User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
"সোনার বাংলা” কেন এমন নাম করন হয়েছিল এই ভূখন্ডের ? আজকের দারিদ্রপীড়িত বাংলাদেশ কি অতীতে আদৌও তেমন ঐশ্বর্যময় ছিল যে তাকে সোনার বাংলা বলা হয়েছিল? একদা ভারত বর্ষের সবচেয়ে সম্পদশালী রাজ্যটি এহেন দূর্দশা কিভাবে হল ? বইটিতে এই সব প্রশ্নের উত্তর যেমন পাওয়া যাবে তেমনি পাওয়া যাবে দেশভাগ পরবর্তী বাঙলার অর্থনৈতিক,সামাজিক,রাজনৈতিক,ভৌগলিক পরিবর্তনের সাথে সাথে এই বদ্বীপের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের তুলনামূলক আলোচনা, পাওয়া যাবে অতীতের ঐশ্বর্যের সন্ধান। কথায় আছে যে জাতি তার অতীত জানেনা সেই জাতি তার ভবিষ্যত নির্মান করতে পারেনা। যে জাতি আলেকজান্ডারের মতো বিশ্বজয়ী সেনাবাহিনীর ভারত জয় প্রতিরোধ করে ফিরে যেতে বাধ্য করেছিল সেই তারাই আবার ২০০ বছর ব্রিটিশদের দ্বারা শাসিত হয়েছিল আবার তারাই ব্রিটিশদের এই ভূখন্ড ছাড়তে বাধ্য করেছিল। ইতিহাসের আলোকে শেকড় কোথায় এই জাতির? ইতিহাসের গভীরে ও স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে আর্থ সামাজিক বিচার বিশ্লেষন যেমন পাওয়া যাবে তেমনি পাওয়া যাবে ভূপ্রকৃতিগত কারনে বাঙালী সমাজ, সংস্কৃতি ও মননের বিশ্লেষন। বাঙালীর জাতিগত ফিলোসফি কি তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে লেখক নিয়ে এসেছেন সহশ্র বছরের মনন চর্চার ইতিহাস, যে ইতিহাস প্রভাবিত হয়েছে বৌদ্ধ হিন্দু ব্রাম্ম ও ইসলাম ধর্মের দ্বারা কিন্তু সম্পূর্নরূপে পরিবর্তিত হয়নি, আজও ধরে রেখেছে তার প্রকৃত স্বত্বাকে, আর এই মননশীলতাই পরবর্তীতে এই ভূখন্ডের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক, সামাজিক,সংস্কৃতি ও সাহিত্যির নানা পর্যায়ের নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে এবং আজও করছে। লেখকের বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে বাংলাদেশকে দেখবার এই চেষ্টাটা শুরু হয় বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়গুলো খুঁজবার মধ্য দিয়ে। যেমন বৈদেশিক দাতাগোষ্ঠির সাহায্য বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়। কথাটা চমকে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।কিভাবে ? চলুন দেখি লেখক কি বলেছেন। “এমন কোন সুইডিশ সাহায্য সংস্থার কথা ভাবা যায়না, যারা এমন কোন প্রকল্পের অনুমোদন করবে-যে প্রকল্পে সুইডিস পন্য বা সামগ্রী ব্যবহার হবে না " অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম অন্তরায় ঋণ খেলাপী। কিন্তু কেন হয় ? লেখক বলেন "ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছ থেকে নেয়া ঋণ শোধ করে না; ব্যবসায়ীরা জানে অচিরেই বিদেশের অনুদান ব্যাংকিং ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনবে এবং তাদের ঋণ ব্যাংক মাফ করে দিব"। তো এই হলো বিদেশী সাহয্যের বিনিময়ে এদেশে গড়ে উঠা ঋণ খেলাপির ইতিহাস। এরপরেই মানুষ ও প্রকৃতির নিবিড় বন্ধনের সূত্রটি তিনি আবিষ্কার করেন। লেখকের বর্ননায় "বাংলাদেশের ঘরে যে মানুষ বাস করে বহুলাংশেই মাটির মানুষ তাকে বলা যায় না। কেননা, এদেশের মানুষ হয় নাবিক, সমুদ্রতারী, নদীর নাওয়ের মাঝি। বস্তুত এদেশের প্রতিটি মানুষই যেন প্রকৃতিগতভাবে উভচর। এদেশের প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি জিনিস নদীশাসিত।" বাঙালির জীবনে ষড়ঋতুর প্রভাব আলোচনা একটি অংশ এমন .. "মাঝ রাতের শীতল বাতাসে প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পরের সান্নিধ্যে উষ্ণতা খোঁজে। এভাবেই বর্ষা হয়ে ওঠে ভালবাসা ও ভালবাসার ফসলের কাল" তিনি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ তথা বাংলা বা গৌড় এবং গ্রীক ভূগোলবিদ টলেমির মূল্যায়ন তুলে আনেন। খ্রীষ্ট পূর্ব ২৫০০ অব্দে আর্য হিন্দুরা ভারতবর্ষ আক্রমন করে ও দখল করে নেয়। আর্যদের আদি ধর্মগ্রন্থে নমশূদ্রের উল্লেখ আছে। এরা স্থানীয় অনার্য জনগোষ্ঠি যারা মূলত আদি ভারতীয় জনগোষ্ঠি এবং এই কালো অনার্যরা আর্য সমাজের বাইরে বাস করত। আজকের বাংলাদেশিরা সেই নমশূদ্রদেরই উত্তরপূরুষ। সেন শাসন আমলে বাংলা এতোটাই সমৃদ্ধ ছিল যে মার্কোপোলো তার ডায়রিতে লিখে গেছেন বাংলার সম্পদের কথা। গ্রীক টলেমি নাম দিয়েছিলেন "সোনার বাংলা"। ভারতের সবচেয়ে সম্পদশালী গর্বিত এই রাজ্যটি উপনিবেশিক শোষনের কারনে ১৯৪৩ সালের ব্রিটিশ সরকার সৃষ্ট দূর্ভিক্ষের কারনে মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়। সেই অবস্থা আজও আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। লেখক ইসলামের ভূমিকা কি ছিল এই ভূখন্ডে তার অনুসন্ধান করেছেন। তার মতে, হিন্দু ধর্ম চার স্তরে বর্নপ্রথায় বিভক্ত ছিল। নমশূদ্ররা ছিল সবচেয়ে নীচু স্তরের তাই উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দ্বারা সবসময় নির্যাতনের শিকার হত। ইসলাম এসে সাম্যের বানী ঘোষণা করলে দলে দলে নমশূদ্ররা ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে। তাছাড়া তৎকালীন হিন্দু নারীদের ইসলাম ধর্ম প্রবলভাবে আকৃষ্ট করেছিল। কারন ইসলাম হিন্দু বিধবাদের সহমরন তথা সতীদাহ প্রথার ঘোর বিরোধী ছিল। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠি বারবার বিদ্রোহ করেছে, কিন্তু কেন ? আসুন লেখকের বক্তব্য জেনে নেই "ব্রিটিশরা এদেশে আসার আগে প্রায় ১১৪ বছর মুসলমানেরা বাংলার শাসন কর্তা ছিল; মুসলিম শাসিত বাংলায় ছিল সমৃদ্ধি আর প্রাচুর্য; কিন্তু ব্রিটিশ দখলের পর থেকে বাংলায় দারিদ্র নেমে আসে। ব্রিটিশরা অভিজাত বাঙালি মুসলমানদের জমিজমা হিন্দুদের দিয়ে দেয়; এর ফলে এমন কিছু হিন্দু ধনী হয়ে উঠল, যারা ছিল মুসলিম জমিদারদের চাকরবাকর। মুসলমানদের শিক্ষাব্যবস্থা -যে শিক্ষার মধ্যে ইতিহাস,বিজ্ঞান, আইনশাস্ত্র, শিল্পকথা সবই ছিল-ব্রিটিশরা নির্মমভাবে এসব ধংস করে ফেলে। আদালতে মুসলমানদের যে আধিপত্য ছিল, সেটাও ব্রিটিশ কিংবা হিন্দুদের হাতে; কাজেই সিভিল সার্ভিসে বলতে গেলে মুসলমানদের কোন অংশগ্রহণই থাকল না। অন্যদিকে সেনাবাহিনীতেও নেয়া হয়না মুসলমানদের,যদিও একদা এই সামরিক শক্তি মুসলমানদের কব্জায় ছিল। এসব কারনেই মুসলমানরা কি আর করতে পারে; বিদ্রোহ ছাড়া?" ক্ষমতাশীন হিন্দু সম্প্রদায় তাদের এই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার আপ্রান চেষ্টা চালায় দেশভাগের পূর্ব পর্যন্ত। বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ আন্দোলন এবং দেশ ভাগের পূর্ব মূহূর্তে ভারত পাকিস্থানের পাশাপাশি অখন্ড বাংলা দেশ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও তারা অস্বীকার করেন। অখন্ড বাংলা দেশ প্রতিষ্ঠার উদ্যেগ ব্যর্থ না হলে পূর্ব পাকিস্থানের জন্মই হতো না। বাঙালীর জাতিস্বত্বার রাজনৈতিক পরিচয়টা ১৯৪৭ সালেই প্রতিষ্ঠা পেত। কিন্তু এই ভূখন্ডের মানুষরা দমে যায়নি। ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে এক সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আশায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ন হয় ও জয়লাভের মধ্য দিয়ে অবশেষে হাজার বছরের জাতিগত পরিচয় আকাংখা বাস্তবরূপ লাভ করে। বাংলাদেশের রাজনীতিঃ স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে নতুন এক বুর্জোয়া শ্রেনির আবির্ভাব ঘটে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। এদের একটি অংশ সরাসরি দূর্নীতি চুরি ডাকাতি কালোবাজারীতে জডিয়ে পড়ে আর একটি অংশ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা বানিজ্যে অংশ নেয় এবং বৈধ ও অবৈধ সুবিধা ভোগী হিসেবে খুব দ্রুত ধনী ব্যক্তিতে পরিনত হয়, যাদেরকে বলা যায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে শুরু হয় ষড়যন্ত্র ও ক্ষমতা হারানোর এক অনিশ্চয়তা বোধ। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে একের পর এক রাজনৈতিক হত্যাকান্ড এই সময়ে সংঘটিত হতে থাকে। চুড়ান্ত রকমের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে কেটেছে সময়গুলো, এবং এক পর্যায়ে সেনাবাহিনীর অবৈধ ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে কেটেছে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা দরিদ্রতম একটি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। ছাত্র রাজনীতির ভূমিকাঃ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন এক গৌরবজনক ভূমিকা পালন করে এসেছে। তখন ছাত্রদের মধ্যে নিয়মিত পড়াশুনার পাশাপাশি অনেক গঠনমূলক ও সেবামূলক কাজে অংশ নেয়ার ইতিহাস আমরা দেখতে পাই। কিন্ত তারপরই ঘটে ছন্দপতন। ছাত্র রাজনীতিতে শুরু হয় ক্ষমতা লড়াই, দূর্নীতির আখড়া হয়ে উঠে এক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রায়ই শোনা যেত অস্ত্রের ঝনঝনানি। লেখকের ভাষায় " শিক্ষার মর্মবানী ও মানব বিদ্যার কোন কিছু আয়ত্ব না করে তারা হয়েছে বীতস্পৃহ। অধ্যায়ন, পড়াশোনা, আত্মপোলব্ধী ছাড়াই তারা জড়িয়েছে রাজনীতির সঙ্গে;এবং তারা জানে না কেন তাদের লড়াই, কার বিরুদ্ধে এবং কেন? " লেখক আরও বলেন.. "বিশ বছর বয়স না হতেই এসব তরুণ বীর সব বিষয়ে উন্নাসিক এবং সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এরা কিছু জানে না এবং কিছু পড়ে না।" "এরা দূর্নীতিবাজ হয়ে উঠে ছাত্রজীবনেই, এরা উন্নাসিক, শূন্যগর্ভ এবং হৃদয়হীন" "রাজনীতিকে তারা মনে করে বিধ্বংসী খেলা:কোন সিস্টেম বা অনুশীসন নয়। অতঃপর তারা দেখে রাজনীতি কিছুই নয়, স্রেফ ক্ষমতা আর টাকা।" লেখকের বইটি প্রকাশকাল ১৯৯৩ সাল। সুতরাং সঙ্গত কারনেই তারপরের বাংলাদেশ সম্পর্কিত কোন লিখা নাই। তথাপি জাতিগত পরিচয়ের আলোকে একজন বিদেশী হিসেবে যে নিরপেক্ষ মূল্যায়ান হওয়া উচিত তার অনেকখানি এই বইটি পূরন করেছে বলেই আমার বিশ্বাস। যদিও কিছু স্ববিরোধীতা লক্ষনীয় যেমন জাতিগত ভাবে আমাদের অনেক অর্জনের জন্য লেখক ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনকে একদিকে কৃতিত্ব দিয়েছেন অন্যদিকে তেমনি স্বীকার করেছেন যে তাদের আসার পূর্বে এই ভূখন্ড শিক্ষা দীক্ষা জ্ঞানে ঐশ্বর্যে সম্পদশালী ছিল, অর্থাৎ বাঙালীরা নিরক্ষর বা অসভ্য ছিল না। আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো তা হলো বাংলাদেশের প্রতি লেখকের গভীর মমত্ববোধ। সম্ভবত সেই কারনেই একজন বিদেশী হওয়া সত্বেও তিনি বলতে দ্বিধা করেন নাই যে বাঙলার কৃষক হল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম কৃষক যে ১২ হাত জলের নীচে ডুব দিয়ে ফসল কেটে তুলে আনতে পারে। বইটি পড়ার জন্য আমি সকলকে আহব্বান জানাচ্ছি। ধন্যবাদ।
Was this review helpful to you?
or
একজন ভিনদেশি মার্কিন পুঁজিপতির চোখে আশির দশকের বাংলাদেশই হলো 'বাংলাদেশ জলে যার প্রতিবিম্ব ' জেমস জে. নোভাক এশিয়াতে বাস করেছেন তিনদশক৷ ত্রিশ বছরে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যেমন কাজ করেছেন 'ভদ্রলোক', তেমনি এই মহাদেশ নিয়ে পশ্চিমা বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে কলামও লিখেছেন। অভিজ্ঞতার বহরের কারণে বলতে হয় জেমস জে. নোভাক এশিয়া সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা রাখেন৷ না, কথাটা সত্য নয়৷ তিনিও আরসব পশ্চিমবাসী ব্যক্তির মতো এশিয়ার গরিব দেশগুলোকে হেয় চোখে দেখেন, তাদের দারিদ্রতার মূল কারণ এড়িয়ে শুধু দারিদ্রতা নিয়ে কটাক্ষ করে আনন্দ পান। বাংলাদেশ নিয়ে লেখা বইটির কথাই ধরুন না৷ এদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ইতিহাসের পাশাপাশি একটি ক্ষুদ্র চিত্র আঁকতে চেয়েছেন বাংলাদেশের আবহমানকালীন সংস্কৃতি নিয়ে৷ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে জনাব জেমস জে. নোভাকের লেখা পড়লে যেকোনো বাংলাদেশি অসুস্থ বোধ করবেন৷ লেখকের স্ব-উদ্ভাবিত তথ্যের নমুনা - বাংলাদেশিরা দিনে দুইবার গোসল করে। একবার সকালে এবং সন্ধ্যায়। - এই ধরনের গাঁজাখুরি গপ্পো তিনি কোথায় পেয়েছেন আল্লাহ মালুম৷ এই বইটি যখন লেখা হয়, তখন সদ্য স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে স্বদেশ । সংসদীয় গণতন্ত্রে হাঁটা শুরু করেছে৷ সেনাশাসন কবলিত একটি দেশের প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করতে চান নি মার্কিন লেখক মহাশয়৷ দারিদ্র্য নিয়ে উপহাসের পরোক্ষ চেষ্টা করেছেন। এদেশে দাতাগোষ্ঠীর দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছেন৷ কিন্তু দাতাগোষ্ঠী যথা - আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের ঋণ ও সহায়তার নামে লুটতরাজকে যেসব শক্তিশালী রাষ্ট্র সমর্থন করে তাদের নাম নিতে ভুলে গেছেন। জেমস জে. নোভাক তার নিরপেক্ষতার মুখোশ আর পরে থাকতে পারলেন না রাজনৈতিক ইতিহাস বর্ণনের সময়৷ শেখ মুজিব হত্যায় জনগণ 'পুলকিত' হয়েছিল এধরনের নোংরা মিথ্যাচার জায়েজ করতে তিনি রাজাকারের হেডমাস্টার ফকা চৌধুরীর জেলে মৃত্যুর প্রসঙ্গ এনেছেন৷ একজন শাসক হিসেবে জিয়াউর রহমানের অবশ্যই কিছু সাফল্য আছে৷ আছে বড় ধরনের ব্যর্থতাও৷ জেমস জে. নোভাকের লেখা পড়লে মনে হবে জিয়ার আমলে ১১০০ সেনাসদস্য হত্যা, ২০টির অধিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা কোনো ঘটনাই নয়৷ ক্ষমতার জন্য পাকিস্তানপন্থীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের মতো কাজকে বিবেচনায় আনতে ভুলে গেছেন নোভাক সাহেব৷ এরশাদের সামরিক শাসনের গুণও খুঁজে পেয়েছেন নোভাক! বাংলাদেশকে কতটা হীন দৃষ্টিতে দেখেছেন মার্কিনদেশীয় জেমস জে. নোভাক তার একটি শিরোনামেই বোঝা যায়। 'বাংলাদেশ জলে যার প্রতিবিম্ব ' বইটির সর্বশেষ অধ্যায়ের নাম ' বাংলাদেশ কি টিকবে ' ভালো প্রশ্ন। না টিকলে নোভাক সাহেবের বইটি হয়তো এতটা ঘৃণা নিয়ে পড়া হতো না৷ নোভাক বইটি ইংরেজিতে লিখেছেন৷ বঙ্গানুবাদ প্যানেলের সম্পাদক ছিলেন রাহাত খান৷ অনুবাদ ততো মানসম্মত হয় নি৷ ভাষাগত কাঠিন্য ছিল৷ সম্পাদনায় মনোযোগ দেয় নি ইউপিএল৷ বানান ভুল, সাল গোলমাল বেশ কয়েকবার চোখে পড়েছে৷
Was this review helpful to you?
or
বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছে। একজন বিদেশির কাছে বাংলাদেশের এমন বর্ণনা ভাল লাগল।
Was this review helpful to you?
or
এই বইটি বাংলাদেশ এবং এর মানুষ সম্পর্কে একটি ব্যক্তিগত এবং অন্তর-অনুসন্ধানী বিবরণী। এই বইয়ে জেমস জে. নোভাক দেশটির অর্থনীতি, জনগণের জীবনধারায় ও মনস্তত্ত্বে ঋতু বৈচিত্র্যের গুরুত্ব, ইতিহাস, ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য, সঙ্গীত, শিল্পকলা, কাব্য, চিন্তাধারা এবং রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধি বিবৃত করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে একটি অপূর্ব বিশ্লেষণও তিনি উপস্থাপন করেছেন। দেশটির আধুনিক ইতিহাসে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ও বিকাশ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত এটিই বোধ করি একমাত্র পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ। কবিতা, গদ্য এবং গানে বিধৃত এই জাতীয়তাবাদ। একে যেমন ব্যবহার করা হয়েছে ধর্ম, সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি, কবিতা এবং শিল্পকলার মধ্যকার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াকে চিত্রায়িত করার জন্যে, তেমনি ব্যবহার করা হয়েছে সংস্কৃতির রাজনৈতিক চিন্তার রূপান্তরকে মূর্ত করে তোলার জন্যে।