User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বই রিভিউ অথবা কাব্যগ্রন্থ পাঠের অনুভূতিঃ . বছরের প্রথম বৃষ্টি। দুবার থেমে গিয়ে আবার আকাশের তর্জন গর্জন চলছে। বান্ধবীর সাথে মেসেঞ্জারে কথা বলছিলাম। এর মধ্যে লোডশেডিং, আর ওয়াইফাই কানেকশন চলে গেলো। তখনো রাত বেশি হয়নি। ঘুমবো? তাও মনে চাইছে না। কী করা যায়? ভাবতে ভাবতে এবারের বইমেলা থেকে কুঁড়েঘর প্রকাশনী হতে সৈয়দ মাজারুল ইসলাম এর কবিতার বই “একটি প্রজাপতি দিনের জন্য” হাতে তুলে নিলাম। যেকোন বই পড়ার আগে, বইটির প্রচ্ছদ, ফ্ল্যাপ, লেখক কবি পরিচিতির অংশ তে আমার উৎসাহব্যঞ্জক আগ্রহ থাকে। বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়েই দেখি আমি সব। চমৎকার প্রচ্ছদ, হার্ড বাইন্ডিং, কবি পরিচিতি অংশ, কবির ছবি, বইটির সামনে, পেছনের সবগুলো দিক অনন্য। . বইয়ের উৎসর্গ অংশটা খুব সুন্দর। দারুন একটা আল্পনার সাথে উৎসর্গে লেখাঃ “বাক প্রতিবন্ধী সকল মানুষের প্রতি” এরপরে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বইটার কবিতাক্রম অর্থাৎ সূচিপত্র দেখে কবিতার পাতা খুলে পাঠ শুরু করলাম। “এই তো সে দিন- মুষ্টিবদ্ধ অজস্র হাত ছিলো ফাগুনের আকাশে এরপর বিভ্রান্তির বৃষ্টি নামলো প্রবঞ্চকের কথায় অতঃপর; খুব সীমিত সংখ্যক হাতই অবশিষ্ট থাকলো। বর্তমানে যা দেখি- কেবলই কথার আস্ফালন চারদিকে চেতনার বোধ পৌঁছায় না ধমনীতে” . পাতা উল্টিয়ে পরের পাতায় যাই। কবিতার শিরোনামঃ “একটি প্রজাপতি দিনের জন্য” এ কবিতাটির যে লাইনগুলো আচ্ছন্ন করে ফেলে— “জেগে ওঠ তরুণের দল; একটি প্রজাপতি দিনের গল্প লিখতে বাঁচাতেই হবে অরণ্য। জেগে ওঠ মুক্তিকামী, অনাড়ম্বর মানুষের দল, জেগে ওঠ অর্ধাহারী ন্যুব্জ মানুষের দল জেগে ওঠ কাদামাটি মাখা মানুষের দল আগামী প্রজন্মের জন্য একটি প্রজাপতি দিন রেখে যেতে; বাঁচাতেই হবে অরণ্য।“ . পরের পাতার কবিতার নাম- “হিংস্র কামুক সভ্যতা” . তার পরের পাতার কবিতায় প্রবেশ করে আমি বুঁদ হয়ে যাই। কবিতা শিরোনামঃ “অ-কবিতার জন্য” কবিতার প্রথম লাইন- কবিতার প্রয়োজন কি ফুরিয়ে গেছে? –লাইনটি পড়বার পরেই কবির আকুতি, কবিতায় জেগে ওঠা শ্লোগান যেন হৃদয়ে আবেগ ছুয়ে দবেনে। কিছু লাইন সত্যি জিজ্ঞাসায় আপ্লুত করবে। কখনো ইচ্ছে করবে, রাজপথে দাঁড়িয়ে চিতকার করে বলতে, “কবিতার প্রয়োজন কি ফুরিয়ে গেছে?” সত্যি ভীষণ সুন্দর কবিতাটি। ভীষণ। . পরের কবিতাটিঃ “একুশের ইতিহাস” “রফিক, সালাম, বরকতের বুকের রক্তের সাথে- ঝরে পড়তে লাগলো বর্ণমালার প্রতিটি অক্ষর অ, আ, ই, ঈ, ক, খ, গ, ঘ, অতঃপর- লাগামহীন মুখে দ্বিধাহীনভাবে উচ্চারিত হতে লাগলো একটা প্রিয় শব্দ ‘মা’। অবশেষে রক্তাক্ত ইতিহাসের পাতা বাড়িয়ে একুশের প্রাপ্তি স্বাধীনতা।“ এটুকু পড়ে মনে হয়, এরকম করে একুশ নিয়ে আগে ভাবিনি তো। আবার কিছুক্ষণ ভাবনায় ডুবে যাই আমি। . একটি কবিতা টপকে “স্বপ্ন সম্ভাবনা” কবিতায় আটকে যাই আবার। “বুকের মধ্যে দারুন খরা হচ্ছে বাইরে বৃষ্টি চোখ মেললেই জগত জুড়ে কেবল অনাসৃষ্টি। ইচ্ছেগুলো আকাশ ছোঁয়া পায়ে বাঁধা অ-যুক্তি আসবে কবে? --- ---- --- আসবে সু-দিন, আসবে জানি ভ্রান্ত সব সু-পথে সবাই মিলে চলবো আবার ভালোবেসে একসাথে। “ . কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়াই কবিতার চরণে। এরপরে আবার একটি কবিতা টপকে পরের পাতায় জমে যাই। কবিতার নামটি থমকে দেয়। কবিতার শিরোনামঃ “একটি চুম্বনই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতা” কবিতাটি সম্পর্কে বলতে গেলে পুরোটাই তুলে দিতে হবে। দারুন, এর শুরু থেকে শেষ সবটুকুই। . পরের কবিতাগুলোর এক একটি লাইন হৃদয়ে ছুঁয়ে থাকে। “আমি তোমার রংধনু হয়ে থাকলাম/স্পর্শের বাইরে ভালোবাসার অনুভূতি হয়ে।“ “বিশ্বাসের জুয়া যে তোমাকে খেলতেই হবে।” “বৃষ্টি তুমি আসো-/তুমি এলেই আমি কবি হয়ে যাই।“ “কষ্টকে বরণ করে নিতে হয়/কখনও যেচে অথবা অযযাচিত ভাবে।“ “জেগে থাকো তরুণ, জেগে থাকো দেশ।“ “তবু জানি; ভালোবাসি অ-কারণ কারণে ভালোবাসি মানুষ ভালোবাসি, বৃষ্টি ভালোবাসি আর বেঁচে থাকতে ভালোবাসি।“ . বেশ কিছু কবিতায় বুঁদ হয়ে, ভাবনার আকাশে আপ্লুত হয়ে, ভালোবাসায় ডুবে ভেসে আমি এগোই। একের পরে এক পাতা উলটাতে থাকি। অতঃপর “মানুষ কবি” নামের কবিতায় এসে আবার থমকে দাঁড়াই;--- “আমার মানুষ দেখার স্বাদ মেটেনি তাই তো আমি মানুষের কাছে ছুটি” কবিতাটি সত্যি ভাবনায় জড়িয়ে দেয়। একজন কবি আসলেই কত কিছু নিয়ে ভাবে। কত কিছু তার কবিতার উপকরণ হয়ে উঠে আসে। . মোটামুটি অর্ধেক পেরিয়ে যাওয়ার পরে আবার একটি কবিতা “একদিন ক্ষমাহীন হাসি” তে এসে আমি পুনরায় আত্মনিমগ্ন হয়ে যাই। “আত্মনিমগ্ন সময় আমার সাথে যে নির্মম আচরণ করলো আমি তার প্রতিশোধ নিবো। কৃষ্ণচূড়া রঙ দেখে অনেক করেছি ক্ষমা বহুগামী হৃদয় যতোই সবুজে রঙ মাখা থাকুক ভেতরটা কংক্রীট।“ কবিতাটি পুরোটাই দারুন। ভাবনায় আচ্ছন্ন করে দেয়। . এরপরে, “ক্ষমার জন্য অবকাশ” কবিতা- “আজ যদি আমি কবিতা লিখি তবে মানুষ ক্ষমাহীন হবে আমি চাই মানুষ ভালোবাসুক মানুষ ক্ষমা করুক। কিছু সত্য আমার কাছেই থাকুক ক্ষমাহীন কিছু শব্দ থাকুক কেমল আমার কাছে” . আর কোন কোন কবিতার কথা উল্লেখ করবো? এ বইয়ের প্রায় প্রতিটি কবিতাই মনকে ভাবালুতায় জড়িয়ে দেবে। “ভালোবাসা কারে কয়” কবিতায়- শীতের বিকেলে বিষন্নতার আড়মোর ভেঙ্গে আমার কাছে ছুটে আসা যদি ভালোবাসা না হয় তবে ভালোবাসা কারে কয়? --- --- --- --- তোমার লজ্জা রাঙ্গা ঠোঁটে আমার আঙ্গুলের ডগা ছুঁইয়ে দেয়া যদি ভালোবাসা না হয় তবে ভালোবাসা কারে কয়?” . . কবিতা আমি নিজেও লিখি। নিজেরও একটি বই প্রকাশ হয়েছে এবারেই। একই প্রকাশনী। কিন্তু নিজের সাথে এই কবিতাগুলোর ভাবনা তুলনা করে বেশ ভাবালুতায় জড়ালাম। এর বইটা আগে পাঠ হলে আমার কবিতাও যেন আরও অনেক ভাবনায় ডানা মেলে দেয়া পাখি হয়ে উঠতে পারতো। প্রতিটি কবিতায় একেক বিশেষ বিষয়। প্রতিটি কবিতাই কবির একান্ত ভাবনা। প্রতিটি কবিতায়ই তার সৃজনশীলতার ছাপ। অনেক কবিতাই আমরা পড়ি। সেগুলোর বিষয় কোন না কোন জায়গায় মিলে ঠিকই। কিন্তু এই কবির কবিতাগুলোর প্রতিটি লাইন খুব সযত্নে গড়া। . “একটি প্রজাপতি দিনের জন্য” কবিতার বইয়ে এক মলাটে আবদ্ধ বায়ান্নটি কবিতাই আপনাকে ভাবনায় আচ্ছ্বন্ন করবে। ভালোবাসার পবিত্র অনুভূতিতে ভেসে আপনার মনে হবে, এ যেন আপনারই মনের সুপ্ত কথাটি কবি কাব্যিক উপস্থাপনায় ছন্দোবদ্ধ করে সাজিয়েছেন। এটা আমার নিজের মন্তব্য। এই বইয়ের রিভিউ আর কাউকে দিতে এখন পর্যন্ত চোখে পরেনি। তাই জানা নেই, অন্য পাঠকদের মন্তব্য সম্পর্কে। প্রতিটি কবিতাই আমার কাছে ভালো লেগেছে। খুব ভালো লেগেছে। . এক নজরে বইটিঃ নামঃ একটি প্রজাপতি দিনের জন্য কবিঃ সৈয়দ মাজারুল ইসলাম প্রকাশকঃ প্রকৌশলী শামিম রহমান আবির প্রকাশনীঃ কুঁড়েঘর প্রকাশনী লিমিটেড প্রচ্ছদঃ চারু পিন্টু প্রকাশকালঃ অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭ গ্রন্থস্বত্বঃ কবি যুক্তরাজ্য পরিবেশকঃ সংগীতা লিমিটেড আমেরিকা পরিবেশকঃ মুক্তধারা, জ্যাকসন হাইট, নিউইয়র্ক মূল্যঃ ২০০ টাকা (US $ 25| UK £ 15) বইটিতে কবিতায় কেবল মিথের ব্যবহারই নয়- রয়েছে সমকালীন জীবনবোধ ও রাজনৈতিক বাস্তবতা, প্রতিবাদ, মানবতা-বোধ, প্রেম-অপ্রেম, আকাঙ্ক্ষা, শূন্যতা, দীর্ঘশ্বাস, অস্থিরতা, ঘৃণা ও মনজগতের রহস্যের রূপরেখা। পাঠক মাত্রেই কোন না কোন লাইন ছুঁয়ে যাবে। চমৎকার কাগজ, উন্নত বাঁধাই, চমৎকার প্রচ্ছদ, উৎসর্গ ও ফ্ল্যাপের কথা, কবি পরিচিতি এবং কুঁড়েঘর প্রকাশনীর নিজস্ব ছাপার স্টাইল সবকিছু মিলে বইটিকে নান্দনিক করেছে। উপহার হিসেবে হবে চমৎকার একটি বই। বইটি কবির প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ। আগামীতেও আরও অনেক নতুন কবিতা লিখে তিনি আমাদের মুগ্ধ করবেন, এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আর একই সাথে কুঁড়েঘর প্রকাশনীর জন্যেও শুভকামনা। কবি ও প্রকাশনা উভয়েরই উত্তরোত্তর প্রসার হোক। . পাঠ আলোচক/ জাকিয়া জেসমিন যূথী