User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Good for norhing. Manifesto of a Fascist
Was this review helpful to you?
or
তথ্যবহুল একটি বই। যাদের ইতিহাস পড়ার শখ আছে তারা বইটি সংগ্রহে রাখতে পারেন। যুদ্ধপূর্ব আওয়ামী লীগের উত্থান সম্পর্কে চমৎকার ইতিহাস বর্ণনা করেছেন লেখক।
Was this review helpful to you?
or
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল
Was this review helpful to you?
or
informative
Was this review helpful to you?
or
বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামীলীগ একটি গুরুত্বপূর্ণ দল। লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ এই বইয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে ধীরে ধীরে উত্থানপর্ব গুলো সুন্দর সাবলীল সহজ ভাষায় তুলে ধরেছেন।এই দল মুক্তিযোদ্ধ নেতৃত্বকারী দল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলটি কখনো সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় আবার কখনো সাথে থাকে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে।ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, আইউব খানের সামরিক শাসন, ছয় দফা আন্দোলন, উনসত্তের গনঅভ্যু্ত্থান, সত্তরের নির্বাচনের সবগুলোতে আওয়ামীলীগের অবদান ছিল। লেখক মহিউদ্দিন আহমদ এই ইতিহাসগুলো অনেক গুছিয়ে লেখেছেন তার এই বইয়ে।আওয়ামীলীগের নাম আসলেই যার নাম সবার আগে আসে তিনি শেখ মুজির রহমান।তার অক্লান্ত পরিশ্রমে দলটি হাটিহাটি পা পা করে এগিয়ে যায়।।আওয়ালীগের শুরুর দিকের ইতিহাস জানার জন্য এই বইটি অন্যতম।।
Was this review helpful to you?
or
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত ইতিহাস এই বইতে বর্ণনা করেছেন। তিনি খুব দারুণভাবে ঘটনাপ্রবাহগুলো তুলে ধরেছেন। সাল তারিখ বর্ণনার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। বইটি সহজ ও সাবলীল ভাষায় লেখা। এই বইটি পড়লে শুধু আওয়ামীলীগের ইতিহাস নয় একইসাথে ভাষা আন্দোল, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, আইউব খানের সামরিক শাসন, ছয় দফা আন্দোলন, উনসত্তের গনঅভ্যু্ত্থান, সত্তরের নির্বাচন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে।
Was this review helpful to you?
or
রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে মহিউদ্দিন আহমদের কাজগুলোয় আগ্রহ বেশ অনেকদিন থেকেই। যেহেতু প্রথমার বই, অর্থাভাবে খরিদ করা কষ্টকর। তবু আগ্রহ পূরণ করতেই হয়। জাসদের উন্থান পতন বইটা চমৎকার ছিল। বাংলাদেশের একটা পুরো সময়ের চিত্রই উঠে এসেছে বলা যায়। এই বইটার শুরু ভারত বিভাগের অব্যবহিত পর থেকে। আওয়ামী লীগের সূচনা থেকে সত্তরের নির্বাচন পর্যন্ত। আছে দলের কথা, নেতাদের কথা, সময়ের কথা। প্রচুর তথ্যবহুল একটা বই। আইয়ুব খাঁ-র ডায়েরী থেকে শুরু করে আগরতলা মামলার আসামীর জবানবন্দি পর্যন্ত তুলে এনেছেন লেখক। এই একটা কারনে বইটা চমৎকার এবং বিরক্তিকর। কোন কমিটিতে কে কে ছিল, তাদের নাম পড়তে পড়তে ঘটনাই ভুলায়ে দিছে নিরপেক্ষ কিনা, এই প্রশ্নের উত্তর হলো, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন অবস্থায় হিসাবে যথেষ্ট নিরপেক্ষ লেখা। এরচেয়ে নিরপেক্ষতা হয়তো লেখকের পক্ষে সম্ভবপর না
Was this review helpful to you?
or
A brief journey into Pakistan period...
Was this review helpful to you?
or
#রকমারিরিভিউপ্রতিযোগিতা বই- আওয়ামীলীগের উত্থান পর্ব :১৯৪৮-১৯৭০ লেখক-মহিউদ্দিন আহমদ পৃষ্ঠা-২৭১ মূল্য-৪৮০ আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠেছে নানান রাজনৈতিক দল , যার মধ্যে আওয়ামীলীগ একটি দল হলেও নানা দিক থেকে এটি একটি ব্যতিক্রম দল । আওয়ামীলীগ একটি পুরাতন দল । এর বিশাল পরিসর । আওয়ামীলীগ এর কথা আলোচনা করতে গেলে যাদের নাম চলে আসবেই তারা হচ্ছেন বাঙ্গালি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান । জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামীলীগের প্রাণভমরা ছিলেন, দলের তরুণ নেতা শেখ মুজিবর রহমান। দলের জন্মের ক্ষনটিতে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। সে সময় কারাবন্দী ছিলেন। ধারনা করা হয় , তাকে দলের নির্বাহী কমিটিতে জায়গা করে দিতেই যুগ্মসম্পাদক পদ টি তৈরি করা হয়েছিলো।১৯৫৩ সালে আওয়ামীলীগের ২য় কাউন্সিল সভায় তিনি পুরোপুরি ভাবে সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ফলে যুগ্ম সম্পাদক পদ টি লোপ পায়। এরপর আর তাকে পিছু ফিরে তাকেতে হয় নি একসময় তিনি হয়েগেছেন বঙ্গবন্ধু। আওয়ামীলীগের আলোচনা করতে গেলে অবধারিত ভাবে চলে আসে তার নাম। একজন ব্যক্তি , একটি রাজনৈতিক দল ও একটি দেশ একই মোহনায় মিশে যায় তখন তাদের আলাদা করে দেখা বা বোঝা কঠিন কাজ। আর এই কঠিন কাজটাই লেখক করে দেখিয়েছেন। আর তাই মুজিব আর আওয়ামী লীগ সমার্থক হয়ে উঠেছে বারবার। এবং ধীরে ধীরে উঠে এসেছে নৈপথ্য থেকে একটা জাতি, রাষ্ট্রের জন্মকথা। নানান সময়ে নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে দলটি হয়ে উঠেছে রাজনীতির মুলধারা। লেখক আওয়ামী লীগের উত্থান পর্ব বর্ণনা করতে গিয়ে তোলে এনেছেন দেশ ভাগের পর থেকে ১৯৪৮ সাল থেকে সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড। যেমন- দেশভাগ, ১৯৪৯ এর ছাত্রলীগের জন্ম, মোঘলটুলী থেকে রোজগার্ডেন, ১৯৫২ ভাষার লড়াই, ১৯৫৪ যুক্তফ্রন্ট, ভাঙাগড়া, উর্দি শাসন, ত্রিপুরা মিশন পূনর্জন্ম, ১৯৬৬ এর ছয়দফা, পাক দর্শন, ১৯৬৮আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৭০ নির্বাচন, উপসংহার। মোট কথা দলের উম্মেষ পর্ব থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত লেখক বর্ণনা করেন।১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে একখন্ড ভারত, আরেক খন্ড পাকিস্থান হিসেবে প্রকাশ পায়। পূর্ব বাংলা ও পাকিস্থান একত্র হয় শুধু মাত্র ধর্মের ভিত্তিতে। কিন্তু আনুসাঙ্গিক সব দিক থেকে পূর্ববাংলা পাকিস্থানের শাসক গোষ্ঠী থেকে বার বার বঞ্চিত হচ্ছিলো। তারই জের ধরে ছাত্র রাজনীতি তে ছাত্রলীগের জন্ম। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানিরা বাংলা ভাষার উপর আঘাত হানলে এই ছাত্রলীগ সোচ্চার হয়ে দাড়ায়। প্রতিবাদের উপর প্রতিবাদ চলে। এক সময় রক্ত আর প্রতিবাদের তোপে পড়ে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী মানতে বাধ্য হয়। অনেক স্বপ্ন নিয়ে যখন পাকিস্তানির সাথে একত্র হয়েছিলো পূর্ব বাংলার মানুষ। কিন্তু দেশ ভাগের পর তাদের আসল রূপ চিনতে ভুল হয় নি। তখন একমাত্র রাজনৈতিক দল মুসলীম লীগের উপর পূর্ব বাংলার মানুষের আস্থা কমে যেতে থাকে। এবং মুসলীম লীগের নীতিমালার বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিরোধী দল রূপে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হয় এবং ১৯৫৫ সালে এই নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ পরে। ১৯৫৩ সালের ১৪ নভেম্বর ঢাকার মুকুল সিনেমা হলে কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিবর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। শুরু হয় একত্রে পথ চলা।মহিউদ্দীন আহমদ এর এই বইয়ে কি করে একটি রাজনৈতিক দল একটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারে। তার বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়। নতুন প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল সম্পর্কে জানাতে বিশেষ ভুমিকা পালন করবে। সব শেষে লেখক অনেকের স্বাক্ষাতকার নিয়েছেন দল সম্পর্কে তা বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা গুলোতে আছে।
Was this review helpful to you?
or
‘আওয়ামীলীগ উথানপর্ব ১৯৪৮- ১৯৭০’ বইটি মহিউদ্দিন আহমেদ এর লেখা একটি বই । লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ এর জন্ম ১৯৫২ সালে ঢাকায় । পড়াশোনা করেছেন গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে । ১৯৭০ সালের ডাকসু নির্বাচনে মুহসীন হল ছাত্র সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিএলএফের সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দৈনিক গণকণ্ঠ-এ কাজ করেছেন প্রতিবেদক ও সহকারী সম্পাদক হিসেবে। দক্ষিণ কোরিয়ার সুংকোংহে বিশ্ববিদ্যালয়ে “মাস্টার্স ইন এনজিও স্টাডিজ’ কোর্সের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও অধ্যাপক। তার লেখা ও সম্পাদনায় দেশ ও বিদেশ থেকে বেরিয়েছে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা অনেক বই। তার লেখা এই বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে । বইটি প্রকাশিত হয় প্রথমা প্রকাশন থেকে এবং এর প্রচ্ছদ করেছেন মাসুক হেলাল । আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠেছে নানান রাজনৈতিক দল , যার মধ্যে আওয়ামীলীগ একটি দল হলেও নানা দিক থেকে এটি একটি ব্যতিক্রম দল । আওয়ামীলীগ একটি পুরাতন দল । এর বিশাল পরিসর । আওয়ামীলীগ এর কথা আলোচনা করতে গেলে যাদের নাম চলে আসবেই তারা হচ্ছেন বাঙ্গালি জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান । তার মাধ্যমেই একটি ব্যক্তি , একটি রাজনৈতিক দল ও একটি দেশ একই মোহনায় মিশে গিয়েছে । নানান সময়ে নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে দলটি হয়ে উঠেছে রাজনীতির মুলধারা ও এর নেপথ্য থেকেই একটি জনগোষ্ঠীর জেগে ওঠার গল্প উঠে এসেছে । এই রাজনৈতিক দল এর উথান সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে বইটি তে যা পাঠকদের নিকট অনেক ভালো লাগবে ও এই দলটি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে সাহায্য করবে ।
Was this review helpful to you?
or
লেখক মহিউদ্দিন আহমদ কে চিনি তাঁর লেখা 'জাসদের উত্থান পতন : অস্থির সময়ের রাজনীতি' বইটির মাধ্যমে। বইটি যখন প্রথম প্রকাশিত হয় সেসময় থেকেই বইটির পক্ষে বিপক্ষে প্রায়ই প্রথম আলো পত্রিকায় লেখক গবেষকগণ কলাম লিখতেন। জাসদের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে আমারও জানার আগ্রহ ছিল খুব, যে কারণে পরবর্তীতে বইটি সংগ্রহ করেছিলাম। বইটাতে লেখকের সহজবোধ্য ও নির্মোহ বিশ্লেষণ আমাকে মুগ্ধ করেছে। সেই মুগ্ধতা থেকে পরবর্তী সময়ে এদেশের অন্যতম প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কে নিয়ে লেখা ওনার আরো তিনটি বই কেনা হয়েছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর ইতিহাস বেশিরভাগ সময়ই দলের নেতা, কর্মী কিংবা দল সমর্থক কেউ লিখেছেন। নির্মোহ ও নিরপেক্ষ ভাবে রাজনৈতিক দলের ইতিহাস খুব একটা লেখা হয়নি। যে কারণে দেখা যায়, লেখকরা নিজেদের খেয়াল খুশিমতো ঘটনা প্রবাহ সাজিয়েছেন, আলোচনা করেছেন এবং সবশেষে নিজেই বিচারক হয়ে একটা রায় দিয়ে ফেলেন। অর্থাৎ নিজের ধারণাপ্রসূত মন্তব্য পাঠককে গেলানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু নিরপেক্ষতার চাদর হারানো ইতিহাস খুব বেশিদিন টেকে না। চোখরাঙানি কিংবা আইন করেও সেই ইতিহাস টেকানো যায় না। আওয়ামী লীগ নিয়ে লেখক মহিউদ্দিন আহমদ দুটো বই লিখেছেন, তার একটি হল- 'আওয়ামী লীগ : উত্থান পর্ব ১৯৪৮-১৯৭০'। ভূমিকা, উপসংহার ও পরিশিষ্টবাদে মোট ১৪ টি অধ্যায়ে লেখক আওয়ামী লীগের নানা ঘটনা প্রবাহ পাঠকের সামনের তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তুলে ধরেছেন পর্দার পেছনের বিষয় ও এমন সব খুঁটিনাটি বিষয় ও তথ্য যা অনেকটা সাগর সেঁচে মুক্তা আহরণের মতই কঠিন। কারণ আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের অন্যতম পুরনো একটি দল, এই দলের তথ্যের ঝাঁপিটিও অনেক বড়। এই তথ্যগুলো আবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা জায়গায়। আলোচ্য বইয়ে নানা ঘটনা, চরিত্র ও পটভূমিকে তিনি একসূত্রে গেঁথে আওয়ামী লীগের চরিত্র রূপায়ণের চেষ্টা করেছেন। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, এটি কি আওয়ামী লীগের ইতিহাস, না ইতিহাসের গল্প? দলের বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ, না পরম্পরা? দুটোই হতে পারে। মহিউদ্দিন আহমদ বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেন- ‘আমার কাজ অনেকটা রাঁধুনির মতো। বিভিন্ন সূত্র থেকে চাল ডাল তেল মসলা জোগাড় করে তবেই তো রান্না। এ জন্য আমাকে খোঁজখবর করতে হয়েছে।’ আলোচ্য বইয়ের শুরু হয়েছে '৪৭ এর দেশভাগ এবং শেষ হয়েছে '৭০ এর নির্বাচনের মাধ্যমে। দেশভাগের সময়ে বাঙ্গালীদেরকে কংগ্রেস এবং মুসলিমলীগ নেতারা কিভাবে যৌথভাবে বঞ্চিত ও প্রতারিত করেছেন তা চমৎকারভাবে বিবৃত হয়েছে আলোচ্য গ্রন্থে। দেশভাগের পটভূমি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলমান বিরোধ, তেল-জলের সম্পর্ক, সর্বোপরি কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতৃত্বের পারস্পরিক সন্দেহ-বিশ্বাসকে সামনে নিয়ে এসেছেন। লাহোর প্রস্তাবে একটি রাষ্ট্র বা একাধিক রাষ্ট্র গঠনের কথা ছিল, সেই বিতর্ক তখন বড় ছিল না; তখন ভারতের অধিকাংশ মুসলমান পৃথক আবাসভূমির স্বপ্নে বিভোর ছিল। সে স্বপ্নভঙ্গ হতেও বেশি সময় লাগেনি। যে কারণে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত হওয়া পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ নামে উপমহাদেশে তৃতীয় রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছিল। আলোচনা হয়েছে ছাত্রলীগের জন্ম ইতিহাস নিয়ে। ছাত্রলীগের নানা গৌরবময় কর্মকান্ড নিয়ে। প্রসঙ্গক্রমে ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, আইউব খানের সামরিক শাসন, ছয় দফা আন্দোলন, উনসত্তের গনঅভ্যু্ত্থান, সত্তরের নির্বাচনের ইতিহাস নিয়ে সাবলীল আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিয়ে কথা বলতে গেলেই যার নামটি অবধারিতভাবে উঠে আসে তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মহিউদ্দিন স্বীকার করেছেন, ‘আওয়ামী লীগের ইতিহাস আলোচনা করতে গেলে অবধারিতভাবে চলে আসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। একজন ব্যক্তি একটা রাজনৈতিক দল ও একটা দেশ যখন এক হয়ে মিশে যায় তখন তাদের আলাদা করে দেখা বা বোঝা কঠিন একটা কাজ।’ পাকিস্তান আমলে শেখ মুজিব ছিলেন তরুণ নেতা। তারুণ্যের সঙ্গে তিনি সাহস ও জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে মেলাতে পেরেছিলেন বলেই রাজনীতির গতিধারা ঘুরিয়ে দিতে পেরেছিলেন। বয়সে যাঁরা তাঁর চেয়ে তরুণ, তাঁদের ভরসাস্থল হয়েছিলেন শেখ মুজিব। ষাটের দশকের শুরুতে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকটিও ছিল কৌতূহলোদ্দীপক। তিনি পাকিস্তানিদের সঙ্গে থাকা যাবে না বলে অভিমত দিলে কমিউনিস্ট নেতারা বললেন, ‘এখনো সময় আসেনি, জনগণকে প্রস্তুত করেই চূড়ান্ত সংগ্রামে নামতে হবে।’ জবাবে তিনি বললেন, ‘আপনাদের কথা মেনে নিলাম, কিন্তু স্বাধীনতাই আমার শেষ কথা।’ এখনও অনেকে মাঝে মাঝে বলার চেষ্টা করেন সশস্ত্র লড়াই এর মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করার জন্য আওয়ামীলীগ কিংবা শেখ মুজিবের কোন প্রস্তুতি ছিলনা। পাকিস্তানীদের আক্রমণের কারণে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়। আলোচ্য গ্রন্থটি পাঠে এই শ্রেণির লোকদের বক্তব্যের অসারতা প্রমাণিত হয়। ১৯৬২ সনে শেখ মুজিবের ত্রিপুরা মিশনটি লেখক এখানে সুস্পষ্টভাবে তুলে এনেছেন। এর মধ্যে দিয়ে দেখা যায় শেখ মুজিব নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতির পাশাপাশি সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীকার আদায়ের পথটিও খোলা রেখেছিলেন। ত্রিপুরা মিশনে তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা রেজা আলীকে ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে দলের বাইরেও সবসময় শেখ মুজিবের যে একটি নিজস্ব নেটওয়ার্ক বিস্তৃত ছিলো তা আলোচ্য গ্রন্থে প্রমাণিত হয়েছে। একই সাথে ছাত্রলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান ও আবদুর রাজ্জাকের গড়া 'নিউক্লিয়াস' এর প্রসঙ্গটি আনলে আরো ভালো হতো। নিউক্লিয়াস নিয়ে তিনি অবশ্য বিশদ আলোচনা করেছেন তাঁর লেখা 'জাসদের উত্থান পতন' বইয়ে। জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামীলীগে অভ্যন্তরে পরস্পরবিরোধী ধারার অবস্থান এবং তাদের মধ্যে মত বিরোধের কারণে বারবার দলের অভ্যন্তরে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে প্রথম থেকেই মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সাথে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বিরোধ, পররাষ্ট্র নীতির প্রশ্নে ৫৭ সালে দলের ভাঙ্গন, প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খানকে ভাসানী কর্তৃক হেনস্তা করা, সোহরাওয়ার্দী মৃত্যুর পর শেখ মুজিব আওয়ামীলীগ পুনুরুজ্জীবন করার সময় দলের সিনিয়র নেতাদের ভূমিকা, এনডিএফ থেকে বেরিয়ে আওয়ামীলীগকে রাজনীতিতে সক্রিয় করার সময় আতাউর রহমান খান আবুল মনসুর আহমেদের মত নেতাদের তীব্র বিরোধিতা, ছয় দফার বিরুদ্ধে দলের নেতাদের একাংশের অবস্থান এবং মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সালাম খানদের নেতৃত্বে পাল্টা আওয়ামীলীগ গঠনের মত বিষয়গুলো লেখক পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন সুনিপুণভাবে। 'আওয়ামী' শব্দটি যে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর দেওয়া, তা আগে জানা ছিল না। একই সাথে '৭০ পর্যন্ত ভাষানীর নানা ভূমিকা সংক্ষেপে উঠে এসেছে এখানে। অবাক হয়েছি শেরে বাংলা ফজলুল হক সম্পর্কে পড়তে গিয়েছে। এ.কে ফজলুল হকের রাজনৈতিক জীবনের সুবিধাবাদী অবস্থান, ঘনঘন রাজনৈতিক মত ও পথ পরিবর্তনের বিষয়টি আলোচ্য গ্রন্থে পাঠকের সামনে পরিষ্কার ভাবে উদ্ভাসিত হয়েছে। ১৯৪৯ সনের ২৩ জুন রোজগার্ডেনে অনুষ্ঠিত আওয়ামীলীগের উদ্বোধনী অধিবেশনে শেরে বাংলা এ. কে ফজলুল হক কিছু সময়ের জন্য যোগদেন এবং বক্তব্য প্রদান করেন। মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন “ফজলুল হক কিছুক্ষণের জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি একটা বক্তব্য দেন। কয়েক মিনিট পরেই তিনি সম্মেলনস্থল ছেড়ে চলে যান। হয়তো তাহার ভয় ছিল পাছেনা সরকারের এডভোকেট জেনারেলের পদ হারাইতে হয়”। শুধু তাই নয় আওয়ামীলীগে সাংগঠনিক কমিটির প্রথম সভা হয় ১৫০ মোগলটুলীতে। ফজলুল হক এই সভাতেও যোগদান করেছিলেন। ৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলি বর্ষণের প্রতিবাদে ঢাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। এতে অন্যান্যের মাঝে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং একে ফজলুল হকের নাম ও ছিল। কিন্তু পরদিন ফজলুল হক তার বিবৃতি অস্বীকার করেন। তবে পাকিস্তান কায়েমের পরপর ঢাকায় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে এ.কে ফজলুল হকের যে কথোপকথন লেখক পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেছেন তাতে ফজলুল হকের সাহসের প্রশংসা করতেই হয় এবং বলতেই হবে তিনি সত্যিকার ভাবেই শেরে বাংলা। নানা প্রেক্ষিতে উঠে এসেছে ইত্তেফাক ও মানিক মিয়ার কথা। মানিক মিয়ার ঢাকা আগমন এবং ইত্তেফাক প্রকাশের পটভূমিটি এখানে লেখক চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রতিষ্ঠাকালীন কোষাধ্যক্ষ ইয়ার মোহাম্মদ খানের স্ত্রীর কিছু আক্ষেপের কথাও তুলে ধরেছেন লেখক। ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৭০। প্রায় পুরো সময়টি আওয়ামী লীগকে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে, মাঝখানে ১৩ মাসের কোয়ালিশন সরকারের অংশীদার হওয়া ছাড়া। শাসকদল হিসেবে আওয়ামী লীগ সফল বা ব্যর্থ সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে কিন্তু মাঠের আন্দোলনে এখনো পর্যন্ত দলটি অদ্বিতীয়। অন্যান্য দল ও নেতারা যখন বারবার মত ও পথ পরিবর্তন করেছেন, শেখ মুজিব লক্ষ্য অর্জনে অবিচল থেকেছেন। মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, 'পাকিস্তানের ২৪ বছরের রাজনীতিতে বাঙালির চাওয়া-পাওয়া আবর্তিত হয়েছে প্রধানত গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে কেন্দ্র করে। একই দাবি অন্য দলগুলোরও ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ যত স্পষ্ট করে তুলতে পেরেছে, অন্যরা তা পারেনি।' একারণেই হয়তো ন্যাপে বাঘা বাঘা সব নেতার উপস্থিতিও জনগণের মন জয় করতে পারেনি। রাজনীতি সচেতন পাঠক অথবা স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি বুঝতে ও জানতে আগ্রহী হলে পড়তে পারেন মহিউদ্দিন আহমদ এর এই বইটি।
Was this review helpful to you?
or
এ দেশে বিভিন্ন সময়ে গড়ে উঠেছে অনেক রাজনৈতিক দল। এদের মধ্যে নানা দিক থেকেই আওয়ামী লীগ ব্যতিক্রম। আওয়ামী লীগ পুরোনো একটি দল। বিশাল এর ক্যানভাস। আওয়ামী লীগের ইতিহাস আলোচনা করতে গেলে অবধারিতভাবে চলে আসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। একজন ব্যক্তি, একটি রাজনৈতিক দল এবং একটি দেশ যখন এক মোহনায় মিশে যায়, তখন তাদের আলাদা করে দেখা বেশ কঠিন। নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দলটি একসময় হয়ে উঠেছে রাজনীতির মূলধারা এবং ধীরে ধীরে এর নেপথ্য থেকে উঠে এসেছে একটি জনগোষ্ঠীর জেগে ওঠার গল্প। স্মৃতি-বিস্মৃতির ঝাঁপি খুলে গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ ছেকে তুলেছেন এই দলের উত্থানপর্ব।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারিরিভিউপ্রতিযোগ সব কিছুরই শুরু আছে, তেমনি একটা শুরু ছিল ক্রমাগত নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়া দল আওয়ামীলীগের। একটি দল কখন অন্যান্য দলকে ছাড়িয়ে যায়? যখন দলটি নীতি, আদর্শ কিংবা সাংগঠনিক শক্তিতে তাদের থেকে এগিয়ে থাকে এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে। এ কথা মনে রাখলে ছয় দশকের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের অগ্রসরমাণ অবস্থানের একটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। নীতি ও আদর্শে সব সময় অগ্রবর্তী অবস্থান নিতে না পারলেও আওয়ামী লীগ কৌশলে এগিয়ে থেকে জনচিত্তকে নাড়া দিতে পেরেছে। জীবিত অবস্থায় তো বটেই, মৃত্যুর পরও চার দশক ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আর ২৩ বছরের পাকিস্তানি শাসনামলের প্রায় অর্ধেক সময় তাঁর কেটেছে কারাগারে। অন্য রাজনীতিকেরা যখন লাভ-লোকসানের হিসাব–নিকাশে ব্যস্ত, তখন তিনি ‘জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য’ ভেবে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলনের দীপশিখা জ্বালিয়ে গেছেন বলে তাঁর সমর্থক ও অনুসারীরা মনে করেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অব্যবহিত পর মুসলিম লীগের দোর্দণ্ড প্রতাপের মধ্যে আওয়ামী লীগের আবির্ভাব বিরোধী দল হিসেবে। পরবর্তী ৬৮ বছরে আওয়ামী লীগে অনেক নেতা এসেছেন, দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন, কেউবা দুঃসময়ের কান্ডারি হয়েছেন; কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের জায়গাটি কেউ পূরণ করতে পারেননি। তিনি যখন দলের সাধারণ সম্পাদক, তখন তাঁকে আমরা পেয়েছি চালকের আসনে। সভাপতি ও অন্য জ্যেষ্ঠ নেতারা তাঁর নির্দেশনা-পরামর্শ মেনে চলতেন। আবার শেখ মুজিব যখন দলের সভাপতি, তখন তিনিই হন দল ও রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। এমনকি যখন তিনি কোনো পদে থাকেন না, তখনো দল পরিচালিত হয় তাঁর ‘হুকুমে’। শেখ মুজিবের ক্যারিশমা যেমন আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, তেমনি তাঁর মৃত্যুর চার দশক পরও তিনি রাজনীতির মিথ ও প্রতীক। আওয়ামী লীগের বয়স ৬৮ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে নানা উত্থান-পতন, সংঘাত ও সম্মিলনের মধ্য দিয়ে দলটি বর্তমান পর্যায়ে পৌঁছেছে। গবেষক-লেখক মহিউদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগ: উত্থানপর্ব ১৯৪৮-১৯৭০-এ মাত্র ২১ বছরের কাহিনি বিবৃত করেছেন। তাও নিরবচ্ছিন্ন ইতিহাস নয়। নানা ঘটনা, চরিত্র ও পটভূমিকে তিনি একসূত্রে গেঁথে আওয়ামী লীগের চরিত্র রূপায়ণের চেষ্টা করেছেন। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, এটি কি আওয়ামী লীগের ইতিহাস, না ইতিহাসের গল্প? দলের বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ, না পরম্পরা? দুটোই হতে পারে। মহিউদ্দিন আহমদ বইয়ের ভূমিকায় লিখেছেন, ‘আমার কাজ অনেকটা রাঁধুনির মতো। বিভিন্ন সূত্র থেকে চাল ডাল তেল মসলা জোগাড় করে তবেই তো রান্না। এ জন্য আমাকে খোঁজখবর করতে হয়েছে।’ এবং লেখক সাধ্যমতো তাঁর প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ব্যবহারও করেছেন। কিন্তু যেসব তথ্য-উপাত্ত বইয়ে নেই, সেগুলো সংযুক্ত হলে লেখকের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ অপরিবর্তিত থাকত কি না, সেই প্রশ্নও উঠতে পারে। যা নেই, তা নিয়ে আফসোস করে লাভ নেই; যা আছে, সেটি নিয়েই আলোচনা হোক। মহিউদ্দিন আহমদের আওয়ামী লীগের বিচার বা মূল্যায়ন শুরু হয়েছে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ থেকে। দেশভাগের পটভূমি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলমান বিরোধ, তেল-জলের সম্পর্ক, সর্বোপরি কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতৃত্বের পারস্পরিক সন্দেহ-বিশ্বাসকে সামনে নিয়ে এসেছেন। লাহোর প্রস্তাবে একটি রাষ্ট্র বা একাধিক রাষ্ট্র গঠনের কথা ছিল, সেই বিতর্ক তখন বড় ছিল না; তখন ভারতের অধিকাংশ মুসলমান পৃথক আবাসভূমির স্বপ্নে বিভোর ছিল। অনেকের দাবি, পাকিস্তান না হলে বাংলাদেশ হতো না। এর পাল্টা দাবি হলো, এ অঞ্চলের মানুষ যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নতুন দেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল, শাসকেরা উল্টো পথে চলেছেন বলেই পাকিস্তান টেকেনি। বাংলাদেশ নামে উপমহাদেশে তৃতীয় রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটল। আওয়ামী লীগ: উত্থানপর্ব ১৯৪৮-১৯৭০-এর অন্যান্য অধ্যায় বিন্যস্ত হয়েছে এভাবে: ছাত্রলীগের জন্ম, মোগলটুলী থেকে রোজ গার্ডেন, ভাষার লড়াই, যুক্তফ্রন্ট ভাঙাগড়া উর্দি শাসন, ত্রিপুরা মিশন, পুনর্জন্ম, ছয় দফা, পাক দর্শন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পালাবদল, নির্বাচন ও উপসংহার। এর প্রায় প্রতিটি অধ্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব প্রধান চরিত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। অর্থাৎ তিনি দলকে ছাড়িয়ে গেছেন। দল নেতাকে পরিচালিত করেনি। বরং নেতা যেভাবে চেয়েছেন, সেভাবে সাজিয়েছেন। মহিউদ্দিন স্বীকার করেছেন, ‘আওয়ামী লীগের ইতিহাস আলোচনা করতে গেলে অবধারিতভাবে চলে আসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। একজন ব্যক্তি একটা রাজনৈতিক দল ও একটা দেশ যখন এক হয়ে মিশে যায় তখন তাদের আলাদা করে দেখা বা বোঝা কঠিন একটা কাজ।’ সেই কঠিন কাজটিই লেখক করেছেন নানা তথ্য ও ঘটনার মিশেলে। নানা ঘটনা বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, শেখ মুজিবুর রহমান শুরু থেকে একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছেন এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যখন যাঁদের প্রয়োজন মনে করেছেন, তাঁদের দলে এনেছেন। যখন বাধা মনে করেছেন, সরিয়ে দিয়েছেন কিংবা তাঁরা স্বেচ্ছায় সরে গিয়েছেন। পাকিস্তান আমলে শেখ মুজিব ছিলেন তরুণ নেতা। তারুণ্যের সঙ্গে তিনি সাহস ও জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে মেলাতে পেরেছিলেন বলেই রাজনীতির গতিধারা ঘুরিয়ে দিতে পেরেছিলেন। বয়সে যাঁরা তাঁর চেয়ে তরুণ, তাঁদের ভরসাস্থল হয়েছিলেন শেখ মুজিব। ষাটের দশকের শুরুতে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকটিও ছিল কৌতূহলোদ্দীপক। তিনি পাকিস্তানিদের সঙ্গে থাকা যাবে না বলে অভিমত দিলে কমিউনিস্ট নেতারা বললেন, ‘এখনো সময় আসেনি, জনগণকে প্রস্তুত করেই চূড়ান্ত সংগ্রামে নামতে হবে।’ জবাবে তিনি বললেন, ‘আপনাদের কথা মেনে নিলাম, কিন্তু স্বাধীনতাই আমার শেষ কথা।’ সে সময় সেনাবাহিনী ও জনপ্রশাসের ভেতরের যেসব বাঙালি কর্মকর্তা আইয়ুব খানকে উৎখাতের পরিকল্পনা করেছিলেন, তাঁরা অনেক দলের বড় বড় নেতার কাছে গিয়েছিলেন। কেউ সাড়া দেননি। কিন্তু শেখ মুজিব তাঁদের বিমুখ করেননি। তিনি তাঁদের মনোভাব বুঝতে চেষ্টা করেছেন। নিজেকেও প্রস্তুত করেছেন। স্বাধীনতাসংগ্রামে ভারতের সমর্থন আদায়ে গোপনে আগরতলায় গিয়েছিলেন তিনি। শেখ মুজিবের সাফল্যের আরেকটি কারণ ষাটের দশকে যেসব অর্থনীতিবিদ, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ পাকিস্তানিদের শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, তাঁদের প্রায় সবাইকে নিজের পক্ষে টেনেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দলের নেতাদের চেয়ে তাঁদের ওপরই বেশি ভরসা করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের বড় অর্জন হলো দেশের বুদ্ধিজীবীদের প্রাগ্রসর অংশটিকে আস্থায় নিয়ে তাদের মেধাকে কাজে লাগাতে পারা।’ শেখ মুজিব সেটি পেরেছেন বলেই সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান এমন নেতা ছিলেন, যিনি দলকে পাশ কাটিয়েও নিজের চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে ছয় দফার কথা বলা যায়। লাহোরে বিরোধী দলের সম্মেলনে ছয় দফা কর্মসূচি উপস্থাপনের আগে দু-চারজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছাড়া দলের কেউ জানতেন না। অন্যদিকে ভারতের সহায়তার জন্য তিনি যে ১৯৬২ সালের গোড়ার দিকে আগরতলা যান, তা–ও দলের কাউকে জানাননি। সহায়তা নিয়েছেন দলের বাইরের কয়েকজন বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীর। ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৭০। প্রায় পুরো সময়টি আওয়ামী লীগকে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে, মাঝখানে ১৩ সালের কোয়ালিশন সরকারের অংশীদার হওয়া ছাড়া। শাসকদল হিসেবে আওয়ামী লীগ সফল বা ব্যর্থ সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে কিন্তু মাঠের আন্দোলনে এখনো পর্যন্ত দলটি অদ্বিতীয়। অন্যান্য দল ও নেতারা যখন বারবার মত ও পথ পরিবর্তন করেছেন, শেখ মুজিব লক্ষ্য অর্জনে অবিচল থেকেছেন। এ কারণেই পাকিস্তান আমলে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি—ন্যাপে বাঘা বাঘা নেতা থাকলেও তাঁরা শেখ মুজিবের মতো জনগণের হৃদয় স্পর্শ করতে পারেননি। মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, পাকিস্তানের ২৪ বছরের রাজনীতিতে বাঙালির চাওয়া-পাওয়া আবর্তিত হয়েছে প্রধানত গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে কেন্দ্র করে। একই দাবি অন্য দলগুলোরও ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ যত স্পষ্ট করে তুলতে পেরেছে, অন্যরা তা পারেনি। স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি বুঝতে আওয়ামী লীগ: উত্থানপর্ব একটি উল্লেখযোগ্য বই। মহিউদ্দিন আহমদের এই ইতিহাস বিচারের সঙ্গে যাঁরা একমত, তাঁরা তো বটেই, যাঁরা একমত নন, তাঁদের কাছেও বইটি সমাদৃত হবে আশা করি। ঘটনা বর্ণনায় তাঁর কুশলতা বইটিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। (তথ্য ও কথা সংগ্রহীত)