User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
“যদিও কাশ্মীরের আপেল এখনো সবুজ, কিছুদিন পরেই সারা কাশ্মীর ছেয়ে যাবে রাঙা আপেল আর টসটসে আঙুরে৷ সে কাশ্মীরের চেহারাই আলাদা৷ ঝিলাম নদীতে আসবে নতুন পলি। কাশ্মীরের সোনাঝড়া মাটিতে জাগবে ফসলের সমারোহ। ল্যাডার নদীর ফেনা হয়ে উঠবে আরও ঘন৷ চিনার গাছের পাতায় পাতায় বাজবে নূপুরের ধ্বনি। ডাল ও নাগিন হ্রদের তীরে তীরে ছুটবে আনন্দের ফোয়ারা৷ বসন্তের সেই কাশ্মীর- আহ! তার কি কোন তুলনা আছে?” এটা ছিল লেখকের অল্পসময়ের সফরসঙ্গী নাজনীনের মুখে তার নিজ দেশের বর্ণনা। নাজনীন! ঈগলের ডানার মত যার ভ্রূ! আমি বইটা পড়তে পড়তে মাঝে মাঝেই কল্পনা করেছি কে বেশি সুন্দর? কাশ্মীর নাকি নাজনীন? “ঝিলাম নদীর দেশ” বইটা যখন হাতে নিয়েছিলাম তখন জানতাম না ঝিলাম আসলে কোন দেশের নদী৷ আমি হলাম- ঘর হতে শুধু দু পা ফেলিয়া ধানের শীষের উপরে শিশির বিন্দুর সৌন্দর্য দেখা নিতান্ত ছাপোষা মানুষ। সেজন্য আমার পাঠক হৃদয় ভ্রমণ কাহিনীর পাতা চষে বেড়ায় আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্য দেখার জন্য৷ দুইপাতা পড়তেই যখন বুঝলাম লেখক আমাকে কাশ্মীর দেখাতে নিয়ে চলছেন সেদিনের অনুভূতি কি কখনো ভোলা সম্ভব? কাশ্মীর! “পৃথিবীর স্বর্গ” খ্যাত কাশ্মীরের অনুপম সৌন্দর্য লেখক তুলে ধরেছেন তার ঝিলাম নদীর দেশ বইটিতে৷ তুলে ধরছেন বললে ভুল হবে। কারণ কাশ্মীরের সৌন্দর্য নিয়ে লেখক যখনই কথা বলেছেন মনে হয়েছে পাতায় পাতায় আঁকা হয়েছে তার নৈসর্গিক চিত্র৷ পেঁহেলগাম, গুলমার্গ, নিশাত, শালিমার, ল্যাডার নদী, ডাল ও নাগিন লেকের সীমাহীন সৌন্দর্য ছবির মত ফুটে উঠেছে আমার তৃষ্ণার্ত পাঠক চোখে৷ লেখক বুলবুল সরোয়ার পেশায় চিকিৎসক। অথচ ইতিহাসে তার পাণ্ডিত্য বিস্ময় করার মত! সহজ সাবলীল বর্ণনায় ও সফরসঙ্গীদের সাথে কথোপকথনে প্রায়শই উঠে এসেছে কাশ্মীরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। উল্লেখ্য যে, সফরটি ছিল ভারতের কাশ্মীর অংশে৷ সারা ভারতের মধ্যে কাশ্মীরই একমাত্র নিরীহ জাতি অথচ বারবার লুন্ঠিত হয়েছে তার স্বাতন্ত্র্য ও সৌন্দর্য। লেখক খুব সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন এক নির্মম ঝলক। সাতচল্লিশে তো আমাদের ভাগ্যে আজাদি জুটেছিল তবে কাশ্মীরের দুর্দাশা তখনো ঘুচেনি৷ স্বার্থান্বেষীদের গোপন চুক্তিতে কাশ্মির বিক্রি হয়ে যায় আর ওদিকে কায়েদে আজমের মৃত্যুর পরদিনই হায়দ্রাবাদ দখল হয়ে গেল৷ গণভোট নামক প্রহসনের অংশগ্রহণের সুযোগও পেলনা হতভাগা কাশ্মীর৷ লেখক এক বাক্যে সেদিনের কাশ্মীরের ইতিহাসকে বর্ণনা করেছেন এভাবে-” তৈরি হল বিশ্বের প্রথম ফিলিস্তিন।” কাশ্মীরের দুঃখের কথায় লেখকের প্রায়ই তার নিজের দেশের দুঃখদুর্দশার কথা মনে পরেছে৷ কাশ্মীরের বরফভেজা মাটিতে দাড়িয়ে তার সেই প্রিয় দুঃখিনী জন্মভূমির মাটির জন্য মমতা উথলে উঠেছে৷ কীভাবে স্বার্থান্বেষীরা মীরজাফরের মত তার দেশকে ব্যবহার করেছে৷ ৭১ নিয়ে তার কাশ্মীরি বন্ধুদের মন্তব্যগুলোও ছিল লক্ষ্যনীয়। যদিও লেখক তার নিজ অবস্থান থেকে সেসবের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সত্যি বলতে চিরায়ত উপন্যাসের এটি যেন একটি চিরায়ত বৈশিষ্ট্য ৷ এটি যুগে যুগে আমাদের এমন অনুভূতি দেয় যেন আমরা সেই বইয়ের ইতিহাসের আয়নায় বর্তমানের ছবি দেখতে পারি৷ বইয়ের ঘটনা, বর্ণনা এমনভাবে আমাদের চোখের সামনে ধরা দেয় যেন মনে হয় এটাতো আমাদের সময়ের কথাই বলছে৷ তখৎই সুলাইমান কীভাবে হয়ে উঠছে শকারাচার্যের মন্দির৷ শ্রীরাম চন্দ্রের মন্দিরে এখনো রয়ে গেছে ওযুখানার কলের চিহ্ন। এসব ঘটনায় ইতিহাস বর্তমান সব এক হয়ে যায়৷ নিশাতবাগ,গুলমার্গ আর শালিমারের সাথে মুঘল সম্রাজের ইতিহাসের এক ঝলক দেখা মিলেছে বইটিতে৷ জাহাঙ্গীর, আনারকলি, নুরজাহান, ফারজানা বানু এরা যেন ইতিহাসের নিদ্রা ভেঙে কিছু সময়ের জন্য ঘুরে গেলেন বইয়ের পাতা থেকে৷ এই অংশে লেখক তার তাজমহল ভ্রমণের কিছু মজার এবং করূণ স্মৃতিচারণও করেছেন। লেখকের বর্ণনাশৈলী সত্যিই মুগ্ধকরার মত৷ ভৌগোলিকভাবে কাশ্মীরের অবস্থান যেমন একটু উঁচুতে সেরকম পড়ার সময়ে এই অনুভূতি হয়। যেন পৃথিবীর কোন উঁচু অট্টালিকায় উঠে পৃথিবীকে দেখার মত৷ ঈগল যেমন পৃথিবীকে দেখে মেঘের উপর থেকে। কাহিনী ও বর্ণনার কথা বাদ দিলেও বইটির সৌন্দর্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করেছে তার প্রতিটি অধ্যায়ের শিরোনাম এবং টুকরো পঙক্তিমালায়৷ খৈয়াম, গালীব, দেওয়ান হাফিজ, আল মাহমুদ, ইকবাল, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কেউ বাদ যায়নি৷ ভ্রমনকাহিনীর ভক্ত হয়ে ছিলাম মুজতবা আলীর দেশে বিদেশে পড়ে৷ ঝিলাম নদীর দেশ কখনো কখনো আবদুর রহমানের পানশীরের কথাও মনে করে দিয়েছে৷ লেখক বুলবুল সরোয়ারের ঝিলাম নদীর দেশ শুধু ভ্রমণ কাহিনীই না, শুধু সৌন্দর্য বর্ণনাই না৷ ক্ষণিকের সফরসঙ্গী নাজনীন, লেখককে অনুনয় করে বলেছিলেন যে, “কাশ্মীরকে যদি তুমি বুঝতে চাও তাহলে তোমাকে এর গভীরে প্রবেশ করতে হবে৷” স্বাধীনতা আসলে এমন এক জিনিস যা অস্ত্র আর জিম্মির মাধ্যমেও কেড়ে নেওয়া যায়না৷ মুক্তিকামী মানুষেরা তাদের বুকের মধ্যে স্বাধীনতাকে গচ্ছিত রাখে আর তাকে রুখতে চাইলে একদিন স্ফুলিঙ্গের মত তা বেরিয়ে আসে৷ গতবছর জুলাইতে এই অভিজ্ঞতা আমাদেরও হয়েছে৷ নাজনীনের শেষ কথা গুলো যেন আমাদের পৃথিবীর সকল মজলুম মুক্তিকামী মানুষের অন্তরের একই আওয়াজ, একই সুর৷ নদী থেকে সমুদ্র পর্যন্ত আমাদের সবার একটাই চেতনা৷ মুহাম্মদ ইকবাল এজন্যই বুঝি বলেছিলেন _ “চীন ও আরব হামারা, হিন্দুসতা হামারা, মুসলিম হ্যায় হাম ওয়াতান হ্যায় সারা জাহা হামারা''
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটি ভ্রমণ কাহিনী।
Was this review helpful to you?
or
এখনো পড়া হয়নি। তবে দ্রুত ডেলিভারি পেয়েছি।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ। সাহিত্য, ভ্রমণ এবং ইতিহাস কি নেই বইটিতে? ভালো লাগার মতো একটি বই।
Was this review helpful to you?
or
====== কাহিনী/বইয়ের সার-সংক্ষেপ ======= “দুঃখ, যন্ত্রণা, হতাশা- এসব তো জীবনেরই অংশ। তাকে বরণ করে নেয়ার মধ্যে কোনো পরাজয় নেই। পরাজয় হচ্ছে তা থেকে জেগে ওঠার বাসনা ও প্রচেষ্টাকে ত্যাগ করা।” পৃথিবীর ভূস্বর্গ বলে খ্যাত কাশ্মীর। কাশ্মীরের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ কত কবি লিখেছেন গান ও কবিতা। পরাক্রমশালী মোঘল বাদশাহরাও কাশ্মীরের সৌন্দর্যে হয়েছেন মুগ্ধ ও বিমোহিত। শীতকালের সাদাশুভ্র তুষারপাত, বরফাচ্ছাদিত পাহাড়চূড়া এবং গ্রীষ্মকালে অপরূপ সৌন্দর্যের নদী, লেক, ঝর্না ও ফুলের বাগানে মুগ্ধ হন নাই এমন মানুষ বোধয় খুব একটা নেই। তার উপর লেকের উপর হাউজবোটে রাত্রিযাপন, অথৈই পানিরাশির উপর বসে গভীর রাতের তারাভরা আকাশ দর্শন কাশ্মীরের সেই সৌন্দর্যকে দিয়েছে এক অনন্য মাত্রা। কিন্তু মুদ্রার ওপিঠ বলেও তো কিছু আছে। কাশ্মীরের ইতিহাস যে খুব একটা সুখকর নয়। প্রকৃত স্বাধীনতা কি জিনিস বা তার স্বাদ কেমন তা কোনদিনই ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি অভাগা কাশ্মীরবাসী। যেন স্থানীয় লোকজনের চাইতে সেখানে সামরিক অস্ত্রসজ্জিত বাহিনীর লোকজনের সংখ্যাই বেশি। আন্দোলন-প্রতিরোধ যেন নিত্য সঙ্গী এই কাশ্মীরবাসীর। কিন্তু তবুও তারা বেঁচে আছে এই আশা নিয়ে যে একদিন তারা হয়তো প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পাবে। “...আযাদীর পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত আসলে অর্থহীন, যদি না তার চেতনার সাথে জড়িত থাকে মানুষের অধিকার ও কল্যাণ চিন্তা।” ========= পাঠ প্রতিক্রিয়া ========== বুলবুল সরওয়ারের বই পড়লাম এই প্রথম। নিঃসন্দেহে বইটি অনেক বিখ্যাত এবং পড়ার পর আমার মনে হয়েছে বইটি শুধু নিছকই একটি ভ্রমণ কাহিনীই নয় বরং লেখক এর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন পুরো কাশ্মীরেরই অতীত ও বর্তমানকে; তুলে ধরেছেন তার বিস্মৃত ইতিহাসকে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে। মানুষের জীবন-যাপনের চাল-চলন, খাবারের বৈচিত্র্য, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি, মানুষের মনোভাব ও তাদের সুখ-দুঃখের বিভিন্ন আখ্যান এখানে লেখক তুলে ধরেছেন গল্পচ্ছলে। বইয়ে অনেক কবিতার লাইনের মাধ্যমে লেখক কাশ্মীরের ভালোলাগা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস ও জীবন-যাপনকে প্রকাশ করেছেন যা এক প্রকার মুগ্ধতা ছড়িয়েছে পুরো বই জুড়ে। বইটি যতই সময় নিয়ে ধীরে ধীরে পড়া যায় ততই মনে হয় কাশ্মীরকে ক্ষণে ক্ষণে উপলব্ধি করা যায়; কারণ বই জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন স্থানের অপরূপ বর্ণনা। যা পাঠকের ভালো লাগবেই। ভ্রমণপ্রিয় পাঠকেরা যারা বইটি এখনো পড়েননি তাদেরকে বইটি পড়ার আমন্ত্রণ রইলো। প্রোডাকশনঃ বইটির কভার ডিজাইন ভালো লেগেছে; বাইন্ডিং ও পৃষ্ঠার কোয়ালিটিও ভালো ছিলো। বানান ভুল চোখে পড়েনি। ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৮/১০।
Was this review helpful to you?
or
অসাধারণ একটা বই,,,
Was this review helpful to you?
or
Great
Was this review helpful to you?
or
এখন পর্যন্ত আমার পড়া সেরা বই, এটি। ইতিহাস ও ভ্রমনকাহীনির অসাধারণ মেলবন্ধন।
Was this review helpful to you?
or
Thanks for quality full books
Was this review helpful to you?
or
" ঝিলাম নদীর দেশ " - অসাধারণ একটি বই। আমার পড়া প্রিয় এবং দ্রুততম সময়ে পড়া বইগুলোর মধ্যে অন্যতম। বইটি মূলত কাশ্মীর নিয়ে। কাশ্মীর নিয়ে আগে থেকেই জানার আগ্রহ ছিল, কিন্তু কখনও পড়াশোনা করা হয়নি। লেখক ১৯৮৬ সালের জুন-জুলাই মাসে কাশ্মীর ভ্রমণ করেন এবং বইটি লিখেন ১৯৮৭ সালের জুন-ডিসেম্বরে। যদিও বইটি লেখকের ভ্রমণ কাহিনী, তবুও বইটিতে কাশ্মীরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক স্থাপত্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং কাশ্মীরের মানুষের মন-মানসিকতা অসাধারণ বর্ণনা শৈলীতে তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে, পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ থাকার পরেও কাশ্মীরের মানুষের দেশ প্রেম দেখে লেখক বিস্মিত হয়েছেন। পড়ার পর বারবার মনে হয়েছে, বইটি কেন আগে পড়িনি!!!! মজার ব্যাপার হচ্ছে, বইটা পড়ার আগে জানতামই না, বইটা এই টপিকে। বইটার পাঠক প্রিয়তা দেখেই কিনে ফেলেছিলাম ? ।
Was this review helpful to you?
or
আমি এখনো নাজনীনের কথা ভাবি .... বইটা যখন পড়া শুরু করবে , তখন হারিয়ে যেতে হবে নাজনীনের জীবনের মধ্যে .... আর , শহরটা ছেড়ে আসার সময় বুকের মাঝে যদি হাহাকার জেগে ওঠে, তবেই না তুমি সফল পাঠক ....?
Was this review helpful to you?
or
ঝিলাম নদীটা ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে। বছর ত্রিশেক আগের ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে গিয়েছিলেন মেডিক্যাল পড়ুয়া বুলবুল সরওয়ার।সে বারের আচানক ভ্রমণ তাঁকে এতোটাই অভিভূত করেছিলো যে এর বছরখানিক পরেই লিখতে শুরু করেছিলেন এই ভ্রমণকাহিনী।আধ বছরের একাগ্র সাধনার ফসল 'ঝিলাম'। জীবনের মিষ্টি সৌরভে আচ্ছন্ন, রসসিক্ত প্রেমিকের চোখে আমাদের ভূ-স্বর্গ কেমন হয়ে ধরা দিয়েছিলো— বাক্যের পর বাক্যে রসিকতা, ইতিহাস, কাব্য, প্রেম এবং দর্শনের অপূর্ব সমন্বয় 'ঝিলাম'-এর স্রষ্টা বুলবুলের মোহনীয়া গদ্যের অপূর্ব ছন্দে একবার কান পাততে পারলে সহজেই উপলব্ধ হয়।এ কাহিনী কেমন রসময়ী এবং উপভোগ্য তা বুঝতে 'ঝিলাম'-এর এ যাবত অবদি পঞ্চাশের অধিক মুদ্রণ নিঃশেষের ইতিহাসই যথেষ্ট।
Was this review helpful to you?
or
চমৎকার কিছু বই। খুবই ভালো লাগার মতো।
Was this review helpful to you?
or
প্রখ্যাত লেখক ও কবি বুলবুল সারওয়ার। গল্প, কবিতা ও উপন্যাসে তার অবাধ বিচরণ থাকলেও ভ্রমণকাহিনী রচনায় তিনি অতুলনীয়, অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তার রচিত ‘ঝিলাম নদীর দেশ’ একটি অনবদ্য গ্রন্থ। ছোট কলেবরের এই বইটিতে কাশ্মীরের সৌন্দর্যের এমন নিখুঁত বর্ণনা দিয়েছেন যে, পাঠক পড়বে আর দৃশ্যগুলো দেখবে তার মানসপটে। আর হৃদয়ের গভীরে অনুচ্চ একটি দীর্ঘশ্বাস অনুরণিত হবে— “আহ! জীবনে অন্তত একটাবার যদি পারতাম ‘ভূস্বর্গ’-খ্যাত কাশ্মীরে যেতে!” আমার মতে বইটির বিশেষত্ব অন্য জায়গায়। তাহলো, বাহ্যিক সৌন্দর্যের সাথে সাথে কাশ্মীরের আভ্যন্তরীণ দৃশ্যও তিনি এঁকেছেন হৃদয়ের কালি দিয়ে অত্যন্ত সযত্নে। তিনি কাশ্মীরকে দেখেছেন একজন সচেতন মুসলিমের চোখ দিয়ে। বিশ্লেষণ করেছেন একজন ন্যায়পরায়ণ ইতিহাসবিদ হিসেবে। ঝিলামের স্বচ্ছ-সুন্দর পানি তো সবাই দেখে। কিন্তু ঝিলামের অন্তঃসলিলা রক্তস্রোত দেখে ক'জন! আপেলের মতো টসটসে কাশ্মীরি চেহারার সাথে সাথে তাদের দগদগে হৃদয়ের আলেখ্যও তিনি বিধৃত করেছেন অত্যন্ত সুনিপুণ হাতে। তাছাড়া বিভিন্ন জায়গায় নজরুলের বাংলাসহ উর্দু-ফার্সী বিখ্যাত কবিতার চমৎকার অনুবাদ বইটির সৌন্দর্য ও স্বাদ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। মূলত বইটি ভ্রমণকাহিনীমূলক। কিন্তু উপস্থাপনা এমন যে, শেষ করার পর কিছুক্ষণের জন্য পাঠকের ভ্রম হতে পারে– ভ্রমণকাহিনী পড়লাম নাকি উপন্যাস! বইটি পড়ার পর লেখকের অন্যান্য ভ্রমণকাহিনী পড়ার লোভ সম্বরণ করা কঠিন। তুরস্ক, মিশর ও জেরুজালেমের মতো ঐতিহাসিক জায়গার ভ্রমণকাহিনী তিনি বই আকারে প্রকাশ করেছেন। সবগুলো সংগ্রহ করার ইচ্ছে আছে।
Was this review helpful to you?
or
বুলবুল সরওয়ার হচ্ছেন এমন এক লেখক যার লেখায় ভ্রমণের বর্ননা পায়া অন্য মাত্র। হাস্য রস, আবেগ, অনুভূতি পায় প্রাণের ছোঁয়া।
Was this review helpful to you?
or
লেখনী নাকি, কাহিনী কোনটা বেশি মুগ্ধ করেছে বুঝতে পারছি না। সম্ভবত, দু'টোই ছিলো মনোমুগ্ধকর।
Was this review helpful to you?
or
বই দুইটা খুব ভাল লেগেছে।
Was this review helpful to you?
or
প্রিয় বই
Was this review helpful to you?
or
???
Was this review helpful to you?
or
Nice
Was this review helpful to you?
or
ঝিলাম নদীর দেশ সম্ভবত আমার জীবনে প্রথম পড়া রোমান্টিক ভ্রমণকাহিনী। ক্লাস ফোরে পড়ি সর্বোচ্চ হয়তো! এহে। কী যেন একটা বলে ফেলেছি, চুপেচুপে বলতে হতো, জোরে চিৎকার করে বলে ফেলেছি, এইরকম লজ্জা হচ্ছে এখন, উফ। ঝিলাম নদীর দেশ পড়ে এখনও ব্লাশ করি৷ হেসে উঠি। এখনও ঝিলাম, কমপক্ষে পাঁচশো বার পড়ার পরও মেইকস মী ইমোশনাল। ( পরে ফের রিভিউ দিব। এখন আপাতত পাঠ প্রতিক্রিয়া বলি)
Was this review helpful to you?
or
এক কথায় যদি বলি তাহলে অসাধারণ একটা বই। নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে বুঝতেই পারবেন না।
Was this review helpful to you?
or
খুব সুন্দর একটা বই।
Was this review helpful to you?
or
পড়লাম ,বুলবুল সরওয়ার এর “ ঝিলাম নদীর দেশে “ কাশ্মীরের ভাঁজে ভাঁজে সৌন্দর্য্য। লোকে কি সাধে পৃথিবীর সর্গ নামে আখ্যায়িত করেছে ?? লেখকের সহজ কিন্তু অনুপম বর্ণনাভঙ্গি পাঠকের হৃদয়ে ছুঁয়ে যাবে । হৃদয় ভোলানো শব্দের জাদু ,কবিতা ও গানের অসাধারণ উপমা,লেখনীর ধারাবাহিকতায় অসাধারণ মুন্সিয়ানা আপনাকে রীতিমত ঘোরের মধ্যে ফেলে দিবে।কখনো উচু পাহাড়ের সবুজের কোল ঘেঁষে দুর্গম রাস্তায় ভয়ংকর সুন্দর একেবেকে পথে চলবেন ,কখনো আবার বাসের জানালা খুলে সাদা মেঘ স্পর্শ করবেন । কখনো কাশ্মীরি মেয়ের রূপ সৌন্দর্যে রীতিমত প্রেমিক প্রেমিক জোস চলে আসবে ।প্রেমে পড়ে যাবেন কাশ্মীরের ডাল লেকের । শালিমাবাগের (প্রেম কানন) প্রেমিক যুগল নূরজাহান ও সম্রাট আওরঙ্গজেবের কথা ভুলে নিজেকে কল্পনায় প্রেয়সীর প্রেমে উদাস প্রেমিক মনে হবে । জানতে পারবেন , কাশ্মিরের মানুষ ,বেদনাকে আড়াল করে কিভাবে হাসি মুখে জিবন পার করে দেয় ,মুক্তির আকাঙ্ক্ষা মনে সযত্নে পুষে রেখে জীবনের ঘানি টানে। কাশ্মীরের রাজনীতি সম্পর্কেও কিঞ্চিৎ ধারণা পাবেন। নাজনীনের মত অসংখ্য তরুণীর যাদের বুকে জ্বলে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ,তাদের কাছে সরকারি চাকুরী নিয়ে তুষ্ট থাকা স্বামী বা সংকীর্ণ মনা আপনজনদের জন্য করুণা হয় । বইটি যখন পড়বেন কখনো মনে হবে রোমান্টিক প্রেমের ভেলায় ভাসছেন ,ইতিহাসের অধ্যাপকের ইতিহাস বর্ণনা থেকে মনে হবে ইতিহাসের বিখ্যাত প্রফেসরের লেকচার শুনছেন , অধ্যাপক যখন নাতি পুতিদের মজা করে সত্য কাহিনী বর্ণনা করেন তখন মনে হবে আপনি শিশুতোষ মজার গল্প পড়ছেন। একজন মিশরীয় তরুণীর কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও তার গান - কবিতাকে মূল্যায়ন ও উপলব্ধি আপনার জাতি গৌরব বাড়িয়ে দিবে ,একজন আত্মবিস্মৃত আধুনিক তুর্কির নিজের জাতিসত্ত্বা ভুলে যাওয়ার ঘটনায় আপনি বিস্মৃত হবেন ।সর্বোপরি এটি ভ্রমণ কাহিনী ।বন্ধু খোরশেদ ও,আজিজ এর মুখ দিয়ে কাশ্মীরের ইতিহাস ,মুসলিমদের উদ্ভব এবং প্রতিটি দর্শনীয় স্থানের চুলচেরা বিশ্লেষণ একই সাথে ধর্ম ও রাজনীতির নামে মুসলিম ইতিহাস সভ্যতা সংস্কৃতি কে যারা আড়াল করার অপচেষ্টা করেছে লেখক তাদের শক্ত সমালোচনা করেছেন। উঠে এসেছে কাশ্মীরের মানুষের অতিথিপরায়ণতা।বন্ধুদের অশ্রুসজল বিদায় । নাজনীনদের স্বাধীণতার অদম্য ইচ্ছা এতই শক্তিশালী যে,জুলুম বাজ কেন্দ্রীয় সরকার তিন লাখ কাশ্মীরি মানুষের জন্য ৬ লাখ সৈন্য মোতায়েন করেছে । “সর্বোপরি এমন আবেগঘন রোমাঞ্চকর ভ্রমণ কাহিনী পড়ে যে কেউ কাশ্মীরের প্রেমে পড়ে যাবে । চোখের সামনে ভেসে উঠবে চোখের কোনে দুই ফোঁটা অশ্রু সহ নাজনীনের মুখ । কাশ্মীর ও নাজনীন কে আলাদা ভাবে ভালোবাসা যায় না ।তারা এক ও অভিন্ন।নাজনীনের চোখেই কাশ্মীর কে দেখতে হয় ,উপলব্ধি করতে হবে।কাশ্মীর কে ভালবেসে ফেলবেন ,আর “ ঘরের দুয়ারে আর্মি থাকলে বসন্ত বা শীত একই লাগে!”নাজনীনের এই কথা আপনার হৃদয় বিদীর্ণ করবেই । আজিজের বর্ণনায় কাশ্মীরের পরতে পরতে ঢুকে যাবেন আপনি । আর কেনো দেরি ,ডুবে যান,ঝিলাম নদীর হৃদয়স্পর্শী শীতল জলে । কথা দিচ্ছি ,শরীর মন দুই জুড়াবে ।
Was this review helpful to you?
or
কাশ্মির নিয়ে আগেও এক দুটো ভ্রমণবৃত্তান্ত পড়েছি।কিন্তু বুলবুল সরোয়ারের এই ভ্রমণ-কাহিনী কাশ্মির নিয়ে লেখা অতীতের সকল বইকে পিছনে ফেলে দিয়েছে,তা পাঠকমাত্রই স্বীকার করবে।
Was this review helpful to you?
or
ঝিলাম নদীর দেশ ——— বুলবুল সরওয়ার ∆ বইটি আমাকে শুরুতে কাঁদালো, শেষেও কাঁদালো। মাঝখানের কিছু কথা, কিছু ঘটনা আমাকে হাঁসিয়েছিল। ∆ ভ্রমণ পিপাসুরা পড়তে পারেন! এখানে আপনারা ভ্রমণের রোমাঞ্চের পাশাপাশি কাশ্মীরের ইতিহাসটাও কিছুটা জেনে ফেলতে পারবেন। ∆ কাশ্মীরি-মুসলমানরা বাংলাদেশ সম্পর্কে কি ধারণা করে!? সবার ধারনাই কি একরকম?! ∆ লেখকের লেখনি, শব্দের চমৎকার ব্যবহার, ভ্রমণের স্পৃহা, বাঙালি-মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করা সবকিছুই আপনাকে পুলকিত করবে। ∆ আর হ্যাঁ, কাশ্মীর ভ্রমণ করার চিন্তা যদি আপনার মাথায় না ত্থেকে থাকে, তাহলে বইটি আপনাকে কাশ্মীর ভ্রমণের প্রতি উৎসাহিত করবে। হয়তো বইটি আপনাকে নির্যাতিত মুসলিম কাশ্মীরিদের মুক্তির জন্য দোয়া করতেও প্ররোচিত করবে!
Was this review helpful to you?
or
মাস্টার পিস! এটা শুধুমাত্র ভ্রমণ কাহিনী না! অনেকে অপ্রিয় ইতিহাস ও রাজনীতিরও দারুন মিশ্রন!
Was this review helpful to you?
or
ঝিলাম নদীর দেশ একটি অসাধারণ বই। এই বইটি পড়ার সময় আমার মনে হয়েছে আমি কাশ্মীরেই আছি এবং কাশ্মীরের সবগুলো নিদর্শন নিজ চোখে দেখছি।সূদুর আর নিকট অতীতের কাশ্মীরের যেসব ইতিহাস লেখক বর্ণনা করেছেন মনে হয়েছে সেগুলোও আমি নিজ চোখে দেখছি পড়ার সময়। এক কথায় 'ঝিলাম নদীর দেশ' একটি মাস্টারপিস বই। বুলবুল সরওয়ার একজন জিনিয়াস লেখক।
Was this review helpful to you?
or
ডাক্তার বুলবুল সাহেবকে একজন প্রাকৃতিক সহজাত লেখক বলে আমার মনে হয়নি। তিনি খুব সচেতনভাবে উচ্চমার্গীয় সাহিত্যিক কথাবার্তা দিয়ে বইটির পাতার পর পাতা লিখে গেছেন যা বেশিরভাগ জায়গায় মনে হয়েছে অপ্রয়োজনীয় অথবা বাহুল্য দোষে দুষ্ট। এছাড়া কাশ্মীরের প্রকৃত চিত্র এই বইটি পড়ে আমার বোধের মধ্যে ধরা দেয়নি।
Was this review helpful to you?
or
কাশ্মীর নিয়ে লেখা শ্রেষ্ঠ বইগুলোর একটি। লেখক কাশ্মীরকে এবং এর প্রতিটি স্থানকে নিজের দৃষ্টি, মন ও এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে আর কবিতার ছন্দে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন মনে হচ্ছিল আমি নিজেই কাশ্মীরকে বই এর পাতায় দেখছি। লেখক দীর্ঘদিন কাশ্মীরে অবস্থান করে প্রতিটি স্থান যথেষ্ট সময় নিয়ে উপভোগ করেছেন বলেই হয়ত উনি কাশ্মীরকে ধারণ করতে পেরেছেন আর তা ফুটে উঠেছে উনার লেখনীতে। পাশাপাশি কাশ্মীরের এক তরুণীর প্রতি মোহাবিষ্ট হওয়া তাদের চেতনাকে ফুটিয়ে তুলা ইত্যাদি বিষয় বইটিতে অন্য একটি মাত্রা যোগ করেছে।
Was this review helpful to you?
or
হোমার যেমনটি ইলিয়াডে হেলেনকে তুলে ধরেছেন,বুলবুল সরওয়ার তার "ঝিলাম নদী দেশ " এ কাশ্মীর পৃথিবীর এক ভূস্বর্গকে খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন।এখান মানুষের চাল চলন সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য।সাথে সাথে এও তুলে ধরেছেন মানুষ স্বাধীনভাবে জীপন যাপন না করতে পারলে আসলে তাতে প্রকৃত অর্থে কোনো সার্থকতা নেই।আরো জানতে পড়ে পেলুন বইটি। অসাধারণ বর্ণনা ভঙ্গী, ভাষা সহজবোধ্যতা পাঠক মনে বেশ গ্রহণযোগ্যতার দাবিদার।
Was this review helpful to you?
or
অনেক ভালো একটা বই। সবার পড়া আবশ্যক। বিশেষত যারা সাহিত্য এবং ভ্রমণ নিয়ে কাজ করেন তাদের তো পড়তে হবে ই ।
Was this review helpful to you?
or
বুলবুল সরওয়ার রচিত “ঝিলাম নদীর দেশ” আমার পঠিত সেরা ভ্রমণ কাহিনী। যাকে বলে প্রথম দর্শনে প্রেম , সেই ঘটনা ঘটেছে আমার এই একটি বই পড়েই। আমি প্রেমে পড়ে গেছি ভূ-স্বর্গ কাশ্মীরের, লেখকের আর তাঁর অন্য সব লেখার। ভ্রমণ কাহিনী এত অনবদ্য, আকর্ষণীয় ও আবেগঘন হতে পারে “ঝিলাম নদীর দেশ” না পড়লে বিশ্বাস হতনা। সেই কাশ্মীর আজ হয়তো নেই, কিন্তু লেখকের ঝিলাম নদী আর নাজনীনকে পাঠককুল চিরকালই অশ্রুসজল নয়নে খুঁজে ফিরবে।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_ডিসেম্বর ভ্রমণ কাহিনী এতো মোহনীয় হতে পারে, কল্পনাতীত! কাশ্মীর! এমন একটি শব্দ যা উচ্চারণ করা মাত্রই হৃদয়ে আবেগ অনূভূতি জেগে উঠে না- এমন হৃদয় খুব কমই আছে। কাশ্মীর শব্দটায় আমরা কল্পনা করি, কি জানি কি অপরুপ দৃশ্যে সজ্জিত সে, যার জন্য তাকে 'ভূস্বর্গ' বলা হয়। কখনো কখনো মন কাতর হয়ে পড়ে পরাধীন কাশ্মীরের দুঃখিনী মায়ের মুখখানির দিকে তাকিয়ে। কখনও বা চোখের কোণে অশ্রুবিন্দু জমতে থাকে ভূস্বর্গের মাঝে থেকেও অনন্য রূপসী বোনটির বেদনাহত চোখ দুটি দেখে। 'ঝিলাম নদীর দেশ' বইটি যেন সেই কাশ্মীরের-ই প্রতিচ্ছবি। কাশ্মীরের সৌন্দর্যে কিংবা রুপলাবণ্যে লেখক যেন মাতোয়ারাই হয়ে ছিলেন- লেখার বর্ণনাভঙ্গি তা ই প্রকাশ করে। ঝিলাম দেখেই লেখক হতবিহ্বল হয়ে পড়লে গাইড তাকে বলে গেলেন- 'এ হচ্ছে ঝিলাম। কাশ্মীরের প্রাণ। আমাদের রক্তস্রোত।...' তিনটি শব্দ মাত্র, অথচ অনুভূতি কত গভীর! ডাল লেক, নাগিন লেক, শ্রীনগর, লীডার নদী- আল্লাহ যেন আপন মায়ায় সাজিয়েছেন তাকে। চর্মচক্ষু দিয়ে না দেখলে কি আর অত অনুভব করা যায়! গুলমার্গের- '...দিগন্ত বিস্তৃত পৃথিবী জুড়ে যেন শুধু সাদা পাহাড়েরই রাজত্ব। বরফের টুপি পরে অন্তহীন অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে হিমালয়। চূড়ার পর চূড়া, বরফের পর বরফের টুপি! সাদারই কি বিচিত্র সাজ! কী তাদের অপরূপ বর্ণালী! এক সাদাই যে এত কারুকার্য, এত মোহিনী রুপ ছড়াতে পারে- না দেখলে কারো পক্ষে অনুভব করা অসম্ভব!' সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে লেখক আকাশপানে হারিয়ে গেলেন। আর মনে মনে আওড়ালেন- 'তুমি তোমার প্রভুর কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করতে পার?' নিশাত বাগ, শালিমার বাগ, চেশমা শাহী- এসব বাগান যদিও কৃত্রিম, কিন্তু তার রুপে এতটুকুনও কৃত্রিমতা নেই। আর এগুলোকে যারা পরম আদর যত্ন করে গড়ে তুলেছেন সেই মোঘলরা, সে কথারও দারুণ বর্ণনা এসেছে ঝিলাম নদীর দেশ-এ। এগুলো যেন মুঘল সাম্রাজ্যের রুচিশীলতা, শিল্প কর্মের অনন্য নিদর্শন কিংবা মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের পরিচয় বহন করে! পেহেলগাঁম- স্বর্গ কাশ্মীরের আরও একটি টুকরো! তবে 'ঝিলাম নদীর দেশ' বইটাকে অনন্য রুপ দিয়েছে এই পেহেলগাঁমকে কেন্দ্র করেই। শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে রওনা পথে লেখক 'স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা'র দেখা পেলেন। রাজকন্যার নাম ছিল নাজনীন। শ্রীনগর স্টেশনে নেমে রাজকন্যাকে লেখক 'খোদা হাফেজ' জানাতে হয়। এমনকি পুরো একমাস ভ্রমণে রাজকন্যা নাজনীনকে আদৌ ভুলতে পারেননি। কিন্তু আর দেখাও পাননি। কিন্তু দুঃখিনী কাশ্মীরের কথা? ঝরঝর শব্দমালায় গেঁথে দিয়েছেন লেখক। রাজা হরি সিংয়ের চক্রান্তেরই ফল বিশ্বের প্রথম 'ফিলিস্তিন', ১৯৪৭ এর আগস্টে। রাজা হরি সিংয়ের চক্রান্তের নকশা ছিলো এমন- কাশ্মীর যেন মুসলমানদের হাতে না যায় এবং স্বাধীনভাবেও না থাকতে পারে! কেমন আছে কাশ্মীর- বুঝার জন্য নিচের দুইটা লাইনই যেন যথেষ্ট! "তাকিয়ে দেখি, পাহাড়ের চূড়ায় ছোট একটি ঘর। টেলিফোনের লাইনও চোখে পড়লো। বললাম, 'ওখানে কারা থাকে?' 'কারা আবার- মিলিটারী! জান না, কাশ্মীরে তিন লাখ জনগণ, ছয় লাখ মিলিটারী? চল যাই।'" কাশ্মীরের মানুষদের হৃদয়ের হাহাকারটুকু উপলব্ধি করলে কিছুটা টের পাওয়া যায়! আমাদের অনেকেরই ধারণা, কাশ্মীরিরা যুদ্ধ চায়। অথচ কাশ্মীরের হিন্দু মুসলিম, সকলেই যুদ্ধ বিরোধী। বর্তমান কাশ্মীর কেমন আছে? একাংশ স্বাধীন, যেটা পাকিস্তানের দিকে। আরেকাংশ পরাধীন, যা ভারতের দিকে- এ কথা শোনামাত্রই যেন ভারতীয় সেনাবাহিনী কিংবা ভারত সরকারের চোখে বিস্ফোরণ ঘটে! মাসপুরো ভ্রমণের শেষের দিকে লেখক উঠলেন শ্রীনগরে কলকাতার এক বন্ধুর মাধ্যমে তার বন্ধুর ঠিকানা। আব্দুল আজীজ, নয়ীম, সাব্বির, আর্জুমান্দ, ফাতিমা, দীনা- এদের সাথে বেশ খাতির জমেছিলো। আরজুর ভাইয়ের বিয়ের কারণে ওদেরকে প্ল্যানিংয়ের দুইদিন পর পেহেলগাঁমে আসতে হলো। পেহেলগাঁম থেকে ফেরার পথে আর্জু ও ফাতিমা-কে লেখক, আব্দুল আজীজ, নয়ীম ও খুরশীদ বিদায় জানাতে হলো। বাসের জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে আব্দুল আজীজ বলল, 'কি আরজু, তোমার নতুন ভাবীর নামটাও যে বলে গেলে না?' নামখানা শুনে লেখকের সাথে পাঠকও যেন এখানে চমকিত হবে! ভ্রমণ উপন্যাসটির পুরো স্বাদটুকু যেন এখানেই। ১৯৮৬ সালে ঢাকা মেডিকেলে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই বুলবুল সরওয়ার কাশ্মীর ভ্রমণে গিয়েছেলেন। বইটি রচনাকাল ছিলো ১৯৮৭ সালে। ছাত্রাবস্থায় এমন একটি সাহিত্যকর্মের সূচনা করলেন- এক কথায় অবিশ্বাস্য! বইটির স্বার্থকতা নিয়ে বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র আব্দুল মান্নান সৈয়দের কয়েকটি কথাই যথেষ্ট। তিনি বলেছিলেন- 'আমাদের প্রোজ্জ্বল রচনা আঙুলে গোনা। ব্যতিক্রম যা৷ তার বিচারও নানা-নিরিখে নানারকম। যেমন ভ্রমণোপন্যাস 'ঝিলাম'-নজরুলীয় প্রেম আর ফররুখীয় হোশ-এর ব্যতিক্রমী সমন্বয়। ইতিহাসের পথে যখন কবি হাঁটেন, সে এক বিচিত্র জীবনানন্দ। বিস্ময়কর যে, বুলবুলের আরাধ্য আবার মহামনীষী টলস্টয়...চমৎকার!' কারণ বুলবুল সরওয়ার যখন হেঁটেছেন, ইতিহাসকে ধারণ করেই পথ চলেছেন। কারো সাথে যখম আলাপ জুড়েছেন- দেশীয় সত্ত্বাকে, ধর্মীয় স্বজাত্ববোধকে তুলে ধরেছেন সাবলীলভাবে, অবলীলায়, কোনও রকমের কৃত্রিমতা ছাড়াই। লেখক হিসেবে এখানেই তিনি অনন্য! ভ্রমণকাহিনী সাধারণত গতানুগতিক ঢঙেরই হয়ে থাকে। কিন্তু ভ্রমণকাহিনী আবার উপন্যাস হতে পারে? ইতিহাসের সারমর্মও এতে নির্মোহ ভাবে সমন্বয় সাধন করতে পারে? কিংবা ধর্মীয় ভাবাবেগ-ভালোবাসা, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ এসবেরও সংযোজন থাকতে পারে? অথচ 'ঝিলাম নদীর দেশ' যেন এসবেরই এক দারুণ মিশেল। তাই 'ঝিলাম নদীর দেশ'-কে ভ্রমণকাহিনী না বলে বরং 'ভ্রমণোপন্যাস' বলাই যুক্তিযুক্ত এবং সর্বোত্তম। এতো দরদমাখা শব্দমালা দিয়ে, হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসাটুকু ঢেলে বুুলবুল সরওয়ার কাশ্মীরকে এঁকেছেন। এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, 'ঝিলাম নদীর দেশ' বাংলাসাহিত্যে একটি অনন্য সংযোজন এবং মাইলফলক! বলাবাহুল্য, 'ঝিলাম নদীর দেশ' বইটির এটি বায়ান্নতম মুদ্রণ! বই : ঝিলাম নদীর দেশ লেখক : বুলবুল সরওয়ার প্রকাশনা : ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | অ্যাডর্ন বুকস প্রথম প্রকাশ : ১৯৯০ | সৃজন প্রকাশনী মুদ্রিত মূল্য : ২৫০ টাকা রিভিউ লেখা : তুহিন মাজহার
Was this review helpful to you?
or
কাশ্মীর নামের যে ভূখণ্ডকে একসময় ভূস্বর্গ নামে অভিহিত করা হত, কার্যত তা এখন ভারতের অংশ। বাকিটুকু, যার নাম আযাদ কাশ্মীর, পাকিস্তানের অংশ হতে আগ্রহী কিনা, না জেনেই বলা যায়, সব বিচারেই কাশ্মীর এখন পরাধীন। একাহিনি পরাধীন কাশ্মীরের ভারত-অংশের ভ্রমণবৃত্তান্ত। স্বাদু গদ্যে লেখা ঝিলাম শুধু স্রোত নয়, প্রেম ও ইতিহাসের এক দায়বদ্ধতাও বটে।
Was this review helpful to you?
or
ঝিলাম নদীর দেশ। লিখেছেন বুলবুল সরওয়ার। বই ছাড়া মানুষকে মানুষ কল্পনা করা বিস্তর বোকামি। বই সব সময়ই আপনার সঙ্গী হবে আর কেউ নয়। জ্ঞানীরা বলেন, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। ওমর খৈয়াম বলেছেন, ‘রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে ,প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে,কিন্তু বইখানা অনন্ত যৌবনা-যদি তেমন বই হয়।’ সে হিসাবে বউ হারানোর ভয় থাকলেও বই হারানোর কোনো ভয় নেই। ‘ঝিলাম নদীর দেশ’ বইটিতে লেখক শ্রীনগর-কাশ্মীর ভ্রমণকাহিনি লিখেছেন। আমি হলফ করে বলতে পারি, কেউ যদি একত্রে ভ্রমণ-গল্প-উপন্যাস আর সত্যাশ্রয়ী ইতিহাসের স্বাদ পেতে চান, তাহলে ঝিলাম নদীর দেশ আপনাকে ঠকাবে না।