User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
রাবেয়া খাতুনের পরিচয়টা আগে দিয়ে দেয়া উচিৎ। তার পরিচয় কিন্তু কেবল সুলেখিকা ও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নারী সাহিত্যিকার হিসেবেই সীমাবদ্ধ নয়। ব্যক্তিজীবনে একাধারে যেমন তিনি ছিলেন বিশিষ্ট সম্পাদক ও চলচ্চিত্র পরিচালক এটিএম ফজলুল হকের সহধর্মিনী, তেমনি তিনি একজন রত্নগর্ভাও বটে। ফরিদুর রেজা সাগর আর কেকা ফেরদৌসির মত গুণী ব্যক্তিত্ব যে তারই সন্তান! কর্মজীবনে রাবেয়া খাতুন শিক্ষকতা, সাংবাদিকতার পাশাপাশি ছিলেন আরও অসংখ্য শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক উচ্চ পদে নিযুক্ত। ''হিরন্ময় দুঃখ ও প্রতিদিন একটি পপি'' বইটি মূলত একটি ভ্রমণ কাহিনী। বইটিতে উঠে এসেছে তার ব্যক্তি জীবনের অভিজ্ঞতা, পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধ তথা গোটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেড়াবার অভিজ্ঞতা। এই বইয়ের প্রধান বিশেষত্ব হিসেবে বলা যেতে পারে বাংলা ভাষায় 'একজন নারীর ভ্রমণকাহিনী'। কেননা বাংলার নারীরা কিছুটা ঘরকুনো অপবাদের অধিকারী। সাহিত্য জগতেও তার ছায়া বেশ প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। নারীদের কাছ থেকে খুব বেশি ভ্রমণনির্ভর রচনা বা উপন্যাস এমনিতেই দেখা যায় না। আবার নারী লেখিকার ভাষায় ফুটে ওঠা এমন কোন ভ্রমণকাহিনীর কথা মনে করতেও কষ্ট হয়, যেখানে লেখিকা কেবল হাতেগোনা দুই-একটি দেশে বেড়াবার অভিজ্ঞতা নয়, তুলে ধরেছেন আরও অনেক দেশ ভ্রমণের কাহিনী। সেদিক বিবেচনায় ''হিরন্ময় দুঃখ ও প্রতিদিন একটি পপি'' বইটি অভিনব ও অসাধারণ। অপরদিকে সমগ্র বাংলা সাহিত্যের ভ্রমণকাহিনীর আঙ্গিনাও খুব একটা সমৃদ্ধ নয়। অধিকাংশ ভ্রমণকাহিনীতেই লেখকেরা প্রকাশ করেছেন তাদের একচেটিয়া ভ্রমণের বর্ণনা। ফলে সেসব ভ্রমণকাহিনী পাঠকের চোখে নতুন দেশের কাল্পনিক চিত্র কিছুটা অস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারলেও, পাঠকের কাছে সেসব লেখা সুখপাঠ্য ও সহজবোধ্য না হওয়ায় সেসব লেখা গ্রহনযোগ্যতা হারিয়েছে। বিখ্যাত ভ্রমণকাহিনীর রচয়িতা অন্নদাশংকর রায় বা মুজতবা আলীরা ভ্রমণকাহিনী লিখেছেন তাদের নিজেদের কায়দায়। আবার যাযাবর দৃষ্টিপাতের মত বইতে ভ্রমণের পাশাপাশি তুলে এনেছিলেন দিল্লীর ইতিহাস অত্যন্ত মনোজ্ঞভাবে। একইসাথে বিচিত্র আংগিকতায় তা হয়ে উঠেছিল একটি সার্থক উপন্যাসও। ''হিরন্ময় দুঃখ ও প্রতিদিন একটি পপি'' বইটির ক্ষেত্রেও অনেকাংশে কিংবা পুরোপুরিই অন্নদাশংকর-মুজতবা আলীদের চেয়ে যাযাবরের প্রভাব বেশি পড়েছে। রাবেয়া খাতুন অত্যন্ত সাবলীল গদ্যে শুধু ভ্রমণটাকে উপন্যাসের আকারেই প্রকাশ করেননি, তুলে ধরেছেন দেশে-বিদেশে বাঙালির অবস্থান। বাঙালির জীবনযাত্রা নানাদেশের প্রেক্ষাপটে কতটা বিচিত্র হতে পারে, তার প্রমাণ মেলে আলোচ্য বইটিতে। একটি নিখাদ ভ্রমণকাহিনী, তার সাথে সাথে কিছু সুখ-দুঃখের গাথা যেমন পাঠক খুঁজে পাবে বইটিতে, তেমনি আবিষ্কারের সুযোগ পাবে যে কিভাবে ভৌগলিকতার পরিবর্তনের সাথে সাথে চিরায়ত বাঙ্গালি মনের চিন্তা-চেতনা ভাবধারা ও সার্বিক জীবনাচরণ, মানবিক আবেগের ভীষণ পরিবর্তন হতে পারে। ইতিবাচকতা আর নেতিবাচকতার দোলাচলে বাঙালি অবস্থানভেদে কিভাবে অভিযোজনক্ষমতা অর্জন করে টিকে থাকছে, সেটা এই বইয়ে দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। সবমিলিয়ে বাংলা সাহিত্যের ভ্রমণনির্ভর কাহিনীর ছোট্ট তালিকায় ''হিরন্ময় দুঃখ ও প্রতিদিন একটি পপি'' নিঃসন্দেহে একটি অনন্য সংযোজন।
Was this review helpful to you?
or
বাংলাদেশের নারী সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম রাবেয়া খাতুন ।লেখালেখির পাশাপাশি রাবেয়া খাতুন শিক্ষকতা করেছেন, সাংবাদিকতাও করেছেন। এছাড়া যুক্ত আছেন বাংলা একাডেমী, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, ঢাকা লেডিজ ক্লাব, বিজনেস ও প্রফেশনাল উইমেন্স ক্লাব, বাংলাদেশ লেখক শিবির, বাংলাদেশ কথা শিল্পী সংসদ ও মহিলা সমিতির সঙ্গে । প্রয়োজনে হোক বা অপ্রয়োজনে দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়ানোই যার নেশা এমন একজনই হলেন রাবেয়া খাতুন । আর তার এই ভ্রমণপিপাসু মনোভাবের কল্যাণে আমরা পেয়েছি কিছু মনোরম সুখপাঠ্য চমৎকার ভ্রমণকাহিনীর স্বাদ । ভ্রমণকে উপজিব্য করে লেখক তৈরি করেছেন মনোজ্ঞ উপন্যাস। যার টানাপোড়ন ও সুখ-দুঃখের সাথে আমরা নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারি। এসব ভ্রমণকাহিনী পড়তে পড়তে একসময় মনে হবে নিজেই ঘুরছেন দেশেবিদেশে। দেশ যাই হোক চরিত্ররা সবাই বাঙালি এবং তাদের জীবন যাপন ও বৈচিত্র অনেককে অবাক করলেও পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে নানা ঘোরপাকে। বিশ্বাস করি বা না করি জীবনে অনেক কিছুই ঘটে যা অবিশ্বাস্য মনে হলেও বাস্তবের জন্য তা সত্যি । সবশেষে বলতে চাই মধুমতী, নীল নিশীথ,বায়ান্ন গলির একগলি,পাখি সব করে রব,নয়না লেকে, রূপবান দুপুর, মেঘের পর মেঘ,যা কিছু অপ্রত্যাশিত,দূরে বৃষ্টি, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি এমন সব উপন্যাস আমরা উপহার পেয়েছি যার কাছ থেকে তার এই উপন্যাসটি পড়া শুরু করা অবশ্যই কোন ভুল স্বিদ্ধান্ত হবে না বলাই যায় নিঃসন্দেহে ! :)
Was this review helpful to you?
or
সৃষ্টিশীল মানুষমাত্রই সংগ্রামী।তা-সত্ত্বেও রাবেয়া খাতুনকে আলাদাভাবে সংগ্রামী বলার কারণ তিনি নারী বলে সৃষ্টিশীল মানুষমাত্রের অতিরিক্ত প্রতিকূলতা তাঁকে অতিক্রম করতে হয়েছে।বাংলা সাহিত্যে নারী সাহিত্যিকদের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য উপন্যাসিক ও লেখিকা রাবেয়া খাতুন। রাবেয়া খাতুন শুধু একজন বিখ্যাত লেখিকাই নন একি সাথে তিনি শিল্প ও সাহিত্য সম্পর্কিত সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদে দীর্ঘদিন ক্রমরত ছিলেন। এবং এই দীর্ঘ কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনে তিনি দেশে বিদেশে বহু জায়গা ভ্রমণ করেন।এবং এসব ভ্রমনকাহিনীর সেই সব ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন চমৎকার সব কাহিনী।এসব কাহিনীকে উপজিব্য করেই তিনি লিখেছেন হিরন্ময় দুঃখ ও প্রতিদিন একটি পপি বইটি। রাবেয়া খাতুনের সাহিত্যযাত্রার সূচনাকালে বাঙালি মুসলিম সমাজের নারীরা দু-একজন করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছেন। বাইরের পেশা বলতে শিক্ষকতায় অংশগ্রহণ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তাঁদের জীবন ঘরের ভেতরের সংসার সীমানাতেই কেটেছে প্রধানত। নারী পুরুষের মতো মুক্তভাবে নিজের জীবন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিজের মতো করে নিতে পেরেছে কমই। তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বাবার বা স্বামীর কাছ থেকে অনুমতি পাবার জন্য। সমাজের সাধারণ শ্রেয়বোধই ছিল এ-রকম যে নারীর ঘরের বাইরে তখনই যাওয়া দরকার যখন সংসারে তার বাইরে যাবার মতো অবকাশ সৃষ্টি হবে, কিংবা তার বাইরে যাওয়ার দরকার পড়বে নিতান্তই সংসারের প্রয়োজনের খাতিরে। এমনকি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাও নারীর বাইরে বেরিয়ে আসাটাকে সাধারণভাবে ততটুকুই গ্রহণ করতে চেয়েছে যতটুকুতে সে পুরুষের সহযেগী মাত্র। বাংলাদেশের উদার মধ্যবিত্ত সমাজও এরচেয়ে বেশি গ্রহণ করতে পেরেছিল বলে মনে হয় না।ঙ্কিন্তু তা সত্ত্বেও জীবনের মধ্যসময়ে উপনীত হবার পূর্বেই পশ্চিম ও পূর্ব গোলার্ধের অসংখ্য দেশ তিনি ভ্রমণ করেছেন।এসব ভ্রমণের অভিজ্ঞতার আলোকে তার উপন্যাসটি।যদিও তার উপন্যাসের চরিত্র সবি বাঙ্গালী।তাও তাদের জীবনযাত্রার বৈচিত্র বিশ্বাসযোগ্য মনে নাহলেও প্রকৃতপক্ষে তাই সত্যি। পৃথিবী অনেক এগিয়ে যাচ্ছে ভাল এবং খারাপ উভয়দিকে। সেই সাথে বাঙ্গালীরাও।এবং এই সত্যই সুন্দরভাবে উপস্থাপিত করেছেন রাবেয়া খাতুন তার এই উপন্যাসে।