User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
প্রথাগত লেখার বাইরে অসম্ভব পাওয়ারফুল একজন গল্পকার বলা যায় প্রতিটি গল্প আপনার ভালো লাগবে যানা পড়েন নি তারা মিস করেছেন
Was this review helpful to you?
or
‘লাইফ ইজ ফুল অব কমপ্রোমাইজেস’। যে গল্পের শুরুতেই আপসের কথা চলে আসে, সে গল্পের লেখক যে জীবনকে আপস হিসেবেই দেখেন তাতে কোনো সন্দেহ থাকে না। শহুরে ক্লান্তি ও গ্লানিতে ভাসতে থাকা বন্ধুরা মাঝে মাঝে একত্রে আড্ডা দেয়। সে আড্ডায় আবুল বাশার বলা শুরু করে তার জীবনের কোনো এককালে ঘটে যাওয়া ঘটনা। যে ঘটনায় উঠে আসে ওপারের সঙ্গে এপারের মানুষের সম্পর্ক। যে সম্পর্কটাই অপরাধের। ভারতীয় বর্ডার ঘেষা গ্রামের মানুষের পেশাই স্মাগলিং। সভ্য বন্ধুদের সামনে নতুন পরিচয়ে নিজেকে পরিচয় করায় বাশার। সেখানেই হতাশার গল্প শেষ নয়। রানি নামে এক হিন্দু মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার গল্পও উঠে আসে। যে সম্পর্কে প্রেম কিংবা যৌনতার আকর্ষণ বুঝে ওঠার আগেই আসবে বিএসএফ। জীবন ও প্রেমের মাঝকানে প্রেমকে ত্যাগ করে বাশার পালিয়ে আসে সেই মেয়েটিকে একা ফেলে। হয়ত গল্পটি সেখানেই শেষ। কিংবা শুরুও হয়নি। বন্ধুদের আড্ডায় নীরবতায় বাশার কাঁদে। যেখানে একদিন সে কম্প্রমাইজ করেছিল। জীবনের সঙ্গে প্রেমের আপস হয়েছিল। যে আপসে আছে ব্যথা কিংবা বেদনা অথবা অপরাধবোধ। যা আজও বাশার বয়ে বেড়ায়। এমনই সব আপসের গল্প উঠে এসেছে ফাহমিদুল হক রচিত ‘শিপ্রার শহরে কয়েকজন এজেন্ট’ গল্প গ্রন্থে। যে গ্রন্থে লেখক বলতে চেয়েছেন, জীবনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কী করে সম্পর্কগুলো আপস করে চলে। কখনো-কখনো সমাজ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে আপস। প্রথম গল্প ‘শিপ্রার শহরে কয়েকজন এজেন্ট’। নগরের হতাশাগ্রস্থ জীবন থেকে বের হয়ে বন্ধুরা রওনা দেয় প্রকৃতির কোলের দিকে। বহুদিন পর নিজেদের যৌবনের সময়গুলোই আবিষ্কৃত হয়। কোনো বন্ধু রুই কাতলা খাওয়ার আশা করে; কেউ আবার মদ্য পান করতে চায়। একজন আবার চাকমা নারীর সঙ্গে শয্যায় যেতে চায়। এত সব বিনোদনের স্বপ্ন নিয়েই তাদের ভ্রমণ শুরু। তবে আড্ডা কিংবা ঘোরাঘুরির ভেতরই উঠে আসে রাজনীতি। বন্ধুদের ভেতর একজন সাংবাদিক। যিনি সন্তু লারমার সঙ্গেও দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এ গল্পে শান্তি চুক্তি নিয়ে কথাবার্তা হাজির হবে পাঠকের সামনে। কথা হবে সে এলাকায় কী করে ভূমি দখল হয়ে যাচ্ছে, নিযার্তন হচ্ছে, ধর্ষণ হচ্ছে। গল্পের মাঝামাঝি হাজির হবে শিপ্রা। শিপ্রা আদিবাসী মেয়ে। লেখকের বর্ণনা অনুযায়ী— ‘মেয়েটি একটু খাটো, কিন্তু সুশ্রী’। সেই শিপ্রার সঙ্গে তাদের আড্ডা চলতে থাকে রাঙামাটির রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে। রাঙামাটির রাজনৈতিক সংকট কাল নিয়ে আর্মিদের প্রসঙ্গ আসলে শিপ্রার সঙ্গে আলোচনা চলতে থাকে। যে আলোচনায় ছিল পরিহাস, ব্যঙ্গ, বিদ্রূূপ ও ক্ষুব্ধ হওয়ার অনুভূতি। গল্প জমতে থাকে। নিজেদের শহরে শিপ্রাদের কোনো অধিকার নেই। কোনো অংশই যেন তাদের নয়। তাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ‘আদিবাসী’ সিল দিয়ে যে রাজনীতির খেলা সেখানে চলছে তা নিয়ে শিপ্রার ঘোর আপত্তি বের হয়ে আসে। আর বন্ধুদের তা নিয়ে যুক্তিতর্কের খেলার মাঝে একসময় তারা অজান্তেই নিজেদের আবিষ্কার করে এজেন্ট হিসেবে। ঘুরতে গিয়েও মনের মধ্যে অশান্তি নিয়ে তাদের ফিরে আসার মধ্যে দিয়েই শেষ হয় গল্পটি। গল্পগ্রন্থে গ্রন্থিত হয়েছে মোট নয়টি গল্প। প্রতিটি গল্পের মধ্যে আছে জীবনের তাগিদে হারিয়ে যাওয়া মানুষের গল্প। যেমন, ‘নগরায়ণের পরে’ গল্পটিতে উঠে এসেছে কী করে নগরায়ণ গ্রামকে খেয়ে ফেলছে। ‘দূরত্ব’ গল্পে পিতার সঙ্গে সন্তানের মধুর সম্পর্কের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। লেখকের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় গল্পটিতে পাঠক ভিন্ন দুনিয়ায় নিজেকে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে বলে মনে হয়। হয়তো সন্তান তার বাবাকে আবিষ্কার করবে কিংবা বাবা হিসেবেই নিজেকে আবিষ্কার করতে পারবে পাঠক। যেখানে বিশেষ করে বাবার সঙ্গে তার মেয়ের সম্পর্কের এক অন্যরকম দূরত্বের কথাই ফাহমিদুল বলতে চেয়েছেন। বইয়ের সবশেষ গল্পে আঙ্গিকগত নিরীক্ষার স্বাক্ষর মেলে। ছোট ছোট ডায়লগে তৈরি হয়েছে ‘ভার্চুয়াল, সিক্রেট অ্যান্ড ইমোটিন’। সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে মানুষের সঙ্গে মানুষের ভার্চুয়াল সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে এমনই একটি সম্পর্কের কথা তুলে এনেছেন লেখক। যেখানে ভার্চুয়াল সম্পর্কগুলোর সংকটের গল্প বলা হয়েছে। গল্পের লাইনেই বলা হয়েছে, প্রতিটি মানুষের জীবনে সিক্রেট প্রয়োজন। যা না থাকলে মানুষ অসুখী হয়। সেই সিক্রেটের ফাঁদেই পড়ে যায় গল্পের পুরুষ চরিত্র। তাই সে জীবনে সুখে হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায় তার ভার্চুয়াল মেয়ে বন্ধুকে। সেই আমন্ত্রণে নারী তার রহস্যময়ী হাসির ইমোটিকন দেয়। গল্পটি সেখানেই শেষ হয়। ফাহমিদুল হকের প্রতিটি গল্পেই জীবন দর্শন আছে। আছে সমাজ নিয়ে তার নিজস্ব ব্যাখ্যা। ঝরঝরে ভাষায় লেখা অধিকাংশ গল্পেই নগরজীবনের ছাপ স্পষ্ট। জীবনের গ্লানি নিয়ে গল্পের প্রতিটি চরিত্র বেড়ে উঠেছে। লেখক নিজের অজান্তেই প্রতিটি চরিত্রকেই জীবনের সঙ্গে আপস করিয়েছেন। তবে একটানে পড়লে মনে হতে পারে একটি গল্প আরেকটি গল্পের এক্সটেনশান। আলাদাভাবে প্রতিটি গল্পে নতুন চরিত্র আবিষ্কৃত হয়নি। প্রতিটি গল্পে সব চরিত্র নিজের মতো খেলা করতে পারেনি। মনে হয়েছে লেখকই চরিত্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। চরিত্রগুলোকে নিজের মতো করে বেড়ে উঠতে দেওয়ার প্রবণতা কম।