Our User Product Reviews

'পরিস্থান' উপন্যাসিকায় বাস্তবতাটাকে এত চমৎকার করে তুলে ধরেছেন লেখক ইমদাদুল হক মিলন যা পড়ার পর লেখকের প্রতি শ্রদ্ধায় নতজানু হতেই হয়। এরকম একটা উপন্যাসিকা পড়ার পর নিছকই প্রেম ভালোবাসার আখ্যানগুলোকে বড্ড তুচ্ছ মনে হয়। সেসবের কথা রেখে এই উপন্যাসিকা নিয়েই কথা বলি। সত্যিই অবাক হওয়ার মত ব্যাপার যে এত সহজ ভাষায় কিভাবে লেখক এরকম কঠিন একটা সত্যকে তুলে ধরতে পারলেন। সত্যিই লেখক দারুণভাবে সফল একাধারে যেমন একটা গল্প বলতে, তেমনই পাঠকের মনে সেই গল্পের মেইন যে ইমোশন তা ঢুকিয়ে দিতেও। আর এই উপন্যাসিকার আঙ্গিক গঠন নিয়ে আর কিই বা বলব। যথারীতি বর্ণনাত্মক ভাষার চেয়ে সংলাপের মাধ্যমে কাহিনী উপস্থাপনে বেশি জোর দিয়েছেন লেখক, তার অন্য অধিকাংশ লেখার মতই। অন্যদের কাছে এই জিনিসটা কেমন লাগে জানি না কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে ইমদাদুল হক মিলনের এই টাইপের লেখার অনেক বড় ভক্ত। ছোট ছোট প্রাঞ্জল ভাষার স্বতস্ফুর্ত সংলাপের মাধ্যমে গল্প বলাটা অনেকাংশে নাটকের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু সেই বৈশিষ্ট্যটাকে যদি কেউ সফলভাবে উপন্যাস বা গল্পেও জায়গা দিতে পারেন তো সেই ব্যক্তি ইমদাদুল হক মিলন ছাড়া আর কেউ নন। খুব বেশি স্তর নেই এই উপন্যাসিকার। উপন্যাসিকার যে সাধারণ ধর্ম, সেটাকেই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মেইন্টেইন করা হয়েছে। খুব বেশি চরিত্র নেই কিন্তু যারা আছে তাদের সকলের পার্সোনালিটিই একদম পারফেক্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। কাহিনী আবর্তিত হয়েছে মূলত মিনু আর আলোকে কেন্দ্র করে। মিনু আশি বছর বয়সী বৃদ্ধা আর আলো তার পালক কন্যা। আলো আর রবিকে এতিমখানা থেকে এনে মানুষ করেছেন মিনু। সেই আলো আর রবিই মিনুকে মায়ের যথাযথ সম্মানের স্থানে বসিয়েছে। মিনুর সেবাযত্নের জন্য সবধরনের স্যাক্রিফাইস করছে আলো। রবিও মিনুর প্রতি যথেষ্ট দায়িত্বশীল। অথচ মিনুর নিজের ছেলেমেয়েরা মিনুর দিকে ফিরেও তাকায় না। শুধু যখন টাকার দরকার পড়ে, তখনই তারা মায়ের কাছে এসে হাত পাতে। মিনু মা হয়ে সন্তানদের এই নিচু মানসিকতা ঠিকই টের পান। তাই সন্তানড়া ঠিক যেটুক সম্পত্তির দাবিদার, শুধু সেটুক দিয়েই তাদের সন্তুষ্ট করেন তিনি। ছেলেমেয়েদের অসীম লোভকে তিনি তুচ্ছ করেন। শেষ জীবনে যেই রবি আর আলোর কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ে আনন্দে জীবনের শেষার্ধটা তিনি কাটিয়েছিলেন, তাদেরকেই তিনি দিয়ে যান মৃত্যুর পর বিশাল এক দায়িত্ব। সত্যিই অসাধারণ একটা প্লটের অসাধারণ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে 'পরিস্থান' উপন্যাসিকায়। নামকরণের সার্থকতা অধিকাংশ গল্প উপন্যাসেই মেলা ভার। কিন্তু এই উপন্যাসিকা পড়ার পর চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠবে কেন উপন্যাসিকার নাম 'পরিস্থান' হল। পাশাপাশি বাস্তবের কঠোর কঠিন দিক যেরকম সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখক তা পড়ার পর পাঠকের বিবেকবোধ জাগ্রত হতে বাধ্য। উপন্যাসিকাটির ব্যাপ্তি বেশি না কিন্তু এই ছোট্ট লেখাটাই পড়ার পর পাঠক নিশ্চিতভাবেই উদ্যোগি হবেন জীবনটাকে আরেকটু তলিয়ে দেখতে। সত্যিই, জীবনঘনিষ্ঠ লেখা বোধ হয় একেই বলে!