User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বই: অন্দরমহল লেখক: সাদাত হোসেইন প্রথম প্রকাশ: একুশে বইমেলা ২০১৬ প্রকাশনা: ভাষাচিত্র প্রকাশনী পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৪৩৮ মুদ্রিত মুল্য: ৬৫০ টাকা আমেরিকান একটা প্রবাদ আছে ৷ Every sin carries its own punishment ৷ অর্থাৎ পাপ কাউকে ছাড় দেয় না ৷ ছোট পাপ হোক কিংবা বড় পাপ, প্রকৃতি নিজ দায়িত্বে তার হিসেব ষোলআনা পুরন করে তবেই দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নেয় ৷ এই কথার পুর্নাঙ্গ প্রতিফলন লেখক সাদাত হোসেন তার অন্দরমহলে ঘটিয়েছেন ৷ তবে উপন্যাসের ভুমিকাতেই ডেথ অফ দ্য অথর দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন একটা বই পাঠকের কাছে যাওয়া মাত্র বইটা আর লেখকের থাকে না, বইয়ের কাহিনি তখন পাঠকের একান্ত নিজের ৷ অন্দরমহল! শব্দটাতেই কতো কি লুকিয়ে আছে তাই না! অন্দরমহল বললে চোখের সামনে বুঝি বা বিরাট কোনো প্রাসাদের ভেতরের দিক ঝিলিক দিয়ে যায় ৷ তারও গভীরে গেলে সেই অন্দরমহলের মানুষগুলোর ভেতরের অন্দরমহলটুকুও দেখা যায় ৷ লেখক তার অন্দরমহলে দুটোই দেখিয়েছেন ৷ কাহিনি শুরু হয়েছে বিষ্ণুপুরের বিশাল তল্লাটের জমিদারের মধ্যমপুত্র দেবেন্দ্রনারায়নের বাগানবাড়ি দিয়ে ৷ একছত্র প্রতাপশাালী জমিদার বিষ্ণুনারায়নের তিন পুত্রের মধ্যে মধ্যমটিই যে জমিদারের পরবর্তী উত্তরাধিকার সে বিষয়ে প্রজাদের কারও সন্দেহ নেই ৷ দেবেন্দ্রনারায়নের শয্যাসঙ্গীনী হেমাঙ্গিনি দেবী কাহিনির অন্যতম চরিত্র ৷ প্রথম দিকে হেমাঙ্গিনী দেবীকে তেমনভাবে উপস্থাপন না করা হলেও পরবর্তীতে বেশ রহস্যময় ভুমিকা পালন করেন তিনি ৷ জমিদার বিষ্ণুনারায়নের জোষ্ঠপুত্র অবনীন্দ্রনারায়ন জমিদারী দেখাশোনার কাজে যে একেবারেই অযোগ্য সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই অসুস্থ জমিদারের ৷ একাজের জন্য উপযুক্ত মানুষ দেবেন্দ্রনারায়ন তার প্রমান তিনি বহুবার পেয়েছেন ৷ তার প্রাসাদের অন্দরমহল কিংবা রাজত্বের সমস্ত প্রজাদের নিকট দেবেন্দ্রনারায়নই তাদের জমিদার ৷ তবে এই একছত্র অধিনায়কত্বে বড় বাবু অবনীন্দ্রনারায়নের কোনো অসুবিধা না থাকলেও তার স্ত্রী উচ্চাভিলাষী বীনাবালার ভেতরে রয়েছে বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা তীব্র ক্ষোভ ৷ বিশেষ করে অন্দরমহলে মেজো জা অর্থাৎ দেবেন্দ্রনারায়নের স্ত্রী রেনুকার অধিপতি বনে যাওয়া তিনি মানতে পারেন নি কিছুতেই ৷ তাই তো অবনীন্দ্রনারায়ন ভাতৃস্নেহে অন্ধ এবং নিজস্ব গানের ভাবুক ভুবনে ডুবে থাকলেও বীনাবালার ভেতরের তীব্র ক্ষোভ আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতো দানা বেধেছে অনেক আগেই ৷ তিনি তার অধিপতি বিস্তারের জন্য যেকোন ধরনের অন্যায় করতে দ্বিধা করেন না ৷ তবে তার সবচেয়ে গোপন কথা যেটা উপন্যাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয় সেটার জন্য পাঠককে যেতে হবে উপন্যাসের আরো অন্দরমহলে ৷ অন্দরমহলে আরো আছে দেবেন্দ্রনারায়ন এবং রেনুবালার দুই কন্যা সর্বজয়া এবং সুদক্ষিনা ৷ সুদক্ষিনা সহজ স্বাভাবিক হলেও সর্বজয়া যে জমিদারের উপযুক্ত কন্যা সেটা সে তার চাল চলনে সব সময়ই বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করে ৷ সর্বজয়া সম্পর্কে উপন্যাসে সর্বাধিক প্রচলিত কথা বলা হয়েছে "শেষ পর্যন্ত দেবেন্দ্রনারায়নের ঘরে দেবেন্দ্রনারায়নই মেয়ে হয়ে জন্মগ্রহহন করেছে ৷ এ কাউকে মানে না কারো কথা শোনে না ৷ " সর্বজয়া এবং সুদক্ষিনার গানের শিক্ষক রতনকান্তি ৷ নেহাতই হত দরিদ্র ঘরের সন্তান ৷ মেজকর্তা দেবেন্দ্রনারায়নের সুদৃষ্টি পড়ায় ঠাই হয়েছিলো গঙ্গা মহলে ৷ আপাতদৃষ্টিতে তাকে নেহাতই দুর্বল চরিত্রের মানুষ মনে হলেও অন্দরমহলে তার ভুমিকা দেখতে হলে পাঠককে বেশ খানিকটা অপেক্ষা করতে হবে ৷ পুরো উপন্যাসের কাহিনিতে খুব গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করে হরিহরন বনিক ৷ হরিহরন বনিককে পাঠকের কাছে প্রথমে মাথায় সমস্যাওয়ালা একজন ভালো মানুষ হিসেবে তুলে ধরা হয় ৷ কিন্তু হরিহরনের গোড়াপত্তন আরো রহস্যময় ৷ তার সাথে জড়িয়ে আছে হেমাঙ্গিনী দেবীর সুদুর অতীতের শিকড় ৷ হেমাঙ্গীনি দেবীকে ভুলে গেলে চলবে না ৷ জমিদার দেবেন্দ্রনারায়ন এর রক্ষিতা এবং এক সময়ের প্রণয়িনি হেমাঙ্গিনী দেবীর জন্যই অন্দরমহলের কাহিনী শুরু ৷ তার সাথে বাজারের পাগল হরিহরন বনিক কি ধরনের শেকলে বাধা সেটা চমৎকার টুইস্ট দিয়ে বর্ননা করেছেন লেখক ৷ পুরো উপন্যাসের মধ্যমনি যার জন্য অন্দরমহল এর প্রতিটি চরিত্র নিজ ভুমিকায় অবতীর্ণ হয় তার নাম বিভুই ৷ উপন্যাসে তার আগমন যেমন রহস্যময় তেমন তার পরিচয়ও রহস্যময় ৷ ভয়াবহ কালব্যধী নিয়ে যে প্রবেশ করে অন্দরমহলে পরবর্তীতে উপন্যাসের প্রতিটা ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু সেই ৷ তবে কে সে? তাকে নিয়ে কেন এতো ভয় জমিদার কর্তার! তাকে বাঁচাতে নিজের প্রানভয় তুচ্ছ করে জমিদারবাবু কেনই বা ঝুকি নেন! তার সাথে গঙ্গা মহলের সম্পর্কই বা কি! অন্দরমহলে আরো আছে জমিদার বিষ্ণুনারায়নের সবচেয়ে ছোট ছেলে দীপেন্দ্রনারায়ন ৷ আপাত দৃষ্টিতে তাকে নিজেদের জমিদারি নিয়ে উদাসিন মনে হলেও সে কি সত্যিই উদাসিন? শান্ত শিষ্ট ছোটবাবু নামে পরিচিত এই মানুষটা কি সত্যিই খেয়াল করে না আশপাশে কি ঘটছে? আরো আছে অবনীন্দ্রনারায়ন এবং বীনাবালার পুত্র দীজেন্দ্রনারায়ন ৷ অন্ধ ক্রোধ,ক্ষোভ একটা মানুষকে কতোটা ভয়াবহ করতে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ৷ তার কাজের ভয়াবহতা দেখে পাঠককে শিউরে উঠতে হয় ৷ শিউরে উঠতে হয় বীনাবালার ষড়যন্ত্র দেখেও ৷ তার ষড়যন্ত্রের একনিষ্ঠ সমর্থক বিভুতিভূষণ সাহা ৷ কিন্তু কেন এতো নিস্বার্থভাবে সমর্থন করেন তিনি এতো অন্যায়? সবশেষে লেখক একটা জিনিসই বুঝিয়েছেন পাপ কাউকে ছাড় দেয় না ৷ একথা যেমন একজন কমলা দাসীর জন্য সত্যি ঠিক তেমনি প্রবল প্রতাপশালী দেবেন্দ্রনারায়ন এর জন্যও সত্যি ৷ গঙ্গামহলের অন্দরমহলে একটা বিশাল গল্প আছে ৷ যে গল্পে হাসি কান্না ভালোবাসা তীব্র ক্ষোভ অন্তর্নিহিত ৷ ইতিহাসের কোনো এক কোনা থেকে তুলে এনে সাদাত হোসেন গল্প টাকে ঢুকিয়ে দিয়েছেনে আমাদের অন্দরমহলে ৷ যে সমুদ্রের মতো বিশাল গঙ্গার পাশে কাহিনির শুরু সেই গঙ্গার তরঙ্গেই কাহিনীর শেষ ৷ মাঝখানে বুকে দাগ কাটার মতো একটা গল্প ৷ যদিও সাদাত হোসেন শুরুতেই বলেছেন কাহিনির সবটাই কাল্পনিক তবে পড়ার সময় মনে হয় সমস্ত ঘটনা বুঝি বা চোখের সামনে ভাসছে ৷ অন্দরমহলের পরতে পরতে সাদাত হোসেন ভালো লাগার ঝুলি সাজিয়ে দিয়েছেন ৷ শেষ করেছেন অসাধারণ একটা উক্তি দিয়ে " আমাদের কিছুই নেই,অথচ সবটা সময় জুড়ে ভাবি এই বুঝি নিঃস্ব হলাম " অন্দরমহলের রহস্যের সমাধান জানতে পাঠককে পড়তে হবে পুরো বইটি ৷ ব্যক্তিগত রেটিং: 4.8/5
Was this review helpful to you?
or
মোটামুটি লেগেছে।একেবারে খারাপ না।
Was this review helpful to you?
or
অসম্ভব ভালো লেগেছে বইটি।
Was this review helpful to you?
or
Good one
Was this review helpful to you?
or
iভাল্লাগে
Was this review helpful to you?
or
Best
Was this review helpful to you?
or
good
Was this review helpful to you?
or
?
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ গল্প
Was this review helpful to you?
or
জমিদারি প্লটের উপর বই আমার এটাই প্রথম পড়া, যদিও অনেক সিনেমা দেখা হয়েছে । মুহুর্তে মুহুর্তে বিভিন্ন টুইস্ট এ ভিরা ছিলো বইটি। জমিদারি হাতানোর জন্য মানুষ কতটা নির্দয় নৃশংস চিন্তা জ্ঞানহীন হয় সেটা এই বইয়ে অনেক গভীরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । অত্যন্ত দাম্ভিক দেবেন্দ্রনারায়ণের গুটিবসন্তের মতো রোগের জন্য তাকে নীরবে পরাস্ত হতে হয়, তার ভাবী বীণাবালার কাছে। একজন মানুষ কোনো কারণে একটু দুর্বল হয়ে গেলে তাকে সবাই মিলে চেপে ধরে নীচের দিকে। জমিদারদের স্বভাবে, ব্যাবহারে যে কিছুটা দোষ থাকে, সেটাও এই বইয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বিষ্ণুপুর জমিদার পরিবারও এইসবের চেয়ে ভিন্ন ছিলো না। হঠাৎ করে নৌকাতে পাওয়া গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয় পিচ্চি ছেলে বিভুঁই, যেটা এই জমিদার পরিবারেরই কারোর ষড়যন্ত্রের ফলাফল ৷ কিন্তু কে বিভুঁইয়ের বাবা? এটা চমৎকার একটা টুইস্ট। সেটা জানতে গিয়ে খুব চমকে গিয়েছি। তবে ভালো লেগেছে পুরো বইটা পড়ে।
Was this review helpful to you?
or
দেবেন্দ্রনারায়ণ হঠাৎ টের পেলেন তার পাথর কঠিন চোখজোড়াও ক্রমশই জলে ভরে উঠছে। কিন্তু বা হাত বাড়িয়ে রেণুকার অগোচরেই তিনি তার চোখের সেই জল মুছে ফেললেন। তিনি চান না এই জগতে দেবেন্দ্রনারায়ণের চোখের জল কেউ দেখুক। দেবেন্দ্রনারায়ণের চেয়ে কে আর বেশি জানে যে, কিছু কিছু মানুষ বুকের ভেতর আস্ত একটি নোনা জলের সমুদ্র লুকিয়ে রেখে খটখটে শুকনো চোখে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয়। সকলেই তার অশ্রæবিহীন সেই কঠিন চোখজোড়াই দেখে, বুকের ভেতর লুকিয়ে থাকা কষ্টজলের সমুদ্র কেউ দেখে না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে বিষ্ণুপুর জমিদারীর অন্দরমহল শান্ত হয়েছে। কিন্তু সময় বলছে, সামনে অপেক্ষা করছে নতুন এক গল্প। বিবমিষার গভীর অন্ধকার থেকে উঁকি দেয়া নতুন এক আখ্যান। সেই আখ্যান জুড়ে অন্দরমহল। সেই অন্দরমহল শুধুমাত্র বিষ্ণুপুর জমিদারির কেন্দ্রস্থল গঙ্গামহলেরই অন্দরমহল নয়, এই অন্দরমহল মন ও মানবেরও এক সুগভীর অন্দরমহল। বইঃ অন্দরমহল লেখকঃ সাদাত হোসাইন
Was this review helpful to you?
or
“গঙ্গামহল অথবা অন্দরমহলের গল্প” . “আমাদের কিছুই নেই, অথচ সবটা সময়জুড়ে ভাবি, এই বুঝি নিঃস্ব হলাম। ” ৪৩৮ পৃষ্ঠার উপন্যাসের একেবারেই শেষের লাইনটি দিয়ে শুরু করলাম রিভিউ লেখা। কারণ এই একটি লাইন বা উক্তির মর্মার্থ যদি বীণাবালা বুঝতে পারতো তবে গোটা বইটাই সৃষ্টি হত না বোধহয়। “অন্দরমহলের বাতাসে-বাতাসে ভয়ানক দুর্যোগের আভাস। এই দুর্যোগ কালব্যধি গুটিবসন্তের চেয়েও ভয়ঙ্কর।” ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তির নেশা বড় নেশা। বর্তমান সময়ের তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইনের দীর্ঘ কলেবরের বইগুলো পড়ার সাহস করে উঠতে পারিনি আগে। কারণ বড় কলেবরের বই দেখলেই ভয় লাগে আমার। কিন্তু এই অন্দরমহলের প্রথম পাতা খোলে কয়েক লাইন পড়তেই আমি পুরো বইটা পড়ার তীব্র ইচ্ছা বোধ করলাম। কারণ এরপর কি হবে? এই একটি প্রশ্নে পুরো বইতে আমার ভিতরের চোখ অসংখ্যবার লেখা দেখেলো।
Was this review helpful to you?
or
প্রাচীন যুগে রাজা বাদশারা নাকি ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতেন। রাতের আঁধারে প্রজাদের দুঃখ দুর্দশার খোঁজ নিতেন। যদিও কলি যুগে ঘটছে উল্টো ঘটনা। এখানে রাজারা নয়, প্রজারাই ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ায়। রাজাদের আমোদ-প্রমোদের খোরাক জুগাতে। একবার হলো কি, আমারও খুব ইচ্ছে হলো ছদ্মবেশে একটু ঘুরে বেড়াই। রাজা হতে না পারি, ছদ্মবেশে অন্ততঃ ঘুরতে তো পারবো? নিজের মধ্যে রাজা বাদশাদের ভাব আনতে তো আর বাঁধা নেই, তাই না? যেই কথা সেই কাজ। বেড়িয়ে পড়লাম ছদ্মবেশে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও রাজা বাদশাদের ফিলিংস আনতে পারলাম না। এর পেছনে অবশ্য বড় ধরণের একটা কারণও ছিল। নিরুত্তাপ মফস্বল শহর পলাশবাড়ির শেষ মাথায় ইটের ভাটা আর নদী কেন্দ্রিক গড়ে উঠা কোলাহলমুক্ত এলাকায় জীবনের সব সঞ্চয় খরচ করে কলেজের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক লতিফুর রহমান 'অপেক্ষা' নামক যে তিনতলা বাড়িটি বানিয়েছেন, ওখানে পৌঁছা মাত্রই চরম তোপের মুখে পড়ি পলাশবাড়ি থানায় নব্য যোগদানকৃত এস আই রেজাউল হকের। সে কি জেরা! এরকম জাঁদরেল পুলিশ অফিসার জীবনেও দেখি নাই। তাই পরক্ষণেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম। কল্প কাহিনীতে শুনে আসছি, তৎকালীন সময়ে রাজমহলে পাতা হতো কঠিন ষড়যন্ত্রের জাল। রাজমহলের প্রধান সেনাপতি, রাজার ভ্রাতৃকূল কিংবা ভগ্নিপতিদের পাতানো ষড়যন্ত্রের মায়াজালে বন্দী হয়ে রাজ্য দখল করে রাজাকে পাঠানো হতো নির্বাসনে। সিদ্ধান্ত নিলাম নির্বাসনে যাবো, তবে ছদ্মবেশেই। মনসুর-কণা আর জোহরার ত্রিমুখী ভালোবাসা ও নানান সম্পর্কের সমীকরণে সৃষ্ট পবিত্র ভূমি লস্করচরে নির্বাসনে গেলাম। যাওয়ার পথে দেখা হলো এক ডাকাত সর্দারনীর সাথে। উনি আমাকে নির্বাসনের সময় বেঁধে দিলেন। মাত্র তিন দিন। এর মধ্যে ফিরে না আসলে নিশ্চিত শিরচ্ছেদ। কে চায়, আয়েশ করে নিজের কল্লা কাটতে। লস্করচরের এই নির্বাসন আমার জীবনের আরেক স্মরণীয় অধ্যায়। জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা সম্পর্কের সমীকরণ, নিয়তির যাঁতাকলে পিষ্ট হবার নির্মম বাস্তবতা। হিংসা, বিদ্বেষ আর ভালোবাসার এক বাস্তব উপাখ্যান আমার এই নির্বাসনে চোখের পলকেই কেটে গেলো ডাকাত সর্দারনীর বেঁধে দেওয়া মাত্র তিনটা দিন। ফেরার পথে ভাবছি- আহারে, যদি আর ক'টা দিন থাকতে পারতাম! হলো না। ফিরে গেলাম অন্দরমহলে। প্রিয় পাঠক গল্পের পাতানো ফাঁদে এতক্ষণ যে বকবক করে গেলাম, আশা করি তা অনুধাবন করতে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের প্রয়োজন পড়বে না। বলছিলাম, সাদাত হোসাইনের বই নিয়ে। ছদ্মবেশ দিয়ে গুণী এই লেখকের লেখার সাথে আমার পরিচয়। লেখকের এই মৌলিক থ্রিলারটির আবেশ এখনো জড়িয়ে আছে মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রে। কান পাতলে এখনো শুনতে পাই ছদ্মবেশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা নিরুত্তাপ পলাশ বাড়ির নানান ষড়যন্ত্র। অতঃপর নির্বাসন পড়ে লেখকের নির্মাণশৈলী আর গল্প তৈরির মুন্সিয়ানা দেখে আমি হতবাক না হয়ে পারিনি। নির্বাসন থেকে ফিরেই হাতে তুলি নিলাম লেখকের আরেক সাড়া জাগানো উপন্যাস অন্দরমহল। একটি হিন্দু জমিদার পরিবারেরর উত্তান-পতন এবং ষড়যন্ত্রের আরেক উপাখ্যান এই অন্দরমহল। সহজ-সরল ভাষায় লিপিবদ্ধ গঙ্গাবতী নদী তীরে অবস্থিত বিষ্ণুপুরের জমিদার বাড়ি গঙ্গামহল দখলের অভিনব ষড়যন্ত্রের বীজ বুননকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে এই উপন্যাসের মূল আখ্যান। যার প্রতিটি ইটের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে ছিল ক্ষমতার মসনেদ আসিন হবার অভিলাষী গন্ধ আর নিখুঁত মায়াজালের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র। জমিদারী প্রথা অনুযায়ী বিষ্ণুনারায়ণের বড় পুত্র অবনীন্দ্রনারায়ণের উপর জমিদারী ভার অর্পিত হওয়ার কথা থাকলেও ইহজগতের লৌকিক মোহে অবিশ্বাসী এই মানুষটি এই গুরু দায়িত্ব বহনে অপরাগতা প্রকাশ করতেই গঙ্গামহলে স্থাপিত হয় ষড়যন্ত্রের প্রথম সিঁড়ি। অবনীন্দ্র নারায়ণের অপরাগতায় নিয়মানুযায়ী জমিদারীর ভারটি অর্পিত হওয়ার কথা বিষ্ণু নারায়ণের মেজোপুত্র দেবেন্দ্রনারায়ণের উপর। আর তাতেই অবনীন্দ্রনারায়ণের পত্নী বীনাবালার কলিজায় আগুন ধরে যায়। গঙ্গামহলের প্রতিটি করিডোরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তিনি বুনতে থাকেন ষড়যন্ত্রের নির্মম জাল। ক্ষমতা, মসনদ, লোভ, প্রতিহিংসা আর ইহলৌকিক সুখের তীব্র আকাঙ্কায় মরিয়া বীনাবালার পাতানো জালে দুর্যোগের কালো ছায়া নেমে আসে গঙ্গামহলের আকাশে। গঙ্গামহলের সুখ পাখি উড়াল দেয় তার আপন ঠিকানায়। সাদাত ভাই, আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে মনে খুব সাধ জেগেছে। কিছু মনে করবেন না তো? আপনার পূর্ব পুরুষরা কি কখনো জমিদার ছিলেন? উত্তরটা যদি হ্যাঁ হয়, তবে একজন পাঠক হিসেবে আমার নিরস ক্যানভাস থাকবে ভোতা তুলির একেবারেই আঁচড়মুক্ত। আর জবাবটা যদি না হয়, তবে কথা আছে আমার। এও কি সম্ভব? কেমন করে একটা মানুষ তার মনের সব রং উজাড় করে দিয়ে এমন বাস্তব একটা গল্প তৈরি করতে পারে? গল্প পড়ে মনে হলো, গঙ্গামহলে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনার রাজ স্বাক্ষী আপনি নিজেই। গঙ্গামহলের প্রতিটি ইট যেন আপনার ক্ষুরধার লেখনীয় খোঁচায় খোঁচায় তৈরি হয়েছে। অন্দরমহলের আরেক আশ্চর্য সৃষ্টি বিভুই। যার শরীরের প্রতিটি শিরায় উপশিরায় বহমান জমিদারী রক্ত। দেবেন্দ্রনারায়ণের পিতার লালসার শিকার এই বিভুই কি পেয়েছিল তার পিতৃত্বের স্বীকৃতি? ছদ্মবেশে নির্বাসন থেকে ফিরে যে অন্দরমহলে আমি প্রবেশ করেছিলাম, সেখানে অবনীন্দ্রনারায়ণের পত্নী বীনাবালার ষড়যন্ত্রের শিকার আমি নিজেও। এখানেও ঠাঁই হলো না আমার। এতো চালাক বীনাবালা শেষ পর্যন্ত কত বোকামিটাই না করলেন! আমাকে অন্দরমহল থেকে এভাবে বের করে দেয়ার কোনো মানে হয়? শুক্র-শনি অফিস বন্ধ ছিল বলেই তো দু'দিন ছিলাম অন্দরমহলে। আজকে তো এমনিতেই বেড়িয়ে আসতাম। অন্দরমহলে পড়ে থেকে আমার চাকুরীটাতো আর খোয়াতে পারি না। কাল সময় পেলে খানিকটা সময়ের জন্য আরশিনগর থেকে একটু ঘুরে আসবো। দেখি কেমন হয়, সাদাত হোসাইনের কাল্পনিক প্লটে তৈরি করা লালনের সেই বিখ্যাত আরশিনগর। প্রিয় পাঠক, যাবেন নাকি অন্দরমহলে? তবে বীনাবালা থেকে সাবধান। যদি পারেন, বিভুইকে একটু দেখে আসবেন। ওর কথা খুব মনে পড়ছে। বই : অন্দরমহল লেখক : সাদাত হোসাইন প্রকাশনায় : ভাষাচিত্র প্রচ্ছদ : হাসিবুল ইসলাম নাসিম পৃষ্টা সংখ্যা : ৪৩৮ মুদ্রিত মূল্য : ৬৫০ টাকা
Was this review helpful to you?
or
প্রাচীন যুগে রাজা বাদশারা নাকি ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতেন। রাতের আঁধারে প্রজাদের দুঃখ দুর্দশার খোঁজ নিতেন। যদিও কলি যুগে ঘটছে উল্টো ঘটনা। এখানে রাজারা নয়, প্রজারাই ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ায়। রাজাদের আমোদ-প্রমোদের খোরাক জুগাতে। একবার হলো কি, আমারও খুব ইচ্ছে হলো ছদ্মবেশে একটু ঘুরে বেড়াই। রাজা হতে না পারি, ছদ্মবেশে অন্ততঃ ঘুরতে তো পারবো? নিজের মধ্যে রাজা বাদশাদের ভাব আনতে তো আর বাঁধা নেই, তাই না? যেই কথা সেই কাজ। বেড়িয়ে পড়লাম ছদ্মবেশে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও রাজা বাদশাদের ফিলিংস আনতে পারলাম না। এর পেছনে অবশ্য বড় ধরণের একটা কারণও ছিল। নিরুত্তাপ মফস্বল শহর পলাশবাড়ির শেষ মাথায় ইটের ভাটা আর নদী কেন্দ্রিক গড়ে উঠা কোলাহলমুক্ত এলাকায় জীবনের সব সঞ্চয় খরচ করে কলেজের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক লতিফুর রহমান 'অপেক্ষা' নামক যে তিনতলা বাড়িটি বানিয়েছেন, ওখানে পৌঁছা মাত্রই চরম তোপের মুখে পড়ি পলাশবাড়ি থানায় নব্য যোগদানকৃত এস আই রেজাউল হকের। সে কি জেরা! এরকম জাঁদরেল পুলিশ অফিসার জীবনেও দেখি নাই। তাই পরক্ষণেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম। কল্প কাহিনীতে শুনে আসছি, তৎকালীন সময়ে রাজমহলে পাতা হতো কঠিন ষড়যন্ত্রের জাল। রাজমহলের প্রধান সেনাপতি, রাজার ভ্রাতৃকূল কিংবা ভগ্নিপতিদের পাতানো ষড়যন্ত্রের মায়াজালে বন্দী হয়ে রাজ্য দখল করে রাজাকে পাঠানো হতো নির্বাসনে। সিদ্ধান্ত নিলাম নির্বাসনে যাবো, তবে ছদ্মবেশেই। মনসুর-কণা আর জোহরার ত্রিমুখী ভালোবাসা ও নানান সম্পর্কের সমীকরণে সৃষ্ট পবিত্র ভূমি লস্করচরে নির্বাসনে গেলাম। যাওয়ার পথে দেখা হলো এক ডাকাত সর্দারনীর সাথে। উনি আমাকে নির্বাসনের সময় বেঁধে দিলেন। মাত্র তিন দিন। এর মধ্যে ফিরে না আসলে নিশ্চিত শিরচ্ছেদ। কে চায়, আয়েশ করে নিজের কল্লা কাটতে। লস্করচরের এই নির্বাসন আমার জীবনের আরেক স্মরণীয় অধ্যায়। জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা সম্পর্কের সমীকরণ, নিয়তির যাঁতাকলে পিষ্ট হবার নির্মম বাস্তবতা। হিংসা, বিদ্বেষ আর ভালোবাসার এক বাস্তব উপাখ্যান আমার এই নির্বাসনে চোখের পলকেই কেটে গেলো ডাকাত সর্দারনীর বেঁধে দেওয়া মাত্র তিনটা দিন। ফেরার পথে ভাবছি- আহারে, যদি আর ক'টা দিন থাকতে পারতাম! হলো না। ফিরে গেলাম অন্দরমহলে। প্রিয় পাঠক গল্পের পাতানো ফাঁদে এতক্ষণ যে বকবক করে গেলাম, আশা করি তা অনুধাবন করতে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের প্রয়োজন পড়বে না। বলছিলাম, সাদাত হোসাইনের বই নিয়ে। ছদ্মবেশ দিয়ে গুণী এই লেখকের লেখার সাথে আমার পরিচয়। লেখকের এই মৌলিক থ্রিলারটির আবেশ এখনো জড়িয়ে আছে মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রে। কান পাতলে এখনো শুনতে পাই ছদ্মবেশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা নিরুত্তাপ পলাশ বাড়ির নানান ষড়যন্ত্র। অতঃপর নির্বাসন পড়ে লেখকের নির্মাণশৈলী আর গল্প তৈরির মুন্সিয়ানা দেখে আমি হতবাক না হয়ে পারিনি। নির্বাসন থেকে ফিরেই হাতে তুলি নিলাম লেখকের আরেক সাড়া জাগানো উপন্যাস অন্দরমহল। একটি হিন্দু জমিদার পরিবারেরর উত্তান-পতন এবং ষড়যন্ত্রের আরেক উপাখ্যান এই অন্দরমহল। সহজ-সরল ভাষায় লিপিবদ্ধ গঙ্গাবতী নদী তীরে অবস্থিত বিষ্ণুপুরের জমিদার বাড়ি গঙ্গামহল দখলের অভিনব ষড়যন্ত্রের বীজ বুননকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে এই উপন্যাসের মূল আখ্যান। যার প্রতিটি ইটের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে ছিল ক্ষমতার মসনেদ আসিন হবার অভিলাষী গন্ধ আর নিখুঁত মায়াজালের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র। জমিদারী প্রথা অনুযায়ী বিষ্ণুনারায়ণের বড় পুত্র অবনীন্দ্রনারায়ণের উপর জমিদারী ভার অর্পিত হওয়ার কথা থাকলেও ইহজগতের লৌকিক মোহে অবিশ্বাসী এই মানুষটি এই গুরু দায়িত্ব বহনে অপরাগতা প্রকাশ করতেই গঙ্গামহলে স্থাপিত হয় ষড়যন্ত্রের প্রথম সিঁড়ি। অবনীন্দ্র নারায়ণের অপরাগতায় নিয়মানুযায়ী জমিদারীর ভারটি অর্পিত হওয়ার কথা বিষ্ণু নারায়ণের মেজোপুত্র দেবেন্দ্রনারায়ণের উপর। আর তাতেই অবনীন্দ্রনারায়ণের পত্নী বীনাবালার কলিজায় আগুন ধরে যায়। গঙ্গামহলের প্রতিটি করিডোরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তিনি বুনতে থাকেন ষড়যন্ত্রের নির্মম জাল। ক্ষমতা, মসনদ, লোভ, প্রতিহিংসা আর ইহলৌকিক সুখের তীব্র আকাঙ্কায় মরিয়া বীনাবালার পাতানো জালে দুর্যোগের কালো ছায়া নেমে আসে গঙ্গামহলের আকাশে। গঙ্গামহলের সুখ পাখি উড়াল দেয় তার আপন ঠিকানায়।
Was this review helpful to you?
or
বারহাটি নামক এক অঞ্চল এর জমিদারবাড়ি গংগামহল ও তার উত্তরাধিকার,, উত্তরাধিকারী,, তাদের আশপাশের মানুসদের ভেতরকার রিপু তথা অন্দরমহল নিএ লিখা বইটি!! সর্বপ্রথম মনে হবে বইটি বুঝিয়া জমিদার বিস্নুনারায়ন এর প্রতাপশালী পুত্র হবু জমিদার দেবেন্দ্রনারায়ন কে নিয়ে বুঝি বইটি!!! কিন্তু না এখানে এমনকি জমিদারবাড়ি র চাকরবাকরদের প্রতিটি চরিত্র নিখুত ভাবে তুলে ধরা হএছে!!!!সবচেয়ে বড় কথা বইটি পরার পর এর অভিনব সমাপ্তি দেখে আপনি লেখক এর প্রশংসা করতে বাধ্য!! আর বলব না!! পরলেই পাঠক বুঝবেন বাংলা সাহিত্যে বছরখানেক আগে যে শূন্যতা সৃস্টি হএছিল তা পূরন করতেই যেন আরেকজন এসেছেন!! প্রথমে মনে হবে এমন লেখনিশক্তি বুঝি পশ্চিমবংগের কোন লেখকের!! কিন্তু না!! তার লেখা কোন লেখকের ছাপ অনুসরণ করে না!! নিজস্ব ঢং আছে লেখার!! পাঠক চাইলে আপনি ও ঘুরে আসতে পারেন মানবমনের অন্দরমহল থেকে।
Was this review helpful to you?
or
"অন্দরমহল" বইটি এককথায় অসাধারণ একটি বই। সাদাত হোসাইনের বাকি বই গুলো থেকে একদমই আলাদা। সারাক্ষণই কেমন যেন ষড়যন্ত্র ষড়যন্ত্র ভাব। যে একবার বইটি ধরবে, শেষ না করে উঠতে পারবে না। এই বইটির আরো ভালো লেগেছে সর্বজয়ার দ্বিজেন্দ্র কে শাস্তি দেওয়ার পদ্ধতিটা। বিঁভুই, এবং বাকি চরিত্রগুলো এককথায় অসাধারণ। সব মিলিয়ে আমার পড়া সাদাত হোসাইনের বেস্ট বই অন্দরমহল।❤
Was this review helpful to you?
or
মানুষ তোর মানস ধন রইল পড়ে, তুই তবু কেন ধন খুঁজিস? সোনা-দানায় কি ধন থাকে, যদি না তুই মন বুঝিস। যে সুখের খোঁজে তুই ধন কাড়িলি, সেই সুখখানি তোর কোথা রয়, মনের মাঝেই সুখের বসত, তবু সেই মনখানা তোর আড়াল রয়। জগত যে এক ভ্রমের নগর, সেই নগরে অন্ধ সকল, ইঁটের ভেতর মহল খোঁজে, আসল তো মন, অন্দরমহল। জমিদার বিষ্ণুনারায়ণ বিষ্ণুপুরের জমিদার। তিন ছেলে ও তাদের সন্তানদের নিয়ে তিনি বাস করেন। বড় ছেলে অবনীন্দ্রনারায়ণ। কেমন অন্য ধারার মানুষ তিনি। সবসময় নিজের জগতে ডুবে থাকে। জগত সংসারের প্রতি তার আগ্রহ নেই। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে সঙ্গীত চর্চা করেন। জমিদারি, অর্থ-প্রতিপত্তি, ক্ষমতার লোভ এসবের কোনোকিছুই তাকে কখনো টানে না। মেজো ছেলে দেবেন্দ্রনারায়ণ। প্রবল প্রভাবশালী, কঠোর ও বেহিসেবী লোক। জগতের সকল আনন্দই তিনি উপভোগ করেছেন। বারোহাটির জঙ্গলে গড়ে তুলেছেন নিজের আলিশান বাগানবাড়ি। একপাশে তার কলঙ্ক অন্য পাশে গভীর ভালোবাসা। পরিবারের মেজো ছেলে হওয়া সত্বেও তাকে গঙ্গামহলের সকলেই ভবিষ্যৎ জমিদার হিসেবে মেনে নিয়েছেন। এমনকি খোদ বিষ্ণুনারায়ণও তার সিদ্ধান্তের উপরে কথা বলতে ভয় পান। কিন্তু এত সহজে কি আর জমিদারি পাওয়া যায়? যেখানে ক্ষমতা আছে সেখানে লোভী তো থাকবেই।আর তাই তো তবে সবাই তাকে জমিদার হিসেবে মেনে নিলেও একজন তাকে মেনে নিতে পারেননি। তিনি হচ্ছেন অবনীন্দ্রনারায়ণের স্ত্রী বীণাবালা। কনিষ্ঠপুত্র দীপেন্দ্রনারায়ণ কারো সাতে-পাঁচে নেই। জমিদারির প্রতিও তার কোনো লোভ নেই। তাকে সবাই সহজ-সরল মানুষ বলেই জানে। বেশিরভাগ সময় কাটে শশুরবাড়িতে। বীণাবালা দেখতে একদম দুর্গার মত হলেও সে রাবণের ভূমিকাই বেশি পালন করেছে। যে মূলত সম্পদ,ক্ষমতা আর পার্থিব জীবনের সুখের আশায় মরিয়া হয়ে উঠেছিল।করেছে একের পর এক অপরাধ। যার আক্রোশ আর পাপের কারণেই নেমে এসেছিল গঙ্গামহলে অন্ধকারের ছায়া। গল্পের যেখানে বীণাবালার মত চরিত্র রয়েছে তার বিপরীতেই আছে হেমাঙ্গিনী দেবী। হেমাঙ্গিনী দেবীর সাথে একসময় দেবেন্দ্রনারায়ণের সম্পর্ক ছিল, তারপর সেই সম্পর্ক থেকে আরেকটি সম্পর্কের ফল বিভুই। বিভুই যে কিনা সত্যিকার অর্থে জমিদার পরিবারের রক্ত হয়েও হয়েছিল অবহেলিত।কারণ তার জন্ম। গল্পের অনেকটা জুড়েই ভেবেছিলাম বিভুই হেমাঙ্গিনী দেবী ও দেবেন্দ্রনারায়ণের সন্তান। কিন্তু যখন তার পিতার পরিচয় জানতে পারলাম তখন থমকে গিয়েছিলাম। কে তার বাবা সেটা না হয় পাঠক বই পড়ে জেনে নিবেন। অন্যদিকে ছিল হরিহরণ বণিক। ভালো ও শান্ত মানুষ। যার কিনা এই জমিদার বাড়ির সাথে পুরানো এক সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও উপন্যাসের অনেক ঘটনার সাক্ষী এই হরিহরণ বণিক। উপন্যাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সাথে কোন না কোনভাবে হরিহরণ জড়িয়ে যায়। এছাড়াও গল্পে আরো অনেক চরিত্র রয়েছে যাদের মাঝে সর্বজয়া, রেণুকা, রতনকান্তি, দ্বিজেন্দ্র, বিভূতিনাথ সাহা উল্লেখযোগ্য। দেখে মনে হবে জমিদার বাড়ির অন্দরমহল শান্ত আছে কিন্তু সময় বলছে সামনে অপেক্ষা করছে নতুন এক গল্প। কি সেই গল্প??? মতামতঃ বইটা একবার পড়া শুরু করে ৫/৬ পেইজ পড়ার পর রেখে দিয়েছিলাম। কেনো জানি মন বসাতে পারছিলাম না। কিন্তু যখন বইটা আবার পড়া শুরু করলাম তখন শেষ না করে উঠতে পারি নি। সুদীর্ঘ এই উপন্যাসে আপনি বারবার নানান ভাবনায় আছন্ন হয়ে পড়বেন। বইটি আমার অনেক বেশি ভালো লেগেছে। প্রতিটি চরিত্র আপনাকে নতুন কিছু শিক্ষা দিবে। আর মানুষের ক্ষমতার লোভ যে মানুষকে কতটা নিচে নামাতে পারে তাও আপনি এখান থেকে শিখতে পারবেন। বইটি পড়া শেষে কেমন এক বিষন্নতা আঁকড়ে ধরেছিলো আমাকে, কেমন এক না পাওয়ার অনুভূতি হয়েছিলো। সত্যিই অসাধারণ সৃষ্টি। বইয়ের কিছু লাইন যা আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে, যেমন- -জীবনজুড়েই জটিলতা মানুষকে ছাড়ে না।' -'মানুষ মৃত্যকে নয়। ভয় পায় অনিশ্চয়তাকে,শুন্যতাকে। -'জীবন মরণের প্রশ্ন যেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেখানে শক্তি প্রয়োগে দমন বা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা কোনোভাবেই কার্যকর নয়।' -মানবজনমের সবচেয়ে কষ্টকর দুই অনুভূতির নাম অপেক্ষা আর উপেক্ষা।' -‘দুঃখ মানব জীবনের সবচেয়ে গভীরতম অনুভূতি।' -‘জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষক অভিজ্ঞতা। দীর্ঘদিনের অভুক্ত মানুষের খাদ্যগ্রহণ জগতের সবচেয়ে সুন্দরতম দৃশ্য।' -‘ক্ষমতার কত অজস্র ভিত্তি থাকে। সেই সকল ভিত্তি মিলেই ক্ষমতা পরিপূর্ণ হয়, কার্যকর হয়। এই কোনো একটি ভিত্তির অভাবও পুরো ক্ষমতাকে মুহুর্তেই করে ফেলতে পারে দুর্বল, অকার্যকর এবং অক্ষম।' এই উপন্যাসের শেষ লাইন-‘ আমাদের কিছুই নেই,অথচ সবটা সময়জুড়ে ভাবি, এই বুঝি নিঃস্ব হলাম।' আসলেই আমাদের কি কিছু আছে???
Was this review helpful to you?
or
বিশাল গঙ্গাবতী নদীর তীর ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে বিষ্ণুপুর জমিদারির প্রাসাদ গঙ্গামহল। জমিদার বিষ্ণুনারায়নের তিন পুত্র। হিসাবমতে বড়পুত্র অবনীন্দ্রনারায়নের জমিদার হওয়ার কথা থাকলেও তিনি হলেন ভাবের জগতের মানুষ। নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর গান-বাজনা নিয়েই তার আপন জগৎ। তাছাড়া জমিদারি সামলানোর জন্য অত শক্ত-সামর্থ্য আর বিচক্ষণও নন তিনি। তাই এতদিনে সবাই বুঝে গিয়েছে অবনীন্দ্রনারায়নকে দিয়ে আর যাই হোক জমিদারি হবে না। উপরন্তু মেজোপুত্র দেবেন্দ্রনারায়ন প্রচন্ড ব্যক্তিত্ত্ববান, সুপুরুষ। নিজের সামর্থ এবং সিদ্ধান্তের প্রতি তার অগাধ আস্হা। কৈশোর থেকেই সে কাউকে তোয়াক্কা করে না। তাই একরকমভাবে এ ঠিক হয়েই ছিলো দেবেন্দ্রনারায়নই হবে বিষ্ণুপুরের পরবর্তী জমিদার। এব্যাপারে সকলের মতৈক্য থাকলেও বাধ সাজে অবনীন্দ্রনারায়নের স্ত্রী বীনাবালা। দেবেন্দ্রনারায়নকে ধাতস্থ করার জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্রের সতরঞ্জের দান সাজায় সে। তার সেই দানের প্রধান গুটি হিসেবে ব্যবহার করে হেমাঙ্গিনী দেবীকে। রাইপুরের বিখ্যাত বাঈজী হেমাঙ্গিনী দেবী, তবে ছোট থেকে বিষ্ণুপুরেই বেড়ে উঠা তার। একাধিক নারীর শয্যাসঙ্গী দেবেন্দ্রনারায়ন এই হেমাঙ্গিনী দেবীকেই খানিকটা ( হয়তো নিজের স্ত্রীর চেয়েও বেশি) সমীহ করেন । দুজনার মধ্যে একটা অদৃশ্য ভালোবাসার সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও খামখেয়ালি দেবেন্দ্রনারায়ন হেমাঙ্গিনীকে বিয়ে করেন নি। সেই ছোট থেকে বিষ্ণুপুর জমিদারির উপর হেমাঙ্গিনী দেবীর পুষে রাখা রাগ-ক্ষোভ আর ঘৃণাকে ব্যবহার করে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করে বীনাবালা। হঠাৎ করে বিষ্ণুপুরে গুটি বসন্তের প্রকপ পড়ায় দেবেন্দ্রনারায়নও সেই কালব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যান। সেই সুযোগকেই কাজে লাগায় বীনাবালা। বিষ্ণুনারায়নের মৃত্যুর পর অবীন্দ্রনারায়নকে নামমাত্র জমিদার ঘোষণা করে অন্দরমহল থেকে কলকাঠি নাড়তে থাকে সে। মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানো পাখির মতো অবনীন্দ্রনারায়ন একরকম বন্দী হয়ে যায়। তাই সুযোগ বুঝে প্রাসাদের বন্দী জীবন ছেড়ে সে গৃহত্যাগী হয়। এরপর শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। বীনাবালা চায় তার পুত্র দ্বিজেন্দ্র হবে পরবর্তী জমিদার। কিন্তু এই জমিদারির যে আরও একজন অংশীদার রয়েছে, বিষ্ণুনারায়নের ছোটপুত্র দীপেন্দ্রনারায়ন। দীপেন্দ্র কি এত সহযে তার অধিকার ছেড়ে দেবে? তাহলে, কে হবে বিষ্ণুপুরের পরবর্তী জমিদার? দ্বিজেন্দ্র, দীপেন্দ্র নাকি অন্যকেউ? বিষ্ণুপুর জমিদারির ভবিষ্যৎ আসলে কি? গঙ্গামহল ছাড়া উপন্যাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো বারোহাটির বাগানবাড়ি। দেবেন্দ্রনারায়ন বারোহাটির জঙ্গলের মধ্যে এই বাগানবাড়ি তৈরি করেন। উপন্যাসের শুরুটা এই বাগানবাড়িতেই। সার্বক্ষণিক আমোদপ্রমোদে মত্ত এই বাড়ীও একসময় শ্মশানে পরিণত হয়। কথায় আছে পাপ নিজের বাপকেও ছাড়েনা। এর প্রকৃত উদাহরণ হলো কমলাদাসী, দ্বিজেন্দ্রও অবশ্য তার পাপের শাস্তি কম পায়নি। কিন্তু সকলের পাপের মূলে আছে যে, সেই বীনাবালা কি তার পাপের শাস্তি পাবে না? তাছাড়া একটু একটু করে পাপ জমতে জমতে যে গঙ্গামহল তৈরি হয়েছে সেই গঙ্গামহলকেও কি শাস্তি গুনতে হবে? বন বাদারে ঘুরে ফেরা হরিহরণ বণিক, গানের শিক্ষক রতনকান্তি, আর গুটি বসন্তে অন্ধ বিভুই হলো অন্দরমহলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র যাদের কথা না বললেই নয়। এছাড়া আরও কিছু চরিত্র রয়েছে যারা প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে কাহিনীর প্রবাহে সহায়তা করেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চরিত্র হলো বিভুতিনাথ সাহা, ভুজঙ্গ দেব, দিবাকর চাটুজ্জে , রেনুকা, সর্বজয়া, সুদক্ষিণা, অপলা মাসি আরও অনেকেই। অন্দরমহল মূলত এক হিন্দু জমিদার পরিবারের আখ্যান। তবে উপন্যাসের সময়কাল নিয়ে লেখক স্পষ্ট কোনো ধারণা ধারণা দেননি। এ নিয়ে অবশ্য প্রথমেই তিনি বিস্তর আলোচনা করেছেন। রাত তিন প্রহরে অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে উপন্যাসের শুরু। সেই ঘটনার জট ছাড়াতে ছাড়াতে উঠে এসেছে জমিদার বাড়ীর অন্দরমহলের নানা রকম রহস্য, ষড়যন্ত্রের কথা। ক্ষমতার লোভ ভীষণ ভয়ানক জিনিস। যেখানে চিরকাল আড়ালে থাকা কোনো ছায়ামূর্তিও যে ক্ষমতার লোভে ধুরন্ধর হয়ে উঠে, সেখানে ক্ষমতা হাতে পেয়েও সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে কেউ কেউ সেচ্ছায় বেছে নেয় সন্ন্যাস জীবন, আবার ক্ষমতা হাতে নিয়ে একটু একটু করে বেড়ে উঠা কেউ হঠাৎ করেই হয়ে যায় নিঃস্ব, সেই ক্ষমতা হাতে পেয়ে কেউ হয়ে যায় বেপরোয়া। এসব কিছুরই সুক্ষ্ম বর্ণনা আছে এই উপন্যাসে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তো আমরা সবাই নিঃস্ব, পৃথিবীতে যা কিছু আমরা নিজের করে দেখি, নিজের ভাবি তার সবই কিন্তু আপেক্ষিক। আর এই আপেক্ষিকতা নিয়ে বাচতে গিয়ে আমরা বেচে থাকার প্রকৃত অর্থই ভুলে যাই। এই নিয়ে লেখক অবনীন্দ্রনারায়নের মাধ্যমে চমৎকার একটি উক্তি বলেছেন, " আমাদের কিছুই নেই, অথচ সবটা সময় জুড়ে ভাবি, এই বুঝি নিঃস্ব হলাম" ১২ শব্দের একটা লাইনে যে কতটা বাস্তবতা মেশানো আছে কেউ একটু গভীর ভাবে চিন্তা করলেই বুঝতে পারবে৷ সাদাত হোসাইনের লেখা আমার কাছে বরাবরই ভালো লাগে। উনার লেখার ধরন সম্পর্কে অনেকের অনেক মতামত থাকলেও, আমার মনে হয় তিনি নিজস্ব স্টাইলেই লেখেন। তাই কয়েক পাতা পড়লেই বোঝা যায় যে এটা সাদাত হোসাইনের লেখা। সহজ সাবলিল ভাবে কাহিনীর বর্ণনা পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতে বাধ্য । উনার সবগুলো উপন্যাসই আমার মোটামুটি পড়া। প্রত্যেকটা উপন্যাসের প্লট ভিন্ন ভিন্ন হলেও অন্দরমহলের প্লটটা একটু বেশী অন্যরকম। আসলে ঐতিহাসিক কোনো কাহিনী নিয়ে পড়তে সবসময় রোমাঞ্চকর অনুভূতি হয়। যদিও লেখক স্পষ্ট করেই বলেছেন অন্দরমহল কোনো ঐতিহাসিক কাহিনী নয়, তবুও আমি ঐতিহাসিক ভেবেই পড়েছি। অন্দরমহল মূলত ফিকশন হলেও মাঝে মাঝে থ্রিলার থ্রিলার গন্ধও পাওয়া যায় । কারন লেখক পাতায় পাতায় রহস্য তৈরি করে গেছেন। এরপর কি হবে? এই নিয়ে সবসময় একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করেছে। এতে অবশ্য সুবিধাই হয়েছে। বইটা তাড়াতাড়ি পড়ে শেষ করার তাড়না কাজ করেছে। তবে একটা বিষয়, গল্পে কোনো একটা ঘটনা অসমাপ্ত রেখেই লেখক অতীত বর্ণনায় চলে গেছেন, এই বিষয় টা বারবার চোখে পড়েছে। যদি বর্তমানের কাহিনী একটু গুছিয়ে নিয়ে অতীতের ঘটনা বর্ণনা করা হতো অথবা কাহিনী যদি ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যেতো তবে হয়তো পড়তে আরেকটু সহজ হতো। তবে লেখকের কলমের দক্ষতায় বিষয়টি খুব একটা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারেনি। যদিও এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত, দয়া করে কেউ নেতিবাচক ভাবে নেবেন না। সর্বোপরি অন্দরমহল ফিকশন হোক অথবা ঐতিহাসিক কোনো কাহিনী যাই হোক আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। যারা সাদাত হোসাইনের কোনো বই পড়েন নি বা পড়তে চাইছেন তারা অন্দরমহল দিয়ে পড়া শুরু করে দিতে পারেন। আশা করি ভালোই লাগবে।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_মার্চ -"আমাদের কিছুই নেই, অথচ সবটা জুড়ে ভাবি, এই বুঝি নিঃস্ব হলাম!" -বাহ... বাহ... কঠিন কথা তো! কোথা থেকে মারলেন? -হুহ! আপনার মত নাকি? এগুলা মেরে লেখা না। কোট করা! -ও আচ্ছা! তা কোথা থেকে কোট করলেন? -অন্দরমহল থেকে। -মানে? -মানে বই। অন্দরমহল নাম! -সাদাত হোসাইনের? -হ্যা। -সে তো অনেক আগের বই! -আগের কোথায়? ২০১৬ সালের বই! -ওই হলো! তা এতদিন পর পড়ছেন কেন? -এমনি। আসলে ধরেছিলাম অনেক আগেই। কিন্তু এত মোটা বই। শেষ করতে সময় লাগলো। -ও আচ্ছা! -সাদাত হোসাইনের বই আগে কখনো পড়েছেন? -পড়েছিলাম একটা। ওই আরশিনগর না কি যেন... ভাল্লাগে নাই! -কেন? -অত আবেগ সহ্য হয় না! আর কেমন যেন হুমায়ুন হুমায়ুন ভাব! -হ্যা। এটা ঠিক। আরশিনগরে আবেগ একটু বেশিই ছিল। হাল্কা হুমায়ুন ভাবও আছে। বাট অন্দরমহলটা আলাদা! -কেন? -হ্যা। অন্তত আরশিনগর থেকে অনেক ম্যাচুরড লেখা মনে হইছে আমার। হুমায়ুন ভাবও কম আছে। -পড়িনি বইটা। কাহিনী কি? -কিসের? -অন্দরমহলের? -অনেক কাহিনী। আসলে বইটা অনেক বড় ব্যাপ্তি নিয়ে লেখা। তাছাড়া এটার প্লট একটা নির্দিষ্ট টাইমলাইনের উপর বেইজড! আমাদের দেশে একসময় জমিদারপ্রথা ছিল না? ওই রকম একটা সিচুয়েশন নিয়ে লেখা। -যেমন? -যেমন... কাহিনী শুরু হইছে একটা জমিদার বাড়ী থেকে। বিষ্ণুপুর জমিদার বাড়ী। মূল কাহিনীটা এই বাড়ি, বাড়ির লোকজন আর কর্মকান্ড নিয়েই। জমিদারের নাম বিষ্ণুনারায়ণ। তার তিন ছেলে দেবেন্দ্রনারায়ণ, অবনীন্দ্রনারায়ণ, দীপেন্দ্রনারায়ন। এদের মধ্যে অবনীন্দ্রনারায়ণ সবার বড়। কিন্তু তিনি খেয়ালি লোক। তার জমিদারী ভালো লাগে না। দেবেন্দ্র ঠিক তার উলটো। জমিদার হওয়ার সব রকম গুণই তার আছে। দীপেন্দ্র চুপচাপ গোছের। অন্যদিকে অবনী'র স্ত্রীর আবার এই জমিদারীর মালকিন হওয়ার অনেক ইচ্ছে। সব মিলিয়ে এক ক্ষমতা, স্বার্থ দ্বন্দ্বের লড়াই। -হ্যা তো? এর মধ্যে ভালোর কি হলো? -সে আপনি কাহিনী পড়লে বুঝবেন। আসলে অনেক বড় কলেবরে লেখা বই তো। অনেকগুলা চরিত্র। অনেকগুলা প্লট। আবার তাদের সাব-প্লট। এখানে জমিদারী লোকজন ছাড়া আরো লোক আছে। আছে ভবঘুরে হরিহরণ বণিক, বাইজি হেমাঙ্গিনী দেবী, আছে তার অন্ধ ছেলে বিভূঁই, অবনীন্দ্রনারায়ণের পুত্র দ্বিজেন্দ্রনারায়ণ, রতনকান্তি গানের মাস্টার সহ অনেক মানুষ। অনেক ধরনের গল্প তাদের। তবে একটা সময় এরা সবাই এক বিন্দুতে মিলিত হয়। আর লেখক সেটা বেশ ভালভাবেই করে দেখিয়েছেন। কিন্তু এসবের থেকেও সবথেকে চমৎকার জিনিস কোনটা ছিল জানেন? -কোনটা? -এই বইটা খুব সুন্দরভাবে লেখা হয়েছে। আরশিনগর পড়লে ইমোশনাল হয়ে যেতে হয়। কিন্তু এই বই পড়লে এক অদ্ভুত বিষন্মতা চলে আসে। কোন নেগেটিভ কিছু না। বইয়ের শেষে এক ধরণের অদ্ভুত ঘোর সৃষ্টি হয়। এই বইতে অনেক কিছুই দেখানো হয়েছে। ক্ষমতার ব্যবহার, অপব্যবহার, লড়াই, সময়ের পরিবর্তণ, সামাজিক অবস্থানের পরিবর্তন, মানব মনের রহস্য, জীবন উপলব্ধি... সব মিলিয়ে পড়তে বেশ ভালোই লাগছে আমার। -হু... বুঝলাম... দাম কত বইয়ের??? -গায়ের দাম ৬৫০/- -রকমারিতে কত নিতে পারে??? -এখন মনে হয় কমই নিবে। বইমেলার সময় তো। মার্চ মাসেও অফার চলবে। ২৫% ছাড় পাবেন মিনিমান। আর ঐ অ্যাপ বা বিকাশের মাধ্যমে দিলে আরো বেশি। লিংক দেবো? -দেন! -এই নেন! https://www.rokomari.com/book/110618/andarmahal?ref=null -হু... ধন্যবাদ! -স্বাগতম! কেমন লাগলো জানাবেন পড়ে! -অবশ্যই! :)
Was this review helpful to you?
or
অন্দরমহল বইটি পড়ে ভালো লেগেছে। লেখক উপন্যাসটি অনেক যত্ন নিয়ে লিখেছেন। লেখাটি পড়ে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের কথা মনে পড়েছে।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_ডিসেম্বর বই আলোচনা ২ . বইয়ের নাম: অন্দরমহল লেখক: সাদাত হোসাইন বইয়ের ধরণ: সমকালীন উপন্যাস প্রকাশনা: ভাষাচিত্র প্রকাশনী প্রথম প্রকাশ:অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ প্রচ্ছদ : হাসিবুল ইসলাম নাসিম আইএসবিএন : 9789849133643 পৃষ্ঠা সংখ্যা:৪৩৮ মুদ্রিত মূল্য : ৬৫০ টাকা ব্যক্তিগত রেটিং : ৪.৮/৫ অনলাইন পরিবেশক :রকমারি.কম "গঙ্গামহল অথবা অন্দরমহলের গল্প" . "আমাদের কিছুই নেই, অথচ সবটা সময়জুড়ে ভাবি, এই বুঝু নিঃস্ব হলাম। " ৪৩৮ পৃষ্ঠার উপন্যাসের একেবারেই শেষের লাইনটি দিয়ে শুরু করলাম রিভিউ লেখা। কারণ এই একটি লাইন বা উক্তির মর্মার্থ যদি বীণাবালা বুঝতে পারতো তবে গোটা বইটাই সৃষ্টি হত না বোধহয়। "অন্দরমহলের বাতাসে-বাতাসে ভয়ানক দুর্যোগের আভাস। এই দুর্যোগ কালব্যধি গুটিবসন্তের চেয়েও ভয়ঙ্কর।" ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তির নেশা বড় নেশা। বর্তমান সময়ের তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইনের দীর্ঘ কলেবরের বইগুলো পড়ার সাহস করে উঠতে পারিনি আগে। কারণ বড় কলেবরের বই দেখলেই ভয় লাগে আমার। কিন্তু এই অন্দরমহলের প্রথম পাতা খোলে কয়েক লাইন পড়তেই আমি পুরো বইটা পড়ার তীব্র ইচ্ছা বোধ করলাম। কারণ এরপর কি হবে? এই একটি প্রশ্নে পুরো বইতে আমার ভিতরের চোখ অসংখ্যবার লেখা দেখেলো। বইয়ের আলোচনায় যাওয়ার আগে এই চমৎকার বইয়ের লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে নেই। . লেখক পরিচিতি ও লেখকের প্রাপ্ত পুরস্কার: বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় তরুণ লেখক সাদাত হোসাইনের জন্ম ১৯৮৪ সালের ২১ মে মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া গ্রামে। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। ভষাচিত্র প্রকাশনী থেকে প্রথম বের হয় তার আলোকচিত্রের গল্পের বই "গল্পছবি"। তারপর প্রকাশিত হয় তার ছোটগল্পের বই "জানালার ওপাশে"। ছোট কলেবরে মাত্র ৭৯ পৃষ্ঠায় আবদ্ধ করেছেন " আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই" ।এরপর একে একে প্রকাশ করেছেন অন্দরমহল, আড়শিনগর, মানবজনম, নিঃসঙ্গ নক্ষত্রের মত বড় কলেবরের সব উপন্যাস। এই পর্যন্ত বের হয়েছে উনার তিনটি কবিতার বই এবং ছবি ও গল্পের সমন্বয়ে বই গল্পছবি। শুধু সাহিত্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে এগিয়ে গেছেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণেও। চ্যানেল নাইনে প্রচারিত তার "বোধ" শর্টফিল্মটি প্রশংসার ঝড় তুলেছে। আলোকচিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র,লেখাল েখির জন্য কালচারালার এচিভম্যান্ট ক্যাটাগরিতে জিতেছেন "জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ২০১৩। . কাহিনী সংক্ষেপ :ক্ষমতার জন্য কৌশলে লড়াই। তবে কোনো শক্ত প্রতিপক্ষের সাথে নয়। কারণ বীনাবালা যেভাবে ক্ষমতাটা চেয়েছে সেভাবে চায়নি দেবেন্দ্রনারায়ণ বা দীপেন্দ্রনারায়ণ। বিষ্ণুনারায়ণের তিন পুত্রের মধ্যে মোজো পুত্র দেবেন্দ্রনারায়ণই অধিক যোগ্য সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে। দেবেন্দ্রনারায়ণের বড় ভাই অবনীন্দ্রনারায়ণেরও জমিদারির প্রতি কোনো লোভ নেই। উনি হচ্ছেন গানপ্রিয় মানুষ। ঝামেলা উনার পছন্দ নয়। এদিকে কনিষ্ঠ দীপেন্দ্রনারায়ণ বড় দুই ভাইকে রেখে তার পিতা পরবর্তী জমিদার হওয়ার কথা ভাবতেই পারে না। কিন্তু জমিদার পরিবারের রক্ত বহমান দীপেন্দ্র'র মনে কি জমিদার হওয়ার সুপ্ত বাসনা লুকায়িত নেই? আর অবনীন্দ্রনারায়ণের স্ত্রী বীণাবালা, সেও তো অন্য এক জমিদারের কন্যা। তাহলে সে কি চায় না তার স্বামী-পুত্র তার শ্বশুড় পরবর্তী জমিদার মনোনীত হোক? এই জমিদারির প্রতি লোভ থেকে ঘটমান ঘটনাগুলকে ঘিরেই এগিয়ে গেছে বইয়ের গল্প। জমিদার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা হচ্ছে রেণুকা, সর্বজয়া, সুদক্ষিনা,দ্বিজ েন্দ্র। এই বাড়ির সাথে বিভিন্নভাবে জড়িত অন্যান্যদের ভূমিকাও কিন্তু বইতে গৌন নয়। হরিহরণ, হেমাঙ্গিনী দেবী, রতনকান্তি, বিভূতিনাথ, গৌরাঙ্গ বারুজ্জে, দিবাকর চাটুজ্জে প্রমুখ। . প্রিয় উক্তি : ১.প্রতিশোধের নেশা বড় ধ্বংসের নেশা। ২.মানুষের জীবনে সময়ের চেয়ে এত মূল্যবান কিছু নেই। ৩.জগতে একমাত্র ভালোবাসা আর মমতারাই বেঁচে থাকে। এগুলো ছাড়া মানুষ একা একা কখনও বেঁচে থাকতে পারে না। ৪.যে মানুষ তার ঘৃণ্য কাজের জন্য যুগ যুগ ধরে মানুষের ঘৃণাতে সওয়ার হয়ে বেঁচে থাকে, সেই বেঁচে থাকাকে বেঁচে থাকা বলে না। ৫.মানুষের জন্মই বিভ্রমকে মায়া ভেবে ভুলে থাকার জন্য। ৬.মৃত্যু ভংংকর কারণ মৃত্যু যন্ত্রণাময়। ৭.জগৎ সংসারের হিসেব নিকেশ ভুলে থাকা সহজ নয়। এ বড় কঠিন হিসেব। সেই কঠিন হিসেবের ভিতর থাকে মস্ত বড় ফাঁকি। . পাঠ প্রতিক্রিয়া : জমিদারি নিয়ে পড়া প্রথম বই এটি আমার। মুহুর্তে মুহুর্তে চমকে উঠছিলাম বইটি পড়ে। জমিদারি হাতানোর জন্য মানুষ কতটা নির্দয় নৃশংস হয় সেটা এই বই না পড়লে জানতে পারতাম না। সিংহের মতো দাম্ভিক দেবেন্দ্রনারায়ণের গুটিবসন্তের মতো রোগের কবলে পড়ে নীরবে পরাস্ত হতে হয় ভাবী বীণাবালার কাছে। একজন মানুষ কোনো কারণে একটু দুর্বল হয়ে গেলে তাকে আসলেই সবাই ঠেলে দেয় নীচের দিকে। জমিদারদের স্বভাবে একটু আধটু দোষ থাকে বলে প্রচলিত আছে। বিষ্ণুপুর জমিদার পরিবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না। হঠাৎ করে নৌকাতে পাওয়া গুটিবসন্তে আক্রান্ত পিচ্চি ছেলে বিভুঁই এই জমিদার পরিবারেরই কারোর রং তামাশার ফল৷ কিন্তু কে বিভুঁইয়ের বাবা? এটা চমৎকার একটা টুইস্ট। এই বিষয়টা পড়তে গিয়ে দারুণ পুলকিত হয়েছি। হেমাঙ্গিনী দেবী আর হরিহরণের সম্পর্কটা যে এত কাছের সেটা লেখক প্রথমেই বুঝতে দেয়নি। বজরাডুবির চরে জমিদার যোগেন্দ্রনারায়ণের আক্রমণের শিকারে অনেকেই নিজেদের সাজানো জীবন হারিয়েছে৷ জমিদারদের এই নৃশংসতা পড়তে গিয়ে জমিদারি প্রথার উপর রাগ ধরেছে বেশ। বারোহাটিতে বাগানবাড়ি করার সময় সেই বাড়ি দেবেন্দ্রনারায়ণের পছন্দ হয়নি বলে কারিগরকে আজীবন কাজ করতে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেবেন্দ্রনারায়ণ। মনে মনে মানুষগুলোর অনেক ক্ষোভ পুষা থাকে জমিদারদের উপর৷ থাকবেই তো। জমিদার যোগেন্দ্রনারায়ণের রাক্ষসী থাবা'র কবলে পড়েই তো হেমাঙ্গিনী আজ বাইজি, হরিহরণ ছোট-খাটো দোকানদার। চিরায়ত জমিদারি প্রথার রীতিনীতি যেমন ঠাঁই পেয়েছে বইতে, তেমনি ঠাঁই পেয়েছে কঠিন মনের জমিদারদের ভিতরেও যে অল্প হলেও ভালোবাসা আর মায়ে লুকিয়ে থাকে সেই বিষয়টিও। জমিদারি রক্ত শরীরে থাকলেই যে আবার সবাই ক্ষমতা আর নষ্টামিতে বুঁদ হয়ে থাকে না তার উদাহরণ অবনীন্দ্রনারায়ণ। যে জমিদার হয়েও সেই ভার কাঁধ থেকে ফেলে দিতে মরিয়া। সে হচ্ছে ভাবের মানুষ। তার ভিতরে বাস করে একজন গানের বাউল। তার কাছে সবার পরিচয় কেবল মানুষ। রাজা-প্রজা নয়। সহজ সরল এই মানুষটা নিজের স্ত্রী'র কাছে প্রতারিত হয়ে এসেছে সারাটি জীবন। অথচ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি সে কোনোকিছুই। অন্য বংশের রক্ত নীরবে বড় হয়ে উঠেছে জমিদার পরিবারে। সেটাও কেউ টের পায়নি। এই সবকিছুই টুইস্ট আর টুইস্ট। সমকালীন উপন্যাসে জীবনবোধের কাহিনীর ভিতরে টুইস্ট দিলে বইটা কতটা অসাধারণ হয়ে উঠে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও গঙ্গামহলের ভিতরের গল্পই ফোকাস করা হয়েছে বইতে। তবুও এই বইয়ের গল্পের অনেকটা জুড়েই ছড়িয়ে আছে হরিহরণ বণিক আর হেমাঙ্গিনী। বইটা পড়ার সময় অন্য এক জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম যেন। . প্রিয় অপ্রিয় চরিত্র : আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে হরিহরণ চরিত্র। এই মানুষটা ভিতরে ভিতরে কতটা দুঃখ বইয়ে বেড়িয়েও জমিদার বাড়ির জন্য আলাদা মায়া পুষে রাখে বুকের ভিতর। এই জমিদার বাড়িই নিঃস্ব করেছে হেমাঙ্গিনী আর হরিহরণকে। তবুও এই দুইজনের জগতের আর সকল মায়া আর নিয়মের গণ্ডি ভেদ করে ভালোবাসা আগলে রেখেছে বুকের কোণে৷ সারাজীবন ঠকে যাওয়া হেমাঙ্গিনী দেবী শেষবার দেবেন্দ্রনারায়ণকে না দেখতে পারার বেদনায় আকুলি বিকুলি করে। হরিহরণের পরে এই অসহায় মেয়েটি আমার মনে আঁচড় কেটেছে। সহজ সরল অবনীন্দ্রনারায়ণের জন্য আফসোস হয় আমার। মানুষ এত সরল হয় কেন? উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র দেবেন্দ্রনারায়ণের প্রেমে পড়বে হয়তো অনেক যুবতী। জমিদারদের গতানুগতিক দোষের ধারা অব্যাহত রেখে দেবেন্দ্রনারায়ণেরও ছিল মেয়ে মানুষের নেশা । নয়তো এই দেবেন্দ্রনারায়ণ হয়তো বইতে আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্রটি হত। বিশেষ করে তপতীর সাথে করা ঘটনাটির জন্য দেবেন্দ্রনারায়ণ আমার মনে তেমন জায়গা করে নিতে পারেনি। গঙ্গামহলের কিছু লোভী কুচক্রি দাস-দাসী আর কাজের লোকের লোভাতুর মন মানসিকতার জন্য তাদের উপর রাগ হয়েছে। আর সব নষ্টের গোড়া বীণাবালাকে তো অসহ্য লাগছিলো আমার। অপ্রিয়'র তালিকায় তার পুত্র দ্বিজেন্দ্রও রয়েছে। . রিভিউ লেখক :তানজিনা তানিয়া
Was this review helpful to you?
or
লেখকের আরশিনগর ছিল গ্রাম্য উপজীব্য, বৃষ্টি, ঘাস, ঘাসের গন্ধ। বইটি ১৮২০ সালের প্রেক্ষাপটে লেখা।বইটি লিখতে গিয়ে লেখককে প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়েছিলো।লেখকের ভাষায়,“একটি সময়কে ধরে লিখতে গেলে সেই সময়ের অনেক পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি থাকে, সেসব তুলে আনার জন্যই অনেক পড়াশোনা দরকার।” সাহেব বিবি গোলাম বইটি থেকে ঋতুপর্ণ ঘোষের অনেক সিনেমা দেখাও সেই পড়াশোনারই অংশ ছিলো। বইটা লেখার জন্য রীতিমতো তিনমাস ঘর থেকেই বের হননি তিনি। বইটি থেকে কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি-“নিতাইয়ের হঠাৎ যেন কিছু একটা মনে পড়ল। সে হন্তদন্ত হয়ে উঠে দাঁড়াল। তারপর বলল, ‘ছেলেটার শয্যাপাশে একটা জলের ঘটি ছিল কত্তা। সেই ঘটির গলায় একটা কাগজ বাঁধা’।দেবেন্দ্রনারায়ণ মুহুর্তে থমকে গেলেন। তিনি কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। ভয়ঙ্কর কোন অশুভ সঙ্কেত যেন বেজে উঠছে তার মাথায়। তিনি নিতাইকে বললেন, ‘কিসের কাগজ?’নিতাই বলল, ‘জানিনা কত্তা। আমি মূখ্য-সুখ্য মানুষ, লেখা পড়া জানি না। কাগজে কি জানি কি লেখা’! এভবেই এগিয়েছে গল্প। লেখকের আরশিনগর ছিল গ্রাম্য উপজীব্য, বৃষ্টি, ঘাস, ঘাসের গন্ধ। আমি খালি মনে মনে দয়া করছিলাম-অন্তত যাতে অন্দরমহল সেরকম না হয়। প্রথম ভাবালুতা বই হিসেবে আরশিনগর ঠিক আছে। কিন্তু সব বই যদি আবার পান্তা হাসে একগাদা ভাবালু হয় তবে খবর আছে। সেক্ষেত্রে লেখক সফল। লেখক আমার মনের কথা বুঝেছেন। অন্দরমহল জুড়ে তাই ষড়যন্ত্রের ফিসফিসানি, দুর্যোগের ঘনঘটা, গঙ্গাবতীর উন্মত্ত স্রোত। সবসময় যেন গেম অফ থ্রোনসের সিজন ৬ ফিনালের থিম সং মাথায় বাজে-এই কিছু হল, এই যেন কে মরলো।
Was this review helpful to you?
or
উনবিংশ শতকের প্রথম দিকের আবহে লেখা এক হিন্দু জমিদার পরিবারের শ্বাসরুদ্ধকর আখ্যান নিয়ে লেখা উপন্যাস “অন্দরমহল”।বইটি ১৮২০ সালের প্রেক্ষাপটে লেখা।বইটি লিখতে গিয়ে লেখককে প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়েছিলো।লেখকের ভাষায়,“একটি সময়কে ধরে লিখতে গেলে সেই সময়ের অনেক পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি থাকে, সেসব তুলে আনার জন্যই অনেক পড়াশোনা দরকার।” সাহেব বিবি গোলাম বইটি থেকে ঋতুপর্ণ ঘোষের অনেক সিনেমা দেখাও সেই পড়াশোনারই অংশ ছিলো। বইটা লেখার জন্য রীতিমতো তিনমাস ঘর থেকেই বের হননি তিনি। বইটি থেকে কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি-“নিতাইয়ের হঠাৎ যেন কিছু একটা মনে পড়ল। সে হন্তদন্ত হয়ে উঠে দাঁড়াল। তারপর বলল, ‘ছেলেটার শয্যাপাশে একটা জলের ঘটি ছিল কত্তা। সেই ঘটির গলায় একটা কাগজ বাঁধা’।দেবেন্দ্রনারায়ণ মুহুর্তে থমকে গেলেন। তিনি কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। ভয়ঙ্কর কোন অশুভ সঙ্কেত যেন বেজে উঠছে তার মাথায়। তিনি নিতাইকে বললেন, ‘কিসের কাগজ?’নিতাই বলল, ‘জানিনা কত্তা। আমি মূখ্য-সুখ্য মানুষ, লেখা পড়া জানি না। কাগজে কি জানি কি লেখা’! দেবেন্দ্রনারায়ণ কালবিলম্ব করলেন না। তিনি নিতাইকে দিয়ে কাগজখানা আনালেন। নিতাই জলভর্তি ঘটিসহ কাগজখানা এনে দেবেন্দ্রেনারায়ণের থেকে খানিক দূরে মাটিতে রেখে সরে দাঁড়াল। দেবেন্দ্রনারায়ণ দীর্ঘ সময় নিয়ে পা বাড়ালেন। তার পদক্ষেপ জুড়ে দ্বিধা, শঙ্কা, দুশ্চিন্তা। ভোরের আবছা আলোয় বিষ্ণুপুরের হবু জমিদার দেবেন্দ্রনারায়ণ ঘটির মুখে বাঁধা সেই চিরকুটখানা দেখলেন। দেখে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন। তারপর মাথা তুলে তাকালেন আকাশের দিকে। শান্ত স্নিগ্ধ ভোরের আকাশ। কিন্তু দেবেন্দ্রনারায়ণের বুকের ভেতর তখন প্রলয়ঙ্করি সমুদ্রের সর্বগ্রাসী জলোচ্ছ্বাস!/এ তিনি কি দেখলেন!”/ চ্যানেল আই অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ”আমি চাই পাঠক বই পড়ুক। এটা সব লেখকই চান। আসলে অনেক ভালো বই-খারাপ বই বলে পার্থক্য করার চেষ্টা করেন। সব বই-ই ভালো। দেখবেন বই পড়লে সেটা একসময় না একসময় খুব কাজে এসে যাবে। ”
Was this review helpful to you?
or
হরিহরণ দীর্ঘ সময় চুপ করে বসে রইল। তারপর ঠান্ডা গলায় বলল, ‘ও ছেলে তোর, তা বিষ্ণুপুরের কি কেউ জানে?’ হেমাঙ্গিনী দেবী সাথে সাথেই জবাব দিল না। চুপ করে রইল। তারপর বলল, ‘জানে’। হরিহরণ বলল, ‘কে জানে?’ হেমাঙ্গিনী দেবী বলল, ‘বড়বাবুর স্ত্রী’। হরিহরণ এবার সত্যি সত্যি অবাক হল, ‘বড় বাবুর স্ত্রী মানে? অবনীন্দ্রনারায়ণের স্ত্রী? বীণাবালা?’ হেমাঙ্গিনী অন্ধকারেই হ্যা সূচক মাথা নাড়াল। তারপর স্মিত কন্ঠে বলল, ‘হ্যা’। হরিহরণ বলল, ‘তোর কি হয়েছে হেমাঙ্গিনী? আমায় খুলে বল। স্পষ্ট করে বল’। হেমাঙ্গিনী আবারও কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর সেও ঠান্ডা গলায় বলল, ‘এই জমিদার বাড়ির সাথে আমার কিছু হিসেব আছে হরি কাকা। তোমারও ছিল। কিন্তু তুমি পালানো মানুষ। পালানো মানুষ হিসেব ভয় পায়। তারা হিসেব ছেড়ে পালায়। তুমিও পালাচ্ছ’। হরিহরণ বলল, ‘তত্ত¡কথা ছাড় হেমাঙ্গিনী। এখন তত্ত¡কথার সময় নয়। আসল কথা বল। তুই কি খেলা শুরু করেছিস? আমায় বল’। হেমাঙ্গিনী দেবী বলল, ‘সব বলব হরি কাকা। সব বলব। তার আগে আমার ছেলেকে বাঁচাও হরি কাকা। আমায় জঙ্গলের ভেতর ওই বাড়িতে নিয়ে চল’। হরিহরণের হঠাৎ মনে হল, আসলেইতো, আগে ছেলেটার কি হাল সেটি দেখা জরুরী। আর এখন এই শেষ রাতে ওখানে আর কারো থাকার কথাও না। হরিহরণ আর কথা বাড়াল না। সে হেমাঙ্গিনী দেবীর হাত ধরে টেনে নাও থেকে নামল। তারপর আবার ঢুকল বারোহাটির জঙ্গলে। হরিহরণ এবার আরো সংক্ষিপ্ত পথ ধরল। কিন্তু গভীর জঙ্গলে সেই ভাঙা বাড়ির সামনে এসে হেমাঙ্গিনী দেবী আর হরিহরণ থমকে গেল। বাড়ির সামনে দেবেন্দ্রনারায়ণ সম্পূর্ণ একা দাঁড়িয়ে আছেন। হরিহরণ আর হেমাঙ্গিনী দেবী নিশ্চুপ, নিশ্চল দাঁড়িয়ে রইল আড়ালে। দেবেন্দ্রনারায়ণ বাড়ির ভেতর ঢুকলেন। তারপর দীর্ঘসময় পর বাড়ির ভেতর থেকে বের হলেন। হরিহরণ আর হেমাঙ্গিনী দেবী দেখল দেবেন্দ্রনারায়ণের কাঁধে কাপড়ে মোড়ানো ছেলেটি। মশালের আলোয় তার পা দুখানা দুলছে। হরিহরণ আর হেমাঙ্গিনী দেবী বিষ্ফোরিত চোখে দেখল, দেবেন্দ্রনারায়ণ ছেলেটিকে একটি বৃক্ষের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে রাখলেন। তারপর আবার ঢুকে গেলেন বাড়িটিতে। তার কিছুক্ষণ বাদে দেবেন্দ্রনারায়ণ আবার বাড়ি থেকে বের হয়ে এলেন। ততক্ষণে দাউদাউ আগুনে জ্বলতে শুরু করেছে বাড়িটি। দেবেন্দ্রনারায়ণ একবারের জন্যও পিছু ফিরে তাকালেন না। তিনি ছেলেটিকে ফের কাঁধে তুলে নিলেন। তারপর ঢুকে গেলেন জঙ্গলে। - অন্দরমহল
Was this review helpful to you?
or
রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_জুন বইয়ের নামম: অন্দরমহল লেখক: সাদাত হোসাইন প্রকাশনী: ভাষাচিত্র ধরন: সমকালীন উপন্যাস মূল্য: ৬৫০ ব্যক্তিগত রেটিং: ★★★★★ সাদাত হোসাইনের লেখার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল “মানবজনম” পড়ে। তখনই আমি তার লেখার ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। বড় পরিসরে অনেক গুলো জীবনের গল্পকে একসূত্রে গেঁথে দেয়ার অনবদ্য শক্তি তার। পুরো বইটা পড়ার সময়ই জীবন নিয়ে এক গভীর ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম। তার লেখা বাকী বইগুলোও তখনই পড়ার ইচ্ছা জাগে। আর সেই ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে রকমারি.কম-এ অর্ডার করার মাধ্যমে। যাক খুব অল্প সময়েই অন্দর মহল ও আরশিনগর বই দুইটি হাতে পাই। চলুন তাহলে আস্তে আস্তে অন্দরমহলে ঢোকা যাক। অন্দরমহলে প্রবেশের পূর্বে আরশিনগরেও একটু ঢু মারবো। ‘বইয়ের চেয়ে বড় বন্ধু আর নেই' - কথাটার তাৎপর্য হয়ত অনেকেই উপলব্ধি করেন। অনেকেই এক জীবনে একাধিক বই পড়েন। কিছু বইয়ের কথা চলে যায় বিস্মৃতির অতলে আর কিছু লেখার রেশ মন ধরে রাখে সারাজীবন জুড়ে। হয়ত সেসব লেখা তার মন এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়, হয়ত বা নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায় সে লেখায়, হয়ত বা অজানা কোনো রত্নের সন্ধান পায় সেই লেখা থেকে। অথবা সেই লেখা সন্ধান দিয়ে যায় মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক অন্দরমহলের। এই অন্দরমহলের খোঁজ কতজন রাখি? বেশিরভাগ মানবজনমই কেটে যায় মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা এই অন্দরমহলের খোঁজে। "মানুষ তোর মানস ধন রইল পড়ে, তুই তবু কেন ধন খুঁজিস? সোনা-দানায় কি ধন থাকে, যদি না তুই মন বুঝিস। যে সুখের খোঁজে তুই ধন কাড়িলি, সেই সুখখানি তোর কোথা রয়, মনের মাঝেই সুখের বসত, তবু সেই মনখানা তোর আড়াল রয়। জগত যে এক ভ্রমের নগর, সেই নগরে অন্ধ সকল, ইঁটের ভেতর মহল খোঁজে, আসল তো মন, অন্দরমহল। আমার পড়াশোনা বা জানার জগতটা একটু ভিন্নরকমের। সেই ভিন্নতা থেকেই থ্রিলার থেকে ক্লাসিক সব ধরনেই বই আমাকে টানে। নবীন-প্রবীণ লেখকদের বইয়ের স্বাদ নিতে স্বদা অভ্যস্ত। তেমনই একজন নবীন লেখক সাদাত হোসাইন। নাম টা বেশিদিন আগের শোনা নয়। তবে সে যে বিস্তৃত গল্পে বলে আমাকে কাছে টেনেছে সেটা বলাই এখানে মূখ্য উদ্দেশ্য। রকমারি থেকে বই দুইটা হাতে পাওয়ার পর এক বইপোকা বলেছিল আগে আরশিনগর পড়বেন। তাই আগেভাগে শেষ করেছিলাম 'আরশিনগর'। বেশ ভালো লেগেছিল। লেখক মনের সমস্ত মাধুরী মিশিয়ে তিলে তিলে তৈরি করেছিলেন আরশিকে। আরশি লেখকের মানসপ্রতিমা। অসাধারণ মায়াময়ী। পাঠক অন্য কোনো দিকে না তাকিয়ে আরশির কাজল চোখে 'বিবশ হয়ে চেয়ে' পড়ে ফেলতে পারে উপন্যাসটি। আরশিনগর আসলে এক ভাবালুতার জগৎ। এক অদৃশ্য জাদু বাস্তবতা ছুঁয়ে ছিল উপন্যাসটিকে। কিন্তু তারপরও সেই উপন্যাসের গতি কোথাও কোথাও শ্লথ লেগেছিল। মনে হয়েছিল লেখক -পাঠক দু তরফেই আবেগের ঘনঘটার কিঞ্চিৎ বাহুল্য প্রকাশ পেয়েছে। এরপর শুরু করলাম 'অন্দরমহল'। কিছুদিন ধরে সামন্য কিছু বই রিভিউ করার দৌলতে বুঝেছি স্বতঃস্ফূর্ত রিভিউ নির্ভর করে অবশ্যই লেখকের দক্ষতার উপর, তাঁর লেখনী কতটা এফোঁড় - ওফোঁড় করছে মানব মনকে - তার উপর, মানবমনের অন্দরমহলের কথা কতটা উন্মোচিত হচ্ছে তার লেখনীতে-তার উপর। কিছু কিছু লেখার রিভিউ করার মত ভাষার জোর আমার মত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সমালোচককে আল্লাহপাক দেননি। সাদাতের 'অন্দরমহল' এই জাতের লেখা। বইটা পড়ার পর বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসেছিলাম। গভীর ভাবনায় ডুবে গিয়েছিলাম। ক্ষণস্থায়ী জীবনের প্রতি মানুষের দুর্নিবার মোহ আর তার পরিণতি নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। বইটা পড়া শুরু করার পর চোখের পলকেই পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা শেষ হয়ে গিয়েছে। যতক্ষণ পড়ছিলাম মনে হচ্ছিল যেন আমি একজন দর্শক হয়ে হারিয়ে গিয়েছি বিষ্ণুপুর গ্রামে, মিশে গেছি অন্দরমহলের চরিত্রগুলোর মাঝে। ক্লাসিক উপন্যাস পড়ার সময় মূলত দু'টি বিষয়ে আমি বেশি গুরুত্ব দেই। এক. বর্ণনা আর দুই. উপন্যাসে চিন্তার গভীরতা। দু'টি উপাদানই উপন্যাসটিতে সঠিকভাবে থাকায় পড়ার সময় কোনো বিরক্তি আসেনি। লেখকের বর্ণনা করার ক্ষমতা সত্যিই অসাধারণ। মনে হচ্ছিল যেন দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আর উপন্যাসটিতে অন্তর্নিহিত জীবনবোধ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। সাধারণত আমি থ্রিলার বেশি পড়ি। কিন্তু বইটা পড়ার সময় এত গভীরভাবে চিন্তায় ডুবেছিলাম যে অনেক থ্রিলার পড়ার সময়ও এত ভাবতে হয়নি। মাঝখানে কিছু রহস্য অমীমাংসিত থাকায় ভেবেছিলাম সেগুলো হয়ত অমীমাংসিতই থেকে যাবে। তবে শেষ পর্যন্ত বিষয়গুলো পরিষ্কার করে তৃপ্ত করেছেন লেখক। তার এই বিস্তৃত গল্পে একাধিক প্লট, সাবপ্লট, অনেক অনেক চরিত্রের ভিড়, কিন্তু কখনোই উপন্যাসের খেই হারিয়ে যায়নি। বরং প্রতিটি চরিত্র, তা ছোট - বড় যাই হোক, পেয়েছে পূর্ণ মর্যাদা ও পরিণতি। কয়েক পাতা জুড়ে এক-একটি অধ্যায়। অধ্যায়ের শেষ চরিত্রগুলির পরিণতি জানার অদম্য কৌতুহল বাড়িয়ে দেয়। এক একটি চরিত্রের সাথে জড়িয়ে থাকে এক একধরণের জীবনবোধ, তা যেমন কখনো হিংসার, বিদ্বেষের, কখনো অজানা সন্ধানের, কখনো ভালোবাসার, কখনো অচেনা পথের পথিক সেই জীবনবোধ। কে জানে কখন যেন পাঠকও সন্ধান পেয়ে যান নিজেদের অন্দরমহলের। লেখকের সার্থকতা এটাই। এ উপন্যাসের ঘটনাস্থল গঙ্গাবতী নদীর পাড়ে বিষ্ণুপুরে জমিদারবাড়ি গঙ্গামহলের ক্ষমতার অধিকার নিয়ে। বিশদে কিছু বললাম না। আপনারা নিজেরাই এই জমিদারীর অন্দরমহলে প্রবেশ করে খুঁজে নিতে পারেন নিজেদের বুকের ভেতরে থাকা অন্দরমহলকে।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_মার্চ রাত দ্বিপ্রহর পেরিয়েছে অনেক আগে। সারাদিন মাছ ধরে ক্লান্ত নিতাই তার নৌকা খানা গঙ্গাবতী নদীর তীরে ভিড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎই দেখে তার নৌকার পাশে আরেকটি নাও। ছইয়ের ভিতরে মুখ অবধি ঢেকে শুইয়ে রাখা আছে একটি বালককে। মাথার কাছে জলের ঘটির গলায় বাঁধা চিরকুট। কিন্তু এ কী! ছেলেটার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে, সারা গায়ে যে মহামারী গুটিবসন্ত! তীব্র আতংকে জমে গেলো নিতাই! খবর গেলো দেবেন্দ্রনারায়ণ এর কাছে। গঙ্গাবতীর পাশ ঘেঁষে বিশাল জমিদার বাড়ি, তারই মেজোকর্তা তিনি। জমিদার বিষ্ণুনারায়ণের তিন সন্তানের মধ্যে মধ্যম হলেও, বড় পুত্র অবনীন্দ্রনারায়ণের বদলে বৃদ্ধ পিতার জমিদারি দেবেন্দ্রনারায়ণই দেখেন। প্রবল ব্যক্তিত্বের অধিকারি দেবুর মধ্যে জমিদারি রক্তের খামখেয়াল, বহুগামিতা, চন্ডাল-রাগ সবই বিদ্যমান। এতো পরাক্রম সত্বেও সেই কালরাতে নদীর তীরে পাওয়া রহস্যময় ছেলেটির জন্যই বদলে গেলো দেবেন্দ্রনারায়ণের জীবনছক। দীর্ঘকাল ধরে জমিদার বাড়ির অন্দরমহলে পাতা হয়েছে ষড়যন্ত্রের শতরঞ্জ খেলা! বীণাবালা জাল গুটিয়ে এনেছেন। তার সাথে খেলায় যোগ দিল আরো অনেকেই, কেউ লোভের ফাঁদে, কেউ প্রতিশোধের অনলে জ্বলন্ত। দেবেন্দ্রনারায়ণকে চুকাতে হবে অনেক পাপের হিসেব। শুধু কি তিনি? প্রকৃতি ছেড়ে কথা বলে না কাউকেই, সকলের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়। গঙ্গামহলের প্রতিটি ইঁট যে চিৎকার করে বলছে লোভ, বঞ্চনা, আর প্রতিহিংসার গল্প! পাঠপ্রতিক্রিয়া: যেকোনো গল্প পড়ার সময় পাঠক মাত্রই কল্পনা করে নেয় একটা দৃশ্যপট। তা না হলে নিজেকে সম্পৃক্ত করে ডুব দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। 'অন্দরমহল' উপন্যাসের সময়কালটা পুরনো পটভূমিতে লেখা হলেও, সেটা ঠিক কবে সে বিষয়টি লেখক এড়িয়ে গিয়েছেন। ভূমিকাতে দায়মুক্তির জন্য উল্লেখ করেছেন বাস্তবের সঙ্গে সংস্পর্শ এড়াতে তিনি কোনো নির্দিষ্ট সময়কাল বেছে নিচ্ছেন না। উপন্যাস শুরু করার আগেই এমন শুভংকরের ফাঁকির মত ঘোষণা পুরো সময় মাথায় চাপ ফেলেছিল। গল্পের কিছু কিছু জায়গাতেই গল্পপ্রবাহকে 'অনেকদিন' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গল্পে যেখানে জীবন-মরণের টানটান উত্তেজনা, সেখানে 'অনেকদিন কেটে যাওয়া' সময় খুব বিভ্রান্তিকর। কখনো আবার লেখক এই অনির্দিষ্ট সময়ে এগিয়ে গিয়ে, ফ্ল্যাশব্যাকে কি কি ঘটে গেছে বর্ণনা করেছেন। এর চাইতে ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমে গল্প এগিয়ে গেলে পড়তে বেশি ভালো লাগতো৷ পুরো উপন্যাস পড়ার পরও ঠিক ঠাহর করতে পারিনি 'অন্দরমহল' এর পুরো ঘটনাটা কতোটা সময় যাবত ঘটেছে। পরিচয়ের পুনরুক্তি ঘটেছে গল্পে বারবার। গঙ্গাবতীর তীর ঘেঁষে গঙ্গামহল, পরপর কয়েক পাতায় এই বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। রতনকান্তিকেও প্রতিবার গানের শিক্ষক হিসেবে পরিচয় করিয়ে না দিলেও চলে। গল্পে রহস্য জমিয়ে তুলে আবার সব উত্তর দিয়ে দেওয়া হয়েছে একটু পরে পরে। সাসপেন্স তাই থমকে যাচ্ছিলো। কি ঘটবে পাঠক সহজেই ধরে নিতে পারবেন, এবং বুঝে নেওয়ার জন্য আগে থেকে প্রচুর সূত্র রাখা হয়েছে। অবশ্য লেখক কোনো রহস্য উপন্যাস লিখতেও চাননি, তিনি চেয়েছেন লোভ- লালসা আর পরিণতির গল্প বলতে। 'অন্দরমহল' উপন্যাস ভালো লাগার প্রধান কারণ এর পটভূমি। জমিদার বাড়ি, ক্ষমতার লড়াই, আর প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের গল্প পড়তে এমনিতেও ভালো লাগে, অন্যরকম একটা জগতে বাস করা যায় পড়ার সময়টা। গঙ্গামহল, প্রমত্তা গঙ্গাবতী নদী, বজরাডুবির চর, বারোহাটির ভূতূড়ে জঙ্গল আর বাগানবাড়ি - সবকিছুই ছিল উত্তেজনাময়। বড় কলেবরে লেখা উপন্যাসের অনেক চরিত্র, তাদের ব্যাপ্তি শক্তিশালী এবং গভীর। দেবেন্দ্রনারায়ণ উগ্র মেজাজের বুনোঘোড়া, যিনি স্ত্রী রেণুকাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তাকে দিয়েই কিশোরী দাসীর সাথে মিলিত হওয়ার শয্যা প্রস্তুত করে পাশে বসিয়ে রাখেন, অথবা নির্মাণকাজ মনমতো না হওয়ার রামচরণ কারিগরের দু'হাত কেটে নেওয়ার নির্দেশ দেন। তার চরিত্রেই আবার সংমিশ্রণ ছিল অপরাধবোধে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া স্নেহশীল জন্মদাতার। বাইজি হেমাঙ্গিনী দেবী, বিভুঁই, হরিহরণ বণিক, রতনকান্তি, সর্বজয়া, দ্বিজেন্দ্র - সব চরিত্রের আলাদা আলাদা গল্প লেখক সুন্দরভাবে বলে গিয়েছেন। লেখকের 'নির্বাসন' পড়েছিলাম এর আগে। সেই তুলনায় এই উপন্যাসের গল্পের গাঁথুনি আর চরিত্রায়ন অনেক বেশি ভালো লেগেছে। লেখক যা কিছু দর্শন এবং স্বরচিত গান ব্যবহার করেছেন তাতে বিরক্তি লাগেনি, বরং গল্পের প্রয়োজনে এসেছে। প্রকৃতি মানুষের হিসাব তার জীবদ্দশাতেই অনেকটা বুঝিয়ে দেয়, হোক তা পাপের প্রায়শ্চিত্ত বা পূণ্যের প্রতিদান। যে এক জীবনে মানুষ লোভের পিছনে ছুটে বেড়ায়, তাতে শান্তি কি পায়? 'আমাদের কিছুই নেই, অথচ সবটা সময়জুড়ে ভাবি, এই বুঝি নিঃস্ব হলাম!' - এই জীবনবোধ নিয়েই পাঠককে ভাবাবে অন্দরমহল উপন্যাসটি। উপন্যাস: অন্দরমহল লেখক: সাদাত হোসাইন প্রকাশনায়: ভাষাচিত্র প্রথম প্রকাশ: একুশে বইমেলা, ২০১৬ পৃষ্ঠাসংখ্যা: ৪৩৮ মূল্য: ৬৫০ টাকা
Was this review helpful to you?
or
এক জমিদারবাড়ির ক্ষমতা বদলের গল্প। এক হামখেয়ালি জমিদারের গল্প, এক স্বামীর গল্প, একজন প্রমিকের গল্প, একজন পিতার গল্প। আরো রয়েছে প্রতিশোধগ্রহণের গল্প। মা ছেলের গল্প, এক অগ্নিময় নারীর গল্প। অধিকার আদায়ের গল্প। ভালবাসা, ঘৃণা, প্রতিশোধ, স্নেহ, মমতা সব কিছু নিয়ে লেখক যে আবেগের সমাহার ঘটিয়েছেন তা আসলের প্রশংসাযোগ্য। ফিলসফির যে অসাধারণ ব্যবহার সত্যিই মুগ্ধকর।
Was this review helpful to you?
or
অন্দর মহল-বুক মিভিউ অন্দরমহল, নাম শুনলেই কেমন জানি গম্ভীর গম্ভীর ভাব আসে, তাই না? অন্দর মহল তো সেই আলো বাতি মহল, আর আরেক মহল তো বিবেক। অনেকে বলবেন হৃদয়, সমস্যা হল-হৃদয় বলিতে আবার হৃদপিন্ড চোখে ভাসে। তাই তা বাদ। সবসময় তা কাপিতেছে। লেখকের আরশিনগর ছিল গ্রাম্য উপজীব্য, বৃষ্টি, ঘাস, ঘাসের গন্ধ। আমি খালি মনে মনে দয়া করছিলাম-অন্তত যাতে অন্দরমহল সেরকম না হয়। প্রথম ভাবালুতা বই হিসেবে আরশিনগর ঠিক আছে। কিন্তু সব বই যদি আবার পান্তা হাসে একগাদা ভাবালু হয় তবে খবর আছে। সেক্ষেত্রে লেখক সফল। লেখক আমার মনের কথা বুঝেছেন। অন্দরমহল জুড়ে তাই ষড়যন্ত্রের ফিসফিসানি, দুর্যোগের ঘনঘটা, গঙ্গাবতীর উন্মত্ত স্রোত। সবসময় যেন গেম অফ থ্রোনসের সিজন ৬ ফিনালের থিম সং মাথায় বাজে-এই কিছু হল, এই যেন কে মরলো। উপন্যাসের শুরুতেই লেখক বলে নিয়েছেন-লেখকের মৃত্যু পাঠকের কাছে এসে। লেখক হয়তো রাজমহল, আকবর দ্যা গ্রেট ভঙ্গিতে চিন্তা করেছেন-আর আমার চোখে ভেসে উঠেছে আরেক ভংগীতে। কারো চোখে সুলতান সোলেমান সিরিয়ালের স্টাইলে, আর আমার চোখে গেফ অফ থ্রোনসের মত করে। তবে হ্যা-গঙ্গাবতী ভাবতে গিয়ে বুড়িগঙ্গার কালো পানি অন্তত মনে আসেনি। নির্দ্বিধায় আমি বানীবালাকে সার্সেই ল্যানিস্টার এর সাথে মিলাতে পারি, তার পুত্র দ্বিজেন্দ্র মিলে যায় জফ্রে ব্যারাথিওন এর সাথে। থাক সে কথা বলবো না, অনেকেই বুঝবেনা। লেখক সময়কাল না রেখে ভালো করেছেন। সময় বলে দিলেই তা প্রথম আলোর ত্রিপুরা রাজ হোক, আর তা প্রতাপের ইলিশ মাছ কেনা হোক রাজনীতি, অর্থনীতির ছোয়া থাকতোই। সময় উল্লেখ না করাতে আমি কল্পনার রাজ্যে স্বাধীন ছিলাম। সত্য কথা বলতে এত বড় পরিসরে, এত কূটকৌশল ভেবে, এত বড় বই(আকার ও দাম) লিখতেও কিছু সাহস লাগে। এই অন্দর মহল বাংলাদেশে যেমন জনপ্রিয় হবে-কলকাতাতে তার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে সম্ভবত। অন্দরমহল ফেরত দিচ্ছি আজ-বইদাত্রী মানবজনম হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ওহ-হো এই মানবজনম সেই মানবজনম নয়! লেখকের সর্বশেষ বই।
Was this review helpful to you?
or
এক কথায় অসাধারণ। সময় নিয়ে পড়েছি তাই আরো ভালো লেগেছে। লেখার স্টাইল খানিকটা স্বর্গীয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।