User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
#মেরিগোল্ড নিয়ে আমার প্রতিক্রিয়া এই বইটা পড়ার আগে আমি অতি অবশ্যই একটা সতর্কীকরণ করতে চাই, আপনি যখন ব্যস্ত থাকবেন তখন অবশ্যই বইটা পড়া শুরু করবেন না। কারণ এটা পড়ার মাঝখানে উঠে ধরেন রান্না করতে গেলেন, আপনার ঐ কাজের চোদ্দটা বেজে যাবে।আমার যেমন বেজেছিল। একপাতিল ডালে চিনি এবং ছয় কাপ পরিমাণ চা'য়ে ভরপুর লবণ দিয়েছি। বুঝুন তবে মেরিগোল্ড এর প্লট ইনটেনসিটি কতো মারাত্মক। পাঠ প্রতিক্রিয়া: আমি গতানুগতিক রিভিউ লিখতে জানি না। শব্দ গোছাতে ও বেগ পেতে হয়। আশা আপা আমার এই অক্ষমতাকে একটু ইগনোর করবেন প্লিজ! আমি শুধু আমার অনুভূতি ই প্রকাশ করছি। আপার পেজে যখন মেরিগোল্ড শুরু হয়েছিল তখন একদম প্রথম পর্ব থেকে আমি মেরিগোল্ড এর সাথে ছিলাম। মেরিগোল্ড নিয়ে গ্রুপে এক প্রকার উচ্ছ্বাস প্লাবণ এসেছিল।আমি প্রায় প্রতিটি পোস্ট পড়েছি। হেসেছি, রেগেছি, মন খারাপ করেছি। তবে কমেন্ট খুব একটা করতাম না। তখন কমেন্ট করতে আমার খুবই আড়ষ্টতা কাজ করতো। এখন সেটা কেটে গেছে। এক আপু একেকটা পর্বের যে যে নাম দিয়েছিলেন সেটা পড়ে হাসতে হাসতে শেষ। কিন্তু পর্ব গুলোর সাথে রিলেভেন্ট। মেরিগোল্ড এর প্রধান চরিত্র আরজান'কে নিয়ে ও এক আপু একটা মানসিক রোগের নাম বলেছিলেন যেটা আমি ভুলে গেছি। কথা সেটা না, কথা হলো মেরিগোল্ড তখন আমাদের এতটাই বুঁদ করে রেখেছিল। এ গোল্ডেন টেল অফ আরজান শরফ। দি গ্রেট আরজান শরফ। গল্পের শুরু হয় আরজান শরফের পারিবারিক ইতিহাস দিয়ে। দি গজনবী'স টেল। প্রচন্ড অভিজাত এক বংশের গোড়াপত্তন। রুপপুরে যারা রাজার সম্মান পেত। সেই পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের রাজপুত্র আরজান শরফ। আরজান এর বিয়ে ঠিক হয় তাদের এস্টেটের তত্ত্বাবধায়ক ইসরাফিল সাহেবের সুযোগ্য কন্যা ইশিতার সাথে। রুপে, গুণে, ব্যক্তিত্বে একদম সমানে সমান। কিন্তু বিয়ের আগের দিন আরজান বেঁকে বসে ইশিতার ছোট বোনকে বিয়ে করার জন্য। যাকে চাঁদের সাথে তুলনা করলে চাঁদ ও লজ্জা পাবে। এতটাই মোহনীয় সে। তার নাম ইকরা। বহু সাধ্য সাধনা করে আরজান শরফের বিয়ে হয় ইকরার সাথে। এবং ইশিতার বিয়ে হয় আরজানের বিগত বড় চাচার ছেলে রাফসানের সাথে। সেও একজন বিখ্যাত চলচিত্র অভিনেতা। বিয়ে হবার পর পর জানা যায় ইকরা আসলে ইশিতার কাজের মেয়ে। আর এতে অহংকারের তেজে বলীয়ান আরজান শরফের ভীষণ আঁতে ঘা লাগে। এবং সে বিয়ের আসর ত্যাগ করে চলে যায়। পরদিন দেশ ছেড়ে ই চলে যায়। ঐদিকে রাফসান ও ইশিতাকে মেনে নেয় না। অর্থাৎ দুই ভাইয়ের কেউই বৌ'কে স্বীকৃতি দেয় না। আরজান শরফ দোর্দণ্ডপ্রতাপী ব্যক্তিত্ব হলেও একটা মিল আছে দুজনের। দুটোই বলদ। একটা নরমাল বলদ আরেকটা বৃহৎ শিংওয়ালা ইগোইস্টিক বলদ। রাফসানকে ইগনোর করা গেলে ও আরজান শরফকে আপনি ইগনোর করতে পারবেন না। হি ইজ এ ম্যাগনেটিক মেসম্যারাইজার। ওর আকাশছোঁয়া দম্ভ আর অহংকার ও ওকে স্যুট করে। এই গল্পের মূল চরিত্র আরজান, ইকরা, ইশিতা ও রাফসান। সমান্তরাল ভাবে গল্পের প্রতিটা চরিত্র তাদের স্বাতন্ত্র্যতার ছাপ রেখে গেছে। ইশিতা সাচ এ সুইটহার্ট। আত্মসম্মান নিয়ে কেউ কতোটা অনড় হতে পারে ইশিতা তার প্রমাণ। ইশিতা একবার রাফসানকে বলেছিল 'টাকার জন্য চাকরি করছি না। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন থাকতে চাকরি করছি'। ইশিতার বাবা মারা যাবার পরবর্তী দৃশ্যপট আমাকে ভীষণ ছুঁয়েছে। এতো বড় শকের মধ্যে থেকেও মেয়ে টা আত্মসম্মান ও আত্মগরিমা বিসর্জন দেয় নি। ইশিতা তখন সম্পূর্ণ নিঃস্ব, রিক্ত। পৃথিবীতে ছিল বলতে একটা বাবা ই ছিল।মাতৃহারা মেয়ে টা পিতার আদরকে সম্বল ভেবে আঁকড়ে ধরে বড় হয়েছে। সেই পিতার বিয়োগে মেয়ে টা রাজকন্যা থেকে একদম রাস্তায় এসে দাড়িয়েছে; তাও পিতার হঠকারি কৃতকর্ম দিয়ে। এই ভঙ্গুর অবস্থায় ও কারো কোনো প্রকার সাহায্য না নিয়ে বরং নিজের জমানো যা ছিল তা দিয়ে ই কুলখানির আয়োজন করে। যদিও আরজান-রাফসান উভয়েই চেয়েছিল বিরাট করে আয়োজন করতে, একজন চেয়েছিল মৃত্যুর দায়ভার কম্পেনসেট করতে অন্যজন গিল্ট ফিলিং লাঘব করতে। কিন্তু ইশিতা ঐসব ধনীপুরুষের অফার পাশ কাটিয়ে নিজের উপার্জন করা অর্থ দিয়ে তার পিতাকে প্রাপ্য সম্মানের সহিত শেষ বিদায় দিয়েছে। আমার এই ব্যাপারটা চমৎকার লেগেছে।চমৎকার! ইশিতার মন জয় করতে গিয়ে রাফসান বুঝেছে কত বালতি জলে এক সমুদ্র পানি হয়। শেষ পর্যন্ত জয় করতে পারলেও নিজের নির্বুদ্ধিতা এবং অকর্মণ্যতার কারণে ধরে রাখতে পারেনি ইশিতাকে। এক্ষেত্রে প্রমাণিত জয় অর্জন করার চেয়ে রক্ষা করা ভীষণ কঠিন ও কষ্টসাধ্য। রাফসান খারাপ মানুষ নয় মোটেও, সে সরল। সে প্রচন্ড ভালবাসতে জানলেও রক্ষা করতে জানে না। ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয়তা প্রায়োরটাইজ করতে জানে না। এজন্যই ও সব পেয়ে ও শেষ পর্যন্ত নিঃস্ব থেকে যায়। আমি ইশিতার বান্ধবী অলিভিয়া আর রাফসানের বন্ধু শাহেদ-বাদল বিশেষ করে শাহেদকে ভীষণ উপভোগ করেছি। সত্যিকারের বন্ধুত্ব মানেই ওরা। আরজান শরফকে নিয়ে কি বলবো ! এত গ্রান্ড একটা চরিত্রকে দুই লাইনে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তার ইকরার প্রতি নেশা তাকে ভেঙেচুড়ে প্রতিনিয়ত গড়েছে। কিন্তু এক পাহাড় অহংকার থেকে একটা বালু ও খসাতে পারেনি। সে যা চেয়েছে করে দেখিয়েছে, না পারলে কিনে নিয়েছে। তবুও করেছে। সবাই আরজানকে না জানিয়ে ইকরাকে বাঁচানোর জন্য একটা গেম খেলে গেছে। কিন্তু ভুলে গেছে হি ইজ দ্য মাইটি আরজান শরফ। 'চাল চেলেছে ইশিতা, গেম খেলেছে রাফসান আর পুরো গেমটা সাজিয়েছে আরজান'। আরজানের ইকরার জন্য দুর্বোধ্য পাগলামি অসাধারণ।আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম আরজান যদি জীবনে কাউকে সবকিছুর উর্ধ্বে ভালবাসে তবে সেটা ইকরা। এবং আরজান করে গেছে নিজের অজান্তেই। একজন রাজা তার ছাপোষা ভৃত্যকে ভালবেসেছে এটা রূপকথাতেই মানা যায়। কিন্তু বাস্তব জীবনে হলে অবশ্যই নাক ছিটকাবো। আরজান ও ছিটকেছে। এমনকি কেপ্ট ও বলেছে। তবুও ইকরা আসক্তি থেকে নিজেকে দূর রাখতে পারেনি। এত কিছুর পরও অন্য নারীর কাছে যায়নি। পিতৃত্বের হাহাকার করে গেছে। ইকরার আশেপাশে যারা ইকরাকে মায়া করতো আরজান তাদের প্রচন্ড ভোগান্তি দিয়েছে। আর ইকরা সরল সাধারণ কিন্তু দারুণ বুদ্ধিমতি একটি মেয়ে। যার রুপ ছাড়া কোনো ঐশ্বর্য ও ছিল না। সে ছিল নরম একদলা মাটি। কিন্তু আরজানের আঘাতে আঘাতে একটা সময় পাথর হয়ে গেছে। আর সেই পাথর গলাতে আরজান যা করেছে উফ্ ! কদাকার ইকরা আরজানের কাছে চরম আরাধ্য ছিল; ছিল পরম পাওয়া। কিন্তু অন্যায়কারী যতই দুর্দমনীয় ই হোক না কেন পতনও জোরালো হয়। আরজানের ও পতন ঘটে। আশাপু লিখেছেন - 'প্রকৃতি ঠিকই জাস্টিস করে। আরজানের অপরাধ ছিল পাহাড়সম।ওর ক্ষমতা ও আকাশছোঁয়া। তাই প্রকৃতি ছাড়া ওর বিচারের ভার বওয়া আর কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না। ঈশ্বর নিজেই ওকে শাস্তি দিয়েছেন। জাস্টিস মাস্ট নট অনলি টু বি ডান, বাট মাস্ট বি সিন টু বি ডান'। আরজানের পতনের পর পুরো শরফ এম্পায়ার ও ধ্বসে পড়ে। আসলে রাজা রাজাই থাকে। 'মেরিগোল্ড' গল্পে ওরা সবাই মেরিগোল্ড। অল অফ দেম ডেস্ট্রয়েড ইন লাভ। লেখক আফসানা আশা সম্পর্কে ও কিছু বলতে চাই। আপুর লেখা নিয়ে আসলে কি বলবো! সিনেম্যাটিক প্লট নিয়ে কেউ যদি চকলেটের মতো উপাদেয় কিছু লিখতে পারে তবে আশাপুর চেয়ে বেস্ট কেউ নেই। কথায় আছে গল্পের গরু গাছে চড়ে। জি আপু তার লেখনী তার স্টাইল দিয়ে গরুকে গাছে চড়ায় ঠিকই সেই সাথে আপনি ও কখন যে ঐ গরুর পিঠে সওয়ার হয়ে গাছের মগডালে পৌছে যাবেন টেরটিও পাবেন না। যদি ভাবেন এতো উঁচুতে উঠে পড়ে ঠাস হবেন; সেক্ষেত্রে ও আপনি ভুল ভাববেন। আপনি বরং সেই গরুর পিঠে বসে চোখের সামনে ক্যানভাসের মত এক বিশাল উন্মুক্ত আকাশ দেখতে পাবেন। আপনি সেই খানে দুর্দান্ত কিছু চিত্রকর্ম দেখবেন, 'মেরিগোল্ড' বইয়ে ও আছে। সেই স্বপ্নযাত্রা শেষে যখন নেমে আসবেন তখন বলতে অবশ্যই বাধ্য হবেন যাত্রা টা ছিল ভীষণ উপভোগ্য। আরেকবারের প্রমাণ 'মেরিগোল্ড '।