User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
নামঃ রোদসী জারনাজ রেসিম বইঃ অন্যজীবন লেখকঃ জাহানারা ইমাম প্রকাশনীঃ চারুলিপি প্রকাশন প্রচ্ছদঃ কাজী হাসান হাবিব ভূমিকাঃ মুহম্ম্দ জাফর ইকবাল প্রকাশকালঃ২০১৭ (চতুর্থ) পৃষ্ঠাঃ ১১২ রেটিংঃ ১০/১০ বিষয়ঃ আত্মজীবনী সূচনাঃ "১৯৮৫ সালে ঢাকায় বসে যখন জীবনের প্রথম দশকের দিকে দৃষ্টি ফেরাই তখন যেন বিশ্বাসই হতে চায় না সেই সময়ের সেই আমি আর আজকের এই আমি একই ব্যক্তি। দেশ, কাল, পরিবেশ, মানসিকতা সবই এত বেশি অন্যরকম ছিল মনে হয় সেটা অন্য এক জগতে অন্য এক জীবন" –লেখাটি হুবহু লেখিকার আত্মজীবনীমূলক বই অন্যজীবন থেকে নেয়া। বইটি যখন পড়তে শুরু করি তখন নিজেও বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছিলাম যে সত্যিই কি এটা জাহানারা ইমামের জীবনী। এই অতি ক্ষুদ্র জীবনীর শেষটা যে কত বড় ও চমৎকার তা পরিমাপ সম্ভবপর নয়।অবিভক্ত পাকিস্তান সময়ের পটভূমিতে লেখা লেখিকার জীবনীটি যেন জীবন্ত এক দর্শন। বইটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ: আত্মজীবনীমূলক এই বইটির প্রধান কাহিনী জাহানারা ইমাম(জুড়ু)কে নিয়ে।৬-৮ বছরের এক সাধারণ মেয়ে ছিল জুড়ু। সেই বিশ শতকের নারী জীবনের শত বাধা পেরিয়ে সমাজের চোখ রাঙানিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জীবনে সফল হওয়া এক নারীর কাহিনী রয়েছে এ বইটিতে। ৮ বছরের জুড়ুর ভাষা, তখনকার সময়ে তার ভাইবোনদের সাথে কাটানো সময়গুলি, পল্লীসমাজ ও সাজগোজ সবকিছু এগিয়ে চলতে চলতে কাহিনীটা শেষ হয় "জুড়ু" থেকে "জাহানারা"য় পরিণত হওয়ার পথ চলায়।সে সময়ে মেয়েরা বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারত না। পর্দা নিয়ে ধর্মে যতটুকু বলা আছে তার চেয়ে বাড়াবাড়িও দেখা যেত ওই যুগে। তবে জাহানারা ইমামের বাবার মুক্ত চিন্তা ও মানসিকতার কারণে জাহানারা ইমাম লেখাপড়া ও আধুনিকতার মাঝে বড় হন। একইসাথে তার মা ছিলেন খুব বুদ্ধিমতী এবং জ্ঞানী ভদ্র মহিলা। যদিও তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা খুব একটা লাভ করেননি তবু স্বামীর প্রেরণায় তিনি ঘরের ভিতরে চার দেয়ালে থেকেও মুক্ত চিন্তা ও জ্ঞান চর্চায় প্রখরতা অর্জন করেন। জাহানারা ইমামের পিতা ডেপুটি মাজিস্ট্রেট হওয়ায় তাদের পরিবার অনেক জায়গায় থাকার সুযোগ পায়। এ বইয়ে ছেলে মানুষ জুডুর ছেলেমানুষি থেকে শুরু করে স্কুলে ভর্তির অভিজ্ঞতা ও স্থান পায়। এ বইয়ে আছে গ্রাম ও শহরভেদে মানুষের ভাষা ও সমাজের বর্ণনা। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর যখন তাদের পরিবার কুড়িগ্রামে চলে আসে তখন ঐ সময়ের ও স্থানের লোকসমাজ সম্পর্কে বর্ণনা পাওয়া যায়। কুড়িগ্রামে লেখিকার ১১-১৪ বছর বয়সের সময় কাটে। কৈশোরে একটি মেয়ের জীবনের পরিবর্তনটা খুব দক্ষতার সাথে তুলে ধরেন লেখিকা।বাহিরে যাওয়ার প্রতি চলে আসে পারিবারিক ও সামাজিক নিষেধাজ্ঞা। এরপর থেকে তিনি মনোনিবেশ করেন বই পড়ায়। তবে পাঠ্য বইয়ের চেয়ে অন্যান্য বই পড়তেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। তিনি গ্রামে যাওয়াও একদম কমিয়ে দিলেন। তবে কোনরকম বড় অনুষ্ঠান হলে সবাই যেতেন গ্রামে। লেখিকার বর্ণনায় গ্রামের পরিবেশ জীবন্ত রূপ পায় যেন ।তখনকার অনুষ্ঠানে মানুষ একরাত আগে থেকে প্রস্তুতি নিত। প্রচুর খাবার রান্না করত। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন গরীব-দুখী সকলকেই পেটপুরে খাওয়ানো হতো। সে সময় মহিলারা মহিলা আসরে ঘুরে ঘুরে নাচত গান গাইত। বর্তমান সময়ের মতো মাথা গুনে গুনে রান্না করা হত না। আবার বিয়ের অনুষ্ঠানে কাঁদা ছোড়াছুড়ি রঙ ও হলুদ মাখামাখি তো থাকতই। এমনকি গ্রামে প্রসূতি নারীর জন্য কি নিয়ম থাকত সেটাও স্পষ্ট এ বইটিতে। মসলাযুক্ত ঝাল একটি খাবার খেতে দেয়া, আঁতুড় ঘরে চারদিন পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টা ই আগুন জ্বালানো এ সকল বিষয়ের খুব সুন্দর বিবরণ দিয়েছেন লেখিকা জাহানারা ইমাম। ধীরে ধীরে বড় হওয়ার পর তার ম্যাট্রিকুলেশন দেয়া নিয়ে তার চাচা-দাদীদের আপত্তি পেরিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া এক বড় বিষয়। ১৯৪২ সালে যখন লেখিকা রংপুর কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন তখন তার জীবনে আসে এক নতুন অধ্যায় । যে অধ্যায়কে আজ আমরা চিনি 'শরীফ ইমাম' নামে। বইয়ের ভিতর লেখনি দিয়ে তাদের প্রেম এর শুরু। এরই ফাঁকে লেখিকা রংপুর কারমাইকেল কলেজের তৎকালীন অবস্থার মনোমুগ্ধকর বর্ণনা করেন। তাতে উঠে আসে অঞ্জলি নামের এক সনাতনধর্মী কমিউনিস্ট মেয়ের। তার সাথে লেখিকার সখ্যতা গড়ে ওঠে। অন্জলির প্রেম ছিল শরীফ ইমামের বন্ধু সুজিতের সাথে। লেখিকা ও শরীফ ইমামের বাগদানের পরবর্তী পরিবর্তনও স্পষ্টত দৃশ্যমান । ওদিকে অঞ্জলির রাজনৈতিক জীবনের কারণে সুজিতের সাথে তার বিচ্ছেদ দেখানো হয় যা লেখনীর সহায়ক কাহিনীর রূপ পায়। লেখিকা নিজেও রাজনীতিতেজড়ানোর আগ্রহ এবং সবশেষে কলেজের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরের জীবনের ইঙ্গিত দিয়ে লেখিকা তার "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" কে বইয়ের শব্দে সমাপ্ত করেন। বইটির উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক দিকঃ আত্মজীবনীর শুরুটা হয় লেখিকার শৈশবের স্মৃতিগুলো নিয়ে চমৎকার বর্ণনা দিয়ে। বইটিতে প্রকাশ পায় তার পারিবারিক বন্ধনগুলোর সুস্পষ্ট উল্লেখ,মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ । সে সময়ের ভাষায় কিছু কিছু কথা ও আছে বইটিতে। বিশ শতকের গ্রামীণ উৎসবের আয়োজন কেমন হতো তা এই বইয়ে খুব সরল ভাষায় উঠে এসেছে। বিশ শতকে আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবেও মানুষ কিভাবে খাদ্য সংরক্ষণ করত তারও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা আছে। নারীদের পর্দা ব্যবস্থা, প্রসূতি নারীদের সেবা-যত্নের ও আনুষ্ঠানিকতার চিত্র পাই আমরা লেখিকার লেখনীতে। একইসাথে বইটির সবচেয়ে প্রশংসনীয় দিক হচ্ছে সাবলীল লেখনী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রবন্ধ বা আত্মজীবনী পড়তে গিয়ে মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে কিন্তু সাবলীল লেখনীর ফলে বইটি কখনই একঘেয়েমির কারণ হবে না। সবরকম পরিস্থিতিই কখনো কৌতুকের ছলে আবার কখনও আবেগ দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে। বইটি একইসাথে নারীদের প্রেরণা দিতেও খুব সাহায্য করবে। যে যুগে নারীরা অষ্টম শ্রেণীই পার করতে পারত না সে যুগে লেখিকা দশম শ্রেণী পার করে কলেজেও ভর্তি হয়েছিলেন। তাছাড়াও বইকে আপন করে নিয়ে একাকিত্ব কিভাবে দূর করা যায় তার উত্তম উদাহরণ এই আত্মজীবনীটি। অতএব, বইটিতে একইসাথে নারীজীবন, বিংশ শতক এবং সমাজব্যবস্থার সার্থক চিত্রায়ণ ঘটেছে। সর্বোপরি, ১৯৮৫ সালে প্রথম প্রকাশিত হওয়া বইটির ভাষা এতই প্রাঞ্জল যেন মনে হয় এটি লেখিকা গতকাল লিখলেন মাত্র। রিভিউ প্রসঙ্গেঃ আমার অল্প পরিসরে লেখা এ রিভিউটি সাধারণ পাঠকদের জন্য। যারা আত্মজীবনী শুনলেই একঘেয়েমি ধারণা পোষণ করেন তাদের জন্য আমার এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। রিভিউ এর একমাত্র উদ্দেশ্য সাধারণ পাঠকদের মাঝে বইটির ভাবার্থ সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি করা। সেই উদ্দেশ্য যদি সার্থক হয় তাতেই আমি তৃপ্ত। লেখক পরিচিতিঃ জাহানারা ইমামের জন্ম ৩ মে ১৯২৯ এ। জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের সুন্দরপুর গ্রামে। তিনি বি.এ করেন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম.এ করেন। তাছাড়াও তিনি বিএড করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পেয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়াগো স্টেট কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে ''সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন'' ডিগ্রি অর্জন করেন। তার পেশা ছিল শিক্ষকতা। তিনি সিদ্ধেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন ৮ বছর। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন প্রভাষকও ছিলেন। এছাড়া তিনি "খাওয়াতীন" নামক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। বিটিভিতে তিনি অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। তাঁর স্বামীর নাম শরীফ ইমাম। পারিবারিক জীবনে তাদের দুই পুত্র সন্তান ছিল। তারা হলেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শাফী ইমাম রুমী ও সাইফ ইমাম জামী। তিনি "বাংলা একাডেমী পুরস্কার" সহ বহু সম্মাননা অর্জন করেন। তাঁর অন্যান্য বই "গজকচ্ছপ", "দুই মেরু", "জীবন মৃত্যু", "প্রবাসের দিনলিপি", "একাত্তরের দিনগুলি" "বীরশ্রেষ্ঠ", "ক্যান্সারের সঙ্গে বসবাস" ইত্যাদি। এই মহীয়সী নারী ২৬ জুন ১৯৯৪ সালে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে মৃত্যুবরণ করেন।
Was this review helpful to you?
or
informative
Was this review helpful to you?
or
শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে সম্পূর্ণ ভিন্ন দিক দিয়ে দেখার জন্য কেবলমাত্র তার ‘অন্যজীবন’ বইটিই যথেষ্ট! বইটিতে যে জাহানারা ইমামকে আমরা দেখতে পাই, তার সাথে আমাদের পরিচিত শহীদ জননীর মিল নেই! বইয়ের শুরুই হয় জুড়ু নামের এক দুরন্ত কিশোরীর দুরন্তপনা দিয়ে, যা প্রথমে উত্তমপুরুষে লেখা না হলেও ক্রমান্বয়ে ‘আমি’ হয়ে উঠেছে। বইটিতে জাহানারা ইমামের ছোটবেলা থেকে তার ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত জীবনের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়। জুড়ু নামের দুরন্ত কিশোরী বাবার সাথে শহরে থাকতো, কিন্তু যখনই গ্রামে আসতো, তাকে আর কোথাও আটকে রাখার উপায় ছিল না! সারা পাড়া ঘোরা, পুকুরে দাপাদাপি সহ সব রকমের দুষ্টুমি সে সুনিপুণভাবে করতো! তার সাথে সাথে লক্ষ্য করা যায় তখনকার দিনের গ্রাম্য আর সমস্ত মেয়ের মতো তারও শাড়ি-গহনার প্রতি প্রবল আকর্ষণ। সুযোগ পেলেই নতুন শাড়ি-গহনা আর চুলে বিরাট খোপা বেঁধে বসে থাকতেন তিনি। তবে তার বাবার আধুনিকতার প্রভাব তার জীবনে যে প্রবলভাবে পড়েছিলো তা বইটি পড়লে সহজেই বোঝা যায়। জুড়ুর বাবা মোটেও তার এ ধরণের সাজ পছন্দ করতেন না, তিনি মেয়েকে ‘স্মার্ট’ তৈরি করতে চাইতেন। তখনকার দিনে মেয়ে দেখতে একটু বড় হয়ে গেলেই বিয়ে দিয়ে দেয়া হতো। কিন্তু জুড়ুর বাবা বাল্যবিবাহের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তাই তিনি পরিবার, সমাজ সবাইকে উপেক্ষা করে মেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে থাকেন। বইটিতে খাবার-দাবারের প্রতি জুড়ুর প্রবল আকর্ষণ টের পাওয়া যায়। বিভিন্ন খাবারের বিস্তর বর্ণনা আছে। এছাড়া শৈশবে তার আনন্দময় সময় যে নানীবাড়ি এবং দাদাবাড়িতে কেটেছে রয়েছে তারও ব্যাপক বর্ণনা। বইটিতে খুব ধীরে ধীরে জুড়ু জাহানারা হয়ে ওঠে। ডাকনাম আর ভালো নামের যেমন পার্থক্য রয়েছে অনেক, জুড়ু আর জাহানারা ইমামের মধ্যেও রয়েছে আকাশ-পাতাল তফাত! হয়তোবা শহরে থেকে পড়াশোনা না করলে এবং বাবা এতটা আধুনিক মানসিকতার না হলে তিনি নিজেও এতদূর আসতে পারতেন না! জাহানারা ইমাম নিজেই বলেছেন, “১৯৮৫ সালের ঢাকায় বসে যখন জীবনের প্রথম দশকের দিকে দৃষ্টি ফেরাই, বিশ্বাসই হতে চায় না সেই সময়ের আমি আর আজকের এই আমি একই ব্যক্তি।” বইয়ের প্রথমেই আছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের চমৎকার ভূমিকা। এছাড়া আছে একটি মেয়ের হঠাৎ বড় হয়ে ওঠার কারণে তার হুট করে পুরোপুরি ঘরবন্দী হয়ে যাওয়ার কথা, পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেও কী করে সে আগ্রহ আবার ফিরে পেলেন সে কথা। আছে এক সর্বগ্রাহী পাঠকের গল্প, হুট করে এক ছেলের প্রেমে পড়ে যাওয়া এবং প্রেমপত্র সহ মায়ের হাতে ধরা পড়ার গল্প – সর্বোপরি জুড়ু নামের এক দুরন্ত কিশোরী থেকে জাহানারা বেগম হয়ে ওঠার গল্প। অন্যরকম জাহানারা ইমামের গল্প জানতে ‘অন্যজীবন’ বইটি পড়ে ফেলতেই পারেন!