User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা হয়নি। লেখকের সংকীর্ণ ও পক্ষপাতিত্বমূলক ভাবনা থেকে লেখা।
Was this review helpful to you?
or
মহামৈত্রীর বরদ-তীর্থে পুণ্য ভারতপুরে পূজার ঘন্টা মিশিছে হরষে নমাজের সুরে-সুরে! আহ্নিক হেথা শুরু হয়ে যায় আজান বেলার মাঝে, মুয়াজ্জেনের উদাস ধ্বনিটি গগনে গগনে বাজে; জপে ঈদগাতে তসবি ফকির, পূজারী মন্ত্র পড়ে, সন্ধ্যা-উষার বেদবাণী যায় মিশে কোরানের স্বরে; সন্ন্যাসী আর পীর মিলে গেছে হেথা-মিশে গেছে হেথা মসজিদ, মন্দির! জীবনানন্দ দাসের লেখা এই কবিতায় ভারতবর্ষের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি পড়ে মনে হয়, “ইস! যদি সত্যিই এমন মিলেমিশে থাকতো ভারতবর্ষের মানুষ!” যদি এমনটা হতো তাহলে হয়ত পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি জাতি হতো ভারতবর্ষের মানুষ। হয়তো হতো না দেশবিভাগ। হয়তো আমরা হতাম পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী জাতি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তা হয়নি। আমরা কখনো আমাদের ভাইয়ের বিশ্বাস নিয়ে চিন্তা করি নাই। হিন্দুরা মুসলিমদের “যবন” আর মুসলিমরা হিন্দুদের “নমো” বলে গালি দিয়েছি। হিন্দুরা চেয়েছে যবন মুক্ত ভারত। মুসলিমরাও চেয়েছে কাফের মুক্ত একটা স্বাধীন দেশ। এই চাওয়া কতটা সাধারন মানুষের আর কতটা রাজনৈতিক নেতাদের সে আলোচনা তোলা থাক অন্য কোনো সময়ের জন্য। ২০১৮ সালে এসে মানুষ আধুনিকতার চরম স্তরে উপনিত হলেও ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বন্ধ হয়নি। কিছু মানুষ এখনো ধর্মকে ব্যবহার করে খেপিয়ে তুলছে মানুষকে। বাংলাদেশে পুড়ছে মন্দির, বৌদ্ধ মঠ। ভারতে গরু খাওয়ার অপরাধে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে বৃদ্ধকে। শিখদের উপরে নির্যাতন হচ্ছে। সবাই নিজ ধর্মমতে পূণ্য লাভের আশায় ভিন্নমতালম্বিদের নির্মূল করছে। অথচ ধর্ম মানুষকে শিখায় ভালোবাসতে। স্বামী বিবেকানন্দ কুমারী পুজা শুরু করেন এক মুসলিম মেয়েকে দিয়ে। হযরত ওমর (রাঃ) খলিফা হওয়া সত্বেও মন্দিরে নামাজ পড়তে আপত্তি করেন অন্য ধর্মের অনুসারিদের সম্মান দিতে। অথচ আমরা কখনো নিজেদের সম্মান দিতে জানি না। বসেছিলাম একটা বইয়ের রিভিউ লিখতে। কিন্তু লিখতে লিখতে কোথায় চলে আসলাম কে জানে! পড়ছিলাম ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্যের লেখা “বাঙালির নৃতত্ত্ব ও হিন্দুসভ্যতা” বইটা পড়ার মূল উদ্দেশ্য ছিলো হিন্দু সভ্যতা নিয়ে কিছুটা জানা। বিভিন্ন সময়ে কাছের মানুষদের কাছে হিন্দুদের নিয়ে হাসি ঠাট্টা শুনে আহত হই। কারন আমি জানি যারা অন্য ধর্মের রীতিনীতি নিয়ে ঠাট্টা করে তারা নিজের ধর্মটাও জানে না। প্রত্যেক সামাজিক রীতির পিছনে একটা ইতিহাস থাকে। একটা কারন থাকে। আমার সেই কারনগুলো জানা প্রয়োজন। কারন একটা সমাজে আমি যার সাথে বসবাস করবো তাকে যদি আমি বুঝতে না পারি তাহলে আমি কিভাবে সেই সমাজে বাস করবো? আবারো কথা বাড়াচ্ছি। দুঃখিত বিনা পয়সায় এমন নসিহত বিলি করার জন্য। এবার বইটা নিয়ে কিছু বলি। বইয়ের নাম থেকেই আপনি বইয়ের বিষয়বস্তু অনুধাবন করে ফেলেছেন আশা করি। বইটিতে প্রথমে আলোচনা করা হয়েছে বাঙালির নৃতত্ত্ব নিয়ে। এটা আলোচনা করার আগে লেখক পুরো মানব জাতির আবির্ভাবের গল্প বলেছেন। কিভাবে বাঙালি জাতি বর্তমান অবস্থায় এলো তার একটা পূর্ণাঙ্গ চিত্র একেছেন। এরপরে লেখক আলোচনা করেছেন আর্য্য ও সিন্ধু সভ্যটা নিয়ে। এই দুইটা বিষয় জানার ইচ্ছা অনেকদিনের। সেটা আংশিক হলেও পূরন হলো। সবকিছু ব্যাখ্যা শেষে লেখক পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন হিন্দুসভ্যতা। ষষ্ঠ অধ্যায়ে হিন্দু সভ্যতা পড়ার আগে যখন আপনি পূর্বের পাঁচটা অধ্যায় পড়ে আসবেন তখন নতুন অনেক কিছু তো জানতে পারবেন, সেই সাথে হিন্দুসিভ্যতা বোঝা খুবই সহজ হয়ে যাবে। বইতা মাত্র ১৪৪ পৃষ্ঠার। ফলে বুঝতেই পারছেন কোনো কিছু বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব হইনি। তবে লেখক চেয়েছেন মূল বিষয়গুলো টাচ করে যেতে। এবং সেটা করেছেন। হিন্দু ধর্মে ইশ্বরের ধারনা। দেব-দেবী সম্পর্কে ধারনা। এগুলো নিয়ে বিভ্রান্তির কারন। গো-মাংস ভক্ষণ বিষয়ক আলোচনা। সতিদাহ প্রথা ও জাতিভেদের মত বিতর্কিত বিষয়কে অল্প কথায় ব্যাখ্যা করেছেন। আমি সবসময় বলি যে, নন-ফিকশন পড়ার আগে আমি যেটা সবার আগে দেখি তা হলো বইটা কোন বিষয়ে লেখা এবং যে বইটা লিখেছেন তার যোগ্যতা কী? আপনারাও যদি পড়তে আগ্রহী হন তাহলে লেখক সম্পর্কে জানা উচিত। লেখক ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগে বি.এ সম্মান ও এম.এ এবং নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। অনেক বেশি বকবক করে ফেলেছি। যারা পড়ছেন তারাও হয়তো এতক্ষনে বিরক্ত হচ্ছেন। তাই লেখা আর বাড়াবো না। যদি হিন্দুসভ্যতা কিছু আগ্রহ থাকে তাহলে বইটা পড়তে পারেন। এ ভারতভূমি নহেকো তোমার, নহেকো আমার একা, হেথায় পড়েছে হিন্দুর ছাপ- মুসলমানের রেখা; হিন্দু মনীষা জেগেছে এখানে আদিম উষার ক্ষণে, ইন্দ্রদ্যুম্মে উজ্জয়িনীতে মথুরা বৃন্দাবনে!