User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
তৃপ্তি পেলাম
Was this review helpful to you?
or
শ্রদ্ধেয়/সম্মানিত লেখক শাহাদুজ্জামান'কে নিয়ে নতুন করে আসলেই কিছু বলার নেই, তার লেখা পড়লে মতে হতে থাকে সামনে টিভি আর আমি রিমোট হাতে কোনো সিনেমা নাটক দেখছি, একদম মগজে একটা একটা ভিডিও ক্লিপের সৃষ্টি হয়। এছাড়া সবচেয়ে আকর্ষণীয় আমাদের জীবনানন্দ দাশ, যিনি লেখার অন্তরনিহিত মুল খোরাক। ??
Was this review helpful to you?
or
একজন জীবনানন্দ। একটি দীর্ঘশ্বাস। চমৎকার হয়েছে। গল্পে পাঠককে আনন্দ দিবে, দু:খ দিবে উদাসীন করে তুলবে
Was this review helpful to you?
or
একজন কমলালেবু মিলু, শৈশবের জীবনানন্দ দাশ। বরিশালে কাব্য, প্রজ্ঞা, রূপকথা, ঘাস, ফুল, পাখি মিলিয়ে এক মায়াবী শৈশব ও কৈশোর কেটেছে জীবনানন্দের। জীবনানন্দ ছিলেন নির্জন, নিভৃত, নিম্নকন্ঠ ও মুখচোরা। সবাইকে সন্তুষ্ট করাতে ব্যস্ত। লেখা ছিল তার কাছে মানুষ হবার সমান্তরাল, লোকে না দেখুক , না বুঝুক তবুও লেখার কাজটা করে গেছেন অবিরাম। জগত সংসার বাকি যে কাজই করবার চেষ্টা করেছেন তাদের নাকাল হয়েছেন বারবার। যেকোনো জাগতিক কাজে সাফল্য পেতে হলে যে নূন্যতম সজাগ সতর্ক এক ধরনের প্রবণতা দরকার জীবনানন্দের মগ্ন ব্যক্তিত্বে সেই প্রবণতা ছিল না। প্রবাদ আছে মানুষ স্বপ্ন দেখে আর কোথাও কে একজন হাসে। তাঁর জীবনটাও ছিল ঠিক এমনই। স্ত্রী লাবন্যও সব সময়েই তাকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। ব্যক্তি জীবনানন্দ এবং কবি জীবনানন্দ কোনোটাই তাঁর স্ত্রীকে খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারেন নি। আর্থিক দুরবস্থা ছিল চরমে।জীবনানন্দ-লাবণ্য দাম্পত্য ছিল অসুখী , অসফল। জীবনানন্দের প্রথম প্রেমিকা খুড়তুতো বোন বেবি বা শোভনাকে সে ভুলতে পারেনি কোনোদিন। তাঁর লেখা গল্পে ব্যাপারটা ফিরে এসেছে বার বার।১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট দেশভাগ স্থির হওয়ায় কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে সপরিবার কলকাতায় ভাই অশোকানন্দের ল্যান্সডাউন রোডের বাড়িতে চলে যান। একান্ত প্রিয় বরিশালে আর ফিরে যাওয়া হয়নি।এটা নিয়েও তাঁর ছিল মনকষ্ট।লিখেছেন প্রচুর। পাঠক প্রিয়তা প্রায় শূন্য।কেউ বুঝেনি তাকে৷ তবুও জীবনানন্দ সাহস হারাননি। আজ না হক মৃত্যুর পর তার সাহিত্য কর্ম আলোড়িত করবে বিশ্বকে এটা তাঁর বিশ্বাস ছিল বরাবরই। কিন্তু মানুষের কাজ এবং সৃষ্টি মানুষকে বড় করে এজন্যই হয়তো বনলতা জীবনানন্দের চেয়েও জনপ্রিয় । জীবনানন্দ জীবনের অন্তিম সময়ে কমলালেবু খেতে চেয়েছিলেন।জড়ানো গলায় বললেন "একটা কমলা লেবু খেতে পারব"।জীবনানন্দ অবশ্য একবার কমলালেবু নামে একটি কবিতাও লিখেছিলেন। লেখক শাহাদ্দুজ্জামানকে জানাতে হয় ধন্যবাদ। এটি আসলে কি একটি উপন্যাস? মনে হয় না , নাকি একটি জীবনকাহিনী, নাকি একজন সাহিত্যিক জীবনানন্দ আর মানুষ জীবনানন্দের বিপন্ন বিস্ময় আখ্যান সেটি পরিষ্কার না হলেও, নিঃসন্দেহে বলা যায়, ‘একজন কমলালেবু’ একটি গবেষণামূলক উপস্থাপনা যা বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। P.S. I am deeply moved and touched. Mr. Das was a mind blowing fated looser.
Was this review helpful to you?
or
Not Bad
Was this review helpful to you?
or
প্রেম ধীরে মুছে যায় নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয় হয় নাকি? নাম জীবনানন্দ হলেও দুঃখ ছিল তার সারাজীবনের সঙ্গী। প্রেমে পড়েছিল মামাতো বোনের। সে প্রেম আর পূর্ণতা পায়নি। প্রেম সফল হোক আর অসফল জীবন থেমে থাকে না। বিয়ে করলেন সংসার হলো। সংসারে চলতে থাকল টানাটানি। জীবনে অশান্তি সংসারে অশান্তি তবু থেমে থাকেনি সাহিত্য চর্চা। বৃষ্টি এসে শুকনো কাপড় ভিজিয়ে দিয়ে চলে গেলো তবু থামেনি লিখা। লিখা প্রকাশ হলো দৈনিক পত্রিকায় কিন্তু সাহিত্য সমাজে সাড়া ফেলতে পারলেন না উল্টো সাহিত্য সমাজ হাসি তামাশ শুরু করলেন। কবি গুরু পর্যন্ত যার প্রতিভা বুঝতে পারল না। বুক ভরা কষ্ট নিয়ে এক দুপুর বেলা হাঁটতে হাঁটতে চাপা পরলেন ট্রামের নিচে। দুর্ঘটনা নাকি সুইসাইড? নিজের সফলতা দেখে না যেতে পারলেও জীবনানন্দ দাশ হয়ে ওঠেন বাংলার নির্জনতম কবি। বাংলা সাহিত্যের এক রত্ন যাকে বলা হল রূপসী বাংলার কবি। যাকে ছাড়া বাংলা সাহিত্য কল্পনা করা যায় না। জীবনানন্দ লিখেছেন হাজার পৃষ্ঠা প্রকাশ করেছে সামান্য অংশ, বাকিটা রেখেছে তালাবন্ধ ট্রাঙ্কে। জীবনানন্দ দাশের কবি হয়ে ওঠার জীবনী গল্প। শাহাদুজ্জামান এক অন্যরকম শক্তিশালী লেখক। কবির জীবন আলোচনা করতে তুলে এনেছেন সেই সময়ের সাহিত্য সমাজকে। কখনো ব্যাখা করেছেন জীবনাননন্দের কবিতা কখনো জীবনানন্দের জীবনী। "একবার যখন দেহ থেকে বার হয়ে যাব আবার কি ফিরে আসব না আমি পৃথিবীতে? আবার যেন ফিরে আসি কোনো এক শীতের রাতে একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে কোনো এক পরিচিত মুমূর্ষুর বিছানার কিনারে"। শাহাদুজ্জামান কবির এই ইচ্ছাকেই পূর্ণ করতেই বোধহয় বইয়ের নাম রেখেছেন একজন কমলালেবু।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ।
Was this review helpful to you?
or
nice
Was this review helpful to you?
or
একজন মানুষের প্রায় পুরোটাই কষ্টের জিবন, কিন্তু অন্যের জন্য রেখে গিয়েছেন প্রশান্তির পরশ। এই একজন মানুষটাই কমলালেবু...
Was this review helpful to you?
or
চমৎকার একটা বই! এক কথায় অসাধারণ..
Was this review helpful to you?
or
জীবনানন্দ সম্পর্কে জানতে হলে এ বইটি পড়তে হবে। খুবই করুন বাংলার শুদ্ধতম কবির জীবন।
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দের কবিতা পড়ে মন্তব্য লিখলেন, "তোমার ভাষায় জবরদস্তি অাছে", "তাকিয়ে দেখার অানন্দ অাছে", "কিচ্ছু হয়নি"। সর্বশেষ মন্তব্য ছিলো "চিত্ররূপময়"। রবীন্দ্রনাথ হয়তো পুরোপুরি বুঝতে পারেননি বনলতা সেনের কবিকে। জীবনানন্দ গুছিয়ে কথা বলতে পারতেননা। লোকের সাথে মিশতে জানতেননা। বারবার চাকরি হারিয়েছেন। নিজের ভাইয়ের পয়সায় চলেছেন। শোভনা নামের এক মেয়েকে ভালোবেসে প্রত্যাখান পেয়েছেন। মানসিক চাপের ভিতর ভারমুক্ত হয়েছে মাস্টারবেশান অার বেশ্যালয়ে ডুকে। ঢ্যাঁড়স অার চিংড়ি খেয়ে সস্তা বোর্ডিং-এ থেকেছেন বছরের পর বছর। বেকার জীবনানন্দ অপমানিত হয়েছেন সবজায়গায়। নিজের বউয়ের সাথে বিছানায় শুতেও পারেননি। পরিবারের সবাইকে মেরে নিজে নিজেকে মেরে ফেলার কথা ভেবেছেন। মাথায় উপর কোনো অাশ্রয় ছিলোনা। লেখক হিসেবে কোনো স্বীকৃতি পাননি ভদ্রমহলে। কবিতা বেঁচতে চেয়েছেন৷ কিনেনি কেউ। কিন্তু লিখে গেছেন একাগ্রতায়। হাজার হাজার পৃষ্ঠা লিখেছেন, প্রকাশ করেছেন সামান্য। তাঁর অার্ট তাকে সোনাও দেয়নি সুখও দেয়নি। হাসপাতালে একটা বেড পাননি ধীরে-সুস্থে মরার জন্য। হাসপাতালে তাঁর শেষ ইচ্ছে ছিলো একটা কমলালেবু খাওয়া। মরার পরে অবশ্য অামরা স্বীকৃতি দিয়েছি তাঁকে। তাঁর দু'টি কথা অামাকে ভাবায়, "অামি এই প্রজন্মের জন্য লিখিনা। পরবর্তী প্রজন্ম এই লিখা খুঁজে নিবে।" "মানুষ মরে গেলে ফ্রী ঔষধে কি লাভ?" শাহাদুজ্জামানের অসাধারণ হাতে উঠে এসেছে জীবনানন্দের অাদ্যোপান্ত। কিন্তু একটা বিষয় তিনি বির্তকিত রেখে গেলেন, জীবনানন্দের মৃত্যু কি অাত্নহত্যা নাকি হত্যাকান্ড? অামরা এখনো উত্তর খুঁজছি।
Was this review helpful to you?
or
ex
Was this review helpful to you?
or
order dewa jacchena
Was this review helpful to you?
or
একজন কমলালেবু তে লেখক বিনা যুক্তিতে রহস্য সৃষ্টি করেছে। জীবনান্দ দাশের জীবনের উপর লেখা উপন্যাস, তবে লেখক ধারাভাষ্যকারের মতো কবির জীবন বর্ণনা করেছে, অতি রোমাঞ্চকর বর্ণনা। কবির জীবনের নানান কানাগলিতে পাঠকে পৌঁছে দিয়েছে এই বই। এর পাশাপাশি সম সাময়িক কবি লেখক, সাহিত্য পরিমন্ডল নিয়ে একটা অন্যরকম ধারণা পাওয়া যাবে বইটি থেকে। কবির জীবনের উত্থান – সংগ্রাম – প্রেম – এগুলোর পড়তে পড়তে পাঠক সহজেই নিজেকে সেই সময়ের চরিত্র হিসেবেও অনুভব করতে পারে। তবে শেষের দিকে লেখক লিখেছে, কবির মৃত্যু নিয়ে রহস্য – আত্মহত্যা, দূর্ঘটনা নাকি হত্যাকান্ড। তবে এই তিনটি ধারণার সত্যতা যাচাইয়ের কোনো চেষ্টা লেখক করে নি। হত্যার কথাটা এক্সট্রা একটা মোহ সৃষ্টি করতেই বুঝি যুক্ত করা হয়েছে, কারণ বই এর ফ্লাপেও এই লাইনটা অর্ন্তভুক্ত!
Was this review helpful to you?
or
'একজন কমলালেবু' বাংলা সাহিত্যর সবচেয়ে নির্জনতম ও নিসঙ্গতায় ডুবে থাকা কবির বিষণ্ণ জীবনের ভাব-সম্প্রাসারণ৷ সেই কবি— যিনি পৃথিবীর দিকে তাকিয়েছেন বিপন্ন বিস্ময়ে৷ সেই কবি—যার মাথার ভিতর কোনো শান্তি নয়; ভালোবাসা নয়; বোধ কাজ করে৷ সেই কবি— আট বছর আগে একদিন যার লাশকাটা ঘরে ঘুমাবার ইচ্ছা জেগেছিল৷ যিনি প্রেমিকার হৃদয়কে ঘাস বলেছিলেন৷ _ জীবনানন্দ দাশ— বিষাদতার নিপুণ সংজ্ঞা৷ জীবনকে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন প্রজাপতির জীবনের মত— স্বাধীন ও রঙ্গিন কিন্তু যার ডানা ধরে ক্রমাগত টেনে চলছে ডানপিটে ছেলের দল৷ আরো বলেছিলেন জ্যোৎস্নায় ঘাইহরিণীর ডাকে ছুটে আসা, শিকারীর গুলিতে নিহত হরিণের মত অসহায় আমরা সবাই৷ বাংলার প্রকৃতিকে শব্দের জালে বুনেছেন অন্য কোনো চিত্রশিল্পীর রঙিন ক্যানভাসের চেয়েও অধিক নিখুঁত এবং সূক্ষভাবে৷ _ জীবনানন্দ দাশের সারাজীবনে প্রাপ্তি সংখ্যা ছিল সামান্যই৷ অর্থকষ্টে জর্জরিত অবস্থা— চাকরিবিহীন বেকারত্ব সংগ্রাম— ব্যর্থ ভালোবাসা সবকিছু মিলিয়ে হতাশার জীবন৷ তবুও সব তাচ্ছিল্য করে শুধু চেয়েছিলেন কবিতা লেখার জন্য শান্ত নিবিড় জায়গা৷ জীবনানন্দ দাশ তাঁর সমসাময়িক প্রজন্মের জন্য লেখেননি৷ কিংবা তার পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও নয়৷ তিনি লিখেছিলেন তৃতীয় প্রজন্মের জন্য৷ তাই সেই সময়ে সমালোচকের তীব্র নিন্দা ছাড়া কপালে কিছুই জোটেনি৷ অথচ কবিতার নিগূঢ় অর্থ অনুধাবনে ব্যর্থ প্রজন্মের কাছে পাগল-মাতাল উপাধি ঠিকই জুটেছিল৷ _ জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন অনেক কিন্তু তার সামান্যই প্রকাশিত হয়েছে৷ মৃত্যুর পরে খাটের নিচে কালো ট্রাঙ্কে আবিস্কৃত বিশটি উপন্যাস এবং অসংখ্য কবিতাকে 'তুতুনখানেমের গুপ্তধন' বললেও ভুল হবে না৷ উপন্যাসে নিজের বেদনাদায়ক জীবনের প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট৷ _ বিস্বাদ জীবনে অনেকবার আত্নহত্যার চিন্তা মাথায় উঁকি দিয়েছিল৷ কিন্তু 'অনেক লেখা বাকি' বলে সেই চিন্তায় কাঁটা দাগ দিয়েছিলেন৷ অবশেষে আদিম সাপের মত ছড়িয়ে থাকা কলকাতার ট্রামলাইনের ক্যাচার নির্ধারিত করেছিল করুণ জীবনের সমাপ্তি৷ _ অতি সুস্বাদু বই৷ বাংলার শুদ্ধতম কবিকে আরো গভীরভাবে চেনা হলো৷ লেখক শাহাদুজ্জানের মতে 'একজন কমলালেবু' উপন্যাস৷ তবে পড়তে গিয়ে উপন্যাসের চেয়ে নন-ফিকশন বললেই বোধগম্য হয়৷ সমস্ত বইজুড়ে জীবনানন্দ দাশের সাথে লেখক এক নিবিড় বোঝাপড়ায় লিপ্ত হয়েছেন৷ জীবনানন্দের ভারী কিছু কবিতার ব্যবচ্ছেদ করেছেন নিপুণভাবে৷ যা বেশ ভালো লেগেছে৷ অতি সূক্ষ এবং পর্যায়ক্রমিকভাবে বিশ্লেষণ করেছেন জীবনানন্দ দাশের বিচিত্র জীবন৷ অবশ্যপাঠ্য!
Was this review helpful to you?
or
A well written fiction, mixture of imagination and fact.
Was this review helpful to you?
or
Loved it.
Was this review helpful to you?
or
আমি জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে আমি সবসময় একটা কথা বলি, যে ব্যক্তি জীবনানন্দ কে পায়নি, সে জীবনের আনন্দ হতে বঞ্চিত। তাই বলা বাহুল্য যে জীবনানন্দ দাশের প্রতি দুর্বলতার স্থানটি আমার ক্ষত ও আরোগ্যের মাঝে। লেখক এমন নাম কেন রাখলেন তা ঠিক আমার বোঝা হয়নি তাই এই বইটি চোখের সামনে থাকতেও আমি কখনও খেয়াল করিনি। কিন্তু একদিন নিজে থেকেই খটকা লাগলো, নামের ভেতর যে ছবিটি ভাসছে সেটি যেন খুব পরিচিত। প্রচ্ছদের এই বিষয়টি আমার খুব অদ্ভুত লেগেছিল। আর ছবিটি খুব পরিচিত কারণ জীবনানন্দ বলতে তার সকল পাঠকের কাছে নিশ্চয়ই এই ছবিটি খেলা করে। আর নামটি নিশ্চয়ই এখান থেকে প্রাপ্ত- "একবার যখন দেহ থেকে বার হয়ে যাব আবার কি ফিরে আসব না আমি পৃথিবীতে? আবার যেন ফিরে আসি কোনো এক শীতের রাতে একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে কোনো এক পরিচিত মুমূর্ষুর বিছানার কিনারে।" বইটি পড়তে গিয়ে আমার সবচেয়ে পছন্দের বিষয়টি ছিল, আমি যখন পড়ছিলাম আমার মনে হচ্ছিলো আমি জীবনানন্দের চোখ দিয়ে তাকেই দেখছি, লেখকের নয়। বইয়ের শুরু এবং শেষ চমৎকার; বলতে পারতাম কেন কিন্তু বললাম না কারণ গল্পটা জমা থাক। বায়োফিকশন বলতে পারতাম কিন্তু বইয়ের শেষে দেখলাম লেখক ৫৬/৫৭টি বই পড়ে এর একটা মূল অবস্থানে দাঁড়িয়েছেন তাই এটিকে একটা ডক্যুফিকশন বলা যায়; শ্রম যে সার্থক সেটা উনিও নিশ্চয়ই জানেন। আমার কাছে এটিকে জীবনানন্দের একটি কমপ্লিট হিস্টোরি মনে হয়েছে। যতটুকু প্রয়োজন জানা হয়ে যাবে এমনকি জীবনানন্দকে বুঝতেও সহজ হবে। একটা কথা বললেই নয়, স্তিফেন ডেভিস এর হ্যামার অফ দ্যা গডস(লেড জেপেলিন) এবং লাইফ,ডেথ, লিজেন্ড(জিম মরিসন)-এ বিষয়টি আমি পেয়েছিলাম। শিল্পীর শিল্প কিভাবে তার জীবনের কোন অংশ থেকে এসেছে তা চ্যাপ্টার এর শিরোনামে ছিল; এই বইতেও সেই ব্যাপারটি আছে। ধন্যবাদ লেখককে, আমাদের আবছা জীবনান্দ থেকে জীবনানন্দের সাথে পরিচয় করাবার জন্য। ধন্যবাদ আপনার সেই শিক্ষককে যিনি আপনাকে জীবনানন্দের সাথে পরিচয় করিয়েছিলেন যার কারণে বস্তা বন্দি থেকে বের হয়ে আজ অবধি আপনার জীবনানন্দের চর্চা একটা শৈল্পিক রুপ পেলো।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম : একজন কমলালেবু লেখক : শাহাদুজ্জামান বইটি জীবনানন্দের জীবনী বলা চলে কিন্ত এমন ভাবে জীবনীটি লিখা হয়েছে যে "জীবনী"র মতো মনে হবে না। শাহাদুজ্জামানের লিখা নিয়ে অতিরিক্ত কিছু বলার নেই, তার লিখা যতই পড়ছি ততই তার কঠিন ভক্ত হয়ে যাচ্ছি। বইটির প্রচ্ছদ খুবই সুন্দর, সেখানে দুটি চোখ দেখা যাচ্ছে। যা দেখলেই বুঝা যায় যে চোখ দুটো জীবনানন্দের। এই নাম শুনেনি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর এবং তার একটিও কবিতা পড়েননি এইরকম মানুষ পাওয়া ও দুষ্কর। নিজ থেকে না পড়লেও স্কুলের বইতে আমরা কমবেশি সবাই তার কবিতা পড়েছি। আমার বাসায় "জীবনানন্দ কবিতা সমগ্র" আছে, কবিতা পড়ার খুব অভ্যাস নেই তাই নিয়মিত পড়া না হলেও মাঝে মাঝে পড়তাম, ভালোই লাগতো কিন্ত এখন বইটি শেষ করে তার কবিতা পড়তে আরও বেশি ভালো লাগছে। এখন তার কবিতা পড়লে মনে হয় "আরে এই কবিকে তো আমি খুব ভালো করে চিনি"। তখন পড়ার মধ্যে অন্য এক আনন্দ পাওয়া যায়। নামের মধ্যে তার আনন্দ থাকলেও জীবনে তার আনন্দ খুব কমই ছিল। নানান সংগ্রাম করে জীবন কাটিয়েছেন। বইটির নাম "একজন কমলালেবু" এটা দেখে আমার মতো অনেকের মনেই প্রশ্ন আসে যে "জীবনানন্দে"র সাথে আবার "কমলালেবু"র কি সম্পর্ক? জানতে চান, কি সম্পর্ক? তাহলে সময় এবং সুযোগ বুঝে পড়ে ফেলুন বইটি। সব প্রশ্নের উওর পেয়ে যাবেন। বইটির প্রতি আপনাদের আগ্রহী করার জন্য "জীবনানন্দে"র কিছু তথ্য আপনাদের জন্য পেশ করছি : ১. তার কবিতার মধ্যে নজরুলের ছাপ পাওয়া যেত ২. দলবেঁধে আড্ডা দেওয়া তার কখনোই পছন্দ ছিল না ৩. ১৯২৭ সালে তিনি নিজের টাকায় প্রথম কবিতার বই প্রকাশ করেন ৪. ২০ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতা ছাপা হয়। কোনো এক নববর্ষের সংখ্যার প্রথম পাতায় কবিতাটি ছাপা হয় ৫. বাসরঘরে তিনি তার স্ত্রীকে আবদার করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের "জীবন মরণ" গান গাইতে। ৬. বুদ্ধদেব বসুর "প্রগতি" পত্রিকাতে তার অনেক কবিতা প্রকাশ পেয়েছে ৭. সবাই যখন জীবনানন্দের বিপক্ষে ছিলেন তখন বুদ্ধদেব বসু নিজেই স্বার্থহীন ভাষায় "বাংলা কবিতার ভবিষ্যৎ" নামে তার পক্ষে লিখেন। ৮. বইটিতে "শোভনা" নামে একটি চরিত্র আছে যাকে জীবনানন্দ পছন্দ করতেন। তার ডায়েরিরতে তিনি তাকে সংক্ষেপে BY নামে লিখতেন কারণ তার নাম ছিল বেবি ৯. তিনি সরাসরি পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলেন। তখন তার মা তাকে বলেছিলেন " শুধু স্কুলে পরিক্ষা পাস করলে হবে না বাবা, চোখ কান খোলা রাখতে হবে। ভাবতে শিখতে হবে ১০. ধারণা করা হয়, তার প্রকাশিত - অপ্রকাশিত লিখা যোগ করলে প্রায় আড়াই হাজার কবিতা, ২০টি উপন্যাস, শতাধিক গল্প, ৫০ প্রবন্ধ, ৪০০০ পৃষ্ঠার ডায়েরি তিনি লিখেছিলেন। এই ছিলো বই নিয়ে আমার মতামত.. আসুন নিজে বই পড়ি অন্যকেও পড়তে বলি। পড়বে সারা দেশ,তাহলেইতো এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
Was this review helpful to you?
or
বাংলা কবিতা পছন্দ করেন বা একটু আধটু কবিতা পড়েন তাদের অন্তত শতকরা আশি ভাগ পাঠকের প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ। বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিও বোধ করি তিনি। শাহাদুজ্জামানের এই বইটি কোনো উপন্যাস নয়, মূলত জীবনানন্দের জীবনীগ্রন্থ বলা যায়। মন ভরে গেছে পড়ে।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম: একজন কমলালেবু লেখক: শাহাদুজ্জামান একজন কবি বলতে আমরা আসলে কি বুঝি ? কবির জীবনটাই বা কেমন ? তারা কি আসলেই নতুন করে শঙ্খচিল হয়ে ফিরে আসতে চান, নাকি পুরোটাই কল্পনা ? লেখক যেন বারবার খুঁজে ফিরেছেন এই কথাটাই, তার 'একজন কমলালেবু' উপন্যাসজুড়ে। বাঙালী মাত্রই জীবনানন্দকে চেনে, আসলেই কি চেনে ? আমার কাছে জীবনানন্দ ছিলেন বইয়ের পাতায় লেখা 'নির্জনতম' কবি, তবে একজন কমলালেবু পড়বার পড় দেখা পেলাম, এবং সবাই পাবেন, নির্জনতম কবির নির্জনতায় ঢাকা জীবনের স্বাদের। কবির মৃত্যু দিয়ে যে গল্পের শুরু, তা একসময় পেরিয়ে আসে তার জীবনের অনেক অলিগলি। লুকোনো ট্রাংক, ডায়েরীর পাতা, লাবণ্য কিংবা Y, লাঞ্ছনা আর অপমান, সবশেষে কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় আমাদের কবির জীবন, তার এক অপরূপ বর্ণনা পাওয়া যায় এখানে। সমাজজীবনটা কবির জন্য নয়, উপন্যাসটা পড়তে পড়তে একসময় এটাই উপলব্ধির মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে। বারবার মনে হবে জীবনানন্দবাবুর জন্য একটা আলাদা পৃথিবীর দরকার ছিল, ঘাইহরিণীরা যেখানে থাকবে না, যেখানে হরিণেরা ক্যাম্পের টোপে ধরা পড়বে না, যেখানে অন্ধ পেঁচা প্রতিরাতেই স্বপ্ন দেখবে ইঁদুর ধরবার... আর 'একজন কমলালেবু'-র মধ্যদিয়ে কখনও কখনও আমিও হারিয়ে গেছি জীবনানন্দের নির্জন সেই জগতে, যেখানে বনলতা এতটুকু শান্তি দিয়ে যায়। যেখানে ক্ষণে ক্ষণে জীবনে আসা ভালোবাসা বা বন্ধু কিংবা পাঠকেরা হয়ে ওঠে গৌণ, মুখ্য হয়ে ওঠে কবিতার জগত, কল্পনার জগত। সব মিলিয়ে 'একজন কমলালেবু' একটি নির্জনতায় উপন্যাস, একজন কবির জগতের অসাধারণ চিত্রায়ণ, আর এক না বলা স্বীকারোক্তি ।
Was this review helpful to you?
or
একজন কমলালেবু , এটা কোনো বই নয় একটা অনুভূতির নাম. একজন কমলালেবু . হে আমাদের জীবনানন্দ তার শেষ ইচ্ছা ছিলো একটা কমলালেবু খাওয়া . বলা হয় ট্রাম এর সাথে কারো দুর্ঘটনা হয় না , বলা হয় ট্রাম চাপায় কেউ মরতে পারে না. জীবনানন্দ যেন সারা জীবনের মত মৃত্যুতেও ব্যতিক্রম হয়ে রইলেন তিনি সেই ট্রাম চাপায় এই মারা গেলেন, এই মৃত্যু নিয়ে নানা রহস্য আজো রয়ে গেছে অনেকে বলে দুর্ঘটনা নয় বরং আত্মহত্যা ! যে জীবনানন্দ আমাদের বনলতার সাথে পরিচয় করালেন জিনি আমাদের নিয়ে গেলেন আকাশের ওপারে বা নক্ষত্রের নিচে তার জীবন টা কেমন ধোয়াসাই হয়ে রইল . এই বই পড়ে কেমন যেনো কবির দু:খে ব্যথিত হয়েছি, কেমন যেন সেই বোধ আমাকেও ধরা দিয়েছে , আমিও কোনো ঘাই হরিনের ডাকে সারা দিয়েছি বারবার
Was this review helpful to you?
or
it's a great biography..must read
Was this review helpful to you?
or
জীবন আর আনন্দ - এই দুটি শব্দের সহযোগে গঠিত তাঁর নাম হলেও আদতে এই ব্যক্তিটির জীবনে যে আনন্দের ছিঁটেফোঁটাও ছিলো না সেটা বললে অত্যুক্তি হবে না বলেই আমার বিশ্বাস। তিনি জীবনানন্দ দাশ। বরিশালের সর্বানন্দ ভবনে জন্ম তাঁর। বাবা সত্যানন্দ দাশ, মা কুসুমকুমারী দাশ... এই বিষয়ে আর না এগুই। এগুলো মোটামুটি জীবনানন্দপ্রেমী সবার কাছেই বিদিত। যে বিষয়টি প্রায় সকলেরই অবিদিত ও অগোচর তা হলো তার যঞ্ঝাবিক্ষুদ্ধ যাপিত জীবন, তাঁর প্রতিকূল পরিবেশে সাহিত্যচর্চা। যে 'বনলতা সেন', 'আবার আসিব ফিরে' পড়ে আজ আমরা মোহাবিষ্ট হয়ে হাততালি দিই তখনকার সময়ে এগুলো মোটেও এমন সমাদৃত ছিল না, বরং কুড়িয়েছে একের পর এক সমালোচনার গ্লানি। 'বনলতা সেন' পড়ে সজনীকান্ত নামে এক সমালোচক জীবনানন্দের কট্টর সমালোচনা করেন। অনেক কানাঘুষা হয় এ নিয়ে। একের পর এক বিষবাণে বিদ্ধ হতে থাকেন। জীবনানন্দের সবচেয়ে বড় পাপ বোধহয় এই ছিল যে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমথ চৌধুরী, কাজী নজরুল ইসলামের সময়ে তাঁর লেখনী ধরেছিলেন। এই গুণী ব্যক্তিদের কাছ থেকে তিনি একমুহূর্তের জন্যেও কোনো উৎসাহব্যঞ্জক কথা শোনেননি। প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ঝরা পালক' প্রকাশিত হবার পর সেটার একখানা কপি তিনি স্বউদ্যোগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ডাকযোগে পাঠিয়ে মন্তব্য আশা করলে রবীন্দ্রনাথ দায়সারা কয়েকটি বাক্যে তার প্রত্যুত্তর দেন- যাতে মন্তব্যের চেয়ে অবহেলাই বেশি ছিল। কাজী নজরুল তাঁকে কবির কাতারে ফেলতে গিয়ে দ্বিধান্বিত হয়েছেন, প্রমথ চৌধুরী সময় করে পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখবেন বলেও শেষমেশ লিখেননি। একপ্রকার বাধ্য হয়েই 'ঝরা পালক 'নিয়ে তিনি দ্বারস্থ হয়েছেন সেসময়কার দাপুটে সমালোচক ধূর্জটিপ্রসাদের কাছে। ধূর্জটিবাবুও তাঁকে হতাশ করে একপ্রকার প্রকাশ্যেই। কবিতা অন্তপ্রাণ এই লোকটার যাপিত জীবন মোটেও নিরুদ্বেগ ছিল না। ব্রাহ্ম সমাজের মেয়ে লাবণ্য দাশকে বিয়ে করার পরপরই রামযশ কলেজের চাকরিটা চলে যায় তাঁর। চাকরি হারানোর সাথে সাথে জীবনের খেইও যেন হারিয়ে ফেলেন তিনি। বেড়ে যায় দাম্পত্য দূরত্ব। এইসময় তাঁর রচিত সকল উপন্যাস ও গল্পতেই এর সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। জীবন প্রণালী উপন্যাস, বাসর রাত, চাকরি নেই, বত্রিশ বছর পর, আঘ্রাণের শীত, প্রেমিক স্বামী- সব গল্পেরই সারকথা হলো চাকরি হারিয়ে দিকভ্রান্ত পুরুষের মানসিক পীড়ন এবং স্ত্রীসঙ্গের অভাব। এমন অসামান্য প্রতিভাধর ব্যক্তিটির প্রতিভার স্বীকারোক্তি খুব কমসংখ্যক মানুষের কাছ থেকেই পাওয়া হলো। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখার পরেও সেগুলি ছাপাখানায় না গিয়ে স্থান পেলো তাঁর কালো ট্রাঙ্কে। নিদারণ হতাশায় পড়ে একেকসময় আত্মহত্যার কথাও চিন্তা করলেন তিনি। বিভিন্ন কবিতায় উঠে এলো আত্মহত্যার প্রসঙ্গ। যথারীতি সমালোচিত হলেন তিনি। সেসময় কারো লেখনীতে আত্মহত্যার এমন জোরালো সমর্থন পাওয়া যায়নি কিনা! তিনি একেক সময় একেক পদ্ধতি অবলম্বন করে মরতে চাইলেন। কখনও গলায় দড়ি দিয়ে, কখনওবা সপরিবারের সমুদ্রের জলে ডুবে। কী অদ্ভুত, তাই না? তারপর এলো সেই দিন। ১৪: অক্টোবর ১৯৫৪ সাল। এই অভিমানী, নির্জন মানুষটা জ্ঞানত কিম্বা অজ্ঞাতসারেই ট্রাম চাপা পড়লেন। ট্রামের ক্যাচারের ভেতর থেকে যখন তাঁকে বের করে আনা হলো তখন তাঁর অবস্থা সুবিধাজনক না। "আমার নাম জীবনানন্দ দাশ, ওই ল্যান্সডাউন রোডে থাকি, ১৮৩ নাম্বার বাড়ি" বলেই এলিয়ে পড়লেন রাস্তায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো তাঁকে। মৃত্যুপথযাত্রী জীবনানন্দ শুভাকাঙ্ক্ষী ও বন্ধু সঞ্জয়ের কাছে আবদার করলেন কমলালেবু খাবেন বলে। কমলালেবু নিয়ে তিনি একবার একটা কবিতাও লিখেছিলেন: "একবার যখন দেহ থেকে বার হয়ে যাব আবার কি ফিরে আসব না আমি পৃথিবীতে? আবার যেন ফিরে আসি কোনো এক শীতের রাতে একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে কোনো এক পরিচিত মুমূর্ষের বিছানার কিনারে..." কী ভয়ানকরকমের সাযুজ্য! আটদিন অসহ্য যন্ত্রণা ভোগের পর ২২ অক্টোবর নীরবে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আর আমরা হারিয়ে ফেললাম একজন উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ব্যক্তিকে... পুরো বইটা পড়তে আমার দারুণ সময় লেগেছে। এই বইটি না পড়লে জীবনানন্দ নামক ব্যক্তিটি সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানা হতো না আমার। সত্যি বলতে বইটি পড়তে গিয়ে প্রচুর হোচট খেয়েছি। লোকটা এত দুঃখী ছিল! এত কষ্ট আর উপেক্ষা সহ্য করে বেঁচে থাকতে হয়েছিল তাঁকে! পরিশেষে 'একজন কমলালেবু' এক আশ্চর্য রহস্যভেদী বই। গোটা জীবনানন্দকে জানতে গেলে এই বই পড়ার বিকল্প নেই।
Was this review helpful to you?
or
জীবন আর আনন্দ - এই দুটি শব্দের সহযোগে গঠিত তাঁর নাম হলেও আদতে এই ব্যক্তিটির জীবনে যে আনন্দের ছিঁটেফোঁটাও ছিলো না সেটা বললে অত্যুক্তি হবে না বলেই আমার বিশ্বাস। তিনি জীবনানন্দ দাশ। বরিশালের সর্বানন্দ ভবনে জন্ম তাঁর। বাবা সত্যানন্দ দাশ, মা কুসুমকুমারী দাশ... এই বিষয়ে আর না এগুই। এগুলো মোটামুটি জীবনানন্দপ্রেমী সবার কাছেই বিদিত। যে বিষয়টি প্রায় সকলেরই অবিদিত ও অগোচর তা হলো তার যঞ্ঝাবিক্ষুদ্ধ যাপিত জীবন, তাঁর প্রতিকূল পরিবেশে সাহিত্যচর্চা। যে 'বনলতা সেন', 'আবার আসিব ফিরে' পড়ে আজ আমরা মোহাবিষ্ট হয়ে হাততালি দিই তখনকার সময়ে এগুলো মোটেও এমন সমাদৃত ছিল না, বরং কুড়িয়েছে একের পর এক সমালোচনার গ্লানি। 'বনলতা সেন' পড়ে সজনীকান্ত নামে এক সমালোচক জীবনানন্দের কট্টর সমালোচনা করেন। অনেক কানাঘুষা হয় এ নিয়ে। একের পর এক বিষবাণে বিদ্ধ হতে থাকেন। জীবনানন্দের সবচেয়ে বড় পাপ বোধহয় এই ছিল যে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমথ চৌধুরী, কাজী নজরুল ইসলামের সময়ে তাঁর লেখনী ধরেছিলেন। এই গুণী ব্যক্তিদের কাছ থেকে তিনি একমুহূর্তের জন্যেও কোনো উৎসাহব্যঞ্জক কথা শোনেননি। প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ঝরা পালক' প্রকাশিত হবার পর সেটার একখানা কপি তিনি স্বউদ্যোগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ডাকযোগে পাঠিয়ে মন্তব্য আশা করলে রবীন্দ্রনাথ দায়সারা কয়েকটি বাক্যে তার প্রত্যুত্তর দেন- যাতে মন্তব্যের চেয়ে অবহেলাই বেশি ছিল। কাজী নজরুল তাঁকে কবির কাতারে ফেলতে গিয়ে দ্বিধান্বিত হয়েছেন, প্রমথ চৌধুরী সময় করে পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখবেন বলেও শেষমেশ লিখেননি। একপ্রকার বাধ্য হয়েই 'ঝরা পালক 'নিয়ে তিনি দ্বারস্থ হয়েছেন সেসময়কার দাপুটে সমালোচক ধূর্জটিপ্রসাদের কাছে। ধূর্জটিবাবুও তাঁকে হতাশ করে একপ্রকার প্রকাশ্যেই। কবিতা অন্তপ্রাণ এই লোকটার যাপিত জীবন মোটেও নিরুদ্বেগ ছিল না। ব্রাহ্ম সমাজের মেয়ে লাবণ্য দাশকে বিয়ে করার পরপরই রামযশ কলেজের চাকরিটা চলে যায় তাঁর। চাকরি হারানোর সাথে সাথে জীবনের খেইও যেন হারিয়ে ফেলেন তিনি। বেড়ে যায় দাম্পত্য দূরত্ব। এইসময় তাঁর রচিত সকল উপন্যাস ও গল্পতেই এর সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। জীবন প্রণালী উপন্যাস, বাসর রাত, চাকরি নেই, বত্রিশ বছর পর, আঘ্রাণের শীত, প্রেমিক স্বামী- সব গল্পেরই সারকথা হলো চাকরি হারিয়ে দিকভ্রান্ত পুরুষের মানসিক পীড়ন এবং স্ত্রীসঙ্গের অভাব। এমন অসামান্য প্রতিভাধর ব্যক্তিটির প্রতিভার স্বীকারোক্তি খুব কমসংখ্যক মানুষের কাছ থেকেই পাওয়া হলো। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখার পরেও সেগুলি ছাপাখানায় না গিয়ে স্থান পেলো তাঁর কালো ট্রাঙ্কে। নিদারণ হতাশায় পড়ে একেকসময় আত্মহত্যার কথাও চিন্তা করলেন তিনি। বিভিন্ন কবিতায় উঠে এলো আত্মহত্যার প্রসঙ্গ। যথারীতি সমালোচিত হলেন তিনি। সেসময় কারো লেখনীতে আত্মহত্যার এমান জোরালো সমর্থন পাওয়া যায়নি কিনা! তিনি একেক সময় একেক পদ্ধতি অবলম্বন করে মরতে চাইলেন। কখনও গলায় দড়ি দিয়ে, কখনওবা সপরিবারের সমুদ্রের জলে ডুবে। কী অদ্ভুত, তাই না? তারপর এলো সেই দিন। ১৪: অক্টোবর ১৯৫৪ সাল। এই অভিমানী, নির্জন মানুষটা জ্ঞানত কিম্বা অজ্ঞাতসারেই ট্রাম চাপা পড়লেন। ট্রামের ক্যাচারের ভেতর থেকে যখন তাঁকে বের করে আনা হলো তখন তাঁর অবস্থা সুবিধাজনক না। "আমার নাম জীবনানন্দ দাশ, ওই ল্যান্সডাউন রোডে থাকি, ১৮৩ নাম্বার বাড়ি" বলেই এলিয়ে পড়লেন রাস্তায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো তাঁকে। মৃত্যুপথযাত্রী জীবনানন্দ শুভাকাঙ্ক্ষী ও বন্ধু সঞ্জয়ের কাছে আবদার করলেন কমলালেবু খাবেন বলে। কমলালেবু নিয়ে তিনি একবার একটা কবিতাও লিখেছিলেন: "একবার যখন দেহ থেকে বার হয়ে যাব আবার কি ফিরে আসব না আমি পৃথিবীতে? আবার যেন ফিরে আসি কোনো এক শীতের রাতে একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে কোনো এক পরিচিত মুমূর্ষের বিছানার কিনারে..." কী ভয়ানকরকমের সাযুজ্য! আটদিন অসহ্য যন্ত্রণা ভোগের পর ২২ অক্টোবর নীরবে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আর আমরা হারিয়ে ফেললাম একজন উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ব্যক্তিকে... পুরো বইটা পড়তে আমার দারুণ সময় লেগেছে। এই বইটি না পড়লে জীবনানন্দ নামক ব্যক্তিটি সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানা হতো না আমার। সত্যি বলতে বইটি পড়তে গিয়ে প্রচুর হোচট খেয়েছি। লোকটা এত দুঃখী ছিল! এত কষ্ট আর উপেক্ষা সহ্য করে বেঁচে থাকতে হয়েছিল তাঁকে! পরিশেষে 'একজন কমলালেবু' এক আশ্চর্য রহস্যভেদী বই। গোটা জীবনানন্দকে জানতে গেলে এই পড়ার বিকল্প নেই
Was this review helpful to you?
or
লেখক জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে ছাত্রাবস্থায় আমরা সকলেই অবগত তবে ব্যক্তি জীবনানন্দ দাশ এবং তার সাথে যুক্ত পরিবেশ, মানুষজন সমগ্রকিছুকে ছাপিয়ে যাওয়া এক দুর্দান্ত রূপকল্প কিংবা ঘোর এই বইয়ের প্রতিটি পাতায় ছড়িয়ে। মিলু থেকে জীবনানন্দ হয়ে উঠার কাহিনী সুবিস্তৃত পরিসরে কথার মারপ্যাঁচে বেঁধে রেখেছেন অনবদ্য এই কথাসাহিত্যিক। কেমন ছিলো জীবনানন্দ দাশের শৈশব, কৈশোর কিংবা যৌবনাবস্থা? তার কর্মজীবন, প্রণয়ের টানাপোড়ন? আড়াই হাজারেরও অধিক কবিতা, কুড়িখানারও বেশি উপন্যাস, পঞ্চাশটিরও বেশি প্রবন্ধাদির এবং হাজার হাজার পৃষ্ঠার ডায়েরি কেনই বা তিনি রাখলেন আড়ালে আবডালে? কালো ট্রাঙ্কে পুরে? কেন থেকে গেল 'কল্যানীয়াসু'র প্রতি সুগভীর প্রেম, মমত্ববোধ? কেমন ছিলো রবীন্দ্র ধারার চেয়ে বাইরে বেরিয়ে আসা সাহিত্যের যুগসন্ধিক্ষণের আবর্ত? বুদ্ধদেব বসু, মোহিতলাল মজুমদার, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ এবং সমগোত্রীয় লেখক সমাজের সম্পাদিত পত্রিকাদির সাথেই বা তার ঘনিষ্ঠতা কেমন ছিলো? কেনই বা বরিশালের জীবনানন্দ সাহিত্যের এক অনন্য মহাদেশের সাথে পাঠক মহলের পরিচয় করিয়ে দিয়ে পা রাখতে গেলেন- কোলকাতার 'সর্পিল' ট্রামলাইনে? জানুন এইসব প্রশ্নের উত্তর।
Was this review helpful to you?
or
ননফিকশন হিসেবে ৫/৫ উপন্যাস হিসেবে ৩/৫ শাহাদুজ্জামানের গদ্য নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। সুস্বাদু গদ্য লিখিয়ে হিসেবে শাহাদুজ্জামানের জুড়ি মেলা ভার। "একজন কমলালেবু " কে শাহাদুজ্জামান দাবী করেছেন উপন্যাস হিসেবে। কিন্তু পড়তে গিয়ে মনে হলো আমি যেন জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে অতিসুখপাঠ্য একটি ননফিকশন পড়ে ফেললাম(!) "ক্রাচের কর্ণেল " কিংবা "আধো ঘুমে ক্যাস্ত্রোর সঙ্গে" যারা পড়েছেন তারা জানেন শাহাদুজ্জামান ঐতিহাসিক কোনো চরিত্রকে নিয়ে কতো ভালো উপন্যাস লিখতে পারেন। কিন্তু কমলালেবুর ক্ষেত্রেই কেন উপন্যাস কম, ডকু বেশি লিখলেন তা নগণ্য পাঠক হিসেবে আমার বোধগম্য হলো না। যাইহোক, বাংলা সাহিত্যের নির্জনতম আর শুদ্ধতম কবি জীবনানন্দের জীবন কতো বিচিত্রময় ছিলো তা জানার চমৎকারতম গ্রন্থ "একজন কমলালেবু "
Was this review helpful to you?
or
প্রচ্ছদের চোখদুটো দেখেই বুঝতে পারবেন ওটা জীবনানন্দ দাশের চোখ। কাজেই বুঝতে আর অসুবিধা হবার কথা নয়, বইটি জীবনানন্দ দাশকে নিয়েই; এক অর্থে তাঁর জীবনীই। যদিও আর পাঁচটা জীবনীর মতো গদবাঁধা স্টাইলে লেখা জীবনী নয় এটি। এ নিয়ে একদফা বিতর্ক হয়ে গেছে বই প্রকাশের পরপরই। কারণ প্রকাশক মূলত বইটিকে উপন্যাস হিসেবে ছেপেছিল, জীবনী হিসেবে নয়। জীবনী নাকি উপন্যাস- এ বির্তকে আমি যাচ্ছি না। জীবনানন্দ দাশকে চেনেন না, কিংবা তাঁর একটি কবিতাও কখনও পড়েননি- এমন মানুষ বাঙালিদের ভূখণ্ডে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যাদের নিতান্তই কবিতায় আগ্রহ নেই, তারাও মাধ্যমিক- উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে গিয়ে পাঠ্যবইয়ে জীবনানন্দের দু-চারটি কবিতা নিশ্চয়ই পড়ে থাকবেন। আর যারা কবিতা ভালোবাসেন, তাদের কাছে তো জীবনানন্দ এক বিপন্ন বিস্ময়! তবে যেই মানুষটির কবিতা এতযুগ পরেও আন্দোলিত করে আমাদের, তাঁর ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে কতটুকু জানি আমরা? পাঠ্যবইয়ের কবি পরিচিতি থেকে যেটুকু জানা যায়- তাঁর জন্ম বরিশালে। রূপসী বাংলার কবি। কবি কুসুমকুমারী দাশের প্রথম সন্তান। জীবনের বিভিন্ন সময় ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকতা করেছেন। আর কলকাতায় ট্রাম দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু। আর খুব বেশি জানা থাকলে তাঁর কাব্যগ্রন্থ আর উপন্যাসগুলোর নাম, এইটুকুই। এর বাইরে জীবনানন্দ সম্পর্কে আরও কিছু জানেন- এরকম মানুষ সচরাচর পাওয়া যায় না। যেই পাঠকসমাজ বনলতা সেন আর সুরঞ্জনাকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ায় নিজের জীবনে; আট বছর আগের একদিনের লাশকাটা ঘরে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজে পড়ে থাকা ব্যক্তিটির আত্নহত্যার কারণ নিয়ে যারা তর্কে লিপ্ত হয় অহরহ, সেই পাঠকসমাজই ব্যক্তি জীবনানন্দ দাশ থেকে অনেক অনেক দূরে। অথচ এতসব রহস্যের চাবিকাঠি ওই মানুষটির নির্জন জীবনের মধ্যেই আছে, এটা কারও মাথায় আসেনি। বইটি প্রকাশিত হবার পরপরই অভিযোগ উঠেছিল- লেখক শাহাদুজ্জামান কিছু জায়গায় নিজের মনগড়া ঘটনার সমাবেশ ঘটিয়ে বইটি আরও পাঠক আকর্ষক করার চেষ্টা করেছেন। বইয়ের শেষে পুরো দুই পৃষ্ঠা ধরে সাতান্নটি তথ্যসূত্রই এই অভিযোগের বিপক্ষে দাঁড় করাবার জন্য যথেষ্ট। বইয়ের শেষটায় একটা চাপা কষ্ট আর কৌতূহলের স্বাদ পাওয়া যায়। ধীরগতিসম্পন্ন যান ট্রামের ক্যাচারে আটকে মৃত্যু মোটেও স্বাভাবিক ব্যাপার নয়; স্বাভাবিক দুর্ঘটনাও নয়। জীবনানন্দ কি তাহলে আত্নহত্যা করেছিলেন? নাকি নির্মম এক সমসময় তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল? এই সিদ্ধান্তটি লেখক নিতে পারেননি, আমিও নিতে পারিনি..এবার আপনার পালা।
Was this review helpful to you?
or
জীবনানন্দ বলতে আমি 'নাটোরের বনলতা সেন' বা 'সুরঞ্জনা' কিংবা 'আবার আসিবো ফিরে' এতটুকুই বুঝতাম। এর বেশি বুঝতে যাবো ভাবিও নি কখনো! একজন কমলালেবু বইটির প্রচ্ছদ আমাকে বুঝতে বাধ্য করলো.... আমি আবার একটু প্রচ্ছদপ্রেমী কিনা!? নামে জীবনানন্দ হলেও জীবনে তার দুঃখ কষ্টের কমতি ছিলো না... বইটা পড়ে লোকটার জন্য খুব মায়া হচ্ছিলো আমার ?।মানুষটার জীবনে প্রাপ্তি বলতে শুধু দুঃখ আর অবহেলাই ছিলো বলা যায় ?? আরেকটা বিষয় যেটা খুব ব্যথিত করলো তা হলো বনলতা সেন কবিতার নতুন ব্যাখ্যা... এমনটা আশা করা যায় না ? বইটাকে কেনো উপন্যাস বলা হলো তাও ঠিক আমার মাথায় আসলো না ?
Was this review helpful to you?
or
প্রেম ধীরে মুছে যায় নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়... আহা জীবনানন্দ দাশ। চমৎকার একটা বই
Was this review helpful to you?
or
জীবনানন্দের সাথে পাঠ্যপুস্তকের বাইরে আমার প্রথম পরিচয় ক্লাস সেভেনে, বই পড়ার নেশায় বাসার অলিগলি তন্ন তন্ন করে তখন আমি "রিডিং ম্যাটেরিয়াল" খুজছি। পড়ার মত কিছু একটা হলেই তখন হলো। তবে পছন্দের সেই ক্রমানুসারে কবিতার বই সংগত কারনেই একদম শেষের দিকে।তাই বাসার বুক সেলফের পিছনে জীবনানন্দ দাশের একখানা কবিতার বই পেয়ে খুব যে খুশি হয়েছিলাম তা বলবো না। সে যাই হোক, জীবনবাবুর সাথে আমার প্রথম পরিচয় ততটা স্মরনীয় নয়, এটুকু নির্দ্বিধায় বলা যায়। এরপর থেকে জীবনানন্দ দাশের সাথে গড়ে উঠা সখ্যতার ভিত্তি কিছুটা আঞ্চলিকতা দোষে দুষ্ট, যে বগুড়া রোডের পথ ধরে আমি স্কুলে গিয়েছি, সেই পথেই একদা হেটেছেন হাজার বছর ধরে পথ চলা কবি, এই চিন্তার রোমাঞ্চের তুলনা হয় না। কতদিন আনমনে লাশ কাটা ঘর বিড়বিড় করে আবৃত্তি করেছি, ফাগুন মাসের রাতের আধারে পঞ্চমীর চাঁদ খুজেছি, তার ইয়াত্তা নেই। তবুও এই কবির অনেক তথ্যই ছিলো অজানা। নিভৃতচারি এই কবির আসল রুপ কখনোই ধরা পড়েনি আমার কাছে। তার কবিতার এতো অনাদর, এতো সমালোচনা হয়েছে, তা আসলেই জানা ছিলো না। নতুন ধরনের কবিতা বাংলা সাহিত্যে সন্নিবেশে এতো কায়ক্লেশ সহ্য করতে হয়েছে, তবুও কখনো নিজের স্বাত্যন্ত্রতার সাথে আপোষ করেননি, লেখেননি কোন ফরমায়শি লেখা। জীবনানন্দের প্রথম ও একমাত্র বিশুদ্ধ প্রেম (সনাতন ধর্মমতে যা অজাচার), নৈতিক স্খলনজনিত আচরণ (স্বমেহন এবং গনিকালয় গমন),বৈষয়িক জীবনের চরম ব্যর্থতা, জীবন থেকে পলায়ন মুখি প্রবনতা তার প্রতি ভালবাসা কিংবা শ্রদ্ধাকে একবিন্দুও হ্রাস করে না, বরং এক এক আশ্চর্য নির্ভরতা দেয় আমাদের,বলে কবিরাও মানুষ, তাদের জীবনও আমাদের মত আটপৌরে জীবনের পাপে পূণ্যে ভরা। "একজন কমলালেবু" লেখক শাহাদুজ্জামানের পড়া প্রথম বই আমার। বলতে দ্বিধা নেই যে প্রথম মোলাকাতেই আমি এ লেখকের গুনমুগ্ধ পাঠকে পরিনত হয়েছি। ঐতিহাসিক ও জনপ্রিয় মানুষকে অবলম্বন করে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাস রচনায় আধুনিক কালে কার্যকরি মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় , এরপর এপার বাংলায় হুমায়ূন আহমেদ ও কিছু কিছু উপন্যাসে তার ভাষায়" সময় ধরে রাখার চেষ্টা" করেছেন। কিন্তু শাহাদুজ্জামানের প্রয়াসের সার্থকতা কিছুটা অন্যরকরম। এক বৈঠকি ভংগীতে তিনি জীবনানন্দের জীবনী বর্ণনা করেছেন, মাঝে মাঝে কবির পক্ষে সাফাই গেয়েছেন, কবিতাগুলোর ব্যাখা দিয়েছেন, আবার ফাকে ফাকে সংলাপের আশ্রয়ে একে নিতান্তই এক জীবনী গ্রন্থ হওয়ার অপবাদ থেকে বাচিয়েছেন। গড়ে তুলেছেন এক অদ্ভুদ সুখপাঠ্য। যেখানে জীবনবাবুর জীবনের শেষ পরিনতি জানার এক আকুল আকাঙ্ক্ষা থাকে, তার কবিতাগুলোর সারমর্ম বোঝার সুযোগ থাকে, আমার কবির প্রতি নিষ্ঠূর ব্যক্তিদের ঘৃণা করার জন্য এক টুকরো জায়গা থাকে। বাংলা কাব্য সাহিত্যের আধুনিকতায় উত্তরনে একদল স্বপ্নবাজ কবিদের যে যে তীব্র প্রচেষ্টা, দেশভাগের ফলে রিফিউজিদের কষ্ট, সর্বোপরি পূর্ব বাংলার এক নিভৃতচারী কবির কলকাতার মত মহানগরীর প্রতি মিশ্র অনুভূতি সাবলীলভাবে লেখক বর্ণনা করছেন,যা পাঠকের চোখের সামনে দৃশ্যপট তৈরি করতে বাধ্য।
Was this review helpful to you?
or
কবি জীবনানন্দ দাশ চেয়েছিলেন আপদমস্তক একজন কবির জীবন যাপন করতে! ভাগ্য বার বার তাঁর সাথে প্রতারণা করেছে। কবিতার যুদ্ধে হয়তো তৎকালীন সময়ে তিনি অনেকটাই পরাজিত ছিলেন কিন্তু মারা গিয়েই জয়ী হয়ে গেলেন। তাঁর মায়ের লিখা কবিতার পঙক্তির মতো তাঁর কাজে, কবিতায় অনেক বড়ই হয়েছেন। কিন্তু জীবন যুদ্ধে তিনি সারাটা জীবন পরাজিতই ছিলেন। একজন শিল্পীর জীবনের পরিবর্তে যাপন করে গেছেন একটা ট্র্যাজেডির জীবন। একজন কমলালেবু, কবি জীবনানন্দ দাশের জীবনের উপর লেখক শাহাদুজ্জামানের লিখা দারুণ সুন্দর একটা উপন্যাস। শাহাদুজ্জামানের লেখা আমার অনেক ভালো লাগে। তাঁর লেখার নিজস্ব একটা স্টাইল আছে যেই স্টাইলের সুন্দর একটা লিখার স্রোত আছে। এই উপন্যাসটা হয়তো আরো দারুণ হতো কিন্তু লেখক সম্ভবত অনেক সময় নিয়ে উপন্যাসটা লিখেছেন বলেই মাঝেমধ্যে মনে হয়েছে তাঁর লেখার যে নিজস্ব স্রোত সেটা হঠাৎ হঠাৎ থেমে যায়। তাঁরপর আবার শুরু হয়। বেশ ক'দিন আগে পড়লেও অনেক ভালো রিভিউ লিখবো ভেবে আর লিখা হলো না। তাই বইটি নিয়ে সামন্য একটু লিখলাম। যে কেউ পড়তে পারেন। আশা করি ভালো লাগবে। আর জীবনানন্দের কবিতার পাঠক হলে তো কথাই নেই!
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা #রিভিউ বইএর নাম : একজন কমলালেবু। লেখকের নাম : শাহাদুজ্জামান। ধরণ : জীবনী। ব্যক্তিগত রেটিং : ৫/৫ প্রকাশনী : প্রথমা প্রকাশন। পৃষ্ঠা : ২৪০ মূল্য : ৩৮৫ পৃথিবীর দিকে তিনি তাকিয়েছেন বিপন্ন বিস্ময়ে। জানিয়ে দিয়েছেন জ্যোৎস্নায় ঘাইহরিণীর ডাকে ছুটে আসা, শিকারির গুলিতে নিহত হরিণের মতো আমরা সবাই। হাজার হাজার পৃষ্ঠা লিখেছেন, প্রকাশ করেছেন সামান্য অংশ, বাকিটা তালাবন্দী করে রেখেছেন কালো ট্রাঙ্কে। এই মানুষ টি আর কেউ নন। রূপসী বাংলার নির্জনতম কবি "জীবনানন্দ দাশ"। বাংলা সাহিত্যের কবিতার নতুন যাত্রার পালা বদল জেনো তার হাত ধরেই। তবে শুরুর দিকে এই নির্জন মানুষটির কবিতার মনোভাব বুঝেছিলেন অল্প সংখ্যক কিছু মানুষ। এছাড়া সেকেলের বেশিরভাগ লেখকই ছিলেন তার বিরুদ্ধে। তাকে নিয়ে তামাসা, ঠাট্টা, বিদ্রুপ জেনো নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারের বস্তু। বিখ্যাত কবি রবীন্দ্রনাথও তার প্রতি খুব যে সদয় ছিলেন এমনটা দেখা যায় নি। ছোটবেলায় মা কুসুম কুমারী দাশের হাত ধরেই শিক্ষাজীবন শুরু হয়। পুঁথিগতবিদ্যায় আবদ্ধ সিলেবাসের পড়ালেখায় সন্তুষ্ট ছিলেন না কুসুম কুমারী দাশ। এরপর নিজের প্রেরনায় ছেলেকে শেখাতে লাগলেন সাহিত্য। তার প্রচেষ্টায় ছেলেকে কিছুটা সাহিত্যের ব্যাপারে বুঝাতে পারায় লিখে ফেললেন " আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে?/কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে"। জীবনানন্দ দাশ কাজে বড় হয়েছেন ঠিকি তবে জীবন নামক যুদ্ধের জন্য প্রতিটি ধাপে ধাপে তাকে সহ্য করতে হয় অপমান, তিরস্কার, অবহেলা। ব্যর্থ প্রেম ও দরিদ্রতার জন্য নিজেকে গুছিনে নিতে পারছিলেন না ভালোভাবে। এছাড়াও পেশাগত জীবনে শিক্ষকতা করলেও মন থেকে তা গ্রহন করে নি কোনো দিনিই। শিক্ষকতা তার ভালো লাগতো না বহুবার তিনি তার ডাইরিতে একথা লিখেছেন। মৃত্যুর পর অপ্রকাশিত ২১ টি উপন্যাস ১০৮ টি ছোট গল্প প্রকাশ হয়। তার কবিতা, গল্প, উপন্যাসে উঠে আসে তার অসাধারণ চরিত্র "বনলতা সেন"। তবে কে এই বনলতা সেন?? কি তার পরিচয়?? কবি কেনই বা বার বার বনলতা সেনের থেকে দু-দন্ড শান্তি চেয়েছেন? ব্যক্তিগত মতামত : "একজন কমলালেবু" - জীবনানন্দ দাশের জীবনীকে ঘিরে লিখেছেন কথা সাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান। বইটিতে ফুটিয়ে তুলেছেন একজন অসাধারণ মানুষের হাজার বছরের পথচলা। অনেক আগ থেকেই বইটি পড়বার অনেক ইচ্ছে ছিলো। নানা সমস্যার জন্য তার সুযোগ হয়ে উঠে নি। বই টি পরে জতটা তৃপ্তি পেয়েছি তার চেয়ে বেদনাই বেশি। আমি মনে করি সকল বইপোকাদের-ই এই বইটি পড়ে দেখা। রকমারির বইএর লিংক : www.rokomari.com/book/130145
Was this review helpful to you?
or
শুদ্ধতম কবি হিসেবে জীবনানন্দকে অনেকেই চেনেন জানেন। তাঁর কবিতা থেকে দু'এক ছত্র আওড়াই আমরা, কখনো সখনো পুরো একটা কবিতাও। কিন্তু কোন কবিতার কী কারন, কীভাবে জন্ম নেয় লেখাগুলো- এগুলো ভাবার সময় হয়ে ওঠেনা আমার মতন বারোয়াড়ি পাঠকদের। কিন্তু এতে করে কবিতার ছত্রগুলোর অর্থ বের করতে বেশ বেগ পেতে হয়; অথবা কিছুটা ধরা গেলেও, ভুলভাবে ভাবার সম্ভাবনা থেকেই যায়। শাহাদুজ্জামানের এই অনবদ্য গবেষণাধর্মী লেখা "একজন কমলালেবু" জীবনানন্দকে পাঠকের সামনে সম্যকরূপে হাজির করেছে। জীবনানন্দের পাঠকদের এখন দুই ভাগে ভাগ করা যায়- যারা একজন কমলালেবু পড়েছেন আর যারা পড়েননি। শাহাদুজ্জামান-এর লেখা নিয়ে কিছু বলার ধৃষ্টতা আমার নেই; তার উপরে তিনি কলম ধরেছেন জীবনানন্দকে নিয়ে- দুয়ে মিলে এক অসাধারণ সৃষ্টি। এই বছরে দুই-একটা বই পড়তে চাইলে এটা পড়তে পারেন।
Was this review helpful to you?
or
টাকা উসুল হওয়ার মত একটা বই। Recommended
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_মার্চ ক্রাচের কর্ণেল পড়েই বুঝেছিলাম, লেখক ব্যাপক পড়াশুনা-খোজখবর করে, অনেক প্রস্তুতি নিয়ে, পরিশ্রম করে বই লিখেন। একজন কমলালেবু'তেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। লেখনী অসাধারন। লেখকের পরিশ্রম চোখে পড়ার মত। লেখক কোনোদিক দিয়েই কমতি রাখেন নি। শাহাদুজ্জামান আসলে ৫তারা ই ডিজার্ভ করেন। তবে ৪ তারকায় বাধার কারন প্লট। ক্রাচের কর্নেলে, তাহেরকে নিয়ে লেখার জন্য প্রচুর রসদ পেয়েছেন লেখক। তবে একজন কমলালেবুতে জীবনানন্দ দাসের জীবনে এত রসদ ছিল না৷ তবে জীবনানন্দ দাস নিয়ে যাদের আগ্রহ তারা অবশ্যই পড়ে দেখতে পারেন। ভালো লাগবে আশা করি । "একজন কমলালেবু" বইটি ২০১৭ সালে সমকালীন প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়। ২৪০ পৃষ্ঠার বইটির মুদ্রিত মূল্য ৪৫০টাকা। আগ্রহীরা সংগ্রহে রাখতে পারেন বইটি৷
Was this review helpful to you?
or
আমি কবি—সেই কবি,– আকাশে কাতর আঁখি তুলি হেরি ঝরা পালকের ছবি! বাংলার শুদ্ধতম কবির মনোভাবটাও যেন এমন ছিল। জীবনানন্দ দাশ, যার সমগ্র জীবনকালটাই যেন তাঁর সৃষ্টকর্মগুলোর মাঝে নিহিত ছিল। প্রগতিবাদ, রক্ষণশীলতার স্রোতের বিপরীতে চলা মানুষ ছিলেন জীবনানন্দ। একজন কমলালেবু জীবনানন্দের জীবনের পটচিত্র এবং কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান এখানে পটশিল্পী হিসেবেই যেন অবতীর্ণ হয়েছেন। বইটির মূল উদ্দেশ্য শুধু যেন জীবনানন্দের সাহিত্যকর্ম কিংবা তাঁর ইহজীবনকালের গৎবাঁধা কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং ক্যানভাসটা বৃহৎ ছিল। শুধুমাত্র লেখক জীবনানন্দের জীবনী নয় একজন কমলালেবু...বরং তাঁর আত্মা, তাঁর সাহিত্যকর্মের নিহিতার্থ লুকিয়ে আছে বইটিতে। ভূয়সী প্রশংসা কিংবা নিন্দা কিংবা প্রচলিত জীবনীর সাথে যদি মেলানো যায়... একজন কমলালেবু দূর দূরান্ত পর্যন্ত মেলে না। একজন লেখকের ব্যাক্তিসত্তা অনেকটাই ছাপিয়ে গেছে তাঁর সৃষ্টকর্মের আড়ালে কিংবা তাঁর সৃষ্টকর্মের মধ্যে দিয়েই যেন রক্ত মাংসে গড়া মানুষ জীবনানন্দ আলোচনায় এসেছে। এই জীবনানন্দ শুধুমাত্র রূপসী বাংলার কবি কিংবা তিমির হননের কবি নয়...বিষণ্ণতাকে পুঁজি করে, তীব্র সমালোচনাকে উপেক্ষা করে, ক্রুর বাস্তবতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজস্ব সৃষ্টির ওপরে ভরসা করে চলা একাগ্র মানুষ। একদিকে তিনি যেমন বর্ণনা করেছেন তাঁর ব্যাক্তিজীবন এবং সৃষ্ট কর্মগুলোর পেছনের গল্প, ঠিক তেমনভাবে এতে লেখক জীবনানন্দের আড়ালে থেকে যাওয়া উপেক্ষিত একজন মানুষের গল্পও আছে। তাঁর ভাষাতে বিষয়টা বলতে গেলে এমন দাঁড়ায়- সামান্য লোক হেঁটে যেতে চেয়েছিল স্বাভাবিকভাবে পথ দিয়ে কি করে তা হলে তারা এরকম ফিচেল পাতালে হৃদয়ের জনপরিজন নিয়ে হারিয়ে গিয়েছে? অনেকের মতে জীবনানন্দের ভাষা দুর্বোধ্য ছিল কিংবা তিনি স্রোতের বিপরীতে লিখতেন...তাঁর লেখনীতে বিষণ্ণতা, পরস্পরবিরোধী কিছু চেতনা কিংবা অপরাবাস্তবের মতো ধোঁয়াশাময় বিষয়গুলো উল্লেখ্যজনক হারে বেশি ছিল। সত্যিই কী তাই? লেখক শাহাদুজ্জামান জীবনানন্দের জবানীতেই সেই ভুলগুলো কিংবা ধোঁয়াশাগুলোও তুলে ধরেছেন। জীবনানন্দ সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে স্রোতের বিপরীতে থাকা মানুষ ছিলেন ঠিকই...কিন্তু সেই সাথে তিনি এক ভিন্ন ধারার উদ্ভাবকও ছিলেন...যে ধারা রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে, যে ধারা শুধুমাত্র প্রগতির কথা বলে ক্ষান্ত হয়নি...বরং এর বৈপরীত্যও তুলে ধরেছিলেন। একজন কমলালেবু...জীবনানন্দের জীবনের সারসংক্ষেপ, যার পরতে পরতে প্রতিভাবান এক মানুষের অবহেলিত জীবনের সাধারণ কিন্তু বিষণ্ণ ভরা গল্প রয়েছে। কিছুটা অন্তর্মুখী চরিত্রের ছিলেন তিনি, আবার কিছুটা অভিমানীও...আর সেই কারণেই হয়তো জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদগুলো কালো ট্রাঙ্কের মধ্যে দেশ থেকে দেশান্তরে আগলিয়ে রাখলেও অপ্রকাশিত রেখেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছিলেন। একজন সাধারণ মানুষের দীর্ঘশ্বাসের গল্প, সর্বোপরি একজন লেখকের অব্যক্ত আক্ষেপের গল্প হিসেবে বইটি অসাধারণ পর্যায়ের মনে হয়েছে।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই-একজন কমলালেবু লেখক-শাহাদুজ্জামান পৃষ্ঠা-২৪০ মূল্য-৪৫০ প্রকাশনী-প্রথমা বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান অাধুনিক বাঙালি কবি হলেন "জীবনানন্দ দাশ"। উনার সাথে ঠিক কবে থেকে, কি নিয়ে, কিভাবে আমার পরিচয় তা স্মৃতিতে নেই। তবে তিনি ছিলেন, আমার কবিতা বুঝবার বেলায়, জানবার বেলায়, কবিতা আলোচনায় । প্রিয়মানুষের সাথে প্রায়ই কথা হতো, রবীন্দ্রবাবুর পর আর কেউ যদি নোবেল পাবার জন্য মনোনীত হতেন, তবে সেটা ছিলেন 'জীবনানন্দ দাশ'। পরিচয় তো অনেক দিনের, তবুও কি জেনেছি আজকের মতো! কখনোই তো আজকের মতো অনুভব করেছি বলে মনে পড়ে না। তিনি শুধু মাত্র কবি ছিলেন না। ছিলেন- লেখক, প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক। তাকে বাংলাভাষার শুদ্ধতম কবি বলা হয়। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধকালে বাংলা কবিতায় তাঁরই প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে। রবীন্দ্র-পরবর্তীকালে বাংলাভাষার প্রধান কবি হিসেবে তিনি সর্বসাধারণ স্বীকৃত। তাকে "শুদ্ধতম কবি" আখ্যায়িত করার সাথে সাথে "নির্জনতার কবি" বলেও আখ্যায়িত করেছেন 'বুদ্ধদেব বসু'। কেন তাকে নির্জনতার বা নিসংঙ্গতার কবি বলা হয়, তার স্বরূপ উম্মেচন হয়েছে কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান এর "একজন কমলালেবু" গ্রন্থে। "একজন কমলালেবু" ঠিক- না উপন্যাস, না গল্প, না আত্মজীবনী এই দ্বন্ধে পাঠকের চোখে পরেছে। কিন্তু লেখক তার লেখা নিয়ে আগেই বলেছেন, তিনি মূলত লেখায় আলাদা জেনার করে লেখেন না। তিনি আত্মতুষ্টিতে লেখেন আর সেটা কোন জেনারে পরবে তা পাঠকদের দ্বায়িত্ব। "একজন কমলালেবু" কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের অন্যতম বই, যেখানে লেখকের প্রিয় সাহিত্যিক "জীবনানন্দ দাশ" এর জীবন আলোচনা করেছেন। বইয়ের শুরুর চিত্রটা তিনি তুলে ধরছেন জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু দিয়ে। একজন ব্যক্তি দুই হাতে, দুই থোকা ডাব নিয়ে বাড়ি ফেরার উদ্দ্যেশে ট্রাম লাইনের পথ ধরে রওনা দেন। কিন্তু বাড়ি ফেরা হয় নি। ট্রামের ক্যাচারে তার শরীর আটকে দলিত হয়ে যায়। ভেঙ্গে যায় কন্ঠ, ঊরু এবং পাঁজরের হাড়। বাঁচানোর চেষ্টা করা সত্বেও শেষ রক্ষা হয় নি! সব থেকে আশ্চর্যজনক কথা হলো গত একশত বৎসরে ট্রাম দুর্ঘটনায় কলকাতায় মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র 'এক'। তিনি আর কেউ নন। আমাদের রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ! লেখক এই ঘটনা উল্ল্যেখ এর সাথে বর্ণনা করেছেন, জীবনানন্দ দাশের পুরো জীবনী। তিনি ছিলেন একেবারে আড়ালের কবি। জীবিত অবস্থায়, কবি হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও। তার মৃত্যুর পর পান্ডুলিপি পাওয়া যায়, অপ্রকাশিত ২১ টি উপন্যাস ও ১০৮ টি ছোট গল্পের। আরো কতো রচনা। যার, একটাও প্রকাশের চেষ্টা করেন নি তিনি। যতটুক প্রকাশ হলো তা একেবারেই অল্প বিস্তার। কিন্তু কেন?! কেনইবা তিনি এত আড়াল থেকে গেলেন পুরো জীবন। কেনই বা তার অকাল মৃত্যু! এটা কি শুধুই মৃত্যু ছিলো! জীবনানন্দ কে নিয়ে লেখকের লেখা শুধুমাত্র একজন কমলালেবুতেই নয়। লেখক এর আগেও তার 'পশ্চিমের মেঘে সোনার সিংহ' নামক গল্প গ্রন্থে জীবনানন্দ দাশের জন্মসাল '১৮৯৯' এ নামে একটি গল্প লিখেন। এবং আরো অনেক লেখায় তিনি বাংলার "রূপসী" কবিকে তুলে আনেন। জীবনানন্দ দাশ তার কবি প্রতিভা পেয়েছিলেন তার মাতা 'কুসুমকুমারী দাশ' এর কাছ থেকে। শাহাদুজ্জামান তার শৈল্পিক লেখনী দিয়ে পাঠকের চোখে তুলে ধরেন অন্য এক জীবনানন্দ দাশ কে। এই বই পড়ার পরও পাঠকের মনে থেকে যাবে প্রিয় কবিকে জানার আরও, আরও তৃষ্ণা। লেখক কবির কবিতার লাইন ব্যবচ্ছেদ এর মধ্য দিয়ে পাঠকের চোখে তুলে ধরেন নতুন রহস্য। তিনি শুধু জীবনানন্দকে প্রকাশ করেন নি, পাঠকের কাছে জীবনানন্দ দাশের মননশীলতাও উম্মেচন করেছেন। লেখক তাঁর সকল সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা এবং গবেষণার মধ্য দিয়ে পাঠকের কাছে কবিকে প্রকাশ করেছেন। জীবনানন্দ দাশ কি ভবিষৎ বলতে পারতেন? তা না হলে মৃত্যুর আগে তিনি ট্রাম দূর্ঘটনা নিয়ে কথাই বা বললেন কেন!? তাঁর এ নিয়ে আগ্রহই বা কেন ছিলো! একজন কমলালেবুতে, শাহাদুজ্জামান তার প্রিয় সাহিত্যিক জীবনানন্দ দাশের জীবনকে এত গভীর ভাবে বুঝাতে চেয়েছেন তা কি শুধু জানা বা জানানোর জন্যই? আমার তা মনে হয় না, এই থেকে তিনি হয়তো জীবনের অর্থই খুজে ফিরেছেন। আমাদের জীবন কি ব্যাখ্যা করা যায়! আমাদের জীবনের রহস্যময়তা আমরা নিজেরাই কি উদ্ধার করতে পারি! লেখক জীবনানন্দ দাশের জীবন আলোচনা করতে গিয়ে তুলে এনেছেন তখনকার সময়ের অনেক সাহিত্যিক কে। সেসময় জীবনানন্দের সাথে তাদের সখ্যতা, শত্রুতা, পৃষ্ঠপোষকতা সবই উঠে এসেছে গল্প বলার খাতিরেই। লেখক ব্যাক্তি জীবনানন্দ এবং কবি জীবননান্দ দুটোকেই তার কবিতা তার শিল্প দিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। জীবনের সুখ-দুঃখ , আনন্দ-বেদনা সব কিছু। এত কিছু জানার পরও পাঠক মন প্রিয় কবি জীবননান্দ দাশের, শেষ সত্যটা আরো বেশি রূপে প্রমাণ চাওয়ার জন্যই হয়তো আরো বেশি আকৃষ্ট হবেন। তার আত্মহত্যা করা কতোটা যুক্তি যুক্ত, সবটুকু লেখক যদিও পাঠকের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। তবুও লেখকের ভাষ্য মতে এটাই সত্যি রূপে, পাঠকের চোখে প্রতীয়মান হয়। পাঠক, জীবনানন্দ দাশের জীবনাচারণ পাঠ করে এ কথা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয় যে, কবি সত্যিই ছিলেন অসহায় এবং পুরো নিঃসঙ্গ। এ সবের পর যে কথা আসে তাহলো, বইয়ের নামকরণ। কবি জীবনানন্দ নিজেই তার এক কবিতায়, কমলালেবু হওয়ার বাসনা ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু সেটা মৃত্যুর পরে ২য় বারের মতো পৃথিবীতে ফিরে আসার সময়। লেখক, কবির এই ইচ্ছাকেই এখানে পূর্ণ করে তাকে একজন কমলালেবু হিসেবে পাঠকের মাঝে উন্মুক্ত করেন। শাহাদুজ্জামান একজন শক্তিমান কথাসাহিত্যিক। তিনি শুধু মাত্র একজন কমলালেবু লেখেন নি। গবেষণা করেছেন প্রিয় কবির জীবনের উপর, তা বইয়ের পাতাতেই পাঠক টের পাবেন। আর তার সহজ সরল লেখার রীতিতে পাঠক নতুন করে মুগ্ধ হবেন। প্রিয় কবিকে জানতে সকল পাঠককেই এই বই পড়া উচিৎ। যদিও পড়ার পর আত্মাতৃপ্তি হবে না মোটেও। আমার মতো আটকে যাবেন অনেক জায়গায়। কেন না পাঠক হওয়া সত্বেও কবির সৃষ্টি গুলো, আমার এতোটা অর্থ ভেঙে পড়া হয় নি। যতোটা লেখক আমাদের সামনে নিয়ে এসেছেন। আমরা তাকে চিনেছি একজন নিঃসঙ্গ কমলালেবু হিসেবে। রেটিং-৫/৫ রকমারি লিংক - https://www.rokomari.com/book/130145/একজন-কমলালেবু [ছবি সংগ্রহিত]
Was this review helpful to you?
or
"একজন কমলালেবু" মনে পড়ে, যখন কবিতা পড়তাম তখন শুধু জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়েই সময় কাটতো। আমার পাঠক জীবনে একজনই কবি। শুদ্ধতম কবি জীবনানন্দ দাশ। কতবার যে পড়েছি 'আট বছর আগের একদিন' কবিতাটি তার হিসেব নেই। নিজের ভেতর অদ্ভুত এক ভ্রম খেলা করতো জীবন বাবুর কবিতা পড়ার সময়। তাই যখন শুনলাম জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান লিখিত প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশের জীবনী ভিত্তিক উপন্যাস "একজন কমলালেবু" এই বইমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে প্রথমা থেকে, কিছুটা আবেগের বশবর্তী হয়েই সেটা কিনে ফেললাম। তারপর শুরু হলো একটু একটু করে আমার কমলালেবুর স্বাদ গ্রহনের পালা। সব্যসাচী লেখক, কবি বুদ্ধদেব বসু তাঁর এক প্রবন্ধে কবি জীবনানন্দ দাশকে উল্লেখ করেছিলেন 'নির্জনতার কবি' নামে। কবি জীবনানন্দ ব্যক্তিগত জীবনে হয়তো নির্জনতা ভালবাসতেন, কিন্তু তাঁর কবিতাকে কখনো কখনো নির্জনতার কবিতা ভাবতে আমার দ্বিধা হয়। জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের 'একজন কমলালেবু' গ্রন্হখানা পড়ে জীবন বাবু যে তাঁর সাহিত্যকর্মে অন্তত নির্জনতার কবি ছিলেন না আমার সেই ভাবনা আরো পাকাপোক্ত হলো। ব্যক্তিগত জীবনে নির্জনতা প্রিয় হলেও কবি জীবনানন্দের কলম থেকে বের হয়ে এসেছে অনেক অনেক কোলাহলমুখর কবিতা। কবিতার ব্যাখ্যাগুলো না পড়লে হয়তো সেটা জানাই হতো না। আপন সাহিত্যকর্মের ভেতর দিয়ে একজন সাহিত্যিকের ব্যক্তিগত জীবনকে খুঁজে ফেরা। আপন কবিতার অন্তর্গত আত্মার প্রতিফলন দিয়ে একজন কবির জীবনকে ব্যাখ্যা করা। একজন কবির সাহিত্য কর্মকে তাঁর আপন জীবন, সমাজ ও সময়ের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচার করা খুব সহজ কাজ নয়। তাও একটি উপন্যাসের মাধ্যমে। জীবনানন্দ দাশের জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে শাহাদুজ্জামান সেই গবেষনা তাঁর 'একজন কমলালেবু' গ্রন্হে সফলতার সাথেই করেছেন বলা চলে। তাই মাঝে মাঝে গ্রন্হখানাকে উপন্যাস থেকে আরো বেশী কিছু মনে হয়েছে। কখনো তা হয়ে উঠেছে কবি জীবনী, কখনো সাহিত্য সমালোচনা, কখনো ব্যাখ্যা গ্রন্হ, কখনো বা আবার গবেষনা গ্রন্হ। একজন কবির ব্যক্তিগত জীবনের ও সমসাময়িক নানা ঘটনা কিভাবে তাঁর সাহিত্যকর্মকে প্রভাবিত করে তাই ছিলো যেন গল্পের মূল উপজীব্য। রাজনীতি, দূর্ভিক্ষ, বিশ্বযুদ্ধ, দেশভাগ, হিন্দু-মুসলিম দান্গা, প্রেম-ভালবাসা-ঘৃণা, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের নানা সম্পর্কের টানা-পোড়েন, মনস্তাত্বিক নাগ-পাশ সবই পরিণত হয়েছে তার গল্প-কবিতা-উপন্যাসের বিষয়ে। কখনো সেসব হয়ে উঠেছে কবিতার উপমা-চিত্রকল্প-প্রতীক, কখনো বা গল্প উপন্যাসের প্লট। উপন্যাসের সার্থেই গল্পে উঠে এসেছে জীবনানন্দের সমসাময়িক আরো নানা বাস্তব চরিত্র। কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, ভূমেন্দ্র গুহ, অচিন্তকুমার, কে নেই এ গ্রন্হে? তারা কেউ কেউ জীবনানন্দের জীবনে বন্ধু অথবা শত্রু হিসেবে দেখা দিয়েছেন, কখনো হয়েছেন সমব্যথী, প্রতিযোগী, কঠোর সমালোচক, সাহায্যকারী। রক্ত-মাংশের জীবন্ত চরিত্রগুলোকে লেখক বেশ সততার সাথেই তাঁর উপন্যাসে চিত্রিত করেছেন আশা করি। উপন্যাসের নামকরণ নিয়ে পাঠককে বেশ দ্বন্ধে পড়তে হয়। লেখক কবি জীবনানন্দ দাশকে 'একজন কমলালেবু' নামে কেন অভিহিত করলেন সেটা প্রথম থেকেই এক রহস্য পাঠকের কাছে। উপন্যাসের একেবারে শেষে এসে বইয়ের এহেন নামকরণের রহস্য পাঠকের কাছে উন্মোচিত হয়। কবির 'কমলালেবু' কবিতাটি এখানে পাঠ করা যেতে পারে, "একবার যখন দেহ থেকে বা’র হ’য়ে যাব আবার কি ফিরে আসবো না আমি পৃথিবীতে? আবার যেন ফিরে আসি কোনো এক শীতের রাতে একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস হয়ে কোনো এক পরিচিত মুমূর্ষুর বিছানার কিনারে।" - [কমলালেবু, জীবনানন্দ দাশ] - কবি তার 'কমলালেবু' নামক কবিতায় তাঁর মনোবাসনা ব্যক্ত করেছেন। মৃত্যুর পর তিনি কমলালেবু রূপে পুনরায় এই মর্ত্যে ফিরে আসতে চান। মূলত সে কারণেই উপন্যাসটির এহেন নামকরন। যদিও কবিতাটির বক্তব্য রীতিমতো অযৌক্তিক। পৃথিবী ছেড়ে একবার চলে গেলে আর ফেরত আসার কোন উপায় নেই। অথচ কবি এখানে মৃত্যুর পর পুনরায় কমলালেবু রূপে ফিরে আসার বাসনা ব্যক্ত করেছেন। যা নিতান্তই কবির অযৌক্তিক বাসনা। তবে কবিতাকে যুক্তি মেনে চলতে হবে এ কথারও কোন যৌক্তিকতা নেই। কবিতা সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি যৌক্তিক হবার শর্ত থাকলেও, এর বক্তব্য যৌক্তিক হতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। সৃষ্টির প্রক্রিয়া আর সৃষ্ট বস্তুর মাঝে এই পার্থক্য আমাদের অনেকেরই বোধগম্য নয়। আর এজন্যই- সকলেই কবি নন, কেউ কেউ কবি। শাহাদুজ্জামানের লেখনী বরাবরের মতোই সহজ, সরল, প্রাণবন্ত। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে লেখক প্রায় জোর করে এটাই পাঠককে ভাবাতে চেয়েছেন যে, জীবনানন্দ ট্রামের নীচে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। যদিও ব্যক্তি জীবনানন্দের জীবনের নানা ঘটনা পাঠককে তেমনটা ভাবাতেই কিছুটা বাধ্য করবে। যাই হোক, কবিতা প্রেমী-অপ্রেমী সকলেরই বইখানা একবার হলেও পড়ে দেখা উচিত। দুর্দান্ত পাঠ।
Was this review helpful to you?
or
বরিশালের নদী, জোনাকি ছেড়ে তাঁকে পা রাখতে হয়েছে আদিম সাপের মত ছড়িয়ে থাকা কলকাতার ট্রামলাইনের ওপর। পৃথিবীর দিকে তিনি তাকিয়েছেন বিপন্ন বিস্ময়ে। বলেছেন সন্ধ্যার সব নদী ঘরে ফিরলে থাকে অন্ধকার এবং মুখোমুখি বসবার নাটোরের এক নারী। জানিয়ে দিয়েছেন জ্যোৎস্নায় ঘাইহরিণীর ডাকে ছুটে আসা, শিকারীর গুলিতে নিহত হরিণের মত আমরা সবাই। সস্তা বোর্ডিংয়ে উপার্জনহীনভাবে দিনের পর দিন কুঁচো চিংড়ি খেয়ে থেকেছেন। তবু পশ্চিমের মেঘে দেখেছেন সোনার সিংহ। পিঁপড়ার মত গুটি গুটি অক্ষরে হাজার হাজার পৃষ্ঠা ভরেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ডায়েরি লিখে। সেগুলোর সামান্য শুধু জনসমক্ষে এনেছেন জাদুকরের রুমালের মত, বাকিটা গোপনে তালাবন্দী করে রেখেছেন কালো ট্রাঙ্কে। বাংলা সাহিত্যের প্রহেলিকাময় এই মানুষ জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে এক নিবিড় বোঝাপড়ায় লিপ্ত হয়েছেন এ সময়ের শক্তিমান কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান তাঁর একজন কমলালেবু উপন্যাসে।
Was this review helpful to you?
or
জীবনানন্দ দাসকে নিয়ে একটি গোটা উপন্যাস! আমি এটাকে উপন্যাস না বলে বলব জীবনালেখ্য। কী পরিমাণ গবেষণা করে ডা. শাহাদুজ্জামান এ বই লিখেছেন, তা অপরিমেয় হলেও অনুমেয়। জীবনানন্দের নিরানন্দ জীবন, প্রেমে ব্যর্থতা, চাকরিবিহীন কপর্দকহীন যৌবনের দীর্ঘ ৫ বছর, স্ত্রীর সাথে বন্ধনহীন দাম্পত্য আর কবিগুরু সহ বিদগ্ধ সমাজের অনেকের কাছে তীব্র অপমান সহ্য করা - এসব একে একে যাদুকরের টুপির ভেতর থেকে কবুতর বের করার মতো করে পাঠকের সামনে প্রামাণিক দলিলসহ উপস্থাপন করেছেন তিনি। শুধু কবি নন, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক জীবনানন্দ দাশের সাথে পরিচয় করিয়েছেন আমাকে। পাখির নীড়ের মতো চোখ ছিল বনলতা সেনের। নাটোরের সেই নারী গণিকা ছিলেন, না বৃটিশবিরোধী বিপ্লবী ছিলেন, তা নিয়ে আমি ভাবিত নই। তাঁর চোখ নীড়ের মতো কেন, তা নিয়ে আমার ছিল সবিস্ময় কৌতূহল। জানলাম, নীড় নয়, নীড়ত্ব, অর্থাৎ আশ্রয় বোঝাতে এই উপমা ব্যবহার করেছিলেন জীবনানন্দ!!! আজ থেকে ১১ বছর আগে আমার বাবার রহস্যঘন মৃত্যুর পর থেকে "আট বছর আগের এক দিন" কবিতাটি আমার বড় প্রিয়। "যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ" শিরোনামে আমি ৩ কিস্তির প্রবন্ধ লিখেছিলাম আব্বুর ৩ টি মৃত্যু দিবসে। কবিতাটা পড়লেই আমি চোখ খুলেও দেখতে পেতাম লাশকাটা ঘরে আব্বু চিৎ হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের 'পরে! আমি প্রায়ই ভাবতাম, জীবনানন্দ এই কবিতা কাকে নিয়ে লিখেছিলেন? অথচ কী আশ্চর্য, এ কবিতা তিনি তাঁর নিজের আট বছর আগের তাঁকে নিয়েই লিখেছিলেন! তাঁর কবিতায় তিনি একদিকে যেমন তাঁর বেকারত্ব আর হতাশায় মুহ্যমান হয়ে আত্মহত্যাপ্রবণ নিজের সত্তাকে তুলে এনে তার মুখ দিয়ে বলিয়েছেন, জীবনে সব পার্থিব কিছু পাওয়া হয়ে গেলেও জীবন অর্থহীন লাগে, মরে যেতে ইচ্ছে হয়; অন্যদিকে সেই সত্তাকে বেঁচে থাকতে অনুপ্রাণিত করেছেন, থেৎলে যাওয়া ব্যাং এর বাঁচতে চাওয়া আর অন্ধ পেঁচারও ইঁদুর ধরার বাসনার কথা বলে, পিতামহীর সাথে জীবনের ভাঁড়ারের শেষ উপভোগ্য উপাচার নি:শেষ করে বেঁচে থাকার আনন্দ উদযাপন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। কী অদম্য তাঁর সেই জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার স্পৃহা! কবিতার এই ব্যাখ্যা পড়ে আমি নিজেও ভীষণ উজ্জীবিত। শোভনা আর লাবণ্যকে ছাপিয়ে আমাকে বিমুগ্ধ করেন বুদ্ধদেব বসু আর ভূমেন্দ্র গুহ, যারা না থাকলে জীবনবাবুর কবি জীবনানন্দ দাস হওয়া হতো না। অধ্যাপনা ছেড়ে যিনি আর কোন পেশাতেই যোগ দিতে পারেন নি, জীবনের সুখের সময় যিনি বাংলার প্রকৃতি বন্দনা করেছেন, কষ্টের সময়ও যিনি কবিতা আর গল্পেই খুঁজে পেয়েছেন দু'দন্ড শান্তি, তিনি যেন আমারই আগের জন্মের আমি! মিলু নামের সেই ছোট্ট মাতৃভক্ত ছেলেটির ভেতর, শোভনার ব্যর্থ প্রেমিকের ভেতর, লাবণ্যের অকর্মণ্য স্বামীর ভেতরে আমি আমার এক অদৃশ্য ছায়া খুঁজে পাই। জীবনানন্দ পরিশেষে স্বেচ্ছায় ট্রামের তলায় চাপা পড়লেন, নাকি নিছক দুর্ঘটনা? সেও আমার পিতৃমৃত্যুর মতোই এক প্রহেলিকা! (এখনো আমার পড়া শেষ হয়নি ...। বইটার কয়েকটা রিভিউ বই কেনার আগেই পড়েছি। আমার এই রিভিউ ঠিক রিভিউ নয়, অনেকটা আত্মকথন হয়েই না হয় রয়ে যাক অন্তর্জালের কোন অজানা জটে... বিনীত কাজী মিতুল)
Was this review helpful to you?
or
বুক রিভিউ বইয়ের নাম : একজন কমলালেবু লেখকের নাম : শাহাদুজ্জামান ধরন : উপন্যাস প্রচ্ছদ : সব্যসাচী হাজরা প্রকাশনীর নাম : প্রথমা প্রকাশ কাল : অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭ মুদ্রিত মুল্য : ৩৮৩ টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২৪০। বরিশালের বিখ্যাত কবি ‘কুসুম কুমারী দাশ’ ও ‘সত্যানন্দ দাশ’ এর বড় পুত্র কবি ‘জীবনানন্দ দাশ’। একজন কমলালেবু হিসেবে লেখক জীবনানন্দের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘কবি জীবনানন্দ’ কবি হয়ে উঠার পিছনে তার মায়ের ভূমিকাই প্রধান।জীবনানন্দের জন্ম বরিশালে হলেও জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন কলকাতা শহরে। পেশা হিসেবে লেখালেখির পাশাপাশি শিক্ষকতা করেছেন অনেক দিন। যদিও তার এই শিক্ষকতা পেশা মোটেও ভাল লাগেনি। জীবনানন্দ কবি হিসেবে পরিচিতি পেলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক, শিক্ষক, সাংবাদিক।কবিতা পত্রিকায় ও পুস্তক আকারে প্রকাশ পেলেও তিনি কোন গল্প বা উপন্যাস প্রকাশ করেননি। তার মৃত্যুর পর পাওয়া যায় অপ্রকাশিত ২১ টি উপন্যাস ও ১০৮ টি ছোট গল্প। এসব গল্প, উপন্যাসে তার জীবনের নানা বিষয়ের প্রতিচ্ছবি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু কেন জীবনানন্দ এসব প্রকাশ করেননি। কেন তিনি সে সব এত আড়ালে রেখে গেলেন ? কবি বুদ্ধদেব বসু কবি জীবনানন্দকে ‘শুদ্ধতমকবি’ ও ‘নির্জনতার কবি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কেন কবি বুদ্ধদেব বসু কবিকে শুদ্ধতম ও নির্জনতার কবি বলে আখ্যায়িত করেছেন সে সব লেখক তার সুনিপুন হাতের ছোয়ায় লিপিবদ্ধ করেছেন ‘একজন কমলালেবু’ গ্রন্থে। কবি তার প্রিয় শহর বরিশালের বি এম কলেজে শিক্ষকতা করেছেন বহুদিন। দেশ ভাগের আগেই চলে যান কলকাতায়। যাবার সময় বেশ কিছু লেখা ভুলে রেখে যান, যা তিনি আর ফিরে পাবেন না বলে মণ খারাপ করতেন। প্রিয় শহরে ফেরার খুব ইচ্ছা থাকলেও আর ফেরা হয়নি তার। কবির বন্ধু, শত্রু, পৃষ্ঠপোষকতা, হতাশ সময়ে কে তার সঙ্গী, সহ কবি জীবনানন্দ ও ব্যক্তি জীবনানন্দ উভয়ই লেখক তার লেখায় ফুটিয়ে তুলেছেন অপূর্ব এক মেলবন্ধন। কবি তার শেষ সময়ে তার পারিবারিক জীবন নিয়ে ছিলেন বেশ হতাশ। একটি চাকুরীর জন্য কত কুকুর বিড়ালের কাছে তাকে নতজানু হতে হয়েছে। মাঝে মাঝে ভাবতেন আত্মহত্যার কথা। কিভাবে তিনি আত্মহত্যা করবেন সেসব কথাও জানা যায় তার লেখা ডায়েরী থেকে। ১৯৫৪ সালে ট্যাংক দূর্ঘটনায় হওয়ার পর তাকে নেওয়া হয় কলকাতার ‘শম্ভুনাথ হাসপাতালে’।রোগী একজন কবি জেনেও তাকে ফেলে রাখা হয় ইমাজের্ন্সী বেডে। মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র তাকে দেখতে এসে উন্নত চিকিৎসা ও কেবিনে স্থানান্তরের আদেশ দিয়ে গেলে হাসপাতাল কতৃপক্ষ তাতে সায় দিলেন না। অবশেষে ২২ অক্টোবর ১৯৫৪ তারিখে শুদ্ধতম ও নির্জনতার কবি না ফেরার পথে যাত্রা শুরু করেন। কবির এই না ফেরার দেশে যাত্রা কি শুধু একটি দুর্ঘটনা ? না কি আত্মহত্যা ?? না কি হত্যাকান্ড ??? এই অমিমাংসিত প্রশ্ন রেখে লেখক ইতি টানেন। বইয়ের নামকরন : কবি জীবনানন্দ তার একটি কবিতায় কমলালেবু হওয়ার মনোবাসনা ব্যক্ত করেন। তবে সেটা তার ২য় বার পৃথিবীতে পর্দা পনের সময়। তাই লেখক জীবনানন্দকে তার জীবনের চাওয়াকে পূর্ণতা দেওয়ার লক্ষে তার গ্রন্থের নামকরন করেন ‘একজন কমলালেবু’। পাঠ প্রতিক্রিয়া : কবি জীবনান্দকে নিয়ে লেখা কোন গ্রন্থ এর আগে পড়া হয়নি আমার। তাই অনেকটােআবেগের বশবর্তী হয়েই কেনা হয় ‘একজন কমলালেবু’। ‘একজন কমলালেবু’ গ্রন্থকে শুধু উপন্যাস বললে ভূল হবে হয়তো। এটা একাধারে কবির আত্মজীবনী, গল্প, উপন্যাস, ব্যাখ্যা গ্রন্থ ও গবেষনা গ্র্রন্থ। যেখানে উঠে এসেছে কবির কবি জীবন, ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন ওশিক্ষকতার জীবন। কবির প্রেম-ভালবাসা, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনীতি, দেশভাগ, দুর্ভিক্ষ, বিশ্বযুদ্ধ, হিন্দু মুসলিম দ্বাঙ্গা ও সম্পর্কের টানাপোড়ন এর সংমিশ্রনে লেখক শাহাদুজ্জামানের এক অপূর্ব সৃষ্টি ‘একজন কমলালেবু’।