Our User Product Reviews

লায়লা ফেরদৌসের লেখা ‘চীনা রূপকথার অচিন পাখি’ বইটি অন্য রূপকথার বইয়ের থেকে একটু আলাদা কারণ এই বইটিতে চীনা রূপকথার গল্পের পাশাপাশি এর ইতিহাস নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। যার ফলে পাঠকের রূপকথার গল্পগুলো সম্পর্কে জানতে বা বুঝতে বেশ সুবিধা হবে। লেখক প্রথম অধ্যায় ‘চীনা পৃথিবী’ তে আমাদের জানাচ্ছেন-চীনের উত্তর ও দক্ষিণ দিকের সমতল ভূমিতে এদেশের প্রাচীন মিথোলজির উৎপত্তি স্থান এবং ঈশ্বরের সৃষ্টি করা প্রাচীন মানবসমাজের আবাস্থল। এর সুদীর্ঘ ইতিহাস গ্রিকদের ইতিহাসের মতোই প্রাচীন এবং অনেক দিক থেকেই গ্রিক সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এই সভ্যতার সূত্রপাত হয়েছিল প্রায় খ্রিস্টপূর্ব বিশ শতাব্দীতে। গ্রিক জাতি যাদেরকে অন্য জাতিরা পদানত করেছিল এবং এর ফলে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বিকাশের পথ অনেকটাই, এক অর্থে প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। সেক্ষেত্রে চীনা সভ্যতা অবশ্যই কৃতিত্বের দাবি রাখে। যেহেতু এই সভ্যতা তার নিজ গতিতে এমনকি আজ পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে তার নিজস্ব সংস্কৃতির ধারাকে ধারাবাহিকভাবে প্রবাহমান রাখতে পেরেছে। চীন দেশেও অনেক বহিরাগত শাসক এসে এর বিভিন্ন অংশকে কুক্ষিগত করেছে। কিন্তু সেসব বহিরাগত সংস্কৃতি সর্বদাই ছিল চীনা সংস্কৃতির চেয়ে অনেক অনুন্নত এবং এসব সংস্কৃতি এসে চীনা সংস্কৃতির সাথে মিলেমিশে একাত্ন হয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিজস্বতাকে চীনা সংস্কৃতির ভেতরে বিলীন করে দিয়েছে। এই আধুনিক সময় পর্যন্ত একমাত্র উন্নত সভ্যতা, যার সঙ্গে চীনারা সংযোগ স্থাপন করেছে ; সেটি হলো ভারতীয় সভ্যতা। এই দুই সভ্যতা প্রধানত সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগের কারণে এতো শান্তিপূর্ণভাবে একত্রে মিলিত হতে পেরেছে। কিন্তু এই সংযোগ চীনের উপর এক বিরাট প্রভাব ফেলেছে যেহেতু এর ফলে বৌদ্ধ নামে এক নতুন ধর্ম এদেশে এসে প্রবেশ করেছে। শিক্ষিত মানুষেরা যেখানে এক অতিপ্রাকৃত অলৌকিক শক্তির সম্ভাবনা বিষয়ে সচেতন ছিলেন, তারাও কিন্তু সেই অর্থে ধার্মিক ছিলেন না কিংবা সুনির্দিষ্ট কোনো দেবতার পূজায় অভ্যস্ত ছিলেন না।