User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
❤️
Was this review helpful to you?
or
জামানের চরিত্র টা এত সুন্দর বলে বুঝানোর মতো না। জানতে হলে পুরোটা পড়া চাই।
Was this review helpful to you?
or
অসম্ভব সুন্দর
Was this review helpful to you?
or
Good
Was this review helpful to you?
or
মধ্যবিত্ত ছোট্ট একটি পরিবার কেন্দ্রিক উপন্যাস।সহজ এবং অসাধারণ উপস্থাপন। শুরুর ন্যায় শেষটাও মনমুগ্ধকর।
Was this review helpful to you?
or
অসম্ভব সুন্দর একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প।মেয়েদের বিচিত্র মনের যেগুলো চাহিদা এবং বুদ্ধিমতী মেয়েদের সেই সব চাহিদাগুলো না পুরনের দুঃখ নিজেই রেখে দেয় তার মাঝে।না পারে বলতে না পারে সইতে।নিজের অজান্তেই পাড়ি দিতে বসে অজানা এক জগতে,সে জগত মানুষের জগত, সে জগত অন্য পুরুষের জগত।একজন নারীর জীবনে অন্য কোনো পুরুষ সব সময় আশেপাশে থাকলে, তার ছোট ছোট সাংসারিক চাহিদা পুরন ও তার ভালোলাগার সাথী হলে তার অজান্তেই ডার মনে জায়গা করে নেয়।স্বামী সন্তার নিয়ে গড়া সংসারে তার সাথে এই সব ঘটায় সেও এসব মেনে নিতে পারে না। পরিশেষে সে যে তার সংসার ছেড়ে যাবে তা করেরি,,,কি করেছে জানতো হলে পড়তে হবে। অসম্বব এক সুন্দর টুইস্ট দিয়ে লেখক উপন্যাস শেষ করেছেন। আমি পড়তে পড়তে গল্পের পরিবারেরই একটা অংশ হয়ে গিয়েছিলাম,,এরকম একটি গল্প।
Was this review helpful to you?
or
#বইয়ের নাম: ছায়াবিথী #লেখক: হুমায়ূন আহমেদ #পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১২২ শুরুতেই বইয়ের পাত্র পাত্রীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। প্রধান চরিত্র নায়লা। আর দশজন সাধারন গৃহবধূর মতো সাদামাটা গৃহবধূ। স্বামী অফিস থেকে একটু দেরিতে ফিরলেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রোজ রোজ বারান্দার জানলা ধরে বরের অফিস ফেরার দৃশ্য দেখে আনন্দ পায়। সুশ্রী চেহারা, হাসলে ভরাট বামপাশে একপাশে টোল পড়ে। কাজের বুয়া ফিরুর মাকে একদমই সহ্য করতে পারেনা আর হ্যা নায়লা খানিকটা উচ্চাকাঙ্ক্ষী। খানিকটা বলা বোধহয় উচিত হয়নি, নায়লা ভালোই উচ্চাকাঙ্ক্ষী! দ্বিতীয় প্রধান চরিত্র জামান। নায়লার বর, একজন অতিমাত্রার সহজ সরল গৃহকর্তা। অফিসে যাওয়া অফিস থেকে ফেরা ছাড়া আর কিছু জানে বলে মনে হয়না। নায়লাকে ভীষন রকম ভালোবাসে কিন্তু প্রকাশ করতে পারেনা একদমই। রাগ নেই, জেদ নেই, কখনো জোরে একটা কথাও বলেন না। নায়লার কোনো কথার সাথেই দ্বিমত করেন না। খুব সম্ভব মেয়েটাকে কখনোই কষ্ট দিতে চায়না হাবাগোবা এই বরটা। তৃতীয় প্রধান চরিত্র জামানের বিদেশ ফেরত বন্ধু আলম। এই চরিত্রটাকে কেন্দ্র করেই উপন্যাস হেটে চলেছে এই সুত্রে এই চরিত্রটাকেই দ্বিতীয় মূখ্য চরিত্র বলা যায়। বিদেশে থেকে প্রচুর টাকা ইনকাম করে দেশে ফিরেছে আলম সাহেব। দেশে ফিরেই উনি উঠেছেন শেরাটন হোটেলের একটা রুমে। দেশে ফেরার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে বিয়ে করা, বিয়ে করে বউকে বগলদাবা করে বিদেশের দিকে পাড়ি জমাবেন। চেহারা অত্যাধিক সুশ্রী, হ্যান্ডসাম আর ভীষন রকম খরুচে। সব কিছু ছাপিয়ে ভদ্রলোকের যে গুনটা চোখে পড়ার মতো সেটা হলো আলম সাহেবের বাকপটুতা। নিমেশেই যেকারো দৃষ্টি আকর্ষন করে ফেলতে পারেন। বিশেষ চরিত্র বাবু। নায়লা এবং জামানের একমাত্র ছেলে, বইয়ের মাঝামাঝিতে তার বয়স দুই বছর পূর্ণ হবে। এই ছেলের কাজ হচ্ছে জায়গায় অজায়গায় তার আম্মুকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেওয়া। কথাবার্তা এখনো পরিষ্কার না তাই একধরনের বিশেষ ভাষায় কথা বলে,,,, মাম্মাট = মা বাতিস দুদু = বালিশে শুয়ে দুদু খাবে কোলা দুদু= কোলে বসে দুদু খাবে। এরকম আরো অনেক অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত কথা জানে সে! এবার বই নিয়ে খানিকটা আলোচনা করা যাক,,,, "শিশু এবং মেয়েরা সবসময়ই তাদের স্বার্থের ব্যাপারে সচেতন" লেখকের এই উক্তি ধরেই পুরো বইটা এগিয়েছে। নায়লা স্বামীভক্ত। তার বর জামান ও ভীষন রকম বউ ভক্ত। তবুও বিয়ের পর প্রতিটা মেয়েই চায় তার বরটা তার জন্য আলাদা করে কিছু সময় রাখুক, বরটা কোনো বিশেষ দিনে তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হোক, বরটা সময় দিক তাকে। কিন্তু বরটার চিন্তা হচ্ছে অন্য জায়গায়। অধিকাংশ ছেলেই বিয়ের পর দায়িত্ববান হয়ে যায়, সংসারের চিন্তায় অস্থির থাকে। সামনের দিনগুলোতে পরিবারের অবস্থান কেমন হবে সেটা নিয়েই চিন্তায় থাকে আর জামান ও ঠিক এই রকম। নায়লা ভালোবাসা পাচ্ছেনা এটা তার কখনোই মনে হয়নি। সে হয়তো ভাবতো পরিবার এমনই হয়, খুব সম্ভব এটাই নিয়ম। কিন্তু সমস্যা বাধলো আলমের আগমনে। বিদেশ থেকে ফিরেই জামানের সাথে দেখা করে আলম। জামানের পরিবার আর আলমের মধ্যে এক ধরনের সম্পর্ক তৈরী হয়। এই সম্পর্ক কোনো বাজে সম্পর্ক না, এই সম্পর্ক একজন বন্ধুর প্রতি বন্ধুর ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুইনা। আলম বিভিন্ন অকেশনে জামানের বাসায় আসতো। জামান আর নায়লা প্রায়ই যেতো আলমের রুমে। সব ঠিক ছিলো কিন্তু বাধ সাধলো ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ঘিরেই! আলম স্পষ্টভাষী, সে নায়লার প্রতি আকৃষ্ট এই কথা নায়লাকে জানিয়ে দিলো বইয়ের মাঝামাঝিতেই। নায়লা ব্যাপারটাকে পাত্তা না দিতে গিয়েই পাত্তা দিয়ে ফেললো। জামান কে ভীষন রকম ভালোবাসলেও সেই ভালোবাসাটা জামানের কাছ থেকে পাচ্ছিলো না নায়লা। এ কারনেই হয়তো আলমের প্রতি এক ধরনের অদ্ভুত টান সৃষ্টি হলো মেয়েটার। জামানকে সে ভালোবাসে কিন্তু আলমের সাথে যখন রেশমী নামের মেয়েটা হেসে হেসে কথা বলতেছিলো তখন এতো খারাপ কেন লাগতেছিলো তার! তার কেন ইচ্ছে হচ্ছিলো রেশমীর জানলা দিয়ে নিচে ফেলে দিতে! আলম তো তার কেউনা, সব ঠিকঠাক থাকলে রেশমীর সাথে তার হয়তো বিয়েও হয়ে যাবে কিন্তু নায়লা কেন চাচ্ছেনা রেশমীর সাথে আলমের দেখা হোক। আচ্ছা,,আলমের জন্য এতো টাকা খরচ করে পাঞ্জাবীটা কেনা কি উচিত ছিলো? পাঞ্জাবীর পেছনে এতোগুলো টাকা খরচ হয়ে গেলো অথচ নায়লার খারাপ কেন লাগছেনা? এরকম হাজার হাজার প্রশ্নের ফাঁকে পড়ে গেলো মেয়েটা। প্রতিবার আলমের সাথে দেখা করে ফেরার পরই মনে হয় সে হয়তো জামানের প্রতি অন্যায় করতেছে। আর আলমের সাথে থাকা সময়টুকুতে মনে হয় ভালোবাসা পাওয়াটা আমার অধিকার। জামানের কাছ থেকে আমি তা পাচ্ছিনা! নায়লা প্রায়ই বিভিন্ন উছিলায় দেখা করে আলমের সাথে। জামান সব জেনেও চুপ থাকে কিন্তু চুপ থাকেনা নায়লা। মনের ভেতরকার ভয় রোজ রোজ ছাইচাপা আগুনের মতো জ্বলে উঠে। জামানের সাথে চিৎকার চেঁচামেচি করে বলে,,,তোমার কি ধারনা, তোমার বন্ধু সাথে আমি এই করি, সেই করি? অথচ জামান কখনো বলেনি এমন কিছু, নায়লা কেন নিজ থেকেই নিজেকে দোষ দিয়ে যাচ্ছে! অদ্ভুত এক দোটানায় পড়ে মেয়েটি। ভীষণরকম ভালো একটা বরের হাত ধরে থাকবে নাকি নিজের আকাঙ্ক্ষিত ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ছুটে যাবে সে নিজেই বুঝতে পারছেনা। শেষমেষ নায়লা সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললো!! জামান চলে গেছে গ্রামের বাড়িতে। এই শহরে থাকার আর কোনো মানে নেই। নায়লা ব্যাগ গুছিয়ে তার বাপের বাড়িতে উঠেছে। সকাল সকাল মেয়েটা একটা শুভ্র শাড়ি গায়ে জড়িয়ে রেডি হলো। এতোদিন ধরে মনের সাথে যে যুদ্ধ সে করতেছিলো আজ তার সমাপ্তি ঘটবে। আচ্ছা কোথায় যাবে সে? শেরাটন হোটেলের রুমে নাকি ট্রেন ধরে একদম গায়ের বাড়ি? আচ্ছা যেথায় ইচ্ছে হেথায় যাক কিন্তু বাবুটাকে তো সাথে নিয়ে যাবে! বাবুকে সাথে না নিয়েই রওনা হলো নায়লা। এমন একটা গন্তব্যে যেখানে পৌছুলে তার মনের তৃপ্ততা মিলবে ভীষনভাবে!! #ব্যক্তিগত মতামত: বইটা আগেও পড়েছি কিন্তু বিষয়বস্তু ভুলে গেছিলাম। আজ আবার পড়েই যেটা মনে হলো তা হচ্ছে,,,এই বইয়ের রিভিউ না লেখা ঘোরতর অন্যায়ের সামিল। বই শেষ করেই আর দেরি করিনি, রিভিউ লিখে ফেললাম। বই কেমন লেগেছে এই প্রশ্নের উত্তর ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়ে গেছে। সবাই বুঝেও ফেলেছেন। তবুও বলতেছি,,,,অসম্ভব ভালো লেগেছে। হুমায়ূন স্যার আমার প্রিয় লেখক তার বই আমার ভালো লাগবে এটা স্বাভাবিক। তবে এই বই উনি না লিখে অন্য কেউও যদি লিখতো তবে ঠিক এতোটাই ভালো লাগতো। আপনার পড়ে দেখতে পারেন, আশা করি ভীষন রকম ভালো লাগবে।
Was this review helpful to you?
or
প্রায়সময়ই হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসের চরিত্রদের মধ্যে মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্বমুখরতার চিত্র ফুটে ওঠে। তখন আর সেইসব উপন্যাস নিছকই প্রেমের উপন্যাস, সামাজিক উপন্যাস বা জীবনঘনিষ্ঠ উপন্যাসের ব্রাকেটে বন্দি থাকতে পারে না। মানুষের বিচিত্র মন মানসিকতার প্রতিনিধিত্বকারী সেসব উপন্যাস পাঠকদের সামনে আবির্ভূত হয় 'লারজার দ্যান লাইফ' হিসেবে। হুমায়ুন আহমেদের 'ছায়াবীথি' উপন্যাসটিও অনেকটা এই ঘরানার উপন্যাস যার গুণকীর্তন করা হল এতক্ষণ ধরে। এই উপন্যাসের কাহিনী গড়ে উঠেছে নায়লাকে ঘিরে। নায়লা এক তরুণী যার জীবন জুড়ে আছে তার স্বামী জামান আর তাদের ছোট্ট বাচ্চা বাবু। নায়লা-জামানের মধ্যবিত্ত সংসারের গল্প দিয়ে শুরু হয় উপন্যাস। সেটা এমনই এক জীবন যেখানে প্রাপ্তির চেয়ে অপ্রাপ্তিটাই বেশি। তবু নায়লা নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করে কেননা সে জানে তাদের জীবনে ভালোবাসা নামক একটি জিনিস আছে। কিন্তু একটা সময় এসে নায়লার মনে হতে থাকে, আসলেই কি জামানের সাথে তার যে ভালোবাসার সম্পর্ক তার ভিত সত্যের ওপরই দাঁড়িয়ে আছে নাকি সেটা কেবলই মায়া কিংবা লোক দেখানো ভান? নায়লার এমন মনে হতে থাকার সঙ্গত কারণ আছে। আর সেই কারণের আবির্ভাব ঘটে উপন্যাসে জামানের ধনী বন্ধু আলমের আবির্ভাবের সাথে সাথে। আলমের সান্নিধ্যে এসে নায়লা এমন অনেক কিছু পেতে থাকে যার স্বপ্ন এতদিন সে শুধু দেখেই এসেছে কিন্তু কখনো পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। এভাবেই আলম অনেক সাধ পূরণ করতে থাকে নায়লার। এবং এক পর্যায় এসে নায়লার মনে হতে থাকে, সে কি আলমের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে? কিন্তু তাই যদি হয় তাহলে জামানের প্রতি তার এতদিনের যে ভালোবাসা সেটার কি হবে? এই দ্বিমুখি অবস্থা মেনে নিতে পারে না নায়লা। সে নিজেকে অপরাধী ভেবে নিয়ে দূরে সরে যায় জামান ও আলম দুজনের জীবন থেকেই। কিন্তু একটা সময় এসে আবার তার হুঁশ ফেরে। সে বুঝতে পারে, জামানের প্রতি তার যে টান তারই নাম ভালোবাসা। আলমের প্রতি যেটা ছিল সেটা নিছকই দুইদিনের ভ্রম। এভাবে নিজের সাথে লড়াই করে নায়লা নিজের মনের গভীরতা চিহ্নিত করতে পারে এবং শেষ অব্দি নিজের মনের কথা জানতে পারে। এরপর থেকে সে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণের শক্তিও লাভ করে এবং দৃঢ় মনোবল নিয়ে ফিরে যায় জামানের কাছে। এভাবেই সুখ-সমাপ্তি হয় এই উপন্যাসের। কিন্তু যেভাবে এই উপন্যাস এর পরিণতিতে পৌঁছেছে তা অসাধারণ। সম্পর্কের প্রতিটা দিকই একবার করে হলেও উঁকি দিয়ে গেছে এই উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহে এবং এর মাধ্যমে নায়লা যেমন পেয়েছে তার মনের সন্ধান, তেমনি লেখকও পাঠকের সানে তুলে ধরতে পেরেছেন আসলেই মানব মন কতটা বহুমুখি কিন্তু সেই মনের শেকড় একটা জায়গাতেই আবদ্ধ আর সেই জায়গাটাই হল তার জীবনের ভালোবাসার জায়গা। এটিকে হুমায়ুন আহমেদের লেখা অন্যতম সেরা উপন্যাস মনে হয়েছে আমার। আর তার সঙ্গত কারণ রয়েছে। যেভাবে ক্ষণে ক্ষণে এই উপন্যাসের কাহিনীর রং বদলেছে, চরিত্ররা নতুন নতুন বেশে আবির্ভুত হয়েছে তা সাধারণত অধিকাংশ উপন্যাসেই চোখে পড়ে না।
Was this review helpful to you?
or
আর আট-দশটা গৃহিণীর মতোই নায়লা মেয়েটি। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্রের মাঝে একজন এই নায়লা। স্বামী জামান আর দুই বছরের ছেলে বাবুকে নিয়ে তার সংসার। মোটামুটি সুখের সংসার বলাই যায়। স্বামীকে ভীষণ ভালবাসে। স্বামীর অফিস থেকে আসতে দেরি হওয়ায় বারান্দায় ঠাই দাড়িঁয়ে থাকে। অফিস ফেরত স্বামীর যত্নআত্তিতে কোন ত্রুটি রাখতে চায় না নায়লা। কিন্তু সমস্যা একটাই, নায়লা ভীষণ উচ্চাকাঙ্খী মেয়ে। অবশ্য তা নিয়ে সমস্যা নেই জামানের। জামান খুব সহজ-সরল, ভীষণ ভালো একটা ছেলে। অকারণে কারো উপর রাগ করা, কারো সাথে ঝগড়া করা তার স্বভাবে না। চুপচাপ থাকা, কম কথা বলাই জামানের পচ্ছন্দ। নিজেকে সবসময় অন্যদের থেকে আড়াল করে রাখে। নায়লাকে ভালবাসলেও মুখচোরা স্বভাবের কারণে প্রকাশ করতে পারে না জামান। ভালোই চলছিলো নায়লা-জামানের সংসার। নায়লা জামানের সাথেই দারুণভাবে গুছিয়ে নিয়েছিলো তার জীবন। বিপত্তি ঘটলো আলম আসার পর থেকে। আলম জামানের ছোট্টবেলার স্কুল ফ্রেন্ড। স্কুল জীবনে পড়াশোনায় ভালো না হলেও সে এখন বিদেশ ফেরত ব্যবসায়ী। অনেক টাকা-পয়সার মালিক। জামানের ছেলে বাবুকে তিন হাজার টাকার খেলনা কিনে দেয়। বিদেশ থেকে এসেছে বিয়ে করার উদ্দ্যেশ্যে। কিন্তু নায়লাকে দেখে তার প্রেমে পড়ে যায়। আলমকে দেখার পর থেকে জামানকে এখন তীব্র অসহ্য লাগে নায়লার। অকারণে রাগারাগি, ঝগড়া চলতেই থাকে। সুখের সংসার ভেঙে পড়ার উপক্রম। তবে নিজেকে নিয়ে তীব্র সন্দেহ নায়লার। সে কি চায়? আলমকে নাকি জামানকে? দোটানায় পড়ে যায় নায়লা...! তারপর..? তারপরের গল্পটুক না হয় "ছায়াবিথী" থেকেই জানুন..!
Was this review helpful to you?
or
এই উপন্যাসের কাহিনী গড়ে উঠেছে নায়লা-জামানের মধ্যবিত্ত সংসারের গল্প দিয়ে। নায়লা যার জীবন জুড়ে আছে তার স্বামী জামান আর তাদের ছোট্ট বাচ্চা বাবু।জামান একটা অল্প বেতনের ছোট চাকরি করে। জামান আর এক সন্তানকে নিয়ে নায়লা বেশ সুখেই ছিল। কারন তার কাছে মনে হত সব অপ্রাপ্তির পরেও তার জীবনে ভালোবাসা তো রয়েছে।কিন্তু হটাত করেই নায়লার জীবন ওলট পালট হয়ে যায়। কারন আবির্ভাব ঘটে উপন্যাসে জামানের ধনী বন্ধু আলমের। । আলম দীর্ঘদিন বিদেশে ছিল। সে অনেক টাকা-পয়সা করে সম্প্রতি দেশে এসেছে বিয়ে করার জন্যে। নায়লা কে তার প্রথম থেকেই ভালো লগতে থাকে। চেষ্টা করে নায়লার কাছে আসার। নায়লা কে মুগ্ধ করার চেষ্টা করে। নায়লা প্রথম দিকে বিষয়টাকে একদম পাত্তা দিচ্ছিলো না।কিন্তু আলমের সান্নিধ্যে এসে নায়লা এমন অনেক কিছু পেতে থাকে যার স্বপ্ন এতদিন সে শুধু দেখেই এসেছে কিন্তু কখনো পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। এভাবেই আলম অনেক সাধ পূরণ করতে থাকে নায়লার। এবং এক পর্যায় এসে নায়লার মনে হতে থাকে, সে কি আলমের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে?আলমকে ছাড়া থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তাতু একি সাথে সে জামান এর সাথেও তো থাক্পতে চায়। তার সংসার কে ভালোবাসে। সংসার ভাংতে সে চায়না। তাহ্লে কাকে সে ভালোবসে। ভালোবাসা কি...এক অদ্ভুত চিন্তায় পড়ে সে।এক অদ্ভুত দোটানা।এরপড় এক সন্ধ্যায় নায়লা চোখে কাজল দিয়ে, সাদা শাড়ি পরে বের হয় তার জীবনের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেই গন্তব্যটি কে? জামান নাকি আলম? কি হল সমাপ্তি উপন্যাসের এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্যে পাঠককে ‘ছায়াবীথি’ উপন্যাসটি পড়তে হবে।
Was this review helpful to you?
or
‘ছায়াবীথি’ উপন্যাসটিকে একটি সামাজিক উপন্যাস বলা যায়। আবার একে প্রেমের উপন্যাসও বলা যায়। তবে সে প্রেমের উৎস ও প্রকৃতি বড় বিক্ষিপ্ত, বড়ই বিপন্ন। সে বিষয়ে আলোচনায় পরে আসবো। তবে ‘ছায়াবীথি’ বইটি হাতে নিলে প্রথমেই যে বিষয়টি বোঝা যায় তা হল, এর আয়তন হুমায়ূন আহমেদের লেখা গতানুগতিক সামাজিক প্রেমের উপন্যাসগুলোর থেকে ঢের বেশি। আর বইটি পড়তে শুরু করলে অনুধাবন করা যায়, শুধু আয়তনে নয় বরং অন্তর্নিহিত তাৎপর্যেও উপন্যাসটি অনেক বেশি বলীয়ান। সে বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনার পূর্বে পাঠকদের স্বার্থে উপন্যাসটির কাহিনী সংক্ষেপ নিচের অনুচ্ছেদে আলোচিত হল। ‘ছায়াবীথি’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র নায়লা। নায়লার স্বামী জামান একটা অল্প বেতনের ছোট-খাট চাকরি করে। তাদের মধ্যবিত্ত জীবনের অধিকাংশ সাধ-আহ্লাদই অপূর্ণ থেকে যায়। তারপরও কোন কিছু নিয়েই নায়লার তেমন কোন অভিযোগ ছিল না। স্বামী জামান আর এক শিশু সন্তানকে নিয়ে নায়লা বেশ সুখেই ছিল। প্রতি রাতে নায়লা তার স্বামী কখন অফিস থেকে ফিরে সেই পথ চেয়ে থাকতো। কিন্তু তাদের এই জীবনে হঠাৎ করেই ছন্দপতন হয়। জামানের হঠাৎ একদিন তার ছেলেবেলার বন্ধু আলমের সাত্থে দেখা হয়। আলম দীর্ঘদিন বিদেশে ছিল। সে অনেক টাকা-পয়সা করে সম্প্রতি দেশে এসেছে বিয়ে করার জন্যে। এই দেখা হওয়ার পর থেকে জামানের বাসায় আলমের নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয়। নায়লার প্রতি আলমের আচরণ কেমন যেন প্রগলভ। নায়লাকে সে শুরু থেকেই নাম ধরে ডাকতে থাকে। তারপর আলম আস্তে আস্তে নায়লার কাছে আসার চেষ্টা করে। নায়লা প্রথম দিকে বিষয়টাকে একদম পাত্তা দিচ্ছিলো না। কিন্তু ধীরে ধীরে নায়লাও কেমন যেন আলমের প্রতি দুর্বল হয়ে উঠতে থাকে। নায়লা বুঝতে পারে, এটা ঠিক হচ্ছে না। তারপরও সে ঘুরে ফিরে বারবার আলমের কাছেই যেতে থাকে। আর এই পুরো ব্যাপারটা নিয়েই জামান আশ্চর্যরকম উদাসীন থাকে। এর মাঝে জানা যায়, আলম আগে একটি মেয়েকে ভালোবাসতো। যার নাম ছিল রেশমী। নায়লা দেখতে নাকি অনেকটাই রেশমীর মত। সে কারণেই নায়লার প্রতি আলমের এতো দুর্বলতা। সে যাই হোক, নায়লা তার এই আপাত মানসিক দ্বন্দ্ব থেকে উত্তরণের জন্যে তারই বান্ধবী অরুণার সাথে আলমের বিয়ে ঠিক করে। একদিন আলম আর অরুণার দেখা করিয়ে দেয়ার জন্যে নায়লা বাবুর জন্মদিনকে উপলক্ষ করে তাদের বাসায় দাওয়াত দেয়। আর সেদিনই নায়লা প্রথমবারের মত বুঝতে পারে, আলমকে ছাড়া থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়। আলম যখন অরুণার সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলো, তখন নায়লা আশ্চর্য বিস্ময় নিয়ে আবিষ্কার করে তার প্রচণ্ড পরিমাণে রাগ হচ্ছে। সে হিংসায় জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে। সে রাতেই নায়লা কোন কারণ ছাড়াই জামানের সাথে বেশ ঝগড়া করে। এদিকে তখন জামানের চাকরিটা চলে গেছে। জামান সব দিক বিবেচনা করে ঠিক করে, সে কিছুদিন বাড়িতে গিয়ে থাকবে। আর নায়লাকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেবে। তাতে যদি নায়লার কিছুটা মানসিক স্থিরতা আসে। কিন্তু বাবার বাড়িতে গিয়ে নায়লার আচরণ সম্পূর্ণ বদলে যায়। সে অবিবাহিত মেয়ের মত আচরণ করতে থাকে। সেজেগুজে সকাল বেলা ঘুরতে বের হয়। তারপর এক সন্ধ্যায় নায়লা চোখে কাজল দিয়ে, সাদা শাড়ি পরে বের হয় তার জীবনের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেই গন্তব্যটি কে? জামান নাকি আলম? এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্যে পাঠককে ‘ছায়াবীথি’ উপন্যাসটি পড়তে হবে। এই আলোচনার শুরুতে আমি ‘ছায়াবীথি’ উপন্যাসটিকে একটি সামাজিক প্রেমের উপন্যাস বলেছিলাম। তবে সেটা ছিল আসলে উপন্যাসের উপরিতল বিবেচনাপ্রসূত একটি মন্তব্য। যদি গভীরতর বিশ্লেষণের নিরিখে মন্তব্য করতে বলা হয়, তাহলে আমি নির্দ্বিধায় ‘ছায়াবীথি’ উপন্যাসটিকে একটি মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস বলবো। এখানে হুমায়ূন আহমেদ নায়লা চরিত্রের মনোজগতের অভ্যন্তরীণ অন্ধকার অলি-গলির মধ্যে আলোকপাত করার মাধ্যমে মানব চরিত্রের বিস্ময়কর কিন্তু নিয়ত বিরাজমান কিছু প্রবণতা সুনিপুণ দক্ষতায় পাঠকদের সামনে তুলে এনেছেন। আমি নিচে সে সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করছি। আলম আসার আগে পর্যন্ত নায়লার একটি সুখের সংসার ছিল। হঠাৎ ঝড়ের মত সেখানে আলম এসে উপস্থিত হওয়ায় নায়লার সব কিছু ওলট-পালট হয়ে গেল। কিন্তু আলমের কাছে তো এমন কোন জাদু-মন্ত্র ছিল না যা দিয়ে সে নায়লাকে আচ্ছন্ন করতে পারে। তাহলে নায়লার এমন কেন হল? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলেই আসলে আমরা মানব চরিত্রের সেই বিস্ময়কর প্রবণতাকে খুঁজে পাব, যাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা মানুষের নেই। নায়লা আসলে আলমের কাছে ছুটে যায় নি, বরং সে ছুটে গেছে মানুষের রক্তে নিয়ত বয়ে চলা সেই বিপন্ন বিস্ময়ের কাছে, সেই বিপুল অজানার কাছে যা জীবনকে প্রতি মুহূর্তে অস্থির করে রাখে, প্রাণবন্ত করে রাখে। নায়লা তার স্বামী-সন্তান নিয়ে একটি সুখী, নিস্তরঙ্গ জীবন যাপন করছিলো। কিন্তু সেই জীবনে হঠাৎ করে আলমের উপস্থিতি নায়লাকে মনে করিয়ে দেয়, প্রতি রাতে শুধু স্বামীর পথ পানে চেয়ে থাকাই জীবন নয়। শুধু সময়মত সন্তানকে দুগ্ধ পান করানোই জীবন নয়। বরং জীবন আরও গভীর, আরও বিচিত্র, আরও উত্তাল এক ঢেউ। তখন নায়লার অন্তর্জগতে বিভিন্ন প্রথাবিরোধী প্রবণতা দানা বেঁধে উঠতে থাকে। যেমন, তার মনে হয় সে যদি চুল কেটে ফেলে এবং ছেলেদের পোশাক পড়ে ছেলে সাজে তাহলে বোধহয় গভীর রাতে পথে-ঘাটে একা একা চলাফেরা করতে পারবে। আবার, এক সন্ধ্যায় আলমের হোটেলে গিয়ে এক ওয়েট্রেস মেয়েকে দেখে তার মনে হয় সে যদি মেয়েটির মত চাকরি করতে পারতো তাহলে কত ভালো হত। সে নিজের উপার্জন নিজের মত খরচ করতে পারতো। এই চিন্তাটি যদিও আপাত দৃষ্টিতে গঠনমূলক, কিন্তু অবস্থার প্রেক্ষিতে বুঝতে কোন অসুবিধা হয় না যে নায়লার মনে এ ধরনের বিক্ষিপ্ত চিন্তার উত্থান হয়েছে জীবন সম্পর্কে তার মাঝে বিদ্যমান হতাশা থেকে। আর এই হতাশাই ছিল নায়লার আলমের কাছে ফিরে ফিরে যাবার মূল কারণ। আলমের প্রতি নায়লার মুগ্ধতাকে তাই আমি প্রেম বলবো না। বরং একে বিচিত্র শক্তিশালী জন্মপ্রবণতার কাছে এক সাধারণ রমণীর অসহায় আত্মসমর্পণের আখ্যান বলাই বেশি যুক্তিযুক্ত হবে। ‘ছায়াবীথি’ উপন্যাসের একটি আকর্ষণীয় দিক হল, এটা সব শ্রেণীর পাঠকের কাছেই ভালো লাগবে। যারা উপরিতল সর্বস্ব বিনোদনের জন্যে এই উপন্যাসটি হাতে নিয়ে বসবেন, তাদের কাছে যেমন এই উপন্যাসটি ভালো লাগবে; আবার একইসাথে, যারা আমার মত উপন্যাসের উপরিতল ভেদ করে কেন্দ্রে ডুব দিয়ে মণি-মুক্তা খুঁজে আনতে চান তারাও হতাশ হবেন না। সব মিলিয়ে বলা যায়, এই চমৎকার ছদ্মবেশী মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাসটি সবারই ভালো লাগবে।