User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
তার লেখা প্রথম আরবী বই। প্রকাশের জন্য পাঠিয়েছেন মিশরে। তখন মিশর থেকে বই বের হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। ইসলামী সাহিত্যের প্রাণকেন্দ্র মিশর। সেখান থেকে যে বই বের হয় সেটার গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা থাকে প্রশ্নাতীত। একটু বেশী ভালো মানের হলে পাঠকপ্রিয়তাও বেড়ে যায়। লেখক অনারব। প্রকাশক বই বের করা নিয়ে দ্বিধান্বিত । এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের মাঝে তিনি বইটি প্রকাশ করলেন ৷ পৌঁছে গেল বিদ্বান মহলের কাছে। সবারই এককথা, অনারবী হয়েও এতো সুন্দর সাহিত্যপূর্ণ আরবীতে কিভাবে লিখলেন?! কে তিনি? অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি মুসলিম বিশ্বের কাছে জনপ্রিয় লেখক হয়ে গেলেন। এই প্রথম বই-ই তাকে সর্বপ্রকার খ্যাতি এনে দেয়। বিশ্বের যেখানে গেছেন, এই বইয়ের লেখক শুনামাত্র সবাই তারজন্য মজলিসের সর্বোচ্চ আসন ছেড়ে দিয়েছে। . হয়তো এখনো চিনতে পারছেন না। তার আরো কিছু পরিচয় দেই। যদি জেনারেল লাইনে পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির নাম শুনেছেন। এই ইউনিভার্সিটির নাম শুনেনি এমন আহাম্মক হয়তো কোথাও মিলবে না। পড়ালেখার মান বলুন কিংবা প্রভাব ও পরিচিতি, কোনো দিক থেকেই অন্য কোনো ভার্সিটি থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। এই ইউনিভার্সিটির 'ইসলামিক স্টাডিজ' বিভাগের 'প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান' ছিলেন তিনি। ইসলামি লাইনে পড়াশোনা করেছেন আর 'মদীনা ইউনিভার্সিটি'-র নাম শুনেননি এরকম মানুষ হাতেগোনা নাও মিলতে পারে। সৌদি আরবের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাঝে এটা অন্যতম। তিনি ছিলেন এটার অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা। পাক মদীনায় জীবদ্দশায়ই সেখানে তার নামে সড়কের নামকরণ করা হয়। পবিত্র কাবার চাবি, সুদীর্ঘ ইতিহাসে যে চাবি সম্মানসূচকভাবে হাতেগোনা কয়েকজনকে দেওয়া হয় তিনি তাদের অন্যতম । ১৯৯৮ সালে দুবাই সরকার যাকে শ্রেষ্ঠ ইসলামি ব্যক্তিত্বরূপে সম্মান পুরস্কার, পদক ও সনদ প্রদান করে। যাকে নেওয়ার জন্য দুবাই সরকার ইন্ডিয়ান সরকারের সাথে আলাপ করে আভ্যন্তরীণ প্রদেশ লৌক্ষ্ণতে বিশেষ বিমান পাঠায়, যার ফলে পরেরদিন নিউজ হয় 'একজন ভারতীয় মুসলিম মনীষীর জন্যে আমাদের স্বাভাবিক বিমান চলাচল ব্যবস্থা রদবদল। সিডিউল পরিবর্তন এবং আকাশ নিরাপত্তাব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস।' এছাড়াও তিনি ছিলেন মুসলিম আলেম-ওলামাদের সবচে' বড় সংগঠন 'রাবেতা আলমে ইসলামীর' প্রতিষ্ঠাতা সদস্য । ইসলামী সাহিত্যের সবচে' বড় সংগঠন 'রাবেতা আদবে ইসলামীর' প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। কারী তাইয়েব সাহেবের ইন্তেকালের পর থেকে ভারতের মুসলমানদের সবচে' বড় প্লাটফর্ম 'মুসলিম পারসোনাল ল' বোর্ডের' সভাপতি ছিলেন। দারুল উলূম দেওবন্দের মজলিসে সূরারও সদস্য ছিলেন। ছিলেন নদওয়াতুল উলামা লৌক্ষ্ণের রেক্টরসহ আরো অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, শিক্ষক, অতিথি শিক্ষক ও অডিটর। . এখন হয়তো বুঝতে পেরেছেন কার কথা বলছিলাম। গত শতাব্দীর অন্যতম সংস্কারক, বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও অন্যতম ইতিহাসবিদ সাইয়িদ আবুল হাসান আলী নদভীর কথা। আশরাফ আলী থানভী রহ.র মতো ব্যক্তি যাকে 'সর্বগুণের আধার' বলে সম্বোধন করেছেন। মুফতি আযম মুফতি শফী রহ. যার ব্যাপারে বলতেন 'সে আল্লাহর বিশেষ তাওফিকপ্রাপ্ত'। উর্দু ও আরবীতে লিখেছেন সমানতালে। দেশে- বিদেশে বক্তৃতা দিয়েছেন আরবী, উর্দু ও ইংরেজীভাষায়! তার সর্বাধিক জনপ্রিয় বই 'মা যা খাসিরাল আলামু বি ইনহিতাতিল মুসলিমীন' যা বাংলাভাষায় 'মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো?' নামে বের হয়েছে। এছাড়াও তার বহুল জনপ্রিয় বইয়ের মাঝে (অনূদিত নাম) 'সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস ১-৫', সীরাতে সাইয়েদ আহমদ শহীদ১-২ (বর্তমানে সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস৬-৭ নামে ), কারওয়ানে জিন্দেগী ১-৮, নবীয়ে রহমত, আলী রাযি. জীবন ও খেলাফত , ঈমান যখন জাগলো, ইসলামী জীবনের রূপরেখা অন্যতম। . এতসব গুণাবলী ও বহুল জনপ্রিয় এই মনীষী রায়বেরেলির এক দারিদ্র্য অথচ শিক্ষিত পরিবারে বেড়ে ওঠেন। বাবা ছিলেন একজন জাদ্রেল ইতিহাসবিদ। ৮ খণ্ডের 'নুযহাতুল খাওয়াতির' তার কর্মের উজ্জ্বল সাক্ষী। বাল্যকালে বাবাকে হারানোর পর মা-ই তাকে আদর-শাসনে লালন-পালন করে তোলেন। বড় ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে তার পাঠশালা শুরু হয় এরপর যুগশ্রেষ্ঠ শিক্ষকমণ্ডলীর কাছে আরবী সাহিত্য, ইতিহাস, হাদীছ ও তাফসীর পড়েন। যুগশ্রেষ্ঠ আরো দুজন বুজুর্গের কাছ থেকে আধ্যাত্মিক পথের দীক্ষা নিয়ে তাদের খেলাফতিও পান। এরপর শিক্ষা-দীক্ষা ও লেখালেখিতে মগ্ন হন। আরবী, উর্দু, ইংরেজী ও ফার্সিভাষায় ছিল তার অগাধ পাণ্ডিত্য । কুরআন, হাদীছ, ইতিহাস, ভাষা ও সাহিত্য এমন কোনো বিষয় ছিল না, যাতে তার পদচারণা ছিল না। ইতিহাস ছিল তার প্রিয় বিষয়। . যুগশ্রেষ্ঠ দুনিয়াবিমুখ এই মনীষীর জীবদ্দশাতেই তাকে নিয়ে থিসিস বের হয়েছে( একটু খটকা আছে ১৭ না ১৯) ১৯ টি । ইন্তেকালের পর বহুভাষায় তার জীবনী বের হয়েছে অনেকগুলি। শায়খ নদভীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা থেকেই তার জীবনী লেখেন আরববিশ্বের অন্যতম ইসলামী ব্যক্তিত্ব ড. ইউসুফ কারজাভী। পাঁচটি অধ্যায়ে তিনি তার এই বইয়ে শায়খের বর্ণাঢ্য জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরেন। -প্রথম অধ্যায়ে জন্ম থেকে নিয়ে শিক্ষাজীবন, বংশবৃত্তান্ত ও দেশে বিদেশে ভ্রমণ, রাজা বাদশাহদের সাথে সাক্ষাতসহ তাঁর দ্বীনী কাজগুলো তুলে ধরেন। -দ্বিতীয় অধ্যায়ে শায়খ নদভীর দৃষ্টিতে দাওয়াতের তত্ত্বকথা ও তার স্তম্ভ, বস্তুবাদের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় গভীর ঈমান, পাশ্চাত্য মতবাদ ও বস্তুবাদী সভ্যতার সমালোচনা, জাতীয়তাবাদসহ ইসলামী ইতিহাস ও তার পুনর্জাগরণ, ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় মুসলিম উম্মাহর ভূমিকা ও অবদান তুলে ধরেন। -তৃতীয় অধ্যায়ে শায়খ নদভীর সমাজ সংস্কার ও সংস্কারের পথ ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন। - চতুর্থ অধ্যায়ে আরব দুনিয়ায় শায়খের অবস্থান (মর্যাদা), আরবদের চিন্তা-চেতনা ও আবেগ-অনুভূতির প্রতি তার গভীর সম্পর্ক ও আস্থা, আরব দুনিয়ার সাথে তার সম্পর্কের ভিত্তি তুলে ধরেন। - পঞ্চম অধ্যায়ে শায়খ নদভীর লেখা ও সাহিত্য, লেখার ভাষা, কুরআন, হাদীছ, ইতিহাস, ফিকহ নিয়ে শায়খ নদভীর লেখালেখি ও তার আরবী বইগুলোর তালিকা বর্ণনা করেছেন। শেষমেশ উপসংহারে শায়খ নদভীকে নিয়ে যুগশ্রেষ্ঠ মনীষীদের উক্তি তুলে ধরেছেন। . বইটা অনুবাদ করেছেন খ্যাতিমান অনুবাদক ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী। নদভী সাহেবের অনুবাদ কেমন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। একবার পড়লে তার ভক্তপাঠক না হয়ে উপায় নেই। তার অনুবাদ পড়লে কখনোই মনে হয় না বইটা অনূদিত । তাছাড়া লেখাগুলো কিরকম একটা মিষ্টি মিষ্টি অনুভব হয়। এ বইটাও অন্যান্যগুলো থেকে ভিন্ন নয়। বইটা কেমন লেগেছে, সেই অনুভূতি লিখে প্রকাশ করার যোগ্যতা নেই। সহজভাবে বললে বইটা খুবই ভালো লেগেছে। নদভী সাহেবকে নিয়ে দূরদেশের একজন অনুরাগীর লেখা ও ছাত্রের অনুবাদে নদভী সাহেবের প্রতি তাদের আবেগ ও ভালবাসা ফুটে উঠেছে। বইয়ের দুইটা জায়গায় সালে মিস্টেক আছে। (সম্ভবত) বাবার মৃত্যুর তারিখ আর মায়ের জন্মের তারিখে। অনেক আগে পড়েছিলাম। তাই নিশ্চিত স্মরণ নেই। অনুবাদক ও প্রকাশককেও জানিয়েছিলাম। পরের সংস্করণে ঠিক করবেন বলেছিলেন। শায়খ নদভী ও তার বিশাল কর্মমুখর জীবন ও অবদান জানতে হলে এই বইটি অবশ্যই পড়বেন। বই পরিচিতি - শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী এমন ছিলেন তিনি - ড. ইউসুফ কারজাভী। অনুবাদক- ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী। প্রকাশনী- মাকতাবাতুল আযহার। মূল্য-২৪০ প্রকাশককাল- ডিসেম্বর ২০১৫ ইংরেজি।