User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
৪১টি গুঁইসাপ নিয়ে রিভিউ/ মুজিব মেহদী হাসিবুল আলমের '৪১টি গুঁইসাপ' পড়ে উঠলে পরে এটা মনে না হওয়া হবে এক আশ্চর্য ঘটনা যে, কবিতা করা ব্যাপারটা আহামরি কোনো ব্যাপার নয়। আরো মনে হতে পারে, খুব সহজ ও আলতো করে ধরে এদিক দিয়ে ঢুকে কবিতার ওদিক দিয়ে বেরিয়ে যেতে আঁটসাঁট কোমর বেঁধে বীরপুঙ্গব হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার কোনো দরকার নেই, জবরদস্তির দরকার তো নেই-ই : 'আচ্ছা, আজকে তো মারা যাওয়া যেতে পারে। দিনটা ভালো ছিলো-- সকালে উঠে আজ আমার কাউকে মনে পড়তে ছিলো না। আমাকে যারা যারা ফেলে রেখে গ্যাছিল-- তাদের কারো নাম কোনো সূত্র ধরেই আর মনে করতে চেয়েও মনে করতে পারতেছিলাম না। ব্রাশ করতে করতে তখনো ভাবতেছিলাম-- আজকের দিনটা তো ভালো মারা যাবার জন্য। রাস্তায় জ্যাম নেই। মগজে বিক্ষোভ নেই। এটাই সুযোগ-- কারণ আজ মারা গেলে আগামী অন্তত একশো কোটি বছর আমি নিশ্চিন্তে একা থাকতে পারবো।' (আজ) এমন ভাবনাকে জোর সমর্থন দেয় বইয়ের একেকটি কবিতাকে হাসিবুলের একেকটি গুঁইসাপ দাবি করা এবং 'কবিতা মানে তো এক প্রকার চুলকানি কিংবা ঢোল কোম্পানির মলম বিষয়ক মনোচিকিৎসা' জাতীয় বিবৃতি। কিন্তু এমনটা মোটেই নয় যে এসব প্রসঙ্গ উত্থাপন করে আমি এটা বোঝাতে চাইছি, কবিতা লেখার জন্য একজনের কোনোই প্রস্তুতির দরকার নেই। দরকার আছে। তবে প্রস্তুতি ও কসরতের ছাপগুলো আড়াল করতে পারা কবিতায় খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ গুণ সব ভালো কবিদের থাকে; হাসিবুলেরও আছে : 'আমাদের যৌথঘুমের মধ্যে গতজন্মেও বর্ষা এসেছিল আর চুমুগ্রস্ত আমরা স্লিভলেস সিপারা থেকে আবৃত্তি করে নিচ্ছিলাম একে অন্যের অপঠিত দেহাবশেষ। এইসব অসভ্য আর্দ্রতায় শরীর আজো বিছানাগামী হয়ে উঠতে চায় অথচ আমরা তো বহু আগেই ডার্কস্পেস থেকে হারিয়ে যাওয়া এক প্রাচীন প্রার্থনাঘরের স্মৃতি-- যার শ্যাওলাসক্ত দূরত্ব বেয়ে নিয়ত জমা হচ্ছে আগ্রহশূন্য দীর্ঘশ্বাস...'। (আষাঢ়ের রোমন্থন) এ বইয়ের কোনো কোনো কবিতা পড়লে মনে হয় হাসিবুল যেন উশকোখুসকো চুল ও ময়লা জামাপরিহিত এক হাফ-উন্মাদ, যে ব্যস্ত শহরের পথের মোড়ে দাঁড়িয়ে নিজের মনে কথা বলে যাচ্ছে। অনতিদূরে দাঁড়িয়ে লোকজন এ দৃশ্য দেখছে আর নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছে। অথচ কাছ ঘেঁষে কান পেতে শুনলে তারা বুঝতে পারত যে গুঁইসাপ নিয়ে মত্ত এই লোকের ওসব কথাবার্তার সারবস্তু তাদের মতো অনুন্মাদের জন্যই বেশি উপযোগী; কারণ নবজাতককে গলাটিপে হত্যা করা মা, জিইসির মোড়ে জন্ম নেওয়া শিশু, স্ত্রীকে খুন করে পালানো প্রবাসী স্বামী, প্রমুখ বিশেষ সামাজিক চরিত্রের মনস্তত্ত্ব ও ঘটনার পেছনের ঘটনা সে-ই সবচেয়ে বেশি জানে। হাসিবুল খুব হালকা চালে, অনুত্তেজিত ঢংয়ে, আয়েস করে কথা বলে; যেন তার বেলা বয়ে যাচ্ছ না কোনোদিকে। কিন্তু শান্তশিষ্টভাবে বলা সেসব কথায় প্রায়ই ব্যাপক উত্তেজনা ঠাসা থাকে। তদুপরি ও প্রায়ই হালকা চালে গুরুত্বপূর্ণ সব প্রশ্ন উত্থাপন করে বসে। এসব প্রশ্নের আদপে কোনো জবাব হয় না বা হলেও সে জবাব না জানলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় না বা কবিতার মজা নেওয়ায় সমস্যা হয় না : 'আপনি জানেন?/ আপনি আপনার কততম সংস্করণ?', 'খুন কি রাত থেকে টুপ করে ঘুম খুলে রাখবার প্রক্রিয়া?', 'মানুষের শহরে এতো এতো কাকেরা থাকে ক্যান? মানুষের ভেতরে কি তাহলে সত্যিই খুব ময়লা?', প্রভৃতি। '৪১টি গুঁইসাপ' বইটা গুরুত্বপূর্ণ; এই গুরুত্বকে আরো নিষ্কলুষ বোধ হতো যদি ছাপবার আগে এর একটি সার্বিক সম্পাদনা নিশ্চিত করা যেত। থাক এসব। বরং চলুন, হাসিবুল আলমের আরেকটা পূর্ণ কবিতা পড়ে এই আলাপের ইতি টানা যাক : '১. আমি টিউশনি করাই। সপ্তাহে ছ'দিন পড়াই। একবেলা খেতে দেয়। মাস শেষে পাই পনেরশো। ২. আমার এক দূর সম্পর্কের মামা আছেন। সারাদিন অফিসে বসে থাকেন। চব্বিশ বছরের সাধনায় কলম দিয়ে একটানে মানুষ কিনবার কৌশল উনি আয়ত্ত করেছেন। মাস শেষে মানুষ বিক্রি বাবদ পান পঞ্চাশ হাজার! বাদ বাকী আমার জানা নেই! ৩. প্রতিঘণ্টায় মাথায় তিনশো ইট নিয়ে দশতলা ভবনের সিঁড়ি ভাঙেন একজন। দিনশেষে পান একশো পঞ্চাশ! ৪. মণি-- সমস্ত রাত পুরুষেরা ওকে ছানে। রাতপ্রতি তিনশো! ৫. কার্ল মার্কস আপনি কী করেন?' (কার্ল মার্কস) প্রকাশক : চৈতন্য প্রচ্ছদ : রাজীব দত্ত