User login
Sing In with your email
Send
Our Price:
Regular Price:
Shipping:Tk. 50
প্রিয় ,
সেদিন আপনার কার্টে কিছু বই রেখে কোথায় যেন চলে গিয়েছিলেন।
মিলিয়ে দেখুন তো বইগুলো ঠিক আছে কিনা?
Share your query and ideas with us!
Was this review helpful to you?
or
Classic
Was this review helpful to you?
or
ডিটেকটিভ নামটা শুনেই পাঠক বলবে সূর্যদীঘল বাড়ির লেখক গোয়েন্দা কাহিনী লিখেছেন? কিন্তু তার পেশা সম্পর্কে অবগত হয়ে পাঠক বলবে সূর্যদীঘল বাড়ি উপন্যাসটা কি এই লেখকেরই সৃষ্টি? আবু ইসহাক। আগাগোড়া একজন ঔপন্যাসিক তাও আবার সামাজিক ঘরানার। বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত উপন্যাস সূর্যদীঘল বাড়ি তারই সৃষ্টি। ১৯৪৮ সালের অগাস্ট মাসে উক্ত উপন্যাসের পাণ্ডুলিপির কাজ শেষ করেন তিনি। কিন্তু দীর্ঘ চার বছর ধরে ঢাকা এবং কলকাতা ঘুরেও কোনো প্রকাশককেই বইটি প্রকাশে রাজি করাতে পারেননি। হতাশ হয়ে ভাবলেন হয়তো ডিটেকটিভ উপন্যাস লিখলে প্রকাশকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব। কিন্তু বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে কিংবা বিদেশী গল্প নকল করে লেখার মতো রুচি লেখকের হলো না। লেখক আবু ইসহাক পেশায় ছিলেন একজন ডিটেকটিভ। পেশাগত প্রশিক্ষণ, পড়াশুনা এবং অপরাধ তদন্তের বাস্তব অভিজ্ঞতা যার আছে তার পক্ষে একটা দুর্দান্ত ডিটেকটিভ উপন্যাস লেখা মোটেই অকল্পনীয় কিছু নয়। ১৯৫০ সালে জাল নোটের মামলা সংক্রান্ত কয়েকটা কেসের তদন্তের ভার পড়েছিল তার পেশাগত জীবনে। সেই তদন্তের অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগিয়ে লিখে ফেললেন আস্ত এক ডিটেকটিভ উপন্যাস। লেখার কাজ শেষ হলো ৫৪ সালে; অথচ ৫৫ সালেই এক প্রকাশক রাজি হয়ে গেলেন সূর্যদীঘল বাড়ি উপন্যাসটি প্রকাশ করতে। সূর্যদীঘল বাড়ির সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতেই সুদীর্ঘ ৩৪ বছর বাক্সবন্দী করে রাখেন ডিটেকটিভ উপন্যাসটি। নয়তো তৎক্ষনাৎ এই উপন্যাস প্রকাশ পেলে হয়তো বাংলা সাহিত্যের রহস্যোপন্যাস জগতে তা একটি মাইলফলক বলেই বিবেচিত হতো। অবশেষে ১৯৮৮ সালে ভিন্ন স্বাদের এই উপন্যাসটি প্রকাশ পায়। গতানুগতিক ডিটেকটিভ উপন্যাস নয় এটি; বরং অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে লেখকের নিজস্ব উদ্ভাবিত মৌলিক পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। থাক সেসব কথা মূল প্রসঙ্গে ফিরি। সদ্য দেশবিভাগ হয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনা। প্রতিদিনই ওপাড় বাংলা থেকে শয়ে শয়ে পরিবার বাঁচার তাগিদে নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে ভিড় করছে পূর্ব পাকিস্তানে। সেই অস্থির সময়টাকেই সুযোগ হিসেবে বেছে নেয় একদল জাল নোট পাচারকারী চক্র। প্রায় প্রতিদিন প্রদেশের প্রতিটা থানা থেকেই জাল নোটের প্রকোপ বৃদ্ধির কথা শুনতে শুনতে ত্যক্ত হয়ে উঠেছে প্রশাসন। জাল নোটের মাধ্যমে যে দেশের অর্থনীতিকে কব্জা করা সম্ভব; এবং এমনকি পুরো দেশকেই করায়ত্ত করা সম্ভব; তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই এই চক্রের তৎপরতা ঠেকাতে মাঠে নামে পূর্ব পাকিস্তানের গোয়েন্দা বিভাগ। এই গোয়েন্দা বিভাগেরই স্পেশাল অফিসার আলী রেজা। আলী রেজার অধীনে থাকা এক অফিসারের নাম হচ্ছে ইলিয়াস। চৌকষ বুদ্ধিসম্পন্ন এই অফিসারের কল্যাণেই জাল নোট পাচারকারীদের একটা চিঠি হাতে পায় গোয়েন্দা বিভাগ। কিন্তু বিধিবাম! চিঠিটা লেখা দুর্বোধ্য এক ভাষায় কিংবা বলা যায় সাংকেতিক কোনো গুপ্ত ভাষায়। এই চিঠির পাঠোদ্ধার সময় সাপেক্ষ ব্যাপার তো বটেই সঙ্গে আবার পাঠোদ্ধার যে সঠিকই হবে তার নিশ্চয়তাও নেই। উপরন্তু চিঠির প্রাপক আর প্রেরককে খুঁজে বের করাও এই অস্থির সময়ে বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। আর খুঁজে পেলেও প্রমাণাদি কই? কিন্তু গোয়েন্দা অফিসার ইলিয়াস যে নাছোড়বান্দা। খড়ের গাঁদায় সুঁই খোঁজার ব্রত নিয়েই নেমে পড়ে ইলিয়াস। সঙ্গী হয় কিংবা বলা যায় সঙ্গিনী হয় উদ্বাস্তু পরিবারের এক মেয়ে রোকসানা। যার বাবা নির্দোষ হয়েও জেল খাটছে জাল নোট পাচারকারী চক্রের কারণে। তাদের এই ছুটে চলার সঙ্গী হয় পাঠক, লেখকের প্রাঞ্জল বর্ণনা আর উপস্থাপনে। অর্থনৈতিক সাফল্যের উপর নির্ভর করে রাজনৈতিক সাফল্য। আবু ইসহাক এই উপন্যাস পড়ে যে কারোরই পাঠ প্রতিক্রিয়ার মূল বক্তব্য হবে অবাক হয়েছি খুব। গত শতকের মাঝামাঝিতে বসে এমন দুর্দান্ত ডিটেকটিভ উপন্যাস লেখা সত্যিই যে কাউকে অবাক করবে। তদন্তের শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত পাঠককে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখবে বাস্তবমুখী, প্রাঞ্জল আর সাবলীল বর্ণনাভঙ্গি। একই তদন্তের জালে আটকে পাঠক যেন বিরক্ত না হয়ে সেজন্য সাবপ্লট হিসেবে লেখক এক তোতলা দরবেশকে টেনে এনেছেন গল্পে। লেখক যেন এখানে মজার ছলেই মনে করিয়ে দিলেন সেই সময়ের দুর্ধর্ষ সব অপরাধীরা নিজেদের পরিচয় গোপন করতে দরবেশ বা ভণ্ড পীরের ছদ্মবেশ নিতো। এখনকার সময়েও যে অপরাধীরা ধর্মের লেবাস গাঁয়ে জড়ায়; তা আর হলফ করে বলার দরকার নেই। লেখকের উদ্ভাবিত তদন্তের পদ্ধতিতে একইসঙ্গে মুগ্ধ এবং বিরক্তও হয়েছি বটে। বিরক্ত হবার কারণ হচ্ছে লেখক এত ডিটেইলিং করেছে যে মনে হচ্ছিল ক্রিপ্টোগ্রামের ক্লাস করছি। তবে তা যে গল্পের স্বার্থেই করা, তা গল্প খানিকটা আগালেই টের পাওয়া যায়। এছাড়া ইলিয়াস আর রোকসানাকে প্রেমটাকে কেমন যেন জোর করে চাপিয়ে দেয়া ধরণের মনে হতে পারে। যদিও তদন্তের বিচারে তাই যুক্তিযুক্ত ছিল। তবে গত শতকের ডিটেকটিভ উপন্যাস; কথাটা শুনতেই আধুনিক কালের পাঠকের মনে যে ব্যাকডেটেড কাহিনীচিত্র ফুটে ওঠে; তার ছিটেফোঁটাও ছিল না এই উপন্যাসে। বরং অনেক বেশী সমসাময়িক মনে হয় কাহিনীর প্রেক্ষাপটে। আর লেখকের যে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনাভঙ্গি; সত্যিই টাসকি খাবার দশা। পারফেক্ট না বললেও সময়কাল ও অন্যান্য ব্যাপারগুলোকে বিবেচনায় নিলে দুর্দান্ত বলতেই হয়। বাস্তবধর্মী তদন্ত, মৌলিক তদন্ত পদ্ধতি, ক্রিপ্টোগ্রাম, ছদ্মবেশ, অদৃশ্য কালির ব্যবহার, প্রেম, সাবপ্লট বর্ণনা এবং টান টান উত্তেজনা – পুরো বইটাতে একজন রহস্য প্রেমী উক্ত ব্যাপারগুলো দারুণভাবে উপভোগ করবে। ৮৪ পৃষ্ঠার এই বইটি পড়তে খুব বেশী একটা সময় লাগবে না। বরং এক বসাতেই পড়ে ফেলা সম্ভব। তাহলে নিজেই জেনে নিন না ৩৪ বছর বাক্সবন্দী থাকা উপন্যাসটি সম্পর্কে। যদিও পিডিএফ পড়েছি তবুও বইটির প্রিন্টেড কপি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করছি সংরক্ষণের জন্য। বইটির পিডিএফ লিংক এখানে। বই: জাল লেখক: আবু ইসহাক ধরন: ডিটেকটিভ উপন্যাস প্রকাশনী: প্রান্তিকা প্রকাশকাল: ১৯৮৯ বিস্তারিত রিভিউ - https://thewazed.wordpress.com/2020/06/03/jal-book-review/
Was this review helpful to you?
or
দেশভাগের পর বাংলাদেশ, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। দেশ জুড়ে জালিয়াত চক্রের তৎপরতা ঠেকাতে হিমসিম খাচ্ছে পুলিশ বাহিনী। নতুন দেশে নতুন নােট বেড়িয়েছে, সে সুযােগ নিয়ে হাটে বন্দরে মানুষ ঠকাচ্ছে জালিয়াতরা। দক্ষ গােয়েন্দা পুলিশ ইন্সপেক্টর ইলিয়াস তদন্তের দায়িত্ব নিলাে। কিন্তু কেসটা মােটেই সহজ নয়। সাংকেতিক চিঠি, অদৃশ্য কালির লেখা - সবমিলিয়ে ইলিয়াস বাগে পেতে পেতেও পাচ্ছে না দারুণ ধূর্ত জালিয়াতদের। এদিকে এক সন্দেহভাজন রিফিউজির মেয়ে রােকসানা বাপকে বাঁচাতে মরিয়া। যে করেই হােক বাবাকে নির্দোষ প্রমাণ করবেই - এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে জড়িয়ে পড়েছে গােয়েন্দা ইলিয়াসের সাথে। দুজনে মিলে কি পারবে এত রহস্য ভেদ করে জালিয়াত চক্রের কার্যক্রম ভেস্তে দিতে?
Was this review helpful to you?
or
#রকমারি_রিভিউ_প্রতিযোগ_মার্চ গোয়েন্দা উপন্যাস: জাল লেখক: আবু ইসহাক প্রকাশনায়: নওরোজ সাহিত্য সম্ভার প্রথম প্রকাশ: ১৯৮৯ দেশভাগের পর বাংলাদেশ, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। দেশ জুড়ে জালিয়াত চক্রের তৎপরতা ঠেকাতে হিমসিম খাচ্ছে পুলিশ বাহিনী। নতুন দেশে নতুন নোট বেড়িয়েছে, সে সুযোগ নিয়ে হাটে বন্দরে মানুষ ঠকাচ্ছে জালিয়াতরা। দক্ষ গোয়েন্দা পুলিশ ইন্সপেক্টর ইলিয়াস তদন্তের দায়িত্ব নিলো। কিন্তু কেসটা মোটেই সহজ নয়। সাংকেতিক চিঠি, অদৃশ্য কালির লেখা - সবমিলিয়ে ইলিয়াস বাগে পেতে পেতেও পাচ্ছে না দারুণ ধূর্ত জালিয়াতদের। এদিকে এক সন্দেহভাজন রিফিউজির মেয়ে রোকসানা বাপকে বাঁচাতে মরিয়া। যে করেই হোক বাবাকে নির্দোষ প্রমাণ করবেই - এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে জড়িয়ে পড়েছে গোয়েন্দা ইলিয়াসের সাথে। দুজনে মিলে কি পারবে এত রহস্য ভেদ করে জালিয়াত চক্রের কার্যক্রম ভেস্তে দিতে? লেখকের কথা: প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আবু ইসহাক পেশায় একজন গোয়েন্দা ছিলেন। ১৯৪৮ সালে 'সূর্য দীঘল বাড়ি' লেখার পর চার বছর ঘুরেও প্রকাশক পাচ্ছিলেন না যখন, সে সময় পেশাগত অভিজ্ঞতা থেকে লেখেন 'জাল' উপন্যাসটি। ১৯৫৫ সালে ওনার প্রথম উপন্যাস সূর্য দীঘল বাড়ি প্রকাশ পায় ও সমাদৃত হয়। সুখ্যাতি ক্ষুণ্ণ হবে ভেবে জাল-কে দীর্ঘদিন বাক্সবন্দী রেখে দেন লেখক। ১৯৮৮ সালে পুনরায় বিবেচনা করেন আবু ইসহাক, এবং উপন্যাসটি 'আনন্দপত্র' পত্রিকায় প্রথম প্রকাশ হয়। পাঠপ্রতিক্রিয়া: 'জাল' গোয়েন্দা উপন্যাসটি বাংলাদেশের লেখালেখির জগতে ক্রাইম থ্রিলার ধারায় মাইলফলক। ভিন্ন স্বাদের গল্পে লেখকের নিজের অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষন, আর মৌলিক কিছু উদ্ভাবিত পদ্ধতি আছে। আঙুলের ছাপ, গুপ্তসংকেত (cryptogram), রহস্যলিপি, দৃশ্য কালি, ছদ্মবেশ - কি নেই এখানে! ধাপে ধাপে রহস্য এর জট খোলাটা পাঠককেও চিন্তা করার সুযোগ দিবে। গোয়েন্দা উপন্যাস হলেও মোটেও কাঠখোট্টা ভাব নেই লেখকের রচনায়, হাস্যরসের রসদ আছে যথেষ্ট। বইয়ের শেষে পাঠকদের সমাধানের জন্য যোগ করা হয়েছে লেখকের নিজের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে লেখা দুটি সাংকেতিক চিঠি।
Was this review helpful to you?
or
দুর্দান্ত থ্রিলার। দেশভাগ পরবর্তী পূর্ববঙ্গে একদল জালিয়াত উঠেপড়ে লাগে সারা দেশে জাল নোট ছড়াতে। যাদের অসৎ উদ্দ্যেশ্য ছিল সুদূরপ্রসারী, শুধু জাল নোট ছড়িয়ে অর্থ আত্মসাৎই নয়, ভবিষ্যতে দেশের রাজনীতিতে ওদের ঘৃণ্য শ্বাপদ ছাপ রাখা। এই চক্রের পেছনে পুলিশ বিভাগের তুখোড় অফিসার ইলিয়াস আদা জল খেয়ে নামেন ওদের সকল ধান্দা বন্ধ করতে। প্রতি পদে পদে বুদ্ধির মারপ্যাঁচ খাটিয়ে তিনি সফল হন । বইটির পরতে পরতে ইলিয়াসের বুদ্ধির ঝিলিক দেখতে দেখতে এবং চমকাতে চমকাতে এক নিঃশ্বাসে শেষ হয়ে যাবে বইটা।
Was this review helpful to you?
or
কাহিনী সংক্ষেপঃ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে জাল নোটের দৌরাত্ম। একদল জাল নোট ব্যবসায়ীর হাত থেকে সেই নকল টাকাটা পৌঁছে যাচ্ছে দেশের সাধারন মানুষদের হাতে, প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে তারা, এদিকে মূল আসামী রয়ে যাচ্ছে ধরাছোয়ার বাইরে। জাল নোটের এই তদন্তের ভার পড়েছে এককালের দক্ষ গোয়েন্দা মি. আলী রেজার উপরে; তার অতীতের কর্মদক্ষতার ফলাফল হিসেবেই অবসর জীবন থেকে তিনি আবার ফিরে এসেছেন স্পেশাল অফিসার হয়ে, জাল নোট তদন্তের সুরাহা করতে। আর এই তদন্তে তাঁর অধীনে কাজ করছেন তরুণ ইন্সপেক্টর ইলিয়াস। তিনমাস হয়ে গেলেও তেমন কোন অগ্রগতি হয়না জাল নোটের তদন্তে, তাই আদাজল খেয়ে লাগে ইন্সপেক্টর ইলিয়াস; অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে তাঁর হাতে আসে একটি সাঙ্কেতিক চিঠি, কিন্তু লাভ হয়না তাতে, ঘটনাচক্রে হারিয়ে যায় চিঠিটি। এরপর থেকে ইলিয়াস আরো সতর্ক। তার নিষ্ঠার পুরষ্কার হিসেবেই হয়তো সাঙ্কেতিক ভাষায় লেখা দ্বিতীয় চিঠির নাগাল পায় ইলিয়াস। বিচিত্র ভাষায় লেখা সেই চিঠিটির মর্মোদ্ধার করতে গিয়ে কালোঘাম ছুটে যায় ইন্সপেক্টরের। কিন্তু এর শেষ সে দেখেই ছাড়বে। এক মুদির দোকানে জাল নোট লেনদেনের মাধ্যমে সন্দেহের তীর গড়ায় রিফিউজি জাফর আহমদের দিকে, তার বাড়ি তল্লাশি করে পাওয়া যায় আরো কিছু প্রমান। কিন্তু জাফর আহমদের মেয়ে রোকসানা আহমদ পিতার উপর আনীত এ অভিযোগ মানতে নারাজ। জাফর সাহেবকে গ্রেফতার করার পর ইলিয়াসের মনেও দন্দ্ব জাগে, নির্দোষ মানুষকে শাস্তি দেয়া হয়ে যাচ্ছে না তো? সে এগিয়ে আসে রোকসানার সাহায্যে। কিন্তু এক অপরিচিত আগন্তুকের কারসাজিতে রোকসানা ইলিয়াসকে ঠেলে দেয় চরম অপমানের মুখে, যার ফলে ইলিয়াসের চোখে দেখতে পায় তীব্র ঘৃনার আগুন, সেই আগুনে ঝলসে যায় তরুনী রোখসানার হৃদয়। এদিকে সাঙ্কেতিক চিঠির প্রাপকের নাম ঠিকানার সূত্র ধরে ইলিয়াস পৌঁছে যায় সদানন্দ ক্লাবে, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে ক্লাবের মেম্বারদের। এদের মধ্যেই হয়তো লুকিয়ে আছে জাল নোট মামলার প্রধান কর্ণধার। ইলিয়াস কি পারবে তাকে খুঁজে বের করতে, নাকি প্রকৃত আসামীরা রয়ে যাবে ধরাছোঁয়ার বাইরেই? বই পরিচিতিঃ ‘জাল’ উপন্যাসটি ছিল প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আবু ইসহাকের লেখা দ্বিতীয় উপন্যাস। তিনি ১৯৫৪ সালে এ উপন্যাস লেখা শেষ করলেও তার প্রথম উপন্যাস ‘সূর্য-দীঘল বাড়ি’র সুখ্যাতি ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কায় দীর্ঘ চৌত্রিশ বছর বাক্সবন্দী অবস্থায় পড়ে ছিল বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য মৌলিক থ্রিলার ‘জাল’। ১৯৮৬ সালে লেখক পুরো উপন্যাসটির পান্ডুলিপি আবার আগাগোড়া পড়ার পর বুঝতে পারলেন যে এই উপন্যাস তার সুনাম মোটেই ক্ষুন্ন করবে না, তখন তিনি উদ্যোগ নিলেন উপন্যাসটি প্রকাশ করার। ‘জাল’ এর প্রথম প্রকাশ ১৯৮৮ সালে ‘আনন্দপত্র’ ঈদ সংখ্যায়। এরপর কিছু পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনার পর ১৯৮৯ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ যেহেতু এই বইয়ে লেখকের বাস্তব অভিজ্ঞতার কিছুটা মিশেল রয়েছে, তাই পড়ার সময় আলাদা একটা ভাললাগা কাজ করছিল। কাহিনীর অগ্রগতিও খুব সুন্দরভাবে হচ্ছিল বিধায় একটুও বিরক্ত লাগেনি পড়তে। আর সবচেয়ে মজা লেগেছে সাঙ্কেতিক চিঠির রহস্য উদ্ধারের অংশটা। তবে রচনার সময়কাল বেশ আগের হওয়ায় লেখার ভঙ্গীটা একটু অন্যরকম লেগেছে এখনকার তুলনায়। যেমন ইলিয়াসকে আপনি-আজ্ঞে দিয়ে উপস্থাপন করায় পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিল তরুণ ইনসপেক্টর নয়, মুরুব্বিস্থানীয় কারো কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সর্বোপরি খুব ভাল লেগেছে উপন্যাসটি।
Was this review helpful to you?
or
্প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ও গল্পকার আবু ইসহাক, 'জাল' উপন্যাসের মাধ্যমে রহস্য উপন্যাস লেখায় তাঁর দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ১৯৫৪ সালে লেখা এই বইটি ১৯৮৯ সালে নওরোজ সাহিত্য সম্ভার থেকে প্রকাশিত হয়। 'জাল' উপন্যাসের পটভূমি ১৯৫০ সালের দেশভাগ পরবর্তী বাংলাদেশ, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। জাল নোট তৈরিকারী এক চক্রের তৎপরতায় অস্থির হয়ে ওঠে দেশের মানুষ। হাটেবাজারে জালিয়াতের প্রতারণার শিকার হতে থাকে সাধারণ মানুষ। জালিয়াত চক্রকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করার জন্য নানা মহল থেকে চাপে পড়ে পুলিশ বাহিনী। এক নিবেদিতপ্রাণ তরুণ পুলিশ অফিসার ইন্সপেক্টর ইলিয়াস ঝাপিয়ে পড়েন এই ধূর্ত কুচক্রী গোষ্ঠীকে আইনের আওতায় আনতে। কিন্তু বারবার হাত ফস্কে যায় ধূর্ত জালিয়াতের দল। গোপন চিঠি, অদৃশ্য কালি, সাংকেতিক লেখার প্রহেলিকায় জড়িয়ে পড়েন ইলিয়াস। তদন্তের প্রক্রিয়ায় পরিচয় হয় জালিয়াতের প্রতারণার শিকার রিফিউজি তরুণী রোক্সানার সাথে। অসংখ্য বাধা অতিক্রম করে ইলিয়াস কি পারলেন জালিয়াত চক্রকে ধরতে? এ বইয়ের অন্যতম আকর্ষণ, বাংলা সাংকেতিক লিপির পাঠোদ্ধার সংক্রান্ত অংশটি। এই বইটি লিখতে আবু ইসহাক তাঁর অপরাধ তদন্তের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞান ব্যবহার করেছেন।
Was this review helpful to you?
or
নিজ পেশার সাথে জড়িত ঘটনাবলীকে গল্পের আকার দিয়ে উপন্যাস রচনা নতুন নয়, অনেকেই করেছেন এমন। তাদের ভিড়ে আবু ইসহাকও রয়েছেন। সূর্য দীঘল বাড়ির খ্যাতিকে তুঙ্গে উঠতে দেবার ফুরসত দিয়ে তিনি তাঁর একটি কাব্যিক রহস্যপোন্যাসকে তালা বন্দী করে রাখেন দীর্ঘদিন। উপন্যাসটির নাম “জাল”! নতুন দেশে নতুন নোটকে কেন্দ্র করে জেগে উঠা একদল জালিয়াত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা এক গোয়েন্দা পুলিশ ইন্সপেক্টর যুবকের কাহিনী কথিত হয়েছে এইখানে। রহস্যের জটের সন্ধান মিলে প্রথমত রোক্সানা নামক এক সুন্দরীর জবান বন্দী থেকে। তারপর রহস্যের জট শুধু পাকাতেই থাকে, সাথে সাথে বাড়তে থাকে উত্তেজনা। পুরো দেশ জুড়েই চলতে থাকা ষড়যন্ত্র কে রুখে দিতে পাঠকদেরও ঘুরতে হবে নায়কের সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন আনাচে কানাচে! দেশীয় সাহিত্যের জগতে “জাল” রহস্য উপন্যাসটি এক চমৎকার ভাবাবেগকে স্থান দেয়। আবু ইসহাক তাঁর অপূর্ব রচনা শৈলীর বেষ্টনীতে উপন্যাসটিকে করেছেন বাস্তব ঘেঁষা। অত্যন্ত আগ্রহের সাথে বইটি হাতে নিয়েছিলাম। খুবই পরিতৃপ্তির সাথে পরা শেষ করেছি! বাংলা সাহিত্যে এমন আরো কিছু উপহার পেলে মন্দ হত না!