User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বই এর নাম - বিষাদসিন্ধু লেখক - মীর মশাররফ হোসেন ক্যাটাগরি - উপন্যাস প্রকাশনী - দি ইউনিভার্সেল একাডেমি মুদ্রিত মূল্য - চারশত টাকা বিষাদ-সিন্ধু মীর মশাররফ হোসেন রচিত একটি কালজয়ী ঐতিহাসিক উপন্যাস। বলা যায় মীর মশাররফ হোসেনের অনবদ্য সৃষ্টি বিষাদ-সিন্ধু।এটি ১৮৮৮ থেকে ১৮৯০ সালের মধ্যে রচিত হয়। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে এটি একটি অন্যতম উপন্যাস। ইমাম হাসানকে বিষপান করানো, কারবালার ঐতিহাসিক কাহিনী ফোরাৎ নদীতীরে রক্তস্রোতে বহমান ঘটনাকে কেন্দ্র করে এটি রচিত হলেও ঐতিহাসিক তথ্যে অনেক ভুল রয়েছে। যেহেতু আমি সঠিক ঘটনা জানিনা তাই কতটুকু ভুল আছে বলতে পারছিনা। তবে উপন্যাসটি পড়ার সময় কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে এটি রচিত এটা মনে না করে অন্যান্য উপন্যাসের মত পড়েছি। উপন্যাসটি তিনটি পর্বে বিভক্ত ১।মহরম পর্ব ২।উদ্ধার পর্ব ৩।এজিদ-বধ পর্ব। #মহরম_পর্ব - হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জীবিত থাকা অবস্থায় ভবিষ্যৎবাণী করে যান তাঁরই ভক্ত মাবিয়া পুত্র কর্তৃক তাঁর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হাসেন এবং ইমাম হোসেন মৃত্যুবরণ করবেন।এ কথা শোনার পর সকলের মধ্য হাহাকার সৃষ্টি হলেও এটি রোধ করার সাধ্য সৃষ্টিকর্তা ছাড়া যে কারো নেই তিনি সেটিও জানিয়ে দেন।মাবিয়া বিবাহিত ছিলনা। সে সংকল্প করে কখনো বিয়ে করবেনা। কিন্তু আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করার সাধ্য কার। ঘটনাচক্রে মাবিয়া বয়স্কা এক নারীকে বিবাহ করতে বাধ্য হয় এবং তিনি পুত্র সন্তান প্রাপ্ত হন।তখন মাবিয়া পুত্র হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। অনেক চেষ্টা করেও মাবিয়া প্রাণপ্রিয় সন্তানকে হত্যা করতে পারেনা। এই সন্তানই পিশাচরূপী মানব এজিদ। যার কারণে মদীনায় কান্নায় হাহাকার, নিজ স্ত্রী জাএদা কর্তৃক ইমাম হাসানকে কৌশলে বিষপান করিয়ে মৃত্যু, পরিবারের শোকছায়া, কারবালায় প্রান্তরে হৃদয় বিদারক ঘটনা, অজস্র শিরচ্ছেদ, রক্তস্রোত বয়ে যায়। মহরম পর্বে ইমাম হাসান ইমাম হোসেনের মৃত্যু এবং ইমাম বংশের বাকিদের এজিদ মন্ত্রী মারওয়ান কর্তৃক কারাবন্দীর ঘটনা উল্লেখ আছে।ইমাম বংশে পুরুষ বলতে হোসেন এর কনিষ্ঠ পুত্র জয়নাল আবেদিন বেঁচে যায়। #উদ্ধার_পর্ব - হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এটিও ভবিষ্যৎবাণী করেন যে ইমাম হাসান এবং ইমাম হোসেনের পরিবারকে এজিদ কারা হতে তাঁদেরই বৈমাত্র ভাই মোহাম্মদ হানিফা উদ্ধার করবেন। উদ্ধার পর্বে হাজারো রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে মোহাম্মদ হানিফা, তার ছোট ভাই ওমর আলী মন্ত্রী গাজী রহমান সহ কাছের মানুষের সহিত মিলিত হয়ে জয়নাল আবেদিন সহ বাকিদের উদ্ধার করতে সফল হন। #এজিদ_বধ_পর্ব - এ পর্বে এজিদের বিনাশ এবং জয়নাল আবেদিন এর পৈত্রিকরাজ্য উদ্ধার ও সিংহাসন লাভের ঘটনা উল্লেখ আছে। কারবালার ঘটনা ইমাম হাসান,হোসেন প্রতি এজিদের হিংস্র মনোভাব দামেস্ক সিংহাসন, রাজনৈতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে সূচিত হয়।কিন্তু উপন্যাসে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে উপেক্ষা করে জয়নাব (ইমাম হাসানের তৃতীয় স্ত্রী) প্রাপ্তি লাভ না হওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এখানে মূল নায়ক এজিদ।ধর্মীয় ব্যাখ্যার তুলনায় জয়নাবের রূপে আকৃষ্ট হয়ে তাকে পাবার আশায় এজিদের এক একটি কুকর্ম সাহিত্যরসে মিশ্রিত হয়ে উপন্যাসে স্থান পেয়েছে। তাই আমার উপদেশ বইয়ে উল্লেখিত ঘটনা বিশ্বাস করা যাবেনা। আমার অনেকটা কষ্ট হয়েছে এটাকে সাধারণ উপন্যাসের মত পড়তে। বারবার মনে হয়েছে ঠিক বুঝি এমনটায় ঘটেছে। মনের এই ভ্রম দূর করার জন্য কারবালাকে উদ্দেশ্য করে লেখা দুটো বই কিনেছি। আশা করি সেগুলো পড়ে সত্যতা জানতে পারবো। উপন্যাসটি সাধু ভাষায় রচিত। ঐতিহাসিক কাহিনীতে গড়মিল থাকলেও লেখনী চমৎকার।শুরুতে কিছু শব্দ অভিধান দেখে মানে জেনে নিয়েছিলাম পরবর্তীতে আর সমস্যা হয়নি। কিছু উক্তি মন ছুয়ে গিয়েছে। কয়েকটা শেয়ার করছি ১। প্রণয়, স্ত্রী, রাজ্য, ধন এই কয়েকটি বিষয়ের লোভ বড় ভয়ানক। এই লোভে লোকের ধর্ম, পুণ্য, সাধুতা, পবিত্রতা সমস্তই একেবারে সমূলে বিনাশ প্রাপ্ত হয়।অতি কষ্টে উপার্জিত বন্ধুত্ব রত্নটিও ঐ লোভে অনেকেই অনায়াসে বিসর্জন দেয়। মানুষ এ লোভে অনায়াসে যথেচ্ছ ব্যবহারে অগ্রসর হইতে পারে। ২। কপাল মন্দ হইলে তাহার ফলাফল ফিরাইতে কাহারো সাধ্য নাই। ৩। 'মনে করিলেই যদি মনের দুঃখ যায়,তবে জগতে কে না মনে করে?' ৪। বাইরের শত্রু হতে রক্ষা পাওয়া সহজ কিন্তু ঘরের শত্রু হইতে রক্ষা পাওয়া দুষ্কর। ৫। স্ত্রীজাতির এমনি একটি মোহনীশক্তি আছে যে, পুরুষের মন অতি কঠিন হইলেও সহজে নোয়াইতে পারে, ঘুরাইতে পারে, ফিরাইতেও পারে।(কথা অধিকাংশ সত্য)তবে অন্যের প্রণয়ে মজিলে একটু কথা আছে বটে, কিন্তু হাতে পাইয়া নির্জনে বসাইতে পারিলে, কাছে ঘেঁষিয়া মোহন মন্ত্রগুলি ক্রমে ক্রমে আওড়াইতে পারিলে অবশ্যই কিছু কিছু ফল ফলাইতে পারিবেই পারবে। এ যে না পারে সে নারী নহে। ৬। জলে অগ্নি নির্বাণ হয়, কিন্তু প্রেমাগ্নি অন্তরে প্রজ্বলিত হইয়া প্রথমে নয়ন দুটির আশ্রয়ে বাষ্প সৃষ্টি করে, পরিণামে জলে পরিণত হইয়া স্রোত বহিতে থাকে। সে জলে হয়তো বাহ্যবহ্নি সহজেই নির্বাপিত হইতে পারে, কিন্তু মনের আগুন দ্বিগুন, চতুর্গুণ, শতগুন জ্বলিয়া উঠে। ৭। সময়ে সকলই সহ্য হয়। কোন বিষয়ে অনভ্যাস থাকিলে বিপদকালে তাহা অভ্যস্ত হইয়া পড়ে, মহাসুখের শরীরে মহা কষ্ট সহ্য হইয়া থাকে। ৮। ঈশ্বর নিয়োজিত কার্যে কেহ বাধা দিতে পারেনা ৯। যে আমার নয় আমি তাহার কেন হইবো। ১০। বিশ্বাসী না হইলে বিশ্বাসঘাতকতা করিবার সাধ্য কাহার? ১১। বিপদগ্রস্ত না হইলে নিরাপদের সুখ কখনোই ভোগ করা যায়না; দুঃখ ভোগ না করিলে সুখের স্বাদ পাওয়া যায়না। ১৩। হুতাশনের দাহন আশা, ধরণীর জলশোষণ আশা, ভিখারীর অর্থলোভ আশা, চক্ষুর দর্শন আশা, গাভীর তৃণভক্ষণ আশা, ধনীর ধন বৃদ্ধির আশা, প্রেমিকের প্রেমের আশা, সম্রাটের রাজ্য বিস্তার আশার যেমন নিবৃত্তি নাই, হিংসাপূর্ণ পাপ হৃদয়ে দুরাশারও তেমনি নিবৃত্তি নাই-ইতি নাই। ১৪। ঈশ্বর যাহা ঘটাইবেন, তাহা নিবারণে কাহারো ক্ষমতা নাই ১৫। বিনাশ করা অতি সহজ রক্ষ করা বড়ই কঠিন।