User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বই: নজরুল লেখক: কাজী সাইফুল ইসলাম প্রকাশনী: ঐতিহ্য প্রকাশ কাল: বইমেলা ২০১৭ পৃষ্ঠা: ১১০ প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ মুদ্রিত মূল্য: ২১০৳ কাহিনী সংক্ষেপ: কাজী নজরুল ইসলামের গোটা জীবন মহাসমুদ্রের মতো। অার সে সমুদ্রের রয়েছে হাজারও শাখা-প্রশাখা - জন্ম, মূল্যবোধ, মানবিকতা, দারিদ্র্যতা, অসাম্প্রদায়িকতা, প্রেম, বিরহ, ত্যাগ, সৃষ্টির নেশা, উল্লাস, অভিমান, কষ্ট ; সব মিলিয়ে নজরুলের জীবন বৈচিত্র্যের বিহ্বলতায় ঘেরা। নজরুলের যৌবন কালের বিরহ-প্রেম, বিদ্রোহের যে সংমিশ্রণ তারই কিছু অংশ লেখক এ বইয়ে তুলে ধরেছেন তার সুনিপুন লেখনশৈলীতে। নজরুল বরাবরই স্নেহ ভালোবাসার কাঙাল ছিল। ভালোবাসা পেলে সব ভুলে যেত সে। জাত-ধর্মের হিসেব তার কোন কালেই ছিল না। প্রেম অার দ্রোহের কবি নজরুলের জীবনে প্রেম এসেছে অনেকবার। তেমনি নজরুলের প্রেমেও মেতেছে অনেকে। নজরুলের জীবনের প্রথম নারী সৈয়দার সাথে পরিচয় অালী অাকবর খানের মাধ্যমে। অালীর সাথে দৌলতপুর বেড়াতে অাসেন কবি। খাঁ বাড়ির সবাই রাতের খাওয়া শেষ করে শুয়ে পড়ে। ক্রমশ রাত গভীর হয় প্রচন্ড ঝড়ের পর চাঁদ অার নক্ষত্রের অালো ঝরে পড়ে মাটিতে। অাকাশের দিকে তাকিয়ে কবি সুর তোলেন বাঁশিতে... বাঁশির সুরে বুকের ভেতর সুখ বোধ হয়, ভালোবাসা জাগায়। ঘুম পালিয়ে যায় সৈয়দার চোখের। পা টিপে নজরুলের পাশে এসে দাঁড়ায় সে। চুলের গন্ধে বাঁশি রেখে মুখ তুলে সৈয়দার দিকে তাকায় নজরুল সে মুখে খুঁজে পায় তার মানস বধূকে। " সে যেন কোনো দূরের মেয়ে অামার কবির মানস বধূ" কবি সৈয়দাকে ভালোবেসে নাম দেয় নার্গিস। ভালোবেসে সময়ের ফাঁদে বন্দি হয় দু'জন। প্রেম লুকিয়ে রাখা যায় না, কবিরও প্রেমও তাই প্রকাশিত হলো। ঠিক হলো অাষাঢ়ের তিন তারিখ বিয়ে হবে। কিন্তু বিয়ের অাসরে বসে কাবিন নামার শর্ত শুনে হতবিহ্বল হয়ে পরে কবি। অবহেলা অপমানে বুক ভেঙে কান্না অাসে। সবাই ভুল করলেও তার নার্গিস যে তাকে এভাবে ঠকাবে তা তিনি কল্পনাও করতে পারেন নাই। তাই বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলে সে রাতেই তিনি চলে অাসেন কুমিল্লা। "নিশীথ রাতের স্বপ্ন হেন পেয়েও তারে পাইনি যেন" নার্গিসকে ভালোচেসে বিয়ে করলেও বিয়ের পর দীর্ঘ ১৬ বছর নজরুলের সাথে আর কোন যোগাযোগও ছিল না। ১৯৩৭ সালে নজরুলকে নার্গিস একটা চিঠি লেখেন। চিঠির উত্তরে কবি লিখেন, "তুমি এই আগুনের পরশ মানিক না দিলে আমি 'অগ্নিবীণা' বাজাতে পারতামনা - আমি 'ধূমকেতুর' বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতামনা'' কুমিল্লায় অাসার পর অসুস্থ হয়ে পরে কবি, দোলনোর সেবায় সুস্থ হতে হতেই তার জন্য মনের মধ্যে বিন্দু বিন্দু ভালোবাসা জমতে শুরু করে। নজরুল ভালোবেসে দোলনের নাম দিয়েছিল প্রমীলা। দোলন প্রমীলা মানে জানতে চাইলে এককথায় কবি বলেন অবসাদ। তাই হয়তো গোটা জীবন অবসাদেই ডুবে ছিল প্রমীলার জীবন। অবশ্য প্রমীলা হয়ে ওঠার জন্য তাকে অনেক বছর সাধনা করতে হয়েছে। অনেক কষ্ট অার বিড়ম্বনা সহ্য করতে হয়েছে তাকে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কবিকে ঘিরেই ছিল তার ভাবনা। এ তো গেল কেবল প্রেমের পালা বিরহও ছিল কবির নিত্য সঙ্গী। কবি বন্ধু মোতাহার হোসেনের মাধ্যমে পরিচয় হয় ফজিলাতুন্নেসার সাথে। মোতাহার হোসনকে লেখা এক চিঠিতে বোঝা যায় ফজিলাতুন্নেসার প্রতি কবির ভালোবাসা ছিল কেবল একপার্শ্বিক। "সুন্দরের অবহেলা অামি সইতে পারি না বন্ধু, তাই এত জ্বালা" কেবল প্রেমে বুঁদ হয়েই কাটে নি কবির জীবন। ইউরোপ উপনিবেশের সাথে গোটা ভারতবর্ষের মানুষ যখন দম বন্ধ হওয়া পরাধীনতার শিকার। তখন কবি লিখলেন, "বল বীর- বল উন্নত মম শির! শির নিহারী, অামারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর।" তার পরপরই লিখেছেন অানন্দময়ীর অাগমনে, "অার কতকাল থাকবি বেটী মাটির ঢেলার মূর্তি অাড়াল? স্বর্গ যে অাজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল।" অানন্দবাজার পত্রিকার জন্য লিখলেও কবিতাটি ছাপা হয় ধূমকেতু পত্রিকায়। পুলিশ মনে করে ধূমকেতুর অফিস হচ্ছে বিপ্লবীদদের বীজতলা। অফিসের সবকিছু ভেঙে তছনছ করে সিলগালা করে দেয়। নজরুলের নামে রাষ্ট্রদোহের মামলা হয়। কমরেড মনোরেন্দ্র রায় কবিকে ইউরোপ পাঠিয়ে দিতে চাইলে কবি রাজি হয় না। অকুতোভয় দেশপ্রমী কবি জীবন থেকে কখনও পালিয়ে বেড়ায় নি। সবার অনুরোধে দেশ না ছাড়লেও কলকাতা ছাড়তে কিন্তু কারাগার তার ভাগ্যে লেখা। একবছের জেল হয় তার। কবির রাজনৈতিক জীবন, প্রেম-ভালোবাসা, কবিতা-গান অার মায়ের সাথে অভিমানী জীবনের কাহিনী নিয়েই বই নজরুল। যেখানে জানা যায় কবির অজানা ব্যক্তি জীবন-জীবিকার সন্ধান অার লেখালেখি, রাজনীতি, বক্তৃতার নানা দিক। প্রিয় কবির জীবন সম্পর্কে জানতে সল্প পরিসরে এ যেন এক বিশাল ভান্ডার। কবিপ্রেমী পাঠক তাই নিঃসন্দহে বইটা পড়তে পারেন।
Was this review helpful to you?
or
কাজী সাইফুল ইসলাম রচিত “নজরুল”! বাড়ীর উঠোন জুড়ে গানের আসরে গান গাইতে গাইতে কখন যেন সুরের নেশায় আসক্ত দুটি কিশোরী আঁখি কবির মনে গেঁথে গেল; কবি টেরও পেলেন না। টের পেল না সেই কিশোরী হৃদয়ও। সুরের সেই আবেশে ভেসে যাওয়া মাতাল এক দোলাচালে দুলতে লাগলো দুটি প্রাণ নিজেদের অগোচরে! সেই মাতাল চোখের অধিকারিণী; আশালতা সেনগুপ্তা ওরফে দোলন সারাজীবন আলোকিত করে রাখলেন কবি নজরুলকে। কবি তাকে প্রমীলা বলে ডেকেছিলেন নিজের খেয়ালে। এই নামটাই পাকাপোক্ত হয়ে থাকলো বিষাদের পরশ নিয়ে বাকী জীবন। বিষাদ মাখা সেই রূপে বিমোহিত কবি গেয়ে উঠেছিলেন, ‘হেরিতে তোমার রূপ-মনোহর/পেয়েছি এ আঁখি, ওগো সুন্দর/ মিটিতে দাও হে প্রিয়তম মোর/ নয়নের সেই সাধ’! স্নিগ্ধ এক ভোরের আলোয় কবি মুখোমুখি হলেন তাঁর জীবনের আরেক অধ্যায়ের। সরলতার আবেশ আর চোখে বিস্ময় নিয়ে সৈয়দা খাতুন ক্ষণিকের আড়ষ্টতাকে সাথী করে কবির পাশ কেটে চলে গেলেন। এবার কবি ঠিকই টের পেলেন তাঁর মনের উল্লাসে গুন গুন করে ওঠা। বাঁশির সুর আর জোছনার আলো অন্ধকার রাতকে যখন উন্মাতাল করছে তখন সৈয়দা এগিয়ে গেলেন নিজের নতুন পরিচয়ের দিকে। ভীত বুকে তাকালেন কবির মুখপানে, টের পেলেন ধীর লয়ে আপ্লুত এক আবেগের জোয়ার। সেই লয়ে সুর মিলিয়ে নজরুল লিখে ফেলেন, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী/দেবো খোঁপায় তারার ফুল!’ তিনি পেলেন তাঁর মানসবধূকে, নাম দিলেন ইরানি ফুলের নামে; নার্গিস! অদম্য তাড়নায় ভাসতে দেন নি কবিকে, ভাসেন নি যিনি নিজেও; তিনি ফজিলতুন্নেসা জোহা। সেতার বাজিয়ে গাইতে যেমন পটু তেমনি ছবি আঁকা ও টেবিল টেনিসেও সমান দক্ষ নোটন (উমা মৈত্র) ছিলেন কবির স্নেহাধন্য। রানু সোম যিনি বুদ্ধদেব বসুর ঘরণী হয়ে প্রতিভা বসু হলেন; তিনি সঙ্গীত চর্চার মধ্য দিয়ে কবিকে দিয়েছিলেন বিস্মিত কিছু মুহূর্ত। এই রানু’র চোখের জলেই লিখলেন, ‘এতো জল ও কাজল চোখে/ পাষাণী আনলে বল কে’। ফিরোজা বেগমের বাল্যকালের মধুর স্মৃতির নাম কাজী নজরুল ইসলাম আর সারা জীবনের সাধনার নাম নজরুল গীতি। দাবানল-দাহ আটকে রাখে; এমন সাধ্য ছিল কার? প্রেম! সে তো কেবলই চেয়ে দেখা, পদতলে শত বন্ধন পিষে দিগ্বিদিক ভুলে ছুটে চলা। খ্যাপাটে ছন্দের অভিমানের চোরা স্রোতে ভেসে চলা কবির স্মরণে হয়তো কারো সজল চোখে ভেসে উঠবে – ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো/ তবু আমারে দেবোনা ভুলিতে’। উঠুক না, তাতে ক্ষতির হ্রাস বৃদ্ধি তো আর নেই। ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা ভুলে বাউন্ডুলে কবি কখনো বিরতি দেন নবযুগ আর মোসলেম ভারত এর চায়ের আড্ডায়, কখনো গানের জলসায় সুরে সুরে কবিতার ঝংকারে কখনোবা শুধুই পান সুপারির সুবাসে। কবি কাজী নজরুল ইসলামকে কেন্দ্র করে রচিত বইয়ের সংখ্যা নেহাত কম নয়। সাহিত্য কর্ম, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, বৈপ্লবিক চিন্তা-ভাবনা, বাহ্যিক ও ঘরোয়া জীবনের নানাবিধ ঘটনা ও রটনাকে আশ্রয় করে গবেষণার আলোকে উঠে এসেছে কবির জীবনের নানান দিক। প্রতুল সেসব তথ্যের ভিড় থেকে কাজী সাইফুল ইসলাম কবির নিজস্ব একটি রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন “নজরুল” গ্রন্থটিতে। কালের আঘাতে ধূসরিত অতীত ঘেঁটে কবির ব্যক্তিক চরিত্রকে নিরপেক্ষভাবে রূপদান করতে গিয়ে লেখক যে শ্রম ও নিষ্ঠা প্রয়োগ করেছেন তাতে তিনি প্রশংসার দাবীদার। একইসাথে কবির জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর যে অপূর্ব চরিত্রায়ণ লেখক করেছেন তা নিঃসন্দেহে তার সুদক্ষতার পরিচয় বাহক। কবির ব্যক্তিগত জীবন তথা নারী সাহচর্য মূল বিষয়বস্তু হলেও লেখক কাজী সাইফুল ইসলাম কবি নজরুলকে ঘিরে থাকা অন্যান্য খুঁটিনাটি মাধুর্যতাকেও ফুটিয়ে তুলেছেন। কবি নজরুলের প্রতি তৎকালীন বৃটিশ রাজশক্তির ভূমিকাও উঠে এসেছে বইটির মধ্যে। বইটির লক্ষ্য ছিল কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ব্যক্তিক জীবন পাঠকের সামনে সাবলীল সরলতায় নিয়ে আসা, যাতে করে কবিকে আপন করে চিনে নেয়ার প্রচেষ্টা হয় সহজ ও সার্থক। কবিকে খুঁজে বেড়ানোর যে তেষ্টা লেখকের মনের গভীরে ডাল পালা ছড়িয়ে আছে তা পাঠকের হৃদয়ে মহীরূহ রূপে জেগে উঠবে এই বইয়ের মধ্যে দিয়ে। প্রদীপের উজ্জ্বল আলোর নীচে যেমন কিছুটা অন্ধকার থাকে তেমনি সুখ পাঠ্য রচনায় অল্প বিস্তর ভুল থাকা স্বাভাবিক। তবে তা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় আবদ্ধ থাকলেই ভালো হয়। অত্যন্ত আক্ষেপের সাথে বলতে হয় এই বইটির ক্ষেত্রে কিছু ভ্রান্তি কোন বাঁধনেরই বাঁধ মানে নি। ভুল বানান, শব্দের ভুল প্রয়োগ, নামের বিভ্রাট সুখ পঠনে ব্যাপক অন্তরায় সৃষ্টি করে যা এই বইটির বেলায় ব্যাপক হারে লক্ষ্যণীয়। এই ক্ষেত্রে শুধু প্রুফ রিডিংকে দোষী করলে অন্যায় হবে কেননা একটি বই প্রকাশের সাথে সাথে সেটি একটি প্রকাশনী, একটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান, একজন প্রচ্ছদশিল্পী, সর্বোপরী একজন লেখকের ভাবমূর্তির কাজ করে। বইটির শুরুতে উৎসর্গ পত্রে এবং ভূমিকাতেও যখন বানান ও সম্বোধনে ভুল লক্ষ্য করা যায় তখন পাঠকের মনে একটা বিরূপ ধারণা তৈরি হতে বাধ্য। গল্পের খাতিরে গল্পের ভিতরে কবির সাথে পাঠকের নৈকট্য বৃদ্ধিতে তুমি সম্বোধন খুবই কার্যকর একটা পদ্ধতি তবে বইয়ের ভূমিকাতে কবিকে আপনি সম্বোধন করাই শ্রেয়। ভূমিকাতে আরো একটা দৃষ্টিকটু ব্যাপার হল কবির বিখ্যাত দুটি কবিতার ভুল বানানে উপস্থাপনা। প্রমীলার সাথে বিয়ে পরবর্তী সময়ে মাতৃসম বিরজা সুন্দরী দেবীর কি প্রতিক্রিয়া ছিল সে দিকে লেখক কিছুটা দৃষ্টিপাত করতে পারতেন। একইভাবে বাসর অসম্পন্ন রেখে চলে আসার পর নার্গিসের ব্যথিত অনুভূতির উপরও কিঞ্চিৎ আলোকপাত প্রাসঙ্গিক ও পাঠকের তৃপ্তি সহায়ক হতে পারতো। এমন ছোট খাটো কিছু ব্যাপারকে পাশ কাটিয়ে পাঠকরা সহজেই খুঁজে পাবেন এমন এক লেখককে যার রচনাশৈলী প্রশংসার অতীত। কবির জীবনের অর্থবহ কিছু ঘটনার পারস্পরিক মিল রেখে গল্পের আদলে অত্যন্ত সহজবোধ্য ভঙ্গিতে পাঠকের সামনে সফলভাবে নিয়ে এসে পারদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন কাজী সাইফুল ইসলাম। বাঁশের বাঁশরী হাতে কবির মুখায়বসহ যে সুন্দর কারুকার্যময় প্রচ্ছদ “নজরুল” বইটিতে উপস্থাপিত হয়েছে সেজন্য কৃতজ্ঞচিত্তে শিল্পী ধ্রব এষ বরাবর অভিবাদন জানাই। ধন্যবাদ ঐতিহ্য প্রকাশনীকেও এমন একটি বই প্রকাশে এগিয়ে আসার জন্য। মাত্র ২১০ টাকা প্রচ্ছদ মূল্যে ১১০ পৃষ্ঠার এই বইটিতে কত আবেগ আর মর্মবেদনা ফুটে উঠতে পারে তা সত্যি বিস্ময়কর। বইটি নজরুল প্রেমীদের প্রতি উৎসর্গকৃত, যাদের বুকে আজো নজরুল গীতি আগলে রাখা, এখনো কবির কবিতা যাদের ভাবাবেগে শিহরণ তোলে, কবির ভালোবাসা যাদের হৃদয়ে সজীবতা বিলিয়ে চলবে আরো অনেক দিন। ২০১৭ সালে প্রকাশিত তরুণ লেখক কাজী সাইফুল ইসলাম রচিত আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর জীবনী নির্ভর বইটি সংগ্রহ করা যাবে যেকোন পুস্তক বিক্রেতার কাছ থেকে বা বিভিন্ন অন লাইন ভিত্তিক বুকশপ থেকে। কবি নজরুলের প্রতি ভালবাসা বুকে নিয়ে যারা বইটি পড়েছেন, পড়ছেন এবং ভবিষ্যতে পড়বেন তাদের সকলের জন্য রইলো শুভকামনা!
Was this review helpful to you?
or
কাজী সাইফুল ইসলাম রচিত “নজরুল”! বাড়ীর উঠোন জুড়ে গানের আসরে গান গাইতে গাইতে কখন যেন সুরের নেশায় আসক্ত দুটি কিশোরী আঁখি কবির মনে গেঁথে গেল; কবি টেরও পেলেন না। টের পেল না সেই কিশোরী হৃদয়ও। সুরের সেই আবেশে ভেসে যাওয়া মাতাল এক দোলাচালে দুলতে লাগলো দুটি প্রাণ নিজেদের অগোচরে! সেই মাতাল চোখের অধিকারিণী; আশালতা সেনগুপ্তা ওরফে দোলন সারাজীবন আলোকিত করে রাখলেন কবি নজরুলকে। কবি তাকে প্রমীলা বলে ডেকেছিলেন নিজের খেয়ালে। এই নামটাই পাকাপোক্ত হয়ে থাকলো বিষাদের পরশ নিয়ে বাকী জীবন। বিষাদ মাখা সেই রূপে বিমোহিত কবি গেয়ে উঠেছিলেন, ‘হেরিতে তোমার রূপ-মনোহর/পেয়েছি এ আঁখি, ওগো সুন্দর/ মিটিতে দাও হে প্রিয়তম মোর/ নয়নের সেই সাধ’! স্নিগ্ধ এক ভোরের আলোয় কবি মুখোমুখি হলেন তাঁর জীবনের আরেক অধ্যায়ের। সরলতার আবেশ আর চোখে বিস্ময় নিয়ে সৈয়দা খাতুন ক্ষণিকের আড়ষ্টতাকে সাথী করে কবির পাশ কেটে চলে গেলেন। এবার কবি ঠিকই টের পেলেন তাঁর মনের উল্লাসে গুন গুন করে ওঠা। বাঁশির সুর আর জোছনার আলো অন্ধকার রাতকে যখন উন্মাতাল করছে তখন সৈয়দা এগিয়ে গেলেন নিজের নতুন পরিচয়ের দিকে। ভীত বুকে তাকালেন কবির মুখপানে, টের পেলেন ধীর লয়ে আপ্লুত এক আবেগের জোয়ার। সেই লয়ে সুর মিলিয়ে নজরুল লিখে ফেলেন, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী/দেবো খোঁপায় তারার ফুল!’ তিনি পেলেন তাঁর মানসবধূকে, নাম দিলেন ইরানি ফুলের নামে; নার্গিস! অদম্য তাড়নায় ভাসতে দেন নি কবিকে, ভাসেন নি যিনি নিজেও; তিনি ফজিলতুন্নেসা জোহা। সেতার বাজিয়ে গাইতে যেমন পটু তেমনি ছবি আঁকা ও টেবিল টেনিসেও সমান দক্ষ নোটন (উমা মৈত্র) ছিলেন কবির স্নেহাধন্য। রানু সোম যিনি বুদ্ধদেব বসুর ঘরণী হয়ে প্রতিভা বসু হলেন; তিনি সঙ্গীত চর্চার মধ্য দিয়ে কবিকে দিয়েছিলেন বিস্মিত কিছু মুহূর্ত। এই রানু’র চোখের জলেই লিখলেন, ‘এতো জল ও কাজল চোখে/ পাষাণী আনলে বল কে’। ফিরোজা বেগমের বাল্যকালের মধুর স্মৃতির নাম কাজী নজরুল ইসলাম আর সারা জীবনের সাধনার নাম নজরুল গীতি। দাবানল-দাহ আটকে রাখে; এমন সাধ্য ছিল কার? প্রেম! সে তো কেবলই চেয়ে দেখা, পদতলে শত বন্ধন পিষে দিগ্বিদিক ভুলে ছুটে চলা। খ্যাপাটে ছন্দের অভিমানের চোরা স্রোতে ভেসে চলা কবির স্মরণে হয়তো কারো সজল চোখে ভেসে উঠবে – ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো/ তবু আমারে দেবোনা ভুলিতে’। উঠুক না, তাতে ক্ষতির হ্রাস বৃদ্ধি তো আর নেই। ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা ভুলে বাউন্ডুলে কবি কখনো বিরতি দেন নবযুগ আর মোসলেম ভারত এর চায়ের আড্ডায়, কখনো গানের জলসায় সুরে সুরে কবিতার ঝংকারে কখনোবা শুধুই পান সুপারির সুবাসে। পাঠ উপলব্ধিঃ কবি কাজী নজরুল ইসলামকে কেন্দ্র করে রচিত বইয়ের সংখ্যা নেহাত কম নয়। সাহিত্য কর্ম, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, বৈপ্লবিক চিন্তা-ভাবনা, বাহ্যিক ও ঘরোয়া জীবনের নানাবিধ ঘটনা ও রটনাকে আশ্রয় করে গবেষণার আলোকে উঠে এসেছে কবির জীবনের নানান দিক। প্রতুল সেসব তথ্যের ভিড় থেকে কাজী সাইফুল ইসলাম কবির নিজস্ব একটি রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন “নজরুল” গ্রন্থটিতে। কালের আঘাতে ধূসরিত অতীত ঘেঁটে কবির ব্যক্তিক চরিত্রকে নিরপেক্ষভাবে রূপদান করতে গিয়ে লেখক যে শ্রম ও নিষ্ঠা প্রয়োগ করেছেন তাতে তিনি প্রশংসার দাবীদার। একইসাথে কবির জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর যে অপূর্ব চরিত্রায়ণ লেখক করেছেন তা নিঃসন্দেহে তার সুদক্ষতার পরিচয় বাহক। কবির ব্যক্তিগত জীবন তথা নারী সাহচর্য মূল বিষয়বস্তু হলেও লেখক কাজী সাইফুল ইসলাম কবি নজরুলকে ঘিরে থাকা অন্যান্য খুঁটিনাটি মাধুর্যতাকেও ফুটিয়ে তুলেছেন। কবি নজরুলের প্রতি তৎকালীন বৃটিশ রাজশক্তির ভূমিকাও উঠে এসেছে বইটির মধ্যে। বইটির লক্ষ্য ছিল কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ব্যক্তিক জীবন পাঠকের সামনে সাবলীল সরলতায় নিয়ে আসা, যাতে করে কবিকে আপন করে চিনে নেয়ার প্রচেষ্টা হয় সহজ ও সার্থক। কবিকে খুঁজে বেড়ানোর যে তেষ্টা লেখকের মনের গভীরে ডাল পালা ছড়িয়ে আছে তা পাঠকের হৃদয়ে মহীরূহ রূপে জেগে উঠবে এই বইয়ের মধ্যে দিয়ে। প্রদীপের উজ্জ্বল আলোর নীচে যেমন কিছুটা অন্ধকার থাকে তেমনি সুখ পাঠ্য রচনায় অল্প বিস্তর ভুল থাকা স্বাভাবিক। তবে তা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় আবদ্ধ থাকলেই ভালো হয়। অত্যন্ত আক্ষেপের সাথে বলতে হয় এই বইটির ক্ষেত্রে কিছু ভ্রান্তি কোন বাঁধনেরই বাঁধ মানে নি। ভুল বানান, শব্দের ভুল প্রয়োগ, নামের বিভ্রাট সুখ পঠনে ব্যাপক অন্তরায় সৃষ্টি করে যা এই বইটির বেলায় ব্যাপক হারে লক্ষ্যণীয়। এই ক্ষেত্রে শুধু প্রুফ রিডিংকে দোষী করলে অন্যায় হবে কেননা একটি বই প্রকাশের সাথে সাথে সেটি একটি প্রকাশনী, একটি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান, একজন প্রচ্ছদশিল্পী, সর্বোপরী একজন লেখকের ভাবমূর্তির কাজ করে। বইটির শুরুতে উৎসর্গ পত্রে এবং ভূমিকাতেও যখন বানান ও সম্বোধনে ভুল লক্ষ্য করা যায় তখন পাঠকের মনে একটা বিরূপ ধারণা তৈরি হতে বাধ্য। গল্পের খাতিরে গল্পের ভিতরে কবির সাথে পাঠকের নৈকট্য বৃদ্ধিতে তুমি সম্বোধন খুবই কার্যকর একটা পদ্ধতি তবে বইয়ের ভূমিকাতে কবিকে আপনি সম্বোধন করাই শ্রেয়। ভূমিকাতে আরো একটা দৃষ্টিকটু ব্যাপার হল কবির বিখ্যাত দুটি কবিতার ভুল বানানে উপস্থাপনা। প্রমীলার সাথে বিয়ে পরবর্তী সময়ে মাতৃসম বিরজা সুন্দরী দেবীর কি প্রতিক্রিয়া ছিল সে দিকে লেখক কিছুটা দৃষ্টিপাত করতে পারতেন। একইভাবে বাসর অসম্পন্ন রেখে চলে আসার পর নার্গিসের ব্যথিত অনুভূতির উপরও কিঞ্চিৎ আলোকপাত প্রাসঙ্গিক ও পাঠকের তৃপ্তি সহায়ক হতে পারতো। এমন ছোট খাটো কিছু ব্যাপারকে পাশ কাটিয়ে পাঠকরা সহজেই খুঁজে পাবেন এমন এক লেখককে যার রচনাশৈলী প্রশংসার অতীত। কবির জীবনের অর্থবহ কিছু ঘটনার পারস্পরিক মিল রেখে গল্পের আদলে অত্যন্ত সহজবোধ্য ভঙ্গিতে পাঠকের সামনে সফলভাবে নিয়ে এসে পারদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন কাজী সাইফুল ইসলাম। বাঁশের বাঁশরী হাতে কবির মুখায়বসহ যে সুন্দর কারুকার্যময় প্রচ্ছদ “নজরুল” বইটিতে উপস্থাপিত হয়েছে সেজন্য কৃতজ্ঞচিত্তে শিল্পী ধ্রব এষ বরাবর অভিবাদন জানাই। ধন্যবাদ ঐতিহ্য প্রকাশনীকেও এমন একটি বই প্রকাশে এগিয়ে আসার জন্য। মাত্র ২১০ টাকা প্রচ্ছদ মূল্যে ১১০ পৃষ্ঠার এই বইটিতে কত আবেগ আর মর্মবেদনা ফুটে উঠতে পারে তা সত্যি বিস্ময়কর। বইটি নজরুল প্রেমীদের প্রতি উৎসর্গকৃত, যাদের বুকে আজো নজরুল গীতি আগলে রাখা, এখনো কবির কবিতা যাদের ভাবাবেগে শিহরণ তোলে, কবির ভালোবাসা যাদের হৃদয়ে সজীবতা বিলিয়ে চলবে আরো অনেক দিন। ২০১৭ সালে প্রকাশিত তরুণ লেখক কাজী সাইফুল ইসলাম রচিত আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর জীবনী নির্ভর বইটি সংগ্রহ করা যাবে যেকোন পুস্তক বিক্রেতার কাছ থেকে বা বিভিন্ন অন লাইন ভিত্তিক বুকশপ থেকে। কবি নজরুলের প্রতি ভালবাসা বুকে নিয়ে যারা বইটি পড়েছেন, পড়ছেন এবং ভবিষ্যতে পড়বেন তাদের সকলের জন্য রইলো শুভকামনা!
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃ নজরুল লেখকঃ কাজী সাইফুল ইসলাম মুদ্রিত মূল্যঃ ২১০ টাকা প্রকাশনায়ঃ ঐতিহ্য প্রকাশনী সেপ্টেম্বর ১৯২১। এক সন্ধ্যায় আলী আকবর খান এলেন নজরুলের মেসে। তিনি নার্গিসের মামা। তখন কলকাতার ৩/৪- সি তালতলা লেনে মেস করে থাকে কমরেড মুজাফ্ফর আর কবি নজরুল। আলী আকবর বললেন- যা ঘটার ঘটে গেছে, সব ভুল আমার। আমি নার্গিসকে কলকাতায় নিয়ে আসি। নতুন করে আবার শুরু করো তোমরা। তুমি নার্গিসকে গ্রহন করো। কোন ভাবেই সেদিন কবিকে বোঝাতে পারেন নি আলী আকবর। নার্গিসের জন্য কবির ভালবাসা ছিল সত্য। কবির বিশ্বাস, শর্ত দিয়ে ভালবাসা হয় না- যা হয়, তা হচ্ছে প্রতারণা। তাই বিয়ের অনুষ্ঠান থেকেই চলে এসেছিল কবি। আষাঢ় মাস। প্রচন্ড ঝরবৃষ্টির রাতে দৌলতপুর থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত হেঁটে এসেছিল নজরুল। আর এক চোখ জল নিয়ে নার্গিস বাসর ঘরে বসে ছিল একা। এই ছিল নজরুল। চীরবিদ্রোহী। দেশের সাথে, অন্যায়ের সাথে, কামের সাথে, সর্বোপরি আপনার সাথে। আপনাকে যে চিনে নাই, আপনাকে যে বশ করতে পারে নাই, তার দ্বারা অন্তত আর কাউকে বশ মানানো সম্ভব নয়। ইউরোপ উপনিবেশ- কেনিয়া, নাইজেরিয়া, জিম্বাবুয়ে সহ দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোর সাথে গোটা ভারতবর্ষের মানুষ যখন দমবন্ধ হওয়া পরাধীনতায় বুদ হয়ে তাকিয়ে আছে ঈশ্বরের দিকে, তখন উপনিবেশের বিরুদ্ধে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন- বিদ্রোহী কবিতা, বল বীর- বল উন্নত মম শির! তারপর পরই লিখেছিলেন- আনন্দময়ীর আগমনে আর কতোকাল থাকবি বেটী- মাটির ঢেলায় মূতি আড়াল স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি-চাঁড়াল! আনন্দময়ীর আগমনে- কবিতাটি প্রকাশ করার অপরাধে ‘ধূমকেতু’ পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। কবির বিরুদ্ধে দেয়া হলো রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা। কিন্তু একটি দিনের জন্যও পালিয়ে বেড়ায় নি কবি। পুলিশের হাতে ধরে পড়ে এবং এক বছরের স্বশ্রম করাদন্ড হয় তার। গিয়েছিলেন জেলে, করেছিলেন চৌদ্দ শিকের বন্দিপ্রাণ জয়, এনেছিলেন তাদের মাঝে এক দুর্বার দুর্জয় মহান চেতনা। উনিশ শতকের প্রথম দিকে গোটা ভারতের বিপ্লবী সংগঠন- অনুশীলন সমিতি, গুপ্তসমিতি, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার দলের বিপ্লবী আন্দোলন থিতিয়ে যেতে শুরু করে। প্রেমিক প্রাণ হায় হায় করে ওঠে। কিন্তু বেশি দিন তা স্থায়ী হয় নি- নজরুলের লেখায় আবার জেগে উঠেছিল বিপ্লবী দলগুলো। নতুন ছেলেরা হয়ে উঠেছিল বিপ্লবী। নজরুলের বিদ্রোহ আর যৌবনের গানে নতুনেরা যেন নতুন করে জেনেছিল- দেশকে ভালবেসে মরতে পারার চে’ বড় কাজ জগতে আর একটিও নেই। তখন প্রতিটি মানুষের চাওয়া ছিল একটাই, উপনিবেশ থেকে মুক্তি, শোষণ থেকে মুক্তি। স্বাধীন দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে মুক্ত গগণের নীল দেখা। কাজী নজরুল ইসলামের গোটা জীবন- মহাসমুদ্রের মতো। তার আবার হাজারও শাখাপ্রশাখা- জন্ম, মূল্যবোধ, মানবিকতা, দারিদ্রতা, অসাম্প্রদায়ীকতা, প্রেম, বিরহ, ত্যাগ, সৃষ্টির নেশা, উল্লস, ভাঙা, অভিমান, কষ্ট; সব মিলিয়ে নজরুলের জীবন-বৈচিত্রের বিহ্বলতায় ঘেরা। তার গোটা জীবন তুলে আনা- কোন লেখকের এক জীবনের কঠর সাধনা ছাড়া সম্ভব হবে না। নারীদের সাথে কবির সম্পর্ক নিয়ে সামান্য কিছু তুলে ধরার চেষ্টা ছিল লেখকের। এখানে নজরুল নিজে নয়- নজরুকে ঘিরে তার প্রেমিকা, স্ত্রী বা যারা নজরুলের কাছে গান শিখেতে এসেছিল তারাই হচ্ছে প্রধান। কোন কোন নারী কবিকে ভালবেসেছে দেবতার মতো। কারও আবার ছিল অন্ধ ভালবাসা। কেউ ভালবেসে কাছে পেতে চেয়েছে- তাদের মধ্যে কেউ পেয়েছে, কেউ পায়নি। ঠিক একই ভাবে- কবিও ভালবেসে কাছে পেতে চেয়েছিল ফজিলাতুন্নেসাকে। কিন্তু ফজিলাতুন্নেসার ভালবাসা পায় নি নজরুল। সে সময়টি ছিল শুধুই বিরহের। অনেকেই মনে করেন- নার্গিসকে ফেলে রেখে রাতের অন্ধকারে দৌলপুর থেকে পালিয়ে এসেছিলেন কবি। কথাটি মোটেও সত্যি নয়। নজরুল পালাতে জানেন না- নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও কোন দিন পালান নি তিনি। আষাঢ়ের তিন তারিখ রাতে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়েই দৌলতপুর ত্যাগ করেছিল নজরুল। কারণ নার্গিসের সাথে তার বিয়েতে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছি- বিয়ের পর দৌলতপুরেই থাকতে হবে কবিকে। শুধু কবি কেন- যে কোন বিবেকবান মানুষই এই শর্ত প্রত্যাখ্যান করবে। তাছাড়া শর্ত দিয়ে আর যাই হোক, ভালবাসা হয় না। আর ভালবাসা ছাড়া সংসার টিকে থাকে না। কবি তার প্রেম বিরহ বেদনা প্রকাশ করেছে গানে- কবিতায়। লেখক তার লেখার মধ্যে দিয়ে সে সব ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল, উদ্দেশ্য ছিল একটু একটু করে নজরুলকে খুঁজে বেড়ানো। তাতে তিনি স্বার্থক।