User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
তথাগত-এর মতো আমরাও কি একই বাস্তবতায় হেঁটে চলি না? সারাটা জীবন? হাঁটতে হাঁটতে আমরা কোন গন্তব্যে পৌঁছাই? আদৌ কি পৌঁছতে পারি কোথাও? " ..... আমাদের গতি থামানোর জন্যে বাহিনীর পর বাহিনী আসে, রক্ষী বাহিনী আসে, লাল বাহিনী আসে, গণ বাহিনী আসে জলপাই বাহিনী আসে, রগকাটা বাহিনী আসে, ফতোয়াবাজ বাহিনী আসে, ঠোলা বাহিনী আসে, ঈগল বাহিনী আসে, পেঙ্গুঈগল বাহিনী আসে, বাহিনী আসতেই থাকে.... " স্বাধীনতা-পরবর্তী যে অবিশ্বাস্য, অবিস্মরণীয় আখ্যানকে লেখক তুলে ধরেছেন, তা গা শিউরে ওঠার মতো, বোবা রাগে মস্তিষ্কে দাবানল লেগে যাওয়ার মতো, মানুষের অসহায়ত্ব ও প্রতিবাদের উদ্ধত মুষ্টি দেখে চোখে পানি চলে আসার মতো। উপন্যাসের কাল্পনিকতার আদলে লেখকের লিখে যাওয়া এই দুর্বিষহ নিকট অতীতের বয়ান প্রতিটি বাংলাদেশির জানতে হবে। তথাগত-এর নির্মোহ দৃষ্টিতে আমাদের জানা উচিত শেখ মুজিবের রক্ষী বাহিনী, জাসদের গণবাহিনী, জিয়ার সৈনিক, এরশাদের উর্দিধারী, ছাত্রসংঘ–ছাত্রশিবির—প্রমুখদের অতীত কী ছিলো, যাতে ধারণা করা যায় এদের ডিএনএ-র গঠন কেমন, তাদের মূল চরিত্র - বৈশিষ্ট্য কী। আগস্ট ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে এই উপন্যাস যে কী অবিশ্বাস্য রকম প্রাসঙ্গিক তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। এখন ক্রমাগত মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাওয়া যারা, তারা দেশে এক সময় কী বিভৎস তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে এবং বোধকরি তার পুনরাবৃত্তির সুযোগের অপেক্ষারত যারা, তা যদি আমরা না জানি, এখান থেকে আবছাভাবে জেনে আরও জানতে-জানাতে উৎসাহী না হই, সচেতনতা গড়ে না তুলি—বাংলাদেশ অন্ধকারেই তলিয়ে থাকবে। ইমতিয়ার শামীমের "আমরা হেঁটেছি যারা" বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দুর্বিষহতার গল্প, সবকিছুর পরেও বেঁচে থাকার গল্প, মরে যাওয়ারও গল্প। এই ভয়ংকর, নির্মল, কোমল, পৈশাচিকতার পাঠ—আমাদের প্রত্যেকেরই জানা প্রয়োজন।
Was this review helpful to you?
or
'আমরা হেঁটেছি যারা' লেখক- ইমতিয়ার শামীম। ইমতিয়ার শামীম স্পষ্টতই একই সঙ্গে গল্প ও উপন্যাস-লেখক, তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ডানকাটা হিমের ভেতর ও গল্পগ্রন্থ শীতঘুমে একজীবন একই বৎসর প্রকাশিত হয়েছিল। এই শীতঘুমে…-র গদ্যে যে-কাব্যময়তা ছিল তার থেকেও তিনি সরে এসেছেন অনেক। তার লেখায় আগের মতোই রাজনীতি উপস্থিত কিন্তু তা কোনওভাবেই কাহিনিকে নিয়ন্ত্রণ করে না বরং অনেক বেশি অন্তঃস্রোতে এই আবহ ধরা পড়ে। তাঁর উপন্যাস আমার হেঁটেছি যারা এবং গল্পগ্রন্থ গ্রামায়নের ইতিকথা তার পূর্বেকার রচনা থেকে আলাদা করে তুলেছে। বিষয় ও আঙ্গিকের দিক দিয়ে এটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগ্রন্থ।
Was this review helpful to you?
or
"প্রসারে চাই প্রচার" তত্ত্বে সম্ভবত ইমতিয়ার শামীম বিশ্বাস রাখেন না। নতুবা যে বইটি ২০০০ সালে প্রকাশিত হয়েছে তা নিয়ে গুডরিডসে আর বইয়ের গ্রুপগুলোতে এক দশক বাদে আলোচনা না হলে পাঠক তো জানতেই পারত না সাংবাদিক ইমতিয়ার শামীম কী অপূর্বতম এক উপন্যাস লিখেছেন। ১১৯ পাতার বইটি মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক অধ্যায়কে এতো গভীরভাবে স্পর্শ করে গিয়েছে যে, বারবার পড়তে ইচ্ছে হয়। কিন্তু সেই ইচ্ছেকে চাপা দিতে হয় খুব সজ্ঞানে কারণ বাংলাদেশের রাজনীতির যে তমসাচ্ছন্ন পথ আমরা পেরিয়ে এসেছি কিংবা প্রতিনিয়ত পেরুতে সংগ্রাম করে যাচ্ছি তাকে আরো একবার অতিক্রম করবার চ্যালেঞ্জ সামনে এনে দেন ইমতিয়ার শামীম। " অনেক রাতে আমাদের জানালা দিয়ে জ্যোৎস্নার আলো এসে মণীষার মুখের ওপরে অধরা মায়ার জাল বুনতে থাকে।" - ঠিক প্রথম লাইনেই পাঠককে মোটামুটি বেঁধে ফেলার ব্যবস্থা করবেন লেখক।উপন্যাসটির কথক তথাগত। তার ছেলেবেলা থেকে কাহিনী এগিয়ে যায়। প্রেক্ষাপট সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ।কিশোর তথাগত নির্ভার শান্তিময় ভঙিতে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু সেই ঘুম হঠাৎ ভেঙে গেলে সে আবিষ্কার করে, " তারপরই অস্পষ্ট বুটের আওয়াজ শুনে ঠিক -ঠিক বুঝে নেই রক্ষীর দল এসেছে বাবার খোঁজে।" কেন তথাগতের বাবার খুঁজতে আসছে রক্ষী বাহিনী? তার বাবাও তো মুক্তিযোদ্ধা। কেনই বা তথাগতের বাবার সন্ধানে রাত বাহিনী আসে, যারা, " বোঝানোর চেষ্টা করে শ্রেণীবিপ্লব শুরু হয়ে গেছে, এবার তবে শ্রেণীশত্রু খতম করার পালা। যাকে মারা হবে সে হলো শ্রেণীশত্রু।" কারণ তথাগতের বাবা আর আট-দশটা সাধারণ মানুষের মতোই যারা নিজের পরিশ্রমে পরিবার নিয়ে সুখে-শান্তিতে বাঁচতে চান। এরাই আবার রাত বাহিনীর কাছে শত্রু। এই রাত বাহিনীর পরিচয়, " রাত বাহিনীর কেউ তাদের বোকা বুড়োর গল্প বলে। বলে চিনের চেয়ারম্যানের কথা। " ইমতিয়ার শামীম সরাসরি নকশাল কথাটি উল্লেখ করেন নি, সর্বহারাদের নাম নেন নি। অথচ ওপরের বর্ণনা পড়লে বুঝতে বাকী থাকেনা কাদের কথা বলতে চাইছেন পাঠককে। কিশোর তথাগত এবার আরো ভালো করে পরিচিত হয় রক্ষী বাহিনীর সাথে। তার স্মৃতিচারণ, " জেনে গেছি রক্ষী বাহিনীর জামার হাতায় তর্জনি তোলা কাটা আজি আঁকা থাকে, বড় চুল মোটেই পছন্দ করে না তারা।অবশ্য তারা কি পছন্দ করে তাও বোঝা যায় না ভাল করে।" তথাগতের বাবা যখন নিরাপত্তা চাইতে যায়। রক্ষী বাহিনী তার কাছে ১০ হাজার টাকা চায়। দিতে রাজি হন না তিনি।মুক্তিযোদ্ধা পিতার মনে পড়ে মুজিব বাহিনীর সাথে বামপন্থী বাহিনীগুলোর যুদ্ধকালীন তিক্ততার কথা।এরই মাঝে তিনি উল্টো যোগ দেন জাসদে! সেই থেকে হন্যে হয়ে তথাগতের পিতাকে খুঁজতে থাকে রক্ষীরা। যখন তখন হানা দেয় বাড়িতে। রক্ষীর হানাতে তথাগত ভাবে, " প্রতিদিনই ওরা হানা দেয় কারও না কারও ঘরে, গরু-ছাগল না হলে মোরগ-মুরগি ধরে নিয়ে যায়। আর বিকৃত দেঁতো হাসি ছুঁড়ে প্রতিবারই বলে, অনেকদিন ভালমন্দ খাওয়াদাওয়া হয় না, কিছু মনে কইরবেন না। " উপন্যাসে দেখতে পাই, কারও মন অবশ্য কিছু মনে করে না। তথাগতের সাথে এক অদ্ভূততম সম্পর্ক তার বাবার সাথে। বাবা তাকে অনেকটা হিমুর বাবার মতো কিছু বাণী বলে।অবশ্য ইমতিয়ার শামীমের বাণীগুলো নিঃসন্দেহে ভিন্ন।তথাগতের পিতার সাথে সেই সম্পর্ক স্বপ্নে বোনা, এই নিবিড়তম স্মৃতিতে বিভোর তথাগতের মনে হতে থাকে, " আমি এত তরুণ হতে যাই যে আমাকে কিশোর বলে বিভ্রম হয়,আমি এত কিশোর হয়ে যাই যে আমাকে বালক বলে ভুল হয়, এত বেশি বালক হয়ে যাই যে আমাকে শিশু বলে মনে হতে থাকে। " কিন্তু এই স্বপ্নাতুর অনুভূতিতে মোহাবিষ্ট হয়ে থাকা হয়না তথাগতের। সে বাস্তবে বাস করে। সেখানে সে দেখে তার নিজের মা মারা গেছে। বাবা এক বিধবা নারীকে বিয়ে করেছেন। তারই কন্যা মণীষা। আরেকটি চমকের নাম মণীষা। সৎ বোন হলেও খানিকটা দুর্গার রূপে আবির্ভাব হয় সে। আর তথাগতের ভূমিকা অপুর। নাহ্। ঠিক ততটা সহজ করে ভাবেন নি লেখক। মণীষার সাথে তথাগতের সম্পর্ককে ইমতিয়ার শামীম অন্যভাবে বিবৃত করতে চেয়েছেন। তা পাঠক হিসেবে অস্বস্থিতে ভোগাতে ছাড়েনি আমাকে। তবুও তথাগত আর মণীষা। সমবয়সী দুজনের কিশোরবেলার সম্পর্কে অনির্বচনীয় ভঙিতে উপস্থাপন করেছেন লেখক। বাবা জাসদে।পলাতক।এক বর্গাজমি ছাড়া আয়ের উৎস নেই। চারিদিকে অস্থিরতা। বাবা ফিরে আসার আগপর্যন্ত রক্ষী বাহিনীর দৌরাত্ম্যকে ভালোই কাছে থেকে দেখেছে তথাগত। রাত বাহিনী আসে তথাগতের পিতার সন্ধানে। তারা বাড়িতে ভাঙচুর করে। তথাগতের বাবার লাইব্রেরির সব বই আগুনে পোড়াবার আগের দৃশ্যকে খুব সুন্দর নাটকীয়তার সাথে ইমতিয়ার শামীম লিখেছেন, " উ-উ-উ জ্ঞ্যানী হ'য়েছে! আরেকজনও তা অবলোকন করে এবং আরেকজনকে বলে, দেখ তো আমাদের পাঠচক্রেরর জন্যি কুনডা কুনডা নিয়ে যাওয়া যায়? আগেরজন মনযোগ দিয়ে বইয়ের পুট দেখতে থাকে এবং অবশেষে মন্তব্য করে, সব প্রতিক্রিয়াশীলদের বই। এইসব দিয়ে কুন কাজ হবে না। পোলাপানের মাথা আরে খারাব হয়ে যাবে।"