User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
inspirion akta golpo
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা রিভিউ নং:৩ বইয়ের নাম: আনা ফ্রান্কের ডায়েরী লেখিকা: আনা ফ্রান্ক অনুবাদক: প্রফেসর মোস্তফা মতিন। ধরন: স্মৃতিচারনমূলক গ্রন্থ মূল্য : ১৫০ মূল লেখিকার পরিচয়: জন্ম: ১৯২৯ সালের ১২ই জুন জার্মানে।অটো ফ্রান্ক ও এডিথের ২য় সন্তান।মৃত্যু: ১৯৪৫ সালের মার্চে। সার সংক্ষেপ: পুরো বইটিতে ফুটে উঠে ২য় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদী দের উপর হিটলারের পাশবিক নির্যাতন। জন্মসূত্রে আনা জার্মানীজ হলেও ৪বছর বয়সে আসে হল্যান্ডে। হিটলার তখন পৃথিবী দখলের স্বপ্ন দেখছে। আনা ফ্রান্ক সেই নির্যাতনের স্বীকার এক কিশোরী। শিশু আনা ফ্রান্ক ও তার পরিবার নাত্সিবাহিনীর ভয়ে আশ্রয় নেয় এক গুপ্তমহলে। সে মহলে আরও আশ্রয় নেয় ডুসেল, পিটার, কুপহুইপস,ক্রালার এবং ফান ডান দম্পতি। আনা গুপ্তমহলের সকল খবরাখবর লিখত তার কাল্পনিক সংঙ্গী কিটিকে। দীর্ঘ ২৫ মাস তারা ছিল সেই গুপ্তমহলে। হাজারো ভয়, শন্কা, খাবারের কষ্ট, মুক্ত বাতাসে শ্বাস না নিতে পারার কষ্ট ফুটে উঠে বইটিতে। আনা শৈশব থেকে কৈশরে পর্দাপন, ভালো লাগা আর পিটারের প্রতি ভালবাসা ও গড়ে উঠে সেই গুপ্তমহলে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ১৯৪৪ সালে গুপ্তমহলে হানা দেয় নাত্সিবাহিনী। ১৯৪৫ সালের ৬ জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির শেষে মারা যায় আনার মা এবং বোন মারগট। হল্যান্ড মুক্তির মাত্র ২ মাস আগে বন্দীনিবাসে আনার মৃত্যু হয়। কেবল প্রানে বেচে যায় আনার বাবা এবং উদ্ধার করা হয় তার ডায়েরিটি। পাঠ প্রতিক্রিয়া:পুরো গল্পে জুড়ে ফুটে উঠে এক কিশোরীর বন্দিজীবনের যন্ত্রনা। গল্পটি পাঠকালে হাজারো বার আমার কল্পনাজুড়ে ভেসে উঠে সদ্য যৌবন প্রাপ্ত কিশোরী আনার অবয়ব,অনুক্ত হাজারো কথা । রেটিং:৪.৯৯/৫ রকমারি লিন্ক: https://www.rokomari.com/book/50667/আনা-ফ্রাঙ্কের-ডায়েরী
Was this review helpful to you?
or
this is my favourite one and i love this BOOK and ANNA for her tallent
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা কৈশোরের দোরগোড়ায় দাড়িয়ে ডায়েরি লিখা শুরু করে এক জার্মান কিশোরী; নাম তার আনা ফ্রাঙ্ক। পরবর্তীতে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে তার সেই ডায়েরি, অনূদিত হয় পৃথিবীর প্রায় সবকটি ভাষায়, ডায়েরির আলোকে তৈরি হয় অসংখ্য নাটক ও চলচ্চিত্র। অটো ফ্রাঙ্ক ও এডিথের কনিষ্ঠ সন্তান আনা ফ্রাঙ্কের জন্ম ১৯২৯ সালের ১২ ই জুন। তার জীবনকাল ছিল মাত্র পনের বছর ন’মাস। ১৯৪৫ সালের মার্চ মাসে বেরজেন বেলসেন বন্দীশিবিরে চিরদিনের মত নিভে যায় দুর্দান্ত এই লেখিকার জীবনপ্রদীপ। আনার মৃত্যুর পর তার পিতা অটো ফ্রাঙ্কের হাতে তুলে দেয়া হয় একটি লাল রঙের ডায়েরি আর গল্প-উপন্যাস লিখা কিছু টুকরো কাগজ। ডায়েরির মধ্যে ফুটে উঠা মাত্র তের বছর বয়সী এক কিশোরীর চিন্তা ও অনুভূতির গভীরতা অন্যান্য পাঠকের মত অটো ফ্রাঙ্ককেও করেছিল বিস্ময়াভিভূত। মা-বাবা ও বড় বোন মরগেটের সাথে জার্মানির আলো-হাওয়ায় বেড়ে উঠছিল আনা ফ্রাঙ্ক। এরমধ্যে বাধ সাধল হিটলারের ইহুদীবিরোধী জেহাদ। ইহুদী ধর্মাবলম্বী হওয়ায় নিরাপত্তার খাতিরে অন্যান্য ইহুদিদের মত অটো ফ্রাঙ্কও তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে পাড়ি জমান হল্যান্ডে; সময়টা তখন ১৯৩৩ সাল, আর আনার বয়স মাত্র চার বছর্। এর বছর কয়েকের মধ্যেই শুরু হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। হিটলারের নাৎসিবাহিনীরা হল্যান্ড দখল করে ফেলল আর ইহুদিদের উপর জারি হতে থাকল নিত্যনতুন ফরমান। হল্যান্ডের পরিবেশও ক্রমেই বিষাক্ত হয়ে উঠল ইহুদিদের পক্ষে। এমতাবস্থায় ১৯৪২ সালে অটো ফ্রাঙ্ক তার পরিবার নিয়ে গোপন আস্তানায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। শুরু হয় তাদের অজ্ঞাতবাস। দিনের পর দিন সেই গুপ্তমহলে বেড়ে উঠা কিশোরী আনা ফ্রাঙ্ক তার দৈনন্দিন কার্যক্রম, অনুভূতি লিপিবদ্ধ করতে থাকে তার প্রিয় ডায়েরির পাতায়। ১৩ বছর বয়সী আনা ফ্রাঙ্কের পরিবার, আত্মীয়-পরিজন ও প্রচুর বন্ধুবান্ধব থাকা স্বত্তেও আদতে সে ছিল খুবই নিঃসঙ্গ এক কিশোরী। কারণ তার মনের একান্ত কথাগুলো শেয়ার করার মত কেউ ছিলনা তার জীবনে। আর তাই সে তার ১৩ তম জন্মদিনে উপহার পাওয়া ডায়েরিটাকে দিয়েছিল তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুর মর্যাদা, যার সাথে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ভাগ করে নেয়া যায়, যাকে বানানো যায় প্রতিটি সুখদুঃখের অংশীদার। আনা তার এই প্রাণপ্রিয় বন্ধুর (ডায়েরি) খুব সুন্দর একটি নামও দিয়েছিল - কিটি। আর কিটিকে লিখা প্রতিটি চিঠির শেষে তার বিদায় সম্ভাষণ ছিল এরকম - "তোমার আনা”।এর থেকেই বুঝে নেয়া যায় কিটির সাথে আনার সম্পর্ক কতটা গভীর, কতটা আপন। ১৯৪২ সালের ১৪ই জুন আনার সাথে কিটির বন্ধুত্বের শুরু, ঐ দিনই আনা প্রথম আঁচড় কাটে তার প্রিয় ডায়েরির পাতায়। আর কিটিকে লেখা তার শেষ চিঠির সময় ছিল ১ আগস্ট ১৯৪৪, মঙ্গলবার্। প্রায় ২ বছর ২ মাস পর্যন্ত লেখা তার এই ডায়েরিতে উঠে এসেছে তার কৈশোরের নানা দিক। তার স্কুল, প্রিয় বন্ধু, সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন, মায়ের প্রতি বিদ্বেষ, বাবার প্রতি ভালবাসা, মিসেস ফান ডানের প্রতি একরাশ বিরক্তি, ড. ডুসেলের উপর ক্রোধ আর পেটার ফান ডানের সাথে প্রণয়ের নীরব সাক্ষী এই কিটি। যুদ্ধের পরে ‘হেট্ আখ্টেরহুইস’ নামে একটা বই বের করার ইচ্ছাও প্রকাশ পায় আনার সেই ডায়েরিতে। ইতিহাস, গ্রীস ও রোমের পুরাণ, চিত্রতারকাদের ফটো, শিল্প ও শিল্পীদের ইতিহাস, বংশপঞ্জী ও সঙ্গীতে ছিল আনার সীমাহীন আগ্রহ। আর তার সবচেয়ে অপছন্দের বিষয় ছিল অঙ্ক, জ্যামিতি ও বীজগণিত। কিটির মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি আনা মৃত্যুর পরেও বেচেঁ থাকতে চেয়েছিল। বেচেঁ থাকতে চেয়েছিল তার লেখার মধ্যদিয়ে। অকালমৃত্যু তার লেখিকা হওয়ার স্বপ্ন কেড়ে নিলেও তার লেখার মাধ্যমে বেচেঁ থাকার স্বপ্নটা কেড়ে নিতে পারেনি। আনা আজও বেচেঁ আছে সারা পৃথিবীর মানুষের হৃদয়ে, তার লেখা ডায়েরির মাধ্যমে। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ আত্নজীবনী আমার খুব বেশি পড়া হয়নি; যাওবা ছোটবেলায় পড়েছিলাম তার বেশিরভাগই ভুলে গেছি। কিন্তু এই সদ্যকিশোরীর ডায়েরীটা আমার মনে গভীরভাবে দাগ কেটে গেছে। দাগ কাটারই কথা, কেননা শুধু তার লেখনশৈলী নয়, তার ভাবনার গভীরতাও ছুঁয়ে গেছে পাঠকের মন। দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, প্রেম, বন্ধুত্ব, ইতিহাস, জীবনবোধ নিয়ে মাত্র তের বছরের এক কিশোরীর ছিল তার নিজস্ব অভিমত। আনা ফ্রাঙ্কের প্রবল ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিও ছিল বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। ১৯৪৬ সালের ৩ এপ্রিল ‘Het Parool’ নামক সংবাদপত্রে ‘Kinderstem’ ("A Child's Voice") শিরোনামের একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়, যার ভিত্তি ছিল আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি। আর্টিকেলটি প্রকাশকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় ১৯৪৭ সালে এই ডায়েরি ‘Het Achterhuis’ (The Annex) নামে নেদারল্যান্ডে প্রকাশিত হয়। ১৯৫০ সালে প্রকাশিত হয় জার্মানি ও ফ্রান্সে। যুক্তরাজ্যে এর প্রথম প্রকাশ ১৯৫২ সালে। আর ১৯৫২ সালেই ‘Anne Frank: The Diary of a Young Girl’ শিরোনামে ডায়েরিটি যুক্তরাষ্ট্রেও প্রকাশিত হয়। আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি সম্পর্কে নেলসন ম্যান্ডেলার মন্তব্য ছিল – “রোবেন দ্বীপে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি পড়ত। বইটি একই সঙ্গে আমাদের যেমন উৎসাহ দিয়েছে, উদ্দীপনা জাগিয়ে রেখেছে, ঠিক সেভাবেই আমাদের শক্তি দিয়েছে এটা বিশ্বাস করতে, স্বাধীনতা আসবেই।”
Was this review helpful to you?
or
কাহিনি সংক্ষেপ . ১৩ বছর বয়সী একজন কিশোরী, যার চেনা পৃথিবীটা হঠাৎ করেই বদলে যেতে শুরু করে। অ্যানা ফ্রাঙ্ক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভিষীকাময় অধ্যায়ের অনেক বড় একজন সাক্ষী। যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনিশ্চিত দিনগুলোর কথা ডায়েরীতে লিখেছিল নিয়মিতভাবে। সেসময়ের ভয়াবহ দিনগুলো এই কিশোরীর কলমের আঁচড়ে ডায়েরীর পাতায় ফুটে উঠেছে। ডায়েরিটা পড়ে কেঁদে কেটে আকুল হয়েছে গোটা পৃথিবীর মানুষ। . দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরুর পর যখন জার্মান নাৎসীবাহিনী ইহুদি হননে মেতেছিল, তখন আনা ফ্রাংকের পরিবার আমস্টারডামের একটি মৃত্যুকুপে ২৫ মাস লুকিয়ে থেকেও নাৎসীদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি। এই বন্দি জীবনের বর্ণনাই ছিল আনা'র ডায়েরিতে। . জন্মগত ভাবে জার্মান হলেও নাৎসি বাহিনী ক্ষমতায় আসার পর ১৯৩৪ সালে হল্যাণ্ডের রাজধানী আর্মস্টরডেমে চলে আসেন তার পরিবার। নিজের দেশ ছেড়ে আসার একটাই কারণ তারা ছিলো ইহুদি। যদিও ইতিহাসের নথিপত্র ঘেটে দেখা যায় তাদের পরিবার ছিলো অতি মুক্তমনা, কোনো ধর্মের সাথেই তাদের নিবিড় বন্ধন ছিল না বরং তাদের বন্ধুদের তালিকায় ছিলো নানা জাতির নানা ধর্মের মানুষ। বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আনা ও তার পরিবার ১৯৪২ সালের পরপরই দখলদার নাৎসী বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে আত্মগোপন করেন। আত্মগোপনের সময় তার ১৩তম জন্মদিনে উপহার হিসেবে পাওয়া ডায়েরীতে তার জীবনের দিনলিপি লিখতে শুরু করে। আত্মগোপনকালীন জীবনের দুঃসহ অভিজ্ঞতা, কৈশোরে ডানা মেলার উত্তাল রঙিন দিনের বদলে ভ্যাপসা আঁধারে ঘেরা গুমোট জীবন - চমৎকার ভাষায় লিখে গেছে। আনা লিখতে থাকে তার চার পাশের বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা। মাত্র ১৩ বছরের এক কিশোরী ধর্ম সম্পর্কে কতটুকুই জানে? মুসলমান,হিন্দু, খ্রিষ্টান, ইহুদির সে বেঝেইবা কী? তবুও শুধুমাত্র ইহুদি পরিবারে জন্মানোর কারণেই যে তাদের হেনস্তা - এটা তাকে আরো দুঃখী ও সংকুচিত করে তোলে। বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ের নানা ঘটনা, মাসের পর মাস একঘেয়ে ধুসর জীবনযাত্রা, বনের পশুর মতো গুহার গভীরে লুকিয়ে কেবল ধুঁকেধুঁকে বাঁচার চেষ্টার মাঝেও হঠাৎ আলোর ঝলকানির মত উকি দিয়ে যায় কৈশোর প্রেম। এভাবেই ১৯৪৪ সালের পহেলা আগষ্ট পর্যন্ত ছোট ছোট আবেগে মোড়া ঘটনায় ভরে ওঠে তার ডায়েরীর পাতা। এর পর পরই গুপ্তপুলিশ গেস্টাপের হাতে বন্দী হয় অ্যানা ফ্রাঙ্ক পরিবার, থেমে যায় তার ডায়েরী কিটির এগিয়ে চলা। . পাঠ প্রতিক্রিয়া কোন বিখ্যাত ব্যক্তির ডায়েরির কথা মনে হলে, সবার আগে যে নামটি মনে পড়ে - আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি। অন্য যে কোন আত্মজীবনীর সাথে এটার তফাৎ হল, এটা লেখার সময় লেখিকা জানতো না, তার এই ডায়েরীটা প্রকাশিত হবে। কেবল শেষদিকে রেডিওতে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ডায়েরি সংরক্ষন করা হবে - এটুকু শুনে আশা করেছিল, হয়তো তার লেখা ডায়েরিটা একদিন প্রকাশিত হবে। . যে কারণে ডায়েরিটা বিখ্যাত, সে ব্যাপারটা আমাকে তেমন ছুঁয়ে যায়নি। যুদ্ধের সময় জার্মানরা ইহুদীদের কেমন অত্যাচার করেছে, সেই কাহিনি পড়ে আমার চোখে পানি আসেনি। পাকিস্তানিরা এরচেয়ে বহুগুণ বেশি অত্যাচার আমাদের করেছে। - বইটা পড়তে পড়তে এটা ছিল আমার ধারণা। পড়ে শেষ করার পর ভাবলাম, একটু রিসার্চ করে দেখি, জার্মানরা কেমন অত্যাচার করেছিল। . জার্মানির ছোট্ট শহর বের্গেন। এখানেই রয়েছে ইতিহাসের দগদগে ক্ষত কুখ্যাত বের্গেন-রেলসেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। নাৎসি অধিকৃত জার্মানিতে যুদ্ধবন্দিদের মরণফাঁদ সৃষ্ট ও পরিচালিত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলোর অন্যতম বের্গেন-রেলসেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্প । এই স্থানে অন্তত ৭০ হাজার তাজা প্রাণ ঝরে পড়েছে ২য় বিশ্বযুদ্ধের বছরগুলোতে। কীভাবে পরিকল্পনা করে, ফ্যাক্টরিতে মুরগি প্রসেসিং-এর মতো ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্টাইলে খুন করে সুখ পেতে পারে - তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইহুদি গণহত্যার নিদর্শন না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। . ১৯৩৯ সালেই এক কুখ্যাত স্থাপনার যাত্রা শুরু হয় যুদ্ধবন্দীদের বন্দী শিবির হিসেবে, যেখানা আনা হয়েছিল ফ্রেঞ্চ, পোলিশ,রেলজিয়ান ও রাশান বন্দীদের। কিন্তু বন্দি শিবিরের যথাযথ সুবিধা ছিলোনা। অপ্রতুল খাবার, কনকনে ঠাণ্ডা, আদিকালের বাসস্থান ফলে ১৯৪১ সালের জুলাইতে পাঠানো ২০ হাজার রাশান বন্দীর ১৮ হাজারই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ১৯৪৩ সালে হিটলারের অন্যতম দোসর হাইনরিখ হিমলারের নির্দেশে এই বন্দীশালাকেই পরিণত করা হয় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে, আনা হয় হাজার হাজার ইহুদী ও রাশান বন্দীদের। ১৯৪৫ সালের ১৫ এপ্রিল কানাডা-ব্রিটিশ যৌথবাহিনীর হাতে এই ক্যাম্পের পতন ঘটে। তখন যৌথ বাহিনী প্রায় ৬০ হাজার বন্দীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হন যাদের অধিকাংশই ছিলো মারাত্মক অসুস্থ আর ১৩ হাজার শবদেহ ছিলো মাটি চাপা দেবার অপেক্ষায়। বের্গেন-বেলসেন ক্যাম্পে নিহত হয়েছিলো প্রায় ৭০ হাজার বন্দী, যার মধ্যে ৩০ হাজার ইহুদি, প্রায় সমান সংখ্যক রাশান। সেই সাথে প্রচুর সমকামী, জিপসি আর নাৎসি বিরোধী স্বদেশপ্রেমী জার্মান। . সত্যি বলতে কী, এই ডায়েরিতে অত্যাচারের বর্ণনাটা তেমন আসেইনি। কারণ অত্যাচারিত হবার আগেই আনা'র ডায়েরীটা হাতছাড়া হয়ে যায়।। . যেটা দেখে প্রচন্ড মুগ্ধ হয়েছি, সেটা হল ছোট্ট মেয়েটার ব্যক্তিত্ব। ওর তীব্র জীবনবোধ, আত্ম-উপলব্ধি আর বুদ্ধিমত্তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। সেই সাথে ওর লেখক সত্ত্বাকেও আমার খুব ভাল লেগেছে। ছোট একটা মেয়ে এত গুছিয়ে ডায়েরী লিখেছে যা দেখে আমার মনে হয়েছে, আমিও যদি এভাবে ডায়েরী লিখতে পারতাম! ওর লেখা কিছু কিছু অংশ পড়ে মনে হচ্ছিল, এইটুকু মেয়ের জীবনবোধ এত্ত প্রবল কী করে হয়! যেমন - "কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও আমি ভেঙ্গে পড়িনি, আমার আদর্শকে জলাঞ্জলি দিইনি। জানি, বর্তমান অবস্থায় সেগুলোর বাস্তবায়ন অসম্ভব, তবুও সযত্নে তাদের বুকের ভেতর লালন করছি। কারণ আমি এখনো বিশ্বাস করি মানুষের ভিতরটা নির্মল সুন্দর। এই বিশ্বাসই আমার স্বপ্নের ভিত্তি, আমি তো আমার স্বপ্নগুলোকে এমন কিছুর উপর দাঁড় করাতে পারি না, যা কেবল মৃত্যু - ধ্বংস দিয়ে গড়া।" . কী পরিপক্ক স্মার্ট ভাবনা! মেয়েটা তার মা কিংবা আর দশটা নারীর মত কেবল ঘর সংসার করে জীবন কাটিয়ে দিতে চায়নি। সে চেয়েছিল, মৃত্যুর পর বহুদিন বেঁচে থাকবে। তাতে যে সে সফল, সেটা তো বলাই বাহুল্য! এই ছোট্ট মেয়েটা তার বাচ্চা বয়সের প্রেম আর তার পরবর্তী সময়কার বিবেকবোধ, আত্মগ্লানি - এই সবকিছুই খুব পরিণত ছিল। অনুভূতিগুলি ব্যক্তও করেছে পাঁকা লেখিয়ের মত। . পড়ার সময় কিছু কিছু জায়গায় আৎকে উঠেছি। লুকিয়ে থাকার ওই ভয়াবহ সময়টায় নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে যদি ডায়েরিটা সত্যিই পুড়িয়ে ফেলা হত? তাহলে কী হত? এই ইতিহাসের কথা আমার হয়তো জানাই হত না। . বইয়ের পরিশিষ্টতে বলা আছে হল্যান্ড মুক্ত হবার মাত্র দুইমাস আগে নির্যাতিতা আনা ফ্রাঙ্ক মৃত্যুবরণ করে। জানতাম না, ঠিক কী ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়ে ও মারা গেছে। এত কষ্ট লেগেছে মেয়েটার জন্য যে খুঁজে পেতে বের করলাম ও কী ধরনের নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিল। . জানলাম। জেনে শিউরে উঠলাম আবার। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা মতে জানা গেছে বের্গেন-বেলসেন বন্দী শিবিরের সব চেয়ে কমবয়সী বন্দী ছিল আনা ফ্রাঙ্ক। শিশুবন্দীদের গ্যাস চেম্বারে নিয়ে যাবার ঘটনায় মেয়েটা খুব কষ্ট পেয়েছিল। চরম নিষ্ঠুরতায় বন্দিদের প্রত্যেকেই পাথর ভাঙ্গা ও পরিবহনের অত্যন্ত ক্লান্তিকর কাজ করতে হত। কনসেণ্ট্রেশন ক্যাম্পের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেকের মাথা কামানো থাকতো। হাতের এক জায়গায় বন্দী নম্বরটি উল্কির মাধ্যমে খোদাই করে দেওয়া হয়েছিল। . ১৯৪৫ সালের মার্চ মাসে টাইফাস রোগ এই শিবিরেও ছড়িয়ে পড়ে মহামারী আকারে। শেষ পর্যন্ত এই রোগেই মাত্র পনেরো বছর বয়সী আনা মারা যায়। তার বোন মার্গটও একই সময়ে পৃথিবী ছেড়ে যায়। কেবল বেঁচে ফেরেন তাদের বাবা অটো ফ্রাঙ্ক। তিনিই আমস্টারডমের সেই বন্দীশালা থেকে উদ্ধার করেন মেয়ের ডায়েরী ও অন্যান্য স্মৃতিবহুল সংগ্রহ। তাঁর প্রচেষ্টাতেই দিনলিপিটি ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত হয়। এটি মূল ওলন্দাজ ভাষা থেকে পরবর্তীকালে ১৯৫২ সালে প্রথম বারের মতো ইংরেজিতে অনূদিত হয়। এর ইংরেজি নাম দেওয়া হয় দ্য ডায়েরি অফ আ ইয়াং গার্ল। কিন্তু আমার মনে হয় ডায়েরীটার নামকরণ আনার রাখা নামেই করা উচিৎ ছিল। ও তার ডায়েরিটার নাম রেখেছিল, "দ্য সিক্রেট অ্যানেক্স"। . সেবার অনুবাদ নিয়ে নতুন কিছুই বলার নাই। সাবলিল ভাবানুবাদ পড়ে মনেই হয়নি এই বইটা ওলন্দাজ থেকে ইংলিশ, এবং শেষে ইংলিশ থেকে বাংলায় অনুদিত হয়েছে। কিন্তু তবুও বলতে বাধ্য হচ্ছি, এরকম একটা বিখ্যাত ডায়েরি কাটছাঁট না করলে কি চলছিল না? মূল বইটা আমি দেখেছি। বেশ মোটাসোটা। সেই তুলনায় সেবার এই রূপান্তরটা ১৪০ পৃষ্ঠা! কেন?
Was this review helpful to you?
or
'আমি যেমন তা থেকে অথবা আমি যা হতে চাই তা থেকে ভিন্ন কিছু হওয়ার একটা ভোঁতা চাপা বাসনা নিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়ি।' ঠিক তার দুই লাইন নিচে লেখা ছিল - 'মাপ করো। লিখে ফেলে সেটাকে আমি কাটতে চাইনা এবং কাগজের এই অভাবের দিনে আমি কাগজ ফেলে দিতে পারব না।' . প্রচন্ড হৃদয়স্পর্শী এই দুটো বাক্য লিখেছিল ১৯২৯ সালের ১২ জুন জন্ম নেয়া ইহুদি কন্যা আনা ফ্রাঙ্ক তার কৈশোরকালে। অবশ্য আনা ফ্রাঙ্ক আজীবন কৈশোরে থেকে যাবে। বয়স কে সে বেঁধে রেখেছিল লাল ডোরাকাটা একটা ডায়েরীর পাতায়। নিজের ত্রয়োদশ জন্মদিনে পাওয়া সেই ডায়েরীর নাম সে দিয়েছিল 'কিটি'। . মাত্র ৪ বছর বয়সে জন্মভূমি জার্মানি ছাড়তে বাধ্য হয় আনা। তার বাবা অটো ফ্রাঙ্ক, মা এডিথ আর বোন মারগটের সাথে। অপরাধ ছিল তারা ইহুদি। আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরী জুড়ে একটা ব্যাপার প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়। 'কারণ আমরা ইহুদি বলে...'। কিশোরী আনা যেন বুঝে নিয়েছিল ইহুদি আর মানুষ একসাথে বাঁচতে পারেনা। দীর্ঘ ২৫ মাস আলো অন্ধকারে আত্মগোপনে ছিল আনা ফ্রাঙ্ক ও তার পরিবার। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ১৯৪৪ সালের ৪ আগস্ট বাবার অফিসকক্ষের পিছনের ওই বন্দীশালা থেকে আটক করা হয় তাদের। নিয়ে আসা হয় জার্মানির ছোট্ট শহর বের্গেনে। এখানেই রয়েছে ইতিহাসের কালো অধ্যায়। কুখ্যাত বের্গেন- রেলসেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। নাৎসি অধিকৃত জার্মানিতে যুদ্ধবন্ধীদের মরণফাঁদ সৃষ্ট ও পরিচালিত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলোর অন্যতম বের্গেন-রেলসেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্প । এই স্থানে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ মারা যায় যুদ্ধের দিনগুলোয়। যার মাঝে অন্যতম ছিল আনা ফ্রাঙ্ক। . যুদ্ধের ভয়াবহ মরণদশা থেকে ফিরে আসেন কেবল অটো ফ্রাঙ্ক। ফিরে আসেন সেই 'গুপ্তমহলে'। দুই শুভাকাঙ্ক্ষী এলি এবং মিপ অটো ফ্রাঙ্কের কাছে তুলে দেন তার ছোট সন্তান আনার লাল মলাটের ডায়েরী। অটো ফ্রাঙ্কের একক প্রচেষ্টায় ১৯৪৭ সালে ডাচ এবং ১৯৫২ সালে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয় আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরী। যার ইংরেজি নাম ছিল 'দ্যা ডায়েরী অফ আ ইয়াং গার্ল।' ... প্রতিক্রিয়া - . ১৩ বছরের কিশোরী। একজন প্রচন্ড আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মেয়ে আনা। তার ডায়েরী লেখার শুরু থেকে সবটাই একটা গুপ্ত কুঠুরি ঘিরে। ডায়েরীর পাতায় পাতায় ছিল স্বপ্ন, আবেগ, বাস্তবতা আর ভবিষ্যতের অসাধারণ সম্মেলন। দেখে বোঝার উপায় ছিল না এটা কোন কিশোরীর লেখা। 'আমার মতে মা হওয়া উচিত এমন' কিংবা 'আমাদের নেতা উইনস্টন চার্চিল' এমন অজস্র বাক্যের দ্বারা আনা ফ্রাঙ্ক বুঝিয়েছে দিনগুলি কতটা খারাপ হলে একজন কিশোরী পরিপক্ব হতে পারে। তার জীবনে প্রেম এসেছিল। কিন্তু স্বভাবসুলভ কিশোরী মন তা অস্বীকার করেছে। 'তোমার মনে হবে আমি প্রেমে পড়েছি কিন্তু তা নয়' অথবা 'আমি ঠিক হিংসা করছিনা তবে ভেবে আনন্দ পাই' এমন দ্বিমুখী বাক্য পাঠককে নিয়ে যাবে আনার মনের অনেক কাছাকাছি কোন স্থানে। . কৈশোরের অন্যতম প্রধান দিক হল কল্পনা, স্বপ্ন দেখা। আনাও কখনো ব্যতিক্রম ছিল না। 'যুদ্ধ শেষে' 'যুদ্ধ শেষ হলে' বাক্যগুলোয় আনা ফ্রাঙ্ক শিখিয়েছে কিভাবে স্বপ্ন দেখতে হয়। কিভাবে বেঁচে থাকতে হয়। কিন্তু একপর্যায়ে সেও মেনে নেয় বাস্তবতা। হেরে যায় নাৎসিবাদ আর একজন সাম্রাজ্যবাদী এডল্ফ হিটলারের কাছে। ফান ডান পরিবারের সাথে টুকরো বিরোধ, প্রচন্ড পিতৃপ্রেম, রেশনের দুরবস্থা, খাদ্য বস্ত্রের সংকট সবকিছুর অসাধারণ উপস্থাপনা ২য় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে নির্যাতিত মানুষের পূর্ণ চিত্র এনে দিবে যে কারোর কাছে। আপনাকে এই ডায়েরী রেখে আসবে সেই ভয়াবহ দিনের কোন এক সংকীর্ণ আর ভীত পরিবেশে আত্মগোপন করা পরিবারের নোংরা ঘরে। ... এক নজরে - বই - আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরী অনুবাদ - প্রফেসর মোস্তফা ফাতিন। প্রকাশনা - দি স্কাই পাবলিশার্স। প্রকাশকাল - জুন ২০১২ মুল্য - ২০০/- রেটিং - ৪/৫।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা মাত্র ১৩ বছর বয়সের এক সদ্য কিশোরী আনা। এই বয়সেই ডায়েরি লিখতে শুরু করে সে। টানা লিখে যায় ২ বছর ২ মাস ধরে। স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে লেখক হবে। বিশ্ব জোড়া নাম হবে তার। নিজের লেখা দিয়ে অমর হয়ে থাকবে সবার মাঝে। কিন্তু বড় হওয়া হলো না তার। ডায়েরি তে শেষ লেখার ঠিক সাত মাস পরেই তাকে ছাড়তে হয় এই পৃথিবী। কিন্তু বিধাতা তার ইচ্ছে পূরনন করে দেন। তার লেখা সেই ডায়েরি তাকে যুগ যুগ ধরে অমর করে তোলে বিশ্ববাসীর কাছে। আনাফ্রাঙ্কের জন্ম ১৯২৯ সালের ১২ জুন,জার্মানি তে। বাবা অটো ফ্রাঙ্ক ও মা এডিথ। আনার বড় বোন মারগটের জন্ম ১৯২৬ সালে। সে সময় জার্মানি তে হিটলার মাথা তুলছে সগর্বে। চারদিকে বিভৎস অত্যাচার আর হত্যাজজ্ঞ। ইহুদীদের উপর অত্যাচারের মাত্রা বেশি। দলে দলে সবাই দেশ ছাড়ছে। অটো ফ্রাঙ্কও পরিবার নিয়ে দেশ ছাড়লেন। আনা তখন মাত্র ৪ বছর। কিন্তু তার ছয়বছর পর হল্যান্ডেও হিটলার বাহিনীরর আগমন ঘটল। আনার বোন মারগট ছিল দুর্দান্ত সুন্দরী। নাৎসী বাহিনীর দৃষ্টি পড়ল তার উপর। অটো ফ্রাঙ্কের কাছে শমন এলো, মারগট লে বন্দীশিবিরে পাঠানোর জন্য। কিন্তু অটো ফ্রাঙ্ক তাতে রাজি হলেন না। নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পেছনে বানালেন গোপন আস্তানা। তারপর পরিবার নিয়ে আত্মগোপন করলেন। সেই আত্মগোপনের দুঃসহ যন্ত্রনায় আনা তুলে নিল কলম। লিখতে শুরু করল তারপর দিনলিপি। এইভাবে কেটে গেল ২৫ মাস। তারপর একদিন তারা ধরা পড়ল নাৎসী বাহিনীর হাতে। জার্মানির এক বিভৎস বন্দিশিবিরে ১৯৪৫ সালে মারা যায় আনার মা এডিথ। আনা আর মারগট ছিল বহু দূরের আরেক বন্দি শিবিরে। সেখানে ১৯৪৫ এর ফেব্রুয়ারির শেষ অথবা মার্চের শুরু তে মারা যায় মারগট। আর সেই মার্চেই ওই বন্দি শিবিরের মারা যায় আনাফ্রাঙ্ক। এই বন্দিশিবির থেকে একমাত্র বেচে ফিরতে পেরেছিলেন আনার বাবা অটো ফ্রাঙ্ক। আর তখনই তাদের দুই শুভাকাঙ্ক্ষীর হাতে তুলে দেন লাল ডোরাকাটা মলাটের একটা ডায়েরি। প্রকাশ পায় আনাফ্রাঙ্কের ডায়েরি। পাঠ প্রতিক্রিয়া : আনার দিন লিপি শুরু হয় ১৪ জুন,১৯৪২ ( রবিবার) থেকে। শেষ হয় ১ আগষ্ট, ১৯৪৪। আনাফ্রাঙ্কের ডায়েরি পড়তে গিয়ে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। তার লেখার পরিনত ভাব দেখে বিশ্বাস করা কঠিন এটি কোন তের বছরের মেয়ের লেখা। পরিস্থিতি মানুষ কে পরিনত করে। আনার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই অত্যাচার,কঠিন জীবন পরিবেশ,তাকে অনেক কিছু বুঝিয়েছিল। তাই খুব সহজেই সে বর্ননা করে গেছে সেই সময়ের বিভৎসতা কে। পাশাপাশি তার লেখায় ফুটে উঠেছে দর্শন,এসেছে ইশ্বর,মানবচরিত্র, এমন কি প্রেম- অনুভূতি। সেই সাথে তৎকালীন ইতিহাস, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খন্ডচিত্র। সত্যিই অভিভূত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। বেচে থাক আনাফ্রাঙ্কের দিনলিপি।আর সেই সাথে চিরন্তন অমর হয়ে থাক আনাফ্রাঙ্ক। বইয়ের টুকিটাকি নাম : আনাফ্রাঙ্কের ডায়েরি ধরন : আত্মজীবনী মূলক অনুবাদ গ্রন্থ মূল্য : ২০০ টাকা
Was this review helpful to you?
or
"যে নিজে লেখক না, সে জানে না লেখা জিনিশটা কী এক অপূর্ব ব্যাপার। আমার নিজের লেখার সবচেয়ে ভালো এবং তীব্রতম সমালোচক আমি নিজেই। আমি জানি কোনটা সুলিখিত আর কোনটা নয়। আমি একেবারেই আঁকতে পারি না বলে আগে দুঃখ করতাম, কিন্তু অন্তত লিখতে পারি বলে আমি ঢের খুশী। বই লেখা বা কাগজে লেখার গুণ যদি আমার নাও থাকে, সেক্ষেত্রে আমি নিজের জন্য লিখতে পারি"। মানুষ চিরকালই ক্ষমতালোভী আর ক্ষমতাপিপাসু। সেই সভ্যতার শুরু থেকে এখন অবধি ক্ষমতার লোভে মানুষ তার নৃশংসতা আর বর্ববরতার অন্যতম নিদর্শন গুলো রেখে গেছে। ক্ষতবিক্ষত, ধ্বংস আর আহত করেছে স্রষ্টার সাজানো পৃথিবীটাকে। রক্তের ভার বইতে না পেরে নদী বদলেছে তার আপন পথ, নীলাভ আকাশটা মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখে মেঘবতীর কাছে যেয়ে অঝোরে কেঁদেছে হাজারবার, মাটি তার নিজের বুকে শুয়ে থাকা মানুষগুলোর স্বজনদের কষ্টে কেপে কেপে উঠেছে বারংবার, তবুও থামেনি মানুষের ক্ষমতা লোভ। তাই ইতিমধ্যেই দুই দুইটা বিশ্বযুদ্ধের কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি। আজকের রিভিউটাও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপর ভিত্তি করেই। "বিবেক শান্ত থাকলে মানুষের শক্তি বাড়ে"। একজন সদ্য কিশোরী- বয়স তার তখন ঠিক তেরো বছর। এই বয়সে ডায়েরি লিখতে শুরু করেছিলো সে। দিনে দিনে কেটে গেছে দুই বছর দুই মাস। পনেরো বছর দুই মাস বয়স পর্যন্ত লিখতে পেরেছিলো সেই কিশোরী। কৈশোরকালের সৌন্দর্য উপভোগ না করে নৃশংসতা আর বর্বরতার বাস্তবচিত্র দেখেছিলো কিশোরী। ডায়েরির পাতায় শেষ আঁচড় টানার ঠিক সাত মাস পর এই পৃথিবীর সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়েছিলো মেয়েটিকে। ফ্যাসিস্ট নাৎসী বাহিনীর নির্মমতায় পৃথিবীর মায়াজাল ছিড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলো কিশোরী। চলে গেছে সে কিশোরী কিন্তু রেখে গেছে তার কালজয়ী অমর দিনলিপি। এ হলো সেই কিশোরী সেই ডায়েরি, দুই বছর দুই মাসের দিনলিপি- 'আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি'। 'আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি' নাম থেকেই বুঝা যায় বইটি আনা ফ্রাঙ্ক নামে কোন একজনের নিজের লেখা আত্মস্মৃতিকথা। ইহুদি ধর্মের হওয়াতে হিটলারের নাৎসী বাহিনীর রোষানলে পড়ে আনা ফ্রাঙ্কের পরিবার। এক গুপ্ত আস্তানায় কাটায় প্রায় পঁচিশ মাস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে আর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিলো আনাকে। সেই পঁচিশ মাসের বর্ণনাই মূলত এই বইটা। "একজন খৃষ্টান কিছু করলে তার জন্য সে দায়ী, কিন্তু একজন ইহুদি কিছু করলে তার দায় ইহুদিদের ঘাড়ে পড়বে"। কাহিনীচিত্র : আনা ফ্রাঙ্কের বাবা অটো ফ্রাঙ্ক আর মা এডিথ আর আনার বড় বোন মারগট। ধর্মে ইহুদি আর জার্মানীর বাসিন্দা। আনার জন্ম ১৯২৯ সালে যখন হিটলার সবেমাত্র জার্মানীর বুকে মাথাচাড়া দিয়ে হুংকার দিচ্ছে। চারিদিকে অত্যাচার আর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে শুরু করেছে তার নাৎসী বাহিনী। এ যেন সরাসরি ইহুদিদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ। অনেকের ন্যায় নিজের দেশ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে হল্যান্ড চলে যায় অটো ফ্রাঙ্ক ও তার পরিবার। আনা তখন চার বছরের শিশু। হল্যান্ডের আলো বাতাসে ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠছে আনা। ছয়টা বছর কেটে যায়। পৃথিবী দখলের দুর্বার স্বপ্নে বিভোর হিটলার ও তার নাৎসী বাহিনী শুরু করে বিশ্বযুদ্ধ। এটিই পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নামে পরিচিত। হিটলারের নাৎসী বাহিনী হল্যান্ড দখল করে। শুরু হয় ইহুদীদের উপর অত্যাচার। ইহুদীদের ধরে ধরে পাঠানো হয় বন্দীশিবিরে। ফ্রাঙ্ক পরিবার হল্যান্ডেও নিরাপদ আশ্রয় পেলো না। ১৯৪২ সালের মাঝামাঝি সময়ে নাৎসী বাহিনীর কাছ থেকে সরাসরি শমন এলো অটো ফ্রাঙ্কের নামে। শমনটা ছিলো বড় মেয়ে আনার বড় বোন মারগটের নামে। মারগট তখন ষোড়শী সুন্দরী। নাৎসী বাহিনীর অফিসারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো তার সৌন্দর্য। কিন্তু অটো ফ্রাঙ্ক সে সব পাত্তা না দিয়ে নিলেন এক চরম ঝুঁকি। নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পেছনদিকে এক গোপন আস্তানায় আশ্রয় নিলেন সপরিবারে। সঙ্গে রইলো আরো একটি পরিবার। এই সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন তার অতি কাছের কিছু ইংরেজ বন্ধু। আনা ফ্রাঙ্কের বয়স তখন তেরো বছর এক মাস। এক সদ্য কিশোরী। যে বয়সটায় তার থাকার স্কুলে। প্রতিদিন নিত্যনতুন জ্ঞানে নিজেকে পরিপূর্ণ রাখতে। পৃথিবীর খোলা আলাও-বাতাসে যার দিন কাটাবার কথা ছিলো- সেই কিশোরী আনা ফ্রাঙ্ককে বরণ করে নিতে হলো এক ঘুপচি ঘরের অন্ধকার জীবন। রাতের বেলা যেখানে বাতি জ্বালানো নিষেধ। দিনের বেলা জানালা খোলা নিষেধ। কাশি দিতে হলেও মুখে হাত চেপে বা মুখে বালিশ গুঁজে যাতে আওয়াজ না হয়। এমনকি বাথরুমে পানি খরচ করতেও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার। সে এক অপরিসীম সহ্যাতীত সময়। এইসময় কলম উঠে এলো সদ্য কিশোরী আনা ফ্রাঙ্কের হাতে। নিজের মনের কথা, সেই সময়ের বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ হতে শুরু করলো কাগজের পাতায় পাতায়। অনেক কষ্ট, অনেক ত্যাগ আর সেই সময়ের কষ্টার্জিত জীবন প্রণালীর দিনলিপি একে লিপিবদ্ধ হতে থাকলো তার দিনলিপিতে। না শুধু কষ্টই নয় আছে বন্দী জীবনে কাউকে কাছে পাবার সুখ কাউকে ভালোবাসার সুখ। হ্যা সদ্য কিশোরী আনা নিজেকে জড়িয়ে ফেলে ফান ডান পরিবারের ছেলে পেটারের সাথে। এভাবেই একে একে পঁচিশটা মাস কেটে গেলো। চারিদিকে হিটলার বাহিনীর অত্যাচার। সেই অত্যাচারের খবরে আতঙ্ক আর ভয়ে কেপে উঠছে ফ্রাঙ্ক পরিবার। ভয়ে আতংকে কাতর হয়ে নিশ্চুপ হয়ে পড়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। কারণ বের হলেই নাৎসী বাহিনীর হাতে ধরা পড়া আর এরপরেই সেই আতংকময় বন্দীশিবির। যেখান থেকে ফিরে আসার কোন সম্ভাবনা নেই। হয়তো এভাবেই নীরবে নিশ্চুপে খেয়ে না খেয়ে ভয়ে আর আতংকে যুদ্ধ শেষ অবধি এই ঘুপচি রাজত্বেই বাস করতে পারতো ফ্রাঙ্ক পরিবার কিন্তু নাহ ভাগ্য সহায় হলো না। ১৯৪৪ সালের ৪ অগাস্ট, সেখানে হানা দিলো নাৎসী বাহিনী। সবাইকে ধরে পাঠানো হলো বন্দীশিবিরে। মারগট আর আনাকে পাঠানো হলো বেরজেন-বেলশেন নামক বন্দীশিবিরে। ১৯৪৫ সালের মার্চ মাসে ওই বন্দীশিবিরেই শেষবারের মতো চোখ বুজেছিলো পনেরো বছর নয় মাসের সেই কিশোরী- আনা ফ্রাঙ্ক। বন্দীশিবিরেই মারা যায় আনার মা আর বড় বোন মারগট। ফিরতে পারেনি অন্য পরিবারে কেউও। মৃত্যুর অন্ধকার কুপ থেকে ফিরে এসেছিলেন শুধু একজন। এই ডায়েরীর কথা দুনিয়াবাসীকে জানানোর জন্যই হয়তো তার ফেরা। তিনি অটো ফ্রাঙ্ক। আনা আর মারগটের বাবা। তার দুই শুভার্থী এলি আর মিপ তুলে দিলেন অটো ফ্রাঙ্কের হাতে লাল ডোরাকাটা মলাটের একটা ডায়েরি আর কিছু গল্প অনুগল্প প্রবন্ধ সম্বলিত কিছু কাগজপত্র। এগুলো ছিলো আনার লেখা। আনার দিনলিপি। আনার গল্প-উপন্যাস-স্মৃতিকথা। 'আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরী' নামে প্রকাশিত হবার পরই শুরু হলো আসল ইতিহাস। পুরো পৃথিবী চমকে গেলো এক তেরো বছরের কিশোরীর কলমের আঁচড়ে। এই দিনলিপি পরবর্তীতে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ভাষায়, তৈরী হয়েছে চলচ্চিত্র, মঞ্চস্থ হয়েছে নাটকে। লেখকপ্রসঙ্গ : সেই শুরু থেকেই লেখিকা হওয়ার স্বপ্ন ছিলো আনা ফ্রাঙ্কের। তার স্বপ্ন ছিলো এমন কিছু করার- যাতে সে মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকতে পারবে- সাধারণ মানুষের অন্তর জুড়ে। নশ্বর পৃথিবীকে সে ছেড়ে গেছে কিন্তু নশ্বর পৃথিবী তাকে ছাড়ে নি। আনা আজো বেঁচে আছে পাঠকের হৃদয়ে। বই থেকে আনার একটা উক্তি তুলে ধরা হলো "মৃত্যুর পরেও আমি চাই বেঁচে থাকতে। কাজেই ইশ্বরদত্ত এই ক্ষমতা নিজেকে ফুটিয়ে তোলার, লেখার, আমার অন্তরের সব কিছু ব্যক্ত করার এই সম্ভাবনা- এর জন্য আমি কৃতজ্ঞ"। অনুবাদপ্রসঙ্গ : এই বইটার আমার জানামতে অসংখ্য অনুবাদক আছে। বইটা কিনতে গেলে দেখতে পাবেন কয়েকজনের অনুবাদে আছে এই বইটা। আমি ২০০৪ সালে প্রথম এই বইটা পড়ি তাও প্রথম ২০ পৃষ্ঠা ইংরেজিতে। ইংরেজীটা এতোটাও কঠিন ছিলো না। একেবারেই সহজ সাবলীল। তারপর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ২০১১ সালে আবার পড়ি ইংরেজী পিডিএফ। তখন একটু কঠিনই মনে হয়েছিলো হয়তো অন্য অনুবাদকেরটা পড়েছিলাম এরপর ২০১৪ সালে পড়ি বাসায় থাকা বাংলা একটা অনুবাদ যেটা ২০০৪ সালে কেনা হয়েছিলো। অনুবাদক এনায়েত করিম। মোটামুটি ভালোই অনুবাদটা। একেবারে খারাপও না আবার অতটা ভালোও না। তবে শব্দচয়ন আমার পছন্দ হয় নি। পড়তে পারেন ভালো লাগবে। এছাড়া প্রফেসর মোস্তফা ফাতিন, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, ইসমাইল কাদেরী নামে অন্য তিনজন অনুবাদকের নাম শুনেছি কিন্তু কেমন বলতে পারলাম না। কিছু ভালো লাগা কথা : # আমাকে ভালো হতে হবে নিজের চেষ্টায়, কাউকে দেখে নয়, কারো সদুপদেশ শুনে নয়। তাহলে এরপর আমি আরো বেশী জোড় পাবো। নিজের কাছ থেকে ছাড়া দ্বিতীয় আর কাছ থেকেই বা আমার সান্ত্বনা মিলবে...? # আমাদের 'মানুষ' হওয়া'র, পরকালে ঝরঝরে হওয়ার, খাওয়াদাওয়ার যা কিছু সমস্যা আছে এসব একেবারেই অন্যরুপ নিতো যদি আমরা পুরোপুরি দিকখোলা আর অমায়িক হতাম এবং পরের দোষ ধরার জন্য সবসময় মুখিয়ে না থাকতাম'। # বাইরে বেরোও, মাঠে যাও, উপভোগ করো প্রকৃতি আর রোদ্দুর, ঘরের বাইরে গিয়ে আবার ফিরিয়ে আনো সে সুখ তোমার আপনাতে আর ইশ্বরে। নিজের চারপাশে যতটা সৌন্দর্য আছে এখনো তার চিন্তা করো, চেয়ে চেয়ে এইসব দেখো, তাহলেই তুমি আবার খুঁজে পাবে তোমার আপনাকে আর ইশ্বরকে আর তখিন ফিরে পাবে মানসিক স্থৈর্য, তুমি সুখী হবে। # যে নিজে সুখী, সে অন্যদেরও সুখী করবে। যার সাহস আর বিশ্বাস আছে সে কখনো দুঃখকষ্টে মারা পড়বে না। # যারা জেলখানায় বা হাসপাতালে থাকে তারা দিন গোনে কবে আবার ছাড়া পেয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে। # যেসব লোকের কোন একটা ধর্ম আছে, তাদের খুশী হওয়া উচিত; কারন স্বর্গীয় বস্তুতে বিশ্বাসী হওয়ার সুকৃতি সকলের থাকে না। # যদি রোজ রাত্রে ঘুমাবার আগে লোকে একবার মনে করে দেখে সারাদিন সে কী করেছে এবং ভেবে দেখে তার মধ্যে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ- তাহলে প্রত্যেকেই কত মহানুভব আর কত ভালো হতো। # তরুন-তরুণীরা যদি ইচ্ছে করে তাহলে তারা এর চেয়ে বড়, এর চেয়ে সুন্দর এবং এর চেয়ে ভালো দুনিয়া গড়তে পারে- সে ক্ষমতা তাদের হাতের মুঠোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ; কিন্তু তারা সত্যিকার সৌন্দর্যের বিষয়ে না ভেবে ওপরকার জিনিশগুলো নিয়েই ব্যস্ত। #অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে যৌবন বার্ধক্যের চেয়েও নিঃসঙ্গ। ভাবতে পারেন আমি হয়তো রিভিউ লিখতে যেয়ে পুরো স্মৃতিকথাই তুলে ধরেছি। আসলে এক অর্থে তা সত্যি আর অন্য অর্থে ভেতরের লেখাগুলো না পড়লে ঠিক বুঝতে পারবেন না পরিবেশ পরিস্থিতি মানুষকে কিভাবে কতদ্রুত বদলে দেয়। সেই সদ্য কিশোরী আনা হঠাৎ করেই গম্ভীর আনাই পরিবর্তিত হয়। দর্শন, ইশ্বর, মানবচরিত্র এমনকি প্রেম-প্রকৃতি-জীবনবোধ নিয়েও নির্দ্বিধায় লিখে গেছে আনা ফ্রাঙ্ক। হ্যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পুরো ইতিহাস এখানে নেই কিন্তু একটি পরিবার আপনাকে ভাবাতে বাধ্য করবে কিভাবে বাকি পরিবারগুলো ওই সময় বেঁচে ছিলো। স্টিভেন স্পিলবার্গের একটা মুভি আছে 'দ্যা সিন্ডলার্স লিস্ট'। একজন ইংরেজ ব্যবসায়ী নিজের টাকাপয়সা দিয়ে ইহুদিদের বাচায়। ওই মুভিতে একটা প্যান শট যা সেই ছোটবেলায় দেখেছিলাম কিন্তু এখনো ভাবায় আমাকে। শটটা ছিলো এইরকম প্যানিং শটে একটি শহরের ধ্বংসস্তুপের প্রতিচ্ছবি দেখাচ্ছে। পুরোটা দৃশ্য সাদাকালোতে দৃশ্যায়ন করা। খুব মনোযোগ দিয়ে তাকালে দেখা যায় একটি বাচ্চা মেয়ে লাল ফ্রক পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবকিছুই বিবর্ণ শুধু মেয়েটির জামা লাল। নৃশংসতা আর বর্বরতা বুঝানো হয়েছিলো আমার ধারনা। আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরী বইটাও অনেকটা এই শটের মতোই। যেহেতু আত্মস্মৃতিকথা তাই অনেকেরই বিরক্ত লাগবে বইটা এইটাই স্বাভাবিক। তবে এই ভেবে পড়তে পারেন যে আপনি সেখানে সেই তেরো বছরের কিশোর/কিশোরী হলে কি করতেন। হ্যাপি রিডিং।
Was this review helpful to you?
or
এক সদ্যকিশোরী। মাত্র তেরো বছর বয়স তার। ঠিক তেরো বছর বয়সে ডায়েরী লিখতে শুরু করেছিল সদ্য বালিকা উত্তীর্ণ ১৩ বছরের কিশোরী আনা ফ্রাঙ্ক। পনেরো বছর দু মাস বয়সী কিশোরী শেষ লেখাটা লিখেছিল তার ডায়েরীর পাতায়। তার ঠিক সাত মাস পরে এই পৃথিবীর জল মাটি হাওয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছিল সেই কিশোরীর। অথবা হয়নি। রয়ে গেছে। রয়ে যাবেই যতদিন যুদ্ধ রয়ে যাবে এই পৃথিবীতে।আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরী। দু বছর দু মাসের দিনলিপি ।ধর্মে ইহুদী । বাবা অটো ফ্রাঙ্ক। মা এডিথ ফ্রাঙ্ক।বোণ মারগট ফ্রাঙ্ক। ছোট্ট সুখী মধ্যবিত্ত পরিবার। এই পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান আনা ফ্রাঙ্ক।জন্ম ১৯২৯ সালে। ঠিক তখনি জার্মানি তে ক্ষমতা এর জন্যে মাথা তুলছে হিটলার জারমানির মাটিতে। তৈরি করেহে নাতসি বাহিনী। সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে তার নাৎসি বাহিনী। ইহুদীদের নিরমুল করার যুদ্ধে নেমেছে তারা। অনেক ইহুদীই জারমানি ছেড়ে চলে জাচ্ছে অন্য দেশে।নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। ফ্রাঙ্ক পরিবার ও চলে গেলেন হল্যান্ড। তার ছয় বছর পর শুরু হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। হল্যান্ড অ আর নিরাপদ রিল না। কারন পৃথিবী দখলের স্বপ্ন দেখছে হিটলার। নাৎসি বাহিনী দখল করল হল্যান্ড। শুরু হল ইহুদীদের উপর অত্যাচার ।অসংখ্য ইহুদীকে পাঠানো হল বন্দি শিবিরে। এক সময় বন্দি শিবিরে যাওয়ার ডাক এলো োটো ফ্রাঙ্ক এর। সে ডাকে সারা দিলেন না ফ্রাঙ্ক পরিবার। নিজেদের অফিস বাড়ির পিছন দিকে এক গোপন আস্তানায় আশ্রয় নিলেন সপরিবারে। সাহায্য করে গেলেন কিছু বন্ধু প্রতিনিয়ত। এরপর পচিসটা মাস। পচিশটা মাস পর গোপ্ন আস্তানার খবর পায় নাৎসি বাহিনী। তাদের সবাইকে।আটজন ইহুদী মানুষকে টেনে নিয়ে যায় বন্দি শিবিরে। সবার আগে মারা যায় আনার মা এডিথ ফ্রাঙ্ক। এর পরেই অন্য এক বন্দি শিবিরে মারা যায় আনা আর মারগট। মাত্র পনেরো বছর ন মাসেই জীবন প্রদীপ নিভে যায় আনা ফারঙ্ক নামের সেই কিশোরীর। শুধু বেচে ফেরত আসে আনার বাবা অটো ফ্রাঙ্ক। প্রকাশ করে মেয়ের দিনলিপি। এই ডায়েরীতে খুজে পাওয়া যাবে সত্যকারের আনা কে। কিশোরী আনা কে। প্রক্ষনেই পাওয়া যাবে আশ্চর্য গভীর আনা ফ্রাঙ্ক কে। দৈনদিন বর্ণনার পাশাপাশি অনায়সে ব্লে গেছে দর্শন , ঈশ্বর, মানব চরিত্র, প্রেম প্রকৃতি নিয়ে জীবন বোধ নিয়ে। সেই সঙ্গে ফুটে উঠেছে স্মকালীন ইতিহাস ।ইহুদীদের লাঞ্ছনা , যন্ত্রনা , সংগ্রাম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছবি।