User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ একটি শোক সংবাদ হাসপাতালের বেডে শুয়ে এক মা প্রসবের প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে; ইতঃপূর্বে দুটি সন্তান সে অনায়াসে প্রসব করতে পারলেও তৃতীয় সন্তানটি জরায়ুর নিরাপদ বাসস্থান থেকে বেরই হতে চাচ্ছে না। পৃথিবীর মূর্খ আলোর উচ্ছ্বাসে সে বিভ্রান্ত হয়ে বাইরে বের হতে কিছুতেই রাজি না। তাই মায়ের কোমল উষ্ণ নিরাপদ জরায়ুতে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকে, জরায়ু আঁকড়ে। __ তুমি বের হয়ে আসো, জরায়ুতে তোমার থাকার মেয়াদ তো শেষ! শিশুটি কিছু বলে না, সে আরো জোরে খামচে ধরে মায়ের জরায়ু, একেবারে মিশে যেতে যায় জরায়ুতে। সে জেনে গেছে, বের হয়ে আসা মানেই বিশৃঙ্খল এক রাষ্ট্রের বিপন্ন এক সময়ের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। যে রাষ্ট্রে পেট্রোল বোমায় নিরীহ মানুষগুলো মৃত্যু-যন্ত্রণায় কাতরায়, নিরীহ দরিদ্র যুবক সবার সামনে নৃশংসভাবে খুন হয়, ফাঁসির হুকুমপ্রাপ্ত আসামি মুক্তি পায়... মানুষের চামড়ার নিচে এখনো যে আদিম বন্যতা বাস করে, সে বন্যতাই যে রাষ্ট্রের কাঠামোর পরতে পরতে রাজত্ব করে বেড়ায়, সে রাষ্ট্রে সে শিশু জন্ম নিতে গিয়ে নিজেকে বিপন্ন বোধ করে। 'জাতক ও জন্মভূমি' গল্পের সেই নবজাতকের ভয় যে অমূলক নয়, তা আমরা দেখতে পাই; পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হবার সাথে সাথেই বোমার বিকট শব্দ নবজাতককে স্বাগত জানায়। সাব্বির জাদিদ এর প্রথম গল্পগ্রন্থ 'একটি শোক সংবাদ' পড়তে গিয়ে আমি বারবার বিভ্রান্ত হচ্ছিলাম ভেবে যে, সমাজবদ্ধ মানুষের কতটা গভীরে গেলে কেউ এমন গল্প লেখা যেতে পারা যায়! একেকটা গল্প পড়া শেষ হলে কেমন এক ঘোর পেয়ে বসে; কপালে ভাঁজ পড়ে, মোহিত করে রাখে। ভাবায়, খুব ভাবায়। মনের অন্ধকার কোণ যেন হঠাৎ করে জ্বলে উঠে। বইটা যখন পড়ে শেষ করি, তখন অনেক রাত। জানালার ওপাশে অন্ধকার; অথচ অবাক হয়ে খেয়াল করি, সেই অন্ধকারের গায়ে কিছু দৃশ্যকল্প কেমন সজীব হয়ে চলাফেরা করছে! দেখতে পাই, 'কুত্তা' গল্পের মরিয়ম ওর মেয়ে আর এক নেড়িকুত্তা একি সমান্তরালে হেঁটে যাচ্ছে, হাতে মাংস। কুরবানির অচ্ছুত মাংস! অনেকদিন পর মাংস খাবে বলে 'তিনও জন' উচ্ছ্বসিত! মাথার ভেতরে এই দৃশ্যকল্প যখন ঘোর জাগাতে শুরু করে তখন আমার ‘একটি পুঁজিবাদী গল্পের' কথা মনে পড়ে যায়। না, কোনো দৃশ্যকল্প নয়, এবার অন্ধকারে জেগে উঠে গল্পের সেই ইকরামুলের ধূসর মুখ; যে ধনীদের থেকে নিজের শ্রেণিকে সবদিক থেকে বঞ্চিত ভাবত, কিন্তু একদিন বাবুর ছেলে আর ছেলের বৌয়ের সঙ্গম দৃশ্য দেখে আবিষ্কার করে এই একটা জায়গায় সবাই সমান। কিন্তু সেখানেও যে সে বঞ্চিত বাবুদের থেকে সে একদিন আবিষ্কার করে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়। তার বিষণ্ণতা যখন আমাকেও আক্রান্ত করতে শুরু করে তখন 'একটু শোক সংবাদের' মাথা নিচু করে রাখা ছয়ফালকে মনে পড়ে যায়। ঋণের টাকা শোধ করতে না পেরে যে ছয়ফাল কেরামত মণ্ডলের কঠিন এক শর্তেও প্রতিবাদ করতে পারে না। ছয়ফালের সুন্দরী বৌকে মণ্ডল যখন উপস্ত্রী হিশেবে গ্রহণ করার শর্ত দেয়, সে তখন আশ্চর্য হয়ে গেলেও মুখে কিছু বলার সাহস পায় না। মৃত মণ্ডল যখন সংশয়ী হয়ে উঠে যে, সবাই তাকে মাফ করলেও ছয়ফাল কখনো মাফ করবে না, তখনই সে বিস্ময়ের সাথে খেয়াল করে, তার জানাজায় দাঁড়ানো আর সব মানুষের মত সেও মণ্ডলের ছেলের আউড়ে যাওয়া ক্ষমাসূচক কথাগুলো সেও আউড়ে যাচ্ছে! কিন্তু আমার তেমন অবাক লাগে না। কেননা, সেই নবজাতকের মত এতোদিনে আমিও জেনে গেছি মণ্ডলদের মত লোকদের দ্বারা শাসিত এই সমাজে ছয়ফালদের প্রতিবাদ করার অধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তারা মৃত মণ্ডলের সামনেও যেন অসহায়। জানালা থেকে চোখ সরিয়ে এবার ঘুমাতে যাই, কিন্তু ঘুম সহজে আসে না। গল্পগুলোর নানা চিত্রকল্প, দৃশ্যকল্প, ঘটনা মনের ভেতরে ঘোরাফেরা করতে থাকে। বাকিগল্পগুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে অনুভব করি, মনের ভেতরে নতুন এক ভূখণ্ড তৈরি হয়ে গেছে, প্রতিদিনের যাপিত বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমি এখন সেই ভূখণ্ডের এক শৈল্পিক বাস্তবতায় রয়েছি। ক্লিশে সময়টাকে ভুলে থাকতে এ এক আশ্চর্য দাওয়া। এবার আসি তার গল্পের অন্যান্য কারুকাজের কথায়। তিনি সহজাত গল্প-বলিয়ে। তাঁর গল্প কাহিনীপ্রধান; কিন্তু কাহিনীই শেষ কথা নয়। মূলত আইডিয়াপ্রধান। সেই আইডিয়াকে গল্পে রূপ দিতেই কাহিনীর অবতারণা ঘটান। গল্প পড়ে মনেই হয় না এটা কারোর প্রথম গল্পগ্রন্থ। আর তার গল্পের কাঠামোর দিকে তাকালেই আমার বিশেষ এক ধরণের কাঁচের জারের কথা মনে পড়ে যায়। জারটি পানিতে পূর্ণ, সেই পানিতে ভাসছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিহি দানা। পানিটাকে গল্পের ভাষা হিশেবে ধরলে, মিহি দানাগুলো হচ্ছে চিন্তা; গল্প যতো এগোয়, দানা জমতে থাকে জারের তলানিতে। তাই একদম শেষ গিয়ে দেখি চিন্তাগুলো একটা জায়গায় গিয়ে জমাট বেঁধে একটা বিশেষ আইয়াডিয়ায় পরিণত হয়ে আছে। যা সবচে' গভীর আর ভারি! তিনি গল্পে একটা সমাজচিত্র আঁকেন, তারপর সেই চিত্রের ভেতরে ঢুকে ক্ষত চিহ্নটা দেখিয়ে দ্যান। তারপর আলতো করে স্পর্শ করেন। আর কে না জানে, স্পর্শ যত আলতো তা সঞ্চারিত হয় ততো গভীরভাবে।
Was this review helpful to you?
or
ব্বির জাদিদের গল্পের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে একটা মাসিক পত্রিকা পড়তে গিয়ে।তার লেখা গল্পটি পড়ে অনেকক্ষণ নিঃসাড় বসেছিলাম।ভাবতেই পারিনি এত চমৎকার করে কেউ গল্প লেখতে পারে।পরে তরুণ এই লেখক সম্পর্কে জেনে আরো অবাক হয়েছি। তার গল্পগুলো এতোটাই জীবনঘনিষ্ঠ যে গল্পটি পড়তে গিয়ে মনে হবে গল্পের চরিত্রগুলো আপনার আশেপাশের পরিচিত মানুষেরা।একজন সার্থক লেখক তো একেই বলে।তার সাবলীলতা ও প্রাঞ্জলতার কথা নাই বা বললাম।এত তরতর করে কাহিনি বেয়ে চলে যে কোথাও হোঁচট করতে হয়না।তার প্রতিটি গল্পে গভীর জীবনবোধ ফুটে ওঠে।সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি তিনি গল্পের ভিতর দিয়ে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন যেনো! বইটি লেখকের নির্বাচিত কিছু গল্পের চমৎকার সংকলন।