User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
ররত্নগর্ভা মা আয়েশা ফয়েজ। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পর পুত্রশোকে কাতর মা আয়েশা ফয়েজ তার ছেলের স্মৃতিচারণ করেছেন এই বইটিতে। তার ছেলের সারাজীবনের অর্জন, দু:খ বেদনা, সংসারের সবার প্রতি তার দায়িত্ববোধ সব কিছুই তুলে ধরেছেন এই বইটিতে। হুমায়ুন ভক্তদের কাছে অবশ্যপাঠ্য একটি বই এটি
Was this review helpful to you?
or
খুবই ইমোশনাল ও সুন্দর একটি বই.. খুব ভালো লেগেছে পড়ে
Was this review helpful to you?
or
প্রচ্ছদ ভালো লাগলো না
Was this review helpful to you?
or
সন্তান হয়েও হুমায়ূন তাঁর মার কাছে ছিল বন্ধু, ক্ষেত্রবিশেষে অভিভাবক। লেখায় নানা ঘটনার বর্ণনায় তাই উঠে আসে। এক জায়গায় বলছেন─ “জীবনে এই প্রথমবার এবং এই শেষবার তোমার কোনো একটা মতামতে আমার কিছু বলার ছিল না। আমাদের ছোট সুখ-দুঃখের জীবনে আমার সাথে সবসময় সবকিছু নিয়ে কথা হতো। আমি সবসময় তোমার মত মেনে নিতাম, আমার এত বুদ্ধিমান একজন ছেলে, তার মতের বাইরে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।” বৃদ্ধা মা আয়েশা ফয়েজ নিজ মনে একটি ছবি এঁকে রেখেছিলেন নিজ মৃত্যুর পর তাঁর সন্তানেরা কে কি করতে পারে, হুমায়ূন কী করতে পারে এই সব নিয়ে। তিনি ধারণাই করতে পারেনি তার আদরের সন্তান, মানিক, নদীয়ার চাঁদ হুমায়ূন ফাঁকি দিয়ে তার আগে সবাইকে পর করে চলে যাবেন। সেই ছবিটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় একটি শিশুসন্তান অভিভাবকের কাছে যেমন করে আক্ষেপ করে, তিনিও মৃত সন্তান হুমায়ূনের কাছে তেমনি করে আক্ষেপ করেছেন। লেখায় ছেলে হুমায়ূনের প্রতি কয়েকটি জিজ্ঞাসা ছিল। জীবিত অবস্থায় জিজ্ঞাসা করতে পারেন নি এমন ও মৃত্যুর পর কিছু ঘটনাপ্রেক্ষিতে জন্ম নেওয়া জিজ্ঞাসা এমন। কবর দেওয়া নিয়ে মতান্তরের ঘটনায় চলে যাওয়া ছেলেকে প্রশ্ন করেছেন, “তুমি যখন জীবিত ছিলে, কিংবা যখন মারা গিয়েছ দেশের মানুষ সব সময়েই তোমাকে শ্রদ্ধা করেছেন, ভালোবেসেছে। তুমি নাকি বলেছ তুমি বুদ্ধিজীবীদের কবরস্থান পছন্দ করো না─কিন্তু তুমি নিজেই তো বুদ্ধিজীবী। তুমি নাকি বলেছ তুমি বনানী কবরস্থানও পছন্দ করো না, তুমি যেখানে যাচ্ছ সেখানে তো তুমি ইলেকশান করবে না, গানের জলসা করবে না। আর যাই হোক তোমার শেষ কথাটি তো এক রকম হবে, এটি তিন রকম হলো কেন?” “আমার এত সৌভাগ্যবান ছেলে তুমি, জীবনের শেষ সময়টিতে কেন এমন হলো? তোমার নিজের নুহাশ পল্লী ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া জায়গা ছিল, মোহাম্মদপুরে জায়গা ছিল, সেন্ট মার্টিনে বাড়ি ছিল, ধানমন্ডিতে বাসা ছিল, বসুন্ধরায় জায়গা কেনা ছিল, তাহলে তোমার ডেথ সার্টিফিকেটে কেন, তোমার নিজের কোনো একটি জায়গার নাম না লিখে ‘গুলশান’ লেখা হলো? যে নুহাশ পল্লী নিয়ে পরে এত হইচই, সেই নুহাশ পল্লী তখন কোথায় ছিল? তোমার এত কিছু ছিল কিন্তু যখন পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার সময় হলো তখন হঠাৎ করে কেন পুরোপুরি নিঃস্ব মানুষ হয়ে শূন্য হাতে বিদায় নিতে হলো?” তাঁর বড় সন্তান হুমায়ূনের অকাল প্রয়াণ তাঁর মনোজগতকে বেশ নাড়া দেয়, যার ফলস্বরূপ তার লেখায় মৃত মানুষ─ বাবা-মা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ স্বামী, মৃত তিন ভাই, হুমায়ূনের প্রথম পুত্র সন্তান রাশেদের প্রসঙ্গ এসেছে বহুবার। তাদের সাথে দেখা করার কথা, কে কি বলল, বাবাকে চেনা গেল কিনা, বাবা হুমায়ূনকে চিনতে পেরেছে কিনা, নানির সাথে দেখা হয়েছে কিনা ঘুরেফিরে এসেছে বারবার।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নাম : শেষ চিঠি। লেখকের নাম : আয়েশা ফয়েজ। প্রকাশনী : তাম্রলিপি। প্রকাশকাল : ২০১৭ ফেব্রুয়ারী। দাম : ১৬০ টাকা। প্রচ্ছদ : আহসান হাবীব "নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে রয়েছো নয়নে নয়নে" আমি যখন বইটা পড়ছিলাম বারবার আমার এই লাইন দুটো মনে হচ্ছিলো। আপনার পৃথিবীর সবথেকে প্রিয় মানুষটা আপনার কাছে নাই। আপনার তাকে বলার অনেক কথা ছিলো কিন্তু সেই কথাগুলো তার কাছে পৌঁছুনোর কোনো উপায় নাই। পরিস্থিতিটা একবার চিন্তা করে দেখুন তো কেমন লাগবে আপনার? আমি জানি অই সময়টা কেমন লাগে। আমার ভালোবাসার মানুষটার থেকেও আমাকে একটা বড় সময়ের জন্য অনেক দূরে থাকতে হয়েছিলো। যেই মানুষটার সাথে এক দুই মিনিট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে আমি পাগল হয়ে যেতাম দিনের পর দিন মাসের পর মাস সেই মানুষটার সাথে আমার যোগাযোগ নাই। আমার অনেক সুন্দর সুন্দর কিছু ডায়েরী ছিলো। একসময় সবকথা ডায়েরীতে লিখে রাখতাম। এরপর জীবন্ত এক ডায়েরী পেলাম সব কথা আমি সেখানেই জমা রাখতে শুরু করলাম। যখন আমার জীবন্ত ডায়েরীটা হারিয়ে ফেললাম। তখন আমি আবার আমার পুরোনো ডায়েরীর কাছে ফিরে গেলাম। একদিন ডায়েরীতে বিশাল বড় চিঠি লিখলাম অনেকদিন পর অনেক স্বস্তি পেলাম। মনে হলো আমি সেই মানুষটার সাথে কথা বলছি। অনেকদিন পর আমি রাতে একটু ভালোমতো ঘুমালাম। শেষ চিঠি বইটাও হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজের তার ছেলের কাছে বলতে চাওয়া কথা গুলো বলেছেন। একজন মা যিনি তার অনেক ভালোবাসার পুত্রকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলেন। প্রতিটা শব্দে ছেলে হারানোর হাহাকার খুবই করুণভাবে ফুটে উঠেছে। কতটা ভালোবাসতেন তিনি ছেলেকে। কতটা জুড়ে ছিলো উনার ছেলে উনার সেইসব ঘুড়ে ফিরে এসেছে। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু ঘিড়ে অনেক বিতর্কের অনেক প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেছে বইটিতে। হুমায়ূন আহমেদের মত সন্তান পেয়ে তিনি কতটা গর্বিত কতটা সুখী ছিলেন কতটা জুড়ে উনার সন্তান ছিলো সেইসব খুব আবেগময়ভাবে ফুটে উঠেছে। উনার লিখা প্রথম বইটি আমার বেশ পছন্দের। এই বইটিও আমার খুব ভালো লেগেছে। আর বেশকিছুদিন ধরেই বইটা পড়ার খুব আগ্রহ ছিলো। এই বইটাকে আমার পছন্দের বইগুলোর তালিকায় প্রথম দিকে রাখবো। হয়তো এই ধরনের পরিস্থিতে নিজে ছিলাম তাই এতো বেশি ছুঁয়ে গেছে আমাকে। বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের এতো সাফল্য এত বৈচিত্র্যময় চরিত্রের অধিকারী হবার পিছনে উনার বাবা মায়ের অনেক বড় অবদান আছে। এমন বাবা মা পেয়েছিলেন বলেই হয়তো তিনি এত সফল একজন মানুষ হতে পেরেছিলেন। আমাক হুমায়ূন আহমেদের বাবা খুব মুগ্ধ করছেন। সাধারণত আমাদের বাবারা আমাদের ভালো গুণ দেখলে খুশি হন। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ যাই করতো উনার বাবা খুবই মুগ্ধ হতেন। কোনো দোষ করলেও সেটা থেকে খুব সুন্দর একটা গুণ বের করে ফেলতেন। বইটি শেষ হবার পর এক ধরনের শূন্যতা কাজ করছে। কত মানুষ কত কত বছর বেঁচে থাকে। হুমায়ূন আহমেদও থাকতো। আমি উনার একজন নগন্য ভক্ত হয়েই এত কষ্ট পাই না জানি উনার মা কতটা অবর্ণনীয় কষ্ট পেয়েছেন। "যে থাকে আঁখি পল্লবে তার সাথে কেন দেখা হবে? নয়নের জলে যার বাস… সে তো রবে নয়নে নয়নে"
Was this review helpful to you?
or
প্রকাশকাল : ২০১৭ বইমেলা প্রচ্ছদ : আহসান হাবীব মূল্য : ১৬০ টাকা পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৬৬ মায়ের কাছে সন্তানের চিঠি যেমন আদরে আবদারে ভরা থাকে, সেইরকম ভাবে এই বইটি মৃত্যুর ওপারের সন্তানকে উদ্দেশ্য করে মায়ের লেখা। প্রথমে বই মেলায় গিয়ে দুই তিন পাতা উলটে জীবন যে রকম বই এর মত লেগেছিল। সেটা যে কত বড় ভুল ভাবনা, দেখা ছিল বইটা না পড়ে বুঝিনি। আসলে এই বইটা তে হুমায়ূন আহমেদ কে উদ্দেশ্য করে বলে গেছেন নিজের না বলা কথা, অনুভূতি। কত জানা অজানা কথা। আসলে এই চিঠির কাহিনী বা প্রতিক্রিয়া দেয়া আদৌ সম্ভব?? যুদ্ধে স্বামী হারানো এই নারী, বাচ্চুনী হুমায়ূন আহমেদ কে বিয়ের অনেক বছর পর পেয়েছিলেন। মা এর সাথে সম্পর্ক বেশ ভালোই ছিল তাদের। আয়েশা ফয়েজ জীবন যে রকম বই তে যে রকম স্মৃতিচারণা করে গেছেন এই বই এর লাইন এ লাইন সেরকম, আবছায়া কষ্ট। চোখে জলে ভিজে যায়। ঝাপসা হয়ে আসা চশমার গ্লাস খুলে আবার পড়ি। টিস্যু পেপার নিয়ে অনেকে পোস্ট করে বই দেখি, খারাপ না করুক, আমার একটা কথা টিস্যু ছাড়া চোখের জলে ভিজে বই পড়ে দেখুন।।। অনুভূতি অদ্ভুত হবে। এই রত্নগর্ভা মা বলেছেন কত সত্য কথা অকপটে, প্রমাণস্বরূপ বই এর শেষপাতায় দিয়ে গেছেন একটা প্রেস্ক্রিপশনের একটা কপি। নির্ভুল দলিল। নির্মম সত্য। তার প্রথম বই প্রকাশ হয় লেখার ১৫ বছর পর, আর এটি প্রায় দুই আড়াই বছর পর।লেখার পর সরাসরি বলেননি বই ছাপাতে। বড় নাতনী অপলা কে দেখে দিতে বলেছিলেন লেখা টা। লাস্ট পেজে বলা আছে, উনি চাইছেন তার বড় ছেলে এই লেখা পড়ুক। আমিও চাই মৃত্যুর ওপারে হারানো মানুষ গুলো কে চিঠি লিখতে। ভাল থাকুক এই মহিয়সী নারী। সে, তার পরিবার টিকে থাকুক অনন্তকাল।।। রকমারি লিংক : https://www.rokomari.com/book/127547/শেষ-চিঠি
Was this review helpful to you?
or
একজন মায়ের কাছে তার সন্তান কতটুকু আদরের তা কাউকে কখনও বলে বোঝানো যায় না। সেই বোঝে যে প্রচন্ড কষ্ট, ত্যাগ আর ধৈর্য্যের বিনিময়ে সন্তান তার নিজের শরীরে ধারন করে, সেই সন্তানকে পৃথিবীতে নিয়ে আসে আর লালন-পালন করে যোগ্য সন্তান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। সেই সন্তান হারা মায়ের কষ্ট কতটুকু কেউ কোনদিন বুঝতে পারে? নাকি বোঝা কোনদিন সম্ভব? একজন মাই জানে তার সন্তান হারানোর বেদনা কতটা গভীর, যন্ত্রণাদায়ক, সেই সময় কতটা নির্মম। মা-সন্তানের সম্পর্ক দুনিয়ার সবচেয়ে মধুরতম সম্পর্ক। আর সেই সন্তান যদি হয় প্রথম সন্তান তবে তার প্রতি ভালবাসাটা যেন একটু বেশিই থাকে। আমি একজন মা। তাই আমি জানি আমি সন্তানের একটুখানি কান্না, অভিমান, কষ্ট আমার জন্য কতটা যন্ত্রণাদায়ক। বর্তমান কালে আমাদের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। ছিলেন বলব না। এখনও আছেন। এখনও বইমেলায় তার বই সর্বাধিক বিক্রির তালিকায় থাকে। আমরা সবাই জানি দূরারোগ্য কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি আমাদের ফেলে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। একজন হুমায়ূন ভক্ত মাত্রই জানেন এই কষ্ট কতটা বেজেছে আমাদের বুকে। একবার ভাবুন তো মা আয়েশা ফয়েজের কেমন লেগেছে? তার জীবদ্দশায় তার সবচেয়ে প্রিয় পুত্রকে হারানোর বেদনা কতটা লেগেছিল তার বুকে আমরা কি তা সামান্যতম অনুমান করতে পারি? না পারি না। হয়ত সহানুভূতি প্রকাশ করতে পারি। তার বেশি আর কিচ্ছু না। প্রিয় পুত্র হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর শোকাহত মা আয়েশা ফয়েজ পত্রের আকারে তার অন্তরাত্মার কথাগুলো প্রকাশ করে গেছেন। স্মৃতিচারণ করেছেন, অভিযোগ করেছেন, এমনকি তাকে তার কর্মের জন্য ভৎসনাও করেছেন। এ যেন এক দুখিনী মায়ের তার সন্তানের সাথে কথোপকথন। সন্তানের মৃত্যুর পর আশেপাশের মানুষগুলোর পাল্টে যাওয়া, তাদের ব্যবহার সবকিছু একটু একটু করে বলে গেছেন তিনি তার লেখনির মাধ্যমে। সন্তানের মৃত্যুর সময় কাছে থাকতে না পারা, তার শেষ নিদ্রার স্থানটিকে নিজ হাতে স্পর্শ না করতে পারার কষ্টটা তার বুকে কতটুকু বেজেছিল আজ আমরা শুধু তা আন্দাজ করতে পারি। এত কষ্ট বুকে নিয়ে বেশিদিন শূন্য এই পৃথিবীতে থাকতে হয়নি মা আয়েশা ফয়েজের। প্রিয় পুত্রের সাথে দেখা করার মানসে তিনিও ছেড়ে গেছেন এ পৃথিবী। 2014 সালের 27 সেপ্টেম্বর এই মহীয়সী, রত্নগর্ভা নারী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_জানুয়ারি রিভিউ নংঃ৪ বইঃশেষ চিঠি লেখকঃ আয়েশা ফয়েজ ক্যাটাগরিঃ জীবনী ও স্মৃতিচারণ: বিবিধ, মূল্যঃ ১৪১ টাকা প্রকাশনীঃ তাম্রলিপি লেখক পরিচিতিঃ আয়েশা ফয়েজ ১৯৩০ সালের ২৩ মার্চ, মোহনগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। খুব শখ ছিল তার পড়াশোনা করার, ক্লাস টুতে বৃত্তিও পেয়েছিলেন। সেই সময় পড়াশোনার চল ছিল না বলে তা হয়ে ওঠেনি। বিয়ের পর লেখক স্বামীর উৎসাহে বেগম ও ডিটকেটিভ পত্রিকায় কিছু গল্প লিখেছেন। স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধে স্বামীর মৃত্যুর পর শুরু হয় তার ভয়াবহ জীবন। কঠিন সংগ্রামে তার ছয় ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছেন। তার ছেলেমেয়েরা এখনো বলে, ‘মা না থাকলে আমরা ভেসে যেতাম!' মহীয়সী এই নারী ২০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মারা যান| কাহিনী সংক্ষেপেঃ “আমার এত আদরের বাচ্চাটি আমাকে ছেড়ে তুমি কোথায় গেলে”─ লেখাটির শুরু এক দেহত্যাগী সন্তানের প্রতি মমতাময়ী মায়ের। এখানে মা আয়েশা ফয়েজ আর সন্তান স্বনামধন্য লেখক হুমায়ূন আহমেদ। একজন মায়ের ছটফটানি, অস্থিরতা, কষ্ট, দুঃখ, যন্ত্রনা, একাকীত্ব, নিঃঙ্গতা─ বিষয়গুলো লেখায় ক্রমে প্রকাশ পেয়েছে। বিষয়বস্তুতে ভাষিক অলংকার, ঘটনার প্লট বা সময়ের গতি কিছুই নেই। সন্তানের অকাল প্রস্থান যেন অবলা এক মাকে থামিয়ে দিয়েছে নিরন্তর। একজন সাদাসিধা মানুষের সরল হৃদয়ের ভাবটুকু কাগজের পাতায় প্রকাশমাত্র। সন্তান হয়েও হুমায়ূন তাঁর মার কাছে ছিল বন্ধু, ক্ষেত্রবিশেষে অভিভাবক। লেখায় নানা ঘটনার বর্ণনায় তাই উঠে আসে। এক জায়গায় বলছেন─ “জীবনে এই প্রথমবার এবং এই শেষবার তোমার কোনো একটা মতামতে আমার কিছু বলার ছিল না। আমাদের ছোট সুখ-দুঃখের জীবনে আমার সাথে সবসময় সবকিছু নিয়ে কথা হতো। আমি সবসময় তোমার মত মেনে নিতাম, আমার এত বুদ্ধিমান একজন ছেলে, তার মতের বাইরে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।” বৃদ্ধা মা আয়েশা ফয়েজ নিজ মনে একটি ছবি এঁকে রেখেছিলেন নিজ মৃত্যুর পর তাঁর সন্তানেরা কে কি করতে পারে, হুমায়ূন কী করতে পারে এই সব নিয়ে। তিনি ধারণাই করতে পারেনি তার আদরের সন্তান, মানিক, নদীয়ার চাঁদ হুমায়ূন ফাঁকি দিয়ে তার আগে সবাইকে পর করে চলে যাবেন। সেই ছবিটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় একটি শিশুসন্তান অভিভাবকের কাছে যেমন করে আক্ষেপ করে, তিনিও মৃত সন্তান হুমায়ূনের কাছে তেমনি করে আক্ষেপ করেছেন। লেখায় ছেলে হুমায়ূনের প্রতি কয়েকটি জিজ্ঞাসা ছিল। জীবিত অবস্থায় জিজ্ঞাসা করতে পারেন নি এমন ও মৃত্যুর পর কিছু ঘটনাপ্রেক্ষিতে জন্ম নেওয়া জিজ্ঞাসা এমন। কবর দেওয়া নিয়ে মতান্তরের ঘটনায় চলে যাওয়া ছেলেকে প্রশ্ন করেছেন, “তুমি যখন জীবিত ছিলে, কিংবা যখন মারা গিয়েছ দেশের মানুষ সব সময়েই তোমাকে শ্রদ্ধা করেছেন, ভালোবেসেছে। তুমি নাকি বলেছ তুমি বুদ্ধিজীবীদের কবরস্থান পছন্দ করো না─কিন্তু তুমি নিজেই তো বুদ্ধিজীবী। তুমি নাকি বলেছ তুমি বনানী কবরস্থানও পছন্দ করো না, তুমি যেখানে যাচ্ছ সেখানে তো তুমি ইলেকশান করবে না, গানের জলসা করবে না। আর যাই হোক তোমার শেষ কথাটি তো এক রকম হবে, এটি তিন রকম হলো কেন?” “আমার এত সৌভাগ্যবান ছেলে তুমি, জীবনের শেষ সময়টিতে কেন এমন হলো? তোমার নিজের নুহাশ পল্লী ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া জায়গা ছিল, মোহাম্মদপুরে জায়গা ছিল, সেন্ট মার্টিনে বাড়ি ছিল, ধানমন্ডিতে বাসা ছিল, বসুন্ধরায় জায়গা কেনা ছিল, তাহলে তোমার ডেথ সার্টিফিকেটে কেন, তোমার নিজের কোনো একটি জায়গার নাম না লিখে ‘গুলশান’ লেখা হলো? যে নুহাশ পল্লী নিয়ে পরে এত হইচই, সেই নুহাশ পল্লী তখন কোথায় ছিল? তোমার এত কিছু ছিল কিন্তু যখন পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার সময় হলো তখন হঠাৎ করে কেন পুরোপুরি নিঃস্ব মানুষ হয়ে শূন্য হাতে বিদায় নিতে হলো?” 'নব্বইয়ের যে কোন একদিন। হুমায়ূন আহমেদের হাতিরপুলের ফ্ল্যাট। আর একদিন পরেই বাকের ভাইয়ের ফাঁসি। মিছিল করছে জনতা। মিছিল থেকে হুমায়ুন আহমেদের বাসায় ইট পাটকেল ছোড়া হল। স্লোগান উঠল "বাকের ভাইর ফাঁসি হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে"। পরিস্থিতি খারাপ দেখে হুমায়ুন আহমেদ বাসা ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন। যাওয়ার আগে গেলেন মা আয়েশা ফয়েজের সাথে দেখা করতে। আয়েশা ফয়েজ তার ছেলেকে বললেন- ছেলেটাকে ফাঁসি না দিলে হয়না? হুমায়ুন আহমেদ বললেন- সম্ভব না আম্মা।' শ্যুটিং শেষ। 'বাকের নামক নাটকের চরিত্রের ফাঁসিতে অভিমানি মা কয়েকদিন ছেলের সাথে কথাই বললেন না। হুমায়ুন আহমেদের মা বলে কথা। পাগল ছেলের পাগলী মা।' এমনই এক কঠোর, মমতাময়ী, রত্নগর্ভা মায়ের শেষ বই "শেষ চিঠি"। তাঁর বড় সন্তান হুমায়ূনের অকাল প্রয়াণ তাঁর মনোজগতকে বেশ নাড়া দেয়, যার ফলস্বরূপ তার লেখায় মৃত মানুষ─ বাবা-মা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ স্বামী, মৃত তিন ভাই, হুমায়ূনের প্রথম পুত্র সন্তান রাশেদের প্রসঙ্গ এসেছে বহুবার। তাদের সাথে দেখা করার কথা, কে কি বলল, বাবাকে চেনা গেল কিনা, বাবা হুমায়ূনকে চিনতে পেরেছে কিনা, নানির সাথে দেখা হয়েছে কিনা ঘুরেফিরে এসেছে বারবার। পাঠ্য প্রতিক্রিয়াঃ একজন মায়ের সন্তান বাঁচানোর আকুতি যেন নিয়তির কাছে সমর্পিত। হুমায়ূন-সৃষ্ট চরিত্র বাকের, টুনীদের যেমন হুমায়ূন-সৃষ্ট নিয়তিতেই সমর্পিত হতে হয়েছে অন্যজনদের চাওয়া ছিল গৌণ, তেমনি মা,পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, সাড়া দেশবাসী চাওয়ার পরও হুমায়ূনকে তার নিয়তির কাছে সমর্পিত হতে হয়েছে। এক অসহায় মা নিজ মনকে যেন এই বুঝিয়েই প্রবোধ দিয়েছেন বারবার।
Was this review helpful to you?
or
ছেলের প্রতি মায়ের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ অসাধারণ ভাবে বইটিতে ফুটে উঠেছে।