User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
‘প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি’ বইটির লেখক সোহেল নওরোজ । তিনি আমাদের দেশের সাহিত্য অঙ্গনে একজন নতুন মুখ । লেখক সোহেল নওরোজ এর জন্ম ১ অক্টোবর ঝিনায়দহের বেতাই গ্রামে । বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাৎস্যবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। ‘সুন্দরবন ঊপকূলীয় মৎস্যজীবীদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ বিষয়ক গবেষণাগ্রন্থ জার্মানির ল্যাম্বার্ট থেকে প্রকাশ পায়। বিসিএস (সমবায়) ক্যাডারে ইস্তফা দিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত।বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে আগ্রহ জন্মে প্রকৃতি, পরিবেশ আর জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়ে। লেখকের মতে, মনের খেয়ালে নিজের মতো করে বলতে পারায় যে আনন্দ, তার তুলনা নেই। আরোপিত নয় বরং সানন্দে লিখেই গল্পের কাছাকাছি যাওয়া যায়। সে থেকেই মূলত বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিকে লেখালেখির শুরু। মূল আগ্রহ গল্পে; তবে প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও রম্য লিখতেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয়। সোহেল নওরোজ বাংলা একাডেমি আয়োজিত তরুণ লেখক প্রশিক্ষণ প্রকল্প-এর পঞ্চম ব্যাচের সদস্য। ২০১৩ সালে অধিকোষ সাহিত্য প্রতিযোগিতায় তার ‘নিয়তি কিংবা আগুনে পোড়া স্বপ্ন’ সেরা গল্প নির্বাচিত হয়। তার লেখা প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে । বইটি প্রকাশিত হয় দেশ পাবলিকেশন্স প্রকাশণী থেকে এবং এর প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ । সময়কে বাদ দিয়ে গল্প হয় না। ‘প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি’ এই সময়ের বই। চাওয়া-পাওয়া, আক্ষেপ-আকাক্সক্ষার সঙ্গে সময়কে বেঁধে লেখক গল্প সাজিয়েছেন নিজের মতো করে। যেখানে গল্পের ভাঁজে ভাঁজে এক অলৌকিক আবেশ শরীর খুলে দেয়। পাঠক সেই আবেশীয় মোহনীয়তায় লেখকের গল্পদেশে হারিয়ে যাবেন খুবই অল্প সময়ে। গল্পের ভেতরের গল্পগুলো মনে হবে খুব চেনা। টান আছে, বিস্ময় আছে, শেষ হয়েও শেষ না হওয়ার বেদনা আছে। তবে বর্ণনার আতিশয্য নেই। অতি উপমা, অলঙ্কারের মাখামাখি নেই। লেখক শুধু নিজের গল্পটাই বলতে চেয়েছেন। তাই ‘প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি’ পড়ে কেউ গল্প ছাড়া অন্য কিছুর আলামত পাবেন না। টিভি-সিরিয়াল ও ইন্টারনেট-ফেসবুকের আসক্তিদিনেও অফুরান তৃপ্তি দিয়ে পাঠককে গল্পপ্রেমী করে তোলার মতো বইটিতে যাপিত জীবনের নানামুখী চিত্র তুলে আনা হয়েছে। গল্পকার সোহেল নওরোজ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন পরিচ্ছন্ন ও রুচিশীল শিল্পমননের। তিনি চিন্তাচেতনার গভীরতায় অল্পকথার গল্পের মাধ্যমে দেখিয়েছেন সাবলীল, প্রাঞ্জল ও রুচিশীলতায়ও পাঠককে বিচিত্র স্বাদ দেয়া সম্ভব। অসাধারন কয়েকটি সমকালীন গল্পের স্বাদ পেতে চাইলে অবশ্যই পড়তে হবে এই বইটি ।
Was this review helpful to you?
or
‘প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি‘ : গল্পের ভেতর জীবনের সারাংশ ♦মাসুমা রুমা♦ ------------------------------------------------ একজন লেখকের সৃষ্টি নিয়ে মন্তব্য করা দুরূহ ব্যাপার। তবুও কোনো লেখা পাঠের পর অবচেতন মনে যে অনুভূতি বা বোধের সৃষ্টি হয় তা প্রকাশ করতে না পারলে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করে নিজের ভেতর। সেই তাড়না থেকেই মূলত গল্পকার সোহেল নওরোজের তৃতীয় গল্পগ্রন্থ ‘প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি’ সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিমত তুলে ধরব। মোট ১৪টি জীবনঘনিষ্ট গল্পের মিশেলে সাজানো এবং চমৎকার প্রচ্ছদবিশিষ্ট বইটির ব্যতিক্রমী নামটাই প্রথমে কৌতুহল তৈরি করে। পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে, এক একটি গল্প জীবনের এক একটি দ্বার খুলে দিচ্ছে। প্রতিটি গল্পই আমাকে ভাবিয়েছে। উপলব্ধিকে নতুন আঙ্গিকে অনুভব করতে শিখিয়েছে। যখন ‘রোদচশমা’ গল্পের উঠোনজুড়ে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়িয়েছি, গল্পের চরিত্র রাশেদ আর রাফিয়ার ভেতর আজও আমি মানবতাকে জীবন্ত দেখেছি। সেই সাথে মানবতার অপমৃত্যু কিংবা মানবতাকে রক্তাক্ত হতেও দেখেছি। আমরা মানুষ হয়েও মানবতাকে ধারণ করতে পারছি না। এ আমাদের চরম ব্যর্থতা। যান্ত্রিকতার এই যুগে মানবতা যেন বিরল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছি! অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস হারিয়ে ফেলেছি। আবার অনুরোধে ঢেঁকি গেলার মতোও অনেকে রাত-দিন অন্যায় আর পাপকে হজম করে চলেছি। গল্পকার তার উপলব্ধিকে সহজ-সরল ভাষায় চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। গল্পটি পাঠকের চেতনায় জায়গা করে নেবে বলেই আমার বিশ্বাস। ‘বাজি’ গল্পের ফাহিম ও অয়ন তরুণ সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে। বর্তমানে তরুণদের ভেতর বন্ধুত্ব আর বিশ্বাস কমে যাওয়ার পথে। একজন আদর্শ বন্ধু আরেক বন্ধুর পুরো জীবনকে কীভাবে বদলে দিতে সক্ষম তারই চমৎকার উদাহরণ ‘বাজি’ গল্পটি। ‘হিডেন ফোল্ডার’ গল্পটি আমার ভেতরটাকে ভিন্নভাবে নাড়া দিয়েছে। একজন লেখকের ব্যক্তি জীবনের সমস্যা কিংবা তার সাংসারিক জীবনের ভুল বোঝাবোঝির বিষয়গুলো একটি গল্পের মাধ্যমে এত সুন্দর করে তুলে ধরা সম্ভব, এটি ভেবেই আমি কিছুটা বিস্মিত হয়েছি। স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস আর ভালোবাসা একজন লেখককে প্রকৃত লেখক হওয়ার ইচ্ছায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন আদর্শ জীবনসঙ্গিনী লেখক হওয়ার পথটাকে সহজ করে দেয়। গল্পকারের উপলব্ধির জায়গাকে শ্রদ্ধা জানাতেই হয়। ‘চুপ’ গল্পটি আমার চেতনাকে চুপ করে দিয়েছিল বেশ খানিকটা সময়। সমাজের ক্ষমতাশীল ও ধনাঢ্য মানুষগুলো নিম্ন পদস্থ মানুষগুলোর ওপর আধিপত্য বিস্তার করে -আমাদের সমাজে এ এক চিরচেনা দৃশ্য। সমাজে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া এ বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে বের করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। সময় এসেছে বৈষম্যের বাঁধ ভেঙে দেওয়ার। বর্তমান সমাজে অপরাধমূলক কর্মকান্ড ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। অপরাধের ধরনও পরিবর্তিত হচ্ছে রোজ। আজ যা অন্যের জীবনে ঘটছে, আগামীকাল তা আমার জীবনেও ঘটতে পারে। তাই অপরাধকে এড়িয়ে যাওয়া মানে নিজের জন্য আশঙ্কার পথ সুগম করা। এমনি উপলব্ধির স্পর্শ খুঁজে পাওয়া যায় সোহেল নওরোজের ‘খুন হওয়া ছেলেটির মনচিত্র’ নামক গল্পটিতে। লেখকের ‘হয়তো হৃদয়ঘটিত নয়’ গল্পে ভালোবাসার একটি মানচিত্র দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা দৃশ্যমান হয়। বিশ্বাস আর শ্রদ্ধাবোধের সমন্বয়ে প্রকৃত ভালোবাসা গড়ে ওঠে। যে ভালোবাসা ঠুনকো হবে না, হবে চিরন্তন। ‘কথা রাখার গল্প, কথা না-রাখার কালে’ নামক গল্পের কলিম আর মর্জিনা চরিত্রের মাধ্যমে সময়ের পরিক্রমায় নারীর জীবন ও অবস্থান পরিবর্তনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। অজ্ঞতা আর বৈষম্য সমাজের জন্য, জীবনের জন্য কখনো ভালো কিছু বয়ে আনে না। লেখক হিসেবে অত্যন্ত সচেতনতার পরিচয় পাওয়া যায় গল্পকারের এই গল্পটিতে। গল্পগ্রন্থের নামগল্প ‘প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি’ ভালোবাসা সম্পর্কে গল্পকারের নিজস্ব উপলব্ধির প্রকাশ। প্রকৃত প্রেম, দ্ব্যর্থহীন ভালোবাসা মানুষের মন ও মনন থেকে ধীরে ধীরে সটকে পড়ছে। মানুষ এখন ভালোবাসার পেছনে কোনো যুক্তি দাঁড় করাতে পারে না। ভালোবাসার বিরোধীতাও করতে পারে না। জীবনের প্রয়োজনে, ব্যক্তিক কারণে ভালোবাসে। ‘তনু ফিরে আসার পর’ গল্পটি বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী অবমাননার নির্মম সাক্ষী বহন করছে। প্রতিদিন সংবাদপত্র খুললেই নারী নির্যাতন-ধর্ষণ-খুনের খবর চোখে পড়ে। আমরা পড়ছি, দেখছি অথচ অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। আমাদের ঘুনে ধরা বিবেককে নাড়া দিতেই গল্পকার বাস্তবতা আর কল্পনার সমন্বয়ে চমৎকার এই গল্পটি লিখেছেন। ‘শেষ যখন এ শহরে জোছনা নেমেছিল’ গল্পটিতে যান্ত্রিকতার প্রভাবে মানুষ ধীরে ধীরে নিজেকে কতটা কঠিন করে তুলছে, কতটা বাস্তববাদী করে তুলছে তারই প্রমাণ মেলে। ‘আসা-যাওয়ার গান’ গল্পটি লেখকের স্মৃতিচারণমূলক। চলার পথে রোজ কত অচেনা মানুষের সাথে আমরা পরিচিত হই। অচেনা মানুষগুলো কখনো প্রত্যাশা ছাপিয়ে আপন হয়ে যায়। সেই ভালোলাগাগুলো স্মৃতি হয়ে মানুষকে ক্ষণে ক্ষণে ভাবিয়ে তোলে।‘পোর্ট্রেট’ গল্পটিতে পাঠক বইমেলার আমেজ খুঁজে পাবেন। বই প্রকাশ একজন তরুণ লেখকের কত বড় স্বপ্নের জায়গা গল্পকার তা অত্যন্ত আবেগ দিয়ে দেখিয়েছেন। পাঠকের ভালোবাসাই যে একজন লেখকের বেড়ে ওঠার শক্তি চরম সে সত্যটি আমরা উপলব্ধি করতে পারব। ‘একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে’ গল্পটিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্রভাব লক্ষ্য করা যাবে। ফেসবুকের মাধ্যমে অনেক ফেক প্রেমের সূচনা হলেও কখনো যে প্রকৃত প্রেমও সৃষ্টি হয় সেই ইতিবাচক দিকটিই লেখক তুলে ধরেছেন। গল্পকার তার গল্পগ্রন্থটি শেষ করেছেন মুক্তিযুক্তভিত্তিক একটি চমৎকার গল্পের মাধ্যমে। একজন মুক্তিযোদ্ধার চাওয়া-পাওয়া, মনের সুপ্ত ইচ্ছাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এ গল্পে। এদেশের মানুষের হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘ্রাণ যে চিরন্তন তারই উদাহরণ গল্পটি। গল্পকার সোহেল নওরোজ তার দক্ষতা আর বুদ্ধীদিপ্ততার যথাযথ প্রয়োগ ঘটিয়েছেন ‘প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি’ গল্পগ্রন্থে। বইটি প্রকাশ করেছে দেশ পাবলিকেশন্স। প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। ৮০ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য ১৫০ টাকা। বইটিতে সময় ও জীবনকে ধারণ করা তরতাজা গল্পের আলামত পাবেন পাঠক, তৃপ্তি সহকারে পড়বেন -এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
Was this review helpful to you?
or
❑ প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি : জীবনের নানামুখী রসায়নের চিত্রায়ন ❑ - এইচ এম সিরাজ ।। টিভি-সিরিয়াল ও ফেসবুক মিডিয়ার আসক্তিদিনেও অফুরান তৃপ্তি দিয়ে পাঠককে গল্পপ্রেমিক করে তোলার মতো একটি বই- ‘প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি’। বইয়ে বহুমুখিতা, দূরদৃষ্টি ও জীবনের নানামুখী রসায়নের চিত্রায়ন হয়েছে। আমাদের সংস্কৃতির যেখানে ঘাটে ঘাটে নোংরামির অপসংস্কৃতি বিরাজমান সেখানে গল্পকার সোহেল নওরোজ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন পরিচ্ছন্ন ও রুচিশীল শিল্পমননের। তিনি চিন্তাচেতনার গভীরতায় অল্পকথার গল্পের মাধ্যমে দেখিয়েছেন সাবলীল, প্রাঞ্জল ও রুচিশীলতায়ও পাঠককে সমাজের বিচিত্র স্বাদ দেয়া সম্ভব। ‘প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি’ সময়ের চাহিদা পূরণে পাঠমুগ্ধগল্পের গল্পকার সোহেল নওরোজ’র তৃতীয় গল্পগ্রন্থ। যেখানে গল্পের ভাঁজে ভাঁজে এক অলৌকিক আবেশ শরীর খুলে দেয়। পাঠক সেই আবেশীয় মোহনীয়তায় লেখকের গল্পদেশে হারিয়ে যায়- খুবই অল্প সময়ে। এবারের আকর্ষণ চৌদ্দটি পাঠবিমুগ্ধ গল্প। এ যেন গল্প নয়, দৈনন্দিন জীবনের নানামুখী চিত্র। সমাজবিশ্লেষণী অমায়িক চিত্রায়নে লেখকের প্রখর চিন্তাশক্তির বহি:প্রকাশ ঘটে রোদচশমা গল্পে। প্রতিদিন হরেক রকমের অস্বাভাবিক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে সমাজের অলিতে-গলিতে। কেউ সবকিছু আবেশহীনভাবে দেখে যায়, আবার কেউ আবেগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয় রোদচশমা। মানবীয় এক সমীকরণের কারিশম্যাটিক সম্মিলন ঘটিয়েছেন লেখক তার ‘রোদচশা’ গল্পে। লেখকের ক্ষুরধার লিখনির মাধ্যমে এই গল্পগ্রন্থে সন্নিবেশিত হয়েছে দুই বন্ধুর প্রেম বিষয়ক এক চমৎকার বাজি ধরার কাহিনী- ‘বাজি’। যা থেকে পাঠক এক ভিন্ন স্বাদ পায়। ‘হিডেন ফোল্ডার’ - হৃদয়ের গুপ্তধন উন্মোচনের এক অনন্য গল্প। লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে নায়কের শহরে গমন এবং সেখানে তার হৃদয়ে প্রথম বসন্ত নড়ে ওঠা তারপরে পরিবর্তন। নায়কের সাংসারিক জীবনে পদার্পণ এবং সেখানে লেখক-জীবনের আরেক দারুণ রসায়ন পাঠককে উপহার দেন গল্পকার। ভালোবাসার টক-মিষ্টি-ঝালের সমাহার ঘটে ‘হিডেন ফোল্ডার’ গল্পে। আমরা এই গল্পে প্রিয়বধূর মুখে ভালোবাসার অনন্য এক ডায়ালগও শুনতে পাই- ‘শরীরের কী হাল করেছ? ঘরবাড়িরই বা কী দশা! খাওয়া-দাওয়া একেবারেই করোনি মনে হচ্ছে।’ ফিরে এসে কেউ যদি এমন মমতামাখা কথার মালা উপহার দেয় তবে ঘরে স্বর্গ আসতে কতক্ষণ লাগে? ‘চুপ’ গল্পে দাপ্তরিক তোষামোদের পাশাপাশি স্বচ্ছ হৃদয়ের এক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দৃশ্যায়ন করেছেন গল্পকার। বস মানেই যে সবাই ফালতু তোষামোদে গলে যান না, তা এই সুন্দর অর্ধ-রম্য গল্পে আমরা দেখতে পাই। ‘খুন হওয়া ছেলেটির মনচিত্র’ গল্পে সময়ের কাছে করা অনেক প্রশ্নের জবাবই আমরা পাই না। এমনই এক উত্তরহীন প্রশ্নের বর্তমান সমাজের এক নির্মম ছবি এঁকেছেন গল্পকার। স্বপনের খুন হওয়ার ছবি আঁকতে আঁকতে রাহাত নিজেই হারিয়ে যায় সমাজের প্রশ্নহীন ঘটনার অন্তরালে। পৃথিবীতে ভালোবাসার ব্যানারে যা হয় তার সবই ভালোবাসা নয়। কারো ভালোবাসায় মমতা জড়িয়ে থাকে আবার কারো কাছে সাময়িক আনন্দ-উপভোগের নামই ভালোবাসা। হৃদ্যতার বাইরেও যে পৃথিবীতে বহু ঘনিষ্টতা ঘটে থাকে লেখক তা দেখিয়েছেন- ‘হয়তো হৃদয় ঘটিত নয়’ গল্পের মাধ্যমে। ‘কথা রাখার গল্প, কথা না রাখার কালে’ জীবনের ত্রিমুখী ঘটনার এক চাঞ্চল্যকর গল্পপ্লট। পাঠককে গল্পের উপস্থাপনা বেশ টানে। সময়ের প্রয়োজনে হাতে আসা মোবাইল ফোনের ব্যবসা, বশিরের তাইজেল হয়ে ওঠা, আর্জিনার ফাঁদে রমিজের আটকে যাওয়া, কলিমুদ্দিনের অপূর্ণ-প্রেম কাহিনী উঠে আসে এই গল্পে। আমরা দেখতে পাই উদার দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে সমাজে কারো কারো স্বপ্নীল জীবন কীভাবে থমকে দাঁড়ায়। আক্ষেপে ভরা এক বিস্ময়কর জীবনকেন্দ্রিক গল্প- ‘প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি’। কিছু জীবনে প্রেমের আলামত না থাকলেও অনেককেই জীবনে অনেক খেসারত দিতে হয়। লেখক বিজ্ঞতার সঙ্গে এই চিত্রই তুলে ধরেছেন। রমিজ বিশ্বাস ওরফে রবি ভাই এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র। তার আদালতে প্রেম ব্যতীত অন্য সব অন্যায়ের বিচার করা হয়। পাঠকের জন্য যথেষ্ট আকর্ষণীয় এই কেন্দ্রীয় গল্পটি। তনু-হত্যার সাড়া জাগানো অমিমাংসিত ঘটনার এক কাল্পনিক ফয়সালার গল্প- ‘তনু ফিরে আসার পর’। সমাজের সব ঘৃণিত প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি যেন এই প্রতীকী পরাবাস্তব গল্প। এই গল্পে সমাজের কালো থাবায় ঘটনা ঘটার পরে আমরা অপরাধীকে চিনতে না পারলেও ভিকটিমের আত্মা ঠিকই চিনতে পারে। আমরা তাদের চিহ্নিত করে বিচার করতে ব্যর্থ হলেও বিদেহী আত্মা তাদের মুখে ঘৃণার থুথু ফেলে দিতে পারে, লেখক বলিষ্ঠ ভাষায় তা-ই প্রকাশ করেছেন। রোগ সারার পরে যেমন ওষুধ বিয়োগ করতে হয় তেমনি কি মন-খারাপ ভালো হওয়ার পরেও কারো সঙ্গ ত্যাগ করতে হয়? কথায় বলে- প্রয়োজন আইন মানে না। এমনই এক রসায়নের অম্লমধুর গল্পের প্লট ‘শেষ যখন এ শহরে জোছনা নেমেছিল’। জোছনাস্নাত রাতে গল্পের নায়ক-নায়িকা পাঠককে আমন্ত্রণ জানায় তাদের রসায়নের শেষ দৃশ্য দেখার জন্য। ভ্রমনে চিত্তবিকাশ আর অজানাকে জানা হয় ঘনিষ্টভাবে। কোথাও যাওয়ার পথে কিছু স্মৃতি হয়ে ওঠে হৃদ্য। লেখক ভারত ভ্রমনে গিয়ে দু-রকমের মধুময় স্মৃতির প্রেমে পড়ে যান। তার জীবনে পাঠককে মুগ্ধ করার মতো দুটি অনুপম ঘটনা ঘটে। সেই মুগ্ধকর ভ্রমণবৃত্তান্তই গল্পকার পাঠকের সামনে যত্ন সহকারে প্রকাশ করেছেন- ‘আসা-যাওয়ার গান’ নামক গল্পে। ‘পোর্ট্রেট’ এক নবীন লেখকের লেখক-জীবনের বিড়ম্বনা ও বিস্ময়ের গল্প। এখানে গল্পকার সুন্দরভাবে একজন নবীন লেখকের বইমেলায় বই প্রকাশের ঝক্কিঝামেলা ও বইবিক্রির ছবি এঁকেছেন। তুলে ধরেছেন দক্ষতার সাথে নায়কের জীবনে ঘটে যাওয়া শেষ বিস্ময়কর দৃশ্য যা পাঠককে যথেষ্ট পরিমাণে বিমুগ্ধ করে। ‘একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে’ একটি মন পড়ার গল্প। বই পড়া সহজ কিন্তু জগতে সব থেকে কঠিন কারো মন পড়া। রোদেলা একটি মনের পাঠক হয়ে পড়ে নেয় তার জগৎ। এমনি একজন মনপাঠকের দেখা কে না চায়! গল্পের মাঝে এক মধুর রসায়নের স্বাদ রয়েছে পাঠকের জন্য। ‘বিজ্ঞাপন বিরতি শেষে’ নাড়ীর টানের এক চিরন্তন গল্প। সত্যিকার অর্থে যারা মানুষ হতে চায়- জন্মভূমি তাদেরই টানে। এই গল্পে দেশপ্রেমিক পিতার করুণ আকুতি পুত্রকে টেনে আনে আপন ভিটায়। নাড়ীর টানের কাছে আয়েশি জীবন হার মেনে যায়। দেশ জয় করা পিতা জীবনের শেষ প্রহরেও বিদেশ বিভূঁইয়ে পুত্রের মন জয় করে নেয়। বইয়ের শেষাংশে পাঠককে মুগ্ধতা দানের সার্থকতা ফুটে ওঠে লেখকের এই গল্পে। সামাজিক পরিবেশের নানামুখী চিত্রায়নের মাধ্যমে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন আমাদের এই প্রতিভাবান গল্পকার। তার দীপ্ত লেখক-প্রতিভা অপসংস্কৃতির অন্ধকার কাটাবে সন্দেহ নেই। সমাজের রোগ-ব্যাধি সারাতে দক্ষ হতে হলে একজন লেখকের ভেতর-বাহির পরিচ্ছন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। যা লেখকের রয়েছে বলে বিশ্বাস করি। ‘প্রেমের আলামত পাওয়া যায়নি’ বইটি যে-কেউ পড়লেই বুঝতে পারবেন- বইয়ের গল্পগুলো স্বল্প পরিসরে কীভাবে আপনাকে তৃপ্তি দিয়ে যায়। পাঠকের কাছে রাখার মতো এ বইটি প্রকাশ করেছে দেশ পাবলিকেন্স। প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ।