User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
========= কাহিনী সংক্ষেপ ========= বাড়ির বড় ছেলে হওয়ার পরেও সংসারের হাল না ধরে বাউন্ডুলে হয়েই হয়তো সে ঘুরে বেড়াত, কিন্তু তার জীবনে সে পরিবর্তন আনার চিন্তা-ভাবনা শুরু করে যখন শুনলো তার বিয়ে ঠিক হয়েছে; তাকে এখন সংসারী হতে হবে। নিজের একটা পরিবারকে আগলে রাখতে হবে। কারণ কেউ হয়তো তাকে নিয়েই স্বপ্ন বুনছে দিনের পর দিন। কিন্তু মানুষ যা ভাবে বা চিন্তা করে তা কি আর সবসময় হয়? পরিবারের মেজ ছেলে হলেও পরিস্থিতি ও সময়ের প্রয়োজনেই তাকে হাল ধরতে হয় পুরো পরিবারের। সংসারের চাপে পা বাড়ায় সে অন্ধকারের কানা-গলিতে। কিন্তু সে হয়তো তখন বুঝতে পারে না এপথে যাওয়া যায় কিন্তু তা থেকে ফেরার পথ যে অতি সংকীর্ণ! বিরূপ পরিস্থিতি ও অঘটনের শিকার হয়ে রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও কথায় আছে কয়লা যায় না ধুলে, স্বভাব যায় না ম’লে। ব্যবসা পেশাটি তার স্ত্রী ও পরিবারের জন্য আসলেই ছিলো একটা সাময়িক খোলস মাত্র। শুধু ছিলো সময়ের অপেক্ষা। একটি সাজানো নাটক, হামলা-দুর্ঘটনা আর তারপর সব তার নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু বিধাতা হয়তো তার জন্য অন্য কোন ফয়সালাই করে রেখেছেন। গল্পটি হয়তো দুঃখের, হয়তো হতাশার, হয়তো না পাওয়ার অব্যক্ত বেদনার কিংবা হয়তো কালো মেঘের ঘনঘটাপূর্ণ বিষাদের অথবা দিনশেষে এক চিলতে আনন্দের! ========= পাঠ প্রতিক্রিয়া ========== বইটির নামের মাঝেই লুকিয়ে আছে এক প্রকার বিষাদের সুর। আমদের মধ্যবিত্তের জীবন কখনো আনন্দ, কখনো বিষাদে ছেঁয়ে যায় লেখক এই বিষয়টি মূলত তুলে ধরেছেন। তবে শরীফুল ভাইয়ের লেখায় কিছু চরিত্রের জন্য বই শেষ করে আসলেই খুব কষ্ট লাগে। অদ্ভুত এক বিষন্নতা এবং মন খারপা লাগা কাজ করেছিল আমার বইটা শেষ করার পর। এর আগেও “যেখানে রোদেরা ঘুমায়” বইটি শেষ করেও খুব কষ্ট লেগেছিল; এমনকি এখনো ঐ বইটির পরিণতির কথা মনে পড়লে খারাপ লাগা কাজ করে। সামাজিক উপন্যাস পছন্দ করেন এমন যে কেউই বইটি পছন্দ করবেন নিঃসন্দেহে। প্রোডাকশনঃ কভার ডিজাইন আমার কাছে ভালো লেগেছে। তবে এবার কিছু বানান ভুল চোখে পড়েছে, যা দুঃখজনক। ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৮.৫/১০।
Was this review helpful to you?
or
মেঘ বিষাদের গল্প শরীফুল হাসান শাওন পরিবারের বড় ছেলে, পরিবারে তার ছোট ভাই, বোন ও মা আছে, তার বাবা মারা গিয়েছেন। বড় ছেলে হলেও পরিবারের সম্পর্কে বেশ উদাসীন। কোনো উদ্দেশ্য নাই, জীবনকে নদীর মতো ছেড়ে দিয়েছে যখন সেখানে ইচ্ছা যাচ্ছে। তাই পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয়েছে ছোট ভাই বাদলকে৷ পরিবারকে খুশি রাখতে চুরি ও ডাকাতির মতো পেশা বেছে নিয়েছে। মাঝে মাঝে বাদল আফসোস করে বড় যদি পরিবারের দায়িত্ব নিত তাহলে এই পথে আসা লাগতো না! শাওনের ছোট মামা মজনু মিয়া তাদের পরিবার নিয়ে খোঁজ খবর রাখেন। শাওনকে চাকরি পাইয়ে দিতে চেষ্টার শেষ নেই তবে শাওনের তাতে কোনো ইচ্ছা নেই। মজনু মিয়ার দুই ছেলে, এক মেয়ে৷ বড় ছেলে মিন্টু পড়ে বাইরে পড়াশুনা করে সেইখানে থাকে, মেয়ে রেনু কলেজে পড়ে, রিন্টু পড়ে স্কুলে৷ মিন্টু বাসা থেকে টাকা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, এই নিয়ে তার মা কান্নাকাটি করে, এমন কি তার বাবাও চিন্তিত। রেনু দেখতে বেশ সুন্দর, তার দিকে তাকালে চোখ ফিরানো সম্ভব না। রেনুর সাথে শাওনের বিয়ার কথাবার্তা চলছে। এরই মাঝে বাদল একটা কাজ পেয়েছে, অনেক টাকা দিবে কিন্তু একজনকে মারতে হবে! অনেক টাকার কথা শুনে বাদল কাজটা নিয়ে নেয়। এদিকে শাওন তার বন্ধু জসিম ও মান্নানের সাথে একটা কাজে যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছে। মুসাফির মান্নান ও জসিম শাওনের মতো ভবঘুরে তাদের জীবনে কোনো চাওয়া পাওয়া নাই আপাতত। বাদল তার কাজে নেমে পড়েছে এবং চক্রান্তের শিকার হয়ে খুন করেছে ছোট নিধিকে। নিধির মা ও বাবা মেয়ে হারানো শোকে পাথর হয়ে গেছেন৷ নিধির বাবা হায়দার আলি প্রতিশোধের নেশা নেমে পড়েছে তাই বাদল পলাতক আছে৷ এদিকে মুসাফির মান্নান বিয়া করে হয়ে গিয়েছি মুরগি মান্নান! এইভাবে চলতে গল্প থাকে গল্প। গল্পের বিভিন্ন ভাবে বাঁক নিলেও গল্পের শেষে দিয়েছে নতুন রুপ! সমকালীন উপন্যাস হলেও বইটাতে রয়েছে ক্রাইম, মার্ডার, মোটিভ, সাসপেন্স তবে থৃলার বলা যায় না। আর ট্রাজেডির কথা বাদ দেওয়া যায় না। এই লেখকের প্রথম পড়া বই এটি। লেখা বেশ সুন্দর, সাবলীল ও সহজ। তার লেখায় কিছুটা হুমায়ূন আহমেদের স্বাদ পেয়েছি, বিশেষ করে শাওন চারিত্রে! অনুভূতির বিশুদ্ধ বর্ণনা দিতে সক্ষম। পরিবারের মানুষ গুলো একসাথে ভালো থাকার আকুলতা, পরিবারের টানাপোড়েন, প্রতিশোধ, বন্ধুত্বের দৃড় বন্ধন কিংবা ভালোবাসা সব মিলায় অসাধারণ একটা উপন্যাস৷ বেশি কিছু দিন মাথার ভিতর এই কাহিনী ঘুর ঘুর করবে। বইটি পড়তে পারেন, আশা করা যায় সময় নষ্ট হবে না। লেখকের জন্য রইলো শুভ কামনা ও ভালোবাসা!?
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম- মেঘ বিষাদের গল্প লেখক- শরীফুল হাসান প্রকাশক-বাতিঘর প্রকাশনী প্রচ্ছদ- ডিলান গায়ের মূল্য- ২০০ টাকা কাহিনী সংক্ষেপে-মা,ছোট ভাই-বোন কে নিয়ে বাস করে শাওন । কিন্তু সে একজন অকর্মা। কিছুই করে না। সারাদিন ভবঘুরের মত ঘোরা আর দুই বন্ধুর সাথে আড্ডা দেয়া ছাড়া তেমন কোনো কাজও নেই। আগে একটা টিউশনি করলে সেটা ছেড়ে দিয়েছে এখন। ভাইয়ের টাকায় তাদের সংসার চলে। ভাই আবার এলাকার সন্ত্রাসী। চাঁদাবাজি চুরি,ডাকাতি তার পেশা। জেনেও না জানার ভান করে পরিবারের সবাই। শাওনের মামাতো রেনু। রেনুকেই পড়াত শাওন। একদিন ছোট মামা এস তাদের বিয়ে ঠিক করে ফেলে। ওদিকে একজনকে খুন করার সুপারি পায় শাওনের ছোট ভাই বাদল।দশ লক্ষ টাকার কথা শুনে লোভটা সামলাতে পারেনি সে। রাজি হয়ে যায়। কিন্তু ভুল করে খুন করে ফেলে টার্গেটের ছয় বছরবয়সি মেয়েকে। গা ঢাকা দেয় সে। ওদিকে খুনিকে খুঁজতে থাকে মেয়েটির বাবা; যিনি এক সময়কার প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ । সংসারের ভার চলে আসে শাওনের কাছে। হিমু টাইপের ছেলে শাওন কি করে সংসার সামলায়? রেনুর সাথে কি তার বিয়ে হয়? বাদলের পরিণতি বা শেষ পর্যন্ত কি হয়? পাঠ পতিক্রিয়া- শুরুতে গল্পটাকে অন্য আট-দশটা মধ্যবিত্ত পরিবারদের নিয়ে লেখা গল্পের মত মনে হবে। মেসেজ ওয়ালা কোনো সামাজিক গল্প ভাবলেও ভুল হবে না। কিন্তু কাহিনী যতই আগাবে ততই অন্য রকম অনুভূতি হবে আর মজা বাড়তে থাকবে। শেষ না করে উঠতে মন চাইবে না। আমার কাছে ভালো লেগেছে। যারা পড়েননি তারা ট্রাই করতে পারেন।
Was this review helpful to you?
or
"আরো অনেকের মত আমার শরীফুল ভাইয়ের লেখার সাথে পরিচয় 'সাম্ভালা' দিয়ে। চমৎকার এই সিরিজটা বাংলা ফ্যান্টাসি/এ্যাডোভেঞ্চার বইয়ের জগতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। "মেঘ বিষাদের গল্প" বইটা যে সেরকম না সেটা আগেই জানতাম। যেটা জানতাম না সেটা হচ্ছে শরীফুল ভাই রিয়েলিস্টিক ফিকশনও চমৎকার লিখেন! বইয়ের গল্পটা খুব ছোট...আমাদের চারপাশের কয়জন মানুষ আর তাদের জীবন নিয়েই বইটা এগিয়েছে। একসময় রাজনীতির মাঠ কাঁপানো ছাত্রনেতা, বর্তমানে সফল শিল্পপতি হায়দার এখন সব হারিয়ে উন্মত্তের মত ঘুরে বেরাচ্ছে প্রতিশোধের নেশায়। দুনিয়া সম্পর্কে খানিকটা উদাসী তরুণ শাওন হেঁটে বেড়াচ্ছে কংক্রিটের জঙ্গলে। ভয়ংকর এক অপরাধ করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বাদল - হয়ত নিজের কাছ থেকেই! আজন্ম কবি হতে চাওয়া বাউন্ডুলে মান্নান খুঁজে ফিরছে নিজেকে। জসিম সারা ঢাকা কাঁপাচ্ছে তার মটরসাইকেলে যেন এটাই ওর একমাত্র কাজ! আর এদের সবাইকে ঘিরে রেখেছে অদ্ভুত এক মায়ার জগৎ - আমাদের খুব পরিচিত কিন্তু কেন যেন খুব অচেনা এই জগৎ। লেখক শরীফুল হাসানের মুন্সিয়ানা এখানেই, তাঁর সৃষ্টি করা এই দুনিয়াটা পাঠক হিসেবে খুব টেনেছে আমাকে। প্রচলিত অর্থে এটা থ্রিলার বই না, এখানে নেই দম আটকানো ট্যুইস্ট, নেই স্তব্ধ করে দেয়ার মত কোন ক্লাইম্যাক্স। কিন্তু পাঠক বইটার শেষ পর্যন্ত পড়বে, বই পড়ার পর কিছুটা ভাববে - হয়ত বলবে এরকম তো হওয়ার কথা ছিল না! কোন এক সন্ধ্যায় বিলীয়মান সূর্যের আলোয় হাঁটতে থাকা কেউ একজন হয়ত খুঁজে ফিরবে একজন শাওন বা বাদলকে...আর কিছুটা সময়ের জন্য হলেও ভুলে যাবে তার চারপাশের কোলাহলমুখর ব্যাস্ত নগরীর কথা। শরীফুল ভাই সফল হয়েছেন সম্পূর্ণ নতুন স্বাদের চমৎকার একটা বই পাঠকের হাতে তুলে দিতে। তার জন্য রইল অনেক শুভকামনা।"
Was this review helpful to you?
or
Nice book.
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামে গল্প লেখা থাকলেও, বইটি মোটেও গল্পের বই না। বরং এটি একটি পূর্নাংগ উপন্যাস। সমকালীন উপন্যাস। কাহিনীটি আসলে গড়ে উঠেছে অনেকগুলো মানুষ নিয়ে। অনেকগুলো মানুষ, তাদের আলাদা চরিত্র, তাদের জীবনের ছোট ছোট ঘটনা, আবেগ ভালোবাসা, ঘৃণা। গল্পটা হয় শাওন, বাদল কিংবা বৃষ্টির। কিংবা, রেনু, মিন্টু, রিন্টুর। কিংবা হায়দার আলীর। কিংবা জসিম, কিংবা মুসাফির মান্নানের। কিংবা ছোট্ট নিধির। গল্পটা হয়তো আনন্দের। কিংবা প্রতিশোধের। কিংবা বিষাদের। তবে এতটুক বলতে পারি, গল্পটা মানুষের। গল্পটা সমাজের। গল্পটা কিছু আবেগের। লেখক শরীফুল হাসান সাহেব মূলত থ্রিলার লেখক। তাঁর সূচনা হয় "সাম্ভালা" নামক এক মৌলিক এডভেঞ্চার থ্রিলার সিরিজের মাধ্যমে। এরপর পর পর আরো ২ বছর তিনি এই একই কিংবা কাছাকাছি জনরা নিয়েই লেখালেখি করেছেন। কিন্তু গত বছর, অর্থাৎ ২০১৭ সালে তাঁর একমাত্র প্রকাশিত বই ছিল এই "মেঘ বিষাদের গল্প"!
Was this review helpful to you?
or
ফ্যান্টাসি, শিশুসাহিত্য, মার্ডার মিস্ট্রির পরে এবার শরীফুল হাসান হাজির হয়েছেন মেঘ বিষাদের গল্প নিয়ে। জনরায় ভাগ করলে বলবাে ক্রাইম ফিকশন, কিন্তু ঠিক থুলার নয়। হ্যা, গ্লারের সব উপকরণ আছে, খুন, সাসপেন্স, মােটিভ- সব, কিন্তু শেষমেশ এটা ধূলার নয়। দুর্দান্ত একটা ক্রাইম ফিকশন, সাথে ট্রাজেডি।। আমার কাছে সব থেকে ভালাে লেগেছে এই বইয়ে শরীফ ভাইয়ের লেখনী। সাম্ভালা পড়বেন আর এটা পড়বেন- পার্থক্যটা চোখে পড়বে। অনুভূতিগুলাের বিশুদ্ধ বর্ণন, পরিবারের মানুষগুলাের মাঝে টানাপােড়ন, প্রতিশােধ আর কিছু জীবন থেকে নেয়া আপ্তবাক্য- মনে থাকবে অনেক দিন।
Was this review helpful to you?
or
কেউ নেই কোথাও, শুধু আছে কিছু দ্বায়িত্ববোধ, আছে কিছু করার তাগিদ, কিন্তু নেই অনুপ্রেরণা, কোনো চাহিদা, বেঁচে থাকাটা শুধুই বেঁচে থাকা, মরে গেলেও কোনো অসুবিধা নেই, এই দমকা বাতাস ঠিকই বইবে, ঠিক এই জায়গায় বসে হয়তো দীর্ঘশ্বাস ছাড়বে অন্য কোনো দন্ডিত কাপুরুষ। পড়তে পড়তে সত্যি মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। জীবন্ত বর্ণনায় বার বার মনটা আরু খারাপ হতে লাগলো। আসলে জীবন কোনো উপন্যাস নয়, আবার জীবনই সবচেয়ে বড় উপন্যাস। জীবন বড় নিষ্ঠুর। আমরা চাইলেও এই আগ্নেয়গিরির উদগির করা লাভা থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারি না। সত চেষ্টাকে একেবারেই ব্যর্থ করে দিয়ে জীবন তার পথ করেনেয়। জীবন্ত মনে হয়েছে বর্ণনাটা তাই ভালো লেগেছে।
Was this review helpful to you?
or
আজ ঈদের দিন, বৃষ্টি তাই কোনোদিকে যাইনি। একদিনেই পড়ে শেষ করে ফেললাম। ভালো লাগল।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই-মেঘ বিষাদের গল্প লেখক- শরীফুল হাসান ধরন-উপন্যাস পৃষ্ঠা-১৯১ মূল্য-২০০ প্রকাশনী-বাতিঘর লেখার প্লট যাই হোক না কেন, তাকে পাঠক চোখে শৈল্পিকতার দাবীদার করে তুলতে ঠিক ঠিক উপস্থাপনার প্রয়োজন। এই ক্ষমতাই একজন লেখকের সব থেকে বড় শক্তি। আর সেই শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছেন লেখক শরীফুল হাসান তার মেঘ বিষাদের গল্প উপন্যাসে। ভাবতে গেলে, উপন্যাসটি সত্যিই মেঘ আর বিষাদের জোড়া গল্প। গল্পের শুরুটা শাওন কে দিয়ে , পরিচয় দেওয়া যায় এরকম, পরিবারে কিছু ছেলে থাকে যার মধ্যে না থাকে কোন দায়িত্ববোধ, না থাকে কর্তব্যবোধ। দিন যাচ্ছে সংসার চলছে আমি খেয়ে পরে চলছি। বাকি আর কিছু চিন্তা ভাবনায় আমার সব থেকে বেশি অলসতা। ঠিক এই ক্যাটাগরির হলো শাওন। যার কোন বিকার নেই। সংসারে বাবা না থাকায় বড় ছেলে হিসেবে তারই হাল ধরার কথা। কিন্তু কোন প্রকার উপার্জনে সে আগ্রহী নয়। আর সে কারনেই সংসারের হাল ধরতে হয়েছে বাদলকে। বাদল শাওনের ছোট ভাই। সে কি করে সংসার চালায়, কতোটাকা রোজগার করে তার কোন কিছুর খোজ খবর শাওন রাখে না। যদিও প্রয়োজন পড়লে বাদলের কাছে টাকা চাওয়াতে তার কিছুটা লজ্জা লাগে তবুও এই লজ্জার জের ধরে হলেও কোন কিছুতে সে আগ্রহী নয়। শাওন, বাদল, বৃষ্টি আর তাদের মা। উপন্যাসের বেশ বড় একটা অংশ জুড়ে আছেন। আর তাদের সংস্পর্শে আসে বাকি চরিত্র গুলো। লেখক এদের গল্পের সাথে যোগ করে দেন রেনু,মিন্টু,রিন্টুদের গল্প। যারা সম্পর্কে শাওনের মামাত ভাই বোন। উপন্যাসের কোন একটা অংশে রেনুর সাথে শাওনের বিয়ের কথাও জানা যায়, যদিও বিয়েটা আদৌ হয়েছিলো কিনা তা জানতে হলে উপন্যাসে ডুব দিতে হবে। জুড়ে দেওয়া আরো কয়েকটি গল্প হলো হায়দার আলীর, জসিম, মুসাফির মান্নান এবং নিধি। এদের সবার গল্প গুলো মিলেমিশে হয়ে গেছে ভিন্ন স্বাদের গল্প। কোনটা হয়ে গেছে আনন্দের। কোনটা বা শুধুই প্রতিশোধের। আবার কোনটা পরিপূর্ণ বিষাদের। আর সবটা একত্রে হয়ে গেলো মেঘ বিষাদের গল্প। শারীফুল হাসান যে শুধুমাত্র ভালো থ্রিলার লেখক নন। তার প্রমাণ দিতেই বুঝি এই মেঘ বিষাদের গল্পের অবতারনা করেছেন। উপস্থাপনা, সৃষ্টিকে কতোটা শিল্পমন্ডিত করতে পারে, মেঘ বিষাদের গল্প পড়ার পর কিছুটা সময় ভাবতে হয়। উপন্যাস পড়ার পর আমি বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকি । কিছুক্ষণের জন্য বুঝতে পারিনি কি করা উচিৎ। গল্পের যে বিষাদ তা গ্রহন করে নিতে আমার বেশ কিছুটা সময় লাগে। যে কোন লেখা পড়ার সময় তার চরিত্র গুলো মগজে বেশ কিছু সময় ঘোরাফেরা করে। সে সব চরিত্রের মাঝে কোন চরিত্র খুব বেশি পছন্দের আবার কোনটা খুব বেশি ঘৃণারও হয়ে থাকে। আবার কিছু চরিত্রের হয় খুব বেশি বিরক্তের। সেই বিরক্তিকর চরিত্রের যে চিত্রটা চোখে ভাসে, তাকে যদি সামনে পাওয়া যেতো, নিশ্চিত এখানে আরো একটা ক্যাচাল করে ফেলতাম আমি। আর তেমন চরিত্রটাকে লেখক যদি নায়কাচিত রূপ দেন বিরক্তি তখন মাথায় উঠে। আর তেমন একটা চরিত্র হলো শাওন। বাদল হলো সংসারের জন্য ভেসে যাওয়া এক ছিন্নপত্র। কাহিনীর গতি খুব সাবলীল। সহজ ভাবেই লেখক তুলে আনেন আমাদের বাস্তব চিত্র। আর সেটা বর্ণনাও করে যান নিজের মতো। উপন্যাসে সবচেয়ে ভালো ছিলো লেখকের লেখনী। একই সাথে অনেকগুলো ক্যাটাগরির ছাপ চলে আসে মেঘ বিষাদের গল্পে। সামাজিক উপন্যাসে লেখক নিয়ে আসেন ক্রাইম। আর এতে হয়ে যায় থ্রিলারের কিঞ্চিত স্বাদ। তবুও শেষ পর্যন্ত এটা থ্রিলার নয় অন্য কিছু। উপন্যাসের গল্প গুলো আমাদের আশেপাশের পরিচিত মানুষের গল্প। সে সকল মানুষের অনুভূতির গল্প। প্রতিটি চরিত্রের অনুভূতির যে বর্ণনা, তাতে পাঠক নিজ থেকেই সব কিছু উপলব্দি করতে পারেন। একেকটা চরিত্রের যে টানা পোড়ন সব কিছু লেখক তুলে ধরেন চমৎকার ভাবেই। উপন্যাসের নামের সাথে মিল রেখে বই শেষ করেন বিষাদ দিয়ে, আর উপলব্দির তীক্ষ্ণতায় পাঠকও আচ্ছাদিত হন সে বিষাদে। বাতিঘরের নাম শুনলে শুধু মাত্র থ্রিলার চোখে ভাসে। কিন্তু বর্তমানে থ্রিলারের পাশাপাশি জীবনমুখী উপন্যাসও বাতিঘর পাঠকদের উপহার দিয়ে যাচ্ছেন। অন্তত মেঘ বিষাদের গল্প তার প্রমাণ। প্রচ্ছদ, কিছু বইয়ের প্রেমে পরে যাই শুধু মাত্র প্রচ্ছদ দেখে। আমি যখন এটা হাতে নিয়ে ধরে রাখি প্রায় সময়েই খেয়াল করি আমার হাতের ছাপ পড়ে যাচ্ছে না তো আবার। ঠিক এতোটাই পছন্দের ছিলো আমার, মেঘ বিষাদের গল্প। রেটিং৫/৫ রকমারি লিংক- https://www.rokomari.com/book/129286/মেঘ-বিষাদের-গল্প
Was this review helpful to you?
or
শরীফুল হাসানের ভক্ত হই তার সাম্ভালা ট্রিলজি পড়ে। এরপর আসে আঁধারের যাত্রী। প্রথম ট্রিলজি ছিল মিথ, ফ্যান্টাসি আর একটু খানি থ্রিলারের মিশ্রণ। মৌলিক উপন্যাস হিসাবে যা ছিল অসাধারণ। এরপর আঁধারের যাত্রী ছিল পুরো মাত্রাই মিস্ট্রি থ্রিলার। লেখক কিছু কিছু দুর্বলতা ছাড়া এখানেও বাজি মাত করেন। তাই আশায় বুক বেঁধে পড়তে বসি মেঘ বিষাদের গল্প। কাদের গল্প এটা, কি নিয়ে গল্প, পড়ার পর অনুভুতি কেমন? এ গল্প আমাদের চারপাশের মানুষের গল্প, মানুষের আশা, ভালোবাসা, লোভ, লালসা, নৈঃশব্দ, অপদার্থতার গল্প। এ গল্প আমদের মানবিক অনুভুতির গল্প। পড়ার পর অনুভুতি কেমন তা বলতে পারছি না। অনুভুতি ভালো এটুকুই বলা যায়। একই লেখক শুধু এক ধরনের উপন্যাস লিখছেন না, এটা সত্যি আশার কথা। লেখকের প্রতি শুভ কামনা রইলো।
Was this review helpful to you?
or
এক টুকরো মেঘ, এক গুচ্ছ বিষাদ, অত:পর একটি গল্প - এবারের গল্প মেঘের গল্প, অথবা কোন রৌদ্রকোজ্জ্বল দিনের। এবারের গল্প কিছুটা বিষাদ অথবা বিষাদহীনতার গল্প, অনুভূতি বা অনুভূতিহীনতার গল্প, আনন্দ ও ট্র্যাজেডির গল্প, প্রেম ও বিচ্ছেদের গল্প, বন্ধুত্ব ও বন্ধুত্বহীনতার গল্প। এবারের গল্প দু’টি পরিবারের গল্প, পরিবারদ্বয়কে ঘিরে কিছু মানুষের গল্প, মানুষে মানুষে সম্পর্কের গল্প। সাধ এবং সাধ্যের গল্প, সম্পর্কে সম্পর্কে টানাপোড়েনের গল্প, প্রেম-ভালবাসা-প্রীতির গল্প। এবারের গল্প অপরাধ ও অপরাধবোধের গল্প, হত্যা এবং প্রতিশোধের গল্প, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীর গল্প, রাজা অথবা নীতির গল্প। সব মিলিয়েই এক আশ্চর্য প্যাকেজ শরীফুল হাসানের “মেঘ বিষাদের গল্প” উপন্যাসটি। - কাহিনীর শুরু হয় শাওন নামের এক যুবককে দিয়ে। আগাগোড়া বোহেমিয়ান, বাউন্ডুলে স্বভাবের যুবক শাওন বাইরে থেকে বাসায় ফিরে দেখে তার ছোটমামা ড্রইং রুমে বসে আছেন। ছোটমামা শাওনকে বলেন তার মায়ের কাছ থেকে তার ব্যাপারে জরুরী কিছু সিদ্ধান্ত শুনে নেয়ার জন্য। পিতৃহীন পরিবারে মায়ের ছোট ভাই এই মামা-ই অনেকটা অভিভাবক স্বরূপ। মামার দেয়া সিদ্ধান্তটাও শাওনের জীবনে বেশ অভাবনীয়। মায়ের কাছে সেটা শুনে শাওন খুব বিস্মিত হয়। এভাবেই কাহিনীর শুরু। তারপর ধীরে ধীরে কাহিনীতে আগমন ঘটে রেনু, বাদল, বৃষ্টি, মিন্টু, রিন্টু, মান্নান, জসিম, হায়দার, শায়লা, আম্বিয়া বেগম, মজনু মিয়া, সমীরন, মনির, কাশেম, তৃণা এমন অনেকের। আরো একজনের আগমন ঘটে। ছোট্ট নিধির। যে চরিত্রের কোন পার্থিবতা নেই, গল্পে কোন বিস্তার নেই কিন্তু উপন্যাসের কেন্দ্রীয় এক চরিত্র এই নিধি। - শাওনের চরিত্রের সাথে জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ততোধিক জনপ্রিয় চরিত্র হিমুর যথেষ্ট মিল ছিলো। মনে হয়েছে লেখক হিমুর কথা মাথায় রেখেই শাওনের চরিত্রায়ন করেছেন। বোহেমিয়ান, ঘরছাড়া, বন্ধনহীন, ভাবনাহীন, রোজগারহীন এক অভাবনীয় চরিত্র। তেমন কোন কাজ নেই, চিন্তা নেই, যার কাজ রাস্তায় রাস্তায় হেটে বেড়ানো। বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ছাড়া এমন চরিত্র পাওয়া দূর্লভ। তবে চরিত্রটিকে ঠিক বাস্তবধর্মী মনে হয়নি। মনেই হচ্ছিলো কোন উপন্যাস পড়ছি। আর শাওন একজন ট্র্যাজিক হিরো। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বলা চলে এই শাওনকেই। যাকে ঘিরেই সৃষ্টি হয় আরো নানা পার্শ্ব চরিত্রের, নানা ঘটনার, মেঘ বিষাদের গল্প। লেখকের লেখনীর মধ্যেও হুমায়ুন আহমেদের প্রচ্ছন্ন ছাপ স্পষ্ট। - আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে শাওনের ছোটভাই বাদলের চরিত্রায়ন। লেখক খুব সুচারুরূপে বাদলকে চিত্রায়তি করেছেন। সংসারের প্রতি বড়ো ভাইয়ের উদাসীনতা, মায়ের নিরুপায় অবস্হা, ছোট বোনের স্বপ্ন, টাকা-পয়সার টানাটানি সবকিছুর দায়ভার যখন তাকেই নিতে, বাস্তব পদক্ষেপ নিতে তার বিন্দুমাত্র সংকোচ হয় না। নিজের জীবনের পরোয়া না করেই পারিবারিক অবস্হার ক্রীড়নকে পরিণত হয় সে। বেছে নেয় এক অন্তিম সিদ্ধান্ত। যে সিদ্ধান্ত বদলে দেয় তার জীবনের গতিপথ। এমন চরিত্র আমাদের সমাজে ভুরী ভুরী বিদ্যমান। যাদের সমাজ-বাস্তবতার চাপে নিতান্ত নিরুপায় হয়েই নামতে হয় জীবন যুদ্ধে, বেছে নিতে হয় কোন অন্ধকার জীবন। সেদিক থেকে বড়ো ভাই শাওন থেকে ছোট ভাই বাদলকে চরিত্র হিসেবে অনেক শক্তিশালী মনে হয়েছে, বোল্ড মনে হয়েছে। - কাহিনীর গতি খুব সাবলীল। পেছনের কাভারে লেখা “গল্পটা হয়তো আনন্দের কিংবা প্রতিশোধের” বাক্যটি পড়া থাকায় প্রথম থেকেই একটা থ্রিলিং ফিল হতে থাকে। প্রথম দিকে সারাক্ষনই এক প্রশ্ন মনে খুঁতখুঁত করতে থাকে- "এ গল্প কিসের প্রতিশোধের গল্প?" যেহেতু প্রতিশোধের গল্প, তাহলে নিশ্চই কোথাও কোন হত্যা কিংবা কিডন্যাপ কিংবা জালিয়াতি অথবা বিশ্বাসঘাতকতার ধোয়াশা আছে। কারও প্রতি অন্যায়-অত্যাচারের ঘটনা রয়েছে। যদিও সেই মাহেন্দ্রক্ষনের জন্য পাঠককে অপেক্ষা করতে হবে বেশ। কাহিনীর কিছুটা গভীরে গেলেই প্রকাশিত হয় দুর্দান্ত এক ষড়যন্ত্রের প্লট। কাহিনী নিয়ে বেশী কিছু বলে ভবিষ্যত পাঠকদের মজা নষ্ট করতে চাই না। - অপরাধ, সন্ত্রাস, রাজনীতি, হত্যাকান্ড, বিশ্বাসঘাতকতা এতোকিছু থাকা সত্বেও কিন্তু আক্ষরিক অর্থে বইটিকে থ্রিলার জনরাতে ফেলা যায়না। এ যেন থ্রিল থাকা সত্বেও ঠিক থ্রিলায় নয়, হইয়াও হইলোনা থ্রিলার একটা ভাব। মনের মাঝে এক চাপা অস্বস্তি। এটা কি থ্রিলার? নাকি আমাদের সমাজের কঠিন বাস্তবতা। - লেখকের গল্প বলার ঢং খুব মনোমুগ্ধকর। সহজ, সরল, দ্যোতনা জাগানিয়া, আবেগী। চরিত্রায়ন, দৃশ্যায়ন গুলো লাগছিলো অতি পরিচিত। যেন আমার আশেপাশেই সব ঘটছে, পুরো বইটি পড়ার সময় এমন এক অনুভূতি কাজ করছিলো ভেতরে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে বিভিন্ন চরিত্রের ছোট ছোট সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলোর বর্ণনা। যেগুলো বেশ কাব্যময় করেছে উপন্যাসের পাতাগুলোকে। - বইয়ের মতো প্রচ্ছদও মনকাড়া। সিম্পল একটি প্রচ্ছদ। পাখিগুলো যেন সত্যিই পাঠককে মেঘ বিষাদের কোন গল্প শোনাতে এসেছে। উপরে রক্তাক্ত সূর্যটি যেন আমাদের পচা-গলা-রক্তাক্ত সমাজেরই প্রতীক। - আর বেশী কিছু বলবো না। এক কথায় দুর্দান্ত পাঠ। শরীফুল হাসানের সাম্ভালা পড়েই তাঁর ভেতর সম্ভাবনার দীপ্তি দেখা গিয়েছিলো। এই বইখানা পড়ে সেই বিশ্বাস আরো পাকাপোক্ত হলো। আশা করি লেখকের কাছ থেকে আমরা পাঠকেরা এমন আরো অনেক দ্যোতনা জাগানিয়া উপন্যাস পাবো।
Was this review helpful to you?
or
আমার কাছের লোকেরা জানেন, প্রতি বই মেলায় আমি কমপক্ষে একজন লেখকের বই কিনি। অধিকাংশ সময় সেই কেনাটা হয় বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার। কেননা একমাত্র শুক্রবার শরিফুল ভাইকে পাওয়া যায় মেলায়। এবারও তাই হয়েছে, তবে এবারে মেঘ বিষাদের গল্প ছিল সাজিদ ভাইয়ের উপহার। কেন আমি এতো পছন্দ করি তার লেখা? এর চেয়ে ভালো প্লটের বই কি নেই? আছে। এর চেয়ে ভালো লেখনী? কম, কিন্তু আছে। এর চেয়ে ভালো উপস্থাপনা? আছে। এর চেয়ে ভালো চরিত্র চিত্রণ? আছে। এর চেয়ে ভালো ডিটেইলিং? আছে। কিন্তু সব কিছুর এত সুন্দর মেল বন্ধন? নেই। অন্তত আমার চোখে ধরা পড়েনি। শরিফুল ভাই/বাতিঘরের সাথে প্রথম পরিচয় সাম্ভালা দিয়ে। এরপর ঋভু। আধারের যাত্রী ছিল ছন্দপতনের মতো। কিন্তু মেঘ বিষাদের গল্প অন্য জিনিস। থ্রিলার বলা চলে কিনা, সে তর্ক যাব না। সম্ভবত বললে ভুল হবে, যতদূর জানি লেখক বলেননি সে কথা। কিন্তু তাই বলে থ্রিলারপ্রেমিদেরকে একেবারে ভুলে যাননি লেখক, রেখেছেন গল্পে। কিন্তু এর আসল কাহিনি কিন্তু সেটুকু ঘিরে নয়, নয় কোন ঘটনা বা ফলাফল নিয়ে। আসল কাহিনি মানুষের, তার মননের, পরিবেশের। একটু খানি থ্রিলার, একটু খানি বিষাদ, অল্প একটু প্রেম আর অনেকটা ভালোবাসা=মেঘ বিষাদের কাব্য।
Was this review helpful to you?
or
বেশ কিছু সেরা সেরা থ্রিলারের পর এবার শরীফুল হাসান লিখেছেন একটু অন্য ধাঁচের গল্প। একজন লেখকের স্বার্থকতা তখনই প্রমাণিত হয় যখন তিনি একাধিক ঘরানায় মুন্সিয়ানা সফলভাবে তুলে ধরতে পারেন। এই বইটি পড়ার পর শরীফুল হাসান সেই মাপকাঠিতে পুরোপুরি সফল বলে আমার মনে হচ্ছে। এই গল্পটা শাওনের, বাদলের। এই গল্পটা রেনুর, রেন্টুর, মিন্টুর। এই গল্পটা তৃণার। এক সাধারণ পরিবারের গল্প, নুন আনতে যার পান্তা ফুরায়। যে পরিবারের বড় ছেলে বোহেমিয়ান, ছোট ছেলের উপর পরিবার চালানোর ভার। যার উপার্জন সৎ না অসৎ তা দেখার সময় নেই কারও। এই গল্পটা হায়দারের। রাজনীতির নেশায় মরিয়া এক মানুষ, মরিয়া হয়ে যে দারুণ এক ঝুঁকি নিয়ে ফেলে। হিসেবের গণ্ডগোলে এলোমেলো হয়ে যায় তার জীবন। সবকিছু হারিয়ে সে নামে প্রতিশোধের মঞ্চে। এই গল্পটা তাই প্রতিশোধের। লোভের, ক্রোধের, আহত ভালবাসার। এই গল্পটা অনুতাপের। সব কিছুকে ঝুকির মুখে ফেলে দিয়ে ফিরে আসার, ঘুরে দাড়ানোর। কে অপরাধী? কে শিকার? কাকে ঘৃণা করা উচিত? কাকে উচিত ভালবাসা? দিনের শেষে এই প্রশ্নগুলোর জবাব কি মেলে খুব সহজে? যদি মেলে, তবে কিভাবে? কার কাছে? মেঘ বিষাদের গল্প পড়তে পড়তে আমার মনে হচ্ছিল, বহু দিন পর কোনো মন উদাস করা বই পড়তে বসলাম। বই শেষ হলেও যার রেশ রয়ে যায়, তেমন এক বই। থ্রিলারের তো ইদানীং অনেক ঘরানাই হয়। শরীফুল হাসান ভাইয়ের মুখ থেকেই শুনেছি, এই বইটিকে ঠিক থ্রিলারে ফেলা যায় না। কিন্তু আমার মনে হয়, একে থ্রিলার বললেও দোষের কিছু হবে না। কিন্তু সেই হিসেবে লেখক সম্পূর্ণ নতুন এক ঘরানার সূচনা করেছেন। যার নাম – মন খারাপ করে দেয়া থ্রিলার! বইটি পড়ার পর পাঠক নিজেই মিলিয়ে নিতে পারবেন যে আমার মতামত কতটুকু সত্যি। বাতিঘর প্রকাশনীর বইয়ের মান যে দিনকে দিন আরও উন্নতির দিকে যাচ্ছে, এই বইটাই তার প্রমাণ।
Was this review helpful to you?
or
মেঘ বিষাদের গল্প। গল্পটা হয়ত শাওন, বাদল কিংবা বৃষ্টির। সাধাসিধা আলাভোলা একটা ছেলে শাওন। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে ছোট ভাই বাদল সংসার চালায়। কিভাবে চালায় তাও জানে না শাওন। কখনো জানতেও চায়নি। সে তার মত করেই থাকতে চায়। অন্যদিকে অল্পবয়সে সংসারের হাল ধরা ছেলে বাদল। আয়ের সব রাস্তাই তার মোটামুটি জানা আছে। অপদার্থ বড় ভাইকে বন্ধু বান্ধব নিয়ে মেতে থাকতে দিয়ে সেই সব ঝক্কি ঝামেলা সামলায়। ওদের ছোট বোন বৃষ্টি। লেখাপড়ার পাশাপাশি মাকে কাজে সাহায্য করার চেষ্টা করে। গল্পটা হয়ত রেনু, মিন্টু, রিন্টুর। বাদলের মামাত বোন রেনু। আর একটা পরিচয় আছে। যার সাথে আর কয়টা দিন পরেই বাদলের বিয়ে। মামাই ঠিক করেছেন এই বিয়ে। ওদের বিয়েটা কি প্রেমের বিয়ে? বলা যায় আবার নাও বলা যায়। ভাই মিন্টু পড়ে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাবার সাথে মনোমালিন্য হওয়ায় তার থেকে খরচের টাকা নিতে চায়না, বাড়ি ও আসে না। সবচেয়ে ছোট রিন্টু। স্কুলে পড়ে, অল্প বয়সেই পেকে গেছে। মায়ের থেকে হাতখরচের টাকা নিয়ে দেদার উড়ায়। গল্পটা আবার হায়দার আলী, শায়লা আর ছোট্ট নিধিরও হতে পারে। বছর চল্লিশের মত বয়স হায়দার আলীর। একসময়কার তুখোর মেধাবী ছাত্রনেতা রাজনীতির পাশাপাশি ব্যাবসাও সফল। স্ত্রী শায়লা আর ছয় বছরের মেয়ে নিধিকে নিয়ে তার সোনার সংসার। হঠাৎ একরাতে নির্মম একটা ঘটনা উলট পালট করে দিল তাদের সবার জীবন। স্বাভাবিক জীবনের ছন্দপতন হয়ে গেল। এটাই বাস্তবতা। গল্পটা অন্যরকম হয়ে গেল। এর আগে সাম্ভালা পড়ে শরীফুল হাসানের লেখার জন্য অন্য রকম একটা টান তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই লেখাটা ব্যাতিক্রম। তাই এর ভালোলাগাটাও অন্যরকম। এই লেখাটা যেন মনে করিয়ে দেয় জীবন এত সহজ না। জীবনটা সিনেমার মত হয়না।
Was this review helpful to you?
or
গল্পের শুরু শাওন নামের এক ছেলেকে দিয়ে। যে কিনা তার পরিবারের বড় ছেলে। বাবা নেই। মা আম্বিয়া খাতুন, ছোট ভাই বাদল আর ছোট এবং একমাত্র বোন বৃষ্টি। বাবার অবর্তমানে সাধারণতঃ বড় ছেলেই পরিবারের হাল ধরে, সংসার সামলায়। শত বিপদে ছায়ার মতো পাশে দাড়িয়ে রক্ষা করে পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু শাওন তেমন না। পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণের চরম উদাসিন। পড়াশোনা শেষ করে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়ানোতেই শাওনের সুখ। নিজে চাকরি খুজেঁ না আবার চাকরির ব্যবস্থা হলেও তাতে আগ্রহ নেই। বাধ্য হয়ে এই সংসারের হাল ধরে বাদল। বাদলের টাকা উপার্জনের পথ কতটুক সৎ আম্বিয়া খাতুন না জানলেও শাওন তা জানে। তবু তা নিয়ে ভাবে না শাওন। ভাই কত টাকা উপার্জন করে, সংসারের কি কেমন খরচ হয় তাও জানে না শাওন। ছোট ভাইয়ের টাকা হাত পেতে নিতেও দ্বিধা নেই তার। এইতো ছিলো শাওন, বাদলের গল্প। এরপরই পাঠকের পরিচয় হবে মিন্টু, রেনু, রিন্টুর সাথে। শাওনের ছোট মামার ছেলেমেয়ে তারা। শাওনের বাবা মারা যাওয়ার পর ছোট মামা বিপদেআপদে ভীষণভাবে আগলে রেখেছে এই পরিবারকে। মিন্টু মামার বড় ছেলে। ময়মনসিংহ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। কোন এক কারণে বাবার উপর রাগ। যোগাযোগ করে না, বাড়িতেও আসে না। রেনু পড়াশোনায় মধ্যমানের ছাত্রী। শাওন রেণুর হাউস টিউটর। ছোট মামা ঠিক করে রেখেছেন শাওনের হাতেই মেয়েকে তুলে দিবেন। আর রিন্টু! বয়সে ছোট হলেও কাজে বেশ বড়। পড়াশোনায় নেই। লুকিয়ে সিগারেট খায়। এই বইতে শাওন, বাদল, বৃষ্টির গল্পের সাথে পাওয়া যাবে এই মিন্টু, রেনু আর রিন্টুর গল্পও। শুধু এরাই না এই গল্পে আরও পাওয়া যাবে রাজনৈতিক নেতা হায়দার আলীর কথা, তার স্ত্রী শায়লা এবং ছোট্ট মেয়ে নিধির কথা। শাওনের কবি বন্ধু মুসাফির মান্নান, জসিম এদের সবার কথাও আছে। এদের সবার জীবনের ছোট ছোট গল্প একত্র করেই শরীফুল হাসানের "মেঘ বিষাদের গল্প"।
Was this review helpful to you?
or
ছোটবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি আসক্তি থাকলেও নিয়োমিত বই পড়ছি ১৫ সাল থেকে। আর রিভিউ লেখা শুরু করলাম ১৬ এর সেপ্টেম্বর। এ পর্যন্ত কোনরকম বেশ কিছু রিভিউ লিখেছি। সত্যি বলতে কোন বই পড়ার পর আমার কখনোই মনে হয়নি, এই বইয়ের রিভিউ লেখা আমার পক্ষে সম্ভব না। পড়তে পড়তেই রিভিউ এর লেখা অটোমেটিক মাথায় আসে। কিন্তু এবার তার ব্যাতিক্রম হল। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না রিভিউ ঠিক কিভাবে শুরু করবো। অনেক ভেবে চিন্তেও কোন লাইন যখন বের করতে পারলাম না তখন বইয়ের বিষয়বস্তু পাঠ প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে জানানোর সিন্ধান্ত নিলাম। আসলে আমরা যেসব বই পড়ি তার নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্ট থাকে। আর সেই পয়েন্ট কেন্দ্র করেই বইয়ের কাহিনী এগোয়। কিন্তু এ বই ঠিক সেভাবে লেখা হয়নি। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোন বিষয় নেই যেটা ধরে লেখক এগিয়েছেন। তবে ছোট্ট একটা মেয়ে বাচ্চার খুন বিষয়ে আলোচনা আছে, তবে এটা অন্যানো বিষয়গুলোর কারনে বেশি প্রাধান্য পায়নি যদিও এই খুনের কারনেই বইয়ের শেষটা শকড খাওয়ার মত। গল্পের প্রধান চরিত্র শাওন। শাওনের বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। এক ভাই এক বোন আর মাকে নিয়ে তাদের পরিবার। শাওন অনেক পড়া লেখা করলেও অদ্ভুত ভাবে কাজ করেনা। যার কারনে তার ছোট ভাই বাদলকে সংসার চালাতে হয়। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে বাদল সংসার চালানোর জন্য সঠিক পথ বেচে না নিয়ে চুরির পথ বেচে নেয়। বিষয়টা খারাপ হলেও শাওন এ বিষয়ে বাদলকে কিছুই বলেনি উল্টো বাদলের প্রতি সে কৃতজ্ঞ কারন সে নিজে কিছু করেনা তাই। গল্পের নায়িকা রেনু। মা বাবা আর দু ভাই নিয়ে তাদের সংসার। রেনুর একটা মোবাইল ফোনের শখ কিন্তু তার পরিবার সেটা কিনে দিতে চাননা বলেই না খেয়ে থাকার সিন্ধান্ত নিয়েছে সে। একটা ফোন হলে কত ভালো হয়, বড় ভাই রিন্টুর সাথে কথা বলা যায়। রিন্টু কতদিন হলো বাসায় আসে না। বাবার এত টাকা থাকার পরও সে নিজে ইনকাম করে পড়াশোনা করে। এত টাকা থাকতে নিজেকে কেন আয় করতে হবে সেটা মাথায় ঢোকেনা রেনুর। তবে সে বেশ বুঝতে পারছে আর কিছুদিন পরই তার বিয়ে, কিন্তু অদ্ভুত ভাবে যার সাথে বিয়ে সে বিয়ের কেন জানি মাথা টাক করেছে। প্লট যে খুব আহামরি তা কিন্তু না, কিন্তু বর্ননা অদ্ভুত। এ ধরনের বর্ননা আগে কোন লেখকের পড়েছি বলে মনে হয়না। কিন্তু সত্যি বলতে শাওন কে নায়ক বলতে আমি নারাজ। আমার মতে সে অপদার্থ। সে যদি তার মামার দেয়া কাজ গুলোতে সম্মতি প্রকাশ করতো তাহলে হয়তো এরকম কিছুই হতো না। কিন্তু গাড়িতে করে বসে তার যাতায়াত ভালো লাগেনা, তার ভালো লাগে হাটতে। কি আজব, সে কি হিমু? হিমুর তো তেমন কেউ ছিলনা কিন্তু ওর তো অনেকেই আছে, আবার সামনে বিয়ের কথা চলছে। তাহলে এরকম একটা যুবকের কি চাকরী করার কথা নয়? কিন্তু তার চাকরি না করার কারনে তার ছোটভাইকে চুরি করতে হয়েছে। এক্ষেত্রে গল্পের নায়ক আমার মতে বাদল।মূল কাহিনী বলতে পারেন আবর্তিত হয়েছে বাদলের খারাপ পথে পা দেয়া থেকে শুরু করে। বাদল কুপথে যাওয়ার পিছনে যেমন শাওন দায়ী তেমনি শাওনের যা হয়েছে তার পিছনে সে নিজেই দায়ী। তার যা হয়েছে সেটাতে আমি দুঃখ পাইনি, চোখে পানি আসেনি তা কিন্তু না। সবই হয়েছে, কিন্তু আমি ততটাও দুঃখ পাইনি। এর প্রথম কারন অপদার্থ শাওন আর দ্বীতিয় কারন লেখক। বইয়ের ফ্লাপ, আর বইয়ের নাম পড়লেই বোঝা যায় ভয়ঙ্কর কিছু অপেক্ষা করছে পাঠকের জন্য । আর সেরকম কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম বলেই দুঃখ টা খুব বেশি হয়নি। কিন্তু জসিমের প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ। তার মানুসিকতা সত্যিই প্রশংসনীয়। সে যা করেছে একজন মানুষ হিসাবে জন্মানোটা তার সার্থক। কিন্তু সত্যি কি তাই? এর পিছনে কি কোন লালসা ছিলনা? ছিল কিংবা হয়তো ছিলনা। কিন্তু শর্ত পালনের জন্য তাকে তো সেটা করতেই হতো তাহলে এক্ষেত্রে রেনু ইজ দ্য বেস্ট। রেনুর কি কোন স্বার্থ ছিল? সে তো ইচ্ছে করলেই নিজের ভাবনা ভাবতে পারতো, কিন্তু সে নিজেকে নিয়ে ভাবেনি। এতে আমি অবশ্য খুশী কারন কোন অপদার্থ কে তার জীবনের সাথে জড়াতে হলোনা। কিন্তু কিন্তু সত্যিই কি হলোনা? না চাইতেই অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে জড়ালো। আপনি বোধহয় একটা বিষয় খেয়াল করলেন সেটা হল, আমি কিছু কনফিউশান মার্কা কথা বলেছে। বইয়ের অনেক চরিত্রের ক্ষেত্রে এ ধরনের বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। যার কারনে আপনি চরিত্র কে কিভাবে ভাববেন সেটা আপনার ইচ্ছে। যাইহোক বইটা পড়ার ক্ষেত্রে ডিলান ভাইয়া আর তানিয়াপুর অবদান অনেক। কারন অসাধারণ অসাধারণ প্রচ্ছদ না থাকলে হয়তো বইটা পড়া হতো না।তবে বইয়ের রক্তের গোলক লেখকের 'আধারের যাত্রী 'বইয়েও ছিমছাম। সেইসঙ্গে পাতার মান, কোটেশন, বাধাই সবকিছুই প্রশংসনীয়। গোটা গোটা অক্ষর দেখলে যে কারোরই পড়ার ইচ্ছা জাগবে। আর একটা বিষয় আমি প্রায় বলি সেটা হল বানান। আর সবাই বানান বিষয় টা বেশ বড় করে দেখে, হয়তো এটা বড় করার মত বিষয় কিন্তু আমার কাছে বিষয়টা বাড়াবাড়ি। হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ শব্দের মাঝে ১০০ টা শব্দ ভূল হওয়া কি স্বাভাবিক লাগে আমার কাছে। যদি কয়েক লাইনের মাঝে বানান ভূল হয় সেটা আলাদা কথা তাই মনে হয় বানান ভূল বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার আগে শব্দের দিকে তাকানো উচিত। বইটা পড়ে শেষ করার পর, অন্তত ৪৭ নাম্বার অধ্যায় পড়ার পর আমার এটাই মনে হয়েছে এটা সত্যিই 'মেঘ বিষাদের গল্প'।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম:মেঘ বিষাদের গল্প লেখক:শরীফুল হাসান(Shariful Hasan) প্রচ্ছদ:ডিলান ব্যাককাভার ছবি:তানিয়া সুলতানা প্রকাশনী:বাতিঘর মূল্য:২০০ টাকা(মুদ্রিত) প্রকাশকাল:২০১৭ প্রিভিউ:গল্পটা শাওন,বাদল কিংবা বৃষ্টির। কিংবা রেনু,মিন্টু,রিন্টুর। কিংবা হায়দার আলীর। কিংবা জসিম,কিংবা মুসাফির মান্নানের।কিংবা ছোট্ট নিধির।গল্পটা হয়তো আনন্দের। কিংবা প্রতিশোধের কিংবা বিষাদের। মেঘ বিষাদের গল্প শরীফুল হাসানের ভিন্ন স্বাদের একটি উপন্যাস। রিভিউ:(পর্ব-১) গল্পটা শাওন,বাদল কিংবা বৃষ্টির:আচ্ছা একটা সুখী পরিবার কাকে বলে?বাবা সকালে উঠে খবরের কাগজ পড়তে পড়তে চা খাবে,মা ছেলে বা মেয়েদের সকালের নাস্তা রেডি করে টেবিলে দিবে কারন তারা সবাই অফিসে যাবে।ভাই বোনদের মধ্যে যে ছোট সে স্কুলে যাবে,তাকে টিফিন রেডি করে দিতে হবে।এমনই ত একটা সুখী পরিবার নাকি?কিন্তু সবার পরিবারই কি সুখী হয়?হাতে গোনা কয়েকজনের হয়।তার মানে কি বাকি সবার পরিবার অসুখী?না তা না।সব পরিবারের মধ্যেই একটা সুখ আছে।বাহ্যিক দৃষ্টিতে সবাই যে পরিবারকে অসুখী বলে তার ভেতরে হয়তো রয়েছে সুখ।যেমন মা রান্না করতে করতে হাত পুড়িয়ে ফেলেছে তা দেখে বড় ছেলে ছুটে এসেছে মা'কে দেখতে,ছোট্ট স্কুল পড়ুয়া বোন দৌড় দিয়েছে ব্যান্ডেজ আনতে।এর মধ্যেও কিন্তু একটা সুখ আছে।যেটা সব পরিবারে আবার নেই।এসব পরিবার সুখী না হয়েও সুখী।তেমনই একটা পরিবার, শাওন বাদল আর বৃষ্টিদের।সুখী বলছি না তার বড় কারনটা আপনারা তাদের গল্প পড়লেই বুঝবেন।ছোট কারন হচ্ছে তাদের বাবা নেই।বাবা একটা পরিবারের ছাদ হিসাবে কাজ করে।যে পরিবারে বাবা নেই সে পরিবারের কিছুই নেই।আবার পরিবারের বড় ভাই শাওন,কোন চাকরী করে না।পড়াশোনা করেছে তবুও চাকরী করে না।পায় না বললেও ভুল হবে কারন চাকরী পেলেও সে করে না।সারাদিন ঘুরে বেড়ানো তার স্বভাব।যাকে বলে 'হিমু'টাইপ।ছোট ভাই বাদলের পয়সায় চলে সংসার।স্কুল পড়ুয়া বাচ্চা বৃষ্টি।এত বড় পরিবার মাত্র একজনের রোজগারে চালাতে হিমশিম খান শাওনের মা। কিংবা রেনু,মিন্টু, রিন্টুর:শাওনদের ছোট মামা'র পরিবার।রিন্টু পরিবারে সবিচেয়ে ছোট ছেলে।যে ইতিমধ্যেই লুকিয়ে লুকিয়ে সিগারেট ধরা শুরু করেসে।অবশ্য ছেলে লেখাপড়া করেনা দেখেও মা কিছু বলে না।বড় ছেলে মিন্টু পড়াশোনায় ভালো।মেজ মেয়ে রেনুও ভালো,সবাই যদি ভালো হয় তাহোলে বাবা'র বড় ব্যবসা সামলাবে কে?কাওকে না কাওকে ত দরকার?আর ব্যবসার মতো জায়গায় রিন্টুর মতো ছেলেই পারফেক্ট।ছোট মামা,শাওনের জন্য বিয়ে ঠিক করেছে তার নিজের মেয়ের সাথে।শাওন শুধু বেকার।অবশ্য বেকার বলা ঠিক হবে না।রেনুকে বাসায় পড়ায় শাওন।যাকে বলে হাউস টিউটর।আর তাছাড়া কোন খারাপ গুন তার মধ্যে নেই।এটা কোন সমস্যায়ই না ছোট মামা'র কাছে।নিজের ব্যবসায় না হয় বসিয়ে দিবেন।আর ১৬ আনাও ত হবে না।এমন যুগে শাওনের মতো ছেলে পাওয়াও মুশকিল।এদের গল্প জানতে গেলেও আপনাকে বইটা পড়তে হবে। কিংবা হায়দার আলীর।কিংবা জসিম,কিংবা মুসাফির মান্নানের।কিংবা ছোট্ট নিধির:হায়দার আলী একসময়ের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। টাকা-পয়সার কমতি নেই।বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত এস পি।একমাত্র মেয়ে নিধি।যাকে নিয়ে কাহিনী শুরু।জসিম শাওনের বাচ্চা বেলার বন্ধু।মুসাফির মান্নান হচ্ছে বড় লোক বাবার (বড় মাপের)কবি।শাওনের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন,এরা কি কোন চেঞ্জ হবে না? (পর্ব-২) বাদল সংসারের একমাত্র চালক।সংসারের সমস্ত টাকা সে দেয়।শাওন অবশ্য তার ছোট মামার মেয়ে রেনুকে পড়ায়। তবে টাকা পায় না সম্ভবত।(বইতে এমন কিছু লেখা নেই)পাইলে হয়তো শাওনের বাদলের কাছ থেকে টাকা নিতে লজ্জ্বা করতো না।তবে শাওন জানে যে বাদল সৎ পথে টাকা আয় করে না।এই যুগে ঢাকা শহরের মতো জায়গায় এত বড় পরিবার টানা চাট্টিখানি কথা নয়,সৎ পথে আয় করলে ত তাদের অবস্থা রাস্তার ভিখিরি দের চেয়েও খারাপ হতো।শাওন ধরেই নিয়েছিলো বাদল অসৎপথে আয় মানে ছোট খাটো ছিনতাই বা পকেট -টকেট মেরে আয় করে।তবে এক্ষেত্রে শাওন কিছুই বলতে পারত না বড় ভাই হয়ে।আসোলে সত্যিই কি বলা যায়?পরিবারের বড় ভাই ঘরে বসে থাকে,রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় আর ছোট ভাই রোজগার করে,এতে বড় ভাইয়ের মান থাকে?থাকে না।তাই শাওন কিছু বলতেও পারে না।তবে একদিন বাদল টাকার লোভে এমন কিছু করে ফেলল,যা তাদের মতো শিক্ষিত পরিবারের,শিক্ষিত ছেলের পক্ষে করা সম্ভব না।অনেক টাকার লোভে খুন করতে পা বাড়ালো বাদল!আসোলে টাকা এমনই একটা জিনিস যেটার পেছনে দৌড়াতে যেয়ে মানুষ ভুলে যায় সমস্ত ন্যায়বোধ।আর কাজ করতে থাকে লোভ।যার কারনেই ধ্বংস হচ্ছে পৃথিবী।সংসারের বোঝা কাধে পড়ায় যার শিকার শাওনের ছোট ভাই বাদল।হায়দার আলীকে খুন করার জন্য টাকা দেয়া হয় তাকে।কিন্তু এই কাজে অপটু হওয়ায় এবং প্রথম হওয়ায় ভুল করে খুন করে হায়দার আলীর একমাত্র স্নেহেরধন ছোট্ট মাসুম বাচ্চা নিধি।এরপরেই প্রশ্ন শুরু।একমাত্র মেয়েকে মারলে কোন বাবার মাথা কি ঠিক থাকে?শুধু একমাত্র কেন?ছেলে-মেয়েরাই বাবা-মার সব কিছু।সেই সব কিছুকে কেড়ে নিলে কি ঠিক থাকে কোন বাবা-মার মাথা?হায়দার আলী একে ত রাজনীতিবিদ আবার এস পি।সুতরাং সুযোগ তার অনেক আছে তার মেয়ের খুনিকে ধরার জন্য।তাহোলে সে সেই সুযোগ কেন।নষ্ট করবে?মাথা গরম হায়দার আলী কি খুজে পাবে?খুনিকে? শেষ পর্যন্ত কি হবে?খুজে পেলে শাওনদের পরিবারের কি হবে?আচ্ছা এটা ত গেল দুটো পরি আরের কাহিনী আর বাকি পরিবার?তাদের কাহিনী কি?লেখক কি শুধুই বাদল আর হায়দার আলীর কাহিনী বলতেই চেয়েছেন?তা হলে বাকি পরিবারদের কথা প্রিভিউতে দেয়ার কারন কি?কারন নিশ্চয় আছে।না থাকলে কেন লিখবেন লেখক?বাকি পরিবারদের কাহিনী কি আনন্দের?নাকি প্রতিশোধের?নাকি বিষাদের?নাকি রহস্য আছে বাকি পরিবারের মধ্যে,প্রতিটা চরিত্রের মধ্যে?জানতে হলে।পড়তে হবে এই অসাধারণ বইটা। লেখকের কথায় আসি।অসাধারন অসাধারন এবং অসাধারন লেখনী। আমি এক বসায় শেষ করেছি।একবারের জন্যেও বই ছেড়ে উঠিনি।লেখায় হুমায়ূনীয় স্বাদ পেয়েছি গভীর ভাবে।এবং আমি আঙুল তুলে বলতে পারি আমরা একজন ভালো লেখক পেয়েছি। সবাইকে অনুরধ করব এই অসাধারন অসাধারন প্লট বিশিষ্ট বইটা পড়ার জন্য।লেখকের আর কোন বই পড়া হয়নি,সাম্ভালার অনেক খ্যাতি শুনেছি।ওটা পড়ার ইচ্ছা ছিলো।কিন্তু এটা পড়ে ত আমি লেখকের পুরো পুরি ফ্যান হয়ে গেলাম।লেখকের পরবর্তী বইয়ের অপেক্ষায় থাকলাম খুব আগ্রহের সাথে।লেখকের প্রতি অনুরধ থাকবে লেখক যেন অনুবাদের দিকে বেশি একটা না যান।লেখকের লেখার হাত ভালো তাই আমি,একজন ক্ষুদে পাঠক আমার অনুরধ থাকবে অনুবাদ কম এবং মৌলিক বেশি লেখার জন্য। বাতিঘর নিয়ে আর কিই বা বলবো?ডিলান ভাই অসাধারন প্রচ্ছদ করেছেন।যার জন্য বইটার দিকে বারবার তাকাতে মন চাচ্ছে।দু'এক্টা ভুল ছাড়া আর কোন ভুল নেই।আশা করি পরের মুদ্রণে ওগুলোও ঠিক করে দেয়া হবে। ফেসবুক মনে করিয়ে দিলো আজ লেখক লেখকের জন্মদিন।লেখককে মনের গভীর থেকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা।দীর্ঘজীবী হন,এবং অসাধারন বই আমাদেরকে উপহার দিতে থাকুন। পড়ার আমন্ত্রন রইল।