User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Nice book.
Was this review helpful to you?
or
#বুকরিভিউঃ একজন পাঠকের ভাবনা ----------------------- বইঃ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ এবং একটি টিকটিকির গল্প লেখকঃ শাখাওয়াৎ নয়ন,প্রকাশকঃ কথা প্রকাশ,বইমেলাঃ প্যাভিলিয়ন # ৫ রিভিউয়ারঃ শাফকাত আলম আঁখি --------------------------------------------- “নিতান্তই সহজ সরল, সহস্র বিস্মৃতিরাশি, প্রত্যহ যেতেছে ভাসি- তারি দু-চারিটি অশ্রুজল। নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা, নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ। অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি’ মনে হবে শেষ হয়ে হইল না শেষ...." । কিশোরীবেলায় রবীন্দ্রনাথের এই কবিতাটি পড়েছিলাম। কথাগুলো খানিকটা মনে লেগেছিল। যদিও তখন এর মর্মটা ততটাও উপলব্ধি করতে পারিনি। এর মর্ম বুঝেছিলাম তারও অনেককাল পর।কিশোরীবেলা পেরিয়ে মানে স্কুলে কলেজের গন্ডি পেরিয়ে, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণীজীবনে পা বাড়াচ্ছি, প্রতিদিন পত্রিকা পড়া নেশার মতো হয়ে গিয়েছিল। পত্রিকার হেডিংয়ের চেয়ে বিনোদন, কমিক আর সাহিত্য পাতার প্রতি আগ্রহ ছিল বেশি। সাপ্তাহিক সাময়িকীগুলোতে নিয়মিত গল্প লেখার প্রতিযোগিতা হতো। দেশ-বিদেশের বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের অসাধারণ সব গল্প থেকে বাছাই করে আয়োজন করা হতো বিশেষ সংখ্যার। আর অতি অসাধারন গল্পের জন্য গল্পকারকে দেয়া হতো ১ম, ২য় বা ৩য় পুরষ্কার। আমি প্রথমবার যখন বিশেষ সংখ্যার গল্পগুলো পড়ি, এতগুলো অসাধারন গল্পের মাঝেও একটি গল্প আলাদাভাবে আমার ভাবনাকে একমুহুর্তের জন্য নাড়া দিয়েছিল অথবা থামিয়ে দিয়েছিল। গল্পটা অনেকটা এরকম,এক বৃদ্ধাশ্রমে আগুন লেগে যায়।মূমুর্ষূ অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয় এক বৃদ্ধাকে। খবরটি টিভি চ্যানেলে টেলিকাস্ট হওয়ার সময় তাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যায়, তারই কিছুদিন আগে ইন্টারভিউ নেয়া তরুন গবেষক। সে বৃদ্ধার প্রতি প্রচন্ড মায়া নিয়ে বৃদ্ধার হাতটি ছুঁয়ে দিলে, বৃদ্ধা বলে ওঠে, "রন, রন, তুমি এসেছো?" বৃদ্ধাশ্রমে আগুন লাগার কিছুদিন আগেই ডিমেনশিয়া বিষয়ক গবেষনার কাজে উক্ত গবেষক বৃদ্ধাশ্রমে গিয়েছিলেন। এই বৃদ্ধার জীবনের গল্প শুনে কাটিয়েছিলেন অনেকটা সময়। তাই গবেষক বুঝেছিলেন হাসপাতালের বেডে বৃদ্ধা যেই নামটি মনে করে কাতরাচ্ছে, সেই রন তার রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় নয়,পরিবারের কেউ নয় বরং বৃদ্ধার আত্মার আত্মীয়, বৃদ্ধার তরুন বয়সে হারিয়ে ফেলা পুরোনো প্রেমিক। যে একদিন আসবে- এই বিশ্বাস নিয়ে এখনো আটকে আছে শেষ নিশ্বাস! বৃদ্ধার জন্য গবেষকের মনে প্রচন্ড মায়া জেগেছিল। আর এখানেই সমাপ্তি টানা হয় গল্পের। কিন্তু পাঠক হিসেবে গল্পের এখানেই সমাপ্তিতে তৃপ্ত হতে পারিনি। মনে প্রশ্ন জেগেছিল,বৃদ্ধা কেন এত ভালোবাসেন রনকে? বৃদ্ধার সাথে রনের আর দেখা হলো না কেন? কী এমন ঘটেছিল তাদের জীবনে? বৃদ্ধা কি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন? রিপোর্টার তখন কি করলেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না দিয়েই গল্পটির ইতি টানা হলো। আর ঠিক তখনি রবীঠাকুরের কবিতার লাইনগুলোর মর্মার্থ উপলব্ধি করতে পারলাম। সত্যি যেন গল্পটি "শেষ হয়েও হইলোনা শেষ।" হয়তো পাঠকের মনে এমন অনূভুতি জাগাবার কারণেই গল্পটি জিতেছিল প্রথম পুরষ্কারও। ঐ দৈনিক পত্রিকার সাপ্তাহিকীর এরপরের ভালবাসা দিবসের বিশেষ সংকলন, ঈদ আয়োজন ও অন্যান বিশেষ সংখ্যাগুলোতেও ঠাঁই পেলো এই লেখকের বেশ কয়েকটি গল্প। সেই গল্পগুলোও পাঠক হিসেবে প্রচন্ড ভাল লাগলো। এক নিমেষে পড়েও নিলাম। রাশিয়ান সার্কাস, পার্বতীরা তিন বোন, ডিয়ানি, মায়াবতী, আশাবরী, জানালাময়ী ও অন্তরাক্ষী'র মতো গল্প গুলো। ডিয়ানি গল্পে মধ্যে লেখক গিলগ্রিনি হেয়ারড্রেসিং এর হেয়ারড্রেসার ডিয়ানির জীবনের চরম হতাশা আর বন্ধু, পরিবারহীন সংগ্রাম মুখর জীবন চিত্র তুলে ধরেছেন। যে মেয়েটি অল্প বয়সে নিজের নানীর সাথে বাবার পরকীয়ার ঘটনায় মা'কে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিতে দেখেছে, যে কিনা শিক্ষা সফরে গিয়ে তার স্বপ্নের বালকের কাছ থেকে চরম অপমানের স্বীকার হয়েছে, যে কিনা নিজের পড়াশুনা খরচ চালাতে কাজ করতে গিয়েও ভাল অভিজ্ঞতা পায়নি সেই মেয়েটি “বন্ধু” শব্দটিকেই আর বিশ্বাস করবে কি করে? নারীদেহের প্রতি মানুষের লোভী মন, নিষ্ঠুরতা আর স্বার্থপরতার চিত্র ঘৃণা জাগাচ্ছিলো তার নিষ্পাপ হৃদয়ে। তার খুব জানতে ইচ্ছে করে, পৃথিবীতে মাথা নষ্ট পুরুষের সংখ্যা কত? শেষে ভারাক্রান্ত মনে ডিয়ানির মুখে লেখক বলেছে, 'প্রতিদিন ২০/৩০টি মাথা ধুই। কিন্তু মাথার উপরটা ধুয়ে কি হবে, বলো?- ভিতরটা যদি ধুয়ে ফেলতে পারতাম! পাপগুলো তো মানুষের মাথার ভেতরেই থাকে...।' জানিনা কেন গল্পটি পড়ে মনে হয়েছিল, পশুরাই হয়তো মানবিক গুণের অধিকারী, এরা অপর পশু শিকার করে শুধু ক্ষুধা নিবারণের তাড়নায়। আর একমাত্র মানুষই প্রচুর অর্থ, বিত্ত- বৈভব, সুখ-স্বাচ্ছন্দ আর আরাম আয়েশে থেকে সমাজকে কলুষিত করে হলেও দৈহিক সুখের প্রতি নেতিবাচক আর্কষনকে সাদরে আমন্ত্রন জানায়! শুধু মাথা ধুইয়ে মানব মনের অন্ধকার দূরে করতে পারলে হয়তো সত্যি সমাজ হয়ে উঠতো স্বর্গ সুখের আশ্রম! আর এই লেখকের “আশাবরী” ও “সর্পরোগ” গল্প দুইটি অন্যগুলোর চেয়ে একটু আলাদা। ভাগ্য বিধাতা মানুষের ভাগ্যে কয়েক মুহুর্ত পরেই কি লিখে রেখেছেন তা কেউ জানে না। বলা হয়, জন্ম -মৃত্যু আর বিয়ের কলকাঠি ভাগ্য বিধাতাই নাড়েন। কিছু কিছু বিষয়ে মানুষের নিজের কোনো হাত থাকে না। অনেক কিছুই ঘটে, যার ব্যাখ্যা না পেলে মানুষ বলে প্রকৃতির নিয়ম। আশাবরী'তে বাদল আর বাদলের বোনের ভাগ্যেও তাই ঘটেছিলো, যা স্রষ্টা চেয়েছেন। জন্মের সময়ে মা কে হারিয়ে বাবা আর বড় আপাকে নিয়ে এক প্রকার সুখেই ছিলো বাদল। কিন্তু সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় বড় আপার বিয়ে হয়ে যাবার পর সে মায়ের অনুপস্থিতিটা প্রথম টের পেল। ‘সংসার উচ্ছন্নে যাচ্ছে টাইপ'- কারণ দেখিয়ে বাবা ঘরে সৎ মা নিয়ে এলেন। তিনতলার জানলা থেকে পড়ে মারা গেল বড় আপার একমাত্র মেয়ে তমা। এর ক'দিন পরে দুলাভাইও চলে গেলেন পরপারে। প্রিয়জন হারানোর ব্যথা একমাত্র যে হারায় সে-ই বোঝে। কেউ শোক কাটিয়ে ওঠে। আবার কেউ শোকে বিহ্ববল হয়ে মানসিক বোধ শক্তি হারায়। বাদলের বড় আপারও তাই হয়েছিল। একই সময়ে স্বামী সন্তানকে হারিয়ে তার পৃথিবীটা দ্রুতই বদলে গেল, উদ্ভট সব কান্ড করতেন। উঠোনে ধান বোনার মতো করে প্রায়ই স্বপ্ন বোনেন। হাসেন, কাঁদেন, প্রদীপ জ্বেলে বসে থাকেন। কখনো লেবু গাছের ঝোঁপের মধ্যে ওৎ পেতে পাখি ধরেন, সুখ পাখি। এসব দেখে বাদলের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে, হু হু করে। ঢাকায় ভালো চাকরির অফার পেয়েও বাদল যায় না। ভাবে, সৎ মার সংসার, আপাকে যদি পাগলাগারদে পাঠিয়ে দেয়। আপা শূন্যে গিঁটের উপর গিঁট দেয়, আশা আপা শূন্যে গিঁটের উপর গিঁট দেয়, আশা বাঁধে, ভাবে সবাই ফিরে আসবে, সবকিছু আবার আগের মত হয়ে যাবে! কিন্তু তা কি কখনো সম্ভব? নিয়তি মানুষের জীবনের কত কিছুই না পাল্টে দেয়। আশাবরী তেমনই এক রচনা। এই অসাধারন সব গল্পগুলোর লেখক শাখাওয়াৎ নয়ন মানব মনের জটিল আলো-আঁধার, সুখ- দুঃখ, হাসি-কান্না কি সুনিপুণভাবে বলেছেন অল্প কথায়! আর সরল ভাষায়! এই দক্ষ কারিগরের রচনাগুলো একত্রে বই আকারে বের হবে জেনেই লাফিয়ে উঠি তা সংগ্রহের জন্য।যেন পরিবারে ঘটে যাওয়া নিত্য ঘটনাগুলোর একটি মিশ্র অনুভূতি জমা হয়েছে বইয়ের পাতায় পাতায়। এরকম অসধারন বারোটি ছোটগল্প নিয়ে প্রকাশিত এই গল্প সংকলনটির নাম "ব্যাপ্টিস্ট চার্চ এবং একটি টিকটিকির গল্প"। কথা প্রকাশ থেকে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ করেছেন মাহমুবুল হক। বইটির ডিয়ানি, মায়াবতী, জানালাময়ী, আশাবরী, জলে ভাসা পদ্ম, অন্তরাক্ষী গল্পগুলো দেশের শীর্ষ দৈনিক পত্রিকার গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় পুরষ্কারপ্রাপ্ত। আর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ এবং টিকটিকির গল্প, দেখা, অপাঙক্তেয়, শুভব্রতের বিড়ম্বনা, নেতা গল্পগুলো বাংলাদেশের প্রথম সারির দৈনিকের ঈদসংখ্যায়, প্রবাসের কয়েকটি সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক বাংলা পাত্রিকার বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। সহজ সরল বানানে, অল্প কথায়, নির্দিষ্ট শব্দে ও পত্রিকায় লেখার কঠিন নিয়ম অনুসরন করেও যে মানব মনের চরম হতাশা, বহুকালের দীর্ঘশ্বাস ঘেরা জীবন কিংবা অনন্ত প্রেম প্রকাশ করা যায়, তা লেখক প্রমাণ করেছেন বইটির প্রতিটি গল্পে। তাই জিতেছেন পুরষ্কারও। তবে আমি বিশ্বাস করি, একটি রচনা পুরষ্কৃত হলো কিনা শুধু এটাই রচনাটির স্বর্থকতা নয়। বরং একটি রচনা যদি সমাজের তথা মানুষের হাসি-কান্না, আশা-আকাঙ্খা, দুঃখ-বেদনা, বহুকালের জমানো ক্ষোভ -হতাশা কিংবা আবেগ -অনুভূতির চিত্র ফুটিয়ে তুলে পাঠক মনকে ছুঁয়ে যেতে পারে, তখনই রচনাটির স্বার্থকতা। সে বিবেচনায় "ব্যাপ্টিস্ট চার্চ এবং টিকটিকির গল্প " সংগ্রহে রাখার মত একটি অনন্য অসাধারন বই। পুনশ্চঃ শেষ হয়েও হইলো না শেষ, আরেকটি কথা না বললেই নয়। শাখাওয়াৎ নয়নের আরেকটি গল্পগ্রন্থ এ বছর প্রকাশিত হয়েছে। বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে।প্রকাশকঃ কথা প্রকাশ, প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ। গত ২৬-২৮ জানুয়ারীতে মাদারীপুর বইমেলায় বইটি ইতিমধ্যেই বেস্টসেলার হয়েছে।এখনো বইটি সংগ্রহ করতে পারিনি। তবে নতুন বই নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করবো। পাদটীকাঃ লেখা সম্পর্কে বললাম, লেখক সম্পর্কে কিছু বলি? শাখাওয়াৎ নয়ন একজন কথাসাহিত্যিক,কলামিস্ট এবং একাডেমিক।অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন।পোষ্টডক্টরেট করেছেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিংগাপুর থেকে। হৃদরোগ বিষয়ক গবেষনায় পেয়েছেন আন্তর্জাতিক পুরষ্কার।