ত বিভিন্ন বার শেখ মুজিবকে কারাগারে যেতে হয়েছে। ৬৮ সালের পর কারাগারে বসে তিনি তার এই জেলজীবনের দিনগুলোর কথা লিখেছেন। ছোট ছেলে তখন জানতো কারাগার তার বাবার বাড়ি। সে মাঝে মাঝে চাইতো তার বাবাকে বাড়ি নিয়ে যেতে। তা কি কখনো সম্ভব! তাই তিনি ছেলেকে বুঝিয়ে বলতেন, "তুমি তোমার মায়ের বাড়ি যাও আমি এই বাড়িতে থাকি। আমাকে মাঝে মাঝে দেখতে এসো।" সেই দিনগুলোর কথা তিনি লিখে গিয়েছেন। জেল খানার ভেতরে যে অন্যরকম এক জীবন, তার বর্ণনা রয়েছে এই বইয়ে। ভালো লাগার সাথে খারাপ লাগাও মিশে থাকে এই বলে যে, যিনি এতো সংগ্রাম করে একটা স্বাধীন দেশের রূপরেখা অঙ্কন করে গেছেন। তাকে আমাদের হারিয়ে ফেলতে হয়েছে। তিনি চেয়েছিলেন বাংলার মানুষের জন্য ভালো থাকার কিছু দিন উপহার দিতে। সকল মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য কিচ্ছু যেন না থাকে। তার লেখায় এই আত্মপ্রত্যয় বার বার ফুটে উঠেছে। https://www.rokomari.com/book/133377/কারাগারের-রোজনামচা?ref=srbr_pg0_p5
Was this review helpful to you?
or
#রকমারিরিভিউপ্রতিযোগিতা বই-কারাগারে রোজনামচা লেখক-শেখ মুজিবর রহমান ঘরনা- ডায়েরি ও চিঠিপত্র পৃষ্ঠা-৩৩২ মূল্য-৪০০ বাংলা একাডেমী ৮ ই ফেব্রুয়ারি ২বছরের ছেলেটা এসে বলে, "আব্বা বালি চলো"। কি উত্তর ওকে আমি দিবো? ওকে আমি ভুলাতে চাইলাম ওতো জানে না আমি কারাবন্দি। ওকে বললাম তুমি তোমার মার বাড়ি তুমি যাও। আমি আমার বাড়ি থাকি। আবার আমাকে দেখতে এসো। " ও কি বুঝতে চায়! কি করে নিয়ে যাবে এই ছোট্ট ছেলাটা, ওর দূর্বল হাত দিয়ে মুক্ত করে এই প্রাচীর থেকে!" উপরের কথা গুলো শেখ মুজিব জেলে বন্ধি থাকা অবস্থায়, শেখ রাসেল তখন জানতো তার বাবার বাড়ি কারাগার। সে তার বাবাকে চিনতো না। এমন অবস্থা আরো অনেক হয়েছে। বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় তাকে অধিক সময় থাকতে হয়েছে জেলবন্ধি। পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। সন্তানেরা তার বাবাকে ভুলে গেছে। হঠাৎ করে ফিরে আসা বাবাকে দেখে শেখ কামাল তাকে হাসু আপার বাবা বলে ডেকেছে। এই ছিলো তার সে সময়ের পরিবারের অবস্থা। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত এই দীর্ঘ পথ ছিলো কন্টকযুক্ত, বন্ধুর। রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহনের পর থেকে ধাপে ধাপে মুজিব নিজেকে গঠন করেছেন। পরাধীন দেশকে স্বাধীন বাংলাদেশ ও স্বাধীন জাতি হিসেবে তিনি দেখতে চেয়েছেন। তার কথায় কাজে বারবার এই সত্য প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছেন, চেয়েছেন প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে। অসহায় মানুষগুলোকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছেন। বাংলার শোষিত বঞ্চিত মানুষকে শোষণের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে উন্নত জীবন দিতে চেয়েছেন। এইসব কিছু পুরণের জন্য বাঙালি জাতিকে তিনি সংগ্রামের ডাক দেন। রক্তে রাঙানো ইতিহাস সাক্ষী কতোশত ত্যাগের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সূর্য দখল করেছে। আর এইসব করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু হিসেবে ত্যাগ করতে হয়েছে নিজের জীবনের সব আরাম-আয়েশ। পরিবারকে দিনের পর দিন দূরে রাখতে হয়েছে। করতে হয়ছে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম। আন্দেলনে সোচ্চার সময়টাতে অধিকাংশ সময় কারাগারে বন্দি জীবন যাপন করতে হয়েছে। একের পর এক মিথ্যা মামলা ফাসানো হয়েছে তাকে। কোন মামলা থেকে নিঃস্কৃতি পেলেও অনেক সময় বিনা অপরাধে তার সাজা হয়েছে তখন জেল খাটতে হয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর, কিছুদিন যেতেই শেখ মুজিব বুঝতে পারলেন পাকিস্তানিদের বিমাতা সুলভ আচরণ। সব কিছু থেকে বঞ্চিত করতে করতে এক সময় বাঙালীর ভাষার দিকেও শাসক গোষ্ঠী হাত বাড়ায়। শেখ মুজিব সহ বাংলার আরো অনেকে এর বিরোধিতা শুরু করেন। তিনি এর প্রতিবাদে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে আন্দোলনের ডাক দেন। ফলে তিনি ১৯৪৮ সালে ১১ই মার্চ গ্রেফতার হন । ১৫ই মার্চ তিনি মুক্তি পান। আন্দলনে সোচ্চার থাকায় ১১ই সেপ্টেম্বর আবারো গ্রেফতার করে । ১৯৪৯ সালের ২১শে জানুয়ারি মুক্তি পান। এরপর থেকে কারনে অকারনে বারবার তাকে জেল কাটতে হয়েছে। ১৯৪৯ সালের ১৯শে গ্রেফতার করে জুলাই মাসে মুক্তি দেয়। ভুখা মিছিল করবার দায়ে আবারো গ্রেফতার তখ তাকে একটানা দু’বছর পাঁচ মাস জেল় খেটে ১৯৫২ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি দেয়। ১৯৫৪ সালের ৩০ ই মে তিনি আবারও গ্রেফতার হন এবং ২৩শে ডিসেম্বর মুক্তি লাভ করেন। ১৯৫৮ সালের ১২ই অক্টোবর তৎকালীন সামরিক সরকার কর্তৃক তিনি রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। এবারে প্রায় চৌদ্দ মাস জেলখানায় বন্দি থাকার পর তাকে মুক্তি দিলেও , জেল গেট পর্যন্ত পৌছাতেই আবারো গ্রেফতার হন। ১৯৬০ সালের ৭ই ডিসেম্বর মুক্তি পান। ১৯৬২ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি আবা গ্রেফতার হয়ে তিনি ১৮ই জুন মুক্তি পান। ১৯৬৪ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ১৪ দিন পূর্বে তিনি আবার গ্রেফতার হন।১৯৬৫ সালে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও আপত্তিকর বক্তব্য প্রদানের অভিযোগে মামলা দায়ের করে তাকে এক বছরের কারাদণ্ড প্ৰদান করা হয়। পরবতী সময়ে হাইকোর্টের নির্দেশে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি পেশ করার পর, ১৯৬৬ সালের প্রথম তিন মাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোহর, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, পাবনা, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন শহরে তিনি আটবার গ্রেফতার হন ও জামিন পান ১৯৬৮ সালের ৩রা জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার তাঁর উপর আগর তলা মামলা দায়ের করেন। ১৮ই জানুয়ারি মুক্তি দিলেও জেলগেট থেকে আবারও গ্রেফতার করা হয়। তার সে সময়ের জেলজীবনের দিনলিপি গুলো রচিত হয়েছে "কারাগারে রোজনামচায়"। অসমাপ্ত আত্মজীবনীর মতোই আরো একটা অভিজ্ঞতা লব্ধ পুস্তক যেখানে জেলে থাকার অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। শুধুমাত্র জেল জীবনের বর্ণনা দিয়েছেন তা নয়, তখনকার রাজনৈতিক অবস্থা, পাকিস্তানি শাসকদের শোষন, পরিবারের গ্লানি প্রভৃতিও ফুটে উঠেছে। আজকের দিনের জাতির পিতা একদিনে হয়ে যান নি। তারজন্য করতে হয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম। বাংলার মানুষের ধারে ধারে তিনি পৌছে দিয়েছেন সচেতনতার বানী। তাদের মৌলিক দাবী আদায়ে করে গেছেন মিছিল মিটিং তার ফলে রাজনৈতিক জীবনে সব থেকে বেশি সময় তাকে কাটাতে হয়েছে জেলখানা থেকে জেলখানায়। মুক্তি পেয়ে তিনি আবারো আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন তৎপর হয়েছেন তাদের স্বাধীনতা অর্জনে। ফলে আবারো গ্রেফতার হয়েছেন। এমনও হয়ছে জেল খেটে বের হয়েছেন মাত্র, জেলের গেইট থেকেই আবার তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাড়ি পর্যন্ত পৌছাতে পারেনি আবার তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। বাংলার মানুষ এমনি এমনি তার ডাকে মুক্তিযুদ্ধে সাড়া দেন নি। নিজেকে তার জন্য তিনি গড়ে তুলেছিলেন একটু করে। এবং তিনিই ছিলেন যোগ্য নেতা এটাও বার বার প্রমাণ করেগেছেন। কারাগারে রোজনামচা পাঠে আমরা অনেকক্ষণ বঙ্গবন্ধুকে উপলব্ধি করতে পারি। তিনি আমাদের জেল খানার ভেতরের চিত্র গুলো দেখিয়ে দিয়েছেন। জেল খানার ভেতরে যে ছোট ছোট জেল আছে তিনিই আমাদের জানিয়েছেন।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে জানতে অবশ্যই তার এই সময়টুকু জানা দরকার। স্বাধীনতার এতো দিন পরেও যে স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন তার সাথে কিছুক্ষন জেলখানা থেকে ঘুরে আসা যাবে।সবকিছুর পর এটা বলতেই হয়, নেতা হিসেবে যতোটা তুখোড় ছিলেন, সাহিত্যিক হিসেবে তিনি কোন অংশ কম ছিলেন না। একজন দক্ষ উপন্যাসিকের মতো বর্ণনা করেছেন অসমাপ্ত আত্মজীবনী , আর একজন সহিত্যিক চিত্রকরের মতো চিত্রায়িত করেছেন "কারাগারে রোজনামচা"। একজন জাতির পিতা হারানোর সাথে আমরা একজন মূল্যবান সাহিত্যিক হারিয়েছি।
Was this review helpful to you?
or
best book ever
Was this review helpful to you?
or
What a nice book it is!
Was this review helpful to you?
or
It's an excellent book to know our nations history.
Was this review helpful to you?
or
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা দুটি বই এখন পর্যন্ত বেরিয়েছে। এগুলো তো বই হিসেবে লেখা নয়, তাঁর ডায়েরি, তাঁর মনের কথা। কারাগারে বসে লেখা, তাই সব কথা যে তিনি খোলাখুলি লিখতে পেরেছিলেন, তাও মনে হয় না। মনে রাখতে হবে, তিনি পাকিস্তানি শাসকদের কারাগারে বসে এই ডায়েরি লিখেছেন। তারপরেও তিনি যেসব কথা লিখেছেন, তা যেকোনো স্বৈরশাসকের হৃৎপিণ্ড স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আমি বারবার করে বলব, আমাদের সবার বঙ্গবন্ধুর বই দুটো পড়া উচিত। এ ছাড়া তিনি যেসব কথা বলতেন, যে বক্তৃতা দিয়েছেন, যে জীবন যাপন করেছেন, তা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আজকের বহু সমস্যার সমাধান বঙ্গবন্ধুর লেখায়, কথায়, আদর্শের মধ্যে নিহিত রয়েছে। আমাদের শুধু বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনাটা গ্রহণ করতে পারতে হবে।
Was this review helpful to you?
or
ভাষা আন্দোলন বঙ্গবন্ধু শুরু করেন ১৯৪৮ সালে । ১১ই মার্চ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন এবং গ্রেফতার হন । ১৫ই মার্চ তিনি মুক্তি পান। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সমগ্ৰ দেশ সফর শুরু করেন। জনমত সৃষ্টি করতে থাকেন। প্রতি জেলায় সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলেন । ১৯৪৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ফরিদপুরে গ্রেফতার করে। ১৯৪৯ সালের ২১শে জানুয়ারি মুক্তি পান। মুক্তি পেয়েই আবার দেশব্যাপী জনমত সৃষ্টির জন্য সফর শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবির প্রতি তিনি সমর্থন জানান এবং তাদের ন্যায্য দাবির পক্ষে আন্দোলনে অংশ নেন । সরকার ১৯৪৯ সালের ১৯শে এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে । জুলাই মাসে তিনি মুক্তি পান । এইভাবে কয়েক দফা গ্রেফতার ও মুক্তির পর ১৯৪৯ সালের ১৪ই অক্টোবর আর্মানিটােলা ময়দানে জনসভা শেষে ভুখা মিছিল বের করেন। দরিদ্র মানুষের খাদ্যের দাবিতে ভুখা মিছিল করতে গেলে আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন । বর্তমান বইটার নাম ছোট বোন রেহানা রেখেছে-‘কারাগারের রোজনামচা’ । এতটা বছর বুকে আগলে রেখেছি যে অমূল্য সম্পদ-আজ তা তুলে দিলাম বাংলার জনগণের হাতে । ড. ফকরুল আলমের অনুবাদ করে দেওয়া ইংরেজি সংস্করণের কাজ এখনও চলছে। তার জীবনের এত কষ্ট ও ত্যাগের ফসল আজ স্বাধীন বাংলাদেশ । এ ডায়েরি পড়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ তাদের স্বাধীনতার উৎস খুঁজে পাবে।
Was this review helpful to you?
or
কারাগারের রোজনামচা মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার দলিল ড. আতিউর রহমান ১১ এপ্রিল, ২০১৭ ইং মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার দলিল বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা’ একনাগাড়েই পড়ে ফেলার মতো একটি বই। তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ও একই ধাঁচের আরেকটি বই। অতি সহজে মনের কথা বলবার এবং লিখবার এক অভাবনীয় ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তিনি। এ বই দুটো পড়েই আমার মনে হয়েছে রাজনৈতিক সাহিত্যিক হিসেবে বিশ্বজুড়ে তাঁর সুনাম চিরদিনই বহাল থাকবে। এই দুটো বইয়ের সম্পাদক তাঁরই সুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, তাঁর আরো কয়েকটি বই অচিরেই বের হবে। আরো সন্তুষ্টির কথা যে বইগুলোর ইংরেজি অনুবাদও বের হবে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ইংরেজি অনুবাদ এরই মধ্যে বের হয়েছে। সবগুলো বই যখন বের হবে তখন বিশ্বমানের এক সাহিত্যিক হিসেবেও আমরা আমাদের জাতিসত্তার জনকের পরিচয় সর্বত্র গর্বের সঙ্গে তুলে ধরতে সক্ষম হবো। তাঁর লেখায় মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং স্বদেশ প্রেম যেভাবে এসেছে তা তাঁর মাটি-ঘেঁষা রাজনীতিরই স্পষ্ট প্রতিফলন। আর সে কারণেই তিনি হতে পেরেছিলেন বাংলার বন্ধু—বঙ্গবন্ধু। জীবনের প্রধান অংশই তিনি যাপন করেছেন জেলে। প্রথম জেলে গিয়েছিলেন ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাইবার অপরাধে। এরপর থেকে নিত্য তাঁর যাওয়া-আসা। জেলের বাসিন্দাদের কাছে তিনি এক প্রিয় মুখ। কয়েদি পাহারাদার, বন্দী পাগল, গাছ, পাখি, বিড়াল সকলেই তাঁর পরিচিত ও প্রিয়ভাজন। আলোচ্য বইটির ২৭ থেকে ৫৪ পাতা ‘জেলের ভিতর অনেক ছোট ছোট জেল আছে’ শিরোনামে লেখা। ‘জেলে যারা যায় নাই, জেল যারা খাটে নাই — তারা জানে না জেল কি জিনিস’। এই শব্দগুচ্ছ দিয়ে শুরু করা জেলের ভেতরের ২৭ পৃষ্ঠার এই বিবরণই প্রমাণ করে তিনি কতোটা মানবিক ছিলেন। জেলের ভেতরে যে একসঙ্গে থাকা যায় না, এর ভেতরে যে আরো ছোট ছোট জেল আছে, জেল যে ‘আলাদা এক দুনিয়া’ তা এই বই না পড়লে আমার মতো অনেকের কাছে তা অজানাই থেকে যেতো। এই ‘রোজনামচা’ পড়েই জানতে পারি যে ১৯৬৬ সাল নাগাদ তিনি পাঁচবার জেলে গেছেন। এমন কি হাজতি হিসেবেও তাঁকে জেল খাটতে হয়েছে। কত রকম জেল, কত রকম বন্দী মানুষ, কি তাদের কষ্ট তা এই বই পড়লে জানা যায়। হাজতির, রাজবন্দীরা কিভাবে আলাদা আলাদাভাবে থাকেন, সেল এরিয়া কাকে বলে এসব কথা। বারে বারে কয়েদির গুণতি দিতে হয়, লাইন বেঁধে বসিয়ে তাদের গণনা করা হয়। এক সেলে একজন, তিনজন, চার, পাঁচ বা তারও বেশি জনকে বন্ধ করে রাখা হয়। কিন্তু দু’জনকে এক সেলে রাখা হয় না। জেলের ভেতরে হাসপাতাল, ডাক্তার সবই আছে। জেলে কাজ করতে হয়। যারা লেখাপড়া জানে তাদের রাইটারের কাজ দেয়া হয়। সন্ধ্যার পর কেউ বাইরে থাকতে পারে না। সাজার সময় ভেদে কয়েদিদের প্রমোশনও দেয়া হয়। পাহারাদার, মেট হিসেবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। নাইট গার্ডদেরও রকমফের আছে। তাদের ক্ষমতারও হেরফের আছে। কয়েদিদের একজন আরেকজনকে কাজ বুঝিয়ে দিতে হয়, কাজ বুঝে নিতে হয়। কয়েদির চিঠি জেলের কর্মকর্তারা পড়ে তবেই পাঠানো হয়। রাজনৈতিক বন্দীদের চিঠি কাটাকুটি করা হয়। কালি ঢেলে অস্পষ্ট করা হয়। তাছাড়া জেলের ভেতরে রয়েছে নানা শব্দভাণ্ডার যা শুধু সেখানেই প্রচলিত। অনেকদিন জেলে থাকলেই কেবল এসব শব্দের মর্মার্থ বোঝা সম্ভব। কয়েদিরা তাদের মতো করে ইংরেজি শব্দের ভাণ্ডার গড়ে তুলেছে। ‘থালা বাটি কম্বল জেলখানার সম্বল’ শিরোনামে এই লেখাটিতে অদ্ভুত সব শব্দভাণ্ডারের পরিচয় পাই। কেস ফাইল বা কেস টেবিল হয়ে যায় ‘কেসটাকোল;, ‘রাইটার দফা’। ‘চৌকি দফা’, ‘জলভরি দফা’, ‘ঝাড়ু দফা’, ‘বন্দুক দফা’, ‘পাগল দফা’, ‘শয়তানের কল’, ‘দরজি খাতা’, ‘মুচি খাতা’— এমন সব শব্দকোষ ব্যাখ্যাসহ তিনি এই বইতে অত্যন্ত যত্নসহকারে লিখেছেন। জেলের ভেতরের এই অজানা কথাগুলো আমরা কোনোদিনই জানতে পারতাম না এই বইটি না বের হলে। শুধু কি শব্দকোষ? এই শব্দকোষ তৈরি করেছে সে সব জেলের অধিবাসী তাদের কথাও রয়েছে বইটিতে । তিনি তাদের কথা লিখেছেন দরদ দিয়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি তাঁর সঙ্গে যুক্ত থাকা বা আশপাশের কয়েদিদের দুঃখ-ভরা জীবনের কাহিনী শুনতেন। তাদের সে সব কথাও স্থান পেয়েছে এই বইতে। মনে হয় এরা তাঁর কতোই না আপনজন। উদাহরণ হিসেবে ‘লুদু’র কথা বলা যায়। ১৯৫০ সালে যখন জেলে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু তখন পরিচয় হয় লুদু ওরফে লুত্ফর রহমানের সঙ্গে। ১৯৫৪ ও ১৯৫৮ সালেও তাকে তিনি দেখেছেন জেলে। ১৯৬৬-তেও এসে পান তাকে। তার গল্প তিনি লিখেছেন অসীম মমতায়। চুরি ও পকেটমারাকে কেন পেশা হিসেবে নিয়েছিল লুদু? তার বাবার সাত বিয়ে ও নানা বদভ্যাসের ফসল লুদু। নানা বাড়ির পাশের বাড়ির গোপাল নামের এক যুবকের কাছে তার চুরি বিদ্যায় হাতেখড়ি। এরপর একা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লো লুদু। থানার পুলিশ ও দারোগার সঙ্গে ‘দেখা-সাক্ষাত্ করে’ কি করে আরো বড়ো পকেটমার হয়ে উঠলো সে কাহিনী বঙ্গবন্ধুর বইতে ফুটে উঠেছে। এরপর জিআরপি, সিআইডিসহ পুলিশের নানা পর্যায়ে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ‘বন্দোবস্ত’ করতে পারেনি এমন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ফের লুদু জেলে। জেলের ভেতরেও রয়েছে অপরাধ জগত্। সেই জগতেরও পাকা সদস্য লুদু। গলায় ‘খোকড়’ কেটে জেলখানা থেকে বের হয়ে নানা জায়গায় পকেটমারি করে। ফের ধরা পড়ে। মাঝখানে বের হয়ে বিয়েও করেছে লুদু। তার স্ত্রীর জন্যে খুব অনুভব করে লুদু। একটা ছেলে ছিল। সেও মারা গেছে। লুদুর চিন্তা কি করে বাঁচবে তার স্ত্রী। ‘জীবনের উপর একটা ধিক্কার এসেছে’ লুদুর। এইভাবে একেবারে সাধারণ এক অপরাধীর কষ্টের কথা সযত্নে তুলে এনেছেন বঙ্গবন্ধু তাঁর লেখায়। এরপর নিয়মিত ডায়েরি। ২ জুন ১৯৬৬। বৃহস্পতিবার। প্রায় প্রতিদিনই তিনি লিখেছেন জেলের জীবন নিয়ে। প্রায় সব দিনের লেখাতেই রাজনৈতিক সহকর্মী ও কর্মীদের জন্যে তাঁর উত্কণ্ঠা, দরদ ও ভালোবাসা ফুটে উঠেছে। ৭ জুনের হরতালকে বানচাল করার জন্য তাদের যেভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে তাতে তিনি ভীষণ ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খানের বাড়াবাড়ি বিষয়ে তিনি বিস্তর লিখেছেন। আর লিখেছেন সুবিধাবাদী রাজনীতিকদের আপসকামিতার কথা। তবে ছয়-দফার প্রশ্নে তিনি যে আপসহীন সে কথা বলতে ভোলেননি। ‘এত জনপ্রিয় সরকার তাহলে গ্রেফতার শুরু করেছেন কেন!’— এমন বিস্ময় তাঁর মুখেই সাজে। কাকে কাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এই খবর জানার জন্যে তিনি উতলা ছিলেন। সত্যি কথা বলতে তিনি কখনো দ্বিধা করতেন না। মওলানা ভাসানীকে তিনি খুবই শ্রদ্ধা করতেন। কিন্তু ছয়-দফা নিয়ে তাঁর মন্তব্যে বঙ্গবন্ধু বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তিনি তাই লিখেছেন: “মওলানা সাহেব পশ্চিম পাকিস্তানে যেয়ে এক কথা বলেন, আর পূর্ব বাংলায় এসে অন্য কথা বলেন। যে লোকের যে মতবাদ সেই লোকের কাছে সেইভাবেই কথা বলেন। আমার চেয়ে কেউ তাঁকে বেশি জানে না।” এ-কথা বলেই তিনি রাজনীতির মূলনীতি বিষয়ে মুখ খুলেছেন। “তবে রাজনীতি করতে হলে নীতি থাকতে হয়। সত্য কথা বলার সাহস থাকতে হয়। বুকে আর মুখে আলাদা না হওয়াই উচিত।” বুকে-মুখে এক কথা বলতেন বলেই পাকিস্তানী রাষ্ট্র তাঁকে এক দণ্ডের জন্যেও স্বস্তি দেয়নি। কারারক্ষীদের অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করতেন। তাই তারা তাঁর খোঁজ নিতেন। প্রয়োজনীয় তথ্য দিতেন। ঐ সময়টায় যে প্রচুর ‘শেখ সাহেবের লোক’ জেলে ঢুকছে সে তথ্য তিনি এদের কাছ থেকেই পান। আর এ তথ্য পেয়ে তিনি অস্থির হয়ে যান। ‘আজ আর লেখাপড়ায় মন দিতে পারছি না। কি হবে বাইরে, কর্মীদের কি অবস্থা, অত্যাচার ও গ্রেপ্তার সমানে চলছে, আওয়ামী লীগ কর্মীদের উপর। দিনভরই ছটফট করতে লাগলাম, কাগজ কখন পাব?’ এই ছটফটানি তাঁর শেষ হবার নয়। তাঁর সহকর্মীদের ডিভিশন দেয়া হচ্ছে না, তার কর্মীদের ভালোভাবে খাবার দাবার দেয়া হচ্ছে না। তাই তাঁর উদ্বেগের কোনো শেষ নেই। যারা তাঁর কথা ভাবেন, তার জন্য দোয়া করেন তাদের সম্বন্ধে তিনি লিখেছেন:“দুঃখ হয়, এদের কোনো কাজেই বোধহয় আমি লাগব না। .... একথা সত্য, যখন আমি জেল অফিসে যাই তখন কয়েদিদের সঙ্গে দেখা হলে, জেল অফিসারদের সামনেই আমাকে সালাম দিতে থাকে। যারা দূরে থাকে তারাও এগিয়ে আসে। বুড়া বুড়া দু’একজন বলেই ফেলে, ‘বাবা আপনাকে আমরা দোয়া করি’।” জেলের রান্না ভাত খেতে কষ্ট হয়। তবু খেতে হয়। শুধু বাঁচার জন্যে। তা সত্ত্বেও তাঁর উদ্বেগ, “যারা এই দু’দিনে জেলে এসেছে, তাদের ডিভিশন দেয় নাই, কিভাবে কোথায় রেখেছে — জানার উপায় নেই।” এরই মধ্যে ঝাড়ুদার এক কয়েদি নাছোড়বান্দা। “আমাকে আপনি ছেড়ে দিন, আপনি বললেই জেল থেকে বের করে দিবে।” তার এ কথার উত্তরে বঙ্গবন্ধু বল্লেন, “আমি তো তোমার মতো একজন কয়েদি, আমার ক্ষমতা থাকলেই আমিও বা জেলে আসব কেন?” সে বলে: “আপনি কলম মাইরা দিলেই কাজ হয়ে যায়।” বঙ্গবন্ধু বল্লেন, “কলম আছে, কিন্তু মাইরা দিবার ক্ষমতা নাই।” তাদের সকলের বিশ্বাস তিনি বল্লেই হবে। এই যে মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এবং তাঁর প্রতি মানুষের বিশ্বাস তা তো একদিনে হয়নি। আজীবন তিনি যে তাদের পাশেই ছিলেন। সকল অর্থেই যে তিনি হতে পেরেছিলেন ‘তাদের লোক’। বাবুর্চির রান্না ভালো হয় না বলে নিজেই রান্না করতে নেমে যান। পাইলসের অসুখটা ফের দেখা দিয়েছে। জেলের খাবারে তার ঐ অসুখ আরো বেড়েছে। কিন্তু পরিবার, বিশেষ করে স্ত্রী রেনুকে জানানো যাবে না। তারা দুশ্চিন্তা করবেন। ইত্তেফাক ও তার মালিক-সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে নিয়ে তাঁর চিন্তার শেষ নেই। ইত্তেফাক তাঁর এবং তাঁর দলের কথা বলতো। মানিক মিয়া বঙ্গবন্ধুর বড় ভাইয়ের মতো। তাই ইত্তেফাকের ওপর সরকারের চাপাচাপিতে তিনি খুবই বিক্ষুব্ধ। বন্ধু শহীদুল্লাহ্ কায়সারের ‘সংশপ্তক’ বইটি পড়ে তাঁর খুব ভালো লেগেছে। ঐ বই পড়তে পড়তেই লিখেছেন:“বেপরোয়া গ্রেফতারের পরেও ভেঙে পড়ে নাই দেখে ভালোই লাগছে। রাজনৈতিক কর্মীদের জেল খাটতে কষ্ট হয় না যদি বাইরে আন্দোলন থাকে।” রাজনীতি আর জীবন এভাবেই এক ‘অর্গানিক’ সম্বন্ধে বাধা পড়ে যায়। সন্ধেবেলা তাঁর ঘর বন্ধ করে দেয়। পরেরদিন পাশেই রাখা পাগলদের গোসল করানোর কথা লিখেছেন। পাগলদের সঙ্গে যে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয় তাতে তিনি খুবই মর্মাহত। যদিও পাগলদের চিত্কারে প্রায়ই তিনি ঘুমুতে পারেন না, তবু তাদের জন্য রয়েছে তাঁর দরদী মন। সুযোগ পেলেই তাদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের জন্যে কিছু করতে চেষ্টা করেন। খাবার পাঠান। ৬ জুনে ডায়েরির পাতায় তিনি লিখেছেন:“আগামীকাল ধর্মঘট। পূর্ব বাংলার জনগণকে আমি জানি, হরতাল তারা করবে। রাজবন্দীদের মুক্তি তারা চাইবে। ছয়-দফা সমর্থন করবে।” মানুষের সমর্থন তাঁর প্রতি রয়েছে বলেই তিনি এই নিঃসঙ্গ জেলজীবন হাসিমুখেই বরণ করে নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর মনের অবস্থা বোঝাতে এভাবে লিখেছেন: “আমি একা থাকি, আমার সঙ্গে কাউকে মিশতে দেওয়া হয় না। একাকী সময় কাটানো যে কত কষ্টকর তাহা যাহারা ভুক্তভোগী নন বুঝতে পারবেন না। আমার নিজের উপর বিশ্বাস আছে, সহ্য করার শক্তি খোদা আমাকে দিয়েছেন। ভাবি শুধু আমার সহকর্মীদের কথা। এক একজনকে আলাদা আলাদা জেলে নিয়ে কিভাবে রেখেছে? ত্যাগ বৃথা যাবে না, যায় নাই কোনোদিন। নিজে ভোগ নাও করতে পারি, দেখে নাও যেতে পারি, তবে ভবিষ্যত্ বংশধররা আজাদী ভোগ করতে পারবে। ... জয়ী আমরা হবোই। ত্যাগের মাধ্যমে আদর্শের জয় হয়।” ভয়কে জয় করার জন্যেই কবিগুরুর কাছে ফিরে যেতেন। গুনগুনিয়ে উঠতেন- “বিপদে মোরে রক্ষা করো / এ নহে মোর প্রার্থনা, / বিপদে আমি না যেন করি ভয়।” এর পরেরদিন ৭ জুন। হরতালের দিন। বাইরে কি হচ্ছে কে জানে। সর্বক্ষণ ছটফট করছেন তিনি। লিখেছেন: “বন্দি আমি, জনগণের মঙ্গল কামনা ছাড়া আর কি করতে পারি! ... গুলি ও মৃত্যুর খবর পেয়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে। শুধু পাইপই টানছি। ... কি হবে? কি হতেছে? দেশকে এরা কোথায় নিয়ে যাবে, নানা ভাবনায় মনটা আমার অস্থির হয়ে রয়েছে। এমনিভাবে দিন শেষ হয়ে এলো। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা জেলে আছি। তবুও কর্মীরা, ছাত্ররা ও শ্রমিকরা যে আন্দোলন চালাইয়া যাইতেছে, তাদের জন্য ভালোবাসা দেওয়া ছাড়া আমার দেবার কিছুই নাই। মনে শক্তি ফিরে এলো এবং দিব্য চোখে দেখতে পেলাম ‘জয় আমাদের অবধারিত।’ কোনো শক্তি আর দমাতে পারবে না।” রাতে আর ঘুম আসে না। শুধুই চিন্তা। এর পরেরদিন (৮ জুন) ডায়েরির পাতা জুড়ে রয়েছে গ্রেপ্তার করা কর্মীদের বিবরণ। “কারো পায়ে জখম, কারো কপাল কেটে গিয়েছে, কারো হাত ভাঙা, এদের চিকিত্সা বা ওষুধ দেওয়ার কোনো দরকার মনে করে নাই কর্তৃপক্ষ।” দিনভরই জেল ভর্তি করা হচ্ছিল। কিছু স্কুলের ছাত্রও তাদের মধ্যে ছিল। কেউ কেউ এদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছিল। তাই বাধ্য হয়ে তিনি জেল কর্তৃপক্ষকে জানালেন: “অত্যাচার বন্ধ করুন। তা না হলে ভীষণ গোলমাল হতে পারে।” ঐদিন বিরাট করে ডায়েরি লিখেছেন তিনি। ছয়-দফা যে বৃথা যাবে না সে কথা জোর দিয়ে বলেছেন। “যে রক্ত আজ আমার দেশের ভাইদের বুক থেকে বেরিয়ে ঢাকার পিচঢালা কালো রাস্তা লাল করল, সে রক্ত বৃথা যেতে পারে না।” সারাদিন তিনি পাগলের মতো ঘরে বাইরে হাটছিলেন। ছোট ছোট বাচ্চাদের ধরে এনেছে। জানালা দিয়ে চিত্কার করে তিনি বলছিলেন—“জমাদার সাহেব এদের খাবার বন্দোবস্ত করে দিবেন। বোধহয় দুইদিন না খাওয়া।” এর পরের পাতাগুলোও এমন মানবিক আবেদন ও ছটফটানিতে ভর্তি। মানুষকে কতোটা ভালোবাসলে কারাবন্দি এক নেতা দেশবাসীর জন্যে এমন করে দুঃখ পেতে পারেন তা পাঠকই বিবেচনা করবেন। এই স্বল্প পরিসরে তাঁর মানবিকতার বিবরণ সম্পূর্ণভাবে ফুটিয়ে তোলা আমার পক্ষে সত্যি অসাধ্য। এরপর রয়েছে মায়ের অসুখের কথা। তাঁর জন্যে গভীর কষ্টের কথা। জেলে জেলে ঘুরছেন। মাকে দেখতে পারছেন না। মা-বাবার ছোট্ট ‘খোকা’র সে যে কী আকুতি তা পড়ে চোখ ভিজে আসে। এসব কথা সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত তাঁর কন্যাদেরও চোখের পানি ছল ছল করে বয়ে গেছে। টাইপ করেছে যে মেয়েটি তার চোখের জলে ভিজে গেছে কম্পিউটারের কিবোর্ড। একদিকে মায়ের অসুখ, অন্যদিকে অনেক কর্মী জেলে, অনেকেই আহত, নিহত। তিনি অস্থির। ট্রেন দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু, সিলেটের বন্যায় মানুষের কষ্ট—সবই তাঁকে উতলা করে তোলে। তাঁর কিছুই ভালো লাগে না। তবুও অর্থমন্ত্রী শোয়েবের বাজেট বিবরণ ঠিকই তুলে ধরেছেন। ঐ বাজেটে যে বাঙালির হিস্যা খুবই সামান্য সে কথা অঙ্ক কষে বের করেছেন জেলে বসে। কর ধার্য বেশি করায় জনগণের কি কষ্ট হবে সে কথা ভেবেই তিনি উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি, পূর্ব-পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী এম এন হুদার বাজেট নিয়েও তাঁর মন্তব্য রয়েছে। বিশেষ করে, ছয়-দফার বিরুদ্ধে বলায় তাঁকে এক চোট নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। এরপর পরিবারের কথা লিখেছেন। ছেলে-মেয়েরা ও স্ত্রী তাকে দেখতে আসেন। বড় দুটো ছেলে-মেয়ে বুঝলেও ছোট দুটো তো বোঝে না। তারা বাবাকে ছেড়ে ফিরতে চায় না। তাই বাচ্চাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাঁর মন খারাপ হয়ে যায়। বাবা-মা’র দেখা পান না বলে তাঁর মন আরো ভারাক্রান্ত। ইত্তেফাকের সম্পাদক মানিক ভাইয়ের গ্রেপ্তারে তিনি (বঙ্গবন্ধু) দারুণ উদ্বিগ্ন। তিনি সত্য কথা বলেন বলে তাঁকে জেলে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি কিভাবে জেলের এই জুলুম সহ্য করবেন সেই চিন্তাতেই তাঁর ঘুম আসে না। কয়েকদিন ধরে ইত্তেফাক ও মানিক মিয়াকে নিয়ে কত কথাই না তিনি তাঁর ডায়েরিতে লিখেছেন। ‘সংবাদ’-এর কথাও বার কয়েক এসেছে। এসেছে ন্যাপের কারাবন্দি নেতাদের সঙ্গে জেলে দেখা হবার কথা। ভিন্ন দলের হলেও তাদের জন্য তাঁর দরদ কম নয়। যেসব কর্মী জেলে থেকে পরীক্ষা দিচ্ছিল তাদের জন্যেও তাঁর উত্কণ্ঠার শেষ নেই। এছাড়া জেলে বন্দিরা তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান, তাদের তিনি খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ান, মেটসহ কয়েদিদের ভালো-মন্দ খাবারের ভাগ দেন, পাশের গাছে দুটো হলুদ পাখি, বারান্দায় কবুতরের বাচ্চাটির বেড়ে ওঠা, একটি মুরগির মৃত্যু-যন্ত্রণা — সবকিছুই তাঁর দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শুধু গুরুত্বপূর্ণ ছিল না তাঁর নিজের জীবন। এই ডায়েরির পাতায় পাতায় জায়গা পেয়েছে রাজনৈতিক সহকর্মী, কর্মী এবং সাধারণ কয়েদিদের কথা। আর জায়গা পেয়েছে স্বদেশের মুক্তিচিন্তা। এর মাঝেই আচমকা তাঁকে আসামি করা হয় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়। নিয়ে যাওয়া হওয়া কুর্মিটোলায়। সামরিক আদালতে বিচার শুরু হবে। সর্বক্ষণ পাহারা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। নিঃসঙ্গ। টান টান উত্তেজনা। সারা পূর্ব বাংলায় চলছে আন্দোলন। এক পর্যায়ে ১৯৬৯ সালে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে মুক্তি পান শেখ মুজিব। তাদের ভালোবাসায় হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু। মানুষের প্রতি তাঁর বিশ্বাস ও ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না বলেই এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে পেরেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের দিকে। ডাক দিতে পেরেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের। তিনিই প্রকৃত বীর যিনি মৃত্যুকে ভয় পান না। বারে বারে তিনি মৃত্যুকে উপেক্ষা করে বীরের বেশে জেল থেকে বের হয়ে এসেছেন। মাটি ও মানুষের প্রতি নির্ভেজাল ভালোবাসার দলিল এই রোজনামচা। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধায়নে শেষ পর্যন্ত যে বইটি বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে তার ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম। যুগে যুগে তাঁর এই ত্যাগের কথা, মানুষের প্রতি ভালোবাসার কথা আমাদের দেশে এবং সারাবিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণার উত্স হয়ে থাকবে। বইটির সম্পাদনায় প্রচুর মুন্সিয়ানার পরিচয় মেলে। সংযোজনীতে ছয়-দফা, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, টীকা, নির্ঘণ্ট বইটির সম্পাদনায় পেশাদারিত্ব ও আধুনিকতা স্পষ্টতই ফুটে উঠেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের দিন বলেছেন যে, এই বইয়ের পাতায় পাতায় সাধারণ মানুষের দুঃখ ও গ্লানি ঘোচানোর যে আকুতি রয়েছে তার আলোকেই তিনি স্বদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। গরিব, দুঃখী মানুষের মঙ্গল চিন্তাই হবে তাঁর সকল নীতির মূল কথা। সেটাই স্বাভাবিক। মানুষকে যে বঙ্গবন্ধু কতোটা ভালোবাসতেন তা এই বই পড়ে যেমন বোঝা যায়, তেমনি তাঁর ভাষণগুলো পড়লেও অনুভব করা যায়। আমি অন্যত্র তাঁর জীবন ও ভাষণগুলো নিয়ে গবেষণা করেছি। সেই বইতে (আতিউর রহমান: শেখ মুজিব বাংলাদেশের আরেক নাম) বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী শাহরিয়ার ইকবালের সৌজন্যে অন্য আরেকটি ডায়েরির ইংরেজিতে লেখা একটি পাতা থেকে কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করার লোভ সম্বরণ করতে পারছি না। “As a man, what conces mankind conces me. As a Bengalee, I am deeply involved in all that conces Bengalees. This abiding involvement is bo of and nourished by love, enduring love, which gives meaning to my politics and to my very being.” রাজনীতির এই অমর কবি অক্ষরে অক্ষরে তাঁর কথা রেখেছেন। মানুষকে চিরদিনের ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে ঘুমিয়ে আছেন তিনি বাংলাদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে।
Was this review helpful to you?
or
কারাগারের রোজনামচা মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার দলিল। অসাধারণ বই।
Was this review helpful to you?
or
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের একটি বড় অংশ কেটেছে কারাগারে। ছয় দফা দাবি তোলার আগে ও পরে যখন বঙ্গবন্ধুকে বারবার কারাগারে যেতে হচ্ছে, তখন তাঁর ছোট ছেলে শেখ রাসেল দুধের শিশু। বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন পরিবারের অন্যদের কাছে স্বাভাবিকের মতো হলেও রাসেলের জন্য এটি ছিল একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। ১৮ মাসের অবুঝ শিশুটি ধরেই নিয়েছিল যে কারাগারই ‘আব্বার বাড়ি’। বাবা থেকেও নেই, তাই মাকেই আব্বা ডাকা শুরু করেছিল ছেলেটি। বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের একটি অধ্যায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নতুন বই কারাগারের রোজনামচায়, যে সময়টাতে রাসেলের বয়স ১-২ বছর। ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা উত্থাপনের পর ওই বছরের প্রথম তিন মাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, পাবনা, ফরিদপুর থেকে আটবার গ্রেপ্তার হন ও জামিন পান তিনি। এরপর মে মাসে আবার গ্রেপ্তার হন। তাঁর ওই সময়ের বন্দিজীবনের দিনলিপি হচ্ছে কারাগারের রোজনামচা। বইটির নাম দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ রেহানা। বইটির ভূমিকায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেন, ভাষা আন্দোলন থেকে ধাপে ধাপে স্বাধীনতা অর্জনের সোপানগুলো যে কত বন্ধুর পথ অতিক্রম করে এগোতে হয়েছে, তার কিছুটা এই বই থেকে পাওয়া যাবে। তিনি লিখেছেন, ‘বাংলার মানুষ যে স্বাধীন হবে এ আত্মবিশ্বাস বারবার তাঁর (বঙ্গবন্ধু) লেখায় ফুটে উঠেছে। এত আত্মপ্রত্যয় নিয়ে পৃথিবীর আর কোনো নেতা ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছেন কি না আমি জানি না।’ বঙ্গবন্ধুর এই বইয়ে শুধু কারাগারের চিত্রই নয়, ফুটে উঠেছে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আওয়ামী লীগের অবস্থা, পাকিস্তান সরকারের একনায়কোচিত মনোভাব ও অত্যাচার-নির্যাতনের নানা চিত্র। ফুটে উঠেছে একজন বন্দী বাবার আকুতি, অবুঝ সন্তানের ভালোবাসা। দেশ ও মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর ভাবনা, রাজনৈতিক দর্শন। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বইটি গতকাল শুক্রবার থেকে পাওয়া যাচ্ছে।
Was this review helpful to you?
or
মাটি ও মানুষের প্রতি নির্ভেজাল ভালোবাসার দলিল কারাগারের রোজনামচা। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধায়নে শেষ পর্যন্ত যে বইটি বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে তার ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম। যুগে যুগে তাঁর এই ত্যাগের কথা, মানুষের প্রতি ভালোবাসার কথা আমাদের দেশে এবং সারাবিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণার উত্স হয়ে থাকবে। সংযোজনীতে ছয়-দফা, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, টীকা, নির্ঘণ্ট বইটির সম্পাদনায় পেশাদারিত্ব ও আধুনিকতা স্পষ্টতই ফুটে উঠেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের দিন বলেছেন যে, এই বইয়ের পাতায় পাতায় সাধারণ মানুষের দুঃখ ও গ্লানি ঘোচানোর যে আকুতি রয়েছে তার আলোকেই তিনি স্বদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। গরিব, দুঃখী মানুষের মঙ্গল চিন্তাই হবে তাঁর সকল নীতির মূল কথা। সেটাই স্বাভাবিক। মানুষকে যে বঙ্গবন্ধু কতোটা ভালোবাসতেন তা এই বই পড়ে যেমন বোঝা যায়, তেমনি তাঁর ভাষণগুলো পড়লেও অনুভব করা যায়।
Was this review helpful to you?
or
কারাগারের রোজনামচা-বুক মিভিউঃ অনেকে আজ হাতে মাইক পেলেই বঙ্গবন্ধুকে দেবতার আসনে বসান। অথচ বঙ্গবন্ধু একজন রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন। তারও সংসার ছিল-রাসেল তার গলায় ঝুলে পড়ত। ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধু একদিনে তৈরি হন নি। জীবনের অনেকসময় তিনি কাটিয়েছেন জেলে জেলে। থালা বাটি কম্বল যার জেল খানার সম্বল ছিল। ভূমিকা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বইতে আছে জেলখানা সম্পর্কে সাধারণ ধারণা, যার অনেকই হয়তো এখন বদলে গিয়েছে। আওয়ামী নেতাদের জেলের দিনগুলি, ছয়দফার জন্য তাদের ত্যাগ, তার পাশের পাগলা গারদ সেলের সুখ দুঃখ। তার একাকীত্বের সঙ্গী হলুদ পাখি, মুরগী গুলো, তার যত্নের বাগান। সযত্নে বলেছেন কাকের বাসার বিরুদ্ধে তার যুদ্ধের কথা-হেহে। “অসমাপ্ত আত্মজীবনী বাঙ্গালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামের পথপ্রদর্শক, ভাষা আন্দোলন থেকে ধাপে ধাপে স্বাধীনতা অর্জনের সোপানগুলি যে কত বন্ধুর পথ অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হয়েছে এর কিছুটা এই কারাগারের রোজনামচা বইতে পাওয়া যাবে” সাহিত্যিক বিচারে অসমাপ্ত জীবনী হয়তো অনেক ভালো মনে হবে। সেখানে আছে হাসি কান্না, মজার নানা কাহিনী। তবে ছয় দফার মত ঐতিহাসিক ভিত্তিতে কারাগারের রোজনামচা সংগ্রহে রাখার মত। জেলখানার আত্মিক বিবরণ আছে বইটিতে। মনের মধ্যে ঢাকা জেলখানা ঘুরে আসার ইচ্ছা জাগতে পারে এই বইটি পড়লে। যে কল্পনার সাথে মিলিয়ে নেই-আরে ওই তো ওইখানে বঙ্গবন্ধু থাকতেন, ঐখানে বসতো হলুদ পাখি, তার সামনের বাগান। বঙ্গবন্ধু বসে বসে খিচুড়ি রান্না করছেন-পরে মুরগীর মাংস দিয়ে বিলিয়ে দিচ্ছেন সবার মাঝে। অথচ তিনিও বন্দী। অদূরে হাসপাতালের দিকে তাকিয়ে তিনি নজর বিনিময় করতেন। জেলখানা কর্তৃপক্ষ কি সেই সুযোগ করে দিবে? জায়গা-মত বঙ্গবন্ধু এর উক্তি গুলো একে দিয়ে খুব সুন্দর ঐতিহাসিক মোহ তৈরি করবার সুযোগ কিন্তু আছে। কারাগারকে আপনি তখন দেখবেন অন্য চোখে। সবার আত্মত্যাগেই যে আজকের এই স্বাধীনতা-তাদের কথা ভাববার সুযোগ মিলবে তখন।