User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
'জলেশ্বরী' যখন শেষ করলাম, বেশ কিছুক্ষণ বইটাকে ছুঁয়ে নিশ্চুপ নিশ্চল হয়ে বসে ছিলাম। এতো গভীর মায়ায় জড়ানো কোনকিছু আমি অনেকদিন পড়িনি। বিহ্বল অনুভূতিটা এই এখনো আমাকে ছেড়ে যায়নি একটুও। আমি জানিনা, আমি আমার প্রতিক্রিয়ার ঠিক কতো ভাগ ঠিকমতো ব্যক্ত করতে পারবো। শুধু এইটুকু জানি যে ওবায়েদ হক 'জলেশ্বরী' নামের যে জগতের সন্ধান আমাকে দিয়েছেন, সেই জগতটাকে আমি কখনোই ভুলতে পারবোনা।
Was this review helpful to you?
or
বাবার সাথে ছেলেদের সম্পর্ক নানারকম হয়ে থাকে,কোন কোন ছেলের কাছে তাদের বাবা শুধুই টাকার থলি,কারর কাছে বাবা-ই হয় মা, তবে সবার কাছে বাবা মানে বাবা-ই। বাবা'র জন্য প্রত্যেক সন্তানের হৃদয়েই আলাদা একটা ভালোবাসা গোপন থাকে।নানান সমস্যার কারণে সেই ভালোবাসা হয়তো চিরকাল গোপনই থাকে কেউবা সেই ভালোবাসা দেখাতেও পারেননা তবে বাবা যখন চলে যায় তখন সেই ভালোবাসা ঠিকই তার অবস্থান জানান দেয়। সবাই তখন বুঝতে পারে তারা কি হারিয়েছে। গল্পে কাজল বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে, ছোটথেকেই বিদেশ থাকার কারণে বাপ-ছেলের মধ্যে গড়ে উঠেছিল এক পুরু ইটের দেয়াল।বাবা হঠাৎ করেই ছয়তলা ছাদ থেকে লাফিয়া আত্মহত্যা করেন,কাজল বহুদিন পর তার বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে দেশে এসে বুঝল তার বাবার জন্যেও তার ভালোবাসাটা তোলা ছিল যেটা এখন প্রকাশ পাচ্ছে।বাবার ড্রয়ার, কাগজপাতি খুঁজে কাজল একটা চিরকুট পেল যেটাতে লেখা ছিল, " জলেশ্বরী গ্রামের ইব্রাহিম গাজী আমাকে ঘুমাতে দেয়না।মাঝে মাঝে মনে হয় লাফিয়ে ছাদ থেকে পড়ি" কাজল নিশ্চিত হয়ে যায় এটা আত্মহত্যাই ছিল।ইব্রাহিম গাজির জন্য সে যেতে চায় জলেশ্বরী গ্রামে। টাকা থাকলে সবকিছুই সম্ভব। নৌকাসমেত দুজন লোক সহ কাজল রওনা দেয় তার বাবার আত্মহত্যারহস্য জানার জন্য।এখান থেকেই কাহিনী শুরু। লেখক এই উপন্যাসে তুলে ধরেছেন একটি বন্যাপ্লাবিত গ্রামকে, যেখানে ভয়াবহ বন্যা কেড়ে নিচ্ছে অগণিত মানুষের প্রাণ। তাদের খাবার নেই, বাসস্থান নেই, নেই চোখের পর্দা,যেখানে বাবা সামাণ্য টাকার জন্যেও বেঁচে দিতে পারেন তার মেয়েকে! সবাই চায় আর একটা দিন বেঁচে থাকতে। বড়লোক ঘরের ছেলে কাজল জীবনে প্রথম বাস্তবতার মুখোমুখি হলো। একসময় বজলু,লিয়াকত অর্থাৎ নৌকার মাঝি পরিকল্পনা করে কফির সাথে ধুতুরা মিশিয়ে এক চরে ফেলে দিয়ে টাকা পয়সা নিয়ে ভাগল তারা। কাজলের জীবনে গভীর অন্ধকার নেমে এল। তখুনি আলোর রেখার সন্ধান দিলেন লেখক তপসী'র মাধ্যেমে। দুজনে পরে বেদে দলের কারণে নিজেদের জীবন রক্ষা করে এবং জলেশ্বরী গ্রামে যাওয়ার বদলে কাজলের দিন কাটতে থাকে বেদে'দের নৌকায় নৌকায়। লেখক এই উপন্যাসেও সামাণ্য অংশ হলেও তুলে এনেছেন মুক্তিযুদ্ধের কথা।একসময় তপসী আর কাজল আলাদা হয়ে যায় পরে যদিও আবার তাদের মিলন হয়। পরেরবার যখন দেখা হয় তপসী তখন গ্রামের মানুষদের কলেরার হাত থেকে বাঁচাতে ব্যস্ত। নিজের জীবনের মানে মানুষের জীবন বাঁচাতেই যেন সে খুঁজে পেয়েছে।একসময় নিষ্ঠুর কলেরা তাকেও গ্রাস করে নেয়। কাজল যখন তাকে নিয়ে সদরে হাসপাতালের দিকে নৌকা নিয়ে রওনা হয় তখনই তারা ডাকাতদের কবলে পড়ে, ডাকাতদের কবলে পড়া মানেই জীবন শেষ। এখন কি হবে? কাজল কি পারবে তপসীকে বাঁচাতে? নাকি ডাকাতদের হাতে প্রাণ যাবে দুজনেরই? যে কাজের জন্য সে জলেশ্বরী গ্রামে যেতে চাইল সে কি আদৌ পৌছাতে পারবে জলেশ্বরী গ্রামে? খুঁজে পাবে ইব্রাহিম গাজিকে? জানতে পারবে তার বাবার আত্মহত্যার কারণ?জানতে হলে বইটা অবশ্যই পড়তে হবে! ওবায়েদ হকের উপন্যাস এই প্রথম পড়লাম। প্রথমদিকে বোরিং লাগলেও মাঝামাঝি জায়গায় এসে কাহিনী এত জোরালো হলো যে আর রাখতেই পারিনি আর লাস্টে যে চমকটা ছিল সেটা আশাতীত ছিল। মোটকথা সবদিক দিয়েই ভালো লেগেছে।
Was this review helpful to you?
or
"ইব্রাহিম গাজী, আর কত? আমাকে কেন ঘুমুতে দাও না, আমি ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়লেই কি তুমি শান্তি পাবে?" বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে ৯ বছর পর দেশে ফিরে আসা কাজল যখন জরুরি কাগজপত্রের মাঝে এই চিরকুটটা খুঁজে পায় তখন তার মনে সন্দেহ জাগে তার বাবার মৃত্যুটা কি আসলেও স্বাভাবিক নাকি আত্মহত্যা ৷ তাছাড়া কাজলের কাছে তার বাবা বরাবরই রহস্যে মোড়া একজন মানুষ, কাছ থেকে জানার অপূর্ণ এক ইচ্ছা আর অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে ইব্রাহিম গাজীর খোঁজে, জলেশ্বরীর খোঁজে বেরিয়ে পড়ে কাজল ৷ সময়টা তখন ১৯৮৮ সাল- সারা দেশে বন্যা ৷ নদীতে ভেসে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম, মানুষজন আর গাছপালা ৷ এতকিছুর পরও কাজল বজরা নিয়ে রওনা হয়, সঙ্গী দুই মাঝি লিয়াকত আর বজলু ৷ পথে নেমে কাজল বুঝতে পারে তার সহজ, স্বচ্ছল জীবনের থেকে এই সব গ্রামের মানুষের জীবন কতটা আলাদা ৷ পথিমধ্যে তার দুই সঙ্গী তাকে কফির সাথে ধুতরার বিষ মিশিয়ে মরার জন্য ঝোপের মধ্যেই ফেলে যায় ৷ শুরু হয় কাজলের এক নতুন যাত্রা যেখানে বেঁচে থাকার জন্য বইয়ের পাতা চিবুতেও দ্বিধা করেনা সে ৷ এভাবেই প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মানুষ আর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয় সে, কখনো বিশ্বাসঘাতকতা, কখনো ক্ষুধার জ্বালা, কখনো মহামারী কলেরা কাজলকে অনেক কিছু শেখায় ৷ আলাপ হয় তাপসী, আসাদউদ্দিন কিংবা সালেহার মত মানুষের সাথে ৷ কিন্তু এত কিছুর পরেও ইব্রাহিম গাজীর দেখা মেলে না, কাজল কি আদৌ খুঁজে পাবে তাকে? পাঠ প্রতিক্রিয়া: 'জলেশ্বরী' বইটা পড়ে আরো একবার লেখকের শব্দশৈলী আর বাক্য গঠনের মুন্সিয়ানায় মুগ্ধ হলাম ৷ কত সাধারণ একটা গল্পকে অসাধারণভাবেই না তুলে ধরতে পারেন ওবায়েদ হক ৷ একটা গল্পের মধ্য দিয়ে আসলে খন্ড খন্ড অনেকগুলো জীবনের গল্পই লেখক বলতে চেয়েছেন ৷ আর তাতে সক্ষমও হয়েছেন ৷ বিশেষ করে গ্রাম, গ্রামের মানুষগুলো কিংবা বন্যার বর্ণনা তিনি যেভাবে দিয়েছেন তাতে চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে ওঠে সবকিছু, কল্পনা করতে বিন্দুমাত্র কষ্ট হয় না ৷ মনে হয়েছে যেন আমিও কাজলের সঙ্গী হয়েছি ৷ গল্পটা পড়তে গিয়ে পদে পদে যে চমক পেয়েছি, বাকি সকল পাঠকরাও যাতে তা উপভোগ করতে পারেন সেজন্য চেষ্টা করেছি যতসম্ভব স্পয়লার এড়িয়ে চলতে ৷ কিন্তু তা করতে গিয়ে মনে হল গল্পের প্রাণটাই ফুটিয়ে তুলতে পারলামনা কোথাও ৷ তাই বলব এ গল্পটা রিভিউ পড়ে কিচ্ছু বোঝার নয়, বইটাই পড়তে হবে ৷ বইটার একমাত্র ছোট্ট একটা খুত বলতে পেয়েছি কিছু কিছু কাকতালীয় এবং নাটকীয় ঘটনা ৷ বাস্তবে অতটা বোধহয় হয় না, তবে ওবায়েদ হকের লেখার মুন্সিয়ানাতে এসব ভুল আর মনে থাকেনা ৷ পুরো বইটাই সুখপাঠ্য হয়ে ওঠে ৷
Was this review helpful to you?
or
খুব কম বই'ই আছে যার প্রথম তিন-চার পৃষ্ঠা পড়ে বইটা পড়ে শেষ করার জন্য মাথাব্যাথা শুরু হবে! এটা ঠিক তেমন একটা বই যেটা আপনি পড়া শুরু করলে শেষ না করে উপায় নেই। পড়া চলাকালীন সবটা সময়ই আপনি রোমাঞ্চিত হবেন, কিছু চরিত্রের প্রেমে পড়বেন, কাউকে হয়তো তীব্র ঘৃণা করবেন। তবে হ্যা ঘৃণার সাথে সাথে তাদের প্রতি একটা মমতা বোধ যে আপনায় দুটানার মধ্যে ফেলে দিবে সেটা আমি জোড় দিয়েই বলতে পারি। গল্পের শুরুটা কাজলের বাবার মৃত্যু থেকে। কাজল আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছে দীর্ঘ নয় বছর পর। সেটার পিছনেও একটা কারণ ছিল আর সেটা হলো তার বাবার মৃত্যু। যদিও প্রথমাবস্থাতে কাজলের বাবার মৃত্যুটা খুব স্বাভাবিক ভাবেই সবাই ধরে নিয়েছে ঠিক সেই সময়ই কাজল আবিষ্কার করে তার বাবার মৃত্যুর পেছনে আসলে হয়তো কোনো "কিন্তু" লুকিয়ে আছে। আর সেই "কিন্তু"টা জানার জন্য তাকে যেতে হবে সুদূর জলেশ্বরী গ্রামে। যে ছেলে সাঁতার জানেনা তাকেই কিনা এই দীর্ঘ পথ পারি দিতে হবে পানি পথে। এছাড়া কোনো উপায়ও নেই যে সেটা অবলম্বন করে সে জলেশ্বরী যেতে পারবে। একপ্রকার বাধ্য হয়েই সে বেড়িয়ে পরে নদী পথে নৌকায় করে। সাথে কোনো সঙ্গী না থাকলেও প্রতিনিয়ত তার কান ঝালাপালা করার জন্য ছিল দুইজন সেই লেভেলের অন্ধ জ্ঞান সম্পন্ন মাঝি। যাদের মুখে মধু ঝড়ে পড়লেও ভিতরে পোষে রেখেছে লোভের পাহাড়। শেষ পর্যন্ত কি তারাই কাজলকে সর্বনাশ করে ছেড়ে দিলো! (ডাকাতি) অতঃপর? কাজল যখন চাঁদপুর এলাকার কোনো এক নির্জন দ্বীপে তীব্র ক্ষুধা নিয়ে মৃত্যুর আলিঙ্গন পাওয়ার অযাচিত আশায় ঘুরছে। তখনই অলৌকিক ভাবে দেখা পেয়ে গেলো তাপসীর। তাপসীও যে কাজলের মত মৃত্যুর আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যেখানে ধর্ম, লজ্জা, সম্মানবোধ এর চেয়ে খুদা নিবারণ করাতেই সবার বেশি আগ্রহী। সেখানে কি কাজলের মত আগন্তুক ঠাই পাবে? নাকি হবে হাজার হাজার মানুষের আক্রোশ মেটানোর বস্ত! অবশেষে কি কাজল পেরেছিল সেই প্রতিকূল পথটা পারি দিতে? নাকি তার বাবার মৃত্যুর পিছনের "কিন্তু"টা চিরদিনের জন্য অজানা'ই থেকে যাবে তার কাছে? ওবায়েদ হক এর লিখার সাথে পরিচয় "নীল পাহাড়" বইটার মাধ্যমে। সেটা পড়ার পর উনার লিখার প্রতি কেমন যে একটা ভালোলাগা কাজ করতো। তারপর এই বইটা পড়া।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই-জলেশ্বরী লেখক-ওবায়েদ হক ধরন-উপন্যাস পৃষ্ঠা-১১২ মূল্য-১৬০ প্রকাশনী-আদী আমি কোনদিন নৌকায় চড়ি নি। অথচ বিগত চারদিন ধরে এই নৌকাতেই বসবাস করছি। এই "আমি"র জবানে ওবায়েদ হক রচিত জলেশ্বরীর পুরো গল্প। গল্পের মূল চরিত্র এক বিদেশ ফেরত যুবক। তার ভাষ্যমতে, কলেজে পড়ার সময় একবার সে নিষিদ্ধপল্লীতে গিয়ে রেখা নামের এক পতিতার ঠোঁট ছুঁয়েছিল। সে কারনে তার বাবা তাকে আমেরিকায় পাঠিয়ে দেন। নয় বছর পর ,বাবার মৃত্যু সংবাদে সে দেশে ফিরে আসে। আর তখন বাবার ঘরে খুঁজে পায় একটা চিরকুট, তাতে লেখা - জলেশ্বরীর ইব্রাহিম গাজী আমাকে ঘুমুতে দেয় না! এর পর থেকেই গল্পের শুরু... সে ভেবে পায়না এই ইব্রাহীম গাজী কে! কি তার পরিচয়। বাবার সাথেই বা তার কিসের লেনা দেনা! আর এসব কিছু জানার জন্যই সে খুজতে বেরোয় ইব্রাহীম গাজীকে। তাকে খোজে পাওয়ার জন্য বজলু আর লিয়াকত মাঝি কে সঙ্গে নিয়ে রওয়ানা হয় জলেশ্বরী গ্রামের দিকে। তখন দেশ ভেসে যাচ্ছে আটাশির বন্যার পানিতে। চারদিকে পানি থৈ থৈ। বেশির ভাগ গ্রাম তখন পানির নিচে। মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। খাদ্যের অভাবে দিনের পর দিন অভুক্ত থাকতে হচ্ছে।খাদ্যের জন্য চারদিকে হাহাকার। আর বন্যার পানি তখন উপছিয়ে উঠছে। ক্ষুধার জন্য পিতা তার মেয়েকে বিক্রি করে দেয়। স্বামী স্ত্রী বিক্রি করে দেয়। সব কিছু বাদ দিয়ে উদর পুরতেই মানুষ তখন তার নিজ ধর্ম ভুলে যায়। এরকম এক ভয়ংকর সময়ে তার খোঁজতে হচ্ছে ইব্রাহীম গাজীকে। আর তাকে খুঁজতে গিয়ে সেসময় মুখোমুখি হতে হয়েছে কতোশত প্রতিকূলতার। দেখতে হয়েছে কতো ভয়ংকর কিছু। তখন মৃত্যু খুব সহজ ব্যপার। তারপরও চলতে হয় আরো, আরো পথ। উপন্যাসের মূল পটভূমি আটাশির বন্যা। বন্যায় মানুষের যে দূর্গতি। তখন কার সময়ে মানুষের যে অবস্থা। লেখক জলেশ্বরীতে তাই বর্ণনা করেছেন। গ্রামের মানুষ গুলো সে সময় অনাহারে কতো টা নীচ নিকৃষ্ট হতে পেরেছিলো, তার চিত্র দেখিয়েছেন। না খেতে পেয়ে কতো মানুষের মৃত্যু দেখিয়েছেন। কেননা তখন সব থেকে সহজ যা ছিলো তা হলো মৃত্যু। উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লেখকের বর্ণনা সত্যিই বেশ সুন্দর। লেখকের লেখনী , তার শব্দ চয়ন, উপমা সব কিছুই প্রশংসা সূচক। লেখক হিসেবে পাঠককে তিনি সত্যিই মুগ্ধ করেছেন। বন্যার গোলা পানির বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখেন "ছানি পড়া বৃদ্ধের চোখের মত ঘোলা পানি, কোথাকার মাটি যেন খেয়ে এসেছে"। অবাক হতেই হয়! উপমা প্রয়োগও ছিলো বেশ। একসময়ের বাস্তব জীবন চোখের সামনে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক তার অসামান্য লেখনি দিয়ে। চরিত্র চিত্রন এবং কাহিনীর প্রবাহও ছিলো বেশ গতিময়। বইয়ের নামটাই অসম্ভব সুন্দর। "জলেশ্বরী" কেমন একটা তরঙ্গ সৃষ্টি করে। আরও একটা ব্যপার হলো চরিত্রের নাম। পড়া শুরু করেছি, পড়ছি। যে "আমি" দিয়ে পড়া শুরু করেছি। সেই "আমি"র নাম জেনেছি বইয়ের মাঝ বরাবর গিয়ে। এবং খুবই অবাক হতে হয় এখানে, এতক্ষন সে "আমি" টা কে তার নাম না জানায় কোন কিছুর অভাব বোধ করিনি। আর এটা সম্ভব হয়েছিলো লেখকের সরল বর্ণনা ভঙ্গির জন্য। লেখকের এ উপন্যাসের কল্যানে আমি দেখে এলাম আটাশির বন্যা, বন্যা কবলিত জীবন, বন্যা চলে যাওয়ার পরের অবস্থা। দূর্যোগ, চার দিকে লাশের গন্ধ। সে এক অস্থির সময়! আচ্ছা সব কিছুর পর ইব্রাহীম কে কি খুজে পাওয়া গিয়েছিলো?! আর এই উত্তর জানার পর , পাঠক চোখে কতো গুলো ছবি আটকিয়ে বই টা উল্টে দিবে। রেটিং-৪.৫/৫ রকমারি লিংক- https://www.rokomari.com/book/111089/জলেশ্বরী
Was this review helpful to you?
or
"ক্যালিফোর্নিয়া স্টেইট ইউনিভার্সিটি।ঐটা কোন জেলায়,জীবনেও তো নাম শুনি নাই।" গ্রামের তিনবারে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করা মাষ্টার সাহেবের এমন প্রশ্নের উত্তরে যখন কাজল বলে,"এটা আমেরিকায়",তখন সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। নির্ঘাত মৃত্যু থেকে বেচে যায় কাজল ও তার নৌকার দুজন, ডাকাত সন্দেহ থেকে। কাজল, অসাধারণ উপন্যাস জলেশ্বরীর নায়ক।পিতার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে কাজল নয় বছর পর দেশে ফিরে এসে বাবার সবকিছু দেখতে দেখতে পেয়ে যায় একটা চিরকুট।তাতে লেখা,"আর পারছি না।জলেশ্বরী গ্রামের ইব্রাহীম গাজি আমাকে ঘুমাতে দেয় না।" অচেনা এই ইব্রাহীম গাজির খোঁজে বের হয় কাজল,বজলু আর লিয়াকত মাঝিকে সাথে নিয়ে জলেশ্বরী গ্রামের উদ্দেশ্যে। বন্যায় সারাদেশ প্লাবিত,মানুষ খেতে পারছে না।এরকম অবস্তায় জলচর গ্রামে এসে এক ইব্রাহীম গাজি কে পেলেও জানতে পারে ইনি সেই ইব্রাহীম গাজি না।ফলে আবার যাত্রা আরাম্ভ হয়। কিন্তু কাজলের বাক্স বোঝাই টাকা দেখে নৌকার দুই মাঝি লোভ সংবরণ করতে পারে না।একদিন কফির সাথে ধুতরা পাতার রস মিশিয়ে দিয়ে ফেলে দেয় কাজল কে এক নির্জন চরে। সেখানে জ্ঞান ফিরে দেখা পায় তাপসী নামের দৃঢ়,ধৈর্যশীল এক রহস্যময়ী নারীকে যে এই চরে আরো আগে থেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছে।গাছের ডালে দুজনের বসত শুরু হয়। ভাগ্যের গুণে এক বেদের দলের সাহায্যে এই দুজন মুক্তি পায় সেই চর থেকে।নানান চড়াই উতরাই পাড় করে কাজল ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করে জলেশ্বরী গ্রামের দিকে। কিন্তু জলে স্থলে সব জাগায় মৃত্যু আর লাশের গন্ধ উৎ পেতে থাকে।ঘটে নানান হৃদয় বিদারক কাহিনী। শেষ পর্যন্ত কাজল কি পেরেছে জলেশ্বরী গ্রামে যেতে?বাবার চিরকুটের রহস্য উদঘাটন করত? তাপসীরই বা কি হলো? জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে এই বইটি। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ যথার্থ উপমায় ভরপুর,বাস্তব জীবনের কাহিনী চোখের সামনে ফুটিয়ে তোলার অসামান্য দক্ষতা আর হৃদয় কে নাড়া দেওয়ার মত এক প্লট নিয়ে রচিত জলেশ্বরী বইটি আমার সত্যিই অনেক ভালো লেগেছে। পড়া শেষে পুরা থমকে ছিলাম কতক্ষন.... মায়া পড়ে গিয়েছিলো বইটার উপর।
Was this review helpful to you?
or
একটা গল্প, হ্যাঁ নিছক সাদামাটা একটা গল্প। যা পড়তে শুরু করার পরে আপনি যখন ছেড়ে উঠতে পারবেন না, বুঝতে হবে তার ভেতরে এমন কিছু আছে সেই মোহ আপনাকে আঁকড়ে রাখছে। গভীর থেকে গভীরভাবে হৃদবন্ধনে আঁকড়ে অনুচ্ছেদ থেকে পৃষ্ঠা অতঃপর পরিচ্ছেদ অবধি গিয়েও আপনি হয়ত বিশেষ কিছু খুঁজছেন। প্রতিটা লাইন এমনকী শব্দও আপনার ভেতরবাড়িতে জোর করে ঢুকে পড়েছে। আপনিও আতিথ্য দিচ্ছেন সেইসব বাক্য, শব্দকে। আবার খুঁজে চলছেন গল্পের ভেতরের গল্প। এই যে মোহ, আর গল্পের ভেতরে গল্প খোঁজার ইচ্ছে ও ডুবে যাওয়ার মত বিভ্রম তার নাম 'জলেশ্বরী'। আর যে বাক্যবিন্যাশ ও সহজ আত্মিক শব্দের বুননশিল্প তার কারিগর 'ওবায়েদ হক'। একটা উপন্যাস, জলেশ্বরী একটা গ্রাম। একটা খোঁজ আর কিছু চরিত্র। কিন্তু কি আছে বইটিতে, যা আপনাকে প্রতিক্ষণ টেনে নিচ্ছে সামনের পৃষ্ঠায়? কি সেই খোঁজ, যার জন্য আপনিও লেখকের সহযাত্রী হয়েছেন পরিচ্ছেদ ধরে ধরে। কী সেই গল্প, যা আপনাকে শিক্ষা দিচ্ছে সেই খোঁজের রাস্তার প্রতিটা অংশে! বলেছিলাম গল্পের ভেতরের গল্প, জলেশ্বরীর সেই খোঁজের ভেতরের গল্পগুলো আপনাকে ছাপিয়ে দেবে, ভাবাবে কাঁদাবে অতঃপর থমকে দেবে। উপন্যাস চিত্রপটঃ আমেরিকা ফেরত কাজল। বাবার মৃত্যুর সংবাদে নয় বছর পরে দেশে ফিরে বুঝতে পারে তার বাবার মৃত্যু নিছক আত্মহত্যা নয়। এর পেছনে রয়েছে বিশাল এক গল্প, এক রহস্য। যে রহস্যের কেন্দ্র মেঘনার চরাঞ্চলের কোন গ্রাম 'জ্বলেশ্বরী'। কিন্তু কী সেই রহস্য? কাজলের মস্তিষ্কে চেপে বসা সেই রহস্য উদ্ঘাটনের যাত্রাই হল উপন্যাসের গল্প। একটা যাত্রা, খুঁজে ফেরা রহস্যকে উপজীব্য করে নির্মিত গল্পে ওবায়েদ লিখেছেন ভুল ঠিকানায় আসা জলছর গ্রামের মানুষের জীবন চিত্র। ডাকাত সন্দেহে ধরা পড়ে জীবন ফেরত পেয়েছিলেন যে নিতাই মাস্টারের জন্য, লেখক দেখিয়েছেন একটা লক্ষ্মী মুর্তি কীভাবে স্ত্রী প্রতি ভালবাসাকে স্বমহিমায় আঁকড়ে রাখে। লেখকের যে খোঁজ, সেই খোঁজের নাম 'ইব্রাহীম গাজী'। কি আছে তার মাঝে। জলছর গ্রামে আসল ইব্রাহীম গাজীকে খুঁজে না পেলেও পেয়েছিলেন অন্য কোন ইব্রাহীমকে। অভাব, খিদের তীব্রতায় ক্লিষ্ট, ক্ষয়িস্ন ইব্রাহীম খাবার পেয়েছিল সেদিন। তবে জলছরের অশিক্ষিত দরিদ্র মানুষটি ফেরত দিয়েছিল ভালবাসা। সেই ভালবাসার নাম 'শালুক'। লেখক খুঁজে ফিরেছেন জলেশ্বরী, তাকে যে সেখানে যেতেই হবে! কিন্তু নিজ নৌকার মাঝীদের দ্বারা ডাকাতির শিকার হয়ে পরিত্যাক্ত বন্যায় ডোবা চরে জায়গা হবার আগে পেয়েছিল মতিন চোরাকে। যে মতিন তার একমাত্র কন্যা সন্তানের মুখে একমুঠো খাবার তুলে দেবার জন্য প্রয়োজনে মানুষ খুন করতেও রাজি ছিল। হাঁটুপানিতে ডোবা জনামানবহীন চরে কাজল (বলতে পারেন লেখকও, উত্তম পুরুষে বর্ননা করেছেন লেখক) যখন মৃত্যুপ্রায় দিকভ্রান্ত হয়ে ছুটছে তখন তার সাথে দেখা হয় তাপসী! কিন্তু কে এই তাপসী? পেটফাঁপা বন্যায় মেঘনার এই নির্জন চরে সে এলো কীভাবে! ভাগ্যক্রমে কাজল-তাপসীর জায়গা হয় বেদে নৌকোয়। নৈতিকতা পরাস্ত হয়নি। বায়োবৃদ্ধ বেদেনী বুজির কাছে কাজল-তাপসী হয়ে ওঠে আপন কেউ, খুব আপন! তারপর? সবার গন্তব্য জলেশ্বরী। ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না, হয়ত লেখক চাননি বলে! মাঝপথেই ছিটকে যেতে হয় তাদের যে যার রাস্তায়। নানা ঘটনার আবর্তে লেখক দেখিয়েছেন বন্যা পরবর্তি দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি, এমনই এক পরিস্থিতির একটা 'কলেরা' বিপন্ন গ্রামে স্থানে স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাশের সৎকার করতে হয়েছে কাজলকে, ঘটনাক্রমে আবার দেখা হয় তাপসীর সাথে। তাপসীর চিকিৎসা জ্ঞানে সুস্থ হচ্ছে গ্রামের কলেরা আক্রান্ত মানুষেরা। কিন্তু তাপসী এই গ্রামে কেন এলো! লেখক যেন রেখেছেন প্রতিটা জায়গায় সেই রহস্য, ভেঙ্গেছেন আবার কিছুদূরেই। হটাত তাপসী কলেরা আক্রান্ত হলে কাজলকে গন্তব্যের চিন্তা বাদ দিয়ে তাকে চিকিৎসা করানোর জন্যই রওনা হতে হয় সদরে! মাঝ নদীতে ডাকাতের আক্রমণের শিকার হয় তারা। যে রহস্যের খোঁজ জলেশ্বরীতে, তার জন্য আর জলেশ্বরী যেতে হয়নি কাজলকে। কিন্তু ঠিকই এক জলেশ্বরী নিয়েই ফিরে এসেছিল কাজল। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ একটা উপন্যাস জলেশ্বরী, একজন লেখক ওবায়েদ হক। কিছু কিছু বই পড়ার পরে থমকে যাই, বিভ্রমে আটকা থাকি কয়েকদিন। জলেশ্বরী'তে আমার বিভ্রম বা থমকে থাকাটা প্রতিটা স্টেপে, প্রতি পরিচ্ছেদে। প্রতি অনুচ্ছেদ পড়ার পরে আবার পড়েছি, কেন? কীসের জন্য! এক মায়ায়, লেখনশৈলীর প্রেমে। লেখকের বাক্যবিন্যাশ পাঠককে টেনে রাখার সম্মোহনী ক্ষমতা ঈর্শ্বনীয়। তবে কি সমালোচনার জায়গা ছিল না? অবশ্যই ছিল। লেখক সেটা ব্যাল্যান্স করেছেন নিজগুনে নিজের ক্ষমতায় ছাপিয়ে দিয়েছেন বাক্যের প্রেমে। জলেশ্বরী আমার কাছে অতিকল্পনীয় কখনো মাত্রাতিরিক্ত সিনেমাটিক গল্প মনে হয়েছে। যেমন ধরুন তাপসী, যে কিনা শাড়ি পরে প্রায় দুইদিনের নদী সাঁতরে নির্জন চরে হিজল গাছে বাস করেছিল, খাচ্ছিল মাছ পুড়ে। যার কাছে ছিল, রাম'দা এমনকী আগুন জ্বালাতে শাড়ির আঁচলে ম্যাচ বাক্স! ভাবা যায়? কীভাবে সম্ভব! জলেশ্বরী কতটা সিনেমাটিক ছিল চিন্তা করুন, শোভা পালিয়ে যাবার পরে সে কাজল যাকে কোনদিন দেখেইনি তাকে চিনে ফেলে সামান্য লক্ষ্মী মুর্তির চেহারায়! মতিন চোরা, মাঝি লিয়াকত, তাপসী'কে তিনি আবার ঘুরিয়ে এনেছেন নিজের সামনে। এটা ঠিক প্রয়োজনীয়তা ছিল এই গল্পে, কিন্তু তা অতি সিনেমাটিক হয়ে গেল। তাপসী বেদে নৌকায় কাজলকে একটা কথা বলতে বাকী রেখেছিল, কারণ সে সেটা পরে বলবে। সে জানতো আবার তার সাথে দেখা হবে। কীভাবে? কোন যোগসুত্রে! লেখক দেখিয়েছেন তাকে বিভ্রান্ত করে উল্টো পথে নেওয়া হয়েছে। তাহলে কি তাপসীও জানতো কাজল সেই ভুল করবে! বাহ্। অতিকল্পনা, আর অতি-সিনেমাটিক কাহিনী নির্মান বাদ দিয়ে যদি লেখকের বর্ননাকৌশল নিয়ে কথা বলেন, তবে প্রজন্মের সেরা লেখক তিনি। অন্তত আমার পড়া যেকোন জীবিত লেখকদের মধ্যে সেরা তিনি। ওবায়েদ হককে চিনি না, তবে টুকটাক যতটুকু লিখতে পারি সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি এই লেখক লিখেছেন, অতঃপর নিজে পড়েছেন। সম্পাদনা করেছেন। এভাবেই ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়েছেন তার লেখা। প্রতি বাক্যে রেখেছেন মোহ, টান। সেই সম্মোহনী টানে তিনি পাঠককে যতটা গল্পে ধরে রেখেছেন তার থেকে বেশি রেখেছেন তার লেখার গভীরতায়। সাদামাটা গল্পের ভেতরে ছোট ছোট ঘটনাকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন সমাজবোধের খুব গভীর চিত্রে। দেখিয়েছেন সমস্যা, তার উপলব্ধি। উপলব্ধি দেখানোর পরে আবার সেই ভাবনাটা নিজের উপরে প্রয়োগ করিয়েছেন। লেখক দেখিয়েছেন উত্তমপুরুষে লিখে কীভাবে স্বমহিমায় গল্পকে বর্ণনা করা যায়। একটা গল্প যখন উত্তমপুরুষে বর্ণনা হয় সেটা পাঠকের কাছে নিজের গল্প মনে হতে হবে, তবে সাথে ভয় থাকে কাল্পনিক ঘটনা নিজের মত করে বর্ণনা করে কতটা সজীব রাখা সম্ভব। কতটা প্রাণ, প্রকৃতি ও সাহিত্যরস ঢেলে দেওয়া যায়। লেখক সেটা দেখাতে পেরেছেন দারুণভাবে। জলেশ্বরী সাদামাটা গল্প, তবে তার মাঝে সবথেকে স্পেশাল ছিল 'খোঁজ'। যা আপনাকে শেষে ফিরে বিশেষ কিছু দেবে না, কিন্তু সারাপথ জুড়েই ঢেলে দিয়েছেন, নিংড়ে দিয়েছেন। তাই বেদনার গল্পও ছিল ভাবনার। পূর্ণতার। 'জলেশ্বরী' ২০১৬ সালে প্রকাশ করেছিল আদি প্রকাশনী। পরিবর্ধন পরে পরিমার্জিত হয়ে আসছে বইমেলা উপলক্ষে ১৪৪ পৃষ্ঠায় প্রকাশ করছে রাজশাহীর 'হৃদি প্রকাশ'। লেখক ওবায়েদ হক, পর্দার অন্তরালের মানুষ। তবে তার সৃষ্টি ছড়িয়ে পড়বে স্বমহিমায়। জলেশ্বরী তেমনই সুখপাঠ্য বই।