User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
নাম: এই গরবের ধন লেখক: মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ প্রকাশনী: মাকতাবাতুল আযহার . . সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী—ওয়ান ম্যান আর্মি! তিনি একজন ব্যক্তিমাত্র ছিলেন না—ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান—একটি আন্দোলন। সিরাজগঞ্জের এই কবি কেবল সিরাজগঞ্জের ছিলেন না; পরিণত হয়েছিলেন গোটা বাংলাদেশের কবিতা ও সাহিত্যের প্রাণপুরুষে। অনেকদিন ধরেই ইসমাঈল হোসেন সিরাজী সম্পর্কে জানার আগ্রহ নিয়ে ঘুরছি। একদিন আমাদের মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ‘বেফাক’ এর কোনো এক ক্লাসের বইতে দেখলাম উনার সংক্ষিপ্ত জীবনী যুক্ত করেছে। আগ্রহ আরেকটু বাড়লো কিন্তু বইপত্র পাচ্ছিলাম না। এই বইটি কিশোর পাঠ্য হলেও কিছু জিনিস জানা যাবে। বইটি দু’টি অংশে বিভক্ত। ১ম অংশ—এই গরবের ধন: ফখরে বাঙাল আল্লামা তাজুল ইসলাম রহ. এর জীবনী এবং ২য় অংশ—কবিতার শেরওয়ানি: সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজীর জীবনী। ২য় অংশ নিয়েই কিছু কথা- . ১৮৮০ সালে জন্মেছিলেন এই ক্ষণজন্মা কীর্তিমান পুরুষ। তিনি ছিলেন বহু গুণে গুণান্বিত—একজন সফল কবি, লেখক এবং বাগ্মী পুরুষ। ১৮৫৭ সালের আযাদী আন্দোলনের পর বৃটিশ বেনিয়ারা বিশেষ করে মুসলমানদের উপর অতিমাত্রায় খড়গহস্ত হয়ে ওঠে। বিপরীতে মুসলমানদের ঘুমন্ত, উদাসীন, সোনালি অতীত ভুলে যাওয়া নিয়ে তাঁর অন্তরে ব্যথা ছিলো। এ ব্যথা উপশমে লিখতেন, বক্তৃতা দিতেন—মানুষ তন্ময় হয়ে শুনতো। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায়ই লিখেন আগুনজ্বলা অমর কবিতা ‘অনলপ্রবাহ’। তৎকালীন মুসলিম সমাজের অন্যতম অভিভাবক মুনশী মেহেরুল্লাহ রহ. এর প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় ‘ অনলপ্রবাহ’ বই আকারে বের হয়। . বই বাজেয়াপ্ত হয়। দন্ডিত হন তিনি। কিন্তু সিরাজী ছিলেন জীবন্ত আগ্নেয়গিরি—জেল-জুলুম লাভা উদগীরণ বন্ধ করতে পারেনি! বৃটিশদের প্রস্তাব মেনে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হতে পারতেন কিন্তু আদর্শ বিসর্জন দেওয়ার বদলে কারাবরণকে স্বাগত জানান। ১৯১২ সালে উসমানী খিলাফতের পক্ষ নিয়ে বলকান যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধে তাঁর ভূমিকা এতই প্রসংশনীয় ছিলো যে, তুর্কি ভাষায় লিখে তা আংকারা যাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়!! তাঁকে ‘আফেন্দি’ উপাধি দেওয়া হয় এবং তাঁর ইন্তেকালের সংবাদে তুর্কিরা শোক প্রকাশ করেছিলো। . বক্তৃতা উপলক্ষে তিনি মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, বগুড়া, কুমিল্লা, বরিশাল, ফেনী, পাবনা, সিলেট, ঢাকা, কলকাতাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা সফর করেছেন। তাঁর জাগরণমূলক বক্তৃতার বর্ণনা পাওয়া যায় মরহুম সাহিত্যিক ইবরাহীম খাঁ ও পল্লীকবি জসীমউদদীনের লেখায়। . সিরাজীর আতিথেয়তা ছিলো প্রবাদতুল্য। অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল না হলেও ধার দেনা করেও মানুষকে সাহায্য করতেন। তিনি বিনয়ী হলেও সবলের কাছে কখনোই দুর্বলতা প্রকাশ করতেন না। একবার নির্বাচনে দাঁড়ালে ছেলে পরামর্শ দিলো, কিছু প্রভাবশালী লোকের সাথে দেখা করতে। উত্তরে বলেছিলেন—আমি ভোট ভিক্ষায় বের হবো? পাবনাবাসীর সৌভাগ্য যে, সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী তাদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য দাঁড়িয়েছে। . মসী হাতে ময়দানে অবতীর্ণ হওয়া নবীনদের উৎসাহ-পরামর্শ দেওয়া দায়িত্ব মনে করতেন। একথার সাক্ষ্য মেলে কবি নজরুল, জসীমউদদীন, প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ প্রমুখ কালজয়ী সাহিত্যিকের লেখনীতে। মহাকবি কায়কোবাদ-কে স্বর্ণের দোয়াত কলম দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। . সব মহল থেকেই তাঁকে মনে করা হতো ভারতবর্ষের বিশেষ করে বাংলাদেশের একজন অন্যতম প্রধান জাগরণের নেতা। তৎকালীন সব বড় নেতারা বিভিন্ন সময়ে হাজির হয়েছেন তাঁর সিরাজগঞ্জের বাড়িতে। তালিকায় আছেন—জিন্নাহ, নেহেরু, সুভাস বোস, সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা, ভাসানী প্রমুখ। . . একটি ভিন্ন প্রসঙ্গ: বঙ্কিমচন্দ্র অনেক বড় মাপের লেখক ছিলেন। কিন্তু তার লেখায় ছিলো বিষ! মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রায়ই সে বিষের উদগীরণ হতো। এরূপ বিষাক্ত লেখার জবাবে তিনি লেখেন দুই উপন্যাস—রায়নন্দিনী ও তারাবাঈ। এছাড়া মহাবীর তারিক বিন যিয়াদ রহ. এর স্পেন বিজয়ের ইতিহাসকে উপজীব্য করে রচনা করেন মহাকাব্য—স্পেন বিজয় কাব্য। এভাবেই এক হাতে কলম এবং অন্যহাতে তরবারি ধারণ করে আমরণ সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন উম্মাহর এ দরদী মানুষটি। . সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী, মুনশী মেহেরুল্লাহ রহ. দের ভুলে যাওয়া উচিত নয় আমাদের—যাঁরা লড়েছিলেন এই দেশে। Previous Post আত্মশুদ্ধি– অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম [বই রিভিউ: ১০১৭ , রিভিউ লেখক : মোঃনাঈমুল হাসান] https://www.reviewofislamicbooks.com/2017/11/09/এই-গরবের-ধন-মাওলানা-শরীফ-ম/