User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
গুণীজনের ডায়েরিতেও তাঁদের মেধা আর মননের ছাপ থাকে - মূলত এই বিশ্বাসের বশবর্তী হয়েই সাহিত্যিক আবদুল মান্নান সৈয়দের ডায়েরি পড়তে শুরু করা। তিনদশকের দিনলিপি সর্বসাকুল্যে ৩৪৭ পৃষ্ঠা। তারমানে আবদুল মান্নান সৈয়দ নিয়মিত লিখেন নি ডায়েরির পাতায়? ঠিক তাই। কিন্তু ৩৪৭ পাতার মধ্যে অনেকটা অংশ দখল করেছে কবির নিজের সাফল্যগাঁথায় পূর্ণ নানা পেপারকাটিং, ছবি ইত্যাদি। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা নিজস্ব কীর্তির প্রচার দেখে যথেষ্ট হতাশ হয়েছি। মনে হচ্ছিল কোনো নার্সাসিস্টের কবলে পড়িনি তো? খুবই সাদামাটা দিনলিপির সংকলন এই বই। পুরো বইতে লেখক, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও গল্পকার আবদুল মান্নানন সৈয়দের নিজস্ব চিন্তাকে ডায়েরিবদ্ধ করতে দেখিনি। বলা হয়, সাহিত্যিকরা দেশ-কাল সম্পর্কে সচেতন হন। অশোক সৈয়দ খ্যাত আবদুল মান্নান সৈয়দের সাহিত্যকর্মের কথা বলতে পারি না। কিন্তু ডায়েরি পড়লে কোনো পাঠকের বোঝার সাধ্যি নেই দিনলিপির লেখক তার কালের আর্থসামাজিক অবস্থা নিয়ে ন্যূনতম বোধ রাখেন। রীতিমত তাকে উপেক্ষা করে ডায়েরির পাতা ভর্তি করেছেন কোথায় কে তাকে পুরস্কৃত করল, কাকে লেখা দিলেন, কার সাথে দেখা হল ইত্যাদি কথাতে। হ্যা, ডায়েরিতে এসব কথা থাকবে তা স্বাভাবিক।একজন প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকের দিনযাপন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে পারেন। কিন্তু অস্বাভাবিকতার লক্ষণ হল শুধু সাহিত্যিক দেনাপাওনার ( তাও ব্যক্তিগত পর্যায়ের) কচকচিতে শেষ হল অশোক সৈয়দের সুদীর্ঘ ত্রিশবছরের দিনলিপি। ফ্লপ চলচ্চিত্রের মতো এটিও একটি ফ্লপ বই। শুধু লেখকের নামেই হয়তো পাঠক বইটি ধরতে পারেন। কিন্তু যত সামনে এগোবেন, ততই বিরক্তির পারদ বাড়িয়ে তুলবে আবদুল মান্নান সৈয়দের এই ডায়েরি
Was this review helpful to you?
or
‘অনেক হয়েছে কথা। আজ ভালোবাসি নীরবতা/ আজ দেখি নিসর্গসুন্দরী উন্মুখর নয়, একেবারে নিঃশব্দে নীরবতা/ ঘাস, গাছ, নদী ও নীলিমা/ আসলে তো প্রকৃত বাস্তব অন্তর্দেশে থাকে/ মগ্ন কিন্তু প্রবাহিত/ শব্দময় কথা’... লাইনগুলো আবদুল মান্নান সৈয়দের ‘অতলের আহ্বান এসেছে’ কবিতার। শব্দময়তা আর বাঞ্চিত নয়, নীরব-নির্জন থাকার উদগ্র বাসনা প্রত্যেকেরই, এই আকাঙ্খা প্রকাশের জন্য অল্প কথাতে কবিতাই সম্ভবত উৎকৃষ্ট মাধ্যম। উদ্ধৃত অংশের বাইরে কবিতার বাকী অংশটুকুও নির্মেদ, সুন্দর। লিখতে বসেছি আবদুল মান্নান সৈয়দ-এর ডায়েরি নিয়ে। তাঁর লেখা ডায়েরি, ‘ডায়েরি : ১৯৭৮-২০০৮’ নামে পাঠক সমাবেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো ২০০৯ এর ফেব্রুয়ারিতে। কোনো এক বিখ্যাত লেখক বলেছিলেন, 'তুমি তোমার জীবনটাকে এমনভাবে যাপন করো যেন তোমার ডায়েরি লুকোতে না হয়’। একটা বয়স পর্যন্ত এ কথাটিকে খুব দামী মনে হতো; এখন, যখন সবকিছু স্পষ্ট দেখতে পাই, বুঝতে আর অনেককিছুই ঠিকঠাকভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারি তখন এ-কথাটিকে হালকা মনে হয়। এমন কি কোন ছক রয়েছে যেখানে আঁকা আছে জীবনযাপনের যাবতীয় প্রণালী! জীবনের এমন কোন স্কেল রয়েছে, যে মাত্রায় শুলে-খেলে-পরলে একে যথাযথ বলা যাবে! কোন কর্তৃপক্ষ আমাকে সার্টিফিকেট দেবে? হ্যাঁ তুমি তোমার জীবনটাকে সুন্দর যাপন করেছ- এই নাও পুরস্কার! তার প্রয়োজনইবা কি! আসলে ’বিবেক’ নামের গুপ্তশিক্ষক সারাক্ষণ ঘাড়ের কাছে জাইল্যা বেত নিয়ে বসে থাকে বলেই যা অকর্তব্য তা আমরা করি না। আর কিছু নয়। আবদুল মান্নান সৈয়দ তাঁর ২০ বছর ধরে লেখা ডায়েরি রেখে ধরাধাম ত্যাগ করেছেন। সেই ডায়েরি পড়ার অভিজ্ঞতা নিয়েই লিখতে বসা। আমার পিতাও ডায়েরি লিখেন। তিনিও লেখক। তাঁর লেখা ডায়েরিও আমি পড়েছি (অনুমতি নিয়ে)। আবদুল মান্নান সৈয়দের সঙ্গে এই দু-জায়গায় তাঁর মিল রয়েছে, অমিলের জায়গা হলো আবদুল মান্নান সৈয়দ ডায়েরি লিখতে আড়াল নেন নি, আমার পিতা শতভাগই নিয়েছেন। তাই ঠিক একই সময়ের- আবদুল মান্নান সৈয়দের জন্ম ১৯৪৩ আমার পিতার ১৯৩৯ দু’জন লেখকের (দাবী করবোনা আমার পিতা বড় কোন লেখক, তবে আমার কাছে তিনি বড়ই) ডায়েরি ঠিক দু’রকম। আবদুল মান্নান সৈয়দের ডায়েরি নিয়ে লিখতে বসে পিতার প্রসঙ্গ টানার কারণ একটিই, আমার পিতা ব্যক্তিগত জীবন পুরোটিই আড়াল করে ডায়েরি লিখেছেন, তাই তাঁর ডায়েরি পড়ে কেবল একটি রেফারেন্স বুকের উপকার পাই, তাতে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির ইতিহাস ঝালাই হয় বটে, আবদুল মান্নান সৈয়দের মতো জীবনের গুঢ় অর্থ বুঝতে সাহায্য করার জন্য এবং তার নির্লিপ্ত মূল্যায়ণ করতে একটি তৃতীয় চক্ষুর জন্ম আমার হয় না! বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক আবদুল মান্নান সৈয়দ কবিতার বই লিখেছেন উনিশটি, উপন্যাস নয়টি এবং লিখেছেন অসংখ্য ছোটগল্প। একইসাথে লিখেছেন এই ডায়েরিটি, নাম ‘ডায়েরি : ১৯৭৮-২০০৮’ । ডায়েরি বলতে নিছক দিনযাপন আর রোজকার যে গল্প আমরা পড়ি তার অতিরিক্ত অনেক বিষয় আবদুল মান্নান সৈয়দ লিখে গিয়েছেন। মনস্তত্ব¡ আবদুল মান্নান সৈয়দের ডায়েরির মূল ভিত্তি; তার প্রমান রয়েছে অসংখ্য। সত্য প্রকাশে আবদুল মান্নান সৈয়দ শুধু পারঙ্গমই নন তার লিপিবদ্ধ করার কাজেও তিনি অকপট। আবদুল মান্নান সৈয়দের পক্ষেই লেখা সম্ভব, 'বিকেলবেলা গেলাম মনোচিকিৎসকের কাছে। এলিফ্যান্ট রোডে। আমি আর রানু। রোগী আমিই’। আবদুল মান্নান সৈয়দ অসাধারণ হেলাফেলায় তাঁর ডায়েরি লিখেছেন, অথচ গভীরে প্রবেশ করলে দেখা যায় অসামান্য যত্ন তাঁর লেখায় পরতে পরতে, আবদুল মান্নান সৈয়দের বলা একটি কথাকেও হেলাফেলা করা যায় না, ফেলে দেয়া যাবে না, অহেতুক বলা যাবে না। তাঁর ছবি আঁকবার অভ্যেস ছিল, ডায়েরির কোথাও কোথাও সে-সব ছবিও আঁকা রয়েছে; রয়েছে তাঁর লেখা বিভিন্ন কবিতা, চিঠিপত্র, গদ্যের পেপার কাটিংও। তিনি এ-কথাটি ভূমিকাতে নিজেই বলেছেন, ‘জীবন তো অনেক বড় ব্যাপার, এই ডায়েরিটাও তো হয়ে উঠল নিজের ধরনে-গড়নে। ডায়েরির নিয়ম মানল না। যুক্ত হলো কিছু ফোটোগ্রাফ, প্রচ্ছদচিত্র, রচনার অলংকরণ, আমারই বিভিন্ন সময়ে অঙ্কিত কয়েকটি ছবি, আরো এটা-সেটা’। ডায়েরিতে এসব সংযোজনের কারণে সেটি আরো ঋদ্ধ হয়েছে। তাঁর লেখা ডায়েরিটির রোজনামচা কখনো কখনো সাধারণ রোজনামচা থাকেনি, হয়ে উঠেছে অসাধারণ, সেটি সম্ভবত ডায়েরি লেখকের কবিত্ব শক্তির কারণেই। ডায়েরি লেখক বাংলা ভাষার একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি বলেই তাঁর গদ্য নান্দনিকতায় পূর্ণ। কখনো কখনো মনে হয় কবিতাই পড়ছি। একদিনের ডায়েরি এভাবে লেখা- ‘সকালবেলা সাড়ে-আটটার দিকে ঘুম থেকে উঠলাম। এখনো গত রাতের ঔদাসীন্য অবসাদ ছেয়ে আছে। বিছানা থেকে উঠতে পারলাম না। অনেকক্ষণ। নির্বেদ। হতাশা। ধুসরতা’। ডায়েরির একজায়গায় বনগাঁয় বেড়াতে যাবার কথা কবি এভাবে লিখেছেন, ‘পঁচিশ বছরেরও আগে কোন ছেলেবেলায় আমি ছিলাম এই শহরে। শুধু আবছাভাবে মনে ছিল ট্রাম চড়ার কথা, আর একদিন বিদ্যুৎ-তাড়িত হয়েছিলাম একটি বাড়িতে। ব্যস, আর কিছু মনে নেই। ট্রেনের কামরার দরজায় দাঁড়িয়ে দেখছিলাম আশ্চর্য শহরটা। আলোকজ্জ্বল ঘিঞ্জি কলকাতা বসতি। রাতের কলকাতা’। আবদুল মান্নান সৈয়দের ডায়েরি পড়ে মনে হয়েছে, তিনি কোথাও নিজেকে মহিমান্বিত করতে চাননি। মানুষের যে স্বাভাবিক অভিপ্রায়, নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে নিজেকে মহান বানানোর চেষ্টা করা হয়- মান্নান সৈয়দ তার বিন্দুমাত্র করেন নি। তাঁর ডায়েরি পড়ে গভীর মন্তস্তত্ব লালনকারী একজন আলোকিত মানুষের খোঁজ পাই। ব্যক্তি হিসেবে তিনি যেমন, তার ডায়েরিও সেই মানুষটিরই প্রতিবিম্ব। তাঁর মধ্যে একইসাথে ঈর্ষা, অসূয়া, ঘৃণা, বিদ্বেষ, জিগীষা, জিঘাংসা, হিংসা যেমন রয়েছে তেমনি ভালোবাসা, মায়া, মানবতাও সমানভাবে বহমান। আবদুল মান্নান সৈয়দ যেনবা হিংসার মধ্যে অহিংসার লালনকারী একজন মানুষ ছিলেন যিনি সারাজীবন প্রেমধর্মের জয়গানই গেয়েছেন। এই প্রেম ব্যক্তির প্রতি যেমন, দেশ-প্রকৃতি-কবিতার প্রতিও। যে আরাধনা তিনি সারাজীবন লালন করেছেন। লীনা দিলরুবা
Was this review helpful to you?
or
এই বই টা পড়ে আমি। আমি অনেক কিছু শিখে ছি, বই টা আমার অসম্ব পছন্দের একটা বই