User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
অভিভূত!
Was this review helpful to you?
or
বইটা কি স্টকে নাই.? কবে আসবে.?
Was this review helpful to you?
or
আড়াই হাজার বছর আগেকার কথা - ব্যাবিলনের সম্রাট নেবুচাদনেজার লক্ষ করলেন যে তার প্রিয়তমা স্ত্রী অ্যামিতিস সারাক্ষণ মনমরা করে থাকে। নেবুচাদনেজার অনেক জিজ্ঞাসা করা সত্ত্বেও কিছুই বলেননি অ্যামিতিস। কিন্তু প্রচন্ড জোরাজুরিতে সেই কারণ জানা গেল। অ্যামিতিসের বাবার রাজ্য মেডান সবুজ সুজলা সুফলা। সেই সুজলা সুফলা রাজ্য ছেড়ে ব্যাবিলনের রুক্ষ মরুভূমিতে অ্যামিতিসের মন টিকছিল না। এ কথা শুনে নেবুচাদনেজার তার প্রিয়তমার কাছে প্রতিশ্রুতি দেন যে ১০০ চন্দ্র পূর্ণিমার আগে ব্যাবিলনে মেডানের মতই একটি বাগান গড়ে তুলবেন আর সেই ধারা ধরেই তৈরি হল 'ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান'। কিন্তু একটা সমস্যা থেকেই গিয়েছিল। মেডানের আকাশে সর্বদা লাল আভা বিচরণ করত কিন্তু ব্যাবিলনের আকাশ রুক্ষ হলুদ। সে সমস্যার সমাধান করেন বিজ্ঞানী ময়নিহান। এক বিশেষ জাতের পাথরের সাথে এক হাজার যুবকের রক্ত মিশ্রিত করে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় 'ব্লাডস্টোন' বা 'রক্তপাথর' । ঝুলন্ত উদ্যানে থাকা অ্যামিতিসের মূর্তির মুকুটে লাগানো হয় ব্লাডস্টোন। সেই ব্লাডস্টোনের প্রভাবেই পুরো উদ্যান জুড়ে লাল আভা ছড়িয়ে থাকে। একসময় ব্যাবিলনে সম্রাট আলেকজান্ডার দা গ্রেট হামলা করেন। সবকিছুকেই অর্ধধ্বংস করেন তিনি। অর্ধধ্বংসের কারণে সবকিছু অর্ধধ্বংস হয়ে গেলেও ব্লাডস্টোন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। শুধু বেঁচে থাকে কয়েক টুকরো পাথর। সেই কয়েক টুকরো পাথর নিয়ে পালিয়ে যায় একজন ব্যক্তি। সময়ের সাথে সেই পাথর বিভিন্ন ভাবে ঘুরে এক আফগান শিশু মাহতাব খানের হাত ধরে চলে আসে প্রাচীন বাংলায়। আবার বিভিন্ন চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ইংল্যান্ডের রাণীর সম্পত্তি হয়ে যায় সেই ব্লাডস্টোন। বর্তমান সময় - হোটেল র্যাডিসনে কিছু অ্যান্টিক সামগ্রী প্রদর্শনীর সময় ব্লাডস্টোনও প্রদর্শিত হয়। কিন্তু তা চুরি হয়ে যায় এক চোরের হাতে অভিনব পন্থায়। প্রদর্শনী চলাকালীন সেখানে থাকা মোটমাট একশ জন মানুষ দশ মিনিটের জন্য সাময়িক ভাবে স্থবির হয়ে যান। তাদের চোখের সামনে দিয়েই চোর ব্লাডস্টোন নিয়ে গেল কিন্তু তারা কিছুই বলেননি। পরবর্তীতে সবাই বলেছে যে সেই দশ মিনিটের স্মৃতি তাদের মাথায় নেই। তাদের রক্তে কোনোপ্রকার ড্রাগের লক্ষণও পাওয়া যায়নি। ব্লাডস্টোন ছাড়া আর কিছুই চুরি হয়নি। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যকর বিষয় হল একটি চিরকুট, যেটি ব্লাডস্টোনের কাঁচের বাক্সে পাওয়া গিয়েছিল এবং সেখানে লেখা ছিল "অ্যামিতিস, তোমাকে ভালবাসি"। ডিবির উঠতি নামকরা গোয়েন্দা মনসুর হালিমের হাতে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। অদ্ভুত এই চিরকুটটির জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সহকারী অধ্যাপক প্রফেসর রুদ্র রাশেদের শরণাপন্ন হন। আস্তে আস্তে এরকম কিছু তথ্য বেরিয়ে আসে যা পুরো বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেয়। কী সেই তথ্য? আর কেই বা চুরি করল ব্লাডস্টোন? তাহলে কী সম্রাট নেবুচাদনেজারের আত্মা ফিরে এসেছে বেঁচে থাকা ব্লাডস্টোনগুলোর জন্য? নাকি কোনো মানুষই করেছে? কোনো মানুষ করলে কেন শুধু ব্লাডস্টোনই চুরি করল? অন্য অ্যান্টিকগুলোকে কেন নয়? আর কীইবা ছিল সেই চুরির পন্থা যাতে উপস্থিত সবাই দশ মিনিটের জন্য পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছিল? জানতে হলে পড়তে হবে ব্লাডস্টোন।
Was this review helpful to you?
or
রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_জুলাই বইয়ের নাম: ব্লাডস্টোন লেখক: নাজিম উদ দৌলা প্রকাশক: আদী প্রকাশন ধরন: থ্রিলার পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৫৬ টি ব্লাডস্টোন বইটিকে কোন বিশেষণে বিশেষায়িত করব তা বুঝতে পারছি না! বইটির শুরু থেকে শেষ অবধি দারুণ এক ভালোলাগার অনুভূতি গ্রাস করে ছিল আমাকে। মানুষের জীবনে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত দুর্লভ একটি উপহার হচ্ছে ভালবাসা। এই ভালবাসার জন্য মানুষ করতে পারে না, এমন কোন কাজ নেই। তারা চাইলে অনেক অসম্ভবকেও সম্ভব করে তোলে। প্রিয় স্ত্রীর মনের বিষণ্ণতা দূর করার জন্য এমনই এক অসম্ভবকে বাস্তবে রুপদান করেন প্রাচীন ব্যাবিলন সম্রাট নেবুচাদনেজার। তিনি তার প্রিয়তমা অ্যামিতিস এর জন্য নির্মাণ করেন এক ঝুলন্ত উদ্দান, যা আজও পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিখ্যাত রহস্য হয়ে আছে। রুক্ষ মরুর বুকে অ্যামিতিসের বাবার মিডিয়ান রাজ্যের মত একটি পরিবেশ স্থাপন করা হয় এই ব্যবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানে। কিন্তু এই ভালবাসার বহিঃপ্রকাশই করতে গিয়ে রাজা নেবুচাদনেজার এক ভয়ংকর সিধান্ত নেন। অভিশাপ এ পরিণত হয় তার ভালবাসার নিদর্শন। মূলত এখান থেকেই উৎপত্তি হয় ব্লাডস্টোনের। ব্লাডস্টোনঃ কাহিনী সংক্ষেপ বাংলাদেশের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে আয়োজিত একটি প্রদর্শনী থেকে চুরি হয়ে যায় ব্লাডস্টোন। এখান থেকেই মূলত উপন্যাসটি শুরু হয়। চোর চুরি করে যাওয়ার সময় চোর ছোট্ট একটা চিরকুট ফেলে গেছে, যাতে লেখা- “অ্যামিতিস, তোমাকে ভালবাসি”। কিন্তু চুরি করার সময়টুকুর সব কথা প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউই কিছুই মনে করতে পারছে না। ঘটনাটি তদন্তের ভার পড়ে ডিবি ইন্সপেক্টর মনসুর হালিমের উপর। তিনি ঘটনার কুল কিনারা করতে না পেরে শরণাপন্ন হলেন ইতিহাসের গবেষক ড. রুদ্র রাশেদের। অনেক গুলো প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় সম্মুখে। হাজার বছর আগে সহস্র মানুষের রক্তে উৎপন্ন হওয়া অভিশপ্ত ভালবাসার প্রতীক ব্লাডস্টোন কীভাবে বাংলাদেশ এ আসে? অন্যদিকে চন্দিক্যান রাজ্যের পরাক্রমশালী রাজা প্রতাপাদিত্যের মেয়ে রাজকুমারি অরুনাবতী ও একই রাজ্যের সেনাপতি মাহতাব খান একজন অপরজনকে ভালবাসে। কিন্তু তাদের ভালবাসার নীড়েও নেমে আসে কালো মেঘের অভিসম্পাত। এখানেও কি লুকিয়ে আছে ব্লাডস্টোনের অভিশাপ? তাদের জীবনে এমন কি ঘটেছিল যে আলাদা হতে হল দুটি ভালবাসার মানুষকে? এছাড়া সুরের জাদুকর নিকোলা পাগানিনি কিসের মোহে তার জীবন নষ্ট করতে চেয়েছিলেন? কেনইবা তার প্রিয় ছাত্র ক্যামিলো সিভরির ছেলে গঞ্জালো সিভরি আত্মহত্যা করল যে কিনা তার সময়ের জীবন্ত কিংবদন্তী ছিল। এছাড়া বইটিতে আরও আছে পাগানিনির ২৪ ক্যাপ্রাইস আবিষ্কারের বিস্ময়কর কাহিনী, পারস্য সম্রাট সাইরাসের ব্যবিলন দখলের কাহিনী, সম্রাট অ্যালেকজান্ডারের বিশ্বজয়ের ও তার মৃত্যুর করুন উপাখ্যান। আমার মতামত: বইটি পড়তে গিয়ে বুঝতে পেরেছি লেখক অনেক পরিশ্রম করেছেন। ইতিহাসের অনেক দিক তুলে ধরেছেন। বইটিতে লেখক অনেক টুইস্ট রেখেছিলেন। এছাড়া মনসুর হালিম আর ড. রুদ্র রাশেদের কথোপকথন ভাল লেগেছে। বইয়ের কভার খুব ভাল লেগেছে আর পৃষ্ঠাগুলোও ভাল ছিল। তবে কিছু কিছু জায়গায় বানান কিছু ভুল ছিল তবে সহনীয় পর্যায়ে ছিল। সর্বোপরি, ব্লাডস্টোন খুবই উপভোগ্য একটি মৌলিক থ্রিলার। ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য সুখপাঠ্য। বাংলাদেশের থ্রিলার সাহিত্য যে দিনদিন সমৃদ্ধ হচ্ছে ব্লাডস্টোন তার প্রমাণ। লেখকের কাছ থেকে ভবিষ্যতে আরো ভাল মৌলিক থ্রিলার আশা করি।
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম: ব্লাডস্টোন লেখক: নাজিম উদ দৌলা প্রকাশক: আদী প্রকাশন প্রথম প্রকাশ: আগস্ট ২০১৫ প্রচ্ছদ: নাজিম উদ দৌলা পৃষ্ঠাসংখ্যা: ২৫৫ পৃষ্ঠা . প্রেমের জন্য মানুষ কত কিছুই না করে! আগ্রার তাজমহল কিংবা ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান, সবই তো ভালোবাসার এক-একটি নিদর্শন। কেমন হয়, যদি জেনে আসা যায় সেসব প্রেমগাঁথাগুলো! . লোকে বলে—“প্রেমে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়।” কথাটা আর কারো জন্য না হোক, সম্রাট নেবুচাদনেজারের জন্য প্রযোজ্য। এই সম্রাট নিজের প্রেমকে সমুন্নত করতে হত্যা করেছিলেন এক হাজার ইহুদীকে। . কেন? . আপাতত এই প্রশ্নটা সামনে রেখেই এগোনো যাক। চলুন, আপনাদের ঘুরিয়ে নিয়ে আসি এক ঐতিহাসিক থ্রিলার—“ব্লাডস্টোন” থেকে, যার কিছুটা ইতিহাস, কিছুটা কল্পনা আর কিছুটা ধোঁয়াশা। . #কাহিনি_সংক্ষেপ লেখক নাজিম উদ দৌলার দ্বিতীয় মৌলিক রচনা “ব্লাডস্টোন”। লেখক নিজেই স্বীকার করেছেন, ইতিহাস যেখানে থেমে গেছে, সেখান থেকেই থ্রিলারটি লেখা শুরু করেছেন তিনি। বইয়ের কাহিনি গড়ে উঠেছে তিনটি ভিন্ন-ভিন্ন সময়কে কেন্দ্র করে। একটি সম্রাট নেবুচাদনেজারের সময়, আরেকটি রাজা প্রতাপাদিত্যের সময়কাল এবং সবশেষটি বর্তমান সময়; অর্থাৎ এ অংশটি সম্পূর্ণই লেখকের কল্পনা। . ব্যাবিলন। সেই ঐতিহাসিক নগর, যেখানে গড়ে উঠেছিলো সেই শূন্য উদ্যান। কিন্তু কেন? কী ছিলো এর সৃষ্টির পেছনে? . ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়, সম্রাট নেবুচাদনেজারের সময়ে নির্মিত হয় এই উদ্যান। কথিত আছে, রাণী অ্যামিতিসকে খুশি করার জন্য, তার বাবার বাড়ির পরিবেশ ব্যাবিলনে সৃষ্টি করার জন্য শত-শত শ্রমিকদের পরিশ্রমে এই উদ্যানটি সৃষ্টি হয়। কিন্তু এক জায়গায় গণ্ডগোল বাঁধে। রাণীর বাড়ির আবহাওয়ার মতো লালচে আবহাওয়া সৃষ্টি করতে হলে লাগবে অনেকগুলো রত্নপাথর। যে-সে রত্নপাথর হলে চলবে না, রক্তলাল রত্নপাথর হতে হবে; যেখান থেকে বেরুবে লাল আভা। রত্ন না হয় পাওয়া গেলো, কিন্তু লাল আভা? এই প্রশ্নের সমাধান মেলে নেবুচাদনেজারের সভার বিজ্ঞানীর কাছ থেকে। রক্ত লাগবে! রক্ত! হ্যাঁ, একহাজার মানুষের রক্ত লাগবে। তবেই আভা ছড়াবে রত্নগুলো। . ইহুদিদের যুদাহ নগরী দখল করে একহাজার ইহুদির রক্ত দিয়ে রত্নপাথরের জেল্লা বাড়ানো হয়। কিন্তু যার জন্য এতো আয়োজন, সে-ই বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে দেয়। এই জঘন্য পরিকল্পনা জানতে পেরে অ্যামিতিস নেবুচাদনেজারকে ছেড়ে চলে যায়। আস্তে-আস্তে হাত থেকে হাতে ঘুরতে-ঘুরতে সেই হীরে গিয়ে পড়ে আলেকজান্ডারের হাতে। আলেকজান্ডারের রহস্যময় মৃত্যুর আগে তিনি সেগুলো পাঠিয়ে দেন কান্দাহার, বর্তমান আফগানিস্তানে। . এবার সুদূর মেসোপটেমিয়ার কথা ভুলে যান। আসুন, মনোযোগ দিই এই বাংলায়। রাজা প্রতাপাদিত্যের শাসন চলছে তখন। নারীলোভী প্রতাপাদিত্য’র ক্ষুধা মেটাতে ডাক পড়ে মাহতাবের। মাহতাব এক কথায় নাকচ করে দেয় প্রতাপাদিত্যের কথা, সে সুন্দরী স্বর্ণময়ীকে প্রতাপাদিত্যের জন্য নিয়ে আসতে পারবে না। ফলে যা হবার তাই হলো, মাহতাবকে হতে হলো রাজ্যছাড়া। তবে তার প্রেমিকা, প্রতাপাদিত্যের কন্যা অরুণাময়ী পালিয়ে এলো তার সাথে। . সেই ব্লাডস্টোন, সেই রত্নপাথরটি মাহতাব এবার বের করলো। অরুণাময়ীকে উপহার দিয়ে জানালো, এই রত্নপাথর আফগান সেনাপতি আফতাব খানের হাত ধরে তার কাছে এসেছে। কিন্তু, ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে অরুণাময়ীকে ধরে নিয়ে গেলো প্রতাপাদিত্যের সৈন্যরা। আবারও রত্নপাথর ঘুরতে লাগলো। ঘুরে-ঘুরে চলে গেলো ইংরেজদের কাছে। . যেই আরাধ্য রত্নপাথর, যাকে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কেউই ভোগ করতে পারেনি, এই সম্পদটিকে ঘিরেই লেখকের মূল কল্পনা শুরু হয়। ব্লাডস্টোন ফিরে আসে বাংলাদেশের রত্ন প্রদর্শনীতে, যথারীতি সেটা চুরি হয়ে যায়। যেনতেন চুরি নয়, অদ্ভুত এক চুরি। চুরির সময় উপস্থিত কেউই বলতে পারবে না ওখানে ঠিক কী হয়েছিলো, কীভাবে চুরি হয়েছিলো। যেন মন্ত্রবলে সেসময় বশ হয়ে গিয়েছিলো তারা। তদন্ত কর্মকর্তা মনসুর হালিম আর ইতিহাসের শিক্ষক রুদ্র রাশেদ মিলে আবিষ্কার করেন এক নতুন রহস্য। ব্লাডস্টোনের মূল মালিকানা বাংলাদেশের, ইংল্যান্ডের নয়। এটি প্রমাণে উঠেপড়ে লাগেন তারা। . একটা বিষয় বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। মিউজিশিয়ান পাগাগিনির কথা। সেই পাগাগিনি, যার সুরের মূর্ছনায় একসময় বুঁদ হয়ে থাকতো সকলে। জীবনে কী ছিল না তাঁর? অর্থ-সম্পদ, নারী...আর কী চাই? সেই পাগাগিনিই কেন অপার্থিব, আধ্যাত্মিক সুর সৃষ্টি করতে মরিয়া? ব্লাডস্টোনের সাথেই বা এর কী সম্পর্ক? . আমি আর বলবো না। ইতিহাসের কড়চা আর কল্পনার মিশেলে জমজমাট এই গল্পটি পড়ে নিন আপনারাই। . #পাঠের_পোস্টমর্টেম এককথায় একটি অসাধারণ ঐতিহাসিক থ্রিলার এটি। লেখক এটা লিখতে গিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেছেন, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। মেসোপটেমিয়ার প্রাচীন ব্যাবিলন থেকে শুরু করে প্রতাপাদিত্যের শাসনামল, সবকিছু খুব সুন্দরভাবে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন। লেখায় জড়তা ছিলো না, পড়ে মনেই হয়নি এটি তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস। ব্যক্তিগতভাবে বললে, আমি পুরোটা সময় গল্পে বুঁদ হয়ে ছিলাম। . যাহোক, শুধু-শুধু গল্পের মাহাত্ম্য বর্ণনা করে আদিখ্যেতা প্রকাশের দরকার নেই। তার চাইতে গল্পের যে অংশগুলো খারাপ লেগেছে, সেগুলো সম্পর্কে বলা উচিত। . শুরুর দিকে মনে হলো, লেখক যেন ইচ্ছা করেই আদিখ্যেতা প্রকাশ করছেন। একই আদিখ্যেতা দেখতে পেলাম নেবুচাদনেজারের সংলাপে, আবার মনসুর হালিমের কৌতুকগুলোয়। এই অংশটা একটু বিরক্তি জোগায়। তাছাড়া মাঝে-মাঝেই লেখা যেন উধাও হয়ে গেছে। বানান ভুলের কথা তো বাদই দিলাম, গুরুচণ্ডালী দোষও ছিলো প্রকট! তবে এগুলো শুরুর দিকের কথা, শেষের দিকের লেখাগুলো বেশ গোছানোই মনে হলো। . পাগাগিনির আধ্যাত্মিক সুর হিসেবে তিনি যেই বর্ণনা দিয়েছেন সেটা নিছকই তার শিষ্যদের বর্ণনা। কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, আদৌ পাগাগিনি সুরের জন্য এমন উতলা হয়েছিলেন, কিংবা তাঁর আত্মহত্যার কারণই ছিলো সুর। এই অংশটাকে উপজীব্য করে লেখা অংশটা কেমন যেন লাগলো। . যাহোক, পোস্টমর্টেম দেখে ঘাবড়ে যাবেন না। বইটা পড়ুন, আশা করি হতাশ হবেন না। হিস্ট্রি নিয়ে যাদের পড়াশোনা করার ইচ্ছা আছে, কিন্তু গুরুগম্ভীর, রসকষহীন লেখা বলে পড়তে চান না, তাদের জন্যও সমান উপযোগী হতে পারে এই বই। . #লেখক_পরিচিতি সৈয়দ নাজিম উদ দৌলার জন্ম ১৯৮৯ সালের চার নভেম্বর। পড়াশোনা করেছেন খিলগাঁও সরকারি স্কুল, মডেল কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে রেড মারুন মার্কেটিং এজেন্সিতে ডিজিটাল মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন। চাকরির পাশাপাশি ব্লগে লেখালেখিও করেন। মাসুদ রানার স্ক্রিপ্টটা তারই লেখা :D । একুশে বইমেলা ২০১৪-এ তাঁর প্রথম বই “স্বপ্ন বিদ্যা ভ্রম ও অন্যান্য” প্রকাশিত হয়।
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_পাঠক_সমাগম_বুক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_৫ মাসঃ আগস্ট সপ্তাহঃ ৪র্থ সপ্তাহ পর্বঃ ৫ . . বইঃ ব্লাডস্টোন। লেখকঃ নাজিম উদ দৌলা। ধরণঃ হিস্টোরিকাল থ্রিলার। পৃষ্ঠাঃ ২৫৬। মূল্যঃ ১৯৬ টাকা (রকমারি)। প্রকাশকালঃ আগস্ট, ২০১৫। .. উপন্যাসের শুরুতেই প্রাচীন ব্যবিলনের সম্রাট নেবুচাদনেজার এবং রানী অ্যামিতিসের প্রনয় ও পরিনয়ের দৃশ্য। রানী অ্যামিতিস সম্রাটকে এক অসম্ভব চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল। সম্রাট তা সানন্দে গ্রহন করল এবং বলল- অ্যামিতিস, তোমাকে ভালবাসি। .. পরের দৃশ্যে দেখা গেল সমসাময়িক বাংলাদেশ। এক পাকচতারা হোটেলে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী হচ্ছে দুষ্প্রাপ্য সব এন্টিক গহনার। সেই প্রদর্শনী থেকে অভিনব উপায়ে শ’খানেক মানুষের চোখের সামনে থেকে চুরি হয়ে গেল ব্রিটিস রানীর সম্পত্তি ব্লাডস্টোন নামের একটি নেকলেস। উপস্থিত সকলের ১০ মিনিটের স্মৃতি গায়েব। চোর ছোট্ট একটা চিরকুট ফেলে গেছে, তাতে লেখা আছে, অ্যামিতিস, তোমাকে ভালবাসি। .. এই পর্যন্ত পড়ার পর পাঠক চমকে যাবে। হাত থেকে বইটা রাখার কথা ভুলেও ভাববে না। প্রাচীন আমলের এক সম্রাজ্ঞীকে ভালবাসার কথা কেন বর্তমান সময়ে কেউ চিরকুটে লিখবে? আর কেনই বা সেটা চুরির স্থানে ফেলে যাবে? .. এর পর কাহিনী এগিয়ে গেছে তিনটা মূল টাইম লাইন ধরে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতা, ১৫০০ শতকের আফগানিস্থান-ভারত-বাংলার চন্ডিক্যান রাজ্য আর সমসাময়িক বাংলাদেশ। মাঝে মধ্যে এর বাইরেও দুই তিনটা টাইম লাইন দেখা গেছে। যেমন ১৭০০ শতাব্দীর ইতালি, ১৯৯৬ সালের কোলকাতা, ১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময় পর সব গুলো ঘটনাই এক সূত্রে এসে গাঁথা পড়েছে। এই সূত্রের নাম- ব্লাডস্টোন। .. ব্লাডস্টোন চুরি হওয়ার পর থেকেই চুরির ঘটনা ঘিরে একের পর এক রহস্য সৃষ্টি হয়ে চলেছে। একটা রহস্যের দিকে নজর দিলে অন্য আরেকটা এসে হাজির। চুরির রহস্য তদন্ত করছে ডিবি অফিসার মনসুর হালিম আর ব্লাডস্টোনের পেছনের ইতিহাস উদ্ঘাটনে ব্যস্ত ড. রুদ্র রাশেদ। দুইজন দুই মেরুর মানুষ। একজন সদা হাসি খুশী, সব বিষয়ে মজা করে বেড়ানোই যার স্বভাব। অন্যজন গম্ভীর, মিতভাষী, শব্দ করে হাসেও না কখনও। .. মূল তদন্তের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে উঠে আসছে তাদের জীবনের ছোট ছোট অনেক বিষয়। যার কিছু ব্যাখ্যা লেখক দিয়েছেন, কিছু হয়ত তুলে রেখেছে সামনে কোন বইতে লেখার জন্য। রুদ্র রাশেদকে নিয়ে সিরিজ লেখার চিন্তা আছে লেখকের মাথায়, সেটা বই পড়লেই টের পাওয়া যায়। তবে সেখানে মনসুর হালিমকেও দেখানো গেলে মন্দ হয় না। লোকটা ভারী মজার। লেখকের সেন্স অফ হিউমারের প্রশংসা না করে পারছি না। এমন সিরিয়াস কাহিনির মধ্যেও মনসুর হালিম ক্যারেকটারটা পাঠককে খুব হাসাবে। খানিকটা মাসুদ রানার গিলটি মিয়ার মত লেগেছে লাগতে পারে। . যাই হোক, একটা নির্দিষ্ট সময় পর দুজনের মিলিত তদন্ত এক যায়গায় এসে থামল। এর পরের ঘটনা গুলোতে আছে একের পর এক চমক। এভাবেই দারুণ এক ফিনিশিং এর মধ্যে দিয়ে শেষ হয় ব্লাডস্টোন যাত্রা। বলতে বাধ্য হচ্ছি- বইটার এরচেয়ে ভাল ফিনিশিং আর কিছু হতে পারত না। শেষে এসে মনটা একদিকে যেমন বিষণ্ণ হয়ে যাবে, অন্যদিকে তেমন ভাললাগার অনুভূতি কাজ করবে। .. .. .. পাঠক_প্রতিক্রিয়া: বইয়ের শুরুর অধ্যায়টা বাদে, বাদ বাকি পুরো বইটা দারুণ উত্তেজনায় ভরপুর। প্রত্যেক ঘটনাবলির দৃশ্যায়ন অতি চমৎকার ছিল যা পাঠককে সারাক্ষণ বইয়ের মধ্যে গেঁথে রাখবে। আর শেষ দশটা অধ্যায় পাঠকের উত্তেজনা বাড়িয়ে দেবে তিনগুন। বার বার মনে হবে- শেষ হতে হতেও যেন হল না। .. .. বইটার যেসব দিক ভাল লেগেছেঃ .. প্রহমেই বইয়ের গেট আপের কথা বলতে হয়। ডাবল কভার দেওয়া। উপরের কভারে বইয়ের নামটা লেমিনেটিং করা আলো প্রতিফলিত হয়, দারুণ লাগে। ভেতরের কভাব হার্ড বাঁধাই করা, অনেকটা ডায়েরির মত। বাইন্ডিং আর কাগজের মান ভাল। সেই হিসেবে দামটা রিজনেবল হয়েছে। .. দ্বিতীয়ত, বইতে ইতিহাসের বোরিং বর্ণনা ছিল না, লেখকের লেখার স্টাইল খুবই ইন্টারেস্টিং যা পাঠককে বইতে আঁটকে রাখতে বাধ্য করবে। লেখকের ইতিহাস সংক্রান্ত জ্ঞানের পরিধি ব্যাপক। বইতে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতার বিভিন্ন গুরুত্পূর্ণ অধ্যায়, মহাবীর আলেক্সান্ডারের মৃত্যু রহস্য বিশ্লেষণ, বাদশা হুমায়ুনের সময়কার ঘটনাবলী, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের রুপ ইত্যাদি বিষয় তো আছেই। পাশাপাশি পবিত্র বাইবেল ও তাওরাত থেকে নেওয়া তথ্যও ছিল। ভাবতে আমার গর্ব হয়- বাংলাদেশী একজন রাইটার একটা বই লেখার পেছনে এমন পরিশ্রম করতে পারে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে বিবিএ- এমবিএ পাশ করা একজন একটি ছেলের ইতিহাসের প্রতি এত আগ্রহ এল কি করে? .. তৃতীয়ত, এই উপন্যাসে মানুষ একই সাথে অনেক কিছুর স্বাদ পাবে। বইতে যেমন আছে ইতিহাস, তেমনি আছে প্রেম, দ্বন্দ্ব, সংখাত, সংগ্রাম। আছে রহস্য, আছে থ্রিল, কিছু একশন দৃশ্যও আছে। সর্বোপরি বইতে বেশ কয়েকটা টুইস্ট বা চমক আছে, যা বইটিতে পারফেক্ট থ্রিলার উপন্যাসের সমস্ত উপকরন জুড়ে দিয়েছে। এক কথা বলা চলে- ভাললাগার সমস্ত উপকরন আছে বই জুড়ে। ভাল না লেগে কোন উপায় নেই। এতদিন বাইরের রাইটারদের এমন লেখা পড়ে এসেছি আমরা। এখন নাজিম উদ দৌলার মত রাইটারদের হাত ধরে বাংলায় সাহিত্যেও সেই ধারার আগমন হচ্ছে। এটা সত্যি আনন্দের বিষয় আমাদের জন্য। .. .. শেষ কথাঃ বইয়ের শেষে লেখক একটা প্রশ্ন রেখে গেছেন পাঠকের জন্য। প্রশ্নটা অবশ্য হালিম করেছে রাশেদকে- “আবার কি হবে দেখা?” বইয়ের শেষ কটা লাইনে অবশ্য লেখক তার উত্তরও দিয়ে গেছে। “কে জানে হয়ত আবার তাদের দেখা হয়ে যাবে। অন্য কোন ইতিহাসে, অন্য কোন গল্পে”। আমার উত্তর, অবশ্যই আমরা চাই দেখা হোক। রুদ্র রাশেদকে আবার দেখতে চাই কোন এক ঐতিহাসিক রহস্যের পেছনে ছুটতে। সেই সাথে দেখতে চাই মনসুর হালিমকেও। হয়ে যাক, প্রোফেসর ডাবল আর সিরিজ। বাংলা সাহিত্যে এটা দারুণ এক এডিশন হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। .. ব্যক্তিগত রেটিং : ৯/১০ লিখেছেনঃ শুভোন দেব
Was this review helpful to you?
or
বইঃ ব্লাডস্টোন। লেখকঃ নাজিম উদ দৌলা। ধরণঃ হিস্টোরিকাল থ্রিলার। পৃষ্ঠাঃ ২৫৬। মূল্যঃ ১৯৬ টাকা (রকমারি)। প্রকাশকালঃ আগস্ট, ২০১৫। “অ্যামিতিস, তোমাকে ভালবাসি”- শর্টকাট রিভিউঃ ঘটনা হচ্ছে, দিন-দুপুরে মানুষের চোখের সামনে থেকে চুরি হলো- ‘কিছু একটা’। যাওয়ার সময় চোর ছোট্ট একটা চিরকুট ফেলে গেছে। তাতে লেখা- “কিছু একটা”! অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ চুরির কথা কিছু মনে করতে পারছে না! একদিকে আন্তর্জাতিক চাপ, অন্যদিকে চাকরী নিয়ে টানাটানি। তাই বাধ্য হয়ে ডিটেকটিভ ইন্সপেক্টর মনসুর হালিম শরণাপন্ন হলেন পাগলাটে গবেষক নামে খ্যাত ইতিহাসের শিক্ষক ড. রুদ্র রাশেদের। দুজনের মিলিত তদন্তের ফলে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে যেমন তেমন সাপ নয়, বেরিয়ে এল মস্ত বড় অ্যানাকোন্ডা! ঘটনার শুরুটা হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে, ব্যাবিলনের শুন্য উদ্যানে! তবে কি প্রায় আড়াই হাজার বছর পর সম্রাট নেবুচাদনেজার ফিরে এসেছেন সম্রাজ্ঞী অ্যামিতিসের প্রতি তার ভালবাসার নিদর্শন উদ্ধার করতে? ঘটনার এখানেই শেষ নয়! ব্লাডস্টোনের সাথে জড়িয়ে আছে পারস্যের সম্রাট সাইরাস কতৃক ব্যাবিলন ধ্বংসের স্তবক, আছে হুমায়ূন-শেরশাহর কনৌজ আর সেরহিন্দের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, আছে ইশাখাঁ-প্রতাপাদিত্যের ৪০ বছরের দ্বৈরথ, আছে দুইশ বছরের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন! আর সবকিছুর মূলে রয়েছে ‘কিছু একটা’র অভিশাপ! শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে এই অভিশাপের পেছনে ছুটছে সবাই। আসুন ড. রুদ্র রাশেদের সাথে আমরাও ছুটি। দেখা যাক এই রহস্যের কোন কূল- কিনারা হয় কিনা। আর কিছু না বলাই ভালো। আবার স্পয়লার না হয়ে যায়। ব্যক্তিগত মতামতঃ হুম, ভালোই লাগছে বইটা। হুম? আর কি বলব, এসব ব্যাপারে চুপ থাকাই ভালো। যদি আবার...। আচ্ছা ঠিকাছে, এত করে যখন বলছেন, তাহলে আরো একটু বলি নাহয়- সেই একই কথা, বই শুরুর সময় তেমন কোনো এক্সপেক্টেশন ছিল না। তাছাড়া, নতুন লেখকদের বইয়ের মধ্যে আমার পড়া দ্বিতীয় বই এটি। যাহোক, পড়লাম। ভালোও লাগলো। লেখকের গল্প বলার ধাঁচ ভালো। পড়ার সময় বারবার মনে হচ্ছিল, এটা নিয়ে হলিউড দ্বারা বিগ বাজেটের একটা ভালো মুভি বানানো যেত। আর তথ্যবহুল থ্রিলার লেখার চেষ্টার জন্য লেখকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। এই তথ্য সাজানোর ক্ষেত্রেও তিনি সফল। তবে বইয়ে বিভিন্ন ঘটনায় একই কথা বারবার ঘুরে ফিরে আসার কারণে অনেকে বিরক্ত হতে পারেন। অবশ্য আমার ক্ষেত্রে অমন হয়নি, হয়তো গল্প এবং তা বলার ধরন সেই বিরক্তিকে প্রশমিত করেছিল। আর হ্যাঁ, উপরের ভালোবাসার কথাটা নাহয় বই খুলেই খোলাসা করে নেবেন, কেমন? পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ ভালো। ব্যক্তিগত রেটঃ ৭.৭/১০ পড়বেন কি পড়বেন না? – পড়ে ফেলুন। কেন পড়বেন, সেটা রিভিউ পড়ে বুঝেছেন নিশ্চয়। দেশে এমন হিস্টোরিকাল থ্রিলার খুব একটা নেই। বিঃ দ্রঃ ১. ‘ব্লাডস্টোন’ নাজিম উদ দৌলার প্রথম মৌলিক থ্রিলার উপন্যাস। ধন্যবাদ :)
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_বইপোকা_রিভিউ_প্রতিযোগিতা বই-ব্লাডস্টোন লেখক-নাজিম উদ দৌলা ধরন-হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার মূল্য-২৮০ পৃষ্ঠা-২৫৬ আদী প্রকাশনী ব্লাডস্টোন একটি লাল রঙের রক্ত পাথরের নেকলেস। জানা যাক এর ইতিহাস। এটা জানতে যেতে হবে সুদূর অতীত থেকে অতীতে। প্রাচীন ব্যবিলনের সম্রাট নেবুচাদনেজার এবং রানী অ্যামিতিসের কাছে। বইয়ের শুরুতে লেখক তাদের প্রেম, পরিনয় এবং অ্যামিতিসের একটা ইচ্ছার কথা বলেছেন। যেখানে আছে এই ব্লাডস্টোনের কাহিনী। কি সেটা? রইলো বইয়ের পাতায়। কিন্তু রানী অ্যামিতিসের ইচ্ছাটা পূরণ করা ছিলো একে বারেই অসম্ভব। কিন্তু ভালবাসার সংঙ্গা রক্ষার্থে সম্রাট রাজি হলেন এবং বলে উঠলেন,- অ্যামিতিস, তোমাকে ভালবাসি।" এরপর চলে আসি বর্তমানে, চিত্র টি আমাদের দেশের একটি পাঁচতারা হোটেল। এবং সেখানে হচ্ছে জাতিসংঘের একটি অঙ্গসংগঠন কর্তৃক অায়োজিত একটি দুষ্প্রাপ্য এন্টিক গহনার প্রদর্শনী। সেখানে বৃটেনের রানীর ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা থেকে ব্লাডস্টোনও আনা হয় প্রদর্শনের জন্য। যেহেতু দুষ্প্রাপ্য, সেখানে সিকিউরিটির ব্যপারে কোন সন্দেহ নেই। অথচ, পুরোই অসম্ভব ভাবে একটি কাজ ঘটে গেল। উপস্থিত শ’খানেক মানুষের চোখের সামনে থেকে হাওয়া হয়ে গেল ব্রিটিশ রানীর সম্পত্তি ব্লাডস্টোন নামের নেকলেস। আর আশ্চর্যজনক কথা হলো, সেখানে যারা ছিলেন, তাদের সকলের ১০ মিনিটের স্মৃতি হারিয়ে গেছে। আর যে এই নেকলেসটা হাতিয়েছে, সে ফেলে গেছে একটি চিরকুট। তাতে লেখা-অ্যামিতিস, তোমাকে ভালবাসি। কাহিনী কি! ব্যবিলনের সম্রাট হাজির হলেন নাকি! তাই যদি হয় অ্যামিতিস কই! আর তিনিই বা এই নেকলেস কেন চুরি করবেন! তাইবা যদি না হয়, অন্য কেউ সরিয়েছে। কিন্তু অবলম্বন করেছে কোন কৌশল। সেটা কি? চুরির ঘটনায় অনেক কিছু শুনতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। প্রশাসন চেষ্টা করেও কিছু করতে পারছে না। চোর তো নয়ই, এই চিরকুটেরর রহস্যও না। এই চিরকুটে লেখা, এই নতুন অ্যামিতিসই বা কে? যাই হোক, ব্লাডস্টোনের ইতিহাস এবং এই রহস্যের সমাধানে সাহায্যের জন্য গোয়েন্দা মনসুর হালিম , অধ্যাপক রুদ্র রাশেদের কাছে যান। এর পর চলতে থাকে কাহিনীর নিজস্ব গতিতে, লেখক একই সাথে কয়েকটা সময়ের সম্বনয়ে এগিয়ে নিয়ে যান উপন্যাস। বিভিন্ন সময়য় এবং বিভিন্ন সময়ের ইতিহাস স্থান পায় এই রক্তপাথরের সন্ধানের সাথে। যেহেতু, হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার, তাতে তো থাকবেই ইতিহাসের ঝাঁঝ। ইতিহাসের - প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতা, নেবুচাদনেজার, আলেকজেন্ডার, ইতালিয়ান পাগাগিনিনি, বাংলার বার ভূইয়া আর সমসাময়িক বাংলাদেশ। [খ্রিষ্টপূর্ব ৫৯৫ ব্যাবলিন শহর, এরপর ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দের চন্ডিক্যান রাজ্য এবং আর বর্তমান সময় । তিনটি টাইমলাইন! আরো এসেছে ১৭০০ শতাব্দীর ইতালি, ১৯৯৬ সালের কলকাতা, ১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ পার্লামেন্ট।] এতগুলো ইতিহাসে পুরাই পাঠকের তালগোল পাকিয়ে যাবার অবস্থা। কখন থেকে কখন কি হচ্ছে! আবার মূল কাহিনীর সাথে লেখক সব কিছুর ব্যাখ্যা দিয়ে দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন। প্রথমে একটার সাথে আরেকটার কোন তাল না পেলেও একসময় সব গুলো একই জায়গা স্থির হয়। সবগুলোর এক সূত্রে এনে হাজির করেন লেখক। সব গুলোর কেন্দ্রবিন্দু তখন ব্লাডস্টোন। শুরু থেকেই বেশ আগ্রহ ছিলো যদিও ইতিহাসের মাত্রা বেশি ছিলো তবুও বর্ণনা করেছিলেন লেখক বেশ সুন্দর ভাবে। বিরক্তিকর না হলেই পুরো টা উপভোগ্য।শেষের দিকে আগ্রহ ছিলো বেশ। বলা যায় ইন্ডিং এ আমি সন্তুষ্ট। বানান আর ব্যকরণ গত ভুল ছিলো। আবার তুমি, আপনির কিছুটা ঝামেলা এগুলো প্রিন্টিং মিস্টেক বলাটাই ভালো।এত বেশি কাহিনীতে চরিত্রের থেকে কাহিনী স্থান পেয়েছে বেশি। সব বাদে, লেখকের লেখার স্টাইল বেশ ভালো বলেই ইতিহাস বর্ণনা ছিলো বেশ ইন্টারেস্টিং। এই বইয়ে যেহেতু ইতিহাস পাঠ অনেক বেশিই বলা যায় এটা লিখতে লেখককে বেশ সময় দিতে হয়েছে। তিনটে সময়কে বর্ণনার পর একটি স্থানে এনে ইন্ডিং দেওয়া সত্যিই বেশ কঠিন ছিলো। বিশেষ করে ইতিহাসের কিছু বিশ্লেষণ যেমন প্রাচীন মেসোপটেমিয়া, আলেক্সান্ডারের মৃত্যু, বাদশা হুমায়ুনের সময়কার বিভিন্ন ঘটনাবলী, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে নেওয়া তথ্য। এসব ঘাটতে একটা মানুষের কি পরিমাণ ধৈর্য থাকা উচিৎ। শুধু মাত্র ইতিহাস যদি নেশার বস্তু হয় তবেই হয়তো সম্ভব। তাছাড়া লেখক একই সাথে ভিন্ন জাতের মিশেল মসলা দিয়েছেন কাহিনীতে। রেটিং-৪/৫ রকমারি লিংক- https://www.rokomari.com/book/102588/ব্লাডস্টোন
Was this review helpful to you?
or
ব্লাডস্টোন কি? সেটা জানতে হলে আমাদের টাইম মেশিনে করে চলে যেতে হবে আড়াই হাজার বছর অতীতের মেসোপটেমিয়া সভ্যতায়। যেখানে এই ব্লাডস্টোন বা রক্তপাথরের সাথে জড়িয়ে আছে একই সাথে প্রেম ও নির্মমতার ইতিহাস। ব্যাবিলনের সম্রাট নেবুচাদনেজার একদিন লক্ষ্য করলেন তার প্রিয়তমা স্ত্রী অ্যামিতিসের মন খারাপ। কিন্তু কিসের অভাবে রানীর মন খারাপ? অনেক জোরাজুরি করে জানা গেলো অ্যামিতিসের পিতার রাজ্য মেডানে সে সবুজ-শ্যামল, ফুলে-ফলে পরিপূর্ণ শহরে বড় হয়েছে। তাই ব্যাবিলনের রুক্ষ মরু তে তার মন টিকছে না। তখনই রাজা নেবুচাদনেজার সিদ্ধান্ত নিলেন ব্যাবিলনে মেডানের মত করে একটি উদ্যান তৈরি করা হবে। আপনারা অনেকেই ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যানের কথা শুনে থাকবেন। যেটা সপ্তাশ্চর্যের একটি। যদিও অনেক ঐতিহাসিক এই উদ্যানের অস্তিত্ব অস্বীকার করেন। শূন্য উদ্যান তৈরি হলেও মরুর হলদে আকাশে মেডান রাজ্যের আকাশের মত আবীর রঙ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছিলো না। অবশেষে সম্রাটের প্রেমের কাছে জীবন দিতে হলো হাজারও যুবককে। এই সকল মানুষের রক্তের সাথে একটি বিশেষ পাথরের মিশ্রনে তৈরি হলো ব্লাডস্টোন বা রক্তপাথর। ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান ছেয়ে গেলো অদ্ভুত সুন্দর আবীর রঙে। এবার একটু বর্তমানে আসি। ২০১৬ সালের এপ্রিলে ঢাকার হোটেল রেডিসনে। জাতিসংঘের একটি অঙ্গসংগঠন কতৃক আয়োজিত একটি অ্যান্টিক জুয়েলারি প্রদর্শনী থেকে সবার চোখের সামনে দিয়ে চুরি হয়ে গেলো চারটা লাল রক্তপাথর বসানো একটি নেকলেস। যা বর্তমানে ইংল্যাণ্ডের রানীর ব্যাক্তিগত সম্পত্তি। ব্যাপারটা অনেকটা ধুম মুভির মত হলেও এখানে হয়ত চোর ধুম মুভির চোরকে ছাড়িয়ে গেছে। সকল দর্শনার্থীর সামনে থেকে হাতুরি দিয়ে বুলেটপ্রুফ কাঁচ ভেঙে নেকলেস নিয়ে চোর পালিয়ে গেলো। কিন্তু কেউ কিচ্ছু দেখলো না। দর্শনার্থীদের মনে হলো মাত্র একমুহুর্ত আগে ওখানে নেকলেস ছিলো। একমুহুর্ত পরে নেকলেস নেই, কাঁচ ভাঙা। এমন অদ্ভুত চুরির কথা কেউ শুনেছে বলে মনে হয় না। সবাই যেন কিছু সময়ের জন্য দৃষ্টি ও শ্রবন শক্তি হারিয়ে ফেলছিলো। তদন্তের দায়িত্ব পড়লো ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চের কর্মকর্তা মনসুর হালিমের উপর। অদ্ভুত চরিত্র এই মনসুর হালিম। তিনি কি গোয়েন্দা নাকি কমেডিয়ান সেটা ভাববার বিষয়। অত্যন্ত সিরিয়াস অবস্থায়ও কমেডি করেন। ওহ! একটা কথা তো বলা হয় নি; চোর চুরি করে যাওয়ার সময় ফেলে রেখে গেলো একটা চিরকুট। ভাবতে পারেন চিরকুটে কি লেখা? "অ্যামিতিস, তোমাকে ভালোবাসি" এইবার বুঝুন ঠেলা! আড়াই হাজার বছর পরে সম্রাট নেবুচাদনেজারের ভূত নিশ্চয়ই ব্লাডস্টোন চুরি করেন নাই! তাহলে এই চিরকুটের মানে কি? এই মানে জানার জন্য মনসুর হালিমকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রফেসর রুদ্র রাশেদ বা প্রফেসর ডবল আর এর সরনাপন্ন হতে হলো। দুজনে মিলে নেমে গেলেন ইতিহাসের পাতায়। বইয়ের একেবারে শুরু থেকেই উত্তেজনা শুরু। প্রথমে পড়ার সময়ে প্রতি অধ্যায়ের শুরুতে দেওয়া সাল এবং তারিখ বিশেষভাবে লক্ষ্য করি নাই। পরবর্তীতে পিছনে গিয়ে সেগুলো দেখতে হলো। ইতিহাসের কয়েকটি স্তর উঠে এসেছে বইতে। বোঝাই যায় বইটা লেখার জন্য লেখককে প্রচুর খাটতে হয়েছে। সম্রাট নেবুচাদনেজার, সম্রাট আলেকজান্ডার, বাংলার বার ভূইয়ার রাজা প্রতাপাদিত্য, ইতালিয়ান মিউজিশিয়ান পাগানিনি; সব কেমন খাপছাড়া মনে হয় প্রথমে। ধীরেধীরে ধৈর্য্য ধরে পড়ে যান। অনেকগুলো সময়ের অনেকগুলো বিখ্যাত চরিত্রের চমৎকার সন্নিবেশ ঘটেছে বইটিতে। বানান ভুল থাকলেও হয়ত কাহিনীর জোরে সেটা চোখে পড়েনি। যতক্ষণ পড়ছিলাম ততক্ষণ ডুবে ছিলাম ইতিহাসে। আপনিও সেটা করবেন। বইটা পড়ার পরে আমার মত আপনারও হয়ত ইতিহাস ভালো লাগতে শুরু করবে। সবশেষে একটা কথা না বললেই নয়- অ্যামিতিস, তোমাকে ভালোবাসি।
Was this review helpful to you?
or
রক্তপাথর বা ব্লাডস্টোন...ঐতিহাসিক মূল্যের দিক থেকে যা হতে পারে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় হীরকখণ্ড 'কোহিনূর' এর চেয়েও বেশি মূল্যবান, সেই ব্লাডস্টোন দিনদুপুরে হলভর্তি প্রায় ১০০ জন লোকের সামনে চুরি হয়ে গেল অনায়াসেই! জাতিসংঘের শিল্প-সংস্কৃতি বিষয়ক একটি অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে ব্লাডস্টোনসহ ইংল্যাণ্ডের আরো কিছু প্রাচীন অলংকারের প্রদর্শনী চলছিলো স্বনামধন্য এক পাঁচ তারকা হোটেলের এক্সিবিশন রুমে। সেই হলভর্তি লোকের সামনেই রীতিমত উবে গেল ব্লাডস্টোন। চুরি করার সময়ে কেউই টের পায়নি, এমনকি সবাই যেন সেই পুরো সময়টাতে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ছিলো, সাময়িকভাবে হারিয়ে ফেলেছিলো যেন দেখার এবং শোনার ক্ষমতা। এই অদ্ভুত আর রহস্যময় ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব পড়ে হোমিসাইডের তরূণ, তুখোড়, বুদ্ধিদীপ্ত এবং রসিক গোয়েন্দা মনসুর হালিমের উপর। আর এই ঘটনার রহস্য খুঁজে পেতে সে সাহায্য নেয় ঢাবির ইতিহাস বিভাগের সহকারি অধ্যাপক রুদ্র রাশেদের। তারা দুজনে মিলে ব্লাডস্টোনের পুরো ইতিহাস ঘাঁটতে শুরু করে। আর সেটা সম্ভব হয় কেবল একটা মাত্র ক্লু এর কারণে... চোরের ফেলে যাওয়া সামান্য এক চিরকুটের কারণে যেটাতে লেখা ছিল, 'অ্যামিতিস, তোমাকে ভালোবাসি'। ইতিহাস ঘাঁটতে ঘাঁটতে ধীরে ধীরে বের হতে থাকে রাজা নেবুচাদনেজারের কথা, তার প্রিয়তমা অ্যামিতিসের কথা, ব্যাবিলনের শূন্যোদ্যান তৈরির পেছনে থাকা সম্ভাব্য আত্মত্যাগের ভয়াবহ সত্যির কথা, আরো আসে আলেক্সান্দার কর্তৃক ব্যাবিলন দখলের কথা। এর সাথে উঠে আসে আফগান এক বীর মাহতাব খানের কথা, রাজা প্রতাপাদিত্যের চরিত্রের জঘন্য দিকের ঘটনাগুলো, মাহতাব আর অরুণাবতীর প্রেম ইত্যাদি আরো অনেক কিছু! কি? মাথা ঘুরাচ্ছে? ভাবছেন এগুলোর সাথে ব্লাডস্টোন চুরির কি সম্পর্ক? ৫০০ বছর আগেকার ব্যাবিলনরাজ নেবুচাদনেজার নিশ্চয়ই আবার ফিরে আসতে পারেন না? তাহলে কি বা কে লুকিয়ে থাকতে পারে চুরির পেছনে? আর যাই হোক, কারো অর্থসিদ্ধি এই চুরির মূল কারণ হতে পারে না। আর সেটা কেন না, কিভাবে না, সেটি নিয়েই এগিয়ে গেছে ব্লাডস্টোনের অনবদ্য গল্পকথা... পাঠ প্রতিক্রিয়া: ইনকারনেশনের তুলনায় এটি যে কয়েকধাপ এগিয়ে তা বলাই বাহুল্য! ফাটাফাটি একটা উপন্যাস! কি নেই এর ভেতর? রহস্য, সাস্পেন্স, থ্রিল, রোমান্স, অ্যাকশন, নায়ক, ভিলেন, হিস্টোরি- সব, সব আছে এর মধ্যে। আমার পড়া শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক থ্রিলারগুলোর মধ্যে এটি একটি। ভালো লাগার দিকগুলোকে আলাদাভাবে পয়েন্ট আউট করলে যা দাঁড়ায়- এখানে চার চারটা টাইমলাইন প্যারালালি টেনে নিয়ে গিয়ে রহস্যের সমাধান করেছেন লেখক। প্রথমটি রাজা নেবুচাদনেজারের সময়কাল, দ্বিতীয়টি রাজা প্রতাপাদিত্যের সময়কাল, তৃতীয়টি বর্তমান সময়ের আর সর্বশেষটি আলেক্সান্দারের। আলাদা আলাদাভাবে ঘটনার প্রবাহকে ঠিকমতো একই সাথে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে চমৎকার এক ছন্দ যুগিয়েছে রচনায়। অরুণাবতী আর মাহতাবের প্রেমের বর্ণনা এককথায় অসাধারণ! মাতৃভাষায় প্রেমের বর্ণনা পড়ার থেকে চমৎকার আর কিছু হতে পারে না- এটা এই বই না পড়লে হয়তো জানতামই না। আর হ্যাঁ বরাবরই মতই ভুবন কাঁপানো টুইস্ট! লেখকের গল্পে টুইস্ট আনার পদ্ধতির তারিফ করতে হয় বৈকি! গল্প শেষ তারপরেও গল্পের টুইস্ট শেষ হয় না। ইতিহাসের ফাঁকফোকরকে কাজে লাগিয়ে লেখক এত সুন্দর একটা প্লট তুলে ধরেছেন যেটা অবিশ্বাস্য। আর ঐতিহাসিক তথ্যের ব্যাপারে কিছু বলার থাকে না। প্রচুর পড়াশোনা করেছেন তিনি এর উপর। এত বিস্তৃত একটা বিষয়কে লেখক যেভাবে তুলে ধরেছেন তাতে গল্প পড়ার প্রতি আগ্রহ না কমে গিয়ে আরো বেড়ে যায়। বাহবা তো দিতেই হয়। অনেক অনেক কিছু জানা গেছে এই বই থেকে... ও হ্যাঁ, একটি বানান ভুলও চোখে পড়েনি... ব্যক্তিগত রেটিং: ৫/৫
Was this review helpful to you?
or
বইয়ের নাম ব্লাডস্টোন কেন? সেটা জানতে হলে আমাদের পিছনে ফিরে তাকাতে হবে। না, আপনার পিছনে নয়। ইতিহাসের পিছনে তাকাতে হবে। ব্লাডস্টোন বা রক্তপাথরের সাথে একই সাথে জড়িয়ে আছে প্রেম এবং নির্মমতার গল্প। খ্রীস্টের জন্মেরও ৫০০ বছর আগে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতার ব্যাবিলনের সম্রাট ছিলেন সম্রাট নেবুচাদনেজার ( কোথাও কোথাও নেবুক্যাডনেজারও বলা হয়ে থাকে)। নিজের স্ত্রী অ্যামিতিসকে প্রচন্ড ভালবাসতেন সম্রাট। স্ত্রীর খুশির জন্য সবকিছু করতে পারতেন তিনি। কিন্তু বিয়ের পর ব্যাবিলনে আসার পর থেকেই রানী অ্যামিতিস সবসময় বিষণ্ণ হয়ে থাকতেন। একসময় সম্রাটের চাপের মুখে স্বীকার করেন যে ব্যাবিলনের আবহাওয়া তার ভালো লাগেনা। তার বাবার রাজ্যে ফুলে ফলে গাছের ছায়ায় বড় হয়েছেন অ্যামিতিস। কিন্তু ব্যাবিলনের মরুভূমিতে তার দমবন্ধ হয়ে থাকে। স্ত্রীকে খুশি করতে সম্রাট নেবুচাদনেজার বানালেন ঝুলন্ত উদ্যান। ঝুলন্ত উদ্যান সম্পর্কে আপনারা হয়তো সবাই জানেন। সপ্তাশ্চর্যের একটা ছিল এই ঝুলন্ত উদ্যান। যদিও ইতিহাসবিদদেত মধ্যে সবাই এর অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। এই ঝুলন্ত উদ্যানের আকাশকে রানী অ্যামিতিসের বাবার বাড়ির আকাশের মত আবীর রঙে রাঙাতেই বানানো হয় ব্লাডস্টোন। কথিত আছে এই ব্লাডস্টোন বানানো হয় মানুশের রক্ত দিয়ে। এবার বর্তমানে আসি। ঢাকার র্যাডিসন হোটেলে জাতিসঙ্ঘের একটা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। সেই প্রদর্শনীতে পৃথিবীর দুস্প্রাপ্য এবং দুর্লভ অলঙ্কার প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে ব্লাডস্টোন দিয়ে বানানো একটা ন্যাকলেসও ছিল যা বর্তমানে ইংল্যান্ডের রানীর ভান্ডারে ছিল। প্রদর্শনী চলাকালে ধুম সিনেমার মত চুরি হয়ে গেল ব্লাডস্টোন। প্রায় শখানেক মানুষের সামনে দিয়ে চোর নির্বিঘ্নে হাতুরি দিয়ে বুলেটপ্রুফ গ্লাস ভেঙে ব্লাডস্টোন নিয়ে গেছে কিন্তু কেউ কিছু মনে করতে পারছেনা কি হয়েছে তখন। যারা উপস্থিত ছিলেন ওখানে সবাই বলছেন তারা এক সেকেন্ড আগেও ব্লাডস্টোন দেখেছে কিন্তু এক সেকেন্ড পরেই দেখে সেফের কাচ ভাঙা এবং ব্লাডস্টোন উধাও। সিসিটিভির ভিডিওতে দেখা গেছে চোর আস্তে ধীরে গ্লাস ভেঙ্গে ব্লাডস্টোন নিয়ে গেছে সবার সামনে দিয়েই। সবাই তাকিয়ে দেখেছে কিন্তু কেউ কিচ্ছু মনে করতে পারছেনা। ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং না? ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয়। চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় চোর একটা চিরকুট রেখে গেছে। চিরকুটে লেখা ছিল "অ্যামিতিস তোমাকে ভালোবাসি"। চোর বের করার তদন্তে নামে ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর মনসুর হালিম। আজব একটা ক্যারেক্টার। ডিটেক্টিভ না কমেডিয়ান এই ব্যাপারে আপনাদেরও সন্দেহ হবে। সব ব্যাপারেই মজা করার আজব এক ক্ষমতা আছে ওর। সিরিয়াস ব্যাপারেও মজা করতে তার কোনও সমস্যাই হয়না। তদন্তে নেমে কুল কিনারা না পেয়ে দ্বারস্থ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রফেসর রুদ্র রাশেদের। রুদ্র রাশেদেকে সবাই প্রফেসর ডবল আর বলে ডাকে। ইতিহাসের কোনও বিষয় পেলে নাওয়া খাওয়া ভুলে সেটার পিছনে লেগে যায়। ওরা তদন্ত করতে থাকুক আমরা আলোচনায় যাই। ব্লাডস্টোন একটা ঐতিহাসিক থ্রিলার। ঐতিহাসিক থ্রিলার সবথেকে সহজ সংজ্ঞা হল ইতিহাসকে আশ্রিত করে কল্পনার মিশেলে লেখা থ্রিলার। এর আগে বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক থ্রিলার আমি পড়েছি। তারমধ্যে মাশুদুল হকের মিনিমালিস্টের সাথে এই বইয়ের একটা মিল আছে। দুটাই প্রাচীন এক রত্নপাথরের ইতিহাস নিয়ে এগিয়েছে। মিনিমালিস্টে যেনন দরিয়া-ই-নুর এর প্রাচীন থেকে বর্তমান ইতিহাস বলা হয়েছে তেমনি ব্লাডস্টোনেই তাই। ব্লাডস্টোনের উৎপত্তি থেকে শুরু করে বর্তমানে ইংল্যান্ডের রানীর কাছে ওটা কিভাবে গেল তার বিস্তারিত ইতিহাস বলা হয়েছে এই বইয়ে। এটা করতে গিয়ে ঠিক তিনটা ভিন্ন ভিন্ন সময়ের ইতিহাস আলাদা করে তুলে ধরতে হয়েছে লেখককে। খাটতে হয়েছে প্রচুর, একথা স্বীকার করছি। তিনিটা আলাদা সময়ে যথাক্রমে যীশুর জন্মের ৫০০ বছর আগে বলা হয়েছে নেবুচাদনেজারের রাজত্ব এবং ব্লাডস্টোনের উৎপত্তির কথা, ১৫০০ সালের দিকে ব্লাডস্টোন কিভাবে কোথায় গেল তার ইতিহাস এবং বর্তমান সময়ে ব্লাডস্টোন নিয়ে কি ঘটছে তার বর্ণনা। প্রত্যেকটা বর্ণনা লেখক খুব সুন্দরভাবে দিয়েছেন। পড়তে গিয়ে বোরিং লাগার চান্স নাই। তবে প্রথম দিকে ১৫০০ সালের ইতিহাসে একটু বোরিং হয়েছিলাম। কিন্তু যখনই এর সাথে ব্লাডস্টোনের সংযুক্তি পেলাম তখন থেকে গোগ্রাসে গিলেছি। বইয়ের প্রচ্ছদ সুন্দর হয়েছে। বাধাইও ভাল। তবে বানানের ব্যাপারটায় লেখককে আরেকটু যত্নশীল হতে হবে। দ্রুত টাইপ করতে গিয়ে অনেক জায়গায় টাইপিং মিসট্যাক করেছেন। কিছু জায়গায় ঐতিহাসিক নামগুলো ভুল লেখা হয়েছে। প্রথম দিকে আফগান সেনাপতি আফতাব খানের স্ত্রীর নাম বলা হয়েছে সালমা বেগম। পরবর্তীতে বলা হয়েছে জুলেখা। রুকাইয়ার মেয়ে সুরাইয়ার নামও একবার ভুল করা হয়েছে। তবে সবথেকে বড় অনিচ্ছাকৃত ভুলটি হল সময়। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি ব্লাডস্টোন চুরি হয়েছিল। কালক্রমে সেটা মে মাসে যাওয়ার কথা থাকলেও ভুলক্রমে সেটা আবার এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে। যতক্ষণ বইটি পড়ছিলাম ততক্ষণ ডুবে ছিলাম ইতিহাসে। বেশ কয়েকবার নেটে ঢুকে এটা সেটা ঘাটাঘাটি করেছি, হয়তো আপনিও করবেন। ও একটা কথা বলতে ভুলেই গিয়েছি কিংবদন্তীর বেহালাবাদক পাগানিনিও আছেন এই গল্পে। সবশেষে একটি কথাই বলব- "অ্যামিতিস তোমাকে ভালোবাসি"
Was this review helpful to you?
or
লেখকে ধন্যবাদ জানাই মৌলিক বই লেখার জন্য। গল্প বলার ধাঁচ ভালো; কিন্তু উন্নতির সুযোগ আছে। তথ্যবহুল থ্রিলার লেখার চেষ্টার জন্য সাধুবাদ জানাতেই হয়। শুরু করলেও শুধু মাত্র ভালো ভাবে শেষ করতে না পারার কারণে অনেক গল্প শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ গল্পে পরিণত হয়। এখানেও তাই হয়েছে। কাহিণীর ব্যপ্তি কমিয়ে গাথুঁনির দিকে মনযোগ দেয়ার অনুরোধ করছি।
Was this review helpful to you?
or
লেখক নাজিম উদ দৌলা ‘ব্লাডস্টোন’ উপন্যাসটা দুইবার লিখেছেন। কারন, প্রথমবার দুর্ঘটনাবশত তাঁর কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভ ক্র্যাশ করে। সমস্ত কিছু হারিয়েও তিনি ভেঙ্গে পড়েননি। আবারো শুরু করেছেন। আর তার ফসল হিসেবেই আজ ‘ব্লাডস্টোন’ শোভা পাচ্ছে আমাদের শেলফে। ঐতিহাসিক উপন্যাসের একটা আলাদা রকম আবেদন আছে। ঔপন্যাসিক এখানে ইতিহাসের অলিগলিতে ঘুরে ঘুরে তৎকালীন ঘটনাগুলোর সাথে নিজের সৃষ্টি করা কাহিনি ও চরিত্রগুলোকে জুড়ে দেন। এই কারনেই ঐতিহাসিক উপন্যাস হয়ে ওঠে আরো আকর্ষনীয়। আর নিখাদ ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সাথে যখন কোন থ্রিলার কাহিনির সমন্বয় ঘটানো হয়, থ্রিলারপ্রেমীদের কাছে সেটা হয়ে ওঠে উপাদেয় কোন আহারের মতো। কাজটা নিঃসন্দেহে বেশ কঠিন। আর ‘ব্লাডস্টোন’-এ এই কঠিন কাজটিই করে দেখিয়েছেন লেখক নাজিম উদ দৌলা। কাহিনির শুরু একটি মহামূল্যবান অ্যান্টিক নেকলেস চুরির মধ্য দিয়ে। ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত একজিবিশন থেকে নেকলেসটি চুরির সময় চোর ফেলে যায় একটি চিরকুট। তাতে লেখা রহস্যময় একটি লাইন – অ্যামিতিস, তোমাকে ভালোবাসি। মহামূল্যবান চার টুকরো রক্তপাথর বসানো নেকলেসটি যখন চুরি হয়, সবাই উপস্থিত ছিলো একজিবিশন রুমে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, কেউ-ই মনে করতে পারছেনা কি ঘটেছে। বিষয়টি অবাক করে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। চোরের ফেলে যাওয়া চিরকুটটি এটাই নির্দেশ করে যে ব্লাডস্টোনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে অন্তত আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস। ব্লাডস্টোনের চুরির রহস্য ভেদ করতে এগিয়ে আসে ডিবি ইন্সপেক্টর মনসুর হালিম। সে দ্বারস্থ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রভাষক ড. রুদ্র রাশেদের। দুজন অসম স্বভাবের মানুষ জুটি বেঁধে হাতড়াতে থাকে প্রাচীন ইতিহাস। যে ইতিহাস রুদ্র রাশেদ ও মনসুর হালিমকে ক্রমান্বয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যায় প্রাচীন ব্যাবিলন, মিডিয়ান, আফগানিস্তান, ভারতবর্ষ ও সবশেষে এই বাংলায়। ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে ব্লাডস্টোন অর্থাৎ রক্তপাথরের অভিশপ্ত রূপ।
Was this review helpful to you?
or
ভালবাসা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত দুর্লভ একটি উপহার। এই ভালবাসার জন্য মানুষ অনেক অসম্ভবকেও সম্ভব করে তোলে। প্রেয়সীর মনের বিষণ্ণতা দূর করার জন্য এমনই এক অসম্ভবকে বাস্তবে রুপদান করেন ব্যাবিলন সম্রাট নেবুচাদনেজার। তার প্রিয়তমা অ্যামিতিস এর জন্য নির্মাণ করেন ঝুলন্ত উদ্দান। রুক্ষ মরুর বুকে তার বাবার মিডিয়ান রাজ্যের মত একটি পরিবেশ স্থাপন করেন। কিন্তু এই ভালবাসার বহিঃপ্রকাশই যখন অভিশাপ এ পরিণত হয় তখন মানুষকে নিতান্তই অসহায় হয়ে পড়তে হয়। মূলত এখান থেকেই উৎপত্তি হয় ব্লাডস্টোনের। কিন্তু হাজার বছর আগে সহস্র মানুষের রক্তে উৎপন্ন হওয়া অভিশপ্ত ভালবাসার প্রতীক ব্লাডস্টোন কীভাবে বাংলাদেশ এ আসে? অন্যদিকে চন্দিক্যান রাজ্যের পরাক্রমশালী রাজা প্রতাপাদিত্যের মেয়ে রাজকুমারি অরুনাবতী ও একই রাজ্যের সেনাপতি মাহতাব খান একজন অপরজনকে ভালবাসে। কিন্তু তাদের ভালবাসার নীড়েও নেমে আসে কালো মেঘের অভিসম্পাত। এখানেও কি লুকিয়ে আছে ব্লাডস্টোনের অভিশাপ? তাদের জীবনে এমন কি ঘটেছিল যে আলাদা হতে হল দুটি ভালবাসার মানুষকে? এছাড়া সুরের জাদুকর নিকোলা পাগানিনি কিসের মোহে তার জীবন নষ্ট করতে চেয়েছিলেন? কেনইবা তার প্রিয় ছাত্র ক্যামিলো সিভরির ছেলে গঞ্জালো সিভরি আত্মহত্যা করল যে কিনা তার সময়ের জীবন্ত কিংবদন্তী ছিল। এছাড়া বইটিতে আরও আছে পাগানিনির ২৪ ক্যাপ্রাইস আবিষ্কারের বিস্ময়কর কাহিনী, পারস্য সম্রাট সাইরাসের ব্যবিলন দখলের কাহিনী, সম্রাট অ্যালেকজান্ডারের বিশ্বজয়ের ও তার মৃত্যুর করুন উপাখ্যান। বাংলাদেশের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে আয়োজিত একটি প্রদর্শনী থেকে চুরি হয়ে যায় ব্লাডস্টোন। এখান থেকেই মূলত উপন্যাসটি শুরু হয়। চোর চুরি করে যাওয়ার সময় চোর ছোট্ট একটা চিরকুট ফেলে গেছে, যাতে লেখা- “অ্যামিতিস, তোমাকে ভালবাসি”। কিন্তু চুরি করার সময়টুকুর সব কথা প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউই কিছুই মনে করতে পারছে না। ঘটনাটি তদন্তের ভার পড়ে ডিবি ইন্সপেক্টর মনসুর হালিমের উপর। তিনি ঘটনার কুল কিনারা করতে না পেরে শরণাপন্ন হলেন ইতিহাসের গবেষক ড. রুদ্র রাশেদের। বইটি পড়তে গিয়ে বুঝতে পেরেছি লেখক অনেক পরিশ্রম করেছেন। ইতিহাসের অনেক দিক তুলে ধরেছেন। বইটিতে লেখক অনেক টুইস্ট রেখেছিলেন। কিন্তু টুইস্টগুলোর উত্তর আগেই পেয়ে গিয়েছি ইতিহাস বর্ণনার সময়। আমার কাছে টুইস্ট গুলোকে অনেক দুর্বল মনে হয়েছিল। এছাড়া লেখক কিছু জায়গায় বড় বড় ভুল করেছেন যেগুলোকে বাংলা সাহিত্যে গুরুচণ্ডালী দোষ বলে। বিশেষ করে যখন রাজকুমারী অরুনাবতী আর মাহতাব খান আর কাহিনি এসেছে। তারপর ও গল্পটা ভাল লেগেছে। এছাড়া মনসুর হালিম আর ড. রুদ্র রাশেদের কথোপকথন ভাল লেগেছে। একটি রহস্যের সমাধান লেখক করেন নি। লেখকের প্রিয় শিক্ষক ড. আবুল ফাতাহের স্ত্রী যাকে ড. রুদ্র রাশেদ নিজের মায়ের মত মনে করতেন তার মৃত্যু রহস্যের সমাধান করেন নি লেখক। প্রকাশনীর সম্পর্কে বলব তাদের পেইজ ফ্রন্ট খুব ভাল লেগেছে আর পৃষ্ঠাগুলো ও ভাল ছিল। তবে কিছু কিছু জায়গায় বানান কিছু ভুল ছিল তবে সহনীয় পর্যায়ে ছিল। সর্বোপরি, ব্লাডস্টোন খুবই উপভোগ্য একটি মৌলিক থ্রিলার। ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য সুখপাঠ্য। বাংলাদেশের থ্রিলার সাহিত্য যে দিনদিন সমৃদ্ধ হচ্ছে ব্লাডস্টোন তার প্রমাণ। লেখকের কাছ থেকে ভবিষ্যতে আরো ভাল মৌলিক থ্রিলার আশা করি।