User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
ইমদাদুল হক মিলনের 'শালিক পাখিটি উড়েছিল' উপন্যাসটি গ্রাম্য পটভূমিতে রচিত। শালিক নামের মেয়েটির প্রেম ও তাতে তাঢ় বাবার বাধা দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে উপন্যাসের কাহিনী। তারপরও এটাকে ঠিক প্রেমের উপন্যাস বলা চলে না। সাধারণ প্রেমের উপন্যাসের চেয়ে এটি অনেক আলাদা। মূলত এটাকে একটা হালকা গোছের মজার উপন্যাস বলা যেতে পারে। আর সবচেয়ে বড় কথা, উপন্যাসটিকে আমার মোটেই বাস্তবসম্মত মনে হয়নি। উপন্যাসের প্রতিটা ঘটনা এবং সংলাপই অতি নাটকীয় যার সাথে আক্ষরিক অর্থেই টিভির গ্রাম্য পটভূমিতে নির্মিত হাসির নাটকের হুবহু মিল আছে। উপন্যাস পড়তে পড়তে বারবারই আমার মনে হয়েছে, আমি কোন তথাকথিত উপন্যাস পড়ছি না। বৃন্দাবন দাসের নাটকের লিখিত সংস্করণ পড়ছি! উপন্যাসটি যে বেশ মজার এবং সুখপাঠ্য তা অতিশয় সত্য। কিন্তু তবু ইমদাদুল হক মিলনের অধিকাংশ উপন্যাসে যে গভীর ভাব বিদ্যমান থাকে, তা এখানে একেবারেই অনুপস্থিত। থার্ড পারসন হয়ে কাহিনী বর্ণনার চাইতে ইমদাদুল হক মিলন একটানা সংলাপের মাধ্যমে গল্প এগিয়ে নিয়ে যেতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং তার সকল উপন্যাসেই এই ব্যাপারটা রয়েছে। আলোচ্য উপন্যাসটিতেও তার ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। তবু এই উপন্যাসের সংলাপগুলো একদমই বাস্তবঘেঁষা না। প্রতিটি দৃশ্যে মাত্রাতিরিক্ত সংলাপ রয়েছে। পড়লে মনে হবে চরিত্রগুলোর মুখে যা আসছে তারা তাই বলে যাচ্ছে। এটা অস্বাভাবিক না কেননা উপন্যাসে দুই একটা চরিত্রে বাচালতা থাকতেই পারে। কিন্তু এই উপন্যাসে বোধহয় প্রতিটা চরিত্রই অত্যধিক রকমের বাচাল! তবে সেসব যাইহোক, সংলাপগুলো যে বেশ মজার সেটাও ঠিক। এই উপন্যাসের কাহিনী খুব একটা নতুন কিছু না। শালিক নামের মেয়েটি ভালোবাসে পলাশ মাস্টারকে। গ্রামীন প্রেমের গল্পে যেমন দেখা যায় প্রেমিক প্রেমিকা লুকিয়ে দেখা করতে যাচ্ছে, পলাশ আর শালিকও সেই কাজটাই করছে। ওদিকে শালিকের বাবা মতি মিয়া ঠিক করে রেখেছে শালিকের বিয়ে দেবে ধনীর দুলাল মজনুর সাথে যে কিনা তিনবার মেট্রিক ফেল আর বুদ্ধিসুদ্ধি কিছুই নাই মাথায়। তাই শালিকের সাথে পলাশ মাস্টারের সম্পর্কের কথা শুনে রেগে বোম হয়ে গেল মতি মিয়া। মেয়েকে গৃহবন্দী করল। রাগে অভিমানে শালিকও খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিল। আর অন্যদিকে এই উপন্যাসে আছে বদরুল নামের এক চরিত্র যে সবার কাছ থেকে টাকা খেয়ে সবার কাছে গোপন কথা বা বুদ্ধি বিক্রি করছে। সে একাধারে শালিক, পলাশ মাস্টার, মজনু, মতি মিয়া, হাসু (শালিকের মা) সকলের দালালি করে বেড়াচ্ছে আর মূলত তার কথা বা পরামর্শ অনুযায়ীই বাকি চরিত্ররা প্রতিটি কাজ করছে। তো, এমনই মজার দৃশ্যপট এই উপন্যাসের। উপন্যাসের শেষে জানা যাবে শালিকের কি হল, তার কি মজনুর সাথেই বিয়ে হবে নাকি তার বাবা পলাশ মাস্টারকে মেনে নেবে। সবমিলিয়ে একটা কথা বলতেই হবে, সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপন্যাসটিকে খুবই সাধারণ মানের মনে হলেও, গ্রাম্য পটভূমি আর ভাষায় রচিত উপন্যাসটি পড়ে প্রায় সব পাঠকই মজা পাবে। কট্টর সমালোচকরা লেখকের লেখনী নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারেন কিন্তু সেসব মাথা থেকে সরিয়ে স্রেফ যদি উপন্যাসের কাহিনীতে মনোনিবেশ করা যায়, তবে কাহিনীর প্রতি পদে পদেই বিনোদিত হতে পারবে পাঠক। আর একটা কথা বলার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি। উপন্যাস হিসেবে 'শালিক পাখিটি উড়েছিল'কে খুব উঁচুদরের বলা না গেলেও, উপন্যাসের কাহিনী ও সংলাপগুলোকে সরাসরি নাটকে এডাপ্ট করা হলে টিভি দর্শকদের জন্য সেটি বেশ ভালোমানের নাটক হিসেবেই বিবেচিত হবে।