User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
পাপড়িতে মাখামাখি বিকেলের রোদ’ : কবি এবিএম সোহেল রশিদের নান্দনিক কাব্য ************************************************************************************* আবুল কাইয়ুম ------------------- ‘পাপড়িতে মাখামাখি বিকেলের রোদ’ কবি এবিএম সোহেল রশিদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। অমর একুশে বইমেলা, ২০১৭ উপলক্ষে গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে ঢাকার বিশিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান নন্দিতা প্রকাশ। ১৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণকারী এই কবি একটি অত্যুজ্জল পারিবারিক ও সাংস্কৃতিক পরিবারের সন্তান। তাঁর বাবা শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং মা একজন কারুশিল্পী। কবি প্রায় তিন দশক ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছেন। একজন সাহিত্য সংগঠক হিসেবে নবীন কবি-সাহিত্যিকদের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি যথেষ্ট অবদান রেখেছেন। তিনি অনুশীলন সাহিত্য পরিষদের সভাপতি। শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনে এবিএম সোহেল রশিদ একটি পরিচিত নাম। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এই কবি টেলিভিশন, মঞ্চ ও চলচ্চিত্রের অভিনেতা, গীতিকার, স্ক্রিপ্ট ও ডকুমেন্টারি লেখক, অনুষ্ঠান আয়োজক ও উপস্থাপক হিসেবে কাজ করে থাকেন। ‘পাপড়িতে মাখামাখি বিকেলের রোদ’ কাব্যে কবির আশিটি কবিতা স্থান পেয়েছে। বিশিষ্ট লেখক ও প্রকাশক বিভি রঞ্জন গ্রন্থটির ভূমিকায় অল্প কথায় এ কাব্যে উপস্থাপিত যে ইতিবাচক দিকের কথা উল্লেখ করেছেন তা হলো- “সম্পর্কের টানাপোড়েনের পাশাপাশি মানবতা, দেশপ্রেম ও শ্রেণিসংঘাত”। তিনি আরো বলেছেন, “মধ্যবিত্তের টানাপোড়েনে ঢাকা শহরের নাগরিক বলয়ে বেড়ে ওঠার কারণেই তাঁর লেখনীতে নগরযন্ত্রণার গৌরব-সৌকর্যের পাশাপাশি প্রেম-বিচ্ছেদ-বিরহ এসেছে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে। মৃত্তিকাও বাদ যায়নি। লেখকের দৃষ্টির সীমানায় সময় নদীর স্রোতে বিরহও রঙ বদলেছে বার বার। দুঃখ-মেঘে জমানো খুনসুটি ও কষ্টসমুদ্রের নানান অনুষঙ্গ কাব্যরসের বিচ্ছুরণে এবিএম সোহেল রশিদ শৈল্পিক উচ্চারণের সাহস দেখিয়েছেন।” কাব্যটির বিষয়সম্ভার সম্পর্কে এই মূল্যায়নের পর আর কিছু বলার থাকেনা। আমি কেবল কবির কাব্যশৈলীর দিকটি নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করবো। কাব্যটির শৈলীগত উজ্জ্বল দিকটি হচ্ছে এর অনাস্বাদিতপূর্ব চিত্রময়তা। চিত্রকল্প ছাড়া তাঁর কবিতার স্তবক নেই বললেই চলে, এমনকি পংক্তিও তেমনটা নেই। চিত্রকল্পই যে কবিতা এবং সুচারু চিত্রকল্পের ব্যাপক ব্যবহার কবিতাকে কী মাত্রায় ভাবসম্পদে ধনী করে তুলতে পারে তা তাঁর কবিতাগুলো পাঠ করলেই বোঝা যাবে। জীবন, নিসর্গ, স্বদেশ প্রভৃতি ক্ষেত্রের অসংখ্য অনুষঙ্গ সাজিয়ে তিনি এই কাব্যটিতে নানা হৃদয়জ ছবি এঁকেছেন। এসবের বর্ণনা দিতে গেলে পৃথক একটি গ্রন্থ হয়ে যাবে। চিত্রকল্পগুলো কেবল কবির হৃদয়ে লালিত আবেগগুলোরই প্রতিচ্ছবি নয়, তাঁর তীক্ষ্ন ধী-শক্তিরও পরিচয়বহ। তাঁর চিত্রকল্প গঠনে উপমা-উৎপ্রেক্ষা বা কোন অলঙ্কারের বাহুল্য নেই, শব্দ-বিশেষণের গাঢ়বদ্ধ বুননে একটি স্বতন্ত্র শৈলীতে হৃদয়ের ছবিগুলো একেবারে কবির নিজস্ব হয়ে উঠেছে। তাঁর চিত্রকল্পসম্ভার হতে অল্প কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো- ১. আবেগের ছেঁড়া কাঁথায় লুকায় হারানো প্রেমগুচ্ছ/ বোধের দেয়ালে স্মৃতির পেরেকে নিয়তির প্রলয় ২. করতলের বেহিসেবী অনুরাগে লজ্জায় লাল জামরুল ৩. বালকের বুক পকেটে একমুঠো রোদ্দুর ৪. চিত্রকল্পে অচেনা আত্মার নির্দয় চপেটাঘাত ৫. প্রত্যুষের রোদে নোয়ানো মাথায় উৎকণ্ঠার দণ্ড ৬. বুকের পাটাতনে ঝরে ছোট ছোট ব্যথার ফুল ৭. শঙ্খচিলের ঠোঁটে বুকের উঠোনে কষ্ট-মুক্তির আরাধনা তাঁর কবিতার ভাষা সমৃদ্ধ। শব্দ-বিশেষণ প্রয়োগে তিনি যথেষ্ট মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। কখনো গুণবাচক বিশেষ্যগুলোতেও স্বকীয় শৈলীশক্তির দ্বারা ব্যক্তি বা বস্তুর চরিত্র আরোপ করে বাণীবন্ধ গড়েছেন, কখনো বিশেষণের ব্যতিক্রমী প্রয়োগে অর্থ বা ভাবের ক্ষেত্রে নান্দনিক বৈশিষ্ট্য আরোপ করেছেন, কখনো বা একাধিক শব্দকে জুড়ে দিয়ে চিত্রল যুগ্মশব্দ গড়েছেন। চিত্রকল্প গড়ার তাড়না থেকে এমন একটি কাব্যশৈলী গড়তে চেয়েছেন বলেই হয়তো তিনি রীতিসিদ্ধ ছন্দ এড়িয়ে গেছেন এবং তথাকথিত কাব্যোপযোগী শব্দমালাকে আমল দেননি। এটাই স্বাভাবিক যে, একজন আধুনিক কবি সমগ্র বাংলাভাষার শব্দাবলীকেই তাঁর কাব্যভাষার অন্তর্ভুক্ত করবেন এবং চিত্রকল্পকেই প্রাধান্য দেবেন। অবশ্য ব্যতিক্রমী চিত্রকল্প বা গভীর ভাবার্থমূলক বাণীবন্ধ নির্মাণে প্রয়াসী হয়েও অনেক কবি আবার গদ্যছন্দপ্রবাহের দিকে নজর দেন। কিন্তু রচনাশৈলী যার যার নিজস্ব, সর্বদা রীতিসিদ্ধ ছন্দ ও স্বচ্ছন্দ প্রবহমাণতা থাকতে হবে এমন কথা নেই। তবে তিনি অনেক কবিতায় অন্ত্যমিল প্রয়োগ করেছেন। পংক্তির অভ্যন্তরে পর্ববিন্যাস না থাকলেও টানা পাঠ বা আবৃত্তিতে কবির একটি আপন ছন্দের প্রকাশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাঁর অধিকাংশ কবিতার পংক্তিগুলোর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অপ্রবহমানতা; অর্থাৎ তাঁর একটি পংক্তিতে একটি চিত্রকল্প বা পূর্ণ বক্তব্য পরিদৃষ্ট হয় এবং এমনি সব পংক্তি একের পর এক সাজিয়ে সুচারুভাবে বিন্যাসের ফলে সবগুলো পংক্তি নিয়ে একটি সমন্বিত ভাব গড়ে ওঠে। আঙ্গিক গঠনে এসব বৈশিষ্ট্য আরোপের পরও কবিতার সেীন্দর্য ও মূল বক্তব্য অক্ষুন্ন থাকে। এর একটি দৃষ্টান্ত নিম্নে তুলে ধরা হলো- স্পর্শসুখ তালিকায় নেই কোন জলপ্রপাত দূরদর্শনের কাচ ফ্রেমে রেখেছি দুরন্ত স্রোত নৌ বিলাসে ছোটে রেইনকোটে বন্দি সংঘাত নদীর চোখে মওজুদ এখন ষোড়শী রোদ অনুভূতির জলকণায় রামধনুর বিমূর্ত হাসি জল পতনে নদীর খোলা চুলে অশ্ব খুরের প্রতিচ্ছবি বজ্র দেবতা হিনোর কথায় ঝাঁপ দিল কুয়াশা দাসী অন্য পিঠে হিনোর আত্মাহূতিতে কিশোরীর জলছবি। (পুরুষ বৃক্ষে সানাই বাজাও) এই প্রক্রিয়াতে লেখা কবিতাগুলো চিত্রকল্পঘন এবং এসবের বেলায় প্রতিটি পংক্তি স্বতন্ত্রভাবে ভাবার্থের গভীরতায় অধিকতর ঋদ্ধ। তাঁর প্রবহমান ধারার কবিতাগুলো চিত্রল, নান্দনিক এবং সহজবোধ্য। সবশেষে বলতেই হয়, বাঙালি সমাজকে আষ্টেপৃষ্টে আঁকড়ে ধরা অপসংস্কৃতি, অপরাজনীতি ও ভিনদেশী অপসভ্যতা থেকে রক্ষার মানসিকতায় কবি তাঁর দৃপ্ত লেখনী ধারণ করেছেন। জাতি ও সংস্কৃতির হারানো ঐতিহ্যকে ফিরে পাবার জন্য তাঁর অন্তরের যত আকৃতি কাব্যিক ভাষায় উপস্থাপিত হয়েছে। এই দেশ ও এই দেশের মানুষ তাঁর মননে যে ইতিবাচক চেতনার সঞ্চার করেছে তা তুলনারহিত। তাই তো, ‘জাগো বাহে কোনঠে সবাই’ শীর্ষক কবিতায় যেমন দেখি, তিনি এই দুরবস্থা থেকে উ্ত্তরণের লক্ষ্যে নির্লিপ্ত জনগণকে জাগ্রত করার জন্য একজন নূরুলদিনের জন্ম প্রত্যাশা করেন। কবির এই স্বপ্ন সফল হোক। আমি গ্রন্থটির ব্যাপক প্রচার ও পাঠ আশা করি। (কাব্যটি একুশে বইমেলা, ২০১৭ উপলক্ষে বিভি রঞ্জন, নন্দিতা প্রকাশ, বিচিত্রা বই মার্কেট (৩য় তলা), ৩৬, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০ কর্তৃক প্রকাশিত এবং নন্দিতা প্রিন্টার্স, ঢাকা কর্তৃক মুদ্রিত। এর দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী অনুপম কর। কাগজ, বাঁধাই ও ছাপা উন্নত মানের। ছয় ফর্মার এই গ্রন্থের মূল্য ২০০ টাকা।)