User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
'আধুনিক' কালের তরুণ তরুণীদের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে রচিত উপন্যাস। আধুনিক শব্দটাকে ইচ্ছে করেই ইনভাইটেড কমার মধ্যে রাখলাম কারণ আধুনিক কারণে এসে প্রেম ভালবাসার মত কনসেপ্টটা কোন জায়গায় নেমে এসেছে সেটা এই উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। কিন্তু আমি এটাও বলতে বাধ্য হব, একদম শুরু থেকেই লেখক স্বেচ্ছায় আধুনিক ভালোবাসার শুধু কদর্যতাকেই তুলে ধরতে চেয়েছেন। উপন্যাসটি পড়লে মনে হবে এ যুগে ভালোবাসা মানে শুধুই যেন প্রতারণা আর তা থেকে উদ্ভূত অবিশ্বাস। এবং এই মনে হওয়াটাই এই উপন্যাসের সবচেয়ে দুর্বল দিক। উপন্যাস হওয়া উচিৎ ভালো মন্দের দুইয়ের মিশেলে রচিত যেখানে ভালো ও মন্দ উভয়ের সমতা বিধান প্রয়োজন। কিন্তু আনিসুল হক তা করেন নাই। তিনি ক্রমাগত শুধু নেতিবাচক দিকগুলোকেই তুলে ধরেছেন। এটা যেমন খারাপ লেগেছে পাশাপাশি যেভাবে সেই নেতিবাচকতাকে উপস্থাপন করতে গিয়ে একই ঘটনার যেভাবে বারবার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে তাও খুবই একঘেয়ে এবং বিরক্তিকর লেগেছে। এই উপন্যাসের চরিত্ররা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একদল তরুণ তরুণী। কাহিনীর শুরুতে দেখা যায় রাজু নামের ছেলেটি প্রপোজ করল লামিয়াকে। লামিয়া উত্তর দিতে কিছু সময় চেয়ে নিল। লামিয়ার উত্তরের আগেই দেখা গেল রাজু সানজি নামের আরেকটা মেয়ের কাছে গেল। সানজি সদ্য ছ্যাঁকা খেয়েছে। তার প্রেমিক শোভন পুণ্যি নামের এক মেয়েকে প্রপোজ করেছে। রাজু যেচে সানজির মন ভালো করতে গিয়ে তার নতুন প্রেমিকের জায়গা নিল। ওদিকে লামিয়া রাজুকে হ্যাঁ বলার পর তাদের হাবভাব হয়ে গেল একটা কাপলের মত। অথচ রাজু যেমন লামিয়ার আড়ালে সানজির সাথে সম্পর্ক রাখছে, তেমনি লামিয়ার সম্পর্ক চলছে শোভনের সাথে। সেই শোভন যে কিনা সানজিকে ছ্যাঁকা দিয়েছে আর বর্তমানে পুণ্যির সাথে সম্পর্ক করেছে। পুণ্যি আবার উঠতি নায়িকা তাই সে তার ব্যক্তিগত স্বার্থে পরিচালক, লেখক এদের সাথে ভালোবাসার খেলা খেলছে। সুতরাং, এই উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রই একাধিক সম্পর্ক করছে এবং তাদের সারাদিনের প্রধান কাজ হল এক প্রেমিক/প্রেমিকার কাছে অন্য প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে সম্পর্কের কথা লুকানো। মোবাইল আর ফেসবুক আধুনিক এই ভালোবাসার কাহিনীতে বড় ভূমিকা রাখছে। কাহিনী জমে উঠতে থাকে যখন একজন আরেকজনের গোপন সম্পর্কগুলোর কথা জানতে পারে। শেষ পর্যন্ত দেখার বিষয়, কাহিনীর সমাপ্তিতে তাদের প্রত্যেকের বহুমাত্রিক ভালোবাসার সম্পর্কগুলোর কি পরিণতি হয়। লেখকের লেখনি বরাবরের মত ভাল। কিন্তু আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, কাহিনী ও বিষয়বস্তু অতি জঘন্য। হ্যাঁ, জঘন্য কথাটাই ব্যবহার করছি আমি। অনেকে বলতে পারেন, আধুনিক প্রেম ভালোবাসা এমনই হয়, এটাই বাস্তব। লেখক শুধু সেটাই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি একমত নই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আধুনিক ভালোবাসা এমন হতে পারে কিন্তু একটা উপন্যাসে যে কয়টা চরিত্র আছে, তারা সবাই-ই কিভাবে একই দোষে দুষ্ট সেইটা তো মাথায় ঢুকল না। এটাই প্রমাণ করে, লেখক ইচ্ছাকৃতভাবে কাহিনীটাকে এমন করে সাজিয়েছেন। তিনি হয়ত বাস্তবতাকে উপন্যাসের পাতায় তুলে ধরতে চেয়েছেন কিন্তু সেক্ষেত্রে আসলে তিনি ব্যর্থই হয়েছেন। ব্যর্থতার কারণ, বাস্তবতা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি অতিরিক্ত রকমের বাড়াবাড়ি করেছেন। যে ছয় সাতটা চরিত্র আছে উপন্যাসে, তারা সবাই-ই একই রকম কিভাবে হয়? দুনিয়ার সবাই কখনোই খারাপ হতে পারে না। অন্তত একটা বা দুটো ইতিবাচক চরিত্র যদি উপন্যাসে থাকত, তাহলেও কাহিনী একটু বিশ্বাসযোগ্য হত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই উপন্যাসটি যেমন দাঁড়িয়েছে তাতে আধুনিক কালের ভালোবাসার স্রেফ একমুখীতাই প্রকাশ পেয়েছে। জানি না লেখক কেন ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজটি করলেন। তাঁর কি আধুনিক কালের প্রেম, ফেসবুক-মোবাইল বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী - এই তিনটি ব্যাপারের কোনোটার প্রতি রাগ আছে? হয়ত আছে না হলে তিনি এমন একটা একপেশে লেখা লিখতেন না। উপন্যাসের প্রথম দুই পাতা পড়ে মনে হচ্ছিল উপন্যাসটা হয়ত লুতুলুতু টাইপের প্রেমের উপন্যাস হচ্ছে। সেরকমটা হলে অবশ্যই খারাপ লাগত। কিন্তু লেখক বাস্তবের চোখে ভালোবাসাকে দেখাতে গিয়ে যেভাবে চূড়ান্ত রকমের বাড়াবাড়ি করেছেন, তাতে খারাপ লাগাটা আরও বেশিই হয়েছে। বলা যায়, লেখক এই উপন্যাসটির মাধ্যমে 'ভালোবাসা' শব্দটিকে বড় রকমের 'বাঁশ' দিয়েছেন। ভাগ্য ভাল এই উপন্যাসটি খুব বেশি জনপ্রিয়তা পায়নি!