User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
আপেক্ষার নামই মানবজনম - কয়েকদিন ধরে একটু বিস্তৃত পরিসরে কিছু পড়তে ইচ্ছে হচ্ছিল। লম্বা সময় ধরে ডুবে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছিল কোনো অন্য জগতে। সিদ্ধান্ত নিলাম সাদাত হোসাইনের ৫২৭ পৃষ্ঠার উপন্যাস 'মানবজনম' আবার পড়বো। সম্ভবত ২০১৯ সালে বইটি প্রথম পড়ে মুগ্ধ হই, এখনো সেই মুগ্ধতা নিয়েই আবার শেষ করলাম। বইটির শেষের দিকে এসে কেমন ঘোর লেগে যায়, পাঠকের অজান্তেই গল্পের জীবনগুলো হয়েওঠে, জীবনের গল্প। নয়ন, আব্দুল ফকির, তৈয়ব উদ্দিন খাঁ, কোহিনূর, হেমা, ইস্কান্দার, মনির, পারুল, লতা সবাইকে মনে হয় এই বাস্তব জগতের কেউ। চরিত্রগুলো কাছের মানুষের মতো আসেপাশে ঘুরতে থাকে, কথা বলতে থাকে, ব্যক্ত করে যায় তাদের জীবনের প্রগাঢ় অনূভুতি আর অভিজ্ঞতার কথা। ভাবতে অবাক লাগে লেখক কত প্রবল ভাবে মানুষের অনুভূতি গুলো অনুভব করেছেন, মানুষকে পড়েছেন, ভেবেছেন মানুষে মানুষে অদ্ভুত সব সম্পর্ক নিয়ে। . গল্পটা শুরু হয় বর্ষার এক অন্ধকার রাতে, যখন আব্দুল ফকির ল্যাদল্যাদা কাঁদার মধ্যে পা ফেলে ফতেহপুর যাচ্ছেন। আব্দুল ফকির নিজে সাপের চেয়েও বিষাক্ত এক মানুষ, তিনি যাচ্ছেন তৈয়ব উদ্দিন খাঁর নাতি নয়নের বিষ নামাতে। এই তৈয়ব খাঁ একদিন আব্দুল ফকিরের বাঁ পায়ের পাঁচটা আঙ্গুল কেটে দিয়েছিলেন। অবশ্য তিনি চেয়েছিলেন আব্দুল ফকিরে মাথা কাটতে, এক বৃষ্টির রাতে তিনি আব্দুল ফকিরের মাথা কেটে বস্তায় ভরে নিয়েও এসেছিলেন কিন্তু বস্তা খুলে দেখেন এটা আব্দুল ফকিরের মাথা না! আশীতিপর বৃদ্ধ তৈয়ব উদ্দিন খাঁ, খাঁ বংশের গৌরব ফিরিয়ে এনেছেন, তাঁর ভয়ে পুরো এলাকা তটস্থ থাকে কিন্তু তিনিও মনে মনে আব্দুল ফকিরকে ভয় করেন। খবির খাঁ ও দবির খাঁ তৈয়ব খাঁর দুই ছেলে। খবির খাঁ ফতেহপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আর দবির খাঁ সংসার বিমুখ। মনির খবির খাঁ'র ছেলে, যাকে দাদা তৈয়ব খাঁ নিজ হাতে গড়ে তুলছেন বংসের বাতি হিসেবে। তৈয়ব খাঁর একমাত্র মেয়ে কোহিনূর, যে 'ভয়ঙ্কর সুন্দর', যাকে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন। সেই মেয়ে বিয়ের পরে আর একদিনও এ বাড়িতে আসেনি। কিন্তু তাঁর ছেলে নয়ন ডাক্তারি পরীক্ষা দিয়েই নানাবাড়ি এসেছে। সে গ্রামে এসেছে আসমার খুনির সাথে দেখা করতে, আসমা ঢাকায় নয়নদের বাসায় কাজ করতো। নয়নকে চমকে দিতে নয়নের নানাবাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছে হেমা, হেমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রি। এক রাতে জল-জোছনার দিকে তাকিয়ে হেমার মায়াময় স্পর্শে নয়ন হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো, হেমা কাঁদলো নিঃশব্দে।লেখক লিখলেন, "জগৎ তো এমনই, এখানে গভীরতম অনুভূতির কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, প্রকাশ করতে হয় স্পর্শে, অনুভূতিতে। নয়ন আর হেমা, পরস্পরকে সেই গভীরতম অনুভূতির কথা বলে যেতে লাগল শব্দহীন এক গভীরতম নৈঃশব্দ্যে"। . আব্দুল ফকিরের সামনে দাঁড়িয়ে নয়নের ভাবনা গুলো হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো হয়ে যাচ্ছে, দেখতে শুনতে বেশ বড়সড় রঙিন, কিন্তু ধরতে গেলে কেমন মিইয়ে যায়। এই অজপাড়াগাঁয়ে আব্দুল ফকির সহজ সাধারণ চেহারা আর সাদাসিধে পোশাকের আড়ালে একজন ভয়াবহ বিকৃত মানসিকতার মানুষ। নয়নের হঠাৎ মনে হলো, এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, এই মানবজনম, এই সকল কিছুই হারিকেনের আলোর মতো খুব সামান্যই আমরা কেবল জানি, দেখতে পাই। বাদবাকি বিশাল অংশটুকু ঢেকে থাকে ঘুটঘুটে গাঢ় অন্ধকারে। কখনো কখনো সেই অন্ধকারের আড়ালে লোকিয়ে থাকে রহস্যের বাকি অংশটুকু, যা না দেখাই ভালো। নয়ন সেই রহস্যের কিছুটা জেনে ফেলেছে, তাই তার রাতের ঘুম হয় না। ঢাকায় ফিরে নয়ন নির্ঘুম রাতের পর ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে কোহিনূরের ঘরে এসেছে, সে কোহিনূরের কোলে মাথা রেখে নিজেকে ছোট্ট শিশু ভাবছে। কোহিনূর তাকে বলছেন, "বাবা-মার কাছে সন্তান যতটা প্রিয়, সন্তানের কাছে কিন্তু তারা আবার ততটা প্রিয় না। একটু কমবেশি আছে। সন্তানের হয়তো বয়স কম হবার কারণে মনোযোগ দেয়ার আরো অনেক কিছু থাকে, কিন্তু বাবা-মায়ের মনোযোগের পুরোটাই সন্তান"। আব্দুল ফকিরের মেয়ে পারুলও তার বাবার আসল রূপ দেখে বিশ্বাস করতে পারছে না, এমন মমতাময় পিতার আড়ালে ঘাপটি মেরে আছে একজন নিষ্ঠুরতম স্বামী। তাই পারুল চায় এ ভয়াল গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যেতে, সে শহরের ছেলে বিয়ে করে সুখি হতে চায়। শেষ পর্যন্ত প্রিজন ভ্যানে করে সে শহরে যায়, তার সাথে যায় অপেক্ষা, কিন্তু সে প্রিজন ভ্যানের ফাঁক দিয়ে তার কাঙ্ক্ষিত শহর দেখতে পারে না। পারুল ভাবে তার মা নুরুন্নাহারের মৃত্যুর পর সব কিছু কত সহজে স্বাভাবিক হয়ে গেলো! সময়ের কাছে সব সমান, সময় জগতের আর সকল ক্ষতের মতোই একসময় ভুলিয়ে দেয় মৃত্যুর ক্ষতকেও। . বুড়োরা বয়সের হিসাব রাখে না। বয়সের হিসাব রাখে তরুণরা। কারণ তাদের বয়স খরচ হয়ে যাচ্ছে। বুড়োদের তো বয়স খরচ হবার কিছু নেই। তাদের বয়সের পুঁজির থলে শূন্য। তৈয়ব উদ্দিন খাঁ বুড়ো হয়েছেন, তিনি অসুস্থ, কিন্তু তিনি তা কাউকে জানতে দিতে চান না। তিনি একদিন আমোদি বেগমকে ডেকে বললেন, "তোমরা সকলে ভাবতা আমি সাহসী মানুষ। ঘটনা ঠিক না। আমি বুদ্ধিমান মানুষ। বুদ্ধিমান মানুষ সাহসী হয় না। সাহসী হয় বোকা মানুষ। বোকা মানুষ আগপাছ বিচার-বিবেচনা না কইরা লাফ দিয়া ঝাপাই পড়ে" "জীবন হইল একটা চোরপুলিশ খেলা, বুঝলা? তুমি যত যাই করো ধরা তোমারে খাইতে হইব"। এর মধ্যে একদিন তিনি আব্দুল ফকিরকে ডেকে এনে একটা থাপ্পড় দিলেন। থাপ্পড় দিয়ে বললেন, "আমি নানান স্বপ্ন দেহি আইজকাল। গত রাইতে স্বপ্ন দেখছিলাম তোমারে থাপ্পড় মারছি, এইজন্য স্বপ্নটা পূরণ করলাম"। এর কিছুদিন পর তৈয়ব খাঁ'র ডানপাশ অবশ হয়ে যায়, মুখ ডান দিকে বেঁকে যায়। তিনি আর কথা বলতে পারেন না। তাঁর চিকিৎসার জন্য ডেকে আনা হয় আব্দুল ফকিরকে, আব্দুল ফকির এসে চিকিৎসার নামে তৈয়ব খাঁর সেই থাপ্পড় তাকে ফিরিয়ে দেয়। একদিন মনির অসুস্থ তৈয়ব খাঁকে মূল ঘর থেকে বের করে দেয়, তৈয়ব খাঁ ভাবেন এটা তার পাওনা ছিলো। তিনি মনিরকে যে ভাবে তৈরি করেছেন, মনির সেরকমই আচরণ করছে। বট গাছ লাগাইলে ছায়া পাইবা, আমগাছ লাগাইলে ফল পাইবা, খাজুর গাছ আর মান্দার গাছ লাগাইলে পাইবা কাঁটা। আসলে এই জগৎ একটা চক্রের মতো, সেই চক্র ঘুরেফিরে আবার একই যায়গায় ফিরে আসে। মাঝখানে শুধুই সময়ের ব্যবধান। তৈয়ব উদ্দিন খাঁর মস্তিষ্ক সচল। তিনি সকলি দেখতে পারছেন, বুঝতে পারছেন কিন্তু কেবল কথা বলতে পারছেন না। তার সচল চেতনা যে তাকে বলছে, মরে যাও তৈয়ব উদ্দিন খাঁ, মরে যাও। যত দ্রুতসম্ভব মরে যাও। আহা, মৃত্যু, আরাধ্যতম মুক্তির মৃত্যু। সমস্যা হচ্ছে তিনি চাইলেও এখন মরতে পারবেন না। নিজেকে হনন করার ক্ষমতাটুকুও তার নেই। তার মনে হচ্ছে, মৃত্যুর মতো এমন পরম প্রার্থিত আর কিছু নেই এই মানবজন্মে।তৈয়ব খাঁর ডান হাত ইস্কান্দার, যে ছায়ার মতো লেগে থাকতো তৈয়ব খাঁর সাথে। সে এক অন্ধকার রাতে আব্দুল ফকিরের থুতনির সব দাঁড়ি, টেনে টেনে ছিড়ে ফেলে। . তিনটে মাত্র মানুষ নিয়ে হেমার পৃথিবী, অথচ তাদের কারো পৃথিবীতেই তার কোনো অস্তিত্ব নেই। হেমার বাবা-মা একই ছাদের নিচে দুটি ভিন্ন ঘরে থাকেন। হেমার জন্ম হোক তার মা সেটা চান নি। এক্সিডেন্টের পর হেমা যখন চার বছর এক মাস তেরো দিনের কোমায় চলে গেলো, তখন ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পরেও হেমার বাবা-মা পরষ্পরের কাছে আসলেন। হেমার মধ্যে একটা মা মা ভাব আছে, রাহাত মনে করে কিছু মেয়ে মা হয়েই জন্মায়। হেমা একদিন তার বাবাকে বললো, "সময়ের বিবেচনায় জীবন বড় হয় না বাবা। বড় হয় বোধের বিবেচনায়"। রাহাত রাত জেগে হেমার জন্য গান লিখে, হেমার রাত জাগে নয়নের জন্য, নয়ন রাত জাগে কার জন্য? নয়নের মা কোহিনূরও নয়নকে জন্ম দিতে চাননি। নয়নের বাবা জানেন না যে নয়ন তাঁর নিজের সন্তান না। নয়নের আসল বাবা যে, সেও জানে না যে নয়ন তার অবৈধ লিপ্সার ফল। নয়ন তার সেই বাবাকে খুন করতে চায়।নয়নের টাইফয়েড হয়, হাসপাতালে জায়নামাজ বিছিয়ে নয়নের বাবা আল্লাহর কাছে তার ছেলের সুস্থতা কামনা করেন। তিনি প্রার্থনার সময় জোরে 'আমার ছেলে' বলতে পারেন না, নয়ন নিষেধ করেছে। তাই তিনি মনে মনে বলেন, "আমার ছেলেরে তুমি সুস্থ করে দাও আল্লাহ"। নয়ন সুস্থ হয়, আব্দুল ফকির খুন হয়, কোহিনূর বাপের বাড়ি ফিরেন তৈয়ব উদ্দিন খাঁর মৃত্যুর আগেই। কোহিনূরের সাথে থাকে ইস্কান্দার, ইস্কান্দারের হাতে থাকে বন্দুক। বন্দুকের ভয়ে মনিরের লাঠিয়ালরা পালায়। গল্পটা শেষ হয় আরেক বর্ষায়, যখন নয়ন হেমার বাসার রাস্তায় এক ভ্যান কদমফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার সাথে আছে অপেক্ষা। হেমা নীল শাড়ি পরে ভ্যানের মাঝখানে বসে থাকে, নয়ন ভ্যান চালায়। নয়ন ভাবছে এটা বিভ্রম। কে জানে, হয়তো এই বিভ্রম আর অপেক্ষার নামই মানব জনম। . পাঠকরা হয়তো এখনই ঘোরের মধ্যে চলে গেছেন। ভাবছেন এতো জটিল হিসেব মিলবে কিভাবে। গল্পের শেষ দিকে সকল হিসেবই খুব সুন্দর ও স্বাভাবিক ভাবে মিলে যায়। সব কিছুই বাস্তব এবং সম্ভব মনে হয়। শুধু কাজের মেয়ে আসমার প্রতি নয়নের অতিরিক্ত টান দেখে আমার সত্যিই 'আধিখ্যেতা' মনে হয়েছে। আর না জেনে না চিনে, রাজিবের সাথে পারুলের গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া একটু অসম্ভব মনে হয়েছে। পারুলের সেই চক্রে পড়ার দরকার ছিলো না, সে তো অপরাধী না। তাছাড়া র/ড় এর ব্যবহার জনিত ভুল বানান দৃষ্টিকটু লেগেছে। . অনেকে হুমায়ূন আহমেদ ও সাদাত হোসাইনকে গুলিয়ে ফেলেন, আলাদে করতে পারেন না। হুমায়ূন আহমেদ আর সাদাত হোসাইনের মৌলিক একটা পার্থক্য হচ্ছে, হুমায়ূনের প্রায় সকল লেখায় তিনি তাঁর বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির কিন্তু সাদাত হোসাইনকে তাঁর লেখায় বা তাঁর সৃষ্ট চরিত্র খোঁজে পাওয়া যায় না। সাদাত হোসাইন তাঁর উপন্যাসে একটা সমাজকে, সমাজের মানুষকে, মানুষের সম্পর্ককে, ঠিক তাদের মতো করে তোলে ধরেন। এটাই সাদাত হোসাইনের স্বাতন্ত্র্য।
Was this review helpful to you?
or
শুধু শুধুই বইটা বড় করা । গল্পের মধ্যে নতুনত্ব কিছু নেই । বইয়ের দামটা ও বেশি অনেক।
Was this review helpful to you?
or
মানবজনম .........
Was this review helpful to you?
or
বইটার অতিরিক্ত ফিলোসোফি টাইপ কথাবার্তা এবং মাঝে মাঝে এক টাইপ কথা ঘুরেফিরে আসা বিরক্তিকর লেগেছে। হুমায়ূনীয় ছাপ বিদ্যমান। খারাপ লাগে নাই। সব মিলিয়ে মোটামুটি। আর কোহিনূর চরিত্র টা বেশ পছন্দ হয়েছে।
Was this review helpful to you?
or
Great reading experience !
Was this review helpful to you?
or
Khub chomotkar lekha. Sadat Hossain manei onnorokom valo laga. Ei boi e paap ase abar shasthi o ase. Bortomaan juger sera lekhok Sadat Hossain
Was this review helpful to you?
or
অনবদ্য রচনাশৈলী। ইহা সকল পাঠকের খাদ্য নয়, তবে যারা রচয়িতা থেকে মৌলিকত রচনায় আগ্রহী, তাদের জন্য অবশ্য পাঠ্য।
Was this review helpful to you?
or
nice
Was this review helpful to you?
or
বইটা পড়ে ভাল লেগেছে। বৃহৎ কলেবরের বই, আরেকটু যদি ছোট হতো তাহলে মন্দ হতো নাহ। যাইহোক লেখক লিখেছেন বিস্তারিত ভাবে। লেখকের জন্য অনেক শুভকামনা রইল। আশা করি আরও ভাল বই এবং ভাল মানের লেখা পাবো আমরা।
Was this review helpful to you?
or
good book
Was this review helpful to you?
or
Average
Was this review helpful to you?
or
~রিভিউ অফ ৫২৮ পেজেস লং স্টোরি আন্ডার ১০০ ওয়ার্ডস~ তৈয়ব উদ্দিন খাঁ এখনো বেঁচে আছে। ফখরুল আলম ও কোহিনূরের ছেলে নয়ন। রেণু আর আসলাম সাহেবের মেয়ে হিমাদ্রি। নয়ন, তার পিতা আব্দুল ফকির কে খুন করতে চায়। আব্দুল ফকিরের মেয়ে পারুল। আব্দুল ফকির খুন হয়েছে তার মেয়ে পারুলের হাতে। পারুলের যাবজ্জীবন জেল হয়েছে। পারুলের মেয়ের নাম অপেক্ষা। নয়ন এবং হেমার বিয়ে বাফারিং হচ্ছে। *পারুলের মেয়ে কিভাবে আসলো এইটা জানার জন্য বইটি পড়েই দেখুন। অনেক অনেক সত্য প্রকাশ আছে বইটিতে। © Sayadur
Was this review helpful to you?
or
নয়ন এতোদিন যাকে তার বাবা বলে জানতো সে আসলে তার আপন বাবা না। মায়ের ডায়েরি পড়ে জানতে পাড়ে তার আপন বাবা একজন উন্মাদ, বর্বর মানুষ। সাপের বিষ নামানোর কথা বলে গ্রামের মেয়েদের ধর্ষন করে। নয়ন আব্দুল ফকিরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য গ্রামে যান। গ্রামের পরিবেশ নয়নকে মুগ্ধ করেন। গ্রামে গিয়ে গানের আসরে হেমাকে দেখে বেশ অবাক হন। হেমা নয়নের প্রেমিকা। হেমা এই অজপাড়া গাঁয়ে কি করছে। আব্দুল ফকিরকে গ্রামের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি নয়নের নানা তৈয়ব উদ্দিন খা বেশ কয়বার খুন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। তার বিশ্বাস ফকিরের কিছু অপ্রাকৃতিক শক্তি আছে। সুধু তারই বিশ্বাস না গ্রামবাসীর বিশ্বাস। শেষ পর্যন্ত আব্দুল ফকির খুন হলো তার মেয়ের হাতে। গল্পটা বেশ শক্তিশালী ছিল কিন্তু পড়ে মনে হয়েছে লেখক ইচ্ছা করেই টেনে টেনে বড় করেছে।
Was this review helpful to you?
or
বইঃ মানবজনম লেখকঃ সাদাত হোসাইন মূল্যঃ ৫৯১ টাকা ................................................ হেমার খুব বাসায় যেতে ইচ্ছে করে। তারপর তার সেই একলার বারান্দাটায় চুপচাপ বসে থাকতে ইচ্ছে করে। সজনে গাছগুলো কি পাতা ছেড়েছে? ঝুম বৃষ্টিতে সেই পাতাগুলো এখন নিশ্চয়ই গাঢ় সবুজ হয়ে উঠেছে। হেমার বুকের ভেতরটা কেমন তড়পায়। এত ভেবেও নিজেকে কেন সে অনুভূতিহীন করতে পারে না? মানুষ এমন কেন? একটা পাতার জন্য, একটা ফুলের জন্য, এক ফোটা শিশিরের জন্য, একটা কল্পনার নদী, খানিক মেঘ, একটা পাহাড়, খানিক বৃষ্টি, খানিক স্মৃতি, খানিক স্পর্শ কিংবা ভুলে যাওয়া একটা গোটা মানুষের জন্যও কেন তার মন কেমন করে! মানুষ হয়ে জন্মানোর এই এক কষ্ট! সকলই কেমন বুকের ভেতর ডুবে ডুবে লুকিয়ে থাকে। তারপর সুযোগ পেলেই ভেসে ভেসে ওঠে। তারপর বানের জলের মতন সকল কিছু ভাসিয়ে দেয়।
Was this review helpful to you?
or
"বইটি পড়ে আমি কয়েক দিন থ মেরে ছিলাম। চিন্তা করছিলাম কতটা বাস্তব। ছেলেবেলায় সেই গ্রামীণ পরিবেশে চলে গিয়েছিলাম"- কথা গুলো যখন আমি আমার বন্ধুর কাছ থেকে শুনি তখন আমি নিজে বইটি পড়ে থ মেরে আছি। ভাবছি কবিরাজি কতটা প্রকট গ্রামে, গ্রামের ছেলে হওয়ার কারণে আমি সেটা বুঝতে পারছি। বইটিতে অনেক সুন্দর করে গ্রাম্যজীবনের কথা তুলে ধরা হয়েছে। আর মানব জীবন সত্যিই অনেক জটিল। কখন কি হয় বলা যায় না। আমরা কখনো মরতে চাই না কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের জীবনে একটা সময় আসে যখন মিত্যুটাকে চাওয়ার পরও মিত্যু আসে না। জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখা যায় শেষ জীবনে। আর যাকে ভালবাসি তাকে কি শেষ পর্যন্ত বুঝাতে পারি বা তার থেকে সবটুকু ভালবাসা পাই, আমাদের যে ভালবাসে আমরা হয়ত তাদের ইগনোর করি। জটিল এ মানবজনম.......
Was this review helpful to you?
or
সুদীর্ঘ একটা উপন্যাস। লেখক বড় পরিসরে গল্প বলতে ভালবাসেন। পাঠকও পড়তে ভালবাসেন, গল্প ছোট হোক আর বড় হোক। কিন্তু লেখকের টেনেটুনে বড় করার প্রবণতা পেয়েছি যেটা বিরক্তির মনে হয়েছে। তাছাড়া গল্পের প্লট, চরিত্রের কথোপকথন তুলনাহীন। মানবজনমকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে লেখক সক্ষম হয়েছেন বলা যায়।
Was this review helpful to you?
or
...তৈয়ব উদ্দিন খাঁ নিজের অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। এই শূন্যতাকে তিনি খুব ভয় পান। তার এই দীর্ঘ জীবনে এমন কত দৃশ্য, কত গল্প যে তিনি দেখেছেন, তার ইয়ত্তা নেই। যৌবনের ভরভরন্ত, বেপরোয়া, প্রমত্ত মানুষকেও পৌঢ়ত্বে গিয়ে ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে লুটিয়ে পড়তে দেখেছেন। সামান্য অনুগ্রহ ভিক্ষার জন্য নতজানু হতে দেখেছেন। যে বাড়ির দহলিজ ঘর জুড়ে রোজ শ'য়ে শ'য়ে মানুষের আনাগোনা হত, শালিস বিচার বসতো, সেই বাড়ির দহলিজ ঘরের ভিটায় লাউ, শিম, বড়বটির মাচা বসতে দেখেছেন। ...দেখেছেন এক আধবেলা আহারের জন্য পাগলের মত মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে সেই বাড়ির মানুষ! এই হল জীবন। মানবজীবন।... এবারের বইমেলায় প্রকাশিত সাদাত হোসাইনের একটি সমকালীন উপন্যাস। লেখকের ভাষায়, "জীবন জুড়ে যেমনি গল্প থাকে, তেমনি গল্প জুড়েও থাকে জীবন।" আর এই উপন্যাসটি সত্যিই তাই। শুরুটা হয় যখন ঢাকা থেকে ডাক্তারি পাশ করা নয়ন ফতেহপুরের একটি অজপাড়াগায়ে তার নানাবাড়িতে বেড়াতে আসে। স্থানীয় একজন ওঝার সাথে তার পরিচয় হয় যাকে সবাই আব্দুল ফকির নামেই চেনে। রহস্যময় এই ব্যক্তিকে সবাই ভয় এবং সমীহ করে চলে, এমনকি নয়নের নানা, তৈয়ব উদ্দিন খাঁ, যার এত ক্ষমতা, তিনিও কি এক বিচিত্র কারণে ভয় পান এই বাম পায়ের আঙুল কাটা আব্দুল ফকিরকে। তবে নয়নের এই গ্রামে আসার উদ্দেশ্য ভিন্ন। সে এসেছে প্রতিশোধ নিতে। কিসের প্রতিশোধ? একের পর এক রহস্য উন্মোচিত হতে তাকে একেকটি পাতা উল্টানোর সাথে সাথে, এবং একই সাথে নতুন রহস্যের ধোঁয়াশা গভীর হতে থাকে। পারুল, হেমা, লতা,নয়নের মা যাকে নিয়ে অতিপ্রাকৃতিক গল্প ছড়ানো, এবং আরও অনেক চরিত্র যা বইটি পড়ার সময় পাঠককে সম্মোহিত করে রাখতে বাধ্য। উপন্যাসের যেটা ভালো লেগেছে সেটা হচ্ছে লেখার ধরণটা। সব চরিত্রই প্রয়োজনীয়। আবার আপাতদৃষ্টিতে অবহেলায় পড়ে থাকা কোনো চরিত্রও হটাৎই প্রধান ভূমিকায় নেমে আসে, গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যায়। :) "...হয়ত বিভ্রম আর অপেক্ষার নামই মানবজনম..." #মানবজনম 3 ^_^
Was this review helpful to you?
or
মানবজনম, এই মানবজনমের নানাদিক নানা অলিগলি ভ্রমণ করতে চাইলে এই বই এর পড়ে ফেলা যায় , এই বই আপনাকে আমাকে নিয়ে যায় অনেক প্রশ্নের সম্মুখে, বারবার ঘুরে ফিরে আসে মানবজনম এর চক্রখানা , যা করবেন বা আমরা যা করি তা ফিরে ফিরে আসে আমার এবং আপনার কাছে , এই মানবজনম আমাদের দেখায় ভালোবাসার শুদ্ধতম প্রকাশ বা অপেক্ষার সেই দিন গুলো তে প্রেম, আমরা দেখি একটা চরিত্রের ভিন্ন রূপ একই সাথে সে কত ভয়ংকর আবার মমতাময় . এই মানবজনমে মৃত্যুই যেনো প্রকৃত সত্য আবার আমি আমরা আমাদের এই কর্ম নিয়েই আমাদের মানব জনম
Was this review helpful to you?
or
#বুক_রিভিউ বইয়ের নাম: মানবজনম লেখক: সাদাত হোসাইন প্রথম প্রকাশ: একুশে বইমেলা ২০১৭ পৃষ্ঠা: ৫২৮ মূল্য: ৬৯৫ কত সহজ একটা শব্দ "মানবজনম"। কিন্তু আমরা কি আদৌ জানি এই মানবজনম আসলে কি বা এর বিস্তৃতি ঠিক কতটা? এই জগৎ টা আসলে একটা চক্রের মতো। সেই চক্র ঘুরে ফিরে আবার একই জায়গায় ফিরে আসে। মাঝখানে শুধুই সময়ের ব্যবধান। সময় ছাড়া আর সকলই এক ও অভিন্ন। সময় চলে গেলেও এই জগতের গল্পেরা কোথাও চলে যায় না। তারা থেকে যায়। সকল গল্পেরা কোনো না কোনো ভাবে একই রকম থেকে যায়। জীবনের চক্রে বয়ে চলে মানুষের গল্প, তাতে কি পাপ-পুণ্যের হিসেব হয়? নাকি মানুষের করা কর্ম গুলোই ফল হিসেবে ফিরে আসে পার্থিব জীবনে? আচ্ছা ভাবুন তো, জন্মের পর থেকে যেই মানুষটাকে আপনি আপনার বাবা, মা, ভাই কিংবা বোন ভেবে এসেছেন। জীবনের এক পর্যায়ে এসে যদি আপনি জানতে পারেন, এতদিন যাকে আপনি বাবা, মা, ভাই কিংবা বোন ভেবে এসেছেন তারা আসলে আপনার কেউ নয়, রক্তের কোনো সম্পর্কই নেই এই মানুষগুলোর সাথে আপনার। কিংবা ধরুন বাবা-মায়ের সাথে রক্তের সম্পর্ক আছে, বাবা-মা দুজনের সাথেই আপনি আছেন,,, একদম একটি সুখী পরিবারের মত। অথচ আপনি জানতে পারলেন আপনি ছিলেন তাদের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। কোনো এক উদ্দেশ্য পূরণের জন্যই হয়েছিলো আপনার জন্ম। জীবনের মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে এসব সত্যগুলো জানতে পারলে কি করবেন আপনি? এসব জানার পরও স্বাভাবিক রাখতে পারবেন কি নিজেকে? আচ্ছা বাদ দিন... চলুন গল্পে ফিরে যাই। গল্পের শুরু ফতেহপুর নামক এক গ্রামে। ফতেহপুর গ্রামের চেয়ারম্যান খবির খাঁর বাবা তৈয়ব উদ্দিন খাঁ অশীতিপর বৃদ্ধ। কিন্তু অবাক ব্যাপার এই বয়সেও তৈয়ব উদ্দিন খাঁ যথেষ্ট শক্ত সমর্থ মানুষ। তিনিই মূলত ফতেহপুর গ্রামের মাথা। তৈয়ব উদ্দিন খাঁ প্রথম যৌবনে অল্প বয়সেই বিয়ে করেছিলেন। অল্প বয়সের সেই স্ত্রী পরপর দুই সন্তানের জন্ম দিয়ে গত হয়েছেন। দুই সন্তানের বড়জন ফতেহপুরের চেয়ারম্যান খবির খাঁ, আর ছোটজন বেশির ভাগ সময়েই ঘর সংসার ত্যাগ করে বাউন্ডুলে হয়ে ঘুরে বেড়ানো দবির খাঁ। প্রথম পুত্রের বয়স যখন কুড়ি তখন হঠাৎ দ্বিতীয় বিয়ে করলেন তৈয়ব উদ্দিন খাঁ। দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম আমোদি বেগম। তিনি দেখতেও ছিলেন অনিন্দ্য সুন্দরী। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হলো। অনিন্দ্য রূপবতী সেই কন্যা। সেই কন্যার নাম রাখা হলো কোহিনূর। তৈয়ব উদ্দিন খাঁ খুবই ভালোবাসতেন তার মেয়ে কোহিনূর কে। কোহিনূরের আচার-আচরণ ছিলো খুবই অদ্ভুত রকমের। আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলো কোহিনূর। কিন্তু হঠাৎ ই একদিন তৈয়ব উদ্দিন খাঁ, ঢাকা থেকে গ্রামে আসা এক অপরিচিত লোক যার নাম ফখরুল আলম তার সাথে কোহিনূরের বিয়ে দিয়ে তাকে ঐদিনই ঢাকা পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু কেন?? যে বাবা তার মেয়েকে এত ভালোবাসে সে এমন হুট করে অপরিচিত, চেনা নেই, জানা নেই এমন একজনের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে কেন দিলেন?? সেটা না হয় মানবজনম পড়ে আপনারাই জেনে নিয়েন নিজ দায়িত্বে..... তারপর হঠাৎ ই একদিন কোহিনূরের ছেলে নয়ন এসে উপস্থিত হলো ফতেহপুর গ্রামে তার নানা বাড়িতে। নয়ন সদ্য এমবিবিএস পাশ করেছে। গ্রামে আসার পর এক রাতে নয়নকে সাপে কাটে। সাপের বিষ নামানোর জন্য খবর দেয়া হয় হোসনাবাদের আব্দুল ফকিরকে। আব্দুল ফকির হলেন একজন পেশাদার ওঝা যার কাজ সাপের বিষ নামানো। কিন্তু সাপের বিষ নামানোর নামে তিনি নষ্ট করছেন একের পর এক মেয়ের জীবন। তিনি দেখতে খুবই জীর্ণ শীর্ণ, অতি সাধারণ সাধাসিধে একজন মানুষ। তবে কি এই অতি সাধারণ দেখতে চেহারার পেছনে লুকিয়ে আছে কোনো হিংস্র, জঘন্য আব্দুল ফকির? নয়নকে কি সত্যি ই সাপে কেটেছিলো? নাকি সে সাপে কাটার অভিনয় করছিলো কোনো চরম সত্যি প্রকাশের জন্য? তার কিছু দিন পরই নয়ন ঢাকা চলে গেলো। ঢাকায় নয়নদের বাসায় ফতেহপুর গ্রামেরই আসমা নামের এক মেয়ে কাজ করতো। যাকে নয়ন নিজের বোনের মত স্নেহ করতো। আসমা একবার গ্রামে এলো, গ্রাম থেকে আবার ঢাকায় ফেরার পর আসমা কেমন চুপচাপ হয়ে গেলো, তেমন একটা কথা বলতো না, লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতো। সেই সময়েই নয়ন আসমার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু একটা আবিষ্কার করলো, আসমা প্রেগনেন্ট। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব। আমসা তো অবিবাহিতা। তবে কি নয়ন বা তার বাবা ফখরুল আলম ই আসমার সাথে খারাপ কিছু করেছে? আসমা কয়দিনের ভেতরেই আত্মহত্যা করে বসলো। নয়ন আসমার আত্মহত্যার পেছনের গল্প জানতে গিয়ে মুখোমুখি হয় এক কঠিন সত্যের। তাছাড়া নয়ন তার মায়ের লেখা খাতা, ডায়েরি পড়েও জানতে পারে এমন এমন সব সত্যি যা কিনা নয়নের জীবনকেই পাল্টে দিতে পারে, এসব বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো তার। আচ্ছা নয়ন কি পারবে সেই চরম সত্যের মুখোমুখি হতে? নয়নের ভালোবাসার মানুষ হেমা। হেমা আসলাম সাহেব এবং রেণুর একমাত্র মেয়ে। আব্দুল ফকিরের স্ত্রী নুরুন্নাহার মানসিক ভারসাম্যহীন। তাকে ঘরে তালা বন্ধ করে আটকে রাখা হয়। তাদেরই মেয়ে পারুল এবং পারুলের একমাত্র বান্ধবী লতা এদের কে নিয়েই আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে গল্প। নয়ন আবারও গ্রামে এলো,,, তবে এবার আর নানা বাড়িতে গেলেন না। এবার সে সোজা আব্দুল ফকিরের বাড়িতে এসে উপস্থিত। সে মুখোমুখি হতে চায় আব্দুল ফকিরের। এদিকে গ্রামের সকলেই আব্দুল ফকিরকে ভয় পায়, সমীহ করে চলে। আব্দুল ফকিরেরর মেয়ের স্বপ্ন সে ঢাকার কোনো ছেলেকে বিয়ে করে, ঢাকায় চলে যাবে। আর তাই নয়নকে প্রথম দেখাতেই তার ভালো লেগে যায়। নয়ন ও পারুলের মাঝে কথা চলাকালীন নয়ন পারুলকে নানান কথা বলার মাঝে বলেছিলো পারুল তার বোন। কিন্তু এ কি করে সম্ভব? পারুল তো তার বাবার একমাত্র মেয়ে, তাহলে নয়ন যে বলছে পারুল নয়নের বোন? এদিকে আব্দুল ফকির মানুষ টা যেমনই হোক না কেন, সে তার মেয়ে পারুল কে ভীষণ ভালোবাসে। পারুলও তার বাবাকে ভীষণ ভালোবাসে। গ্রামের মানুষের মুখে পারুল বাবা সম্পর্কে নানান মন্দ কথা শুনে থাকে প্রায়ই। কিন্তু সে এসব কথায় কান দেয় না। কিন্তু এক সময় এক চরম সত্যের মুখোমুখি হয় পারুল। পারুলেরই সবচেয়ে কাছের বান্ধবী লতা কিনা তার বাবার লালসার শিকার হয়। এই চরম সত্যটা জানার পর কি করবে পারুল?? সে কি এই সত্য জানার পরও সবটা চুপ করে মেনে নিবে? নাকি সে এর শেষ দেখে ছাড়বে? কে জানে, এই মানবজনম আসলে কি। হয়তো বিভ্রম আর অপেক্ষার নামই মানবজনম। #পাঠ_প্রতিক্রিয়া: লেখকের লেখা পড়া এটা আমার চতুর্থ বই। অন্দরমহলের মধ্য দিয়েই লেখকের লেখার সাথে আমার পরিচয়। বইয়ের বাইন্ডিং, প্রিন্টিং, প্রচ্ছদ সবই বেশ ভালো ছিলো। তবে লেখায় বেশ কিছু জায়গায় বানানে সমস্যা ছিলো। তাছাড়া লেখক বইটিতে একই কথা / শব্দ রিপিট করেছে অনেকবার। যেটা আমার কাছে ভালো লাগেনি। বাকি সবকিছু ঠিকঠাক লেগেছে। বইটিতে অনেকগুলো চরিত্র থাকা সত্ত্বেও সবাইকে খুব সহজেই আলাদা করা এবং মনে রাখা সম্ভব হয়েছে। ভালোবাসা বস্তুটিকে লেখক খুব জটিল ভাবেই উপস্থাপন করেছেন গল্পটিতে। সবগুলো চরিত্রকেই একটা পরিণতিতে এনে দাঁড় করিয়েছেন। এত বড় বইয়ের রিভিউ এর আগে কখনো লিখিনি। তাই হয়তো ভুলত্রুটি থাকতে পারে। ভাষাগত জ্ঞানের অভাবে হয়তো তেমন গুছিয়ে লিখতে পারিনি। ভুলত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিয়ে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। #হ্যাপী_রিডিং!
Was this review helpful to you?
or
আমার কাছে, সাদাত হোসাইনের উপন্যাস মানেই ভালো লাগা। তার লেখনির মধ্যে কি যেনো একটা আছে যা আমাকে ব্যাপক ভাবে আকৃষ্ট করে.. সবচেয়ে ভালো লাগে গল্পের কথোপকথন এ ভেসে ওঠা বিভিন্ন চরিত্রের point of views. মানবজনম ও তার ব্যাতিক্রম না। বইটার cover ই যেনো পুরো গল্পটার একটা প্রতিচ্ছবি। cover এ যেমন একটা বিশাল গাছের ছবি দেয়া আছে উপন্যাসটা তেমনই একটা মুল (ফতেহপুর) থেকে শুরু হয় আর তারপর ছড়িয়ে যায় ডাল পালায় যেখানে প্রত্যেক্টা ডাল পালা ধারন করে এক একটা চরিত্র (তৈয়ব উদ্দীন খাঁ, কহিনুর, আব্দুল ফকির, পারুল, নয়ন, হেমা, রাহাদ... আরো অনেকে) একটা ডাল-পাওয়া আবার তার শাখা প্রশাখা ছড়ায় তেমনি প্রত্যেক্টা চরিত্র ছড়িয়ে যায় আর এসময় আরেকটা ডালের বা চরিত্রের ছড়ানো অংশের মধ্যে চলে যায়। কিন্তু উপরের দিকে যতোই ছড়িয়ে থাকুক, যে দিকেই যাক এই ডাল পালা নামক চরিত্রগুলো তাদের মূলের (ফতেহপুর) সাথে একটা যোগসুত্র থেকেই যায়। কারন এখান থেকেই যে সব কিছুর শুরু.. বইটির কোনো spoiler না দিয়ে যেটা বলবো, তা হলো সাদাত হোসেন এর "অন্দরমহল" উপন্যাসের মতো এখানেও একের পর এক twist ঘটে। উপন্যাসটা আমার ভালো লাগার অন্যতম কারন এটা। শেষটার দিকে আসলেই মনে হচ্ছিলো খালি খালি লাগছে সব কিছু, মনে হচ্ছিলো এ অবস্থায় যেনো শেষ না হয়। তবে শেষটা এমন ভাবে হবে আশা করি নি। ? এতো বড় একটা উপন্যাস পড়ে শেষে মনে হলো তাড়াতাড়িই শেষ হয়ে গেলো বোধ হয়।
Was this review helpful to you?
or
মানবজনম একটা চক্রের নাম। যে চক্রের মধ্যে মানুষ অবিরত ঘুরপাক খাচ্ছে। একই ঘটনাপ্রবাহ ঘুরে ঘুরে আসে। এই চক্রে প্রতিটি মানুষের ঘটনাপ্রবাহে সূক্ষ্ম মিল থাকে। কথায় আছে, প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেয়না। খুব যত্ন করে লিখে রাখে সবকিছু। সময়ের প্রয়োজনে নির্মমভাবে ফেরত দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মধ্যেও একই বিষয় দেখানোর চেষ্টা করেছে লেখক। আব্দুল ফকির নামক এক গ্রাম্য ওঝার সহজ-সরল জীবনযাপনের অন্তরালে নোংরা চরিত্রের ফল সে পেয়েছে। সাপের বিষ নামানোর নামে মেয়েদের সম্ভ্রমহানির ফল তার জীবনে ফেরত এসেছে। নয়ন আর হেমার জীবনও যেন একই সূত্রে গাঁথা। তাদের মা-বাবার পাশাপাশি থাকার পরও তাদের অবস্থান যেমন অনেক দূরে, ঠিক তেমনি তাদের জীবনেও কিঞ্চিৎ প্রতিফলন ঘটেছে। তৈয়ব উদ্দিন খা ক্ষমতার দাপটে সারাজীবন জিততে জিততে, মানুষের সাথে অন্যায় করতে করতে কখনও হেরে গিয়েছেন টের পাননি। মৃত্যুশয্যায় শায়িত হয়ে মৃত্যু কামনা করেও পাননি। কারণ জীবনের পরিণতিটা তার দেখার বাকি ছিল। অন্যায় কাজের প্রায়শ্চিত্ত তাকে ছেড়ে দেয়নি। সবমিলিয়ে আব্দুল ফকির, পারুল, নুরুন্নাহার, তাবারণ; খা পরিবারের সদস্য; ব্যাপারী পরিবারের সদস্য; নয়ন, ফখরুল আলম, কোহিনূর; হেমা, আসলাম ইসলাম, রেণু প্রভৃতি সকলের জীবনে সূক্ষ্ম মিল আছে। চক্রের মধ্যে আবদ্ধ জীবন। শুরু থেকে শেষ। শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা। চক্রাকারে ফিরে আসার অপেক্ষা। তাই অপেক্ষার নামই মানবজনম। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ সুদীর্ঘ একটা উপন্যাস। লেখক বড় পরিসরে গল্প বলতে ভালবাসেন। পাঠকও পড়তে ভালবাসেন, গল্প ছোট হোক আর বড় হোক। কিন্তু লেখকের টেনেটুনে বড় করার প্রবণতা পেয়েছি যেটা বিরক্তির মনে হয়েছে। তাছাড়া গল্পের প্লট, চরিত্রের কথোপকথন তুলনাহীন। মানবজনমকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে লেখক সক্ষম হয়েছেন বলা যায়। ..... "এই বয়সের একটা ছেলে আর মেয়ের সম্পর্কের ম্যাক্সিমাম ইনটেনসিটি ওই প্রেম অবধি। সেজন্য আমরা যখন কেউ কাউকে প্রচণ্ড রকম মিস করি, ফিল করি, কেয়ার করি, তখন খুব সহজেই ভেবেই নেই যে, উই আর ইন লাভ। এটা এত বেশি প্রচলিত এবং সাধারণ একটা ভাবনা যে এর বাইরে গিয়ে কিছু চিন্তা করতে পারি না আমরা।" . "কারো প্রতি কোনো একটা ফিলিং গ্রো করল। আমরা সাথে সাথে তড়িঘড়ি করে তার একটা শেপ দিয়ে ফেলি। ভাবার সময় নেই না। অস্থির হয়ে যায় সেটাকে ডিফাইন করতে। আর একবার ডিফাইন করে ফেলার পর ওই ভাবনা থেকে আর বের হওয়া যায় না।" . "মানুষ হুট করে তীব্র কোন কিছু নিতে পারে না। সেটি ভালো হোক কিংবা মন্দ। বরং অতি মন্দ মেনে নেওয়ার চেয়ে অতি ভালো মেনে নিতে মানুষের সমস্যা হয় বেশি।" . "ভয় সংক্রামক ব্যাধির মতো, যা একজনের কাছ থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অন্যদের ভেতর।" . "মানুষের দুঃখগুলো কী অদ্ভূত! সে তার পুরোটা জীবন জুড়েও জানে না, কার কাছে সে তার দুঃখের কথা বলবে! কার কাছে সঁপে দিবে তার বুকের গভীরে সযত্নে লুকিয়ে রাখা একান্ত অনন্ত দুঃখগাঁথা।" . "জগতের প্রতিটি মানুষই তার বুকের ভেতর একান্ত নিজস্ব কিছু কষ্ট বয়ে বেড়ায়। ভয়াবহ কষ্ট। সেই কষ্ট সে আর কারো কাছে বলতে পারে না। প্রকাশ করতে পারে না। কারো কাছেই না। কারণ সে জানে তার এই কষ্ট বুঝবার এই জগতে সে নিজে ছাড়া আর কারোরই নেই। কারোরই না। কেবল সে একা, কেবল সে নিজে একা ছাড়া কেউই সেই কষ্ট ছুঁতে পারবে না। স্পর্শ করতে পারবে না।" . "জীবনে সকলেই সহজ কাজ করনের চেষ্টা করে। কিন্তু সহজ কাজ করনে কোনো আনন্দ নাই, আনন্দ কঠিন কাজ ঠিকঠাক করনের মইধ্যে। মানুষ খুন করন কোনো কঠিন কাজ না, এইটা হইলো সহজ কাজ। কঠিন কাজ হইলো মানুষ বাঁচাই রাখন।" . "যখন খুব কাছের দুজন মানুষ পরস্পরের সাথে দেখা হবার পর অনেক্ষণ ধরে কেবল কেমন আছ, কি করছ, কি খেয়েছ, পড়াশোনা কেমন চলছে- এই ধরনের প্রশ্নোত্তর করতে থাকে, তখন ধরে নিতে হবে এরা আর কাছের মানুষ নেই। এরা এখন অনেক দূরের মানুষ। কিন্তু এরা এখনো সেই আগের মানুষের ভাবনা থেকে বের হতে পারেনি। অথবা কাছের মানুষ নেই জেনেও কাছের মানুষের ভান ধরে আছে।" . "মানুষ সারাটা জীবন ধরে নিজেকেই চিনতে পারে না। যে কাজটি সে কখনো করবে বলে ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি, কোন এক বিশেষ মুহূর্তে হয়তো সেই কাজটিও সে করে ফেলতে পারে।" . "এই জগৎ যেমন ঘৃণার জগৎ তেমনি ভালবাসারও জগৎ। কিন্তু এখানে সকল ঘৃণা এক হলেও, সকল ভালবাসা এক নয়। এখানে সম্পর্ক ও মানুষভেদে ভালবাসা আলাদা।'' . "আল্লায় কাউরে খারাপ মানুষ কইরা দুনিয়াতে পাঠায় না। মানুষ নিজে নিজে খারাপ হয়। একটা সময় আর বোঝে না, কেমনে হইলো। সেইটা থেইক্যা আর বাইরও হতে পারে না। অভ্যাস হইয়া যায়।" . 'সকল গল্পরা কোনো না কোনোভাবে একইরকম থেকে যায়। সেই তো ঘুরে ফিরে আনন্দ আর দুঃখের গল্প। ভালবাসা আর ঘৃণার গল্প। পাপ আর পূণ্যের গল্প। ঠকানো এবং ঠকে যাওয়ার গল্প। গল্পের আর চরিত্ররা কেবল সময়ভেদে বদলায়। গল্প বদলায় না।" . "জগতে আর কোনো প্রাণী তার রাগ, কষ্ট, ক্রোধ লুকিয়ে হাসতে পারে না। একমাত্র মানুষই পারে নিজের ভেতরের অনুভূতি লুকিয়ে অন্যরকম অভিনয় করে বাঁচতে।"
Was this review helpful to you?
or
#মানবজনম #লেখক: সাদাত হোসাইন #প্রকাশকাল : বইমেলা ২০১৭ #প্রকাশনী : ভাষাচিত্র #পৃষ্ঠাসংখ্যা : ৫২৮ উপন্যাসের ব্যাপ্তি যেহেতু বড় তাই খানিক টা দীর্ঘ হবে এই রিভিউ, চাইলে যেকেউ এড়াতে পারেন। উপন্যাস টা পড়ে শেষ করেছি ৫/৬ মাস হবে কিন্তু রিভিউ লেখার সাহস করে উঠতে পারিনি। কারন বহুবছর বাদে কোন লেখক আমায় টানা দু সপ্তাহের জন্য থমকে দিতে পেরেছে। আমি বেঘোর ছিলাম মানবজনমের ঘোরে। এই অনুভূতি আমার বহুবছর আগে যখন দুরবীন, পার্থিব, কাছের মানুষ উপন্যাস পড়েছিলাম তখন হয়েছিলো। আমার কেবলই মনে হয়েছে লেখক যা বলতে চেয়েছেন, যা বুঝাতে চেয়েছেন তা এতো টাই গভীরের কথা যা আমায় থামিয়ে দিয়েছে এবং এখনো লিখতে যেয়ে আমি মনে করছি এটা কোন রিভিউ পর্যায়েই পরছেনা। #গল্প_বা_চরিত্র গ্রাম আর শহরের প্রেক্ষাপট একসাথে লিখিত। নয়ন সদ্য পাশ করা এক তরুন ডাক্তার যে একটা নির্মম সত্য জানতে ফতেহপুর গ্রামে তার নানা বাড়িতে যায়। হেমা নয়ন কে বুঝতে পারা এক চমৎকার প্রেমিকা চরিত্র যার প্রেমের গভীরতা বুঝতে উপন্যাসের শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত যেতে হয়। হেমার বন্ধু রাহাতের হেমার প্রতি একতরফা ভালোবেসে কষ্ট পেয়ে যাওয়ার গল্পও এখানে উল্লেখ্য। এখানে লেখা আছে জীবনের প্রতি পরতের মায়া, স্নেহ, অবহেলা, ক্রোধ, লালসা,প্রতিশোধ, অপেক্ষা কিংবা হারিয়ে ফেলার গল্প। নয়নের নানা দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী তৈয়ব খাঁ কিংবা কুৎসিত মানসিকতার আব্দুল ফকিরের মধ্যকার বাইরে ঠান্ডা কিন্তু ভেতরে প্রচণ্ড শোধ নেয়ার মানসিকতা কিংবা নূরের আলোয় আলোকিত নয়নের মা কোহিনূরের জীবন, হেমার বাবা-মা রেনু- আসলামের মধ্যকার কথাহীন, স্পর্শহীন সংসার নামক বন্দী থাকার গল্প কিংবা জীবনের শেষ বেলায় এসে তৈয়ব খাঁ তার স্ত্রী আমোদি বেগমের প্রতি হঠাৎ ই স্বামী হিসেবে দমিয়ে রাখার ভুল বুঝতে পারার অংশ টুকু কিংবা কুৎসিত আব্দুল ফকিরের নিজের মেয়ে পারুল ছাড়া অন্য সবাই একটা মাংসের দলা বা ভোগ ছাড়া কিছুই নয় কিংবা নির্মম সত্য টা জানতে পারার পরে প্রতিশোধে উন্মুখ নয়নের মানসিক বিকারগ্রস্ততা এবং হেমার কাছের মানুষ হয়ে আগলে রাখার চেষ্টা এই সব কিছুই বিচ্ছিন্ন নয় বরং একটা মানবজনমের প্রতিটি ব্যর্থতা, গোপন কষ্ট এখানে এক এক করে লেখা। মানবজনম - এক ভাই বোনের গল্প। মানবজনম - এক প্রতাপশালী পিতা আর আদুরে কন্যার বিচ্ছেদের গল্প। মানবজনম - দুই স্বামী স্ত্রীর কথাহীন, স্পর্শ-ভালোবাসাহীন সংসারের গল্প। মানবজনম- দুই ভালোবাসাবাসি নরনারীর একে অন্যের প্রয়োজন আর আগলে রাখার গল্প। মানবজনম- এক বৃদ্ধের জীবনের অমোঘ সত্য মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা গল্প। মানবজনম - প্রতিটি চরিত্রেরই নির্দিষ্ট এক অপেক্ষার গল্প। #উপন্যাসের_উল্লেখযোগ্য_উক্তি হেমা বলল, ‘এতো সন্দেহ থাকলে কী ভালোবাসা যায়রে পাগল? ভালবাসতে হলে সবার আগে খুনী হতে হয়। সন্দেহ খুনী। নির্দয়ভাবে সন্দেহ খুন করে ফেলতে হয়। সন্দেহদের খুন না করলে ভালোবাসা যায় না রে’। রাহাত বলল, ‘আর কি কি করলে ভালোবাসা যায় না?’ হেমা বলল, ‘কষ্ট না হলে’। রাহাত বলল, ‘কষ্ট কেন হয়?’ হেমা বলল, ‘স্পর্শ করতে না জানলে’। রাহাত হঠাৎ হাত বাড়িয়ে হেমার হাত স্পর্শ করে বললো, ‘এই যে স্পর্শ করলাম। ভালোবাসা হয়ে গেলো?’ হেমা হাসলো, ‘ভালোবাসার স্পর্শ যদি এতোই সহজ হতো। তাহলে ভালোবাসার জন্য মানুষ এমন ব্যাকুল হতো না।’ ''মানুষ হয়ে জন্মানোর এই এক কষ্ট! সকলই কেমন বুকের ভেতর ডুবে ডুবে লুকিয়ে থাকে। তারপর সুযোগ পেলেই ভেসে ভেসে উঠে। তারপর বানের জলের মত সবকিছু ভাসিয়ে দেয়।" "জীবনের হিসাব বড়ই বেহিসাবি, বড়ই অদ্ভুত, এই অদ্ভুত হিসেবের খাতার আড়ালে- আবডালে রয়ে যায় অমিমাংসিত অসংখ্য গল্প। অসংখ্য অঙ্ক।সেইসব অমিমাংসিত গল্প আর অঙ্কের নামই বোধহয় মানবজনম।" "তোর জন্য কান্না পাচ্ছে খুব,তোর জন্য কান্না চেপে রাখা, আমার অশ্রু ভাসায় যদি তোকে,তাই তো এমন অশ্রু চেপে থাকা।" #আমারকথা সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য বশত লেখকের আরো উপন্যাস সংগ্রহে থাকলেও এটাই তার লেখা আমার পড়া প্রথম উপন্যাস ছিলো এবং আমার মতে উনার এই উপন্যাস কে ছাড়িয়ে যেতে হলে উনার নিজেরই নিজের লেখনী শক্তির সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে এবং সম্ভবত সেটা নাও হতে পারে। কারন সেরা সৃষ্টি সংখ্যায় অসংখ্য হয়না। #শেষভাগের_সমালোচনা অনেকেই এই উপন্যাস নিয়ে নেগেটিভ রিভিউ দিয়েছেন। আমি পড়েছিও। কেউ কেউ লিখেছেন লেখক অহেতুক টেনেছেন, আরও ১০০ পেইজ কম হলে লেখা ভালো হতো। যারা আসলেই বই পাগল তারা গঠনমূলক সমালোচনা করতেই পারেন। এতে ভুল কিছু নেই। তবে একটা সমালোচনা খারাপ বা ভুল মনে হয়েছে আমার কাছে তা হলো সাদাত হোসাইন, হুমায়ুন আহমেদের অনুকরণকারী। এটা ভুল এবং নিশ্চিত ভাবেই ভুল। আমি না পড়েই উনার লেখার ভক্ত হইনি। পড়েছি এবং পড়েই লিখছি যে উনি হুমায়ুন আহমেদ কপিকারী নন। আমার মতে একজন লেখকের লেখার সফলতার দুটা প্রধান দিক থাকে। এক. ১০/২০ চরিত্র সংখ্যা যতোই হোক প্রতিটা চরিত্রের সফল সমাপ্তি ঘটানো। দুই. পাঠক টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা। আর এই দুই দিকেই উনি লেখক হিসেবে সফল। উনার লেখা যেকোন বই পড়া শুরু করলে বোঝা যাবেনা কোন চরিত্রের কিভাবে উনি সমাপ্তি ঘটাবেন এবং এই ব্যাপারটাই টেনে নিয়ে যাবে পাঠক কে গল্পের ভেতরে। তবে হ্যা, আমি একটা ব্যাপারে সাদাত হোসাইন কে হুমায়ুন আহমেদের সাথে মেশাই। সেটা হলো হুমায়ুন আহমেদ মারা যাবার পরে আর কোন লেখক আমাদের দেশে এতো পাঠক বইমেলায় টেনে আনতে পারেন নি। যেটা হুমায়ুন আহমেদের পরে সাদাত হোসাইন পেরেছেন। প্রতিটা লেখকেরই গল্প বলার ঢং আলাদা, তাই কপিবাজ বলে পাঠক সৃষ্টির ক্ষেত্র নষ্ট করা ঠিক নয় বলে আমার মতামত। সবশেষে আমার মতে বুকের ভেতরের অলিগলি তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সত্য-মিথ্যা,কষ্ট- হাসি, লোভ-লালসা কিংবা প্রতিশোধের গল্প গুলো বের করে এনে ভাবিয়ে তোলার, থমকে যাওয়াতে পারার নামই উপন্যাস মানবজনম।
Was this review helpful to you?
or
"সাদাত হোসাইন" - নামটির সাথে পরিচয় দীর্ঘদিনের হলেও সাদাত হোসাইন এর লিখিত উপন্যাস এর সাথে পরিচয় এই প্রথম। অর্থাৎ আমার পড়া লেখক এর প্রথম বই এই "মানবজনম"। এবং নির্দ্বিধায় বলবো,লেখক তাঁর একজন পাগল পাঠক পেয়ে গেলেন। যে কিনা যেকোন উপায়ে সাদাত হোসাইন এর বই পড়ার জন্য পরবর্তীতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। লেখক এর বইয়ের সাথে পূর্বে পরিচয় না হওয়ার একটাই কারণ, বইয়ের মূল্য আকাশচুম্বী। এত অধিক মূল্যের বই সংগ্রহের সামর্থ্যের অভাবেই এতদিন পড়ার সৌভাগ্য হয়নি। "মানবজনম" বইটি আমার অনেক সাধনার ফল। আর বই পড়ার পর অধিক মূল্য সংক্রান্ত যে অভিমান ও অভিযোগ লেখক এর ওপর ছিলো তা তুলে নিলাম। এমন একটা বই পড়ার জন্য মাটির ব্যাংকে পয়সা জমানোটাও জায়েজ আছে। আমি ভাবছি এই বই এর রিভিউ কীভাবে লিখবো! বই পড়তে সময় লেগেছে ৩ দিন, আর রিভিউ লিখতে সময় নিলাম ৭ দিন। তবুও বুঝতে পারছিনা কাহিনী সংক্ষেপ কীভাবে শুরু করবো! এটাতো কোন একরেখীয় কাহিনী নয়। বৃহৎ এক গোলকের কাহিনী এটি। যে গোলক এর চারপাশ ঘিরে ঘুরছি আমরা, এই মানব সমাজ। যে বৃত্তের পরিধি পার করতে একটি মানব এর একটি জন্ম লেগে যায়! সেই মানবজনম এর কাহিনী এটা! বইয়ের কোন চরিত্র মুখ্য আর কোন চরিত্র গৌণ হিসেবে ধরবো তা আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে সম্ভব হয়নি। এখানে প্রতিটি চরিত্র এক একটা আলাদা সত্ত্বা, তাদের সবার আলাদা জীবন কাহিনী। তাদের প্রত্যেকের জন্ম একেকটা মানবজনম। এই গল্পটি সবার। একজন বৃদ্ধের, একজন বৃদ্ধার, একজন তরুণ আর তরুণীর, এক কিশোরীর কিংবা এক প্রেমিকার। একটি সন্তানের, এক বোনের বা এক ভাইয়ের। একজন মায়ের, একজন পিতার। নয়ন সদ্য এমবিবিএস পাশ করা তরুণ এক ডাক্তার। কিন্তু তার আরো অনেক পরিচয় আছে। সম্পর্কের পরিচয়, রক্তের পরিচয়। দীর্ঘদিন পর সেই সম্পর্কের টানে গ্রামে নানা বাড়িতে এসে উপস্থিত হলো সে। কিন্তু গ্রাম যেন তার রূপ তুলে ধরতে চাইলো নয়নের কাছে। সাপে কামড়ালো নয়নকে। ডাকা হলো ওঝা আব্দুল ফকিরকে। তারপর? এই ওঝার ক্ষমতা হবে কি নয়নকে বাঁচানোর? আব্দুল ফকির ফতেহপুর গ্রামের এক অবিশ্বাস্য চরিত্র, সবাই যাকে অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে মানে। পুরো গ্রাম একদিকে যেমন তাকে ভয় করে, অন্যদিকে তেমনি করে সমীহ। এ এক বিচিত্র চরিত্র। নয়নের নানা তৈয়ব উদ্দিন খাঁ। ৮০ বছর এর এক বৃদ্ধ। কিন্তু এই বৃদ্ধই হলেন খাঁ বংশের মূল শেকড়। যিনি সারাজীবন তাঁর বংশ রক্ষার জন্য, বংশকে উচ্চ শিখড়ে তুলে ধরার জন্য করেছেন অজস্র সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের সব পথ ন্যায়ের রাস্তা ছিলোনা। কিন্তু গাছকে বাঁচিয়ে রাখতে, তাকে পুষ্টি দিতে তার শেকড় যেমন নানাভাবে তার রসদ সংগ্রহ করে, তেমনি খাঁ বংশকে তুলে ধরতে এই কঠোর মানুষটিও করেছেন অনেককিছু। কিন্তু সব কঠিন পদার্থের যেমন নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক থাকে, সেরূপ এই কঠোর মানুষটির নিজেরো ছিলো এক আবেগ এর জায়গা। নাম তার কোহিনূর। ভুল সময়ে ভুল জায়গায় জন্ম নেয়া এক প্রতিভার নাম কোহিনূর, তৈয়ব উদ্দিন খাঁর একমাত্র কন্যার নাম কোহিনূর, নয়নের মা এই কোহিনূর। কিন্তু দীর্ঘ বছর যাবত জীবন তূল্য এই কন্যার সাথে তার পিতার যোজন যোজন দূরত্ব! কেন? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য পড়তে হবে পুরো এক "মানবজনম" গল্পটা হেমার। নয়নের প্রেমিকা হেমার। কিন্তু তাদের এই প্রেম আর দশটি প্রেমের মতো নয়। সম্পূর্ণ আলাদা,অসীম স্নেহময় এক প্রেম। যে প্রেমে দূরত্ব কোন বাধা দিতে পারেনি কখনোই। একবুক ভালবাসা নিয়ে হেমা অপেক্ষা করেছে নয়নের জন্য। এই গল্প এক পিতৃ স্নেহে বিগলিত কন্যা পারুলের, একতরফা ভালবেসে যাওয়া তরুণ রাহাত নামের ছেলেটির। গল্পটা কিছু নারীর, যারা সারাটা জীবন গ্লানি বয়ে বাকিদের দিয়েছে স্নেহ, মমতা,সেবা। এই গল্প কোন এক প্রতিভার, কোন এক যুবকের মানব জন্মের! বইটি পড়ার সময় আমি এটি আমার বালিশের পাশে নিয়ে ঘুমাতাম। প্রচ্ছদে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে অনুভব করতে চাইতাম মানবজনমকে। বইয়ের বাইন্ডিং, পৃষ্ঠা প্রচ্ছদ সব কিছু খুব চমৎকার। বানানে কিছু সমস্যা ছিলো,কোন কোন জায়গায় নাম উল্টাপাল্টা হয়ে এক চরিত্রের জায়গায় অন্য নাম ছাপা হয়েছে ভুলবশত। তবে বইয়ের এসব দিকে আপনার নজর আটকাবেনা। জীবনের উত্থানপতনের নানা দিক এই উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে। কখন যে কার জীবন কোন দিকে মোড় নেয়, ক্ষমতা অদলবদল হয়, কোন নিষ্ঠুর সত্যের মুখোমুখি হতে হয় তা ধারণা করা মানব জাতির পক্ষে অসম্ভব। আর এই অসম্ভবের নামই হয়তো মানবজনম! পালিত সাপ কখন যে পালকের ওপর ফণা তুলবে সেই সময় বুঝতে না পারার নাম মানবজনম। মুগ্ধ হয়ে পড়েছি পুরো বইই,প্রতিটি পৃষ্ঠা,প্রতিটি লাইন। হায়! এই মানবজনমের কত দিক আমাদের অজানা! বইটি পড়তে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে কাহিনীর ভাঁজে ভাঁজে থাকা জীবনদর্শন গুলি। মনে হয়েছে এসব আমার নিজের কথা। এত বাস্তব কথা কীভাবে লিখতে পারেন একজন লেখক! সব ধরনের সম্পর্কের রসায়ন পাঠকের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখার কৌশল
Was this review helpful to you?
or
আচ্ছা এই মানবজনম যদি সত্যি সত্যিই স্বপ্ন হয়, তখন কি এই মানবজন্মের এই এত এত মানুষ, এত এত সম্পর্ক, অনুভূতি, এদের জন্য তার খারাপ লাগবে? নিশ্চয়ই লাগবে। স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলেও তো তার রেশ থেকে যায়। মৃত্যু কি তবে এই মানবজন্মের স্বপ্নভংগ হয়ে অন্য কোনো জন্মে জেগে ওঠা?” বইটি থেকে এই লাইনগুলি না তুলে পারলাম না। মানুষের জীবনের নানাদিক এ বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে মানব জীবনে কীভাবে উত্থান পতন ঘটে, তা তুলে ধরা হয়েছে। দেখানো হয়েছে, কীভাবে সময়ের সাথে সাথে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে থাকে। এছাড়া সময়ের সাথে সাথে আধিপত্য বিস্তারের উত্থানপতনও উঠে এসেছে এ বইটিতে। এসব ব্যাপারগুলো গল্পাকারে অনেক বিশদভাবে বর্ণনার ক্ষেত্রে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন এ তরুণ লেখক। এক কথায়, মানব জীবন সংক্রান্ত বিভিন্ন দর্শনগত সত্য এ বইয়ের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে, এ কাজটি করতে গিয়ে উপন্যাসের গল্প অনর্থক দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। এতটা দীর্ঘায়িত না করলেও চলত। এছাড়া পুরো উপন্যাস জুড়েই আঞ্চলিক ভাষার আধিক্য অত্যন্ত বেশি। তবে এখানেই এ লেখকের স্বকীয়তা বলে মনে হয়েছে। এটি অনেক পাঠকের জন্য (বিশেষত যারা দীর্ঘ গল্প পছন্দ করেন না) বিরক্তিকর হতে পারে। এটুকু বাদ দিলে সর্বোপরি ভালো লেগেছে বইটি। আরশিনগর উপন্যাসের ধারার একটু ছোয়া ছিল বইতে, তবে কাহিনীর বিশালতায় মানবজনম লেখককে ছাড়িয়ে গিয়েছে। ভালো লেগেছে বইটি।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বইয়ের নামঃ মানব জনম লেখকঃ সাদাত হোসাইন প্রকাশনীঃ ভাষাচিত্র মূল্যঃ ৬৯৫ টাকা (রকমারি মূল্য-৫৯১ টাকা) মানুষের জীবনের নানাদিক এ বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে। সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে মানব জীবনে কীভাবে উত্থান পতন ঘটে, তা তুলে ধরা হয়েছে। দেখানো হয়েছে, কীভাবে সময়ের সাথে সাথে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে থাকে। এছাড়া সময়ের সাথে সাথে আধিপত্য বিস্তারের উত্থানপতনও উঠে এসেছে এ বইটিতে। এসব ব্যাপারগুলো গল্পাকারে অনেক বিশদভাবে বর্ণনার ক্ষেত্রে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন এ তরুণ লেখক। এক কথায়, মানব জীবন সংক্রান্ত বিভিন্ন দর্শনগত সত্য এ বইয়ের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে, এ কাজটি করতে গিয়ে উপন্যাসের গল্প অনর্থক দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। এতটা দীর্ঘায়িত না করলেও চলত। এছাড়া পুরো উপন্যাস জুড়েই আঞ্চলিক ভাষার আধিক্য অত্যন্ত বেশি। তবে এখানেই এ লেখকের স্বকীয়তা বলে মনে হয়েছে। এটি অনেক পাঠকের জন্য (বিশেষত যারা দীর্ঘ গল্প পছন্দ করেন না) বিরক্তিকর হতে পারে। এটুকু বাদ দিলে সর্বোপরি ভালো লেগেছে বইটি। রকমারি লিংকঃ www.rokomari.com/book/127449/
Was this review helpful to you?
or
মানবজনম-সাদাত হোসাইন-বুক মিভিউ...... আগের বইগুলো পড়ার সময়ে লেখকের উপর যে রাগ ক্ষোভ ছিল তা এই বই থেকে তুলে নিয়ে নিলাম। দীর্ঘ তিন সপ্তাহ সময় লাগিয়ে বইটি পড়েছি। কিছু কিছু অংশ পড়ে চুপ করে শুয়ে থেকেছি। ভেবেছি-যে পরে কি হতে পারে। সহজ সাধারন কপচানো উপন্যাস অনুযায়ী অনেক কিছু ভেবেছি। কিন্তু বইয়ের দীর্ঘতা-সময়ের ব্যপ্ততা তা অনুমানযোগ্য হতে দেয় নি। তাই বড় ও বেশি দামী বই লেখার জন্য লেখকের উপর যে রাগ ছিল ক্ষোভ ছিল তা তুলে নিলাম। হয়তো দুইশ পৃষ্ঠার বই হিসেবে লিখলে, কিংবা প্রতি বইমেলায় দুইতিনটা বই বের করলে আমরা খুশি হতাম-কিন্তু এই যে চরিত্রের গভীরতা, তাদের মানসিক বৃষ্টি, হাতের কদম ফুলের ছোয়া, তা কি এভাবে বুঝতে পারতাম। মনে হয় পারতাম না। সাদাত হোসাইন তার আলাদা পাঠক গোষ্ঠী সৃষ্টি করতে চলেছেন বলাই যায়। যারা প্রতিবছর তার বই পড়বার জন্য অপেক্ষা করবে। তবে মজার ব্যাপার হল-দুই তিনটা বই পড়ার পর আমার মত যারা ভাবালুতা লাইন পড়তে অপছন্দ করে, কিংবা মনটা খারাপ হয়ে যাবে ভেবে সেগুলো পড়তে চাননা, তারাও বুঝে যাবেন-আচ্ছা ঠিকাছে-এই কয় লাইন না পড়লেও চলে। তৈয়ব উদ্দিন খা, আব্দুল ফকির, নয়ন, হেমা, পারুল যেন সেই মানবমনের স্বপ্নের মত। দীর্ঘ তিন সপ্তাহের এই যাত্রায় আমারই যেন মায়া পড়ে গিয়েছিল পারুলের উপর, নয়নের উপর। সাপের মত ভয় করছিল আব্দুল ফকির কে। তবে শেষ ৫০ পৃষ্ঠা টানা শেষ না করে পারিনি। সব কিছুতো সেই চক্রই তাই আর ধরে রাখিনি। কোহিনুরকে মনে হয়েছে, আমোদি বেগমকে মনে হয়েছে-সেই বটবৃক্ষের মত-যারা সব কিছু সয়ে গেছে, দেখে গেছে-শেষে এসে ভেঙ্গে গিয়ে বটতলা ভেঙ্গে সেই হাড়ি বের করে দিয়েছে। অথচ কিনা তৈয়ব উদ্দিন খা নিজেকে বট ভেবে বসে আছেন। পারুলের প্রতি অপরিসীম মায়া জমা থাকল। তার কষ্ট বোঝার ক্ষমতা এই অবোধ পাঠকের নেই। সহজ সরল হাসিমুখের এই মেয়েটির দুঃখই শেষ পর্যন্ত মনকে বেশি ভাবিয়েছে। ভালো লেগেছে-চরিত্র গুলোকে গড়তে লেখক অনেক সময় নিয়েছেন বলে। আবার একসাথে চার পাচটি সত্ত্বার সাথে ক্রমাগত কথা বলে যাওয়ায়, একই ভাবনায় অনেকক্ষন ডুবে থাকতে হয় নি। মিলে মিলে সব শেষে এক হয়ে যায়-যদিও সারা বই জুড়ে তার একটা যোগসূত্র ছিল। আরশিনগর উপন্যাসের ধারার একটু ছোয়া ছিল বইতে, তবে কাহিনীর বিশালতায় মানবজনম লেখককে ছাড়িয়ে গিয়েছে। ভালো লেগেছে বইটি। “ আচ্ছা এই মানবজনম যদি সত্যি সত্যিই স্বপ্ন হয়, তখন কি এই মানবজন্মের এই এত এত মানুষ, এত এত সম্পর্ক, অনুভূতি, এদের জন্য তার খারাপ লাগবে? নিশ্চয়ই লাগবে। স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলেও তো তার রেশ থেকে যায়। মৃত্যু কি তবে এই মানবজন্মের স্বপ্নভংগ হয়ে অন্য কোনো জন্মে জেগে ওঠা?” বইটি থেকে এই লাইনগুলি না তুলে পারলাম না।
Was this review helpful to you?
or
অনেক নামডাক শুনে বইটি পড়া শুরু করে ছিলাম। কিন্তু আমার জীবনে পড়া বাজে লেখনির বই যে কয়টা পড়েছি এটি তাদের মাঝে শ্রেষ্ঠ। কাহিনি টেনে টেনে এত বড় করা হয়েছে। আর কাহিনিটি ঠিকযেন আগেরদিনের বাংলা সিনেমার মত। শুধুমাত্র সময়ের অপচয়। লেখকের হুমায়ন আহমেদ হওয়ার আপ্রাণ চেস্টা করে গেছেন বই জুড়ে।
Was this review helpful to you?
or
আমি বরাবরই সাদাত হোসাইন এর বই পড়তে পছন্দ করি , কারনে অকারণে এর একটা অংশ আছে যেটা আমার বেশ পছন্দ,তাই হয়তো তার বই আমার প্রিয়। কিন্তু অভিযোগ ও আছে তার উপর , সেটা সাদাত হোসাইন এর বই এর দাম অনেক বেশি!
Was this review helpful to you?
or
আজকে হাতে পেলাম। পড়ার আগেই 5* দিয়ে দিলাম। আশাকরি লেখক হতাশ করবেন না
Was this review helpful to you?
or
‘মানবজনম’ বইটি সাদাত হোসাইন এর লেখা একটি উপন্যাসের বই । সাদার হোসাইন নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । তার লেখা এই মানবজনম বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের একুশে বইমেলায় । বইটি প্রকাশিত হয় ভাষাচিত্র প্রকাশনী থেকে এবং এর প্রকাশক খন্দকার মনিরুল ইসলাম । প্রচ্ছদ করেছেন খন্দকার সোহেল । জলের আকালের মৌসুমে বৃষ্টিতে সব জলাশয়ের প্রাণীগুলোই বিপুলানন্দে ছুটাছুটি করে। শুধু যে মাছগুলো জালে আটকা পড়ে , তাদের কাছে ঐ বৃষ্টি অসহ্য লাগে। ঐ রিমঝিম বৃষ্টি, হিমেল হাওয়া কিছুই তাদের অনুভূত হয় না... তবে তাদের দেখে চকচক করে উঠে ধুরন্ধর জেলের চোখ। কিংবা বিষধর সাপও যখন সাপুড়ের বাক্সে বন্দী হয়, তখন সে হয়ে যায় নিতান্তই নিরীহ। সেই নিরীহ সাপ নাচিয়ে নিজের আধিপত্য জানান দেন সাপুড়ে । তৈয়ব উদ্দিন খাঁ হচ্ছেন সেই জেলে কিংবা সাপুড়ে। কিন্তু তিনি কি ভাবতে পেরেছিলেন অসময়ে সেই সাপ তার দিকেই ফনা তুলবে? কিংবা বিষকাটা ফোটাতে আসবে নিরীহ বন্দি মাছ??? এই গল্পটা তৈয়ব উদ্দীন খাঁর । গল্পটা আব্দুল ফকিরের। 'পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু খারাপ বাবা একটাও নেই' -এই উক্তির আদলেই যেন গড়া! ভয়াবহ বিকৃত চরিত্রের এক মানুষ ও ভীষন ই স্নেহপরায়ণ এক পিতার। যার অলৌকিক ক্ষমতায় তিনি নিজেই মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যান। তবে সবকিছুরই শুরু আছে শেষ হয়ে যায়। এটা হতে পারে আব্দুল ফকিরের মতো নির্মমভাবেও ।কিছু মানুষ জন্ম নেয় ভুল সময়ে। সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা সেই মানুষগুলোর সংগে খাপ খাওয়াতে পারে না প্রচলিত সময়। অসময়ের পৃথিবীতে তাই সেই মানুষগুলো হয়ে যায় অস্পৃশ্য!... তেমনি ভুল যায়গায় ফোটা এক ফুল কোহিনূর। এই গল্পটা কোহিনূরের। এইরকম অনেক চরিত্রের সমন্বয়ে এই অসাধারন উপন্যাস মানবজনম । নামকরনেই কেমন এক অন্যরকম ভাবনা । নামের সাথে উপন্যাসের কাহিনীও এমনি । লেখকের লেখা পড়লে মনে হবে একবারে শেষ করে তারপর বইটি রাখতে । অসাধারন এ উপন্যাসটি সকলের নিকটই অনেক বেশী ভালো লাগবে তা নির্দিধায় বলা যায় ।
Was this review helpful to you?
or
Awesome book.
Was this review helpful to you?
or
nice
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা একটা লেখা নিয়ে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে সূক্ষ্ম হয়তো আর কারুরটাই হতে পারেনা। তার পারসেপশান থেকে শুরু করতে গেলে চলে যেতে হবে একদম বইয়ের শেষ পাতায়। মানবজনম বইটার শেষে একটা লাইন আছে, 'অপেক্ষা আর বিভ্রমের নামই হয়তো মানবজনম'। মানবজনম কি তাহলে আসলেই বিভ্রম? কিংবা আমরা সারাটা জীবনজুড়েই কি অপেক্ষাই করে যাই কারো জন্য? কেউ প্রেমিকার জন্য, কেউ প্রেমিকার জন্য, ভালবাসার মানুষের জন্য, কেউ স্বপ্নের জন্য, কেউ প্রাপ্তির জন্য, কেউ আগামীকালকের জন্য... সবাই আমরা অপেক্ষায় থাকি। অপেক্ষা করতে করতেই আসলে মানবজনমটা কেটে যায়। এটাই কি তবে মানবজনমের কাহিনী? আচ্ছা, মানবজনমের কাহিনী কি সংক্ষেপ করা সম্ভব? আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তটা কোনটা? তাহলে হয়তো আপনি নির্দিষ্ট একটা মুহূর্তের কথা বলবেন, কিন্তু পৃথিবীতে মানুষের বেচে থাকার প্রত্যেকটা মুহুর্তই আসলে সমান গুরুত্বপূর্ণ, এখানে কম গুরুত্বপূর্ণ বা বেশী গুরুত্বপূর্ণ বলে কিছু নেই। ধরুন আপনি রাস্তা পার হচ্ছেন, মুহুর্তের জন্য একটা ট্রাক আপনার পাশ দিয়ে গা ঘেঁষে চলে গেল, আপনি খেয়ালো করেননি যে সেকেন্ডেরো ভগ্নাংশের সময়ের মধ্যে হয়তো আপনি মারা যেতে পারতেন! আপনি খেয়াল করেননি বলেই সে মুহুর্তটা আপনার কাছে হয়ে গেল অগুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু যেটি হতে পারে পৃথিবীতে আপনার সবচে গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্ত! মানবজন্ম জুড়েই যে অসংখ্য ঘটনা ঘটে সেই ঘটনা ঘটার পেছনে একটা মাত্র ঘটনা নিয়ামক হিসেবে কাজ করে- তা হচ্ছে জন্ম। জন্ম না হলে পৃথিবীতে ঘটা বাদবাকি কোন ঘটনাই কিন্তু ঘটতে পারতো না। তাহলে মনবজনম কি তবে সেই জৈবিক জন্মের গল্প? কিন্তু জৈবিক জন্ম যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি জৈবিক মৃত্যুও গুরুত্বপূর্ণ। কারন মনে যাবার সাথে সাথেই সকল ঘটন। শেষ হয়ে যাবে। অর্থাৎ মানবজন্ম মানেই মৃত্যু। আমরা জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম, মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি। তবে মানবজনম কি জৈবিক মৃত্যুর গল্প? কিন্তু এই জৈবিক জন্ম ও মৃত্যুর মাঝামাঝি প্রাত্যাহিক জীবনে আমাদের সম্পর্কের জন্ম হয়, মৃত্যু হয়। আমাদের অনুভূতিরর জন্ম হয়, মৃত্যু হয়। আমাদের লালসার জন্ম হয়, মৃত্যু হয়। আমাদের বোধের জন্ম হয়, মৃত্যু হয়। আমাদের পরিচিত মানুষের চেনা মুখের জন্ম হয়, মৃত্যু হয়। মানবজনম মূলত এমন অসংখ্য জন্ম ও মৃত্যুর গল্প... কাহিনী নির্যাস ও চরিত্রচিত্রণঃ জলের আকালের মৌসুমে বৃষ্টিতে সব জলাশয়ের প্রাণীগুলোই বিপুলানন্দে ছুটাছুটি করে। শুধু যে মাছগুলো জালে আটকা পড়ে , তাদের কাছে ঐ বৃষ্টি অসহ্য লাগে। ঐ রিমঝিম বৃষ্টি, হিমেল হাওয়া কিছুই তাদের অনুভূত হয় না... তবে তাদের দেখে চকচক করে উঠে ধুরন্ধর জেলের চোখ। কিংবা বিষধর সাপও যখন সাপুড়ের বাক্সে বন্দী হয়, তখন সে হয়ে যায় নিতান্তই নিরীহ। সেই নিরীহ সাপ নাচিয়ে নিজের আধিপত্য জানান দেন সাপুড়ে.... তৈয়ব উদ্দিন খাঁ হচ্ছেন সেই জেলে কিংবা সাপুড়ে। কিন্তু তিনি কি ভাবতে পেরেছিলেন অসময়ে সেই সাপ তার দিকেই ফনা তুলবে? কিংবা বিষকাটা ফোটাতে আসবে নিরীহ বন্দি মাছ??? এই গল্পটা তৈয়ব উদ্দীন খাঁর গল্পটা আব্দুল ফকিরের। 'পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু খারাপ বাবা একটাও নেই' -এই উক্তির আদলেই যেন গড়া! ভয়াবহ বিকৃত চরিত্রের এক মানুষ ও ভীষন ই স্নেহপরায়ণ এক পিতার। যার অলৌকিক ক্ষমতায় তিনি নিজেই মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যান। তবে সবকিছুরই শুরু আছে শেষ হয়ে যায়। এটা হতে পারে আব্দুল ফকিরের মতো নির্মমভাবেও!!! কিছু মানুষ জন্ম নেয় ভুল সময়ে। সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা সেই মানুষগুলোর সংগে খাপ খাওয়াতে পারে না প্রচলিত সময়। অসময়ের পৃথিবীতে তাই সেই মানুষগুলো হয়ে যায় অস্পৃশ্য!... তেমনি ভুল যায়গায় ফোটা এক ফুল কোহিনূর। এই গল্পটা কোহিনূরের। শ্বাসরোধ নিশ্চিত জেনেও ক্ষুদ্র মশা কেন আজলা ভরে পান করে খুন? কেন আলোর অনন্ত উৎস জানতে চায় ঘাসফড়িঙ?? মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে কেন পাখা মেলে উইপোকা??? কেন তারা ক্ষয়ে যাওয়া এতো ভালবাসে???? ঠিক যেমনি ভাবে ভালবাসার অপেক্ষায় ক্ষয়ে যাচ্ছে পারুলের একটা জীবন...! এই গল্পটা পারুলের। গল্পটা নয়নের। তৈয়ব উদ্দীন খাঁর চোখের মনি, কোহিনূরের একমাত্র আপনজন, এক পৃথিবী নিখাদ ভালবাসা উপেক্ষা করে যার জন্য হেমা আগলে রেখেছে সবটুকু ভালবাসা, হেমার সেই প্রিয়তম নয়ন। কিন্তু এই সব পরিচয় ম্লান করে দেয় একমুহূর্তে পাওয়া এক পরিচয়। নয়ন জানে একমূহুর্তে অনেক কিছুই মনে হতে পারে, কিন্তু তা দিয়ে সমগ্র জীবন চলবে না। আবার সমগ্র জীবনের জন্যে আপনি যে সাধনায় পথ চলা, তা উলট-পালট হয়ে যেতে পারে একমূহুর্তেই। তাই একমুহুর্ত কিংবা সমগ্র জীবন কোনটাকেই অস্বীকার করতে পারে না নয়ন! গল্পটা রাহাতের। যে জানে তার উজাড় করা ভালবাসা তার প্রেয়সীর গ্রহে কোন কালেই প্রবেশ করবে না, যার সব ভালবাসা অন্য এক পৃথিবীর, তবুও তার সবটুকু নিখাদ ভালবাসা তার জন্যই! পরম আবেগে সে তার জন্য লিখে যায়- ...তোকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব,তোর জন্য ইচ্ছে চেপে রাখা, আমার ইচ্ছে পোড়ায় যদি তোকে,তাই তো এমন ইচ্ছে চেপে থাকা। তোর জন্য আকাশ ছেড়ে দিয়ে, আমিই নাহয় বেছে নিলাম খাঁচা, তোর জন্য কান্না বুকে রেখে,আমার এমন হাসি মুখে বাঁচা। গল্পটা হেমার। হেমা গানটা শোনে।একবার,দুইবার,তিনবার।সে ভাবে রাহাত তাকে ভেবেই কথাগুলো লিখেছে! কী তীব্র অনুভূতি নিয়েই না কথাগুলো লিখেছে রাহাত! কিন্তু রাহাতের এই অনুভূতিগুলো সে কখনোই স্পর্শ করতে পারেনি। কোনদিন হয়তো পারবেও না। হেমা গানটা যতোবার শুনেছে তার শুধু নয়নের কথা মনে হয়েছে। ঠিক এই অনুভূতিগুলোই সে তার বুকের ভিতর সযতনে নয়নের জন্য পুষে রাখে...! গল্পটা আমাদের। যে আমরা ভালবাসতে ভালো লাগে বলেই ভালবাসি। কই, ভালবাসা পাইনা বলে তো খারাপ লাগে না! একটা শূন্যতা বোধ হয়। তবে জীবনে এই শুন্যতা বোধের দরকার আছে...! কিংবা এই গল্পটা সেই কথার, যে কথা যায়না বলা..!! যেমন বলা যায় না, " তুমি কি জানো, আমি তোমাকে কি অসম্ভব ভালবাসি! তুমি যতোটুকু ভাবো তারচে হাজারগুন বেশী! তোমাকে না দেখতে দেখতে আমার গলা শুকিয়ে গেছে। তোমার গলা না শুনতে শুনতে আমি তোমার কণ্ঠস্বর ভুলে গেছি। তুমি কি আজ সারাদিন আমার সামনে বসে থাকবে? তাহলে আমার তেষ্টাটা মিটবে। আর তুমি খানিক পর পর আমার কানের কাছে ফিস ফিস করে বলতে থাকবে যে তুমি আমায় ভালোবাসো! অসম্ভব ভালোবাসো!" পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ কিছু গল্প থাকে যেগুলো জীবনের সাথে ওতোপ্রোত ভাবে মিশে যায়, এটা তেমনি এক গল্প। অনেকটাই সুবিশাল একটা বই। আমি দুই তৃতীয়াংশ স্বাভাবিক ভাবেই পড়েছি, কিন্তু শেষ ভাগে এসেই ঘটলো বিপত্তি! আমার মধ্যে অদ্ভুত এক শুন্যতা কাজ করতে লাগলো, বারবার খালি মনে হচ্ছিল বইটা শেষ না হোক, আমি যেন অই মানুষগুলোর সাথে বড় বেশী পরিচিত হয়ে গেছি, কিন্তু শেষ না করেও থাকতে পারছিলাম না। রাহাতের জন্য বড্ড খারাপ লাগছিল, ভালবাসা মিশ্রিত এক খারাপ লাগা। নিজেকে বড় বেশি রাহাত ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছিল। এটা এমনি এক বই যাতে আপনি আপনাকে খুজে পাবেন... কোন এক চরিত্রে। খুব সম্ভবত লেখব তার বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে অসাধারণ কল্পনাশক্তির সেরা নিদর্শন রেখেছেন এই উপন্যাসে। উনার কবিতার হাতও যে কতোটা দারুন, তা তিনি মানবজনমে বুঝিয়ে দিয়েছেন। প্রতিটা নদীর ঢেউ, আর্তনাদ, ভালবাসা, উচ্ছ্বাস আমি অনুভব করতে পেরেছি... আপনার হয়তো খুব বেশী বাস্তবতা ভাল লাগতে পারে, কিংবা ভালবাসতে পারেন কল্পনায় উড়তে... আপনি যাই হোন না কেন এই গল্পের জীবন আপনি অনুভব করবেন। দেখা পাবেন বিভ্রম আর অপেক্ষার মানবজনমের...
Was this review helpful to you?
or
#মানবজনম #লেখক: সাদাত হোসাইন #প্রকাশকাল : বইমেলা ২০১৭ #প্রকাশনী : ভাষাচিত্র #পৃষ্ঠাসংখ্যা : ৫২৮ উপন্যাসের ব্যাপ্তি যেহেতু বড় তাই খানিক টা দীর্ঘ হবে এই রিভিউ, চাইলে যেকেউ এড়াতে পারেন। উপন্যাস টা পড়ে শেষ করেছি ৫/৬ মাস হবে কিন্তু রিভিউ লেখার সাহস করে উঠতে পারিনি। কারন বহুবছর বাদে কোন লেখক আমায় টানা দু সপ্তাহের জন্য থমকে দিতে পেরেছে। আমি বেঘোর ছিলাম মানবজনমের ঘোরে। এই অনুভূতি আমার বহুবছর আগে যখন দুরবীন, পার্থিব, কাছের মানুষ উপন্যাস পড়েছিলাম তখন হয়েছিলো। আমার কেবলই মনে হয়েছে লেখক যা বলতে চেয়েছেন, যা বুঝাতে চেয়েছেন তা এতো টাই গভীরের কথা যা আমায় থামিয়ে দিয়েছে এবং এখনো লিখতে যেয়ে আমি মনে করছি এটা কোন রিভিউ পর্যায়েই পরছেনা। #গল্প_বা_চরিত্র গ্রাম আর শহরের প্রেক্ষাপট একসাথে লিখিত। নয়ন সদ্য পাশ করা এক তরুন ডাক্তার যে একটা নির্মম সত্য জানতে ফতেহপুর গ্রামে তার নানা বাড়িতে যায়। হেমা নয়ন কে বুঝতে পারা এক চমৎকার প্রেমিকা চরিত্র যার প্রেমের গভীরতা বুঝতে উপন্যাসের শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত যেতে হয়। হেমার বন্ধু রাহাতের হেমার প্রতি একতরফা ভালোবেসে কষ্ট পেয়ে যাওয়ার গল্পও এখানে উল্লেখ্য। এখানে লেখা আছে জীবনের প্রতি পরতের মায়া, স্নেহ, অবহেলা, ক্রোধ, লালসা,প্রতিশোধ, অপেক্ষা কিংবা হারিয়ে ফেলার গল্প। নয়নের নানা দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী তৈয়ব খাঁ কিংবা কুৎসিত মানসিকতার আব্দুল ফকিরের মধ্যকার বাইরে ঠান্ডা কিন্তু ভেতরে প্রচণ্ড শোধ নেয়ার মানসিকতা কিংবা নূরের আলোয় আলোকিত নয়নের মা কোহিনূরের জীবন, হেমার বাবা-মা রেনু- আসলামের মধ্যকার কথাহীন, স্পর্শহীন সংসার নামক বন্দী থাকার গল্প কিংবা জীবনের শেষ বেলায় এসে তৈয়ব খাঁ তার স্ত্রী আমোদি বেগমের প্রতি হঠাৎ ই স্বামী হিসেবে দমিয়ে রাখার ভুল বুঝতে পারার অংশ টুকু কিংবা কুৎসিত আব্দুল ফকিরের নিজের মেয়ে পারুল ছাড়া অন্য সবাই একটা মাংসের দলা বা ভোগ ছাড়া কিছুই নয় কিংবা নির্মম সত্য টা জানতে পারার পরে প্রতিশোধে উন্মুখ নয়নের মানসিক বিকারগ্রস্ততা এবং হেমার কাছের মানুষ হয়ে আগলে রাখার চেষ্টা এই সব কিছুই বিচ্ছিন্ন নয় বরং একটা মানবজনমের প্রতিটি ব্যর্থতা, গোপন কষ্ট এখানে এক এক করে লেখা। মানবজনম - এক ভাই বোনের গল্প। মানবজনম - এক প্রতাপশালী পিতা আর আদুরে কন্যার বিচ্ছেদের গল্প। মানবজনম - দুই স্বামী স্ত্রীর কথাহীন, স্পর্শ-ভালোবাসাহীন সংসারের গল্প। মানবজনম- দুই ভালোবাসাবাসি নরনারীর একে অন্যের প্রয়োজন আর আগলে রাখার গল্প। মানবজনম- এক বৃদ্ধের জীবনের অমোঘ সত্য মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকা গল্প। মানবজনম - প্রতিটি চরিত্রেরই নির্দিষ্ট এক অপেক্ষার গল্প। #উপন্যাসের_উল্লেখযোগ্য_উক্তি হেমা বলল, ‘এতো সন্দেহ থাকলে কী ভালোবাসা যায়রে পাগল? ভালবাসতে হলে সবার আগে খুনী হতে হয়। সন্দেহ খুনী। নির্দয়ভাবে সন্দেহ খুন করে ফেলতে হয়। সন্দেহদের খুন না করলে ভালোবাসা যায় না রে’। রাহাত বলল, ‘আর কি কি করলে ভালোবাসা যায় না?’ হেমা বলল, ‘কষ্ট না হলে’। রাহাত বলল, ‘কষ্ট কেন হয়?’ হেমা বলল, ‘স্পর্শ করতে না জানলে’। রাহাত হঠাৎ হাত বাড়িয়ে হেমার হাত স্পর্শ করে বললো, ‘এই যে স্পর্শ করলাম। ভালোবাসা হয়ে গেলো?’ হেমা হাসলো, ‘ভালোবাসার স্পর্শ যদি এতোই সহজ হতো। তাহলে ভালোবাসার জন্য মানুষ এমন ব্যাকুল হতো না।’ ''মানুষ হয়ে জন্মানোর এই এক কষ্ট! সকলই কেমন বুকের ভেতর ডুবে ডুবে লুকিয়ে থাকে। তারপর সুযোগ পেলেই ভেসে ভেসে উঠে। তারপর বানের জলের মত সবকিছু ভাসিয়ে দেয়।" "জীবনের হিসাব বড়ই বেহিসাবি, বড়ই অদ্ভুত, এই অদ্ভুত হিসেবের খাতার আড়ালে- আবডালে রয়ে যায় অমিমাংসিত অসংখ্য গল্প। অসংখ্য অঙ্ক।সেইসব অমিমাংসিত গল্প আর অঙ্কের নামই বোধহয় মানবজনম।" "তোর জন্য কান্না পাচ্ছে খুব,তোর জন্য কান্না চেপে রাখা, আমার অশ্রু ভাসায় যদি তোকে,তাই তো এমন অশ্রু চেপে থাকা।" #আমারকথা সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য বশত লেখকের আরো উপন্যাস সংগ্রহে থাকলেও এটাই তার লেখা আমার পড়া প্রথম উপন্যাস ছিলো এবং আমার মতে উনার এই উপন্যাস কে ছাড়িয়ে যেতে হলে উনার নিজেরই নিজের লেখনী শক্তির সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে এবং সম্ভবত সেটা নাও হতে পারে। কারন সেরা সৃষ্টি সংখ্যায় অসংখ্য হয়না। #শেষভাগের_সমালোচনা অনেকেই এই উপন্যাস নিয়ে নেগেটিভ রিভিউ দিয়েছেন। আমি পড়েছিও। কেউ কেউ লিখেছেন লেখক অহেতুক টেনেছেন, আরও ১০০ পেইজ কম হলে লেখা ভালো হতো। যারা আসলেই বই পাগল তারা গঠনমূলক সমালোচনা করতেই পারেন। এতে ভুল কিছু নেই। তবে একটা সমালোচনা খারাপ বা ভুল মনে হয়েছে আমার কাছে তা হলো সাদাত হোসাইন, হুমায়ুন আহমেদের অনুকরণকারী। এটা ভুল এবং নিশ্চিত ভাবেই ভুল। আমি না পড়েই উনার লেখার ভক্ত হইনি। পড়েছি এবং পড়েই লিখছি যে উনি হুমায়ুন আহমেদ কপিকারী নন। আমার মতে একজন লেখকের লেখার সফলতার দুটা প্রধান দিক থাকে। এক. ১০/২০ চরিত্র সংখ্যা যতোই হোক প্রতিটা চরিত্রের সফল সমাপ্তি ঘটানো। দুই. পাঠক টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা। আর এই দুই দিকেই উনি লেখক হিসেবে সফল। উনার লেখা যেকোন বই পড়া শুরু করলে বোঝা যাবেনা কোন চরিত্রের কিভাবে উনি সমাপ্তি ঘটাবেন এবং এই ব্যাপারটাই টেনে নিয়ে যাবে পাঠক কে গল্পের ভেতরে। তবে হ্যা, আমি একটা ব্যাপারে সাদাত হোসাইন কে হুমায়ুন আহমেদের সাথে মেশাই। সেটা হলো হুমায়ুন আহমেদ মারা যাবার পরে আর কোন লেখক আমাদের দেশে এতো পাঠক বইমেলায় টেনে আনতে পারেন নি। যেটা হুমায়ুন আহমেদের পরে সাদাত হোসাইন পেরেছেন। প্রতিটা লেখকেরই গল্প বলার ঢং আলাদা, তাই কপিবাজ বলে পাঠক সৃষ্টির ক্ষেত্র নষ্ট করা ঠিক নয় বলে আমার মতামত। সবশেষে আমার মতে বুকের ভেতরের অলিগলি তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সত্য-মিথ্যা,কষ্ট- হাসি, লোভ-লালসা কিংবা প্রতিশোধের গল্প গুলো বের করে এনে ভাবিয়ে তোলার, থমকে যাওয়াতে পারার নামই উপন্যাস মানবজনম।
Was this review helpful to you?
or
After reading the first few pages given hear, I couldn't help myself but ordering the book. Guess, he is going to be next craze in Bangladeshi writers world!
Was this review helpful to you?
or
আমি কঠিন হৃদয়ের মানুষ । সচরাচর তেমন কাদি না । বলা ভালো একটু চেপে রাখি । কারণ কান্না মানুষ কে দুর্বল করে দেয় । আমি দুর্বল হতে চাই না । আর সাহসীরা সহজে কাদে না । তারা বুকে চেপে রাখে । কঠিনতম সময়ে যাতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে । সবাই এটাই বলে আমার মায়াদয়া কম । তখন হাসি পায়, মনে মনে এক চোট হেসে নেই । কত সহজ একজন মানুষ কে বিচার করা । তার বাইরের রুপ দেখে ভিতর টাও জেনে ফেলা । কিন্তু সত্যি বলতে, অনেক অনেক চাপা কষ্ট জমা রয়েছে । আর সেগুলো নিয়েই হাসি মুখে আমার মানবজনম । এই বইটা আমার তিন রাত না ঘুমানোর ফসল । তিন রাত না ঘুমিয়ে এই বইটা পড়েছি । কত অদ্ভুত মানুষের জীবন । যে যার স্থান থেকে চিন্তা করে । আমরা সবাই স্বার্থপর পর । হ্যা কেউ জীবনের জন্য, কেউ জীবিকার জন্য আবার কেউ হিংস্রতার চরম নেশার জন্য । ভালো আর মন্দের দ্বন্দে সবাই ভাগে হয়ে যায় । কেউ কেউ নিজেকে চিনতে পুরো জীবন পার করেরে দেয় আবার কেউ আপন মানুষ চিনতে ও ভুল করে । সব ই আসলে এক চক্রের মধ্যে আবব্ধ । যেই চক্রের নাম মানবজনম । আমাদের জন্ম হয় কোন উদ্দেশ্য তা আমরা আগে থেকে জানতে পারি না । কিন্তু জন্মের পর থেকে শুরু হয় আমাদের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যের খোজ । হয়ত এই খোজ চলতে থাকে আমৃত্যু আবার মৃত্যুর আগেই কেউ পেয়ে যায় সব কিছু । মানুষ আসলে তার নিজেকে চিনতে সময় নেয় । তার চিন্তা চেতনা আর ভাবনা গুলো বিকাশ করার মত সুযোগ খোজে সব সময় । কিন্তু কারো কারো খোজ চলতেই থাকে, যেন তা শেষ হবার নয় । প্রতিটি মানুষ ই ভালবাসা চায় । চায় একটু যত্ন,আদর, নিরাপত্তা । যেখানে সে নিজের মত করে থাকে বা থাকতে পারে । যার কাছে তার কোন সংকোচ নেই, নেই কোন ভয় । যার হাতে সে নির্ভয় এ হাত রাখতে পারে । যাকে চোখ বন্ধ করেই বিশ্বাস করা যায় । কিন্তু অনেক সময় ভুল জায়গায়, ভুল মানুষ কে বেছে নেয় অনেকেই । সম্পর্ক আসলে মায়া । শুধু মানুষ ই এই মায়াতে থাকে বা তাদের এই অনুভূতি আছে । অন্য প্রাণির নেই । তাই তারা মানুষ নয় । কিন্তু এই সম্পর্ক যেমন বাবা মা, ভাই বোন,স্বামী স্ত্রী সব আছে কিন্তু তারপর ও অনেক কিছুই নেই । বুকে হাত রেখে যদি বলতে পারেন আমি আমার এই সম্পর্কে খুশি আছি তবে সেটাই সার্থক । কিন্তু প্রতিটি মানুষ ই সম্পর্কের কোন না কোন জায়গায় অখুশি । কেউ তার সেই জায়গাতে খুশি না । তবুও মানবজনম......
Was this review helpful to you?
or
হুমায়ূন বলয়েই ঘোরাফেরা