User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
মনজুর রশীদ খান এ বইয়ে তাঁর সৈনিক জীবনের ঘটনাপরম্পরা তুলে ধরেছেন সরস ঘরোয়া ভঙ্গিতে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে বাঙালি ক্যাডেটদের কঠোর জীবন, একাত্তরের ২৫ মার্চের আগে ও পরে পশ্চিম পাকিস্তানিদের বাঙালি সেনাদের অবিশ্বাসের চোখে দেখা, তাদের বিরুদ্ধে গৃহীত হয়রানিমূলক নানা ব্যবস্থা, পাকিস্তানে আড়াই বছরের বন্দিজীবন শেষে স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে তাঁর যোগদান, ১৯৭৫ সালে সেনাবাহিনীতে সৃষ্ট গোলযোগে উচ্ছৃঙ্খল সেনাসদস্যদের নিয়ন্ত্রণে তাঁর ভূমিকা, প্রেসিডেন্ট জিয়ার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান-পূর্ব এবং পরবর্তীকালের কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্যে সমৃদ্ধ এ বই। পাশাপাশি জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনামল, সামরিক সচিব হিসেবে তাঁর দেখা রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক নানা ঘটনা এবং নব্বুইয়ের এরশাদ-বিরোধী আন্দোলন, তাঁর পদত্যাগ, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের শাসনাধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন এবং পরবর্তীকালে উদ্ভূত জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রায় অনুপুঙ্খ বিবরণও লেখক তুলে ধরেছেন। ফলে এ বই হয়ে উঠেছে দেশের দীর্ঘ এক কালপর্বের সামরিক-রাজনৈতিক ও সামরিক ইতিহাসের অঙ্গীভূত অংশ।
Was this review helpful to you?
or
মনজুর রশীদ খান ১৯৬৪ সালের ১৮ এপ্রিল তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে যখন অবসর গ্রহণ করেন, তখন তিনি মেজর জেনারেল। তাঁর সুদীর্ঘ চাকরিজীবন বৈচিত্র্যময় ও নানা ঘটনা পরম্পরায় ভরা। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শিয়ালকোট রণাঙ্গনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৯৭১ সাল থেকে প্রায় আড়াই বছর অন্যান্য বাঙালি সামরিক অফিসারের মতো পাকিস্তানে অন্তরীণ জীবন যাপন করেন। দেশে ফিরে আসেন ১৯৭৩ সালে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন মেজর পদে। ১৯৮৬ সালে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন এবং বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদ এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের সামরিক সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মনজুর রশীদ খান তাঁর দীর্ঘ সামরিক জীবন নিয়ে রচনা করেন আত্মজৈবনিক গ্রন্থ আমার সৈনিক জীবন: পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ। এ বইটিতে লেখক তাঁর চাকরিজীবনের নানা ঘটনা তুলে ধরেন। তখনকার সময়ে সরকারি চাকরিক্ষেত্রে বাঙালিরা ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হতো। ফলে সেনাবাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগদান খুব সহজ ছিল না। তবে প্রচণ্ড মানসিক শক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের কারণে তিনি সেদিন তাঁর কাঙ্ক্ষিত পদটিতে নিয়োগ পেয়েছিলেন। পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেই দিনগুলো ছিল ভীষণ উত্তাল। বিশেষ করে ঊনসত্তর-পরবর্তী সময়ে বাঙালি অফিসারদের অবিশ্বাসের চোখে দেখা হতো। মনজুর রশীদ খানও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। মনজুর রশীদ খান তাঁর বইটিকে মোট পাঁচটি পর্বে বিভক্ত করে বর্ণনা করেছেন চাকরিজীবনে ঘটে যাওয়া নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ। প্রতিটি পর্বে রয়েছে একাধিক অধ্যায়। প্রথমেই একজন বাঙালি হিসেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে তাঁর অন্তর্ভুক্তিতে যেসব প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন, এর বর্ণনা দিয়েছেন লেখক। সৈনিক জীবনের প্রতি লেখকের প্রবল আকর্ষণ এখানে ফুটে উঠেছে। এ ছাড়া ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের বেশ বিস্তারিত বয়ান রয়েছে প্রথম পর্বে। ১৯৭০ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় ১০ লাখ মানুষ মারা যায় এবং আরও কয়েকগুণ বেশি লোক গৃহহীন হয়। ইসলামাবাদ সরকার সে ব্যাপারে ছিল উদাসীন। এ দুর্যোগে বিশ্বসম্প্রদায় যেভাবে এগিয়ে আসে, তার তুলনায় পাকিস্তান সরকারের সাড়া ছিল খুবই নগণ্য। এ ঘটনা শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব রাখে। ’৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানিরা তাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। ফলে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। ২৫ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানিরা মানবেতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা চালায় নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বাঙালি সেনা অফিসারদের কড়া নজরদারিতে রাখা হয়। শুধু বাঙালি অফিসার নয়, পাকিস্তানি অনেক সামরিক অফিসারও পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধের খুব সামান্যই জানতেন। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের কাছে পরাজিত হওয়ার পর বাঙালি অফিসারদের বন্দী করে পাকিস্তানি সামরিক শাসকগোষ্ঠী। অবশেষে ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় বাহিনীর হাতে আটক পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের বিনিময়ে বাঙালি অফিসারদের ছেড়ে দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনী পুনর্গঠনে অভিজ্ঞ সেনা অফিসারের প্রয়োজন পড়ে। মনজুর রশীদ খানকে মেজর পদমর্যাদায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর তাঁকে বাংলাদেশ রাইফেলসে বদলি করা হয়। তখনকার সময়ে সীমান্তের চোরাচালান রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার দিন তিনি ছিলেন দিনাজপুরে। সে সময়ের সেনাবাহিনীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় মনজুর রশীদ খানের বইটিতে। জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ড, এরশাদের সামরিক শাসন জারি ইত্যাদির বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন লেখক। তবে তাঁর বর্ণনায় সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ ব্যাপারগুলোই প্রাধান্য পেয়েছে। বেসামরিক সাধারণ জনগণের কথা সেখানে প্রায় অনুপস্থিত। সেনাবাহিনীর ভেতরে বড় পদে কর্মরত থাকায় দেশের পরিবর্তনের প্রধান বাঁকগুলো তিনি চিহ্নিত করতে পেরেছেন সহজেই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এরশাদের ভূমিকা প্রত্যক্ষ করেছেন তাঁর সামরিক সচিব হিসেবে কর্মরত থেকে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনকে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন একজন বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিকোণ থেকে। এরশাদের পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। সাহাবুদ্দীন আহমদের সামরিক সচিবের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। তাঁর অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের চিত্র পাওয়া যাবে এ বইটিতে। এ ছাড়া বহুপ্রতীক্ষিত সংসদীয় সরকারপদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তনের বর্ণনায় সমৃদ্ধ হয়েছে বইটি। কেবল একজন সেনা অফিসারের আত্মজীবনী নয়, রবং দীর্ঘ কালপর্বের রাজনৈতিক ও সামরিক ইতিহাসের দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে বইটি।