Category:মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস
উপন্যাস হাসি খেলা নয়, এটা সত্যের এক বিশেষ অস্ত্র, এটা জীবনের বিপরীত দর্শন এবং এক সাথে তার প্রয়োগ সঙ্গত তা বুঝতে কার্পণ্য করা সমীচীন নয়। আর একটা বিষয় অবশ্য মনে রাখা এক..
উপন্যাস হাসি খেলা নয়, এটা সত্যের এক বিশেষ অস্ত্র, এটা জীবনের বিপরীত দর্শন এবং এক সাথে তার প্রয়োগ সঙ্গত তা বুঝতে কার্পণ্য করা সমীচীন নয়। আর একটা বিষয় অবশ্য মনে রাখা একান্ত প্রয়োজন, তা হচ্ছে উপন্যাসের রসের দিকটা যতো বড়, তার চেয়ে বস্তুগত দিকও কম নয়, সেটা দেখবারও প্রয়োজন আছে।
উপন্যাস যতো বেশি মানুষের জীবনের গভীরে প্রবেশ করবে, ততই তার উৎকর্ষ বৃদ্ধি পাবে। উপন্যাস তা যতো ছোট বা বড় হোক না কেন এবং পাত্র-পাত্রীর সংখ্যা যতো বেশি হোক না কেন, এর মানব-মানবীর চরিত্র যতো সজীব এবং বাস্তব হবে এর শিল্পরূপ সাফল্য তত বেশি হবে। একটি দ্বন্দ্বাত্মক গতিধারা সহজাত আখ্যানেই উৎকর্ষতা নির্ভর করে। আর উপন্যাসের চরিত্রগুলো ব্যক্তিত্বের মৃত্তিকায় সৃজন করার প্রয়াস লেখককে অবশ্যই নিতে হবে।
এ আলোকে জয়নাল আবেদীন-এর প্রথম উপন্যাস 'কবিরের মুক্তিযুদ্ধ' সম্পর্কে কিছু কথা। জয়নাল আবেদীন ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ, কর্মজীবন, মুক্তিযোদ্ধার ডায়রি ইত্যাদি নিয়ে কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছেন ব্যাংকিং পেশায় নিয়োজিত থেকেও। এ পেশায় নিরবচ্ছিন্ন সাহিত্য চর্চা ও সাধনার সময় পাওয়া কঠিন। তবু তার আগ্রহ, লেখালেখির প্রতি অনুরাগ তাকে টেনে নিয়েছে বন্ধুর এক পথে। এ পথে নেমে তিনি ব্যক্তি জীবনে আরও একটি অভিধায় ভূষিত হবার সুযোগ অর্জন করেছেন।
জয়নাল আবেদীনের এ উপন্যাসটির উপজীব্য বিষয় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যুবক-যুবতীদের জীবনে যে সংকট দেখা দেয় তারই ছবি একটা একটা করে তিনি সাজিয়ে পূর্ণাঙ্গ অবস্থার একটি চিত্র অঙ্কন করেছেন, খুব সহজ সরল ভাষায়। ফলে এখানে অনুভব-অনুভূতির যেমনটা প্রকাশ ঘটেছে, বুদ্ধির প্রকাশ ততটা প্রখর নয় লেখকের অকপটতা ও সরলতার জন্য। জগত ও জীবনের রহস্যকে সুন্দরভাবে রসস্নিগ্ধ করে উপস্থাপনের পরিকল্পনা তেমন হয়তো ছিল না। মূলতঃ জীবনবোধকে এখানে তত তীক্ষ্ণভাবে লেখক তুলে ধরেননি। যুদ্ধের সময় একজন কবিরের জীবনে যা যা ঘটেছে সেই ঘটনার প্রতিবেদন অকপটভাবে লেখক তুলে ধরেছেন। এখানে অবশ্য বীররস এবং প্রেমরস খুব না থাকলেও হঠাৎ ক্লীক ছবির মতো কিছু কিছু উঁকি-ঝুঁকি দিয়ে তো গেছেই। অবশ্য একথা বলতেই হবে একজন সৎ সাহিত্যিকের দায়-দায়িত্ব তার লেখায় স্পষ্টভাবে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে।
তিনি কোথাও মিথ্যাচার করেন নি। তবে বাস্তবতার এ সত্য সাহিত্যের সাথে সমানতালে যায় না। কেননা, লেখকের কাজ সত্য উদঘাটন করা। ওই বাস্তব সত্য নয়। বাস্তব সত্যের সাথে ভাব আর Imagination-এর সংমিশ্রণে নতুন এক সত্য (চিরন্তনতা প্রাপ্ত) সাহিত্যের সত্য তৈরি যার-মাঝে ভাব/অনুভব-এর চিরন্তনতার ছোঁয়া থাকবে। সরল কাহিনীটি পড়ে পাঠক অবশ্যই আনন্দসহ রস কমবেশি হলেও আস্বাদন করতে পারবেন, একথা দ্বিধাহীন চিত্তে বলা যায়।
উপন্যাসটি সাধারণ পাঠকবৃন্দকে গড় গড় করে পড়ার আনন্দে আপু-ত না করার মতো নিশ্চয় নয়। এটি জয়নাল আবেদীনের প্রথম উপন্যাস, তাই শিল্পরূপের গুণাগুণ বিচারের সময় এখনও আসেনি। কেননা, এ উপন্যাসটিতে পুরোপুরি ভাব, রস সংমিশ্রণ ও কল্পনার রঙে তেমন রঞ্জিত ব্যঞ্জনা সৃষ্টি না থাকলেও অন্যরকম একটা কৌতূহল প্রথম থেকে শেষ অবধি বিরাজমান। এ উপন্যাস তার জন্য এগিয়ে যাবার সম্ভাবনার দ্বার অবশ্যই উন্মোচন করবে যদি তিনি লেখা অব্যাহত রাখেন।
Report incorrect information