User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
বই: রানু ও ভানু জনরা: সমকালীন উপন্যাস লেখক: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রকাশনী: বিভাস প্রকাশ কাল: বইমেলা ২০১৬ পৃষ্ঠা: ১৪৪ প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ মুদ্রিত মূল্য: ২৫০৳ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে তার নিজের কোন অাত্মজীবনি লেখা অাছে কিনা অামার জানা নেই। তবে তার সাহচার্যে থাকা অনেকেই তাকে নিয়ে লিখেছেন, রবীন্দ্র জীবনী নিয়ে চলছে নানা রকম রিচার্স তেমনি এক গবেষণামূলক বই বলা চলে রানু ও ভানু। কবির দৈনন্দিন জীবনের অাড়ালে তৎকালীন সময়ের নানা দিক তথা রাজনৈতিক সমস্যা উঠে এসেছে এ বইয়ে। কাহিনী সংক্ষেপ: প্রতিদিন সারা দেশ থেকে শত শত চিঠি অাসে কবির কাছে, যথাসম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টাও করেন কবি। চিঠি লিখতে তার ভালো লাগে। এমনি এক সকালে একটা চিঠিতে চোখ অাটকে যায় কবির। কোনরকম শ্রদ্ধা বা প্রণাম না জানিয়ে খুব গম্ভীর ভাবে সম্বোধন করেছেন "প্রিয় রবিবাবু" নামে, পত্র লেখিকার কোন পদবি দেননি, নিচে কেবল লেখা রাণু। রাণু নামটা দেখেই যেন প্রকৃতির সাথে সাথে কবির মনের কোনেও মেঘ জমে ওঠে। কেননা রাণু নামে কবির এক কণ্যা বুক ভরা অভিমান নিয়ে পৃথিবী ছেড়েছে। চিঠি লিখে ভক্তদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা ছাড়াও কবির ঘাড়ে শান্তিনিকেতনের দায়িত্ব, অনিচ্ছা সত্ত্বেও করতে হয় রাজনৈতিক নানা কর্মকান্ড তাই সব দিক মিলিয়ে জ্বরা, শোক বেশিক্ষণ স্থান দিতে পারে না মনে। বেলা, কবির সবথেকে অাদরের বড় কন্যা যেদিন মারা গেল উদভ্রান্তের মত কবি এসে হাজির হল ভবানিপুরের রাণুদের বাড়িতে। চিঠিতেই রানু এ বাড়ির ঠিকানা দিয়েছিল। দড়জা খুলে কোকড়া চুলের দশ বছরের বালিকা সামনে অাসে। কবির নিমন্ত্রণে রানুর পরিবার সহ শান্তিনিকেতনে অাসলে কবির সাথে ঘনিষ্ঠতা যেন অারো বেড়ে যায় রানুর কিন্তু বাধসাধে সম্বোধনে সবার মত বাবা/দাদামশাই, রবিবাবু কোনটাই তর মন মত হয় না। অন্যদের মত গড়পরতা নামে সে ডাকতে পারবে না শেষমেষ রবির নানা সমর্থক শব্দ খুঁজে ক্লান্ত রানুর সাথে মিল করে কবি তাকে ভানু'দা ডাকতে বলেন। একসময় এ ছদ্মনামে বহু কবিতা লিখছেন কবি। রানুরও বেশ পছন্দ হয় নামটা। এরপর ছুটি পেলেই কবির কাছে শান্তিনিকেতনে ছুটে অাসে রানু। সাহিত্যে, নাটকের অভিনয়ে, এজ্রাস বাজানো, রানু সবটাতে পারদর্শী, গুনী মেয়ে। কবির শোকাগ্রস্থ মনে যে অানন্দের জোয়ার অানে, কবিতা, গানে নতুন সুর অাসে যার কোলাহলে। কখনো কখনো মনে হয় যেন নতুন বৌঠানের মত তার এক সঙ্গী অাবার এসে হাজির হয়েছে নতুন রূপে। রানুর শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। নানা জায়গা থেকে প্রস্তাব অাসা শুরু করে, কিন্তু কবির মনে জাগে রানুকে হারানোর ভয়। তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন কী অার তাকে এভাবে কবির কাছে অাসতে দিবে! রানুকে কাছে রাখা যায় এমন ছেলে খুজতে শুরু করেন কবি। কবি তখন চীন সফরে গেছে এদিকে রানুর বিয়ে ঠিক হয়ে যায় বিখ্যাত ব্যাবসায়ী রাজেন মুখার্জীর ছেলে বিরেন মুখার্জীর সাথে। কবি বুঝলেন এর থেকে ভালো বিয়ে রানুর হতে পারে না, তাই না বলার কোন মানে নেই। কী হয় এরপর? তবে কি এখানেই কবির সাথে রানুর সম্পর্কের ইতি ঘটে? নাকি ভানুদাদার সাথে রানুর আজীবন হৃদয়ের সুশীতল সম্পর্ক থাকবে? জানতে হলে পড়তে হবে সুনীলগঙ্গোপাধ্যায় এর "রানু ও ভানু"। নিজস্ব মতামত: কবি ভক্ত অার কবির মিষ্টি শীতল সম্পর্কের কথাই কেবল নয় এ বইয়ে অাছে এক মহকালের ঘটনা। কবির নাইট উপাধি বর্জন এবং তা কেন্দ্র করে কবির জীবনের নানা টানাপড়েন বিস্তারিত ভাবে উঠে এসেছে এ উপন্যাসে। হৈমন্তি গল্পের নায়িকা যে কবির প্রথম কণ্যা মাধবীলতা তথা বেলা তাও অনুভব করা যায় এ বইয়ে। বিশ্ববরেণ্য এ কবি সমাজ সংসারের বাহ্যিক ভারিক্কির অাড়ালে একটুকরো সুখের জন্য কতটা কাঙাল ছিলেন রানুর প্রতি ভালোবাসায় তা প্রকাশ পায়। শৈশবের রানু যেন তার চলে যাওয়া বড় মেয়ে বেলা। অাবার কখনো সহজ সরল রানুর ভালোবাসায় অাসে কবির লেখায় প্রেমের টান, যেন ফিরে পায় তরুনী রানুর মাঝে তার নতুন বৌঠানকে। রাতদুপুরে রানুর অনুরোধে গেয়ে ওঠেন গান.. "তোমায় গান শোনাব, তাই তো অামায় জাগিয়ে রাখো ওগো ঘুম ভাঙানিয়া। বুকে চমক দিয়ে তাই তো ডাকো, ওগো দুঃখ জাগানিয়া।" কেবল এক মিষ্টি রোমান্টিক উপন্যাসের স্বাদ নিয়ে পড়তে শুরু করলে পাঠক প্রথমেই হতাশ হবেন। প্রথম দিকে কেবল সমাবেশ, ভাষণ, তৎকালীন রাজনৈতিক দিক নিয়ে অালোচনা করলেও শেষ দিকে যেন লেখক একটা তালে ফিরে অাসেন। ঘটনার ধারাবাহিকতা ফিরে অাসে। শ্রীমতী রাণু মুখোপাধ্যায়ের অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি, রবীন্দ্রনাথের পত্রাবলি এছাড়া বিভিন্ন লেখকের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে লেখা অার্টিকেল, বইয়ের সাহায্যে রচিত এ উপন্যাস। তবে জানা যায় রাণু বেঁচে থাকা অবস্থায় তার অনুমতি নিয়েই লেখা এ উপন্যাস। পাঠক তাই ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথকে জানতে চাইলে নির্দ্বিধায় পড়তে পারেন "রানু ও ভানু"। লেখক পরিচিতি: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের মাদারিপুরে ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কলকাতায় চলে যান। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হল আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি, হঠাৎ নীরার জন্য, রাত্রির রঁদেভূ, শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম, ভানু ও রাণু, মনের মানুষ ইত্যাদি। শিশুসাহিত্যে তিনি "কাকাবাবু-সন্তু" নামে এক জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজের রচয়িতা হিসেবে পরিচিত। বিংশ শতকের শেষার্ধে আবিভূর্ত এই প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা-ব্যক্তিত্ব হিসাবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষা-ভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। বাঙলাভাষী এই সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামনিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দের পরবর্তী অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তাঁর কবিতার বহু পংক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় "নীললোহিত" , "সনাতন পাঠক" ও "নীল উপাধ্যায়" ইত্যাদি ছদ্মনামে লিখতেন। (তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া)
Was this review helpful to you?
or
বুক রিভিউ #গ্রন্থ: রানু ও ভানু( উপন্যাস) #লেখক: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় #প্রকাশনী: আনন্দ পাবলিশার্স # বাংলাদেশ প্রকাশনী: বিভাস #পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২০৩ #মূল্য :১৮৮(রকমারি মূল্য) ★ সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন ★ প্রতিদিন সকালের ডাকে চিঠি আর পত্রিকা আসে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে। প্রত্যেকটা চিঠি তিনি অত্যন্ত মনোযোগের সাথে পড়েন এবং যথাসম্ভব প্রতিটা চিঠির উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেন। একটা চিঠি পড়ে কবি একটু অবাক। প্রিয় রবিবাবু সম্বোধন করে চিঠি লিখেছে কিন্তু চিঠির ভাষা এবং হাতের লেখা দেখে মনে হচ্ছে অল্প বয়সী কেউ। চিঠি লেখিকার নাম রানু। চিঠি লিখেছে বেনারস থেকে। কবির লেখা অনেক পড়েছে সে। কবির বেশ ভালো লাগে চিঠি পড়ে। উত্তর লিখে দেন চিঠির। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী স্যার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে এখন আর শুধু ভালো লাগার কাজ গুলো করলেই চলে না। শান্তিনিকেতনের ব্যয়ভার পুরোটাই তার উপর। সেটা নিয়ে ভাবতে হয়। ইচ্ছা না থাকলেও রাজনৈতিক ব্যাপারে মাথা দিতে হয়। তা নিয়ে আবার অন্য পক্ষের সমালোচনায় বিদ্ধ ও হতে হয়। অশান্ত কবির এত দুর্বিষহ পরিবেশে এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস বয়ে আনে রানুর ছেলেমানুষী ভরা চিঠি। বড় ভালো লাগে কবির। চলতে থাকে দু'জনের চিঠি বিনিময়। এর মাঝে কবির জৈষ্ঠ্য কন্যা মাধুরীলতা দীর্ঘ রোগ ভোগের পর মারা গেলেন। শোকে মুহ্যমান কবি সেদিনই ভবানীপুরের একটা বাড়ির সামনে এসে ডাকলেন রানু! রানু! ( রানু আগেই তাকে চিঠিতে এবাড়ির ঠিকানা দিয়ে বলেছে তারা এখন কোলকাতায়)। প্রথম দেখা রানুর সাথে কবির। রানু কি নামে ডাকবে কবিকে? সবার মতো সে গুরুদেব বলবে না। রবিদাদা? সেওতো অনেকে ডাকে। কিছুই রানুর মনের মতো হয়না। রবির অনেক প্রতিশব্দ দিয়ে চলে নাম নির্বাচন। অবশেষে কবি প্রস্তাব দেন , তিনি একসময় ভানুসিংহ নামে লিখতেন।এ নামটা কেমন? পছন্দ করে রানু এ নাম। মিল ও দারুন ।রানু ও ভানু। কবি হয়ে যান রানুর ভানুদাদা। রানুর স্কুল ছুটি থাকলেই চলে আসে কবির কাছে। চলে দুজনের গল্প।আটান্ন বছরের কবি বার বছরের বালিকার সাথে মেশেন তার মতো করেই। দুজন ভালোবাসেন দুজনকে। সময় বয়ে যায়। রানু হয়ে ওঠে কালের অসাধারণ রুপবতী তরুণী। কবির নাটকে অভিনয় করে,ভালো এস্রাজ বাজায়। পড়াশোনায় দুর্দান্ত ভালো ।তার গুনমুগ্ধের অভাব নেই।বিয়ে না দিলেই না। রানুর পরিবার কবিকে পাত্র নির্বাচন করে দিতে অনুরোধ করে। কেঁপে ওঠেন কবি। তবে কি রানুকে হারানোর সময় হলো ? রানুকে কিভাবে কাছে রাখা যায়, তেমন ছেলে খুঁজতে থাকেন যে রানুকে তার সাথে যোগাযোগ করতে দেবে। কবি তখন চীন সফরে। রানুর বিয়ে ঠিক হয়ে যায় বিখ্যাত ব্যাবসায়ী রাজেন মুখার্জীর ছেলে বিরেন মুখার্জীর সাথে। কবি বুঝলেন এখানে না করার কোনো সুযোগ নেই। এর থেকে ভালো বিয়ে রানুর হতে পারে না। তবে কি এখানেই কবির সাথে রানুর সম্পর্কে ইতি ঘটে? নাকি তার ভানুদাদার সাথে আজীবন থাকে হৃদয়ের সুশীতল সম্পর্ক? জানতে হলে এখনই পড়তে হবে রানু ও ভানু। ★★আমার অনুভব★★ এ উপন্যাস কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের পড়ন্ত বেলায় আগমনকন্যা রানুকে কেন্দ্র করে লেখা হলেও সেই সাথে উঠে এসেছে মহাকালের ঐতিহাসিক সময়। নানা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাইট উপাধি বর্জন এবং তা কেন্দ্র করে কবির জীবনের নানা টানাপড়েন বিস্তারিত ভাবে উঠে এসেছে এ উপন্যাসে। নানা বেদনায় ভারাক্রান্ত কবি শুধু রানুর কাছেই অন্য রকম শান্তি পান। সরলা এ বালিকা মেয়েটি কবিকে তার বয়সি করে তোলে। বয়স কমানোর এ খেলা বড় ভালো লাগে কবির। তরুণী রানুর মাঝে খুঁজে পায় অনেক দিন আগে হারিয়ে যাওয়া নতুন বৌঠানকে। বহুদিন পর কবির লেখনী ঝলসে ওঠে প্রেমের কবিতায়। রানু ও মুগ্ধ কবি সান্নিধ্যে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যখন এ উপন্যাস লিখেছেন তখন লেডি রানু মুখার্জি জীবিত। উনার অনুমতি নিয়ে এ উপন্যাস লেখা হয়েছে। লেখক সেকথা বলতে ভোলেননি। (ও আচ্ছা নেটে, লেডি রানু মুখার্জি সার্চ দিলে উনার ছবি দেখতে পাওয়া যায়!!) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কিংবদন্তি চরিত্র নিয়ে লেখার তো আসলে কোনো তুলনা হয়না। তথ্যের সাথে ও ওনার কোনও আপোষ নেই। অসাধারণ এ উপন্যাসটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। কেমন যেন একটা ঘোর তৈরি হয়। রানু ও ভানুর ছায়ায়, আমি চলি মায়ায়!!!!! **রেটিং** আমি ৫ এ অবশ্যই ৫ দিব।