User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নামঃ গৃহদাহ লেখকঃ শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ধরনঃ চিরায়ত উপন্যাস প্রথম প্রকাশঃ ১৯২০ প্রকাশনীঃ শব্দশিল্প প্রচ্ছদঃ অরূপ মান্দি পৃষ্টাঃ ১৯২ রকমারি মুল্যঃ ১৭৬ নিষিদ্ধ সমাজ অনুমোদিত প্রেমের উপন্যাস গৃহদাহ। "গৃহদাহ"উপন্যাসে লেখক শরৎচন্দ্র সমসাময়িক সামাজিক জাতির আত্মিক বৈশিষ্ট্য,পারিপার্শ্বিক অবস্থা,ব্যক্তিমানসের পারস্পরিক সম্পর্ক,তাদের প্রেম-পরিণয়,বিশ্বাস কে তুলে ধরতে চেয়েছেন।সমাজ-সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় ন্যায়-নীতি যে কিভাবে সম্পূর্নরূপে এই সমাজের হাতে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে তাই এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য। #কাহিনী_সংক্ষেপঃ মহিম ও সুরেশের মধ্যে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব, তারা দু'জন এক সাথে এফ. এ পাশ করেছে । সুরেশ ধনী ঘরের সন্তান, সে বন্ধুর জন্য নিজের প্রাণ পর্যন্ত বাজি রাখতে পারে, তার প্রমাণ সে এর মধ্যে দু'বার দিয়েছে মহিমের প্রাণ বাঁচিয়ে। এর মধ্যে সুরেশ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে কিন্তু মহিম তা পারেনি। কেননা সে দরিদ্র ঘরের সন্তান, হোকক না সে মেধাবী। সুরেশ মহিমকে যারপরনাই জোরাজোরি করার পরেও সে মেডিকেলে ভর্তি হতে রাজি হয় না। সে তার পুরানো সিটি কলেজেই বি.এ ক্লাসে ভর্তি হয়ে যায়। কিছুদিন হলো সুরেশ শুনছে যে মহিম এক ব্রাহ্মকন্যা অচলার সাথে প্রেমকরে বেড়াচ্ছে, তার সাথে নাকি ব্রাহ্মমন্দিরেও যাতায়াত করছে। কিন্তু সুরেশ সেটা মেনে নিতে পারেনি, সে ধর্ম মানে না ঠিক কিন্তু সামাজিক জীব হিসাবে সমাজ মানে তাই সে হিন্দু সমাজের কোনো অপমান হোক তা সে চায় না। তাই সে মহিমকে ব্রাহ্মকন্যা অচলাকে ত্যাগ করতে পরামর্শ দিয়ে ব্যর্থ হলে নিজেই একদিন অচলাদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়। উদ্দেশ্য ছিল অচলার হাত থেকে মহিমকে বাঁচানো, কিন্তু সুরেশ সেখানে গিয়ে অচলার রূপ-গুণে-কথাবার্তায়, আচার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে নিজে অচলার প্রতি প্রেমালোলুপ হয়ে উঠে এবং মহিমের নামে কুর্শা রটিয়ে অচলার বাবার মনোরঞ্জন করতে সচেষ্ট হয়। এক পর্যায়ে অচলাও সুরেশের প্রতি দুর্বল হয়ে পরে। এক পর্যায়ে অচলা সুরেশকে পায়ে ঠেলে মহিমকে বিয়ে করলেও মহিমের সাধুতা, সরলতা, সল্পবাকতা ও অতিশীতলতায় তার প্রতি শ্রদ্ধাবিমুখ হয়। কেননা সে অতিমাত্রায় শিথিল তার চরিত্রে শৌর্যবীর্য আর পুরুষত্ব নাই বললেই চলে। এর মাঝে মহিমের দূর সম্পর্কের বোন মৃণাল ও তার একটি চিঠি কম অবদান রাখেনি অচলার মনে সন্দেহ আর স্বামীসংসারের প্রতি ঔদাসীন্নতা সৃষ্টিতে। আর এরেই মাঝে আবার গিয়ে হাজির সুরেশ..... তার পরেইতো ঘঠে যত অঘটন। গৃহের মুল দাহ তো সেখানেই। #পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ উপন্যাসটি পড়ে প্রথমে সুরেশকে উপকারী বন্ধুজ্ঞান করলেও শেষ অবধি সে তার স্বীয় মর্যাদা রক্ষা করতে পারিনি। আর শৌর্যবীর্যে ও পুরুষত্বে মহীয়ান একটা যুবকের শেষ পরিনতিতে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য শুধু ধুলোন্ঠিতই হয়নি তার অতীত সক্রিয়তাও খুয়া গেছে । আর মহিম, তার প্রতি ভালোবাসা জন্মালেও শেষ অবধি তার প্রতি ক্ষিপ্ত না হয়ে পারলাম না। কেননা সে যথাসময়ে যথার্থ কাজটা করতে ব্যর্থ। সরলতা,সাধুতা মিতবাকতা একজন মানুষের সৎগুণ হলেও তা সবসময় সুখকর নয়। যা তার ব্যর্থতার প্রধান কারন। উপন্যাসে পরিষ্কার পানি ঘোলা করতে তার নির্বুদ্ধিতা আর মিতবাকতার অবদানও কম ছিল না। অচলা, তার কথা আর কি বলব...তার দোলাচল প্রবৃত্তিই তার জীবনে করুণ পরিণতির জন্য দায়ী। মাকড়সার জালের মত দিনের পর দিন দোলাচলে সে জাল বুনেছে, পেন্ডুলামের মত তার যে দোদুল্যমানতা তারই ফলশ্রুতিতে অচলা সব হারায়ে দেশে এসে জীবনতরী শুকনো ডাঙ্গায় ভিড়িয়েছে। উপন্যাসের সর্বত্র সে যথাসময়ে যথা সিদ্ধান্তটা নিতে ব্যর্থ। দ্বিচারিণী অচলার হেয়ালিপনা আর স্বাধীনচেতা মনোভাবনা তার ট্র্যাজেডির মুল কারন। পক্ষান্তরে, শরৎ বাবুর (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) কথা না বললেই নয়... সে তার এই উপন্যাসে সর্বত্র রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছে। সে তার কোনো উপন্যাসেই ব্যাক্তিসত্তাকে লেখকসত্তা দ্বারা অতিক্রম করতে পারেনি। যা এই গৃহদাহে ও নয়। সুরেশ রক্তমাংসে, শৌর্যবীর্যে ব্যাক্তিত্ববান পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও এক জাতীয় দ্বিধা এনে লেখক হঠাৎ তার চরিত্রটি বিকাশে বাঁধা সৃষ্টি করে। যাতে শিল্পসত্তার সাথে শরৎ বাবুর নীতিবাদী সত্তার দ্বন্ধ স্পষ্ট। তিনি চাইলে উপন্যাসটিকে অন্যদিকেও ঘোরাতে পারতেন কিন্তু সামাজিক দায়বদ্ধতা আর সংস্কারাছন্ন মনো ভাবে জন্যই হয়তো পারেন নি। আমার মতে এটি বাংলা সাহিত্যে একটি বিরলপ্রজ সৃষ্টি। যে কোনো পাঠক এটা পাঠ করে বিমোহিত না হয়ে পারবে না। শরৎ সাহিত্য পাঠে অন্তত গৃহদাহ পাঠ সকল পাঠকের জন্য অপরিহার্য । #ব্যাক্তিগত_রেটিংঃ ৯/১০